স্বপ্ন (মাইক্রো গল্প)

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ১২/০৭/২০০৭ - ৩:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্বপ্ন
দুদিন না ঘুমিয়ে সুমনের গা হাত পা ভেঙ্গে আসতে চায়। তবু স্পাইডারম্যান দেখার লোভ সামলাতে পারেনা। অনেক দুরের শহরে ছবি দেখে ফেরার সময় তাড়াহুড়া করে খুব দ্রুত গাড়ি চালিয়ে আসতে থাকে।

ঘুমের নেশায় তার চোখ বুঝে আসে। আয় ঘুম, আয় আয়। অস্থির ভাবে একসেলারেটরে আরেকটু চাপ বাড়ায়। ৬৫ - ৭০ - ৭৫ - ৮০ - ফটাং করে তীব্র আলোর ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ধ্যাৎ, আমেরিকার গতি সচেতন রাস্তা! দুদিন পর তার ছবি সহ দুশো ডলারের জরিমানা আসবে বাসায়। মুখের ভিতর তিতে অনুভুতি।

হাইওয়ে থেকে এক্সিট নিয়ে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কিছুক্ষণ। চোখ জড়িয়ে আসে। কোত্থেকে যেন বাবা চলে আসে। 'আয় ঘুম, আয় ঘুম; আয় ঘুম, আয়রে; চাঁদের কপালে ঘুম আয়...' - ছোট্টবেলায় কোলে করে যে গানে ঘুম পাড়াতো বাবা সেটা কানে বাজতে থাকে। পাশে থেকে মৌটুসী বলে ওঠে, 'একি চোখ বন্ধ করে আছো কেন? ঘুমিয়ে গেলে নাকি? গ্রীণ সিগন্যাল তো যাও!' সম্বিত ফিরে পেয়ে গতি বাড়ায় সুমন।

ঘরে ফিরে কোন রকমে কাপড় ছেড়ে শুয়ে পড়ে সুমন। চোখে রাজ্যের ঘুম। তলিয়ে যেতে যেতে কানে বেজে ওঠে বাবার গাওয়া ছোট্টবেলার সেই গান। 'আয় ঘুম, আয় ঘুম; আয় ঘুম, আয়রে' - বিরক্তিতে হাত নেড়ে অতলে তলিয়ে যায় সে।

"খুব আলো ঝলমল দিন। বিরাট একটা কাঠের জাহাজে করে সুমনরা যাচ্ছে। এক পাশে অনেক দূরে পাড় দেখা যাচ্ছে। আরেক পাশে অথৈ জলরাশি। সুমনরা কয়েক ভাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে ডেকের একপাশে। মা, বাবা এসে যোগ দিলেন কিছুক্ষণ পর। কিন্ত হঠাৎ শুরু হল পাগলা হাওয়া। সেই সাথে জলের ঝাপটায় খারাপ অবস্থা। হঠাৎ নদী বিরাট জলপ্রপাতে পতনের সম্মুখীন। ঝুপঝুপ ঝপাৎ।"

"সুমন আর সোহেল খেলছিল। দরজায় আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দিয়ে দেখে বাবা বাজার করে এসেছে। তাদের জন্য এনেছে মিষ্টি বরই। খুশী দেখে কে দুজনের! নাচতে নাচতে মায়ের কাছ থেকে বরই নিয়ে খেতে যাবে এমন সময় ভেঙ্গে চুরমার।"

ঘুমের ঘোরে পাজল মেলাতে পারেনা সুমন। ক্যারিয়ার, বাবা-মা, বন্ধু, একাকীত্ব - কিছুতেই কিছু মেলেনা। বার বার ঘুম ভেঙ্গে যায়। জোর করে বিছানায় পড়ে থাকে, আর দশটা মিনিটের ঘুম, আর কিছুক্ষণ যদি পাওয়া যায় সে অমৃতের স্বাদ...


মন্তব্য

মাশীদ এর ছবি

এমনিতেই মন খারাপ, আজকে বেছে বেছে কেমন মন-খারাপ করা পোস্টগুলোই খালি চোখে পড়ছে।

এভাবেই জীবনটা কেটে যাচ্ছে। গতি মানেই ছোটা, স্থিতি মানেই ঘুম। আর দশটা মিনিটের স্বপ্নের আশায় কেটে যায় একেকটা পুরো দিন। হারিয়ে যায় সময়, সুযোগ, মানুষ। আবার এর মধ্যেই কিছু কিছু প্রাপ্তি।

তোর স্বপ্নগুলো অনুভব করলাম। গতিময় জীবনে স্বপ্নকাতর তুই আর টুসী চোখের সামনে ভেসে উঠলি। ভাল থাকিস।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

অমিত আহমেদ এর ছবি

সুমন ভাই, একটা নতুন গল্প ছাড়ুন দেখি মানে মানে।


আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

অপালা এর ছবি

স্বপ্নে কতটা পথ হাটা যায়, কতটা ছুতে চলা যায় নিজের পিছন?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।