বিক্ষিপ্ত ভাবনা.......

উপল মাহবুব এর ছবি
লিখেছেন উপল মাহবুব (তারিখ: সোম, ২৬/০১/২০০৯ - ১:৪২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কবিতা নাকি গল্প - কোনটা লেখা সহজ? সচলায়তনে কিছু লিখতে গেলেই আমার মাথায় এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খেতে থাকে। আর প্রতিবারই আমি ও দুটোর কোনটাই না লিখে বরং ছোট্ট একটা ছড়া লিখে পোস্ট করে দিই। কবিতা বা গল্প কোনটা লেখার ধৈর্য আমার আপাতত হয়ে উঠবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই, নিজের চিন্তাভাবনা নিয়ে এই পোস্ট। মাথার মধ্যে যত উদ্ভট চিন্তা ঘোরে তার কিছু এখানে লিখে ফেললাম।

চিন্তা ১: শব্দজব্দ
"পান" করার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছি। বাঙালির খাই খাই অভ্যেসটা কি একটু বেশি? তা না হলে কঠিন খাবার দাবারের পাশাপাশি পানি, কোক, চা, কফি সহ যাবতীয় তরল পদার্থ এবং বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি বায়বীয় পদার্থ - এ সবই খাওয়ার অভ্যাসটা এলো কোথা থেকে? মানে, বাংলায় বলার সময় আমরা সবসময় এগুলো 'খেয়ে'ই থাকি, 'পান' করি কদাচিৎ। এদিকে আবার ইংরেজিতে বলার সময় Drink বলতে ভুল হয় না। আমি কিছুদিন হল চেষ্টা করে দেখছি পানি পান করবো, চা পান করবো বা কোক পান করবো বলার, কিন্তু এতকালের অভ্যাস বদলানো কি সহজ?

চিন্তা ২: স্বাধিনতা
একটা ঘটনা প্রায়ই মনে পড়ে যায়। আমি বোধহয় তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। এক বন্ধুর বাড়িতে রাতে আরও কিছু বন্ধু মিলে থাকতে গিয়েছিলাম। তখন এসব ব্যাপারে বাসার অনুমতি পাওয়াটা একটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপারই ছিল। যা হোক, অনুমতি মিললো। সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা আর হইচই তো হলই, পরদিন সারা সকাল আনন্দ করেও আমাদের উৎসাহ ফুরালো না। বিকালের প্ল্যান হিসেবে তাই ঠিক হলো নৌকাভ্রমণে যাব। আমার বন্ধুর মা হলেন আমাদের অভিভাবক - আমাদের নিয়ে গেলেন বাড়ির কাছেই কর্ণফুলী নদীতে। নৌকা ভাড়া করে সারা বিকাল সেদিন নদীতেই কাটালাম। কি যে মজা হলো তা আর বললাম না। এত সব হই-হুল্লোড়ের মধ্যে বাসার কথা কি আর মনে থাকে? তাই শেষ পর্যন্ত যখন বাসায় এলাম তখন রাত আটটার মত বাজে। তখনই খেয়াল হল ব্যাপারটা বোধহয় ঠিক হয় নি। আম্মা তো রেগেমেগে অস্থির। আমি বাসায় না জানিয়ে নদীতে নৌকা চরতে কেন গেছি, সাঁতার-টাতার জানি না, হঠাৎ দুর্ঘটনা ঘটলে কি হতো ইত্যাদি বলছিল গজ গজ করে। আমি অবশ্য ক্রমাগত বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম যে আমাদের সাথে আন্টি ছিল, বড় নৌকায় গেছি ইত্যাদি। এদিকে আমি ভয়ে ছিলাম আব্বাকে নিয়ে। আব্বা এমনিতে কখনও রাগতো না, তাই যেন আরও বেশী ভয় লাগতো। ভয়ে ভয়ে গেলাম আব্বার স্টাডিরুম এ। এতদিন পর অবশ্য আব্বা সেদিন ঠিক কি কি বলেছিল মনে নেই। একটা কথা শুধু মনে গেঁথে গিয়েছিল, যা আজও আমাকে ভাবায়। শান্ত স্বরে আব্বা সেদিন বলেছিল, "দেখ স্বাধিনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়"। এই একটা বাক্য, একমুহুর্তে আমার দৃষ্টিভঙ্গিই যেন পাল্টে দিল, মনে হল আমি যেন আর ছোটটি নেই। আমার বাবা-মা আমার উপর অসীম আস্থা রেখে নিজের মত চলার সুযোগ দিতে শুরু করেছেন। আর আমি অবুঝের মতো একটু ছাড়া পেয়ে একবারে দৌড়াতে শুরু করেছি।

আজও স্বাধিন ভাবে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে গেলেই চেষ্টা করি স্বেচ্ছাচারী না হতে।

চিন্তা ৩: দুশ্চিন্তা
দুশ্চিন্তা করার বিষয়টাই এখন একটা চিন্তার ব্যাপার। আগে পরীক্ষার সময় নানা রকম দুশ্চিন্তা ভর করতো। চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে অনেক পড়ালেখাও হত। ইদানিং মনে হচ্ছে অনেক বছর ধরে পড়তে পড়তে আর পরীক্ষা দিতে দিতে পড়ালেখার ব্যাপারটা কেমন যেন জীবনযাত্রার অংশ হয়ে গেছে। টার্ম ফাইনালের আগে তাই তেমন একটা দুশ্চিন্তা হচ্ছে না!! পড়ালেখার উৎসাহে কেমন একটা নিষ্প্রাণ ভাব। এটা নিয়েই এখন মহা চিন্তায় আছি! কি যে করি??


মন্তব্য

ইমরুল কায়েস এর ছবি

"দেখ স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়"

আমারও তাই মনে হয় । কিন্তু জীবনে যতটা স্বাধীনতা পেয়েছি পুরোটাই স্বেচ্ছাচারিতায় ব্যয় করেছি বলে মনে হচ্ছে । হাসি
......................................................
কোকিলের ঘরে কাক হয়ে বেঁচে আছি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ভাল লাগল লেখাটা। আপনার আব্বা খুবই খাঁটি একটা কথা বলেছিলেন। আমারও কেন যেন ধারণা- অধিকাংশ সময়েই, প্রাপ্ত স্বাধীনতাকে আমরা স্বেচ্ছাচারিতায় অপব্যবহার করি।

আপনার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকা এসব বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলোই লিখুন না আরো...

তানবীরা এর ছবি

প্রতিটি ঘটনাকে আর একটু ঠান্ডা মাথায় লিখলেই হবে।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অমিত আহমেদ এর ছবি

লেখা পড়ে কেনো জানি ভাল্লাগলো। এভাবেই লিখতে থাকুন।

ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে কবিতার চেয়ে গল্প লেখা সহজ। কারণ আমি নিজেই চাইলে গল্প লিখতে পারি... কবিতা একদমই পারি না।

চলুক


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি তো গল্প কবিতা দুটোই লিখার চেষ্টা করি। কোনটাই হয় না,কবিতা ছড়ায় আর গল্প অলস কথনে পরিণত হয়......

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।