মাঝখানের সময়টুকু

Sohel Lehos এর ছবি
লিখেছেন Sohel Lehos [অতিথি] (তারিখ: শনি, ১৮/১১/২০১৭ - ৫:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাতি নিভে গেল। এক মুহুর্তের জন্য- কিংবা কে জানে কতকালের জন্য। নিকষ আঁধারে তলিয়ে গেল চারদিক। আলি আহমেদ চোখ বুজেই বুঝতে পারলেন অন্ধকার এর থেকে বেশি কালো হতে পারে না।

সবকিছু আঁধারে তলিয়ে যেতেই দম বন্ধ করে ফেলেছিলেন তিনি। দম বন্ধ করেই থাকলেন তিনি। শ্বাস না নিয়েও কি আশ্চর্য প্রশান্তি বুকের ভেতর। শ্বাস নেবার কোন প্রয়োজনই নেই।

জায়গাটা অদ্ভুত রকম নিস্তব্ধ। কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়া সে স্তব্ধতা। সহ্য করতে না পেরে আলি আহমেদ চিৎকার করে উঠলেন- কেউ কি আছেন?

আলি আহমদের চিৎকার সহস্রবারেরও বেশিবার প্রতিধ্বনিত হল। অত্যন্ত স্লথ গতির সে প্রতিধ্বনি। প্রতিটি শব্দ ধীরালয়ে পুনরাবৃত্তি হতে লাগলো।

ভয়ে চুপ মেরে গেলেন তিনি। মনে করার চেষ্টা করলেন শেষ কি ঘটেছিল।

বড় ছেলে, বড় ছেলের বউ, তার স্ত্রী, কাজের মেয়ে জ্যোৎস্না, আর কে কে যেন, তিনি মনে করতে পারলেন না, সবাই তার উপর ঝুঁকে ছিল। তিনি মাটিতে পড়ে ছটফট করছিলেন।

এইভাবে কতদিন কেটে গেল। কিংবা আসলেই দিন কাটল কিনা তাই বা কে জানে। সময়হীন সময়ে সময় কাটে কি করে?

তিনি ভাবেন। ফেলে আসা স্মৃতি। এছাড়া আর কি বা করার আছে?

শ্বাস না নিয়ে, খাবার না খেয়ে, ঘুম না ঘুমিয়ে তিনি দিব্যি রইলেন। তারপর এক ক্ষণে তার মনে হল তিনি এগিয়ে চলছেন। মসৃণ গতিতে সে এগিয়ে চলা।

এভাবেই চলল - যেখানে সময় নেই সেখানে সময় বোঝাতে যাওয়া বৃথা। শুধু আলি আহমেদের মনে হল অনন্তকাল ধরে তিনি এগিয়ে চলছেন।

ব্যাপারটা ঘটল ধীরে ধীরে। আলি আহমেদের স্মৃতির বিস্মৃতি ঘটতে লাগল। এক সময় নিজের স্ত্রীর চেহারাও আর মনে করতে পারলেন না তিনি।

অনেক দূর, এত দূরে যে সে দূরত্বের পরিমাপ করার কোন সংখ্যা নেই তেমন এক দূরে, ম্লান আলো দেখা গেল। আলি আহমেদ সেদিকেই এগিয়ে চললেন। না হেটেই। অদৃশ্য এক কনভেয়ার বেল্টে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।

এক সময় আলো তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগল। আলি আহমেদ নিজের দেহে পরিবর্তন টের পেলেন। তার মনে হল তিনি সংকুচিত হচ্ছেন।

তারপর প্রচন্ড ধাক্কায় তীব্র আলোতে বের হয়ে এলেন তিনি। আলোর ঝলকানিতে অন্ধ হয়ে গেলেন ক্ষণিকের জন্য। যখন চোখ সয়ে এল তিনি দেখলেন- কিছু চোখ গভীর আগ্রহে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন।

কেউ একজন কোন একজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,"কংগ্রাচুলেশন্স! আপনার ছেলে হয়েছে।"


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেকদিন পরে লিখলেন। ঠিক একই প্লটের কয়েকটা গল্প পড়েছি আমি। এই গল্পটা তুলনায় বেশ দুর্বল। গল্পটি প্রেডিক্টেবল, তবে কত গল্পই তো এমন প্রেডিক্টেবল হয়। শব্দের ব্যাবহার আর বাক্যের বিন্যাসে বহুবার শোনা গল্পটিই হয়ে ওঠে অচেনা।

----
মোখলেস হোসেন

Sohel Lehos এর ছবি

আসলে ফেসবুকে লেখি। এখানে লেখা হয় না আর কি। গল্পের প্লটটা যে কমন জানা ছিল না। গল্পটা কেন "দুর্বল" লাগল খুলে বললে বুঝতে পারতাম। এটা একটা অণুগল্প। পরিসর ছোট। এর মধ্যেই গল্প ফুটিয়ে তুলতে হয়। সেটা হয়তো করতে পারিনি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্প গল্পই, সে অণুই হোক কি পরমাণু। এমনকি গ্রহাণু সাইজের হলেও রসভঙ্গ হবেনা যদি পড়ে আরাম পাওয়া যায়, মনে দাগ রেখে যায়। দুর্বল লেগেছে দুটি কারণে। প্রথমত মৃত্যু পরবর্তী সময়টার বর্ণনা। এখানে লেখক সৃষ্টিশীল হতেই পারতেন। এই ধরনের প্রায় সব গল্পেই দেখি নিস্তব্ধতা, অন্ধকার, আর প্রতীক্ষার কথা। ব্যাপারটা অন্যরকমও হতে পারতো। দ্বিতীয় কারণ লেখার স্টাইল। আলোহীনতার বর্ণনায় ঘুটঘুটে আঁধার, নিকষ আঁধার, ঘোর অন্ধকার ছাড়া আর কিছু কি লেখা যায় না! তারপর ধরুন এই বাক্য দুটি, 'জায়গাটা অদ্ভুত রকম নিস্তব্ধ। কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়া অদ্ভুত সেই নিস্তব্ধতা।' প্রথম বাক্যেই বলেছেন অদ্ভুত নিস্তব্ধতা, পরের বাক্যে আবারও সেই একই বিশেষণ।

আমি আপনার আরও কিছু লেখা পড়েছি, তুলনায় এই গল্পটি সত্যিই দুর্বল লেগেছে। মানে আমার মতে আর কি।

---মোখলেস হোসেন

Sohel Lehos এর ছবি

আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য ধন্যবাদ

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

এক লহমা এর ছবি

বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'দেবযান' পড়েছেন? এই ধারার গল্পের জমাটি উপন্যাস।
মোখলেস ভাইয়ের সাথে একমত। সাথে আর একটা ভাবনা ঠুকি - পুনর্জন্মে আবারো ছেলে? হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

Sohel Lehos এর ছবি

পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

সোহেল ইমাম এর ছবি

আপনি বরাবরই আপনার গল্প দিয়ে চমকে দেন। এবার পারেননি কিন্তু। আপনার কাছে খুব দ্রুত আরেকখানা গল্পের দাবী তৈরী হয়ে গেলো।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

Sohel Lehos এর ছবি

আসলে এই গল্পে চমক দেয়াটা উদ্দেশ্য ছিল না। ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।