এপিফ্যানি

মনামী এর ছবি
লিখেছেন মনামী (তারিখ: মঙ্গল, ২২/০২/২০১১ - ৯:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঝাকায় রাখা পায়রাগুলা জোড়া ১০০ টাকা। মরাইট্টা টাইপ পায়রা তাও এত দাম। পায়রার গায়ে তো মাংস থাকে না, খালি হাড্ডি। তবে ঝোলটা খুব উপকারী। ছোট্ট মেয়েটা দুলকি চালে যাইতেসিল। ফট কইরা ঝাকার পাশে থামলো। গাদাগাদি কইরা ফালায় রাখা ময়লা পায়রাগুলার মাথায় হাত বুলায় দিয়া দৌড়াইলো সামনে।

ঠিক এইসময়ই অমি স্কুলে যাওয়ার জন্য বাইর হইলো। যাইতে যাইতে রনির কথা ভাবতেসিলো। রনি কালকে খুব মারাত্মক একটা কথা বলসে। এরকম সে কখোনো ভাবে নাই। রনি কিভাবে ভাবলো এটাও তার মাথায় ঢুকতেসেনা। পোলাটা বিটলার বিটলা। তাইলে বিটলামি কইরাই বলসে। কিন্তু মুখ দেখে মনে হয় নাই।

স্কুল বাসার কাছেই। তাই ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই রাস্তা শেষ। ক্লাশে গিয়া দেখে রনি চুপচাপ নিজের জায়গায় বইসা আসে। ওদের আবার সিট ঠিক করা। আগে এরকম ছিল না। নতুন ক্লাশটিচার আসার পর এমন হইসে। মুন্না একটা ফালতু পোলার সঙ্গে খুব পিচপিচ কইরা কথা বলতেসে। মেজাজটা আরো খারাপ হয়। আজকাল স্কুলের পর এদের সঙ্গেই কই কই জানি যায়। মেয়েদের স্কুলের সামনেও বলে যায় এরা। মুন্নাটা কেমন বদ হয়ে যাইতেসে দিন দিন।

ক্লাশ ওয়ান থেকে অমি, রনি আর মুন্না একসঙ্গে পড়ে। আসার সময় যে য্যামনেই আসুক। যাওয়ার সময় তিনজন একসঙ্গে যায়। একপাশে অমি, একপাশে মুন্না আর মাঝখানে রনি। রনি ফাইজলামি কইরা বলে - তোরা হইতাসশ আমার চাকর। রাজা - বাদশারা হাঁটেনা, চাকরবাকরে হাঁইটা দেয়। তোরাও আমারটা হাঁইটা দ্যাস। ওজনই নাই পোলাটার। দুইজন দুইপাশ দিয়া ধইরা - সাই সাই কইরা উড়ায়া নিয়া যাওয়া যায়। স্কুল থেকে বাইর হইলে কামালের দোকান। দোকান ছাড়ায়া সামনে আগাইলে বড় রাস্তা। ওরা যখন আরো ছোট ছিল তখন মনে হইতো বড় রাস্তায় গিয়া পড়তে পারলে অন্য একটা দুনিয়ায় চইলা যাওয়া যায়। কি ভয়ই না লাগতো! আর এখন বড় রাস্তা কি, চৌরাস্তার মোড় পর্যন্ত ঘুরা হয়ে গেসে।

একদিন মুন্না বলে আমার কাম আসে, আমি যাইগা। রনি কইলো, তোর আবার কাম কি? মুন্নার ওপর কি ভুত চাপসিলো আল্লাই জানে, বলে কি, অই আমি কি তোর মত নাকি! ফুটবল খেলতে যামু। বইলাই গটগট কইরা চইলা গেল। তারপর ওদের স্কুলের পর ঘুরাঘুরি কেমন জানি ঝিম মাইরা গেসে।

কালকে ক্লাশে জিগাইলো - কে কি হইতে চায়।নতুন ক্লাশে উঠলে সবসময়ই জিগায়। তো সবাই বলতেসে - ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, চাল্লুগুলা বলতেসে এম বি এ। রনিরেও জিগাইসে। বিটলাটা কিছুক্ষণ চুপ কইরা থাকলো তারপর বলে কি - স্যার আমি তো হাঁটতে পারি না। আমি কিসুই করতে পারবো না। ভিক্ষা করবো।

ক্লাশ শেষ হওয়ার পর অমি জিগাইসে - এইটা তুই কি বললি? রনি কিসুই হয় নাই এমন ভাব কইরা বললো - কোনটা?

ভিক্ষা করবি বললি ক্যান?

আমার মত যারা তারাতো ভিক্ষাই করে।

তোরে বলসে...

অমি আর কথা খুঁজে পায় নাই। আর বাঁকায়া থাকা পা দুইটা ঘষটাইতে ঘষটাইতে রনি চইলা গেসে।


মন্তব্য

The Reader এর ছবি

মন খারাপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।