মনে না রাখার মতো ২

মনামী এর ছবি
লিখেছেন মনামী (তারিখ: শুক্র, ২০/১১/২০০৯ - ১১:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“চা খাইবেন? চা?”

প্রথমে প্রথমে মুখে বেঁধে যেত । পেটের মধ্যে সুড়সুড়ি। লোকে কথা শুনে দাড়াবেতো? আস্তে আস্তে শেখা হয়ে গেছে ।

“দুইটা রং চা লাগান”

কাজটা মজারই আছে। কত রকমের লোক দেখা যায়! দোস্ত যে কাজটা করে, সেটার তুলনায় তো বেহেশতের চাকরি।
এই পরশু দোস্তের কেনি আঙ্গুলটা কাটা পড়লো। দোস্ত হাসে আর বলে “ সবার আঙ্গুল পাঁচটা, আর আমার সাড়ে চারটা বুঝছস তারেক?”, তারপর আবার ব্যাথায় মুখ কুঁচকে ফেলে। রক্ত পড়াও বন্ধ হয় নাই। সকালে রওনা হওয়ার আগে দেখে এসেছে। খুব জর। কালকে কাজে যেতে পারে নাই। আজকে থেকে আবার কারখানায় যাবে। না গেলে তো পয়সা পাবে না। অ্যালুমিনিয়ামের কারাখানার কাজ এমনই হয়।

ভাগ্য খুব ভালো যে নিউমার্কেটে চায়ের দোকানের এই কাজটা পাওয়া গেছে। প্রতিদিন কামরাঙ্গির চর থেকে নদী পার হয়ে যদিও হেঁটে আসতে হয়, কিন্তু তাতে কী? বাড়ির কাছে কাজ করতে হলে তো জুটতো হয় অ্যালুমিনিয়াম, নয় বেলুন আর না হলে প্লাস্টিকের কারখানার কাজ। তারপর দোস্তের মত সাড়ে চারটা আঙ্গুল নিয়ে ফ্যা ফ্যা করে হাসো। আর কি গরম কারখানায়! মাসেতো মোটে এক হাজার টাকা!

নিউমার্কেটে মাঝে মাঝে ওর বয়সী ছেলে মেয়েরা আসে স্কুলের ব্যাগ কেনে, বই – খাতা কেনে, রঙিন পেন্সিল কেনে। স্কুলে যাওযার কথা তো ওদের মনেই আসেনা । ও আর ওর দোস্তরা তো সেই গ্যাদাকাল থেকেই জানে হাত – পা শক্ত হলেই কাজ করতে হবে। ওর ৩ বছরের বোনটাকে অবশ্য ফুল বেঁচতে নেয়ার জন্য খুব টানাটানি করছিল শিমু আপা। বোনটার চেহারা খুব মায়া মায়া । ভার্সটির ছেলেমেয়েরা বলে ওর চেহারা দেখেই ফুল কিনবে । মা দেয় নাই। আচ্ছা ঐযে ছেলে মেয়ে গুলা ব্যাগ – বই কিনতে আসে ওদের তো কোনো কাজ করতে হয়না নিশ্চয়? যখন যা ইচ্ছা তাই খেতে পায়! ও তো দেখেছে, অনেকেই তো এটা সেটা খাওয়ার বায়না ধরে, তখন মা বলে বাসায় কত কিছু বানানো আছে যেয়ে খেও। ওর মা তো বিল্ডিং এ ইট, সিমেন্ট টানার কাজ করে। খুব ধকল যায় মায়ের। একসঙ্গে যখন বাড়ি ফেরে তখন মায়ের পা চলতেই চায়না। এখন তো ও কাজ করা শুরু করেছে এখন কষ্ট একটু কমবে। ভাতের কষ্ট আর হবেনা।

ধুর! বসে বসে এসব ভাবলে হবে? ওকে আরো চটপটে হতে হবে, আরো জোরে হাঁক দিতে শিখতে হবে, যাতে সব কাস্টোমার ওদের দোকানেই আসে। আরো বড় দোকানে কাজ নিতে হবে। যাতে চালের দাম যতই বাড়ুক, ভাত খেতে পাওয়া যায়।

ছবি :http://www.commercialappeal.com/photos/2009/nov/19/140396/


মন্তব্য

মৃত্তিকা এর ছবি

ভালো লাগলো লেখার বিষয়বস্তু।

মনামী এর ছবি

দেঁতো হাসি

নিবিড় এর ছবি

ভাল লাগল চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

মন খারাপ হলেও এটাই সত্যি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

বইখাতা এর ছবি

খুবই বাস্তব।
ভালো লাগলো।

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

দূঃখ জনক কিন্তু একান্তই বাস্তব।

ছবিটা কি আপনার তোলা ? মারাত্মক একটা ক্যাপচার !!

=======================================
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

মনামী এর ছবি

ছবি তুলার আমার ক্ষ্যামতা নাই রে ভাই মন খারাপ. লিঙ্ক তো দিয়া দিসিলাম। থ্যাংকু।

ভণ্ড_মানব এর ছবি

মনটা খারাপ করে দেয়া লেখা...তবুও বাস্তব মেনে নিতেই হয়। মন খারাপ
তিনবেলা খেতে পারলেও আমাদের বেশিরভাগই এমন অসহায় যে এদের জন্য কিছু আমরা করতে পারিনা।
লেখা ভাল্লাগছে।

মনামী এর ছবি

মেনে কি নিতেই হবে? রাষ্ট্রব্যবস্থা কি এমন হতে পারেনা যা কাজ করবে শিশুদের আশ্রয়কাঠামো হিসেবে?

মনামী এর ছবি

আমার লেখা আপনাদের ভালো লেগেছে, আমি যারপরনাই কৃতার্থ। অনেক ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।