বই পড়া : মুক্তিযুদ্ধে গোপালগঞ্জ

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/১১/২০১০ - ৮:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার শহরটির নাম গোপালগঞ্জ। এক সময় জলের ভিতর থেকে উঠে এসেছিল। এখানে হাওয়ায় জলের গন্ধ ভাসে। এখানে আমি জন্মেছিলাম ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের আগে। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ছিলাম। এই গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম হয়েছিল--টুঙ্গিপাড়ায়।

এই শহরটির ভিতরে আমি সব সময় ঘোরাফেরা করি। এখন হাডসন নদীর পাড়ে শুনি—আমাদের মধুমতি নদীটি কুলকুল রবে বয়ে চলেছে। আমি সাঁতার কাটছি।আমার প্রাণে শহরটি পলে পলে বেজে ওঠে।

একাত্তর সালে বেশ ছোট ছিলাম। যে কোনো কারণেই হোক না কেন আমার অনেক কিছু মনে থাকে। আর মনে রাখার জন্য আমি মনে মনে স্মৃতিগুলো চারণ করি। দেখতে পাই একাত্তরে আমাদের বাসায় খসরু ভাই এসেছেন। সঙ্গে মাহবুব ভাই। সিঁড়ির গোড়ায় আমার মায়ের কাছ থেকে বড় টর্চ লাইটটি চেয়ে নিচ্ছেন। মাহবুব ভাই আর ফেরেন নি। সোনাকুড়ে তার লাশ পড়েছিল। কেউ আনতে যেতে পারে নি। শহীদ মাহবুবের বাসা আমাদের বাড়ির পাশেই। তার মাকে আমরা জেঠিমা বলতাম। দুটি গল্প লিখেছি শহীদ মাহবুব ভাইকে নিয়ে।

যেদিন গোপালগঞ্জে মুক্তিবাহিনী ট্রেজারী ভেঙে ফেলল, তখন ছিল মে মাস। সেদিন তারা বীরদর্পে মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় বানিজ্যমন্ত্রী ওয়াহেদুজ্জামানের থানাপাড়ার বাড়ি আক্রমণ করল—তারা প্রথমেই উলু কাফু নামের এনএসএফ-এর দুগুণ্ডাকে মেরে রাস্তায় ফেলে দিল। ওরা ছিল আমাদের শহরটির ত্রাস। একই সঙ্গে জামান সাহেবের মেধাবী ছেলে মাহমুদুজ্জামান মারা পড়েছিল। ওয়াহেদুজ্জামানের ছোট ভাই খোঁড়া জামান পায়খানার মধ্যে লুকিয়ে বেঁচেছিল। সঙ্গে নিয়েছিল কায়দে আযমের একটি ফটো। সেদিন জেলখানা ভেঙে কয়েদীদের বের করে দেয়া হয়েছিল। বের হয়ে এসেছিলেন—দীপালী যাত্রা অপেরার ধীরেন বাকচি। চেচানিয়া কান্দিতে তাঁর বেড়িটা কুড়াল দিয়ে কুঁপিয়ে কাটা হয়েছিল আমাদের সামনেই। ধীরেন বাকচিরা চিরকালই মুসলিম লীগের দালাল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয়ে রেললাইনের পাশের বাড়িটিতে মুক্তিযুদ্ধের একটি অফিস খোলা হয়েছিল। পাচুড়িয়া খালের পাশ্চিমপাড়ে ইমাম সাহেবের বাড়ি ছিল খানসেনাদের পরামর্শ কেন্দ্র। তার ইশারায় হিন্দু কাপালী অধ্যূষিত গ্রামটি বিনাশ হয়েছিল। এই বিষয়টি নিয়ে আমি আঞ্চলিক ভাষায় গল্প লিখেছি।

পাকবাহিনী আক্রমণ করলে আমরা পালিয়ে গেছি গ্রাম থেকে গ্রামে।গভীর বিলের মধ্যে। নৌকায় নৌকায় কেটেছে আমাদের জীবন। চোখের সামনে পাখির মতন ঝরে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। আমাদের মায়ের সঙ্গে জলের মধ্যে ডুবে থেকে সেদিন রক্ষা পেয়েছি। এই গল্পটি যেদিন লিখি—আমি যেন ঘরপোড়া গন্ধ আর মানুষের আর্তনাদ কানের মধ্যে শুনছিলাম।

এরপর শেওড়াবাড়ি, গান্ধিয়াশুর, ওড়াকান্দি হয়ে ঝিকরগাছার মধ্যে দিয়ে বনগাঁ পৌঁছেছি পায়ে হেঁটে। সকলের মত আমরাও সর্বস্ব হারিয়েছি। আমাদের একটি বোন নাই হয়ে গেছে। আর আমার আজা মশাই তার ছেলে মেয়েদের নিয়ে ভাসতে ভাসতে চলে গেছেন কোথায় কোন শরনার্থী শিবিরে। যেতে যেতে আমার বাবাকে বলছেন, ও শঙ্কর, আমার যে সাহস হইতাছে না। এ কোথায় আইলাম। বাঁচপো তো?কেউ পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে মরেছে—কেউ শরণার্থী শিবিরে না খেয়ে মরেছে—কলেরায় মরেছে, নিউমেনিয়ায় মরেছে। এক লবণহ্রদ ক্যাম্পেই সে সময় মারা গিয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। এই গল্পটি লিখতে চেয়েছিলাম।

শুরুও করেছিলাম। তখন মনে হয়েছিল—কিছু ডকুমেন্টশন পেলে কাজটি ভাল হত। আমার বন্ধু কবি মুজিব মেহেদী বললেন, এ ধরনের একটি বই লিখেছেন তপন বাগচী। তপন এক সময় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে চাকরী করতেন। আমি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে। একদিন দেখা হয়েছিল। সে সুবাদে নিউ ইয়র্ক থেকে তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম—তাঁর লেখা মুক্তিযুদ্ধে গোপালগঞ্জ বইটির একটি স্ক্যান কপি পাঠানোর জন্য। তিনি পাঠান নি। পাঠানোর কোনো ইচ্ছেও পোষণ করেন নি। আমি আমার সর্পগন্ধা অথবা না মৃত্যুর জলতরঙ্গ গল্পটি লেখা বন্ধ করে রেখেছি।মনে হয়েছে তথ্য যোগাড় করে লেখা দরকার।

তপন বাগচী পিএইচডি করেছেন। বেশ কিছু বইপত্রও লিখেছেন। পত্রিকায় চাকরীও করেছেন। আমি তাকে একটি বইয়ের সন্ধান দিয়েছিলাম। উলপুরের জমিদার আনন্দ রায় প্রণীত ফরিদপুরের ইতিহাস। কোলকাতা থেকে কমল রায়চৌধুরী সম্পাদনা করেছেন। বইটি প্রকাশ করেছে দে’জ পাবলিকেশনস। কিছুদিন পরে দেখি তপন বাগচী এই বইটিই তাঁর নিজের নামে সম্পাদক হিসাবে যুক্ত করে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশ করেছেন। বইটি গোপালগঞ্জের প্রাচীন ইতিহাসের একটি আকর গ্রন্থ। তপন বাগচী কমল চৌধুরীর অনুমতি নিয়েছিলেন কিনা জানা যায় না। কিন্তু বইটিতে তপন বাগচীর ব্যক্তিগত ক্রেডেনশিয়াল লিস্টে যুক্ত হয়েছে।

autoকদিন আগে মোহাম্মদ আতাউর রহমান রেশন ভাইয়ের কাছে জানতে পারি—মুক্তিযুদ্ধে গোপালগঞ্জ বইটি তিনি সংগ্রহ করে এনেছেন। সেদিন কুইনস থেকে আমি এফ ট্রেনে, সিক্স ট্রেনে চড়ে ঘণ্টা দুই সময় ব্যয় করে ব্রঞ্চের শেষ মাথায় পৌঁছে গেছি। দেখি একটি ঘরের মধ্যে আমার আতাউর ভাই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বাংলা শেখাচ্ছেন। শেখাচ্ছেন গান। নাম দিয়েছেন বাংলা বইঘর—বাংলা স্কুল। কয়েকটি শেলফে সাজানো আছে সারি সারি বাংলা বই। এগুলো তিনি বাঙালীদের পড়তে দেন।নিজেও বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সেখানে খুঁজে পাই গোপালগঞ্জের ইতিহাস। আর বের করেছেন শিশুদের জন্য বাংলা শেখার অসাধারণ বই। এসবই তাঁর ফ্রি সার্ভিস।রক্ত জল করা পয়সায় এসব তিনি করছেন।আমাকে ডেকে বলছেন—এসো, নিয়ে যাও। সুদূর নিউ ইয়র্কে এরকম কর্মকাণ্ড-- ভাবা যায়? আমার চোখে জল গড়িয়ে পড়ে। তাঁর পায়ে পড়ি। ঈশ্বর এরকম ভাল মানুষদের পাল্লায় মাঝে মাঝে আমাকে টেনে নিয়ে যান। তার অনন্ত পরমায়ূ হোক।

রেশন ভাইয়ের বড় ভাইটির নাম ওয়ালিউর রহমান লেবু। আমাদের গোপালগঞ্জের সকলের লেবু ভাই।তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন। ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। দেশ স্বাধীনের পরে তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের লুটপাটের বিরুদ্ধে আর লুকিয়ে থাকা রাজাকারদের ষড়যন্ত্র্রের বিরুদ্ধে। সেজন্য তাকে ১৯৭৩ সালের ১০ মার্চ প্রকাশে দিনের আলোতে কোঁদাল দিয়ে হত্যা করেছিল কুখ্যাত হেমায়েত। সে হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় নি।ব্গবন্ধু সরকার হেমায়েতকে বীর বিক্রম উপাধীতে ভূমিত করেছে। হেমায়েত এখন ঢাকায় একটা ফাউন্ডেশন গড়েছেন। সেমিনার টেমিনার করছেন। মন্ত্রী মিনিস্টাররাও সেখানে যাচ্ছেন। কেউ খবরও রাখছেন না এই খুনী হেমায়েত মোশতাক, জিয়া, এরশাদ, খালেদা-- সবার ঝাঁকেই কই হয়ে মিশেছেন। এরা জানেও না লেবু-কমলেশ-বিষ্ণুপদ-মানিক হত্যাকাণ্ডটি ছিল স্বাধীনতা বিরোধীদের পালে বাতাস লাগানোর প্রথম পদক্ষেপ।লুটপাটে মগ্ন আওয়ামী নেতাদের সেসব বোঝার কোনো ইচ্ছেও কোনোকালে ছিল না।

রেশন ভাই অভিযোগ করলেন—তপন বাগচী তাঁর পরিবারের কারো সঙ্গেই লেবু ভাইয়ের সম্পর্কে কোনো অনুসন্ধান করেন নাই। অন্যের কাছে শুনে বা বিভিন্ন উৎস থেকে কিছু তথ্য জোগাড় করে বইটিতে জুড়ে দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে আলাপ করলে মুক্তিযুদ্ধের আরও নির্ভরযোগ্য ইতিহাস পাওয়া যেত। কমরেড শওকত চৌধুরীর পরিবারের কারো সঙ্গে কি তিনি আলাপ করেছেন? ভাবীর সঙ্গে? অথবা সোহাগের (কবি সাঈদ জুবেরী) সঙ্গে? কমরেড শওকত চৌধুরী তাঁর বইয়ে এসেছেন খুবই খণ্ডিত হয়ে। শহীদ মাহবুব বিষয়ে কারো কাছেই খোঁজ নেন নি। আমরা জানতে পারছি না—সে সময় গোপালগঞ্জ শহরটি কি বিপুল তরঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে আলোড়িত হয়েছিল। রুখে দাঁড়িয়েছিল আপামর মানুষ হানাদার পাকবাহিনীকে। তাদের দোসরদের। এগুলো এসেছে খণ্ডিতভাবে। আমরা স্পষ্ট কোনো চিত্র পাই না গ্রামে গ্রামে লড়াই সংগ্রামের কোনো পূর্ণ চিত্র। আর পাক দোসরদের তাণ্ডব। সর্বোপরি দেশের মানুষ যে সর্বস্ব হারিয়ে প্রতিবেশী দেশে চলে যাচ্ছে—যেতে যেতে মরছে কাতারে কাতারে, বাঁচতে বাঁচতে পৌছাচ্ছে শরণার্থী শিবিরে—সে বিষয়গুলো নেই। সেখানে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করেছে মৃত্যুর সঙ্গে—ছুটে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং ক্যাম্পে—সে রকম কোনো চিত্র নাই। যা আছে তা অতিশয় সামান্য। শিশুপাঠ্যের অধম। মুক্তিযুদ্ধ কী এই শরণার্থী জীবনকে বাদ দিয়ে রচিত হবে? আমার সামনে যে বুড়ো লোকটি জলকাদায় ঝিকরগাছার পথে ঢলে পড়েছেন হাঁটতে হাঁটতে—তার পরিবার পরিজনকে শেষবার বলে যাচ্ছেন তোরা এগিয়ে যা। বাঁচ। এটা ভুলে যাওয়া ঠিক? এ ইতিহাসগুলো নেই। তপন বাগচী সে ইতিহাসের লেবেলের লোক হয়েও সেদিকে আলো ফেলেন নি।
তিনি কিছু কিছু তথ্য যোগাড় করেছেন সংবাদ পত্রের কলাম, আনন্দ রায়ের ফরিদপুরের ইতিহাস আর সরকারী দায়িত্বহীনতার কিছু ফাইলের মধ্যে থেকে।মুক্তিযুদ্ধের প্রাণের উৎসারণকে কোনো ভাবেই বিশালতায় মহিমামণ্ডিতভাবে খুঁজে পাওয়া গেল না।

তবে এই বইটি থেকে একটি তথ্য পাওয়া গেল—তাহলো, গোপালগঞ্জ হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হওয়া সত্বেও সংখ্যানুপাতে হিন্দুদের শরণার্থী হওয়া ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ কম। এটা নিশ্চয়ই একটি বিস্ময়কর তথ্য। কেন এরকম হল? কেন হিন্দুরা—বিশেষত নমশুদ্ররা যুদ্ধে সেরকমভাবে অংশ নিল না? কেন তারা ভারতের ক্যাম্পে মানবেতর জীবন কাটিয়েই পুরো সময়টি ব্যয় করল? এটার কোনো কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ তপন বাগচী করেন নাই। আর গোপালগঞ্জে তো খ্রীস্টান সম্প্রদায়েরও লোকজন কম নেই। একাত্তরে তারা কি করল? তাদের কপালে কি ঘটেছিল? না, এ বইটিতে কিছু জানা যায় না। একজন সমর আরিন্দ্রার নাম পাওয়া যায়। তিনি খুবই প্রতাপশালী লোক ছিলেন। আমার বাচপানকা সাথী সুভাষ দাস দুলুদের বাড়িটা সমরবাবুর বাড়ির পাশেই ছিল। দুলুরাও খ্রীস্টান।সমরবাবুকে ওরা এড়িয়ে চলত। বলত—এই লোকটি পাকসেনাদের দালাল ছিল। তাদেরকে মেয়ে সরবরাহ করত। আর কোটালীপাড়ায় বা বানিযার চরের কাছের খ্রীস্টানদের মধ্যে কেউ কেউতো রুখে দাঁড়িয়েছিল হানাদারদের। ওখানের কদমবাড়িতেই শুনেছি তপন বাবুর বাড়ি। উনি চেষ্টা করলে এরকম ইতিহাস বের করতে পারতেন।

আর নমশুদ্রদের মধ্যে কার্তিক ঠাকুর, বীরেণ বিশ্বাস অথবা বরিশালের চিত্ত সুতারের নাম দেখেছি এই বইটিতে। কার্তিক ঠাকুর দেহমনে দালাল শ্রেণীর লোক। তিনি চিরকালই গাছেরও খান—তলারও খান। জিয়া সাহেবের পিছনে ছুটতে ছুটতে আর নমশুদ্রদের দোহাই দিয়ে জিয়া-এরশাদ সাহেবের কাছে দেন দরকার করেছেন—প্রভু, আমাকে মন্ত্রী করো। চিত্ত সুতার ফাঁক বুঝে ভারতে পালিয়ে গেছেন। মৌদুধ চেয়ে খেয়েছেন। এরা হলেন পালানো নেতা। ঝোঁপ বুঝে কোপ মারার ওস্তাদ। কারো নমশুদ্র বা কারো জন্য কিছুই করেন নাই। উদ্দেশ্য এইসব গরীব দুঃখী লোকজনদের দেখিয়ে কিছু আদায় করা। তপন বাগচীর বইতে এদের নাম পেলাম। তবে এক লাইন হলেও মহান হিসাবে। এরা মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র ধরেন নাই। ধরেছিলেন আমাদের বাড়ির পাশের সুখীর দিদির স্বামী। তাকে নিয়ে একটি গল্প লিখেছি কাকমানুষের চকখড়ি। সুখি দিদি বীনাপানি গার্লস হাই স্কুলের টিচার। তাঁর কাছে কি তপন বাগচী গিয়েছিলেন? সন্ধান কি করেছিলেন মকসুদপুরের উজানিয়ার কবি নিখিল রায়কে? অথবা সেই নৌকার মিস্ত্রিকে? যুদ্ধ করেছেন। গুলি খেয়েছেন। সার্টিফিকেট নেন নাই। যুদ্ধ শেষে আবার নৌকা গড়ছেন। এখন তার ছেলে রাজমিস্ত্রির যোগালিয়া। অথবা রঘুনাথপুরের দালাল জ্ঞান ডাক্তারের ছেলে গিরীণভ্রাতৃদ্বয়ের বীরত্বব্যঞ্জক ইতিহাসটি? আর লাল মিয়াদের পাক হানাদার বাহিনীকে সমর্থনের চিত্রটি। তাদের লুটপাটের কাহিনীটি? গ্রামে গ্রামে তো এরকম লুটেরা দালালদের কথা নেই। নেই মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ভ্রান্তিগুলো কি কি ছিল? কি কি ভ্রান্তির কারণে একাত্তরে অর্জিত স্বাধীনতা বাহাত্তর থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করে।

এ বিষয়ে মাহবুবুর রহমান জালাল ভাই বলেন—আমাদের দেশের গ্রামের মানুষদের কাছে যেতে হবে। তাদের কাছ থেকে শুনতে মৌখিক ইতিহাসটি। সেটাকে লিখে ফেলতে হবে। তারপর এই প্রাপ্ত মৌখিক ইতিহাসটি যাচাই করার জন্য অনুসন্ধানে যেতে হবে। আরও লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে হবে। পত্রপত্রিকা ঘাটতে হবে। দলিল দস্তাবেজ খুঁজতে হবে সরকারী-বেসরকারী মহাফেজখানায়।কোথাও না কোথাও এর সূত্র থাকবে। তারপর বিশ্লেষণের মাধ্যমে পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস। এভাবে সারাদেশের আঞ্চলিক ইতিহাস রচিত হবে—এদের সমন্বয়েই সংকলিত হবে জাতীয় ইতিহাস।

গোপালগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ে খাটাখাটনি করে লিখছেন সংবাদপত্রে সাংবাদিক রবীন্দ্রনাথ অধিকারী। তিনি সারাজীবন ধরে একনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। তাঁর লেখা সুখপাঠ্যও বটে। তপন বাগচী রবীন্দ্রনাথ অধিকারীর লেখা তাঁর বইতে অকাতরে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তাঁর সমস্যা হল—তিনি একটি বই বানাতে চেয়েছেন--লিখতে চান নি। লেখার জন্য যে গবেষণা, অনুসন্ধান,বিশ্লেষণ, খাটাখাটুনি দরকার—সেটা রবীন্দ্রনাথ অধিকারীর আছে—তপন বাগচী সে ব্যাপারে একনিষ্ঠ ছিলেন বলে মনে হয় নি। তার কাজটি হয়েছে আগোছালো। তথ্যের সংগ্রহ। শ্রেণীবদ্ধ ইতিহাস নয়। গোপালগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখা হচ্ছে—অথচ গোপালগঞ্জের কোনো ভৌগলিক, রাজনৈতিক এবং মুক্তিযুদ্ধের মানচিত্র নেই সারা বইটিতে।মানচিত্রের মত একপি গুরুত্বপূর্ণ টুলসকে তিনি ভুলে গেলেন কেন?

রবীন্দ্রনাথ অধিকারী কাজটি করলে সেটা হত মুক্তিযুদ্ধের গোপালগঞ্জের সত্যিকারের ইতিহাস। তপন বাগচী তার সংগৃহীত তথ্যগুলোকে কোনো ধরনের যাচাই বাঁছাই,অনুসন্ধান বা বিশ্লেষণ করার কষ্টটুকু করার স্বীকার করেন নি।কখনো কখনো অপ্রয়োজনীয় তথ্যও এসে পড়েছে। অনেক তথ্য, ঘটনা, কিংবদন্তি এখনো মানুষের কাছে আছে। তাদের কাছে গেলে সেটা এখানো সংগ্রহ করা সহজ। গবেষক তপন বাগচী সে পথে যান নি। গবেষকদের কাছে তো আমাদের চাওয়া যেনতেন প্রকারেণ কোনো একটি বই নয়—একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ প্রাপ্তির দাবী থাকে।তপন বাগচী কোনো এলেবেলে লোক হলে কোনো কষ্ট হত না। মনে হয়েছে বই প্রকাশের একটি তাড়া ছিল। এই তাড়ার কারণে একটি সম্ভাবনার অপমৃত্যু হয়েছে।

তবে আশঙ্কার কিছু নেই। কেউ না কেউ সে কাজটি করবেন।একটি প্রকাশনার দায়িত্বহীন পিতা হওয়ার মোহে নয়। বহু পুরস্কারের লোভেও নয়। প্রধান অতিথির হওয়ার আকাক্ষায়ও নয়।এইসব ব্যক্তিগত প্রাপ্তির বাইরে থেকে নির্মোহভাবে কেউ লিখবেন। হয়তো সেই কেউদের মধ্রে তপন বাগচীও থাকবেন। তপন বাগচী তার জন্য কিছু উপাত্ত সংগ্রহ করে রেখেছেন। সেগুলো প্রাথমিক রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহৃত হবে। আমরা একদিন খুঁজে পাব আমাদের সেই গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সংগ্রামের অলিখিত ইতিহাসটি যা লোককথায় আছে। দীর্ঘশ্বাসে আছে।বধ্যভূমিতে আছে। ধুলোমাটিতে আছে। নদীতে আছে। মানুষের গল্পকথায় আছে। স্বপ্নে আছে। সে কাজটি করছেন—সারা দেশে প্রবীর সিকদার সুজন। অমি রহমান পিয়াল। মাহবুবুর রহমান জালাল। নূরুজ্জামান মানিক। রবীন্দ্রনাথ অধিকারী।

...........................................................
মুক্তিযুদ্ধে গোপালগঞ্জ
লেখক : ডঃ তপন বাগচী
প্রকাশক : ঐতিহ্য
প্রকাশকাল : ফ্রেব্রুয়ারি ২০০৭
মুল্য : ২২৫ টাকা


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

দাদা, গবেষণা শেষ করে বইটা লেখা শেষ করুন।

দেশি মানুষ পেলে ভালো লাগে।আমি ঠিক গোপালগঞ্জের না হলেও ফরিদপুরের।

~~~~~ দেবাশিস মুখার্জি ~~~~~~
[db.mukherjee.blog@gmail.com]
(অল্পসল্প...কবিতা-গল্প...)

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা ভালো লাগলো।
আপনার লেখা সবসময়ই ভালো লাগে। আজ একটু বেশি লাগলো। নিজের শিকড়ের প্রতি একটা দায়িত্ব অনুভব করলাম।

---আশফাক আহমেদ

tapan bagchi এর ছবি

কুলদা-দাদা, আপনার কিছু তথ্য ঠিক নয়। কমল চৌধুরীর বই প্রকাশের আগেই আমার বইটি প্রকাশিত হয়। আমি ফরিদপুরের ইতিহাস ১ম খণ্ড পাই, ফরিদপুর মিউজিয়াম থেকে। তাতে কয়েকটি পৃষ্ঠা ছিল না। সেই অবস্থায় প্রথম খণ্ড প্রকাশ করেছেন আবু সাঈদ খান। এরপর আমি অনেক অনুসন্ধানের পরে দ্বিতীয় খণ্ড পাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের হেরিটেজ নামের সংগ্রহশালা থেকে। আর প্রথম খণ্ডের কর্তিত অংশ উদ্ধার করতে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গ্রন্থাগারে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি যে, দে’জ পাবলিশার্স থেকে আনন্দনাথ রায়ের ফরিদপুরে ইতিহাস বের হয়েছে কমল চৌধুরীর সম্পাদনায়। আমি দে’জ এ যাই খোঁজ করতে। দেখি ক্যাটালগে আছে। কিন্তু বই নাই। শুনলাম লেখক এখনো প্রুফ দেখে জমা দেন নাই। তখন ডিসেম্বর মাস। শীঘ্রই বেরুবে বলে ক্যাটালগে রেখে দিয়েছেন। আমি কমল চৌধুরীর ফোন নম্বর নিয়ে কথা বলি। তিনি জানালেন, তিনি আরো কিছু প্রবন্ধ যোগ করবেন বলে দেরি হচ্ছে। অর্থাৎ কাটালগে থাকলেও বই তখনও বের হইনি। আমি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে গিয়ে প্রথম খণ্ড খুঁজে পাই। কিন্তু রথীন্দ্রকান্ত ঘটকচৌধুরীর কাছ থেকে ফরিদপুর মিউজিয়ামে রক্ষিত বইটির মতো এখানেও সেই একই রকম কয়েক পৃষ্ঠা নেই। আমি হতাশ হই। তখন পরিষদের সম্পাদক স্বপন বসুর সহায়তায় লাইব্রেরির ভেতরের তাক দেখার অনুমতি গ্রহণ করি। সেখানে পাশের তাকে অকস্মাৎ পেয়ে যাই, ওই ছেঁড়া পৃষ্ঠাগুলো। পৃষ্ঠার মিলিয়ে এবং বাক্যের গতি মিলিয়ে আমি নিশ্চিত হই। কিন্তু শতবর্ষ পুরনো বই বলে ফটোকপি দেওয়ার বিধান নেই। তাই, হাতে লিখে নিয়ে আমি ওই পৃষ্ঠাগুলো। দেশে এসে এই দুই খণ্ডের সঙ্গে আরো ১১টি প্রবন্ধ যোগ করে আমি সম্পাদনা করি ‘আনন্দনাথ রায়ের ফরিদপুরের ইতিহাস’। তার অনেক পরে প্রকাশ পায়, কমল চৌধুরী সম্পাদিত ‘ফরিদপুরের ইতিহাস’। ওই বইটিও আমার সংগ্রহে আছে। তিনি ছেঁড়ার পৃষ্ঠার স্থানে লিখে দিয়েছেন যে, এরপর কয়েক পৃষ্ঠা আর উদ্ধার করা যায়নি এমন একটি বাক্য। আর আমার সংকলনে ওই পৃষ্ঠাগুলো আছে। তাহলে কমল চৌধুরীর অনুমতি নিতে যাব কোন যুক্তিতে। আমার বইয়ের ভূমিকায় ওই পৃষ্ঠাগুলো উদ্ধারের প্রোপট বর্ণনা করা আছে। আপনি বইদুটি পাশাপাশি দেখলে এই অভিযোগ করতে বলে মনে হয়না। আর দাদা, আনন্দনাথ রায় গোপালগঞ্জের উলপুরের জমিদারর নন। আপনার এই তথ্য ঠিক নয়। আনন্দনাথ রায় শরীয়তপুরে জেলার নড়িয়ার জমিদার। আনন্দনাথ রায় সম্পর্কে আমার গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। তাঁরর আরো কিছু বিচ্ছিন্ন প্রবন্ধ আমি সংগ্রহ করেছি। আপনি বলার আগেই আমি কমল চৌধুরীর বইয়ের খবর জানি। কারণ বইটি প্রকাশের আগেই কলকাতায় প্রকাশকের অফিসে গিয়ে কথা বলেছি। তাই অসত্য তথ্য দিয়ে আমার পরিশ্রমকে নাকচ না করলেও চলত। আশা করি অপপ্রচারণার এই অংশ আপনার আলোচনা থেকে বাদ রাখবেন। আমার বইটি নিয়ে আপনার অন্যান্য মন্তব্যকে আমি স্বাগত জানাই। এগুলো একান্তই আপনার মত। এরকম একটা বই অন্য কেই লিখলেও আমি হাজারটা ঘাটতি খুঁজে পেতাম। কারণ এ ধরনের বই একজনের পক্ষে পূর্ণ করা সম্ভবপর নয়। আপনি তা নিশ্চয়ই জানেন।
আপনি বই চেয়েছিলেন। অনেকেই বই চায়। আমি কাউকেই দিতে পারিনি। কিনে দিতে হয় যে! কিন্তু ২২৫ পৃষ্ঠা স্ক্যান করার সময়, অর্থ এবং প্রযুক্তি আমার নেই। আমি একটি বই কিনে রেখেছিলাম, আপনার জন্য। তা পাঠানো হয়নি। এই ‘অপরাধ’টুকু স্বীকার করি।
আমি বইটি আপনার এবং আরো অনেকের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সম্পূর্ণ করতে চাই। আশা করি পাব। না হলে দ্বিতীয় সংস্করণের তথ্যঘাটতির দায় কিন্তু আমার একার থাকবে না।

tapan bagchi এর ছবি

কুলদা-দাদা, আপনার কিছু তথ্য ঠিক নয়। কমল চৌধুরীর বই প্রকাশের আগেই আমার বইটি প্রকাশিত হয়। আমি ফরিদপুরের ইতিহাস ১ম খণ্ড পাই, ফরিদপুর মিউজিয়াম থেকে। তাতে কয়েকটি পৃষ্ঠা ছিল না। সেই অবস্থায় প্রথম খণ্ড প্রকাশ করেছেন আবু সাঈদ খান। এরপর আমি অনেক অনুসন্ধানের পরে দ্বিতীয় খণ্ড পাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের হেরিটেজ নামের সংগ্রহশালা থেকে। আর প্রথম খণ্ডের কর্তিত অংশ উদ্ধার করতে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গ্রন্থাগারে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি যে, দে’জ পাবলিশার্স থেকে আনন্দনাথ রায়ের ফরিদপুরে ইতিহাস বের হয়েছে কমল চৌধুরীর সম্পাদনায়। আমি দে’জ এ যাই খোঁজ করতে। দেখি ক্যাটালগে আছে। কিন্তু বই নাই। শুনলাম লেখক এখনো প্রুফ দেখে জমা দেন নাই। তখন ডিসেম্বর মাস। শীঘ্রই বেরুবে বলে ক্যাটালগে রেখে দিয়েছেন। আমি কমল চৌধুরীর ফোন নম্বর নিয়ে কথা বলি। তিনি জানালেন, তিনি আরো কিছু প্রবন্ধ যোগ করবেন বলে দেরি হচ্ছে। অর্থাৎ কাটালগে থাকলেও বই তখনও বের হইনি। আমি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে গিয়ে প্রথম খণ্ড খুঁজে পাই। কিন্তু রথীন্দ্রকান্ত ঘটকচৌধুরীর কাছ থেকে ফরিদপুর মিউজিয়ামে রক্ষিত বইটির মতো এখানেও সেই একই রকম কয়েক পৃষ্ঠা নেই। আমি হতাশ হই। তখন পরিষদের সম্পাদক স্বপন বসুর সহায়তায় লাইব্রেরির ভেতরের তাক দেখার অনুমতি গ্রহণ করি। সেখানে পাশের তাকে অকস্মাৎ পেয়ে যাই, ওই ছেঁড়া পৃষ্ঠাগুলো। পৃষ্ঠার মিলিয়ে এবং বাক্যের গতি মিলিয়ে আমি নিশ্চিত হই। কিন্তু শতবর্ষ পুরনো বই বলে ফটোকপি দেওয়ার বিধান নেই। তাই, হাতে লিখে নিয়ে আমি ওই পৃষ্ঠাগুলো। দেশে এসে এই দুই খণ্ডের সঙ্গে আরো ১১টি প্রবন্ধ যোগ করে আমি সম্পাদনা করি ‘আনন্দনাথ রায়ের ফরিদপুরের ইতিহাস’। তার অনেক পরে প্রকাশ পায়, কমল চৌধুরী সম্পাদিত ‘ফরিদপুরের ইতিহাস’। ওই বইটিও আমার সংগ্রহে আছে। তিনি ছেঁড়ার পৃষ্ঠার স্থানে লিখে দিয়েছেন যে, এরপর কয়েক পৃষ্ঠা আর উদ্ধার করা যায়নি এমন একটি বাক্য। আর আমার সংকলনে ওই পৃষ্ঠাগুলো আছে। তাহলে কমল চৌধুরীর অনুমতি নিতে যাব কোন যুক্তিতে। আমার বইয়ের ভূমিকায় ওই পৃষ্ঠাগুলো উদ্ধারের প্রোপট বর্ণনা করা আছে। আপনি বইদুটি পাশাপাশি দেখলে এই অভিযোগ করতে বলে মনে হয়না। আর দাদা, আনন্দনাথ রায় গোপালগঞ্জের উলপুরের জমিদারর নন। আপনার এই তথ্য ঠিক নয়। আনন্দনাথ রায় শরীয়তপুরে জেলার নড়িয়ার জমিদার। আনন্দনাথ রায় সম্পর্কে আমার গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। তাঁরর আরো কিছু বিচ্ছিন্ন প্রবন্ধ আমি সংগ্রহ করেছি। আপনি বলার আগেই আমি কমল চৌধুরীর বইয়ের খবর জানি। কারণ বইটি প্রকাশের আগেই কলকাতায় প্রকাশকের অফিসে গিয়ে কথা বলেছি। তাই অসত্য তথ্য দিয়ে আমার পরিশ্রমকে নাকচ না করলেও চলত। আশা করি অপপ্রচারণার এই অংশ আপনার আলোচনা থেকে বাদ রাখবেন। আমার বইটি নিয়ে আপনার অন্যান্য মন্তব্যকে আমি স্বাগত জানাই। এগুলো একান্তই আপনার মত। এরকম একটা বই অন্য কেই লিখলেও আমি হাজারটা ঘাটতি খুঁজে পেতাম। কারণ এ ধরনের বই একজনের পক্ষে পূর্ণ করা সম্ভবপর নয়। আপনি তা নিশ্চয়ই জানেন।
আপনি বই চেয়েছিলেন। অনেকেই বই চায়। আমি কাউকেই দিতে পারিনি। কিনে দিতে হয় যে! কিন্তু ২২৫ পৃষ্ঠা স্ক্যান করার সময়, অর্থ এবং প্রযুক্তি আমার নেই। আমি একটি বই কিনে রেখেছিলাম, আপনার জন্য। তা পাঠানো হয়নি। এই ‘অপরাধ’টুকু স্বীকার করি।
আমি বইটি আপনার এবং আরো অনেকের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সম্পূর্ণ করতে চাই। আশা করি পাব। না হলে দ্বিতীয় সংস্করণের তথ্যঘাটতির দায় কিন্তু আমার একার থাকবে না।

দুর্দান্ত এর ছবি

মার্জিত জবাব। অভিনন্দন।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

আজ সকাল থেকেই পানিশূন্য কই মাছরে মতো তরপাচ্ছিলাম। তপনদাকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন ধরে চিনি। আপনার লেখার সাথে কিছুতেই তাকে মেলাতে পারছিলাম না। আমার জানা মতে তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী একজন গবেষক। তার আজকের অবস্থান অনেক কাঠ-খড় পোড়ানোর ফসল। অসময়ের এক পশলা বৃষ্টিতেই যা বিনষ্ট হবার নয়। যাক, সন্ধ্যা অব্দি অপেক্ষা করার পর জবাব পেয়ে ধরে পানি পেলাম।

তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। নইলে অনেক কিছুই জানা হতো না।

tapan bagchi এর ছবি

আমার বইটি নিয়ে আলোচনাটি লেখার জন্য প্রথমেই কুলদা রায়কে কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলক এই রচনায় কিছু ভ্রান্তি আছে। আমি তাই কিছু অংশের প্রতিবাদ জানাই এবং অপপ্রচারণামূলক অংশটুকু প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাই। এছঅড়া আমার আরো কিছু বক্তব্য এখানে যুক্ত করতে চাই।আশা করি এতে কুলদানন্দের ভ্রান্তিমোচন হবে।
কুলদা লিখেছেন: আমি তাকে একটি বইয়ের সন্ধান দিয়েছিলাম। উলপুরের জমিদার আনন্দ রায় প্রণীত ফরিদপুরের ইতিহাস। কোলকাতা থেকে কমল রায়চৌধুরী সম্পাদনা করেছেন।
জবাব : তথ্যটি ঠিক নয়। বইটি প্রকাশের আগেই আমি কমল চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছি। আর আনন্দ রায় উলপুরের জমিদার নন। আনন্দ রায় জমিদারি করেননি কখনো। তার পিতা ছিলেন শরিয়তপুরের নাড়িয়ার জমিদার। তিনি যে না জেনে মন্তব্য করেন, এ থেকেই তা বোঝা যায়। আশা করি, ভুল শুধরে নেবেন।
কুলদা লিখেছেন: কিছুদিন পরে দেখি তপন বাগচী এই বইটিই তাঁর নিজের নামে সম্পাদক হিসাবে যুক্ত করে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশ করেছেন।
জবাব: বইয়ের তথ্য যোগাড় করেছি আমি। এমনকি কমল চৌধুরীর বইয়েই পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। তার অনুমিত নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তখন তার বইই প্রকাশিত হয়নি। সংুযক্তি অংশ্ও একান্ত আমার সংগ্রহ। তাছাড়া তার আগেই আমার বইটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছি। এখানে নিজের নাম যুক্ত না করার েকােনা যুিক্ত েনই। আপনার আপত্তিকর মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
কুলদা লিখেছেন: রেশন ভাই অভিযোগ করলেন-- তপন বাগচী তাঁর পরিবারের কারো সঙ্গেই লেবুভাইয়ের সম্পর্কে কোনো অনুসন্ধান করেন নাই। অন্যের কাছে শুনে বা বিভিন্ন উৎস থেকে কিছু তথ্য জোগাড় করে বইটিতে জুড়ে দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে আলাপ করলে মুক্তিযুদ্ধের আরও নির্ভরযোগ্য ইতিহাস পাওয়া যেত। কমরেড শওকত চৌধুরীর পরিবারের কারো সঙ্গে কি তিনি আলাপ করেছেন? ভাবীর সঙ্গে? অথবা সোহাগের (কবি সাঈদ জুবেরী) সঙ্গে? কমরেড শওকত চৌধুরী তাঁর বইয়ে এসেছেন খুবই খণ্ডিত হয়ে। শহীদ মাহবুব বিষয়ে কারো কাছেই খোঁজ নেন নি।
জবাব: লেবুভাই সম্পর্কে তথ্য নিয়েছি কমরেড আবু হোসেন, কমরেড আতিয়ার রহমান (ফরিদপুর), কবি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী, কমরেড কানাই গৌতম (কোটালীপাড়া), সুতপা বেদজ্ঞ (শহীদ কমরেড কমলেশ বেদজ্ঞোর মেয়ে), কমরেড সন্তোষ ব্যানার্জী (মাদারীপুর) প্রমুখের কাছ থেকে এবং তাঁর সম্পর্কিত বেশ কিছু নিবন্ধ ও প্রতিবেদন থেকে। যথাস্থানে তথ্যসংকেত আছে। আমি একে অনির্ভরযোগ্য মনে করি না।
শওকত চৌধুরীর বাড়িতে যখন যাই, তখন তার ছেলে জুবেরীর বয়স ২/৩ বছর। আমি কোলেও নিয়েছি তাকে। জুবেীরর চেয়ে রবীন্দ্রনাথ অধিকারীকেই বেশি নির্ভরযোগ্য মনে হয়েছে। শওকত চৌধুরীর জীবদ্দশায় রবীন্দ্রনাথ অধিকারী তার অবদান নিয়ে দৈনিক সংবাদ-এ ফিচার লিখেছেন। আমি সেখান থেকেও তথ্য ব্যবহার করেছি। শুনেছি জুবেরী খুব েেপ গিয়েছিল। আমার সঙ্গে শাহবাগে দেখা হওয়ায় আশা কির সেই ােভ মিটে গেছে। আমি তার কাছ থেকে তার বাবার সম্পর্কে আরো তথ্য জানাতে অনুরোধ করেছি। এখনো করছি। আশা করি পাব। শহীদ মাহবুব বিষয়ে কারো কাছেই খোঁজ নিইনি, -- একেবারেই অসত্য বিবৃতি। দৈনিক ইত্তেফাকের শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন আহমদ স্বাক্সরিত গোপালগঞ্জ মহকুমা প্রতিনিধি হিসেবে মাহবুবের নিয়োগপত্রের কপিও আমার কাছে আছে। তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেই আমি এই তথ্য পেয়েছি।
কুলদার অভিযোগ: আমার সামনে যে বুড়ো লোকটি জলকাদায় ঝিকরগাছার পথে ঢলে পড়েছেন হাঁটতে হাঁটতে—তার পরিবার পরিজনকে শেষবার বলে যাচ্ছেন তোরা এগিয়ে যা। বাঁচ। এটা ভুলে যাওয়া ঠিক? এ ইতিহাসগুলো নেই। তপন বাগচী সে ইতিহাসের লেবেলের লোক হয়েও সেদিকে আলো ফেলেন নি।
জবাব: খুবই হাস্যকর অভিযোগ। আপনার সামনের বুড়োটির কথা হয়তো নেই, অন্যের সামনের বুড়োটির কথা তো আছে। সকল বুড়ো কথা লিখতে গেলে কি ১লাখ পৃষ্ঠাও কুলোবে? না, ভাই, অমন শক্তি আমার নেই। আপনি লিখুন সকল বুড়ো-নার-শিশুর কথা। দেখবেন, একজনও যেন বাদ না যায়।
এছাড়া আমি আপনার পরিচিতি কার কার কাছে যাই নি, সেই ফিরিস্তিও দিয়েছেন। বেশ, ভালো কথা। অন্য কেউ লিখলেও কি সকলের কথা আসবে? নাকি আসা সম্ভব? বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে মন্তব্য করলে এই লেখকের পরিশ্রম কিছুটা হলেও সফল মনে হতো।
আমি তো বলেছিই যে, তথ্য দিন, নতুন সংস্করণে যোগ করব, কৃতজ্ঞআশা করি এতে ভ্রান্তিমোচন হবে।

দুর্দান্ত এর ছবি

আপনার স্মৃতিকথা আর অভিজ্ঞতাগুলো যেন এক একটি সাদাকালো ক্লাসিক ফ্ল্যাশব্যাক। জানিনা কতটুকু বেদনা নিয়ে এই কথাগুলো আপনার মন থেকে কি-বোর্ডে গড়িয়ে আসে, কিন্তু যখন পড়ি তখন বেদনার রেখাগুলোর চারপাশে এক অদ্ভুত সৌন্দর্যমন্ডিত আভা দেখতে পাই।
--
আপনার অভিযোগগুলোকে একপেশে মনে করে তুলবার মালমশলা আপনার লেখাতেই আপনি জুড়ে দেন। এতে করে আবেগভরা পরিশ্রমি একটি কাজকে হালকা মনে হয়।

তপন বাগচীর প্রসঙ্গটাই ধরে নেই। বইটির সমালোচনা শুরুর আগে আপনি চাওয়া সত্বেও যে তিনি আপনাকে এককপি বই পাঠাননি, আর সেই না পাওয়াটিতে আপনার নিজস্ব দুটি বই নিয়ে এগিয়ে যাওয়া থেমে আছে (যদি তাই বুঝিয়ে থাকেন আরকি), এই কথাগুলো এর পরে করা (আপাতঃ যুক্তিযুক্ত) অভিযোগগুলোকে একপেশে হিসাবে দেখতে সাহায্য করেছে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

তপনদার জবাবগুলো ভালো লেগেছে...
আশাকরি কোনো ভুল তথ্য থাকলে কুলদা দাদা তা শুধরে নেবেন। আর ভুল অভিযোগ থাকলে প্রত্যাহার করে নেবেন।

তপনদাকে ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কুলদা রায় এর ছবি

তপন বাগচী আমাকে বইয়ের লিংক দেন নি বা স্ক্যান করে পাঠান নি, এটার কারণে আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমি জানি পৃথিবীতে কোনো আকাঙক্ষা কখনো অপূর্ণ থাকে না। কোনো না কোনো ভাবে ইচ্ছে পূর্ণ হয়। এই কারণে আমি কিছুটা আস্তিক। পুরাণ কাহিনী ঘাইটা দেখি--কোনো নমুশুদ্র পূর্বে কোনো ব্রাহ্মণ ছিল না। এই হওয়ার কায়দায় আছে। জয় কায়দার জয়।

আমিতো তপন বাগচীর কাহিনী লিখব না। আমি আমার কাহিনীই লিখব। আমি তপন বাগচীর বইটি খুঁজছিলাম-- ঘটনার ধারাবাহিকতা রাখার জন্য।
তপন বাগচী মুক্তিযুদ্ধে গোপালগঞ্জ নামের বইটি করেছেন--ভাল কাজ সন্দেহ নাই। কিন্তু গবেষকের মত কাজ হয় নাই বলেই আমার ক্ষোভ জেগেছে। আমার মনে হয়েছে--তপন বাগচী এটা নিয়ে অসাধারণ কাজ করতে পারতেন। সম্ভাবনাটা জেগে উবে গেছে।
বইটি পড়ে আমার মনে একটি প্রশ্ন উঠেছিল--একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সংখ্যালঘু হওয়া সত্বেও আনুপাতিক হারে মরেছে বেশি--কিন্তু প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ নিয়েছে কম--বিশেষত নমশুদ্র শ্রেণী? এর কারণটি কি? এই নোটটি থেকে সেরকম একটি আলোচনা হোক ইচ্ছে ছিল। তার পরিবর্তে একটি বিচ্ছেদী গান শুনতে হল। অভাগা যেদিকে চায়--সাগর শুকায়।

আমার মনে আছে ১৯৮১ সালের দিকে মধুচক্র নামে একটি সাহিত্য সংগঠন হয়েছিল গোপালগঞ্জে। ওটা ছিল এসডিও সাহেবদের নেক নজরে থাকার একটি প্রতিষ্ঠান। সাপ্তাহিত আসর বসত নজরুল পাবলিক লাইব্রেরীতে। ওখানে ছিল কয়েকটি শালগাছ। সামনে স্টেডিয়াম। আর ঘাসের মধ্যে পড়ে থাকা চোরদের ভাঙা নৌকা। এই লাইব্রেরীতে আমার ছেলেবেলা কেটেছে। ফলে মধুচক্রের গুঞ্জন শুনতে হয়েছে।
সে সময় এসডিও সাহেব ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন--গোপালগঞ্জের একটি ইতিহাস লেখা হোক। পরের আসরে দুটো গোপালগঞ্জের ইতিহাস লিখিত আকারে পড়া হল। একটি লিখেছেন আবুল হোসেন ভুঁইয়া। আরেকটি মহেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। লাইব্রেরীয়ান ময়েন স্যার হেসে বললেন--ইতিহাসে পাতি হাস, ভুগোলেতে গোল...ইত্যাদি। সে ইতিহাস লেখা হল।
এই দুই ঐতিহাসিকই দুটো অর্পিত সম্পত্তি লীজ পেলেন। আর গোপালগঞ্জের লোকজন লিখিত ইতিহাস পেল। এর আগে ইতিহাস ছিল না।

আমার গুরু ময়েনউদ্দিন স্যার বললেন, বেটা, আর যাহা করো--কিন্তু বুদ্ধিজীবী হইও না। হইলেও বুদ্ধিজীবী সাজিও না। এই গুরুর প্রতি আমি ষাষ্টাঙ্গে গড় হই গো দাদাবাবুরা।

তখন তো আমাদের জল পড়ে পাতা নড়ের অবস্থা। তিনি বলেছিলেন,বৎস, জল পড়া দেখিয়াছ ? পাতা নড়া দেখিয়াছ? জল পতনে পাতা নড়া? কহিলাম, গুরু, বইতে পড়িয়াছি।
গুরু বলিলেন, তোমারও হইবে। তুমিও অর্পিত সম্পত্তি পাইবে। খাসদিলে দোআ করি।
আমি গুরুর দোআয় রসে বশে আছি।

এবং আমি জানি--নো কমপ্রোমাইজ। সাদাকে সাদা কহো। কালাকে কালা। সিধেসিধি বলিয়া আমার কোনো পথ জানা নাই।
এজন্য আমার ৪০ বছরের বন্ধু যখন মাথার উপরে কহিয়া ওঠেন, দাদা, আপনি মাঝে মাঝে বকেন--ঠিক আছে। তবে আমগোর ভাবমূর্তিটারে ইকটু খেয়াল রাইখেন।
রাখছি। ৪০ বছরের বন্ধুত্ব শ্যাষ। তিনি তাগো ভাবমূর্তি লৈয়া আছেন। আমি আমার গুরু ময়েনউদ্দিন স্যারকে মস্তকে লৈয়া চলছি।
সার কথা হৈল--যারা গাছেরও খাইবেন-তলারও লইবেন, এই খাওন-লওনের পালায় আমি নাই। এই কারণে আমার ভুড়ি নাই। ভুড়িদার লোকদের লগে আমার দোহারকী নাই।
কষ্ট পাইলে আমি দুঃখিত। এই দুঃখ ঘোচানোর জন্য আমার বানীগুলো আমি উইথড্র করিলাম। আসেন কিছু বইটিাই লিখি। আর গান গাহি--
আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
চুল ভেজাব না।

বাই।
বি: দ্র: আনন্দ রায়ের বইটি প্রকাশের ইতিহাসটি উইথড্র করিতে পারিলাম বলিয়া দুঃখিত। যদি তারপরও কেহ দাবী তোলেন--তাহলে কী আর করা। পোলাপানরে তো খুশি করণ দরকার। খুশী হোন।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

দুর্দান্ত এর ছবি

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সংখ্যালঘু হওয়া সত্বেও আনুপাতিক হারে মরেছে বেশি--কিন্তু প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ নিয়েছে কম--বিশেষত নমশুদ্র শ্রেণী? এর কারণটি কি?

একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধার সাম্প্রদায়িক পরিচয় নিয়ে এর আগে কোথাও প্রশ্ন উঠেছে শুনিনি। আর কিছু না হোক মুক্তিযুদ্ধের মত যুগান্তকারি ঘটনাও যদি বর্ণবিদ্বেষমুক্ত না হয়ে থাকে তাহলে তো এই প্রশ্নটি আরো আগেই আসা উচিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ ধারনার গাঁথুনির গভীরে যে সেকুলার ভাবনা, তার সঠিক গভীরতা পরিমাপ করার মত শক্তি এই প্রশ্নে আছে।

হানাদার বাহিনী ও বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে শিয়া-সুন্নি-আহমদিয়ার বিভাজন ধারনা যতটুকু পরিস্কার, সংখ্যালঘুদের মধ্যকার সাম্প্রদায়িক বিভাজন সম্পর্কে অতটা তারা অতটা ওয়াকিবহাল ছিল, এটা ভাবতে পারিনা। দেশের সর্বত্র সংখ্যালঘুদের আবাসন ঘনত্ব সমান নয়। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে অল্পসংখ্যক লোকের পক্ষেই সংখ্যালঘুদের মধ্যকার সাম্প্রদায়িক বিভাজন সম্বন্ধে একটি পরিস্কার ধারনা গড়ে ওঠাও সম্ভব। তাই, মুক্তযোদ্ধাদের মধ্যে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়কে সমানভাবে নিয়ে আসার একটি কাঠামোগত পদ্ধতি আদৌ অবলম্বন করা যেতো কিনা, এই বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। সেক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের মধ্যে সংখ্যালঘুদের যুদ্ধক্ষেত্রে সামনে সমান করে নিয়ে আসার বিষয়টি অন্যন্যসব বিষয়ের গুরুত্বক্রমে ঠিক কোথায় ছিল, সেটাও জানা প্রয়োজন।

আমেরিকার গৃহযুদ্ধ যেমন সেখানের শোষিত শ্রেণির জীবনের আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছিল, হতাশা যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে দেশের শোষিত শ্রেনীর, নিম্নবর্ণের সংখ্যালঘু সহকারে, জীবনে বিশেষ কোন পরিবর্তন এনে দেয়নি। স্বাধীনতা এসেছে একটি ছোট দলের জন্য। অন্যরা যারা আগে থেকেই আমেরিকার সেই কালো দাসদের চাইতে বড় কিছু ছিলনা, তাদের ভাগ্যে জুটেছে নামকাওয়াস্তে স্বাধীনতা আর কার্যত শুধু মালিকের নাম বদল। সেম শিট, ডিফারেন্ট ওনার।

tapan bagchi এর ছবি

কুলদা-দাদা,
এই নিয়ে আপনার সঙ্গে আর কথা বাড়াতে চাই না। আপনি ভালো থাকুন।
আপনি গোপালগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখলে খুশি হবো। তাতে আমার ভুল শুধরে নিয়ে জাতি এক সত্য ইতিহাস জানতে পারবে। আপনার সেই মতা আছে বলে বিশ্বাস করি। আমরা সেই দিনের অপোয় থাকছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।