বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা ও রবীন্দ্রনাথ : 'গ্রহগণ জীবের আবাসভূমি' থেকে 'বিশ্বপরিচয়' : দ্বিতীয় পর্ব

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০২/১১/২০১১ - ৩:৪৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


কুলদা রায়
এমএমআর জালাল

প্রথম পর্বের লিংক : http://www.sachalayatan.com/node/41831

দ্বিতীয় পর্ব
বিজ্ঞানধারণাকে জনপ্রিয় করার জন্য রবীন্দ্রনাথের মন প্রস্তুত হয়েছিল তার বাল্যকালে বাড়ির বিজ্ঞানমনস্ক বাবা ভাইবোন শিক্ষকদের সাহচর্যে। তার পাঠ্যপুস্তক এবং অন্যান্য পাঠেও বিজ্ঞানবিষয়ক পড়াশুনার কিছু নমুণা খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া সে সময়ে তৎকালীন ভারতে এবং বিশ্বে বিজ্ঞান পরিস্থিত নিয়ে কিছু আলাপ করা গেছে প্রথম পর্বে।

দ্বিতীয় পর্বে আমাদের অনুসন্ধান রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞান বিষয়ে কি ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করছেন। এ কাজে সহায় করেছেন তার পুত্র, জামাই এবং বন্ধুপুত্রকে। দেশী-বিদেশী বিজ্ঞানীদের সঙ্গেও তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। তাদের সঙ্গে বিজ্ঞানের হালহকিকত নিয়ে মত বিনিময় করছেন। গ্রামোন্নোয়নের কর্মসূচি গ্রহণ করছেন। ল্যাবরেটরি স্থাপন করছেন। লোকশিক্ষা সংসদ স্থাপন করছেন। বিজ্ঞান পরিভাষা তৈরির কাজ করছেন। হাতে কলমে লেখার কলাকৌশল দেখিয়ে দিয়ে বিজ্ঞান লেখক তৈরি করছেন। পাশাপাশি নিজেও লিখছেন।

--------------
শুধু কথা নয়--কিছু কাজ :
-----------------------------
রবীন্দ্রনাথ তাঁর ছেলে রথীন্দ্রনাথকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষিবিদ্যা পড়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। ১৯০৯ সালে তিনি ফিরলেন। রবীন্দ্রনাথ ছেলেকে নিয়ে গেলেন শিলাইদহে।তাকে কাজে লাগিয়ে দিলেন কৃষির আধুনিকায়নের কাজে। কনিষ্ঠ জামাতা নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে কৃষিবিদ্যায় মার্কিন দেশ থেকেই পড়িয়ে এনেছেন। শিলাইদহে গড়ে তুলেছেন কৃষি গবেষণাগার। সেখানে শস্যবহুমুখীকরণ, শস্যের নতুন জাত প্রচলন, কীটপতঙ্গ দমন, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ করার চেষ্টা করেছেন।

রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানী বন্ধু
-----------------------------
জগদীশচন্দ্র বসু : :
যৌবনে বিশ্ববিশ্রুত পদার্থবিদ ও জীববিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু হয়ে উঠেছেন রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত বন্ধু। তাঁর সঙ্গে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। চিঠিপত্র বিনিময় করেছেন। জগদীশচন্দ্রের জন্য আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। তাঁর গবেষণার বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন। আবার এই বিজ্ঞানীবন্ধুকেও বাংলায় লেখায় জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন।

পিয়ারসন্স ::
কেমব্রিজ থেকে বি.এস-সি পাশ পিয়ারসন্স কলকাতায় আসেন উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপনা করতে। তিনি বাংলা শিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথে একান্ত সচিব হিসাবে কাজ করেন।

প্রশান্ত মহলানবিশ ::
প্রখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি রবীন্দ্রনাথের অন্তরঙ্গ সহচর ছিলেন।

শৈলজারঞ্জন মজমুদার : :
নেত্রকোণা থেকে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। রসায়ন বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান দখল করে এম,এস-সি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি শান্তি নিকেতনের রসায়নের শিক্ষক ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্টজন। পরে গানের শিক্ষক হিসাবে সুনাম অর্জন করেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ নিযুক্ত করেছিলেন।

রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী ::
বিজ্ঞানে কোন মৌলিক গবেষণা করে রামেন্দ্রসুন্দর খ্যাতি লাভ করেননি ঠিকই, তবু দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নতি, বিজ্ঞান চর্চার প্রসারের জন্য তাঁর দান অবিস্মরণীয়। বিজ্ঞান বিষয়ক বহু বই রচনা করে সাধারণের কাছে বিজ্ঞানকে সহজলভ্য করে তোলেন।তাঁর রচিত ও প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৬।. বিজ্ঞান ও দর্শন নিয়ে সহজ করে লেখা তাঁর দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ ‘প্রকৃতি’ (১৮৯৬) ও ‘জিজ্ঞাসা’ (১৯০৪)।. প্রকৃতির উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগুলোর মধ্যে আছে - সৌরজগতের উৎপত্তি, আকাশ তরঙ্গ, আলোকতত্ত্ব, পরমানু ইত্যাদি। এগুলো মূলত, সমকালীন বৈজ্ঞানিক তৎপরতা নিয়ে লেখা। তাঁর মতে - ‘কোন সিদ্ধান্তকে একবারে পাকা কারিয়া ধরা বিজ্ঞান-বিদ্যার স্বভাব নয়। জ্ঞানের বিস্তারের সহিত প্রত্যেক সিদ্ধান্তকেই পূর্ণতার এবং পরিণতির দিকে লইয়া যাওয়াই বিজ্ঞান-বিদ্যার কাজ। বিজ্ঞান-বিদ্যা যে পথে চলিতেছে সেই পথেই তাহাকে চলিতে হইবে।’ তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে পুন্ডরীক কুলকীর্তি পঞ্জিকা (১৯০০), বঙ্গলক্ষীর ব্রতকথা (১৯০৬), কর্মকথা (১৯১৩), বিচিত্র প্রসঙ্গ (১৯১৪), শব্দকথা (১৯১৭), নানাকথা (১৯২৪), জগৎকথা (১৯২৬), মায়াপুরী ইত্যাদি।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু ::
একজন ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু । তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র ছিল গাণিতিক পদার্থবিদ্যা। সত্যেন্দ্রনাথ বসু আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে যৌথভাবে বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান প্রদান করেন, যা পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে বিবেচিত হয়। ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী সত্যেন্দ্রনাথ কর্মজীবনে সম্পৃক্ত ছিলেন বৃহত্তর বাংলার তিন শ্রেষ্ঠ শিক্ষায়তন কলকাতা, ঢাকা ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। সান্নিধ্য পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, মাদাম কুরী প্রমুখ মণীষীর। সত্যেন্দ্রনাথ বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রবল সমর্থকই ছিলেন না, সারা জীবন ধরে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ধারাটিকেও পুষ্ট করে গেছেন। এই প্রসঙ্গে তাঁর অমর উক্তি, “যাঁরা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান হয় না, তাঁরা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না।” বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের উদ্দেশ্যেবিজ্ঞান পরিচয় নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেন তিনি।

লেনার্ড এলমার্স্ট : :
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে ডিগ্রি নিয়ে ভারতে আসেন। এখানকার কৃষকদের দুর্দশা দেখে সংকল্প করেন এদের অবস্থার পরিবর্তন করাই তাঁর জীবনের ব্রত হবে। এই উদ্দেশ্য নিয়ে কৃষিবিজ্ঞান শিখতে আমেরিকায় গিয়ে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। আমেরিকান কবি মুডির বিধবা স্ত্রী হ্যারিয়েট মুডি রবীন্দ্রনাথকে এলমার্স্টের ইচ্ছার কথা বলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে শান্তিনিকেতনে আমন্ত্রণ জানান। কর্নেল বিশ্বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে তিনি শান্তি নিকেতনে চলে আসেন। তাঁর ধনী বান্ধবী ডরোথী স্ট্রেট গ্রামোন্নোয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থসাহায্য করেন ২৫০০০ ডলার। সুরুলে অনুর্বর জমিতে সার প্রয়োগের মাধ্যমে উর্বরতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেন প্রথমে। এই সার হল জৈব সার। তারার ব্যবহার করলেন মনুষ্যমল। ১৯২৪ সালে তিনি চিনে গিয়েছিলেন সেখানকার কৃষিবিপ্লব প্রত্যক্ষ করতে।

বিজ্ঞানী সান্নিধ্য :
------------------------
আইনস্টাইনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দুবার সাক্ষাৎ ঘটেছে ১৯৩০ সালে ১৪ জুলাই ও ১৯ আগস্ট। তারা দুজন বিজ্ঞান, দর্শন, বিশ্বপরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলাপ করেছেন। এ সাক্ষাৎকারগুলো তৎকালীন পত্রপত্রিকায় গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়েছে। আইনস্টাইন এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথকে লিখেছেন—জার্মানিতে যদি এমন কিছু থাকে যা আপনি চান এবং যা আমি করতে পারি, দয়া করে যখন খুশি আমাকে আদেশ করবেন। দীর্ঘকাল আমি নিজেকে আপনার অগণিত ভক্তমণ্ডলীর মধ্যে গণ্য করে এসেছি। সম্প্রতি আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচিত হতে পেরে যে কতটা আনন্দিত কী বলব।
এছাড়া কোয়ান্টাম বলবিদ্যার নির্মতা হার্নাব হাইজেন বার্গ কলকাতায় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করেছেন ১৯২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিজ্ঞানী জোমার ফেল্ট কবির সঙ্গে দেখা করেছেন ১৯২৯ সালে।

বাংলায় প্রথম বিজ্ঞান বক্তৃতা :
---------------------------------
সে সময়ে বাংলাভাষায় বিজ্ঞানবিষয়ক বইপত্রের সংখ্যা খুবই কম ছিল। বিজ্ঞানবিষয়ক রচনার ভাষার মানও তেমন সর্বসাধারণের উপযুক্ত ছিল না। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী তখন এগিয়ে এসেছিলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চায়। তিনি সহজ সরলল ভাষায় আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে বিজ্ঞানবিষয়ে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করতেন। লিখেছেন বইপত্র। তাঁর অনুসারী একদল তরুণও গড়ে উঠেছে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধপাঠের আগ্রহপ্রকাশ করেন । কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলায় বক্তৃতা করার অনুমোদন না করলে তিনি বক্তৃতা প্রদান অনুষ্ঠানটি বর্জন করার ঘোষণা দেন। ফলে কর্তৃপক্ষ তার দাবী মেনে নিয়ে বাংলায় বক্তৃতা করার অনুমতি দিতে বাধ্য হন। এই সময়কালে রবীন্দ্রনাথও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষায় সাহিত্য বিষয়ে বক্তৃতা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের বাইরে। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী এবং রবীন্দ্রনাথ দুজনেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা প্রণয়ন কমিটিতে কাজ করেছেন।

পরিভাষা বিষয়ক কাজ:
---------------------------
বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চার প্রধান অন্তরায় উপযুক্ত পরিভাষা। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী পরিভাষার স্বরূপটি কি হবে তা বলছেন, যে শব্দটি প্রয়োগ করিবে, তাহার যেন একটি সুনির্দিষ্ট, বাঁধাবাঁধি, সীমাবদ্ধ, স্পষ্ট তাৎপর্য থাকে। প্রত্যেক শব্দ একটি নির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহার করিবে। সেই শব্দটি আর দ্বিতীয় অর্থে প্রয়োগ করিবে না এবং সেই অর্থে দ্বিতীয় শব্দের প্রয়োগ করিবে না। এই হইল বৈজ্ঞানিক পরিভাষার মূলভাষা। (রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, রচনাবলী, ৩য় খন্ড, ১৯৫০)

এ ধরনের ভাষা গড়ে তোলা যথেষ্ট শ্রমসাধ্য। কারণ ভাষা দিয়ে যেমন আমাদের চিন্তাকে প্রকাশ করি, তেমনি সেই ভাষা আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে আমাদের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরিভাষিক নির্মাণ তথা নির্বাচন ঠিকমত হলে তা আমাদের চিন্তাকে এগিয়ে দিতে সাহায্য করে। অপর পক্ষে পরিভাষিক শব্দ যদি অস্পষ্ট চিন্তাকে আড়াল করে রাখে, তবে শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানের অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে। বিজ্ঞানের পরিভাষা নির্মাণে প্রচলিত শব্দের সাহায্যে যে সর্বদা হবে, এমন নয়। অনেক সময়ই নতুন নির্মাণ বা সৃষ্টির প্রয়োজন হতে পারে।

এই দিক দিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত বয়সের রবীন্দ্রনাথ ও রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষা রচনা ও সংকলের ভার দিয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ মনে রেখেছেন-- ভাষার স্বভাবের দিকে লক্ষ রেখেই পরিভাষার মধ্যে যথার্থতা আনার দরকার। তার হাতে অনেক পরিভাষা তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেক সৃষ্টিশীলতা দেখতে পাওয়া যায়। সেইসব পরিভাষার অনেকগুলিই আজও সাদরে গৃহীত ও নিত্যব্যবহার্য। রবীন্দ্রনাথের সৃজিত কিছু পরিভাষার উদাহরণ—আপজাত্য (degeneracy), অভিযোজন (evoluation), প্রজননতত্ত্ব (genetics), আঙ্গিক (technique) (, কেন্দ্রকতা (centrifugal), কেন্দ্রানুগ (centripetal), আবেগ (emotion), পরিশ্রাবণ (filtering), মহাকর্ষ (gravitaion), আদিম (Original), কক্ষপথ (Orbit), অনুবীক্ষণ (microscope), খনিজ পদার্থ (Mineral), তেজ (radiation), তেজস্ক্রিয় Radio active), নীহারিকা (nebula), মহাজাগতিক রশ্মি (cosmic ray), মৌলিক পদার্থ (element), যৌগিক পদার্থ (compound), সৌরমণ্ডল (Solar space)।

সাময়িকপত্রে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানবিষয়ক রচনা
---------------------------------------------------------------
রচনার নাম—পত্রিকার নাম---প্রকাশকাল---বিষয়
------------------------------------------------------
১. গ্রহগণ জীবের আবাসভুমি –তত্ত্ববোধিনী –১৭৯৬ শকাব্দ, ১২৮১—জ্যোতির্বিজ্ঞান/ প্রাণতত্ত্ব
২. সামুদ্রিক জীব—ভারতী—১২৮৫ বৈশাখ—প্রাণতত্ত্ব/ সমুদ্রবিজ্ঞান
৩. সঙ্গীতের উৎপত্তি ও উপোযগিতা—ভারতী—১২৮৮, আষাঢ়—ধ্বনিতত্ত্ব/ সঙ্গীত// মনস্তত্ত্ব
৪. বাংলা উচ্চারণ—বালক—১২৯২ আশ্বিন-কার্তিক—ভাষাতত্ত্ব
৫. বৈজ্ঞানিক সংবাদ—বালক --১২৯২ আশ্বিন-কার্তিক—বিবিধ
৬. একটি প্রশ্ন—বালক—১২৯২--অগ্রহায়ণ—ভাষাতত্ত্ব
৭. সংজ্ঞাবিচার—বালক—১২৯২ ফাল্গুন—ভাষাতত্ত্ব
৮. বৈজ্ঞানিক সংবাদ—সাধনা—১২৯৮ অগ্রহায়ণ—প্রাণতত্ত্ব
ক) গতিনির্নয়ের ইন্দ্রিয়
খ) ইচ্চামৃত্যু
গ) মাকড়সা সমাজে স্ত্রী জাতির গৌরব
ঘ) উঠপক্ষীর লাথি
৯. রোগশত্রু ও দেহরক্ষক সৈন্য—সাধনা—১২৯৮ পৌষ
১০. বৈজ্ঞানিক সংবাদ—সাধনা
ক) জীবনেরর শক্তি
খ) ভূতের গল্পের প্রামাণিকতা
গ) মানবশরীর
১১. স্বরবর্ণ ‘অ’—সাধনা—১২৯৯ আষাঢ়—ভাষাতত্ত্ব
১২. স্বরবর্ণ ‘এ’—সাধনা—১২৯৯ কার্তিক—ভাষাতত্ত্ব
১৩. টা টো টে—সাধনা—অগ্রহায়ণ—ভাষাতত্ত্ব
১৪. সাময়িক সারসংগ্রহ : উদয়াস্তে চন্দ্রসূর্য—সাধনা—১৩০০ জ্যৈষ্ঠ--জ্যোতির্বিজ্ঞান
১৫. সাময়িক সারসংগ্রহ : অভ্যাসজনিত পরিবর্তন—সাধনা—১৩০০ আষাঢ়—প্রাণতত্ত্ব
১৬. সাময়িক সারসংগ্রহ—সাধনা—১৩০০ ভাদ্র-পদার্থবিদ্যা
ক) মানুষ সৃষ্টি
খ) ওলাওঠার বিস্তার
গ) ঈথার
১৭. কর্তব্যনীতি (অধ্যাপক হাকসলির মত)—সাধনা--১৩০০ পৌষ—বিবিধ
--১৮. ভূগর্ভস্থ জল এবং বায়ূপ্রবাহ—সাধনা—১৩০১ আশ্বিন-কার্তিক—ভূতত্ত্ব

লোকশিক্ষা সংসদ
---------------------
১৯১৬ সালে কলকাতায় শিক্ষাকমিশন এলে তিনি প্রবন্ধ লিখে বলেছেন, দেশীয় ভাষার আধারে যাবতীয় জ্ঞানবিজ্ঞান দেশের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। ১৯৩৬ সালে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী আজিজুল হকের সামনে লোকশিক্ষা সংসদ স্থাপন করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু সরকার এ প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন না করায় তিনি বিশ্বভারতীর উদ্যোগে লোকশিক্ষা সংসদ স্থাপন করে বাংলা ভাষায় বিবিধ জ্ঞানবিজ্ঞান বিতরণের আয়োজন করেন।
রবীন্দ্রনাথ ১৯৩৬ সালে 'লোকশিক্ষা সংসদ' গঠন করেছিলেন, তারও মূল উদ্দেশ্য ছিল সবার জন্য শিক্ষার বিস্তার। স্কুল-কলেজের বাইরে দেশের সর্বত্র স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে, বিশেষ করে যাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষার সুযোগ কম তাদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের জন্য স্বতন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। এ সংসদ বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, বোম্বে, আসাম, ত্রিপুরা প্রভৃতি স্থানে শতাধিক কেন্দ্র ছড়িয়ে দিয়ে পাঠ্যসূচি সমাপ্ত করে পরীক্ষা গ্রহণান্তে উত্তীর্ণদের উপাধি দেয়ার ব্যবস্থা করেছিল।

জীবনের প্রান্তে লোকশিক্ষা গ্রন্থমালা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন বিশ্বাভারতী থেকে। শিক্ষাসত্রের ভেতরে ও বাইরে যাদের মধ্যে শিক্ষা ছড়াবার কাজ হচ্ছিল তারা যাতে অর্থনীতি, দর্শন, ইতিহাস, কৃষি , শিল্প ও বিজ্ঞান ইত্যাদি সব বিষয়ে মোটামোটি কাজ চালাবার ধরনে শিক্ষা লাভ করতে পারে তার জন্যে সহজ সরল ভাষায় লোকশিক্ষা গ্রন্থমালা ছেপে বের করা হয়েছিল। এর অনেক বই স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই রচনা করে প্রকাশ করেন, অন্য আরো অনেকে অবশ্য সে কাজ সাহায্য করেছিলেন।

বিশ্বভারতীর শিক্ষক প্রমথনাথ সেনগুপ্ত তাঁর আনন্দরূপমে লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথ বলেন–’গল্প এবং কবিতা বাংলাভাষাকে অবলম্বন করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে অশিক্ষিত ও অল্পশিক্ষিত মনে মননশক্তির দুর্বলতা এবং চারিত্রিক শৈথিল্য ঘটবার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে।
এর প্রতিকারের জন্য সর্বাঙ্গীন শিক্ষা অচিরাৎ আবশ্যক। বুদ্ধিকে মোহমুক্ত ও সতর্ক করবার জন্য প্রধান প্রয়োজন বিজ্ঞানচর্চার। লোকশিক্ষা গ্রন্থ প্রকাশে তার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।’
এ ভাবনা থেকেই রবীন্দ্রনাথ লোকশিক্ষা গ্রন্থমালা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন।

রবীন্দ্রনাথ খুব স্পষ্টভাবে বুঝেছিলেন—
-------------------------------------------
১. আমাদের মানুষ বিজ্ঞান সংস্কৃতির সঙ্গে অপরিচিত।
২. বিজ্ঞান একালের সংস্কৃতির খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
৩. বিজ্ঞানের কাছে যুক্তিনিষ্ঠার নেওয়ার সঙ্গে তার ভাষাকেও রপ্ত করতে হবে।
৪. কোনো বিজ্ঞানী ও সাহিত্যরসিক এই কাজে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারবেন। বিজ্ঞান ও সাহিত্যের মেলবন্ধন ঘটালে সার্থক বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা পাওয়া যাবে।
৫. বিজ্ঞানলেখক সৃষ্টির বিকল্প নেই।
৬. বিজ্ঞানের বর্ণনা শুধু বিশদ এবং নিখুঁত হলেও চলবে না। তাকে সৃষ্টিশীল এবং ভাবগর্ব হতে হবে। অর্থাৎ তার মধ্যে নতুন নতুন পরীক্ষা এবং চিন্তাভাবনার বীজ থাকা চাই। কারণ ভাষা যেমন চিন্তাকে রূপ দেয়, তেমনি সেই রূপের প্রভাবও আমাদের উপর পড়ে।

-------------------------------------------------------------------------------------(তৃতীয় পর্ব অনুসরণ করুন)

সূত্র :
১. রবিজীবনী--প্রশান্তকুমার পাল
২.রবিজীবনকথা--প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
৩. রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়স্বজন -- সমীর সেনগুপ্ত
৪. দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়-- রবীন্দ্রনাথ ও বিজ্ঞান
৫. রঙের রবীন্দ্রনাথ --কেতকী কুশারী ডাইসন ও সুশোভন সরকার
৬. রবি ঠাকুর, রাহাজানি এবং রবীন্দ্র পূজারীবৃন্দ : ফরিদ আহমেদ ও অভিজিৎ রায় :
৭. 'আমি কোথায় পাব তারে' থেকে 'আমার সোনার বাংলা' --কুলদা রায় ও এমএমআর জালাল :
৮. এইখানে গান নিয়া আলাপ চলিতেছে --কুলদা রায়


মন্তব্য

ফাহিম হাসান এর ছবি

লেখাটা রবি জীবনীর নানা তথ্যের একটা খন্ডিত তালিকা মাত্র। চোখ বুলিয়ে মুখ থেকে বেরিয়ে গেল -

তো ???

কুলদা রায় এর ছবি

তো, আপনি ঠিক ধরেছেন। দ্বিতিয় পর্বে রবিজীবনীর খণ্ড খণ্ড তথ্য দেওয়া হয়েছে। এটাতো রবীন্দ্রনাথের জীবনেরই ঘটনা। তবে বিজ্ঞানের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কটা একটু অনুসন্ধান করার চেষ্টা করছি। তিনি কোন পরিবেশে কিভাবে বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির জগতে এলেন, একজন সাহিত্যিক কি করে বিজ্ঞান নিয়ে লিখছেন, বিজ্ঞান লেখক তৈরি করছেন---তার পক্ষে একটি উন্নতমানের বিজ্ঞানের বই লেখা সম্ভব কিনা না, নিজে পারবেন না বলে অন্যকে দিয়ে লিখিয়ে তার নিজের নামে বের করার অবস্থা ছিল কিনা--অর্থাৎ স্রেফ রাহাজানি করা সম্ভব কিনা, এসব দিকেই আমরা একটু একটু করে আগাচ্ছি। আশা করছি পরের পর্বে সেখানে পৌঁছুতে পারব। কবুল করছি ভাল গদ্য লেখার জন্য এলেম দরকার। সেটা এই লেখকদ্বয়ের নেই। ফলে ক্ষতিপূরণের জন্য কিছু গান দিলাম। শুনে দেখতে পারেন। ধন্যবাদ।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

কল্যাণF এর ছবি

এক্কেবারে ঠিক। যত বড় বড় আভাস দেয়া হয়েছিল তার ধারে কাছেও এই লেখা যাচ্ছে না। সচেতন ভাবে এটা করা হয়ে থাকলে পাঠক হিসেবে আমার সাথে প্রতারণা করা হল বলেই আমার মনে হচ্ছে। অথবা লেখকদের এই ধরনের একটা লেখা লেখার মত বিদ্যা ঘটে নাই। ইতমধ্যে প্রকাশিত এইসব জিনিস আবার লিখে কি যে প্রমাণ করা হচ্ছে কে জানে। লেখকদ্বয়ের একজন কুলদা রায় তো পাঠকের মন্তব্যের উত্তরে এমন জ্ঞানগর্ভ প্রতিমন্তব্য এর আগের পোস্টে করলেন যাতে মনে হয় উনি যথেষ্ট যুক্তিবাদী। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান রচনার প্রমাণ বিষয়ক প্রতিশ্রুত সেই সব যুক্তিপূর্ণ আলোচনা কই? আর একটি পোস্টের কথা মনে পড়ছে যেখানে জামাতী চরিত্র বিশ্লেষণ করার কথা বলে আও-ফাও কথা সাঁটে মেরে লেখক কেটে পড়েছিল। মানের দিক থেকে এই পোস্ট ওই পোস্টের থেকে আলাদা কোথায়? এটাকেও কি বলা উচিত মেটা ব্লগিং?

কুলদা রায় এর ছবি

কল্যাণতো বেশ ভালই বলেন। আমার ভালো লাগছে আপনার মন্তব্য, কল্যাণ। আপনি যে পড়ছেন এই পোস্টটি তা কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কুলদা রায়ের নাম থাকলে লোকে তো পড়েন না।
বস, আপনি যদি বলেন--কি কি থাকলে প্রতারণা হত না, তাহলে সেটা করার চেষ্টা করা হত। বলুন।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

কল্যাণF এর ছবি

ধন্যবাদ যে এবার অন্তত মন্তব্যের উত্তর দিয়েছেন। আরে দাদা বস আর হতে পারলাম কোথায়, তাহলে তো আমার নিজের নিক থেকে মন্তব্য করতে বা লিখতে পারতাম, লেখালেখির ক্ষমতা সুপ্রমান করে বসতো আপনি, তাই না? সচলে তো এমন ট্রাডিশন দেখি নাই যে লেখকের নাম কুলদা হলে পড়ব না আর কল্যাণ হলে পড়ব। এখানে তো সবাইকে সবার লেখা পড়তে দেখি কোন রকম গ্রুপিং ছাড়াই, সেই শিক্ষাই তো পেলাম রে ভাই সচল থেকে। আপনি কি বুঝতে পারছেন না যে আপনাদের কাছে আমার মত পাঠকের প্রত্যাশা অনেক? আপনার পোস্টের প্রথম পর্বে কিন্তু মন্তব্যের ঘরে লিখেছিলাম কি ধরনের কন্টেন্ট আপনার পোস্টে অনুপস্থিত মনে হয়েছে আমার কাছে, অন্য কথায় আশা করছি। সেই মন্তব্যে পরিস্কার করেই লিখেছি এই পোস্টে কি কি থাকলে প্রতারণা হত না বা পাঠক হিসেবে কেমন লেখা পড়ার প্রত্যাশা ছিল আপনাদের কাছে, তাই আবার সেই সব এখানে লেখা নিস্প্রয়োজন যেহেতু আপনার কোন উত্তর সেখানে পাই নি। তারমানে কি আপনি আমার মত সাধারন পাঠককে গোনায় ধরার প্রয়োজন মনে করেন না? মানি আমার মত অতি তুচ্ছ পাঠকের উত্তর দেয়া না দেয়া আপনার স্বাধীনতা, আর সেক্ষেত্রে পোস্টের নিজস্ব ব্যাখ্যা দাড়া করানোও আমার স্বাধীনতা, তাই না?

কল্যাণF এর ছবি

একটা জিনিশ বলতে ভুলে গেছিলাম "কল্যাণতো বেশ ভালই বলেন" - আপনার এই বাক্যে অনেক সাহস পেলাম।

কুলদা রায় এর ছবি

ভূমিকা সংযোজন করা হল। এবং কৃষিবিজ্ঞানী এলমার্স্টের তথ্য যোগ করা হল।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

স্বাধীন এর ছবি

আপনাকে অনেকে মিলে খুব স্পষ্ট একটি প্রশ্ন করেছি যেটার জবাব দেওয়াটা মনে করি নুতন পর্ব লেখার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নটি ছিল এই লেখাতে সহ লেখক জালাল ভাইয়ের কন্ট্রিবিউশান কি কি? আপনার কাছে থেকে সোজা কিছু জবাব আশা করি। বইলেন না যে সহলেখক হতে হলে যা যা কন্ট্রিবিউশান লাগে জালাল ভাইয়ের কন্ট্রিবিউশান তা তা। এই ধরণের প্যাঁচানো জবাব ব্যতীত স্পষ্ট করে আমাদেরকে জানান যে এই সিরিজে এবং আগের লেখাগুলোতে জালাল ভাইয়ের কন্ট্রিবিউশান কি কি।

কুলদা রায় এর ছবি

প্রশ্নটা আপনারা করেছেন। প্রশ্নের উত্তর আমি দিয়েছি। এ উত্তরে আপনারা সন্তুষ্ট না হলে আপনাদের বলতে হবে আপনারা ঠিক কি জানতে জান--সেটি বিশদবিস্তারে ক্লিয়ার করে বলুন। ক্লিয়ার করুন---সহলেখক শব্দটির আর কোন সংজ্ঞা জানা আছে কি আপনাদের? থাকলে বলুন তার চরিত্রবৈশিষ্ট্যগুলি কি কি? তারপর না হয় আরও উত্তর দেওয়া যাবে।

বাই দা ওয়ে, ধরা যাক --ওমুক লেখাটায় দুজন লেখকের নাম সহলেখক হিসাবে দেখলাম, তাদের নাম যথাক্রমে মি: এক্স এবং মিঃ ওয়াই। আমি কি কখনো প্রশ্ন করেছি মিঃ এক্স যে লেখাটি লিখেছেন, তার সহলেখকের কন্ট্রিবিউশনটা কি ছিল রে ভাই? সেটা কিন্তু আমি কখনো করিনি। বরং মিঃ এক্স এন্ড মিঃ ওয়াই কিসব বলেছেন, সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে লেখালেখি করেছি। ভ্রান্তির উত্তর দিয়েছি।
কখনো নিজে একা কাজটি করেছি। কখনো সহলেখকদের সঙ্গে করেছি।

এ বিষয়ে আমার ঠাকুরদা অসাধারণ বাণী দিয়েছিলেন ছেলেবেলায়। তিনি কিঞ্চিত পান করতেন। বুঝতে পেরেছেন তো? আমি তার নাতি। তিনি বলেছিলেন, কেউ কোনো কথা বললে--অসভ্যরা বলে--কে কইলরে কথাডা? আর সভ্যরা বলে--কি বলল রে কথাডা? সভ্য আর অসভ্যের পার্থক্যটা দাড়াচ্ছে--কি এবং কে--এর মধ্যে। বিষয়টা এরকম হচ্ছে কি মিঃ স্বাধীন?

আমি সোজাসুজিই কথা বলি। খাজুরগাছের তলায় বসে ন্যাজ নাড়াই না। ভাইরে--বেশী ফাল পাইড়েন না। আমাদের লেখালেখি কোনো ব্যক্তিবিশেষের কাছে গুরুত্ব পেল কি পেল না সেইটা নিয়া কখনো ভাবি নাই। ভাবতেও চাইনা। এই কথাটা একটু সরলভাবে বুঝে নিবেন। আর যদি লেখার কোনো তথ্য বা বক্তব্য সম্পর্কে কোনো কথাবার্তা থাকে বলিবেন। ক্লিয়ার করিয়াই আলাপ ও সালাপ করিব।

এবং বলে রাখি--রবীন্দ্রবিরোধিতার স্বরূপ নিয়ে আমরা পনের খণ্ড লিখিব। থামিব না। দ্যাটস ইট।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ভাইরে--বেশী ফাল পাইড়েন না।

চরম আপত্তিকর মন্তব্য কুলদা রায়।

কুলদা রায় এর ছবি

'ত্যানা প্যাচানি' যদি চরম আপত্তিকর না হয়, তাইলে 'বেশি ফাল পাইড়েন না'ও চরম বা নরমপন্থী জাতীয় কোনো পর্যায়ের আপত্তিকর হতে পারে না ধুসর গোধুলী।
এই পোস্টটায় অপ্রাসাঙ্গিক খাজুরে আলাপের উদ্দেশ্য কি? স্পষ্ট করে তো বলেছি--আমি চণ্ডাল গ্রুপের লোক। এইসব ধানাই পানাই বলে--লেখা থামানো যাবে না। কাল মুক্তমনায় লেখার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজ হয়তো সুপ্তফণা ব্লগ কেড়ে নেবে।
কাল হয়তো স্বাধীন নামের পরাধীন লোক ধমক দিয়ে কথা বলেছেন। আজ হয়তো আপনি বলছেন। আগামীদিন হয়তো আরেকজন বলবেন। তাতে কিছুই যায় আসে না। এগুলো লেখা থামানোর কায়দা কৌশল। ছাগু বাঁচানোর কৌশল।
লেখার বিষয় নিয়ে মন্তব্য করুন। ট্রাকে আসুন।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আমার মন্তব্যের কোথাও 'কুলদা রায় ত্যানা প‌্যাচায়' কিংবা 'ত্যানা প‌্যাচায়েন না' উল্লেখ করেছি বলে তো মনে পড়ছে না। একটু ভালো করে পড়ুন অভিযোগ করার আগে। পড়ার কোনো বিকল্প নাই জানেনই তো। আর নিজের টুপির ভেতর থেকে কথা বের করে টুইস্ট করার আগে একটু ভাইবা টাইবা নিয়েন পরেরবার।

এই পোস্টে খাজুরে আলাপের উদ্দেশ্য হলো আগের পোস্টে আপনার বাইম মাছের মতো পিছলায়ে বের হয়ে যাওয়া। অবশ্য, আপনি নানা জায়গায় সচল সম্পর্কে বলে থাকেন, "আউল-ফাউল" জনগণের প্রশ্নের জবাব আপনি দেন না। [এখানেও আবার দেখলাম, "সুপ্তফনা" উপমা ব্যবহার করলেন।] তো, আউল -ফাউল জনগণ প্রশ্ন করে জবাব না পেলে তো আপনার সাথে একটু খাজুরে আলাপ করবেই। এতে ছাগু বাঁচানোর উৎসব দেখে ফেললে তো সমস্যা। পুরানা টেকনিক কুলদা রায়। নতুন কিছু ছাড়েন। আর এইরকমভাবে বললে কিন্তু ব্যাপারটা ছাগুরাম ত্রিভুজের নিজেই ছাগু খোঁজার চেষ্টায় মশগুল হয়ে পড়ার মতো ফানি হয়ে যায়।

আপনের লেখা ফাইন হইছে, সুন্দর হইছে, এক্সসিলেন্ট হইছে। এইবার কন, লেখার কোন অংশ জালাল ভাই লিখছেন! ভূমিকাটাও গোণায় রাইখেন।

কুলদা রায় এর ছবি

দেখুন আপনার করা মন্তব্য। কোথায় ত্যানা প্যাচানি শব্দটা ব্যবহার করেছেন ধুসর গোধুলী--

(তারিখ: মঙ্গল, ০১ নভ ২০১১, ০৮:০৬ PM)
আবারও প্রশ্ন! আমার আপত্তি থাকবে কেনো? ঠিক কোন জায়গাতে জালাল ভাই তাঁর কনট্রিবিউশন করেছেন, সেটা জানাতে আপনি এতো দ্বিধা করছেন কেনো সেটাই তো সমঝে আসছে না। স্বাধীন ভাইকে প্রশ্ন না করে সোজা সাপ্টা উত্তর দিলে সমস্যাটা কোথায়।

আপনি পোস্ট লিখেছেন, সেটার প্রেক্ষিতে জনগণের প্রশ্ন তো আসতেই পারে। তো আপনি সেইসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টা প্রশ্ন করতে থাকলে তো 'ত্যানাতে যে খালি প্যাঁচ' খাইতে থাকে, এটা আশাকরছি বুঝতে পারছেন।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

ধুসর গোধূলি এর ছবি

মন্তব্য করার সময়েই দেখেছি, আবারও দেখলাম, স্বাধীন ভাইকে বলা আপনার "বেশী ফাল পাইড়েন না"-কে জাস্টিফাই করে এমন কিছু থাকলে নির্দিষ্ট করে দেখান।

আগে বলেছি একবার, আবারও বলি, আপনি সচলায়তন এবং সচলদেরকে ডিফেইম করে নানা জায়গায় বক্তব্য দিয়েছেন আগে। এখন সচলায়তনেও দেয়া শুরু করেছেন। কাহিনিটা কী? সচলেরা আপনাকে প্রশ্ন করলে বলেন, 'আউল-ফাউল' লোকের প্রশ্নের জবাব দেন না! আপনি কী এমন হরিদাস পাল হয়ে গেলেন, বলেন দেকিনি!

স্বাধীন এর ছবি

এই হলো জনাব কুলদা রায়ের ক্লাসিক মন্তব্যের নমুনা। আপনারে একটা কথা আমিও সোজা কইরা বলি, আমিও সোজা কথার মানুষ। চন্ডাল জাতের ভাষা আমিও যে জানি না তা নয়। কিন্তু কথা হলো যে প্রশ্ন করা মানে যে ফাল পারা এইটা জানতাম না। অবশ্য জানলেও যে প্রশ্ন করা বন্ধ করবো তা নয়। আর আপনাকে কেউ কোথাও লেখা বন্ধ করতে বলে নাই। লিখেন, খালি পাঠকেরা যে প্রশ্ন করে তার কিছু সোজা জবাব দিলেই খুশি হতাম। কইছেন যে সোজা কথা কন, কিন্তু যে প্রশ্নটা করেছি সেটার সোজা জবাব এখনো দেননি। আপনার কাছে স্পষ্ট করেই জানতে চাওয়া হয়েছে জালাল ভাইয়ের এই সিরিজে কন্ট্রিবিউশান কি কি? আমিও জানতে চাই নাই, কে বলেরে? আমি জানতে চেয়েছি জালাল ভাই কি লিখেছেন এই লেখায়? নাকি এইটা কেবলি আপনারই লেখা?

মডারেটরদের কাছেও এই প্রশ্নটি রেখে গেলাম। এই সিরিজির লেখকদের কাছে একটি সুস্পষ্ট প্রশ্ন রাখা হয়েছিল যা লেখক না দিয়ে বরং প্রশ্নকারীকে বেশি ফাল না পারার পরামর্শ প্রদান করছেন। একজন প্রশ্নকারীকে "ফাল পাইরেন না" - প্রকান্তরে প্রশ্ন না করার হুমকি দেওয়াটা কি গ্রহণযোগ্য সচলায়তনে?

মজার ব্যাপার হলো যে কুলদা রায়ের কাছে এই সহলেখক নিয়ে প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও আমি মনে করি এই সিরিজের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটি আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। যেটা নিয়ে যথাসময়েই আলোচনা হবে বলে আশা রাখি। তবে তার আগে জানতে হবে জালাল ভাইয়ের এই লেখায় কন্ট্রিবিউশানের বিষয়টি। সেট আদৌ জানতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না।

সাফি এর ছবি

লেখক প্রশ্নের উত্তর দিতে সাচ্ছন্দ বোধ না করলে ব্লগের পরিবর্তে পত্রিকায় বা ব্যক্তিগত ব্লগে লিখলেই পারেন

কুলদা রায় এর ছবি

১. লক্ষ করা যাচ্ছে কিছু পাঠক মুল লেখাটির চেয়ে প্রথম পর্বের ভূমিকাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। আলোচনাটিকে প্রাসঙ্গিক রাখতে প্রথম পর্ব থেকে ভুমিকাটি তুলে নেওয়া হল।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

স্বাধীন এর ছবি

পাঠকদের আপত্তির মুখে ভুমিকাটি তুলে নিয়েছেন সে জন্যে ধন্যবাদ জানাই। এখন বাকি প্রশ্নটুকুর জবাব দিলে খুশি হতাম। আমি এখনো জালাল ভাইয়ের এই লেখায় কি কন্ট্রিবিউশান আছে সেটা জানার অপেক্ষায় আছি।

কুলদা রায় এর ছবি

পাঠকদের আপত্তির মুখে ভূমিকাটি সরানো হয় নি। কারণ ভূমিকাটি থাকার পক্ষে বিপক্ষে দুধরনের মতই আছে। ভূমিকাটি সরানো হয়েছে লেখার উদ্দেশ্যকে যারা উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে অপ্রাসাঙ্গিক করে সকলের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে চায়--তাদেরকে সে সুযোগটি দিতে আর ইচ্ছে না করার কারণে । মনে রাখুন-- ভূমিকার বক্তব্যের সঙ্গে লেখকদের দ্বিমত তৈরি হয়নি। ওটা একটা সার্বজনীন বিশ্লেষণ। নির্মমভাবে সত্যি।

এই সিরিজের মাধ্যমে আমরা তথাকথিত রবীন্দ্রবিরোধিতার মূল ধরে টান দিতে ইচ্ছে করছি। তার শ্বাসটাকে বের করে আনতে চাইছি। তার ভেতর বাহিরটাকে উন্মোচন করতে চাইছি। এটা আমাদের অনুসন্ধান। এই রবীন্দ্রবিরোধিতা পাকিস্তানী রাজনীতির গভীরে উপ্ত। তারই সম্প্রসারিত রূপ বাংলাদেশে নানা কায়দায় নানাভঙ্গিতে আছর হিসাবে বাংলাদেশে মাছে মাঝে হাজির হয়। প্রতিক্রিয়াশীল-সাম্প্রদায়িক--মৌলবাদি শক্তিকে রুখে দাঁড়াতে হলে এই আছরটার আগাপাশতলাকে চেনা দরকার।

২. জালাল ভাইয়ের কন্ট্রিবিউশনের উত্তরটা আমি দিয়েছি। সন্তুষ্ট না হলে জালাল ভাইকেই প্রশ্নটি করুন। আর আপনি ঠিক কি বিষয়টি জানতে চাচ্ছেন সেটা পরিস্কার করে বলুন। সান্ধ্যভাষায় নয়--পরিস্কারভাবে বলুন।
আপনাকে ধন্যবাদ।

এতেও সন্তুষ্ট না হলে--আপনাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের এই রবীন্দ্রবিরোধিতার স্বরূপ সিরিজটি শেষ হলে আলাদা করে একটি পোস্ট দেওয়া হবে--এই লেখায় সহলেখক হিসাবে কার কি ভূমিকা ছিল শিরোণামে। তখন বিস্তারিতভাবে সেখানে আপনি আলোচনা করতে পারবেন। একটু ধৈর্য ধরুন। আমাদের সিরিজটি আপাতত ২০০ পৃষ্ঠা লেখা শেষ হয়েছে। প্রাসাঙ্গিক মন্তব্যের কারণে কলেবরটা আরেকটু বাড়বে।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।