বড় বনাম ছোট প্রতিষ্ঠান: একটি সাবজেক্টিভ তুলনা

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: বুধ, ১৩/০২/২০১৯ - ২:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বড় প্রতিষ্ঠান আর ছোট প্রতিষ্ঠান - কোনটাতে কাজ করার সুবিধা আর অসুবিধা কি? বর্তমানে এক চাকুরীতে অনেকদিন বসে থাকলে অগ্রগতির সুযোগ কম। কিন্তু পরবর্তী চাকরীতে যাবার আগে ছোট প্রতিষ্ঠানে যাবেন নাকি বড় প্রতিষ্ঠানে?

৩০০০ কর্মচারীর একটি মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠান Medium এ আমি প্রায় আট বছর চাকুরী করি। তারপর ৭০০ কর্মচারীর Small নামের একটি ছোট্ট স্টার্টাপ প্রতিষ্ঠানে যোগ দেই। সেখানে দু বছর কাজ করবার পর আমি একবছর ২২হাজার কর্মীর প্রতিষ্ঠান Large তে চাকুরীর পর বর্তমানে ১৩৫ হাজার কর্মীর বিশাল এক প্রতিষ্ঠান Extra Large তে কর্মরত আছি। বলা বাহুল্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নামের বদলে শার্ট সাইজ ব্যবহার করেছি আকার অনুযায়ী।

আজকে আপনাদের সাথে বড় এবং ছোট প্রতিষ্ঠানে কাজ করবার দিকগুলো আলোচনা করবো। লক্ষণীয় যে, একটি আমার স্বল্প অভিজ্ঞতার আলোকে একটি মাত্র ডাটা পয়েন্ট। অনেকের অভিজ্ঞতা আমার থেকে ভিন্ন হতে পারে। আর আমার কর্মক্ষেত্র আমেরিকায় এবং টেকনোলজি ভিত্তিক। সুতরাং রেসিপি দেখে রান্নার সময় পরিমান মতে লবন মিশিয়ে নিবেন।

তাছাড়া এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আমার মতামত একান্তই আমার। প্রতিষ্ঠানগুলোর মতামত আমি প্রচার করছি না।

ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স
ছোট প্রতিষ্ঠানে কাজের চাপ সাধারণতঃ অনেক বেশী থাকে। Small এ কাজ করবার সময় ছুটির সময়গুলোতেও আমাকে দিনরাত কাজ করতে হয়েছে। নিয়মিত সপ্তাহে ৫৫ থেকে ৬০ ঘন্টা কাজ করতে হত আমাকে। আরেকবার বাৎসরিক ক্রিসামস ছুটির সময়টাতে অন কলে না থাকা স্বত্ত্বেও কয়েক মিলিয়ন ডলারের ডিল ধরতে ডিফেক্ট সমাধাণে কাজ করতে হয়েছে পুরোটা সময়।

সে প্রতিষ্ঠানে আমার দায়িত্বে ছিলো একটা প্রজেক্ট। সেটাতে শুরুতে তিনজন কাজ করার কথা থাকলেও নিয়মিত লোক চলে যাওয়ার কারনে শেষমেষ আমি পেয়েছিলাম একজন ইঞ্জিনিয়ার। তাকেও মাঝপথে অন্য প্রজেক্টে নিয়ে যাওয়া হয়। অথচ সপ্তাহে ৮০ ঘন্টা খেটে আমাকে কাজটা ঠিকই শেষ করতে হয় বাৎসরিক কনফারেন্সের আগে আগে।

তার তুলনায় Medium থেকে Extra Large প্রতিষ্ঠানে অনেকে আরাম ছিলো। সকাল ৯ থেকে ১০ টায় অফিস গিয়ে ছয়টায় ফিরতে পারতাম। কিংবা নিজের প্রয়োজনে ছুটি ছাটা পেতে কখনোই সমস্যা হয়নি।

বিশেষ করে Extra Large প্রতিষ্ঠানে একটা অলিখিত ফিলসফি আছে। যদি একটা কাজ মানুষ তার শতকরা ১০০ ভাগ ক্যাপাসিটিতে করতে থাকে তাহলে সে ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। বরং সবাইকে একটা ব্যালেন্স খুঁজে কাজ করতে হবে যাতে সে বছরের পর বছর কাজ করে যেতে পারে। বিশেষ করে আমি যখন মধ্য আমেরিকার একটা শহর থেকে থেকে উত্তর পশ্চিমের এক শহরে মুভ করছিলাম তখন আমি যে পরিমান ঝামেলা সামলেছি সেটা অন্য কোন কোম্পানী হলে করা সম্ভব হতো কিনা সন্দেহ।

তবে ব্যতিক্রম আছে। শুনেছি বড় প্রতিষ্ঠান হওয়া স্বত্ত্বেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান স্টার্টাপ মানসিকতা ধরে রাখে এবং এমপ্লয়িদের ১২০% খাটিয়ে নেয়।

বেতন এবং অন্যান্য সুবিধাদি
ছোট প্রতিষ্ঠানে দুটো জিনিস তুলনামূলকভাবে বেশী - বেতন আর পদবী। যেহেতু তাদের বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে ট্যালেন্ট পাবার প্রতিযোগিতায় জিততে হয় তাই এরা শুরুতেই উঁচু বেতন অফার করে। বিশেষ করে সদ্য পাশ করা ছাত্র যাদের কাছে অন্যান্য সুবিধার তুলনায় বন্ধুদের কাজে গল্প করার জন্য কত ক্যাশ পাচ্ছে সেটা বড় হয়ে দাঁড়ায়। আর পদবী দিতে যেহেতু পয়সা লাগে না তাই এরা পটাপট উঁচু পদ দিয়ে দিতে পারে।

বড় প্রতিষ্ঠানে অনেক সুবিধাদি থাকে। বিশেষ করে আমার Extra Large প্রতিষ্ঠানটিতে ছোটখাট শতরকম সুযোগ সুবিধা রয়েছে। যদিও ক্যাশ বেতন এই এলাকার তুলনায় খানিকটা কমই। কিন্তু সমস্ত বেনিফিট যোগ করলে অনেক বেশী সুবিধা পাওয়া যায় বড় প্রতিষ্ঠানে।

দ্বিতীয় আরেকটি ব্যাপার হলো - স্টক। বড় প্রতিষ্ঠানে এদিক দিয়ে অনেক উদার। আসলে মূল বেতনের চেয়ে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এটি বেশী আকর্ষণীয় হয়ে দাঁড়ায়। আর স্টকের মূল্যমান বছর বছর বাড়তে থাকে। স্টার্টাপ প্রতিষ্ঠান স্টক অফার করলেও নানারকম আইনি প্যাঁচে হয়ত পুরোটা স্টক আপনার ভাগ্যে নাও জুটতে পারে। আর সে প্রতিষ্ঠান পাবলিক হলে তার মূল্য অতটা নাও হতে পারে।

কালচার এবং রাজনীতি
এটা একটা সাবজেকটিভ ব্যাপার। ছোট প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির মধ্যে থাকতে হবে। যেখানে নিয়মিত ফায়ার হচ্ছে টিমমেটরা সেখানে পান থেকে চুন খসলে দেখবেন সুবিধাবাদি কেউ নিজের পিঠ বাঁচাতে আপনার ভুলগুলোর ঢেঁড়া পিঠিয়ে আসছে ম্যানেজারের কাছে।

বড় প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার থেকে শুরু করে ডিরেক্টর পর্যন্ত্য সবাই টেকনিকালি সাউন্ড। কেউ কান ভাঙ্গাতে আসলে সেটা সহজ হবে না। কিন্তু ছোট প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার টেকনিকালি অতটা শক্ত নয়। তাদের কান ভাঙ্গানো তাই সহজ।

বড় প্রতিষ্ঠানে অগ্রসর হবার সুযোগ অনেক বেশী। তাই মিন হবার প্রয়োজন অনেক কম। কিন্তু উপরের লেভেলে গেলে যেখানে সুযোগ্য লোকের অভাব নেই এবং প্রমেশন সুযোগ কম সেখানে রাজনীতি থাকতে বাধ্য।

শেখার সুযোগ এবং ক্যারিয়ার প্রগ্রেশন
ছোট প্রতিষ্ঠানে কাজের চাপ অনেক বেশী থাকলেও কাজ শেখার অনেক সুযোগ থাকে। বড় প্রতিষ্ঠানে ডেভ-অপস তুলনামূলকভাবে ম্যাচিউর। এতে ডেভলপার হিসেবে আপনার অনেক সুবিধা হলেও পুরো ডেভলপমেন্ট প্রসেসের নাটস এন্ড বোল্টস আপনার অজানা। অন্যদিকে ছোট প্রতিষ্ঠানে আপনাকেই ডেভ-অপসের কাজ করতে হবে, টেস্ট ইঞ্জিনিয়ারের কাজ করতে হবে, সেই সাথে সাইট রিলায়াবিলিটি ও সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আপনাকেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। এতে করে দায়িত্ব যেমন অনেক বেশী তেমনি জানার সুযোগও অনেকখানি।

Small কোম্পানীতে আমাকে দুটো টেকনিকাল এবং একটা প্রজেক্ট মেনেজমেন্টের ট্রেনিং নিতে দিয়েছিলো। বড় প্রতিষ্ঠান ট্রেনিং বাজেটের কথা মুখে বললেও অনেক সময় ট্রেনিং পাওয়া শক্ত। তবে এক্ষেত্রে Extra Large প্রতিষ্ঠান শুনেছি অনেক উদার। এখনও ট্রেনিং নেবার সুযোগ হয়ে উঠেনি।

তাছাড়া পছন্দ মতো কোন বিশেষ দিকে অগ্রসর হতে চাইলে সেটা ছোট প্রতিষ্ঠানে অনেক সহজতর। আর রাজনীতি খানিকটা ন্যাভিগেট করতে পারলে খুব দ্রুত উপরের দিকে যেতে পারবেন।

উপসংহার
আমার উপলব্ধি হচ্ছে চাকুরীর স্যাটিফেকশনের দিক দিয়ে এবং বেতন ও অন্যান্য সুযেগ সুবিধার দিক দিয়ে বড় প্রতিষ্ঠান অনেকে বেশী আকর্ষনীয়। অন্যদিকে কাজ শিখতে এবং ভবিষ্যতের ক্যরিয়ারের কথা চিন্তার করলে ছোট প্রতিষ্ঠান অনেক বেশী আকর্ষনীয়। রাজনীতি কম বেশী সব জায়গায় থাকলেও ছোট প্রতিষ্ঠানে সেটা এড়ানোর উপায় নেই। আর কাজের চাপও অনেক বেশী থাকে বলে নিজের জন্য সময় পাওয়া যায় না।


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অনেক দিন ধরে ঠিক এই বিষয়টি নিয়ে লেখার চিন্তা করছিলাম, আপনি লেখায় কাজটা সহজ হয়ে গেলো। ধন্যবাদ। বিষয়টি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কেমন আমার অভিজ্ঞতার আলোকে সেটা ধাপে ধাপে মন্তব্য আকারে এখানে লেখার আশা রাখি। আগামী দুই দিনে পারবো না, একটু সময় লাগবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অপেক্ষায় থাকলাম।

শেলক্স এর ছবি

অনেক বড় প্রতিষ্ঠান কিন্তু বাংলাদেশে অফিস ছোটো , এরকম একটা প্রতিষ্ঠান এর কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার।

ক্লায়েন্ট বেইজেড কাজ হওয়াতে নিজের "ছোটো" অফিস ফেলে বড় ক্লায়েন্টে কাজ করেছি কিছু বছর, সেই সুবাদে এবং কাজের ধাঁচ কম্পুটার নিরাপত্তা হওয়াতে দেখেছি এরকম বড় প্রতিষ্ঠান এ নলেজ বেইজ যেগুলো থাকে সেইগুলো ঠিক করে ব্যাবহার করতে পারলে সেইটা অনেক অভিজ্ঞতা জড় করতে সাহায্য করে। কিন্তু কম্পুটার নিরাপত্তা নিয়ে আমার বন্ধুরা যারা তুলনামূলক ছোটো প্রতিষ্ঠানে ছিলো , ওদের জন্য শিখার মূল সোর্স অফিসের ছোটো প্রজেক্ট অথবা সিনিয়ারদের দেখানো কাজ থেকে শিক্ষা ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বাংলাদেশের ছোট প্রতিষ্ঠান মনে হয় একটু ভিন্ন। আমেরিকার ছোট প্রতিষ্ঠান কিন্তু কাজ শেখার জন্য বেশ ভালো জায়গা। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটু বিষদ শুনতে চাই আপনার কাছে।

সত্যপীর এর ছবি

আপনার স্মল লার্জ এক্সট্রা লার্জের কর্মীসংখ্যা দেখে ভিরমি খাইলাম। ৭০০ কর্মীর স্মল স্টার্টাপ, খাইছে। আমাদের এখানে স্টার্টাপে থাকে শখানেক। আমি একটা মাঝারি টেক কোম্পানিতে আছি তাতে শপাঁচেক লোক।

শুনেছি বড় প্রতিষ্ঠান হওয়া স্বত্ত্বেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান স্টার্টাপ মানসিকতা ধরে রাখে এবং এমপ্লয়িদের ১২০% খাটিয়ে নেয়।

আমাদের মার্কিন মাদারশীপ আপনার হিসাবে মাঝারি সাইজের। সেই হিসাবে এখানে বড়ই, কিন্তু স্টার্টাপ মানসিকতা। ফেইল ফাস্ট ফেইল অফটেন, এম্ব্রেস দ্য লার্নিং হাবিজাবি। আমি ৬০% কাজ করি ফাংশনাল লীড হিসাবে আর ৭০% (হ হিসাব ঠিকই আছে) কাজ করি ক্রস ফাংশনাল স্টার্টাপ ইনিশিয়েটিভে। মার্কেটিং এর এবি টেস্ট থিকা ডিজাইন ব্লুপ্রিন্ট আর জিরা ব্যাকলগে ডেভুদের কর্মকাণ্ড আবার কাস্টমার স্টাডি নজরে রাখা সবই একচিমটি করে করতে হয়। পদবী দেওয়ার বেলায় হুঁশিয়ার কিন্তু স্টক দেয় আর কয় থাইকা যা তাইলে ক্যাশ করতে পারবি রে ময়না। একদিন পাখি উড়ে... পলিটিক্স অল্প, ম্যানেজারদের হাতে সকল অধিকার। আপনার ম্যানেজার আপনারে নজরে না নিলে আপনার অ্যাস ইজ গ্র্যাস। টেনিয়রের বেইল নাই, জুনিয়র পুলাপানের হাতে বুইড়া বিশ/পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মীর টীম। (এইটা অবশ্য খারাপ না, আমার মতে বেশ ভালো জিনিস)

কিন্তু উপরের লেভেলে গেলে যেখানে সুযোগ্য লোকের অভাব নেই এবং প্রমেশন সুযোগ কম সেখানে রাজনীতি থাকতে বাধ্য।

হক কথা। একশোতে একশো।

ছোট প্রতিষ্ঠানে কাজের চাপ অনেক বেশী থাকলেও কাজ শেখার অনেক সুযোগ থাকে।

এইটা আমার ধারনা বড় এবং মাঝারি কোম্পানীতেও সম্ভব, নির্ভর করে রোলের উপর। ভার্টিকাল ডীপ নলেজের বদলে বিবিধ বিষয়ে হরাইজন্টালি কিছু কিছু জানা থাকলে আগাইতে সুবিধা। সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্টের চেয়ে স্ট্র্যাটেজিতে বলীয়ান ব্যক্তি দুর্লভ মনে করেন।

..................................................................
#Banshibir.

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সাইজটা আপেক্ষিক। আমি কোম্পানীর নাম বদলে তুলনামূলক আকারকে চিহ্নিত করতে শার্ট সাইজ ব্যবহার করেছি।

টেনিয়রের বেইল নাই, জুনিয়র পুলাপানের হাতে বুইড়া বিশ/পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মীর টীম।

এটা হলো এইজইজম বা এইজ বায়াস। এটা স্টার্টাপ বা ছোট কোম্পানীর আরেকটা বৈশিষ্ট্য। বেশীরভাগ ওয়ার্কফোর্স ইয়ং যেহেতু সিনিয়ার কিন্তু তাদের কাজে সেরারা সহজে স্টার্টাপে আসতে চায় না। একটু সফল স্টার্টাপের জুনিয়ার পোলাপান একটু ভালো করলে পটাপট প্রোমোশন পেয়ে মাটিতে আর পা পড়ে না।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আমার অভিজ্ঞতা যেসব প্রতিষ্ঠানের, তাতে কেবল লবন দিলে চলবে না! টেস্টিংসল্ট-বিটলবন-সয়াসস-ভিনিগার সবই দিয়ে রীতিমত ম্যারিনেট করতে হবে! ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হা হা হা...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রাককথনঃ

এই পোস্টের মন্তব্যালোচনায় আমি যা কিছু বলবো তা কেবল বাংলাদেশের বেসরকারী চাকুরি নিয়ে। অন্য দেশের চাকুরির সাথে দূরে থাক, খোদ বাংলাদেশের সরকারি চাকুরির সাথেও এই চাকুরির কোনরূপ তুলনা হয় না।

বাংলাদেশে কাজ করে এমন অনেক কোম্পানি নিজেদেরকে বহুজাতিক কোম্পানি বলে দাবি করে। যেসব বিধি-নীতি-নিয়ম-সংস্কৃতি দেশ নির্বিশেষে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে থাকার কথা এখানকার অনেক বহুজাতিক কোম্পানি সেসবের ধার ধারে না। ওগুলো আসলে একটু বেশি বেতনের, অদরকারি তাংফাংসমৃদ্ধ দেশিয় কোম্পানি মাত্র। এই সত্যটা বহুজাতিক কোম্পানির কর্মীদের জিজ্ঞেস করলে চট্‌ করে জানা যাবে না। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে শাক দিয়ে মাছ ঢেকে নিজের ইজ্জত বাঁচাতে। সে যখন চাকুরিটা ছাড়তে পারে তখনই কেবল মুদ্রার অন্য পিঠটার গল্প শোনা যায়।

বাংলাদেশে এখন ছেলেমেয়েরা সরকারি চাকুরি পাবার জন্য বা বিদেশে চলে যাবার জন্য যে জীবনমরণ সংগ্রামে নামে সেটা খামোখা নয়। এদেশে বেসরকারি চাকুরি না করলে শোষণ, বৈষম্য, অনিয়ম, বঞ্চনা, অমানবিকতার অনেক কিছুর অভিনব সব রূপ সম্পর্কে জানা হবে না।

ধরা যাক, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি, যার মধ্যে কমপক্ষে ৮ কোটি জন কোন না কোন প্রকার আয়করী কর্মকাণ্ডে জড়িত আছেন। ৮ কোটি জনের মধ্যে প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ জন চাকুরি করেন। চাকুরিজীবিদের মধ্য থেকে ২৫ লাখ সরকারি চাকুরিজীবি আর লাখ পাঁচেক বহুজাতিক কোম্পানির চাকুরিজীবিকে বাদ দিলে বাকি যে ৪ কোটি ২০ লাখ বেসরকারি চাকুরি করেন এই আলোচনা সেইসব সৌভাগ্যবানদের নিয়ে। আলোচনার সুবিধার্থে এখানে আমি তাদেরকে শুধুমাত্র ‘চাকুরিজীবি’ বলে উল্লেখ করবো। সংখ্যাটা ৪ কোটি ২০ লাখ থেকে কম বা বেশি হতে পারে, তবে তাতে তাদের সৌভাগ্যের কমতি হবে না।

মৌলিক কিছু বিষয়ঃ

একটা চাকুরিতে কিছু মৌলিক বিষয় থাকার কথা। যথাঃ

১। নিয়োগপত্র
২। চাকুরিবিধি
৩। পদ/পদবী
৪। কাজের সংজ্ঞা/পরিধি
৫। কাজের পরিবেশ
৬। কর্মঘন্টা-ছুটি ইত্যাদি
৭। বেতন-বোনাস-ইনক্রিমেন্ট
৮। বাড়ি ভাড়া-যাতায়ত-দৈনিক ব্যয় ইত্যাদি
৯। চিকিৎসা-জীবন বীমা-চিকিৎসা বীমা-দুর্ঘটনা বীমা ইত্যাদি
১০। প্রভিডেন্ড ফান্ড-গ্রাচ্যুইটি-পেনশন স্কিম ইত্যাদি
১১। পদোন্নতির সুযোগ ও নীতি

আপনি যদি কোন চাকুরিজীবিকে এসবের কথা জিজ্ঞেস করেন তাহলে তিনি আপনার অজ্ঞতা দেখে একচোট হাসবেন। এখানে কোটি কোটি মানুষ চাকুরি করেন কোন প্রকার নিয়োগপত্র ছাড়া। তাদের কাজের পরিধি সংজ্ঞায়িত নয়; কাজের পরিবেশ মানবেতর; কর্মঘন্টা নামেই ৮ ঘন্টা বাস্তবে ১০/১২ ঘন্টা অথচ অতিরিক্ত সময়ের জন্য কোন পেমেন্ট নেই; ছুটি দেবার নিয়মনীতি নেই অথবা থাকলেও মানা হয়না; এই মাসে বেতন পাওয়া গেলো বটে আগামী মাসে কবে বেতন পাওয়া যাবে বা আদৌ পাওয়া যাবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই; এই বছর ৫% ইনক্রিমেন্ট হলো বটে আবার কোন বছরে ইনক্রিমেন্ট হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই; এই বছর ঈদে বোনাস পাওয়া যাবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই; টিএ/ডিএ বিল জমা দিলে তা কবে এবং কী পরিমাণ পাওয়া যাবে তার ঠিক নেই; কোন প্রকার মেডিকেল/ইনস্যুরেন্স/পিএফ/পিএস-এর ব্যাপার নেই; বছরের পর বছর একই পদে কাজ করতে হয় কিন্তু পদন্নোতি হয় না; হঠাৎ করে মালিকপক্ষের পরিবারের বা পেয়ারের কাউকে যোগ্যতা বিচার না করে মাথার উপরে বসিয়ে দেয়া হয়; কসুর-বিন্‌কসুর এক কালো দিনে কোন প্রকার কমপেনসেশন ছাড়া সমস্ত বকেয়া বেতন-বোনাস-বিল ছাড়া চাকুরিটা চলে যায়। এই সব কিছুর ব্যতিক্রম আছে, তবে একথা কে না জানে যে ব্যতিক্রমও নিয়মেরই অন্তর্ভুক্ত।

চাকুরি নিয়ে একপ্রকার শেষ কথা বলে গেছেন খোদ জীবনানন্দ দাশ —

মানুষেরই হাতে তবু মানুষ হতেছে নাজেহাল;
পৃথিবীতে নেই কোন বিশুদ্ধ চাকরি।
এ-কেমন পরিবেশে র’য়ে গেছি সবে —

(জীবনানন্দ দাশ; সৃষ্টির তীরে, সাতটি তারার তিমির; গুপ্ত রহমান এ্যান্ড গুপ্ত; ১৯৪৮; কলিকাতা)

কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্নদের জন্য ইঙ্গিতই যথেষ্ট।

কোম্পানির আকার-আয়তন-প্রকৃতিঃ

কোম্পানিগুলোকে প্রথমে ভাগ করা যায় মৌলিক বিষয়ে বলা পয়েন্টগুলোর ভিত্তিতে —
১.১. বেশির ভাগ মানে
১.২. মোটামুটি মানে
১.৩. এইসব আবার কী কন্‌

কোম্পানি আসলে মাপতে হবে তার পুঁজির আকারে —
২.১. বড় (হাজার কোটি টাকার উপরে)
২.২. মাঝারী (শত কোটি টাকার উপরে তবে হাজার কোটি টাকার নিচে)
২.৩. ছোট (শত কোটি টাকার নিচে)
[টাকার হিসাবটা বললাম ২০১৯ সালের প্রেক্ষিতে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এই অঙ্কটা পাল্টাবে।]

কোম্পানির গঠনটাও জানতে হবে —
৩.১. একক ব্যক্তিমালিকানাধীন
৩.২. অংশীদারী মালিকানাধীন এবং লিমিটেড নয়
৩.৩. প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি
৩.৪. পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি

চাকুরির আবেদন করার আগে কোম্পানির উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া আবশ্যক। এই সকল প্রকারভেদের সাথে জড়িত সম্ভাবনা ও ঝুঁকিসমূহ জানতে হবে। আইন বলে — ক্রেতা সাবধান। কেনার সময় ক্রেতা সাবধান না হয়ে ঠকলে বিক্রেতাকে দোষারোপ করে কোন ফায়দা হবে না।

মাথা গোনাগুনতি দিয়ে এখানে কোম্পানির আকার মাপা যায় না। অনেক কোম্পানি আছে যেখানে কয়েক শত লোক কাজ করেন কিন্তু পুঁজি অল্প, আবার শ’খানেকের কম লোক কাজ করে এমন কোম্পানির পুঁজি হাজার কোটি টাকার উপরে হতে পারে।

একজন চাকুরিজীবির কাছে চাকুরির যে বিষয়গুলো প্রথমেই বিবেচ্য তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেতন। এখানে শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, কর্মাভিজ্ঞতা ইত্যাদি বেতনের পরিমাণ নির্ধারণে যথেষ্ট নয়। এখানে প্রথমেই বিবেচ্য ইন্ডাস্ট্রিটা কী। একটা উদাহরণ দেই। আমার স্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা আমার চেয়ে বেশি, তাঁর কর্মাভিজ্ঞতা প্রায় আমার সমান, তাঁর কর্মদক্ষতা প্রশংসনীয়; কিন্তু তিনি আমার চেয়ে অনেক কম বেতন পান। কারণ, তিনি একটা স্কুলে পড়ান এবং এদেশে ধরেই নেয়া হয়েছে স্কুল/কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হতে হবে করুণাকর পরিমাণে। শিক্ষাগত যোগ্যতা – দক্ষতা – কর্মাভিজ্ঞতা যা-ই হোক না কেন একটা নির্ধারিত অঙ্কের উপরে বেতন দেয়া যাবে না এমন নীতিতে বিশ্বাসী ইন্ডাস্ট্রির সংখ্যা প্রচুর। সুতরাং চাকুরি নেবার আগে তো বটেই নিজের পেশা ঠিক করার আগে ইন্ডাস্ট্রির বেতনের সিলিং জেনে নেয়া ভালো।

সম্ভব হলে আরও কয়েকটা বিষয় জেনে নিতে হবে চাকুরিতে আবেদন করার আগে অথবা চাকুরি পাবার পরে —

৪. কোম্পানির মালিকদের পরিচয় কী? (রাজনীতিবিদ, হঠাৎ ধনী, অপরাধপ্রবণ হলে সাধু সাবধান!)

৫. কোম্পানির আয়ের উৎস কী? (পুঁজির যোগান যদি এই ব্যবসা থেকে আসে তাহলে ভালো, যদি গ্রুপের অন্যের ব্যবসা থেকে আসে তাহলে ভাবতে হবে এমন তোল্লাই কতদিন চলবে, যদি ব্যাংকের মতো গৌরীসেন হয়ে থাকে তাহলে দেখতে হবে ব্যাংকের ঋণ আদৌ পরিশোধিত হচ্ছে কিনা, যদি অজ্ঞাত বা বেনামী ব্যক্তির কাছ থেকে আসে তাহলে নতুন চাকুরি খোঁজ করতে হবে।)

৬. কোম্পানি কি লাভ করছে? (যদি করে থাকে তাহলে দেখতে হবে তা সন্তোষজনক কিনা, যদি না করে থাকে তাহলে দেখতে হবে কতদিন ধরে লাভ করছে না এবং লোকসানের পরিমাণ কত, যদি কখনোই লাভের মুখ না দেখে থাকে তাহলে নতুন চাকুরি খুঁজতে হবে।)

৭. কোম্পানি কি স্যাচুরেশন পয়েন্টে পৌঁছে গেছে? (উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে নতুন চাকুরি খুঁজতে হবে।)

৮. চাকুরিটা কি দ্রুত স্যাচুরেশন পয়েন্টে পৌঁছে যাবে? (উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে নিজের ভবিষ্যত নিয়ে গভীর ভাবনা ভাবতে হবে।)

(মন্তব্য চলমান)


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বস, যেহেতু বিষয়বস্তু বাংলাদেশের চাকুরীক্ষেত্র, আপনি আলাদা করে পোস্ট দেন। সেখানে মন্তব্য করবো। অসাধারণ সমৃদ্ধ হতে যাচ্ছে লেখাটা সেটা বুঝতে পারছি।

তিথীডোর এর ছবি

চলুক চলুক চলুক
এটা একটা অসাধারণ মন্তব্য কাম তথ্যকেন্দ্র হতে যাচ্ছে।
আলাদা পোস্ট দেবার কঠিন দাবি, বিনীত অনুরোধ সব রেখে গেলাম। প্লিইইজজ!

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মন্তব্যটা তো এখানে শুরু করে ফেলেছি। এখন এটা এখানে বন্ধ করে দিয়ে নতুন পোস্ট শুরু করলে (যার শুরুতে এই অংশটুকু থাকবে) সেটা বিধির লঙ্ঘন হয়ে যায় না? পরামর্শ দিন।

আমি বাকি অংশ ড্রাফট করে রাখছি। বিধি লঙ্ঘন না হলে আলাদা পোস্ট দেবো, আর হলে বাকিটুকু এখানে মন্তব্য আকারে দেবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বিধি লঙ্ঘন হতো যদি আপনি তর্কের পাল্টা জবাব মন্তব্যে না করে নতুন করে পোস্ট দিতেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনি একেবার সম্পূরক একটা বিষয়ে আলোচনা করছেন। আমি লিখেছি আমেরিকার চাকুরীর কালচার নিয়ে আপনি বাংলাদেশের। আমার মনে হয় আপনার আলাদা করে পোস্ট করা যুক্তিযুক্ত।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঠিক আছে। আমি এখানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকে সেটা নতুন পোস্ট আকারে দিয়েছি (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি নিয়ে কিছু কথা — প্রেক্ষিত বাংলাদেশ)। যে অংশটুকু আমি এখানে অলরেডি লিখে ফেলেছি ঐ অংশটুকু পোস্টের শুরুতে কিছু পরিবর্তনসহ থাকলো। এর পর যদি মডুরা বা অন্য কেউ বিধির ব্যতয়ের আপত্তি তোলেন তাহলে আমি ঐ পোস্ট ডিলিট করে দেবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আমার অভিজ্ঞতা:


ছোট


কর্মীসংখ্যা ১৭-১৯ (যেমন, মানবসম্পদ আর হিসাবরক্ষণের লোকেরা খন্ডকালীন, সপ্তাহে ১ দিন আসতেন)।
ধরে বেঁধে, এক সপ্তাহ পরেই ভেতর কাজে ডুবিয়ে দেয়া হত নবাগতদের।



সুবিধা:

  • কাজ খুব ফোকাসড একটা বিষয় নিয়ে করা হত।
  • সরাসরি ইনভলভমেন্ট অনেক বেশি থাকতো।
  • অন্য কলিগরা কাজ ছেড়ে দিলে গুরুত্বপূর্ণ ক্লায়েন্টের কাজ আর সাথে অনেক কিছু শেখার সুযোগ চলে আসতো।
  • কাজের মালিকানা পাওয়া যেত, নিজের বানানো ডকুমেন্ট/ম্যানুয়াল, আর সক্রিয়ভাবে কাজ করে যোগ করা ফিচার খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় (কারণ, অতীতে খুব বেশি জিনিস ছিলো না।)
  • ইচ্ছে করলে সৌখিন কাজ করা যায়। (আমি বলেছিলাম, এই প্রজেক্টর পুরোনো, ব্রাইট না। তারপর আমি অ্যামাজন থেকে অর্ডার করে বিল করেছিলাম। একইভাবে, কম্পানির কলম, গিফট আর অন্যান্য লজিস্টিকস এর কাজ শুরু করেছিলাম। এঞ্জিনিয়ারিং এর পাশাপাশি অলিখিতভাবে অফিস অ্যাডমিন‌ ‌ হয়ে গিয়েছিলাম।
  • নতুন ধরণের কাজকর্ম দ্রুত প্রয়োগ করা যায় -স্তরবিন্যাসের ঝামেলা নাই।

অসুবিধা:

  • স্টার্টাপ মানসিকতার জন্য অযথা কিপ্টামি
  • খুব বেশিদিন কাজ করলে শেখার জিনিস কমে আসে
  • বেশিবছর (২-৩ বছর) কাজ করার পর সেটা রেজুমিতে খুব একটা ভালো লাগে না
  • কাজের চাপের কোন তালঠিক নাই, ছুটি ছাটা নেয়াকে খারাপ চোখে দেখা হয়
  • জবাবদিহিতার অভাব -মালিকের খেয়ালখুশিমত চলে অনেক কিছু। সে যতই খারাপ ম্যানেজার হোক, তার কোন মাপাকাঠিতে বিচার হয় না।
  • ভবিষ্যত নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকে

তিথীডোর এর ছবি

অপেক্ষাকৃত ছোট প্রতিষ্ঠানে কাজ শেখার সুযোগ বেশি, রাজনীতিও বেশি, কাজের চাপ অসম্ভব বেশি।
শতভাগ সহমত!

বয়স হয়েছে ঢের, সে তুলনায় আমার কাজের অভিজ্ঞতা তূলনামূলকভাবে কম। মাঝে দু বছর উচ্চশিক্ষার্থে দেশের বাইরে কাটিয়ে পদবী পালকে যোগ হয়নি কিছুই, সেটা নিয়ে কঠিন হতাশায় ভুগি। যে সেক্টরে আছি, তাতে ডিগ্রির চাইতে এক্সপিরিয়েন্স গুরুত্ব পায় বেশি, এমনটাই মনে হয়েছে। কাজ করিই মানবসম্পদ বিভাগে, প্রতিনিয়ত হতাশা আরো বাড়ে তরুণ গ্রাজুয়েটদের নিয়ে। ভবিষ্যতে এসব নিয়ে লেখার ক্ষীণ সাহস পোষণ করি।

গুরুত্বপূর্ণ পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

লিখে ফেলো তিথী।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

গবেষণাগারের অভিজ্ঞতা বলি,
(কর্মীর হিসেবে) ছোট গবেষণাগারে কাজের চাপ বেশি। অনেক কাজই নিজের যোগ্যতায় করে নিতে হয়। ব্যর্থতার সুযোগও সেজন্য বেশি। কিন্তু আবার ছোট ল্যাবে নিজের কর্তৃত্ব থাকে বেশি, স্বাধীনতাও।
বড় গবেষণাগারে একটা বিশাল মেশিনের ছোট্ট অংশ হয়ে গতানুগতিক কাজ করে যেতে হয়। সেখানে ব্যর্থতার সম্ভাবণা খুব কম। সেইসঙ্গে দারুণ কিছু সৃষ্টিরও।

বলে রাখি, এটা বিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতা। এর উল্টো অভিজ্ঞতাও অনেকের হয়/হওয়া উচিত।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।