লেটার ফ্রম লাইবেরিয়া-১০

যুবরাজ এর ছবি
লিখেছেন যুবরাজ [অতিথি] (তারিখ: শনি, ১৩/১২/২০০৮ - ৩:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(অনেকদিন পর সচলায়াতনে লিখছি।আমি ইউরোপ ভ্রমনে গিয়েছিলাম, এই লেখাটা ইউরোপ যাওয়ার আগে লেখা)

মনে থাকতে থাকতেই একটা লেখা লিখে ফেলি। সেটা হল, গত ২৪ শে অকটোবর,২০০৮ আমি পাক আর্মি সেনা কাম্পে গিয়েছিলাম।লাইবেরিয়া এবং পুরো পৃথিবী জুড়ে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে পাকিস্তান বর্তমানে সবচেয়ে বেশী সৈন্য প্রেরণকারী দেশ এবং বাংলাদেশ তার পরেই।জাতিসংঘের চাহিদা মত এত সৈন্য প্রেরণ করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয় বিধায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন দিতীয়।
যাইহোক,লেখাটা লিখছিলাম পাকিস্থান ক্যাম্পে যাওয়া প্রসঙ্গে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে-প্রানে পাকিস্থানীদের ঘৃণা করার দলে, মুক্তিযুদ্ধে তাদের পৈচাশিক বর্বরতা ও নির্লজ্জ হামলার জন্য। সেই পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর বংশধরদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত আমার জন্য খুব প্রীতিপদ কিছু ছিলনা।গিয়েছিলাম কিছুটা কৌতুহলবশত।আরেকটি কারন অনুরোধে ঢেঁকি গেলা।সাধারনত এ ধরনের সাক্ষাতে আমরা খুব সাবধানে থাকি।কোন রাজনৈতিক,দিপাক্ষিক বা আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে কথা বলিনা।খুবই হাল্কা ধরনের কথাবার্তা হয় এ ধরনের ইনফরর্মাল সাক্ষাতে।তারা তাদের থাকা,খাওয়া,ছুটি যাওয়া এসব নিয়ে কথা বলছিল।পরবর্তীতে আলোচনা আন্তর্জাতিক, আফগান সমস্যা,পাক-যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সম্পর্ক,পরিশেষে সমগ্র মুসলিম বিশ হয়ে বাংলাদেশ পাকিস্থান সম্পর্ক এবং ১৯৭১ প্রসঙ্গ চলে আসে।আমি এতক্ষন ধরে একজন ভাল শ্রোতা হয়ে শুনছিলাম।খুব কম কথা বলছিলাম।
১৯৭১ প্রসংগ একজন বাংলাদেশী হিসেবে খুবই স্পর্শকাতর, তার উপর পাকিস্থানি আর্মি।আমি কথা বললে অনেক রুঢ় কথা বলে ফেলি।চুপ করে শুনছি।রুমে পাঞ্জাবী একজন মেজর, বেলুচ ক্যাপ্টেন আর উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের একজন মেজর ছিলেন।পাঞ্জাবী মেজর ছিলেন সিনিয়র।১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সব রাজনৈতিক ঘটনাবলীর বিবরন দিলেন।সব কিছু বলে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইলেন আমাদের কাছে।অনুশোচনা করলেন তাদের পুর্বসুরীদের কৃতকর্মের জন্য। আমি খুব অবাক হলাম।এত সহজে তারা ক্ষমা চেয়ে নিলেন? মনে মনে কিছু কথা গুছিয়ে রেখেছিলাম তাকে শুনাবো বলে। আত্নসমার্পন করায় আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্থান কবে ক্ষমা চাইবে? তিনি বললেন পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা চেয়েছে।প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শারিফ নাকি তার বাংলাদেশ সফরের সময়ে ক্ষমা চেয়েছেন।আর বর্তমান পাকিস্থান সেনাবাহিনী বা বর্তমান জেনারেশনের এ কারনে হাজার বার মাফ চাইতেও আপত্তি নাই। তারা পুরো ইতিহাস জানে, এবং জানে বাংলাদেশের উপর কী ভয়াবহ অন্যায় করা হয়েছিল।
আমি এবং আমার সংগী অফিসারেরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম, কই শুনিনি তো! উনি নিশ্চিত করে বললেন করেছে।আমি আর তর্কে গেলাম না।হয়তো চেয়েছে, আমি জানিনা।আপনারা কেউ কি এ ধরনের কোন কথা শুনেছেন?যদি কেউই জেনে না থাকেন, আমি পরের বার পাক মেজরকে ধরব,ফাঁকা বুলি মারার জন্য।
যাইহোক, পাক আর্মির কিছু অফিসার দিয়ে পুরো পাক আর্মিকে বিচার করা যায়না, সে সাথে রক্তের লেগে থাকা দাগ, এত সহজে, ক্ষমা চেয়ে পার পাওয়া যাবেনা। ক্ষমা চেয়ে পার পেলে নুর্যেনম বার্গে নাৎসীদের বিচার হতোনা, হেগে মিলোসভিচ কে বিচারের জন্য দিন গুনতে হতোনা।শুধু আমরাই অথর্ব জাতি যারা কিছুই করতে পারলাম না!
আমার ভাইয়ের রক্তে রাংগানো একুশে ফেব্রুয়ারী বা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে গান গুলো শুনলে, সারা দেহ কেমন যেন করে উঠে। পাকিস্তানীরা না হয় মাফ চাইল বা চাইবে, কিন্তু আমাদের বুদ্ধিজীবিদের হত্যাকারী, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী, মুনাফিক-বেইমান-মীরজাফরদের কী হবে? এরা কী গদিতে বসবে আর আমাকে একদিন এদেরকে স্যালুট করতে হবে, জাতীয় দিবসে, শহীদ মিনারে অথবা সাধীনতা দিবস জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সশস্র বাহিনীর মার্চ পাষ্টে?? এরা তো ভুলেও একদিন বলেনা, তারা ভুল করেছিল। ভুলেও তো বলেনা তারা রাজাকার ছিল?তবে কেন এদের গাড়ীতে জাতীয় পতাকা উড়ে? আমাদের কি লজ্জা শরম নেই? আমরা এত বেহায়া-বেশরম জাতি কেন? আচ্ছা, সত্যি বলুন তো, এই যে আপনি আমার লেখা পড়ছেন, আপনার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছেনা এখন এই কথা চিন্তা করে যে পাকিস্তানী বাহিনী তাদের কৃ্তকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে পারে, লজ্জা পেতে পারে, আর এই রাজাকাররা এই দেশের মানুষ। এই দেশের আলো-বাতাস খেয়ে বড় হয়ে, একই মায়ের সন্তান হয়ে,একই গ্রামের, একই পাড়ার, একই শহরের,একই দেশের মানুষকে হত্যা করে-ধর্ষন করে,কৃ্তকর্মের জন্য এতটুকু অনুশোচনা করেনা, উল্টো আজ বুক ফুলিয়ে হাটে, ক্ষমা চায়না,আর আমরা তাদের ভোট দেই, মন্ত্রী বানাই-প্রেসিডেন্ট বানাই, পৃথিবীতে এরকম বেহায়া-বেশরম জাতি বোধহয় আর একটি ও নেই।


মন্তব্য

পুতুল এর ছবি

আমরা তাদের ভোট দেই, মন্ত্রী বানাই-প্রেসিডেন্ট বানাই, পৃথিবীতে এরকম বেহায়া-বেশরম জাতি বোধহয় আর একটি ও নেই।

সহমত!
আচ্ছা আমাদের সেনাবাহিনীর ভেতর রাজাকারদের নিয়ে কী চিন্তাভাবনা? সময় করে এনিয়ে একটা পোষ্ট দেবেন?
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

স্নিগ্ধা এর ছবি

সেই পাকিস্তানী মেজর যখন ক্ষমা চাইছিলেন - বাংলাদেশী এবং পাকিস্তানী ছাড়া অন্য দেশের কেউ কি সেখানে উপস্থিত ছিলেন?

লেখায় বাক্য সমাপ্তির/দাঁড়ির পর স্পেস না দেয়ার কারণে পড়তে একটু অসুবিধা হচ্ছে।

দিগন্ত এর ছবি

আপনার কথার সাথে আজকেই দেখা একটা ভিডিও মেলাতে পারলাম না। এখানেও জাঈদ হামিদ (পাকিস্তানের ডিফেন্স অ্যানালিস্ট) "মুক্তিবাহিনীর গুণ্ডা" বলছেন। আলোচনাটা মুম্বই আক্রমণ নিয়ে, সবটা প্রাসঙ্গিক নয়। শুরুর দিকেই কমেন্টটা আছে। আলোচনায় সবারই ১৯৭১ নিয়ে জ্ঞান খুব কম দেখে দুঃখ পেলাম।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আহাম্মকের কোন জাত-পদ নাই। এগুলার পিছে মেজাজ খারাপ করাও লস। ছাগল যত্তসব।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সেটাই... এই আত্মসমালোচনাটা আমরা করি না।

প্রফাইল এর ছবি

হ্যাঁ, নওয়াজ এবং পরে মোশাররফ ইনিয়ে-বিনিয়ে ক্ষমার মতো একটা কিছু চেয়েছিলেন বটে কিন্তু তা ছিল তাঁদের একান্ত ব্যক্তিগত। ওগুলো অফিসিয়াল অ্যাপলজি নয়।

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

আমরা একটা বেঈমান জাতি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।