১৫ আগস্ট: কবিতা এবং আমার কিছু কথা

মৃন্ময় আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন মৃন্ময় আহমেদ (তারিখ: মঙ্গল, ১৪/০৮/২০০৭ - ১১:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার প্রিয় রবীন্দ্র-সংগীতগুলি গাইলো না কোন শিল্পী,
আমার রুহের মাগফেরাত কামনা করলো না কোন শুভ্রশ্মশ্রু ইমাম,
আমার মুখ ঢেকে দেয়া হলো না কোন সদ্যকেনা শুভ্র-কাফনে।
শুধু গোপন আঁখির জল আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে রাত্রির অন্ধকারে
সেই কবি আবে-জমজমের পবিত্র পানির মতো ঝরতে লাগলেন...;
যতক্ষণ-না দূরে, গ্রামের বাড়িতে, আমার জন্য প্রস্তুত হলো কবর।

কি জন্যে লিখছি কেন লিখছি জানিনা; তবে এটা জানি যে, লিখে শান্তি পাচ্ছি। আমি আসলে বুঝি না কিভাবে মানুষ এতো মহান একজন ব্যক্তিকে ভুলে যায়? কোন মানসিকতা নিয়ে কোনো একজন এই দিনে মিথ্যে জন্মদিনের উৎসবে মেতে উঠে? কোনো ভাষা খুঁজে পাই না আমি...

আমি তেমন একটা ভালো লিখতে পারিনা; কিন্তু নির্মলেন্দু গুণের কবিতাখানায় তাঁর কথা খুব সুন্দরভাবে সবই বলা আছে।

সূর্যগ্রহণের সময় সূর্য এবং চন্দ্রগ্রহণের সময় আকাশের চাঁদ
যেরকম গ্রহণগ্রস্ত মানুষের দৃষ্টিকে দখল করে, তিনিও ঠিক
তেমনি, এই বঙ্গীয় বদ্বীপবাসীর দৃষ্টিকে দখল করেছিলেন;
আর নিজেকে পরিণত করেছিলেন জন্মভূমির নয়নমণিতে।

সূর্যমুখী যেমন সর্বদা সূর্যের দিকে স্থির করে রাখে তার মুখ,
অথবা প্রথম প্রেমে-পড়া তরুণ প্রেমিক তার প্রেমিকা-বিগ্রহে
যেরকম অপলক চোখে মগ্ন রহে,- তিনিও ঠিক ঐ রকমই
তাঁর জন্মভূমির রুগ্ন-পান্ডুর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।

তিনি বাংলার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন জীবনানন্দবৎ,
তিনি বাংলার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন রবীন্দ্রনাথবৎ,
তিনি এই ভূখন্ডবাসীর মুখে তাকিয়ে ছিলেন নজরুলবৎ।
তাই তাঁর চোখে ধরা পড়েছিলো রূপসী বাংলার সি্নগ্ধ মুখশ্রী,
তাই তাঁর চোখে ধরা পড়েছিলো- 'আমার সোনার বাংলা',
তাই তাঁর চোখে ধরা পড়েছিলো মুক্তি-স্বপ্ন, প্রিয় স্বাধীনতা।

তিনি তাঁর দেশকে ভালোবেসেছিলেন হো চি মিনের মতো,
তিনি তাঁর জন্মভূমিকে ভালোবেসেছিলেন লেনিনের মতো,
তাই বন্দী ভূখন্ডবাসীর অশ্রুতে দ্রব হয়েছিলো তাঁর হৃদয়।
তাই তাঁর অন্তর্ভেদী দৃষ্টি-বিস্ফোরণে দ্রুত খসে পড়েছিলো
ধর্মের ঘোমটার আড়ালে আচ্ছাদিত ছদ্মস্বাধীনতার মুখোশ।
তাই তাঁর চোখে ধরা পড়েছিলো জন্মভূমির কলোনিকালিমা।

তাঁর দেশপ্রেম ছিলো প্রশ্নাতীত, তিনি ছিলেন প্রতিদ্বন্দীহীন,
তাঁর জাগতিক অস্তিত্বই ছিলো স্বাধীনতার অনন্ত ঘোষণা।

আমিও যদি এমন একখানা কবিতা লিখতে পারতাম! পারিনা। শুধু আজকের বাংলাকে দেখে যাই- দেখে যাই আমরা বাঙালীদের মূর্খতা আর অপারগতা। আমরা শুধু পারি একজন আরেকজনকে দোষারোপ করতে। আর সেই সুযোগ নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আজও এই বাংলার রাজপথে সুসজ্জিত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। কী লজ্জা!!!
আজও আমরা অহেতুক মেতে উঠি মুক্তিযুদ্ধে মৃতের সংখ্যা গণনায়। আমরা ভুলে যাই স্বাধীনতার কথা। ভুলে যাই বিজয়ের কথা। ভুলে যাই সুস্থ সবুজ বাংলার গড়ার কথা। কী লজ্জা!!!
কবে আমরা আমাদের বাঙালী নামের মর্যাদা রক্ষা করতে শিখবো?????

আমার কাছে ১৫ আগস্ট

১৫ আগস্ট মানে নয় মাইকে ফুল ভলিয়্যুমে ভাষণ,
১৫ আগস্ট মানে নয় কাঙালিভোজের আয়োজন,
১৫ আগস্ট মানে নয় কালোবেজ ধারণ,
১৫ আগস্ট মানে নয় 'বিচার চাই' শ্লোগান,
১৫ আগস্ট মানে নয় দেয়াল লিখন,
১৫ আগস্ট মানে নয় শ্রদ্ধাঞ্জলীর তোরণ।

১৫ আগস্ট মানে অনিষ্ট-দুর্নীতির সহমরণ,
১৫ আগস্ট মানে সন্ত্রাস রাহাজানি দমন,
১৫ আগস্ট মানে 'সুস্থ বাংলা' শপথ গ্রহণ,
১৫ আগস্ট মানে হারানো বাংলার অনুসন্ধান,
১৫ আগস্ট মানে আপামর জনতার পুনজাগরণ,
১৫ আগস্ট মানে অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াই আমরণ।


মন্তব্য

ঝরাপাতা এর ছবি

হৃদয়ের গভীর হতে উচ্চারিত সত্য।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'বসে আছি নিহত পয়ার কোলে মুজিবের রক্তাক্ত বাংলায়'

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ফারুক হাসান এর ছবি

শোক হোক শকতি!

-----------------------
জানেনিতো, ইহা নিতান্তই নিজস্ব মতামত

স্যাম এর ছবি

'মনের মুকুরে' এখন আমার সবচেয়ে প্রিয় সেকশন! আরেকটি পুরনো লেখা পড়তে পারলাম! নির্মলেন্দু গুণের কবিতাটি এই প্রথম পড়লাম। ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।