তারার আলোয় দেখা

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: শনি, ১৯/০১/২০১৯ - ১:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(বছর তিনেক আগে লিখেছিলাম ক্ষুদ্র এই নাটিকাটি। একটি অনুষ্ঠানে মৌটুসীর সাথে কথোপকথন বা শ্রুতি নাটক হিসেবের পাঠের জন্য প্রস্তুত করা। এর আগে প্রকাশ করা হয়নি অন্য কোথাও। আজ সচলায়তনে দিলাম। দুষ্ট লোকেরা বলে এটা নাকি আমাদের প্রেম কাহিনী। তাদের কথায় একদম কান দেবেন না।)

তারার আলোয় দেখা


[সকাল সাড়ে সাতটা। সেমিস্টারের প্রথম দিন। মেকানিকাল ডিপার্টমেন্টের সামনে তরণী এবং অয়ন।]

তরণী: এই শোনো তুমি মেকানিকাল ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছো না?
অয়ন: ওহহ। হ্যাঁ। আমাদের প্রথম ক্লাস কোথায় হবে জানো?
তরু: ওই বোর্ডে লেখা দেখলাম, ওএবি বিল্ডিংয়ের ২১১ নম্বর রুম। কোথায় এটা?
অয়ন: ওএবি সিভিল ডিপার্টমেন্টের পিছনে।
তরু: চলো একসাথে যাই।
অয়ন: (তোতলাতে তোতলাতে) এএএ একসাথে?
তরু: কেন আমি কামড়ে দেবো নাকি?
অয়ন: না, না সেটা বলিনি। চলো যাই।

[যেতে যেতে]
অয়ন: আমি অয়ন।
তরু: আমি তরণী। তুমি কোন কলেজ থেকে পাশ করেছো?
অয়ন: মিরপুর বাংলা কলেজ।
তরু: অ্যাঁ বাংলা কলেজ? এটা কোথায়?
অয়ন: হা হা হা। মিরপুরে। তুমি কোন কলেজ থেকে?
তরু: আমি ভিকারুন্নেসা।
অয়ন: বাপরে!
তরু: বাপরে কেনো?
অয়ন: না, ভিকিরা খুব অহংকারী হয় শুনেছি।
তরু: হুঁহ মোটেও না। এধরণের কথা যারা বলে তাদের আমরা পাত্তাই দেই না।
অয়ন: হা হা হা... আচ্ছা তোমার ভর্তি পরীক্ষায় তোমার পজিশন তো অনেক উপরের দিকে ছিলো, তবুও সিভিল ছেড়ে মেকানিকালে ভর্তি হলে কেনো?
তরু: উমম, আমার বাবা ইলেকট্রিকাল ডিপার্টমেন্টে পড়েছে। বাবা বললো, মেকানিকাল আমার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে।
অয়ন: মেয়ে বলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হবে এমন ধারণা থেকে বাইরে এসে খুব ভালো করেছো।
তরু: থ্যাঙ্কিউ!
অয়ন: ওহহ। এইতো ২১১ নম্বর রুম। ঠিকাছে পরে কথা হবে। বাই।
তরু: বাইই।


[ফাউন্ড্রি ল্যাব।]

তরু: অয়ন। অ্যাই অয়ন।
অয়ন: হাই। কি ব্যাপার?
তরু: ফাউন্ড্রি ল্যাবের বর্ণনা শুনে ভয় লাগছে। তুমি আমার পার্টনার হবে?
অয়ন: সেকি প্রথম দিন দেখা হবার পর থেকে এক সপ্তাহ তো কোনো আর কথাই বলো না। এখন যেই দরকার তখন এসেছো, না?
তরু: ঢং করো না। সারাদিন ক্লাসের পর কথা বলার সুযোগই হয়নি। আর তুমিও তো দেখি ক্লাস শেষে ড্যাং ড্যাং করে বাসে উঠে যাও।
অয়ন: হা হা হা... চলো ল্যাবের জন্য ডাকছে, (জোর দিয়ে) “পার্টনার”।

[ফাউন্ড্রি ল্যাব শেষ। তুমি থেকে তুই।]

তরু: ওফ। ফাউন্ড্রি সেশনালটা এক্কেবার যা..তা। ক্যাফেতে যাই চল।
অয়ন: চল। আমাকে কিন্তু সিঙ্গাড়া খাওয়াতে হবে। তোর জন্য কত খাটা খাটনি করতে হলো। উফফ…
তরু: একদম মার খাবি। তোর সমান সমান খেটেছি আমি।
অয়ন: হা হা হা...

[ক্যাফেতে চেয়ারে বসতে বসতে]

অয়ন: এই এখানে দুটো চা আর সিঙ্গাড়া দিয়ে যাও তো। (তরণীর দিকে ঘুরে) তো কালকের ক্লাশ টেস্টের জন্য কিছু পড়াশোনা করেছিস?
তরু: আর বলিস না। সারাদিন ক্লাশ করে বই নিয়ে বসতেই চোখ ভরে ঘুম চলে আসলো কাল রাতে। তুই নিশ্চয়ই পড়ে ফাটিয়ে ফেলেছিস?
অয়ন: আরে ধুর। আমি তোর চেয়ে এক কাঠি বেশী ফাঁকিবাজ। বসে বসে সিনেমা দেখেছি কাল রাতে।
তরু: এক রাতে এতো কিছু পড়ে শেষ করতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না। আচ্ছা, (তুড়ি বাজিয়ে) আইডিয়া! চল একসাথে পড়ি।
অয়ন: কেমনে? রাতে মিরপুর থেকে কলাবাগানে আসবো কিভাবে?
তরু: ধুৎ এই বুদ্ধি নিয়ে বুয়েটে চান্স পেলি কেমনে?
অয়ন: তুই যেভাবে মাথা ভর্তি গোবর নিয়ে চান্স পেয়েছিস সেভাবে।

দুজনে: হা হা হা..

অয়ন: আমি তোকে কল করবো সাড়ে আটটার দিকে। তোর ফোন নাম্বার কত?
তরু: ৯১২৩৮৩১। কল করিস কিন্তু…


[প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষাকালীন ছুটি চলছে। তরণী পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ছাত্রী আবাসনে উঠেছে। সেখানে আজ তার প্রথম দিন।]

অয়ন: হ্যালো। ১৪৪ নম্বর রুমের তরণীকে একটু ডেকে দিবেন?

[দীর্ঘ বিরতির পর।]

তরু: হ্যালো।
অয়ন: উফ বাপরে কতক্ষণ ফোন ধরে আছি।
তরু: আর বলিস না। সেই এক কোনায় আমার রুম। হেঁটে ফোন পর্যন্ত আসতে আসতে পা ব্যাথা হয়ে গেলো। তোর খবর কি? পড়ে তো সব ফাটায় ফেলতেছিস না?
অয়ন: আর পড়া.. যা গরম পড়েছে!
তরু: ওফফ আমার রুমে একটা মাত্র ফ্যান। সে ঘোরে তো ঘোরে না। গরমে সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। একদম যা তা অবস্থা। মনে হচ্ছে সব ফেলে বাসায় চলে যাই।
অয়ন: সেকি! এই বাসা-হল দৌড়াতে দৌড়াতেই তো দেখি তোর সময় চলে যাবে!
তরু: আর বলিস না! আচ্ছা তুই সন্ধ্যায় আসছিস তো লাইব্রেরীতে পড়তে? আজকে ম্যাথের কিছু চ্যাপ্টার পড়ে রাখতে চাচ্ছিলাম।
অয়ন: হ্যাঁ কিছু চোথা যোগাড় করেছি। বিকেল পাঁচটার দিকে তোর হলে আসছি।
তরু: ঠিকাছে। রাখি এখন। বাই।
অয়ন: বাই।


[ছাত্রী হল। অয়ন এসেছে তরণীর সাথে দেখা করতে। হাতে পলিথিনে মোড়া ছোট্ট একটা টেবিল ফ্যান।]

তরু: কিরে কতক্ষণ হলো এসেছিস? সাথে এতকিছু কেনো? হলে উঠছিস নাকি?
অয়ন: নাহ। আমি সিট পাইনি। এই ফ্যানটা ধর। তোর জন্য।
তরু: মানে! কি অবাক কান্ড। আমার জন্য টেবিল ফ্যান এনেছিস! কোত্থেকে পেলি?
অয়ন: ওই যে টিউশনির টাকাটা পেলাম না পরশু। সেখান থেকে।
তরু: তোর টিউশনির টাকা দিয়ে আমার জন্য টেবিল ফ্যান কিনেছিস! তুই যে একটা ছাগল সেটা তো জানতাম। কিন্তু এখন তো দেখছি তুই আস্ত একটা পাগলও! এই ফ্যান আমি রাখতে পারবো না। এক্ষুনি ফেরত দিয়ে আয়।
অয়ন: ইয়ে। দোকানদার তো আর ফেরত নিবে না বলেছে। ইলেকট্রিকের জিনিস ফেরত নেয় না..
তরু: কি আশ্চর্য্য এই ফ্যান নিয়ে গেলে রুম মেটরা কি বলবে? মাকেই বা কি বলব?
অয়ন: বলিস যে আমার কাছ থেকে ধার নিয়েছিস। তুই হল থেকে বাসায় উঠলে আমি ফ্যানটা নিয়ে যেতে পারি।
তরু: তুই আসলেও আস্ত একটা পাগল…?


[দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাশ শুরু হয়েছে। প্রথম দিনের ক্লাশ শেষে ক্যাফেটিরিয়ায় আড্ডা দিচ্ছে অয়ন ও তরণী]

তরু: ইশ্ কেমিস্ট্রির প্রফেসর যা ভীষণ স্মার্ট না! আমি প্রথম দেখাতেই ফিদা হয়ে গেলাম…
অয়ন: ধুৎ। এইটুকু বাট্টু। তোর রুচি বলতে কিছু নাই।
তরু: তুই রুচির কি বুঝিস! তুই স্কুল লাইফে যে মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খেতি তার যা চেহারা..
অয়ন: হা হা হা... তবে যাই বলিস ম্যাথের স্নিগ্ধা ম্যাডাম কিন্তু অসাধারণ!
তরু: হা হা হা.. এই যে বলতে না বলতে তোর রুচির আরেকটা প্রমান মিলল।

(দুজনে একচোট হেসে নিলো)

অয়ন: আচ্ছা ক্লাশ শুরু আগের সপ্তাহ দুয়েক কোথায় ছিলি? ফোন টোন করে পাওয়াই যায়না!
তরু: ওইযে তোকে বললাম না, আমার ছোট খাম্মির বিয়ে ছিলো। সেটা নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম।
অয়ন: হুমম। একেবারে আকাশের চাঁদ হয়ে গিয়েছিলি। আমি তো ভাবলাম আমাকে ভুলে টুলেই গেলি কিনা।
তরু: তোকে মনে রাখে কে? আয়নায় চেহারা দেখেছিস। রাতের বেলা তোর কথা মনে করে ভুতের ভয় পাবো নাকি?
অয়ন: হা হা হা। দিলে বড় দুঃখ পেলাম।
তরু: হি হি হি। এই শোন বিয়েতে না একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে। জিশান নাম। খুবই স্মার্ট। হোন্ডা চালায় একটা।
অয়ন: আচ্ছা। কি করে?
তরু: আইবিএতে বিবিএ পড়ে, থার্ড ইয়ারে।
অয়ন: ও আচ্ছা।
তরু: কথা বলে এতো ভালো লেগেছে না! প্রায় রাতেই ফোন দেয়। আচ্ছা শুধু তোকে বললাম আর কাউকে বলিস না।
অয়ন: হুমম।
তরু: কিরে চুপ হয়ে গেলি কেনো?
অয়ন: কই নাতো। আচ্ছা মালিবাগে আমার জন্য একটা টিউশনির ব্যবস্থা করেছে শাহনেওয়াজ।আজকে দেখা করার কথা। মালিবাগ হয়ে মিরপুরে যেতে খবর হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। আজকে যাই রে।
তরু: ঠিক আছে। ফোন দিস রাতে।
অয়ন: দেখি। কখন বাসায় পৌছাই ঠিক নাই।


[ক্রিং ক্রি ফোন বাজছে]

অয়ন: হ্যালো। কে বলছেন?
তরু: হ্যালো, আমি তরু। যাক তোকে শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেলো। তুই তো পুরাই ডুমুরের ফুল হয়ে গেছিস। পাওয়াই যায় না। ক্লাশ শেষ করে দৌড় মারিস। ফোন করলেও ঘরে নাই। ঘটনা কি তোর?
অয়ন: ঘটনা কিছু না। ওই যে টিউশনিটা শুরু করলাম না মালিবাগে। সেটার কারনে ব্যস্ততা বেড়েছে। যেতে আসতেই সব সময় চলে যায়।
তরু: হুমম সেটাতো বুঝেছি। শুনলাম এক ছাত্রীকে পড়াচ্ছিস।
অয়ন: হ্যাঁ? হ্যাঁ… কে বলেছে?
তরু: কে বলেছে সেটা জরুরী না। ছাত্রীকে নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিস। আমাকে পাত্তাই দিচ্ছিস না সেটাই ভাবছি।
অয়ন: আরে ধুর। (তোতলাতে তোতলাতে) পড়াতে যাই আর ফিরে আসি। যেতে আসতেই সময় চলে যায়। ছাত্রীকে নিয়ে ভাবার সময় আছে?
তরু: হা হা হা .. তোতলাতে তোতলাতে তো শেষ হয়ে যাচ্ছিস? ঠাকুর ঘরে কেরে আমি কলা খাইনা, তাই না? ছাত্রী দেখতে কেমন?
অয়ন: (মৃদু লাজুক হেসে) আছে, খারাপ না।
তরু: হা হা হা.. তুই লজ্জাও পাচ্ছিস দেখি। হা হা হা..
অয়ন: বাজে বকিস না। তোর বিবিএ-ম্যানের খবর কি?
তরু: ভালোই আছে। এই তো সেদিন আশুলিয়া গেলাম জিশানের হোন্ডায় চড়ে। হোন্ডায় ঘুরতে এতো মজা না? মনে হয় সারাদিন ঘুরি।
অয়ন: সাবধাণ! হোন্ডা কিন্তু সেইফ না একদমই।
তরু: ফালতু কথা। তোর মতো ভিতুর ডিমের জন্য সবই আনসেইফ।
অয়ন: ফকিরের কথা বাসি হলে ফলে। আশুলিয়া কি করলি?
তরু: নৌকায় চড়ে ঘুরলাম। ফুচকা খেলাম। বিরিয়ানি খেলাম। গল্প করলাম।
অয়ন: সুখেই আছিস..
তরু: এই শোন, দেখি কি ছাউনি দেয়া কিছু নৌকা। জাস্ট আশুলিয়ার খালের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। ছাউনি ভিতরে কি ঘটছে বলতো?
অয়ন: এই ব্যাপাটার কথা আমি শুনেছি শরিফের কাছ থেকে।
তরু: শুনে লজ্জায় তো আমার কান লাল হয়ে গেলো ..
অয়ন: যাক আমাকে ছাড়া তাহলে তুই বিশেষ একটা খারাপ নেই।
তরু: এই তুই কিন্তু এভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দিস না। খুব খারাপ লাগে। তোর মতো ফ্রেন্ড হারাত চাই না।
অয়ন: ফ্রেন্ড হারানোর কথা আসছে কেনো? যোগাযোগ হোক বা না হোক আমরা বেস্ট ফ্রেন্ডস। এবং তাই থাকবো।
তরু: হুম। মনে থাকে যেনো।


[ক্লাশ শেষে অয়ন হন্তদন্ত হয়ে তরণীর আছে আসে।]

অয়ন: তরু, তরু চল ক্যাফেতে যাই। জরুরী কথা আছে।
তরু: কি ব্যাপার সব ঠিক তো?
অয়ন: আরে ওইযে এক ছাত্রীকে পড়াতাম না, সে এক কাণ্ড করেছে। সেদিন আমার বেতনের খামে দেখি একটা চিঠি। শুধু চিঠি না, একেবারে প্রেমপত্র!
তরু: বলিস কি! কি লেখা?
অয়ন: সে বিশাল চিঠি। আমাদের দুজনকে নিয়ে সে বিশাল পরিকল্পনা করে বসে আছে। কি করি বলতো।
তরু: কি করবি মানে! এইটুকু পিচ্চি মেয়ে কত্ত বড় সাহস। একদম না করে দিবি।
অয়ন: না করে দিবো? কিন্তু কেনো?
তরু: না করবি, কারণ কারণ… তুই তাকে তো পছন্দ করিস না।
অয়ন: অপছন্দও তো করি না।
তরু: মানে মানে তোর সাথে একদম মানায় না।
অয়ন: হা হা হা। কার সাথে মানায় তাহলে, তোর সাথে?
তরু: নো অফেন্স, আমাদের দুজনকে কিন্তু দারুন মানায়।
অয়ন: তুই তো চুটিয়ে প্রেম করছিস… আমি কি বসে আঙ্গুল চুষবো?
তরু: তাই বলে ছাত্রীর সাথে প্রেম করবি? তুই কালকেই গিয়ে টিউশনি ছেড়ে দিবি।
অয়ন: টিউশনি ছেড়ে দিবো?
তরু: হ্যাঁ। রিস্কি মেয়ে। কখন কি ঘটে যায় বলা যায় না। আচ্ছা তোকে তো বলাই হয়নি। আগামী সপ্তাহে মিড টার্মের ছুটিতে আমি দেশে বাড়ি যাচ্ছি এক সপ্তাহের জন্য। সেখানে ফোন নাই তাই কথা হবে না।
অয়ন: এ্যাঁ এক সপ্তাহ! এই ক্রিটিকাল সময়ে তুই থাকবি না? আচ্ছা এক কাজ কর না, আমার জন্য একটা চিঠি লিখে নিয়ে আসিস। তোর লেখা চিঠি পড়তে ইচ্ছা করছে।
তরু: চিঠি! পাগল! এই যুগে চিঠি লিখে কে?


[তরণী দেশের বাড়িতে বেড়াতে গেছে। কিন্তু জিশানের বদলে অয়নের কথাই খালি মনে পড়ে। সে একটা চিঠি লিখে।]

প্রিয় অয়ন,
সন্ধ্যা সাতটা বাজতেই আমাদের দেশের বাড়িটা ঘুমিয়ে পড়ে। বিশাল মাঠের মাঝখানে বড় একটা বাড়ি। চারিদেকে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর শুনশান নীরবতা। ঘর থেকে বেরোলেই বিশাল মাঠ আর বিশাল খোলা আকাশ। সারা মাঠ তারার আলোয় আলোকিত। রাতের আকাশ যে এতো সুন্দর হতে পারে সেটা আমার ধারণা ছিলো না। তুই এখানে থাকলে খুব ভালো হত। দুজনে মিলে চাঁদের আলোয় হাঁটতে হাঁটতে গল্প করতাম।

সন্ধ্যায় নিরিবিলিতে বসে গতদুইদিন ধরে খুব ভাবলাম, জানিস। মানে এই যে জিশান, তুই, তোর ছাত্রী - এইসব। জিশান খুব ভালো ছেলে। কিন্তু ওর ফ্যামিলি খুব কনজারভেটিভ। বড় বোন ডাক্তারী পাশ করেছে কিন্তু ওদের পরিবার কিংবা বোনের শ্বশুড়বাড়ি কেউই মেয়েদের ঘরের বাইরে কাজ করতে দিতে নারাজ। জিশান নিজেও এতে আপত্তির কিছু দেখে না। তাছাড়া জিশান প্রায়ই ওর মতামত আমার উপর চাপিয়ে দিতে চায়। বিষয়টা আমার একদমই ভালো লাগে না।

অন্যদিকে আছিস তুই। আজ ঢাকা থেকে অনেক দূরে বসে এই চিঠির আড়াল নিয়ে একটা কথা সাহস করে বলেই ফেলি। আমাদের সেই প্রথম পরিচয় থেকেই তোকে আমার খুব ভালো লাগে। তোর সহজ সরল বন্ধুত্ব, আমার প্রতি তোর কেয়ার, মেয়েদের মানুষ হিসেবে যোগ্য ভাবা - এগুলো সব কিছুই আমি খুব অ্যাপ্রিশিয়েট করি। তোর ছাত্রীর প্রেমপত্রের কথা শুনে আমি তাই খুব জেলাস হয়ে পড়েছিলাম। আচ্ছা তুই কি আমাকে একই রকম ভাবে পছন্দ করিস?

আমার না খুব ইচ্ছে করে তোর সাথে দূরে কোথাও ঘুরতে যাই। যেখানে থাকবো শুধু তুই, আমি আর তোর গিটার। এই রকম একটা নিশ্চুপ সন্ধ্যায় আমরা গিয়ে বসবো খোলা মাঠে, চাঁদের আলোয়। আর তুই টুংটাং গিটার বাজাবি আর আমি পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে বসে গান গাইবো - চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে, উছলে পড়ে আলো, ও রজনীগন্ধা, তোমার গন্ধসুধা ঢালো। পাগল হাওয়া বুঝতে নারে, ডাক পড়েছে কোথায় তারে। ফুলের বনে যার পাশে যায়, তারেই লাগে ভালো।

ভালো থাকিস অয়ন। খুব ভালো থাকিস।

ইতি, তরণী।


[ঢাকায় ফিরেই তরণী অয়নকে চিঠিটা দেয়। অয়ন চিঠি পড়ে ফোন দেয়।]

অয়ন: হ্যালো।
তরু: হ্যালো। কি খবর?
অয়ন: তোর চিঠিটা পড়লাম।
তরু: হুমম।
অয়ন: সত্যিই তুই আমাকে এতো পছন্দ করিস? আমি কখনো বুঝতেই পারিনি…
তরু: তুই তো একটা গাধা, সেজন্য।
অয়ন: সেটা অবশ্য সত্যি।

(দুজনেই হেসে ওঠে।)

অয়ন: তোকেও কিন্তু আমি খুব পছন্দ করি।সেই প্রথম দিন থেকেই।
তরু: আমি জানি।
অয়ন: কিভাবে জানিস। আমি তো কখনো বুঝতে দেইনি।
তরু: মেয়েরা অনেক কিছু টের পায়।
অয়ন: তাহলে তুই কি জানিস আমি যে তোকে মনে মনে ভালো বাসতে শুরু করেছি।
তরু: হুমম
অয়ন: তুই কি আমাকে ভালোবাসিস?
তরু: তুই একটা বুদ্ধু। এখনও বুঝতে পারিস নি?
অয়ন: তাহলে তো তোর চিঠির বর্ণনা মতো একদিন বেড়াতে যেতে হয়। দূরে কোথাও…
তরু: দূরে কোথায়?
অয়ন: যেখানে কেউ নেই, শুধু তুই আমি।

(দুজনে হেসে ওঠে)

১০
ভালোবাসা মানে ধোঁয়া ছাড়ার প্রতিশ্রুতি
ভালোবাসা মানে এলো চুল মাতোয়ারা
ভালোবাসা সময় থামার আগে
ভালোবাসা তোমার শুরু আমার সারা॥

ভালোবাসা মানে আর্চিস গ্যালারী
ভালোবাসা মানে গোপন গোপন খেলা
ভালোবাসা মানে কান্না ভেজা চোখে
ভালোবাসা নীল খামেদের ভেলা॥


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মন্তব্য- অনটপিকঃ

একটা নেপথ্য কণ্ঠের সিমেন্টিং ধারা বর্ণনাসহ করলে এটা বেশ একটা বেতার নাটক হয়ে যায়। কিছু খুচরা চরিত্র যোগ করলে নেপথ্য কণ্ঠটাকে বাদ দেয়া যাবে। সেক্ষেত্রে এটা টিভি নাটক হতে পারবে। তাছাড়া বর্তমান ফরম্যাটে একে শ্রুতি নয়, সাধারণ নাটক হিসাবেও মঞ্চায়ন করা যাবে। বিদ্যায়তন বা প্রবাসে যেখানে আয়োজনে সীমাবদ্ধতা থাকে সেসব পরিস্থিতির জন্য বেশ মানানসই। শেষের গানটাও লাগসই হয়েছে।

মাঝেমধ্যে নাটক লেখার চেষ্টাটা জারী রাখলে পারেন।

মন্তব্য- অফটপিকঃ

১. ওএবি-তে রুম নাম্বার ধরে রুম খুঁজে পাওয়ার চেয়ে লক্ষ্মৌয়ের বড় ইমামবাড়ার ভুলভুলাইয়াতে পথ খুঁজে পাওয়া সহজ। আজব একটা ভবন! সেখানে ভবনের ভেতরে হঠাৎ এক টুকরো উঠোন আছে, এমন একটা সিঁড়ি আছে যেটা বেয়ে কোথাও পৌঁছানো যায় না।

২. কম দামী সাবজেক্ট, বেশি দামী সাবজেক্ট – বিষয়টা মনে হয় দুনিয়ার খুব বেশি দেশে নেই। সাবজেক্টের যে অঘোষিত র্যাং কিং হয় এবং সময়ের সাথে সাথে সেটা পালটায় তা বিশ্বকর্মার পাঠশালায় না পড়লে হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারতাম না। যে আমলে মানুষ পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালাতো সে আমলে মানের নিম্ন ক্রমানুসারে জিজ্ঞেস করা হতো— কম্পিউটার/ইলেকট্রিক্যাল/সিভিল/কেমিক্যাল রেখে মেকানিক্যাল-এ পড়তে এসেছো কেন? এখন নিশ্চয়ই মানের ক্রমে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে।

৩. ঐ আমলে দেখা যেতো ক্লাসের যে কয় জনের চেহারা মেয়েদের মতো (তারা অবশ্য নিজেদেরকে মেয়ে বলেই দাবি করতো) তারা বিভিন্ন ল্যাবের সময় নিজেদের নিজেদের মধ্যে গ্রুপ করতো। কিন্তু বাওয়া, ফাউন্ড্রি ল্যাবে ঐসব মাস্তানী চলতো না। তখন দেখা যেতো কোন গ্রুপেই তাদের সংখ্যা একের অধিক না। সব সুড় সুড় করে ছেলেদের গ্রুপে ঢুকে পড়তো। যারা ফাউন্ড্রি ল্যাব সম্পর্কে ধারণা রাখেন না তাদের জ্ঞাতার্থে সবিনয়ে জানাচ্ছি যে, এই ল্যাবে বেলচা দিয়ে বালি তুলে বিশাল চালুনিতে ফেলে দুইজনে মিলে চালতে হয়। তারপর সেই বালি দিতে দুই মুখ খোলা মোল্ড বক্সে মোল্ড বানাতে হয়। একটু হেরফের হলেই বালির বানানো মোল্ড ভেঙে যায়। তখন আবার গোড়া থেকে কাজ শুরু করতে হয়। মোল্ড বানানো হলে নরকের আগুনের মতো চুল্লিতে লোহা বা পিতল গলিয়ে বিরাট হাতা দিয়ে ধরে গলিত ধাতু মোল্ডে ঢেলে জিনিস বানাতে হয়। তারপর সেই উত্তপ্ত জিনিস নানা কায়দায় ঠাণ্ডা করে শিক্ষককে দেখাতে হয়।

৪. ল্যান্ডফোন যুগের যোগাযোগ বা ফোনে প্রেম করার বিষয়টি মোবাইল যুগের কারও বোধে আসবে না। আর হলের ল্যান্ডফোনে ফোন করে কাউকে চেয়ে তার সাথে কথা বলতে পারা যে কী সৌভাগ্যের বিষয় সেটা বোঝাতে আস্ত নিবন্ধ লিখতে হবে।

৫. এখনকার কথা জানি না, আগে কোন হলের রুমে সিলিং ফ্যান থাকতো না (একমাত্র ব্যতিক্রম শহীদ স্মৃতি হল)। যেদেশে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা হরহামেশা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায় সেদেশে সিলিং ফ্যানকে বিলাসদ্রব্য ভাবাটা নির্বোধের কাজ ছাড়া আর কী!

৬. কেমেস্ট্রি’র কোন প্রফেসর ‘ভীষণ স্মার্ট’? ‘এন’ জুনিয়র নাকি? তার তো আবার ‘এল’ বলে সুনাম ছিল। আর ম্যাথের কোন ম্যাডাম ‘অসাধারণ’? আমরা তো এমন একজনকে পেয়েছিলাম যার ক্লাস নেবার ধরনে মনে হতো তিনি কোন পিরামিডের ভেতর থেকে বের হয়ে এসেছেন।

৭. ঐ আমলে আইবিএ’র বিবিএ বলে কোন বস্তু ছিল না। সুতরাং তাদের বেইল পাবার কোন ব্যাপারও ছিল না।

৮. বিশ্বকর্মার পাঠশালার এখনকার ছেলেরা কোন ‘ছাত্রী’ পড়ায় না, তারা পড়ায় ‘স্টুডেন্ট’। যথাঃ তোর মালিবাগের টিউশনিরটা কী, ছাত্র নাকি স্টুডেন্ট?

৯. এখন কেউ আর কাউকে প্রেমপত্র লেখে না। সাহিত্যের এক বিশাল অধ্যায়, ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের এভাবে নিরব বিদায় ঘটে গেল!

১০. পৃথিবীতে প্রেমে পড়ার সাথে তুলনীয় কিছু হতে পারে না। দুজনে দুজনের কাছে প্রকাশিত হবার মুহূর্তের সাথে তুলনীয় কিছু বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে হতে পারে না। জীবনে যে কখনো প্রেমে পড়েনি, দুজনে দুজনের কাছে ধরা খায়নি তার পক্ষে এর বিন্দুবিসর্গ বোঝা সম্ভব না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ওরে আপনার মন্তব্য পেয়ে তো আহ্লাদিত হয়ে গেলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ এই সুবিশাল মন্তব্যের জন্য। প্রেম পত্রের ব্যাপারটা আসলেই হারিয়ে গেছে। এখন মেসেজ বক্সে প্রেম বার্তা পাঠিয়ে সেটার স্ক্রিনশট বেরিয়ে যাবার ভয়ে থাকার যুগ চলে এসেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

নাটিকার মধ্যকার প্রেমালু ভাবটি বেশ লেগেছে। সিরিয়াস কিছু না। তবু শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। ডি এইচ লরেন্স যেমনটা বলেছেন, আধুনিক গল্পগুলো শুরু হয় ঠিক বিয়ের পর। তাই ডি এইচ লরেন্সের , তরু-অয়নের গল্পটির আধুনিক সিরিয়াস ভার্সানটি কেমন হবে , ভাবার চেষ্টা করলাম। তারপর মনে হলো, থাক না। কিছু সময়ের জন্য হলেও, নির্ভার গল্পটি উপভোগ করি।

স্নেহাশিস রায়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

এক লহমা এর ছবি

এতক্ষণে মন দিয়ে পড়ার সময় পেলাম! চমৎকার হয়েছে। একটু সম্পাদনা করে নিলে জমজমাট কাব্য-নাটিকা! আরো এইরকম কয়েকটি লিখে বই হিসাবে বার করার সময় আওয়াজ দিলে সম্পাদনায় সাথে আছি।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ পড়ার জন্য। আরো দুচারটা প্রেম করলে পরে বই লিখবো এসে। হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঘ্যাঁচাঙ


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ডরায়েন না ভাই। সাহস করে মন্তব্য করে ফেললেই পারতেন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার সাহস বরাবরই কম। আর এখন তো মোটামুটি ভীতুর ডিম হয়ে গেছি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এক লহমা এর ছবি

মন্তব্যটা আমি পড়ে ফেলেছিলাম। হাসি ঘ্যাচাং করাটা ভালোই হয়েছে। দেঁতো হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ে আনন্দ পেলাম। নাটক দেখার/শোনার চাইতে পড়তে বেশি ভালো লাগে আমার।

---মোখলেস হোসেন

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অসংখ্যা ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

আয়নামতি এর ছবি

একটা নেপথ্য কণ্ঠের সিমেন্টিং ধারা বর্ণনাসহ করলে এটা বেশ একটা বেতার নাটক হয়ে যায়।

সহমত। জনতার দাবী এই চমৎকার নাটকটা রেকর্ড করা হোক।

এই সম্পূর্ণ প্রেম কাহিনির 'ফ্যানের অংশটা' ভাবী শিকাগোর বাংলা গানের অনুষ্ঠানে বলেছিলেন(ভাবীর পরনে সাদা সবুজ জামদানী ছিল। আপনি ভাবীর গানের সাথে গিটার বাজিয়েছিলেন)। এইটা যে কোনোভাবেই আপনাদের পেম কাহিনি নয়, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত চোখ টিপি

দারুণ প্রেমালু নাটক লিখবার জন্য উত্তম জাঝা!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনি সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন নাকি? মিজান, পিষে ফ্যালো

এক লহমা এর ছবি

কে যে কোথায় হাজির থেকে যায়! খাইছে

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আয়নামতি এর ছবি

জ্বী ভাই হাসি

হিমু এর ছবি

দ‍্যাখো তো "পোস্টের প্রচ্ছদ" হিসাবে চলে কি না:

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

জটিল! এখনই জুড়ে দিচ্ছি।

হিমু এর ছবি

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

খুবই ভালো লাগলো! অনেকদিন পর ব্লগে এতো চমৎকার একটি লেখা পড়লাম!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

কনফুসিয়াস এর ছবি

বাহ, দারুণ লাগলো পড়তে।

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।