পরী-অপরীর গল্প

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: শনি, ০৫/০৬/২০১০ - ১১:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পরী নামের একটি মেয়ে এসেছিল গৃহহীন শেল্টারে। সঙ্গে বুড়ো বাবা। মা আছে--তবে পরীকে ত্যাগ করেছে।
পরী ইংরেজী জানে না। বাংলা যতটুকু বলে-- তাও সিলেটি। কিছুদিনের মধ্যেই কোল জুড়ে ছেলে হল। ছেলেটির বাবা দূরে--বাংলাদেশে।
এই পরী নামের মেয়েটির সঙ্গে সবচেয়ে বন্ধুত্ব হয়েছিল নাইজেরিয়ান বুড়ি মজিদ আর সোদিয়ার সঙ্গে। কেউ কারো ভাষা বোঝে না। ইঙ্গিতে কথা হয়। কি কথা বলে তারা কেউ বোঝে না। ওরা তিনজন ঠিক বুঝে ফেলে।
পরী যেদিন চলে চলে সেদিন মজিদ আর সোদিয়া আর্তকণ্ঠে কাঁদল। যেন নিজের মেয়েটি ওদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এই পরী নামটির অর্থ যেদিন শুনল, সেদিন মাথা নেড়ে ওরা বলল--ঠিক ঠিক। ওতো পরী-ই। পরী ছাড়া আর কি।
মজিদ এখন মানসিক রোগী। একদিন এসেছিল দেখা করতে। সোদিয়া জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আর মজিদ বারবার বলছে, পরী কেমন আছে? পরী কেমন আছে? সোদিয়া মজিদের হয়ে আমার কানে কানে বলল, পরীকে বোলো--মাম তাকে ভোলে নি।
পরী নামটি এ কারণেই বারবার ঘুরে ফিরে আসছে আমার লেখায়। হয়তো আসবে আরও কিছুকাল ধরে। আসুক না।

পরী নিয়ে একটি গল্প
.............................................................................................
আলো ও হাওয়ার গল্প
কুলদা রায়

১.
মেয়েটোর নাম পরী। এই পরী মেয়েটিকেই একদিন পরীতে পেলো। আমাদের উঠোনে তখন ঘাস উঠেছে। এই ঘাসগুলো তুলে ফেলতে ফেলতে দেখলাম- পরীর পিঠে দুটো ডানা উঠেছে। কী অসাধারণ ডানা দুটো। রেশমী। রোদে চিকমিকিয়ে ওঠে। ঘাস তুলবো কি- চেয়ে চেয়ে দেখি- সেই ডানা মেলে মাটি থেকে অনেকটা উপরে উঠে গেছে পরী। চুলগুলো হাওয়ায় উড়ছে। আর হাসি হাসি মুখ।

পরী উড়ে গেল পেয়ারা গাছের ডালে। সবে রং ধরেছে পেয়ারায়। কামড়ে কামড়ে খেলো। কচ কচ শব্দ কানে এলো। একটি শিউলি তলায় ফুল ঝরে থাকত। আর পাতায় শিশির। পরী সেই শিশির বিন্দুগুলো তার দুহাত ভরে কুড়িয়ে নিল। সেই প্রথম একটি মালা গাঁথল শিশির দিয়ে। মুক্তোর চেয়েও লাবণ্যময় সেই মালাটি। গলায় পরে সেদিনই পরী একটি নতুন গান গাইল। কী গাইল, বুঝতে পারিনি। কী আশ্চর্য গানের কথাগুলো। যেন অনেক দূর থেকে ভেসে আসা। অনেক দূরে ভেসে চলে যাওয়া। আমরা শোনার আগেই ভুলে গেলাম। কেবল তার যাওয়া আসার সুরটি কানের মধ্যে বাজতে লাগল। এই সুর জীবনে এর আগে কখনো শুনিনি।

যে নদীতে আমরা প্রতিদিন নাইতে নামি সে নদীতে একদিন অমল জলে নামা ভুলে গেল। অবাক হয়ে চেয়ে রইল হিজল গাছটির দিকে। হিজলের পাতাগুলি ঘন সবুজ। জলে নুয়ে পড়েছে ডাল-পালা। আর লাল লাল ফুল। এই হিজলের ডাল থেকে ঝাপ দিয়ে পড়লাম নদীতে। অমল নামল না। চেচিয়ে ডাকলাম, অমল- নেমে পড়। জলে নেমে পড়।
অমল সেই প্রথম বধির হয়ে গেল। সে চেয়ে রইল হিজলের ছায়াটির দিকে। খণ্ড খণ্ড হয়ে ছায়া ভাসছে জলে। দূরে যেতে যেতে আবার ফিরে ফিরে আসছে। শান্ত বাতাস। আর তক্ষুণী পরীকে দেখতে পেলাম। একটি ফড়িংয়ের মতো পরী উড়ে এসে জলের উপরে অই হিজলের ছায়ার উপরে বসেছে। তার কলসটি জলের ধীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। বসনপ্রান্ত সামান্য ভেজা। পরীর মুখে সেই ডানাওয়ালা পরীটির হাসি। অমল এইবার ঝাপিয়ে পড়ল জলে। কলসের সাথে সাথে সেও ভেসে চলে গেল বহুদূর।

আমরা দেখলাম, পরীর পা দুখানি লাল। আলতা মাখা।
সেই প্রথম জেনেছি, আলতার মধ্যে কোনো কোনো ফুল গোপনে ফোটে। ফুলটির পাপড়িতে জ্যোৎস্না মাখা। ফুলটির নাম আমাদের জানা নেই। কোনোদিন কি জেনেছি? জানতে পেরেছে কি- অমল? প্রদ্যুম্ন? অথবা আমি?


মন্তব্য

সংসপ্তক এর ছবি

ভালো লাগলো।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

প্রভা প্রহেলিকা [অতিথি] এর ছবি

চলুক

নৃ [অতিথি] এর ছবি

আপনার গল্পগুলো পড়তে বরাবরই অদ্ভুত রকম ভাল্লাগে। মনে হয় আরেক দুনিয়ার কাহিনী পড়ছি। হাসি

বালক এর ছবি

চলুক
লেখার মধ্যে কি এক মুগ্ধতা দাদা
আমি ডুবে গেলাম পড়তে গিয়ে।
:::::: :::::::: ::::::::::::::: ::::::::::::::: ::::::::: ::::::::: :::::: ::::::: ::::::::::::
ভবিষ্যতে কি হবে তা ভেবে বর্তমানকে উপেক্ষা করবো কেনো?

____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা অন্যরকম ভালো লাগা নিয়ে গল্পটা শেষ করলাম। কি মন্তব্য লিখবো অনেক ক্ষণ ভাবলাম। শুধু এইটুকু বলবো এমন লেখা খুব কম পাওয়া যায়।

আপনার পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

==========
কামরুজ্জামান স্বাধীন।


================

কুলদা রায় এর ছবি

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আমার ভুমিকথায় একটি মুদ্রণ প্রমাদ আছে--'পরী যেদিন চলে চলে '। এখানে হবে--'পরী যেদিন চলে গেল'।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

অতিথি লেখক এর ছবি

" আলতার মধ্যে কোনো কোনো ফুল গোপনে ফোটে। ফুলটির পাপড়িতে জ্যোৎস্না মাখা। "

বুকে কাঁপন ধরানোর মত লেখনি..
দাদা, আপনার লেখনির ভক্ত বনে গেলুম...

_______________________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ

গৌতম এর ছবি

এটাও বেশ ভালো লাগল। হাসি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ভালো লাগলো!

সৈয়দ আফসার এর ছবি

কুলদা,
ভালো লাগা জানাই।

_________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

প্রাকৃত জন [অতিথি] এর ছবি

"আমরা শোনার আগেই ভুলে গেলাম।"
"সেই প্রথম জেনেছি, আলতার মধ্যে কোনো কোনো ফুল গোপনে ফোটে।"

লাইন দুটো এখনো কানে বাজছে।

সৈয়দ আফসার এর ছবি

অনেক ভালো লাগা জানাই।

_________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

চড়ুই [অতিথি] এর ছবি

পরী সেই শিশির বিন্দুগুলো তার দুহাত ভরে কুড়িয়ে নিল। সেই প্রথম একটি মালা গাঁথল শিশির দিয়ে। মুক্তোর চেয়েও লাবণ্যময় সেই মালাটি।

সারা জীবন মনে রাখার মত।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।