ডঃ কিটি মার্জার এন্ড হার ডক্টোরাল এওয়ার্ড : ওলে ওলে

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/১১/২০১০ - ১০:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গেল রাতে ভাল করে ঘুম হয় নি। রাতভর বাসার বিড়ালটি তারস্বরে ম্যাও ম্যাও করে ডেকেছে। মনে হল এক থাবড়া মেরে ঠাণ্ডা করে দেই। কিন্তু হোম মিনিস্ট্রির কথা ভেবে সামলে নিতে হল। এইভাবে জীবনে কত ক্ষোভই তো মাঠে মেরে ফেলতে হচ্ছে। বাসনা অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। হা ঈশ্বর। তারণ কর।

একটু বেলা করে উঠল বেলু। বিছানায় বসে দুহাত ছড়িয়ে দিল দুদিকে। হা করে একটি লম্বা হাই ছাড়ল। হায়ের মুখে দুটি তুড়ি মেলে বলল, হোয়াটস আপ বেবী?
পরানের বান্ধবরে, বুড়া হৈলাম তোর কারণে। আর বউ এখন বলে কিনা বেবী। মরে যেতে পালে আরাম হত। বসেছিলাম ড্রয়িংরুমে। রেগে সরে গেলাম বারান্দায়। খোলা হাওয়া। দুএকটি পাখি গান করছে। আলো খেলছে। পাখি কেন গায়—আমারে কেন কাঁদায়।

বেলুর কাছে ততক্ষণে বেবীটি ফাল মেরে এসেছে। সোজা কোলে উঠে বসেছে। মুখপানে চেয়ে বলল, মিয়াও। মেজাজ খারাপ। ঘুম হয় নি। ঘুম ছাড়া জীবন বৃথা।
বেলু এসব বোঝে। চেঁচিয়ে বলল, হেই শুনছ।
শুনতে না পারলে ভাল হত। জীবনে বধিরতা খুব ভাল লাগে।বধিরতা তুমি কবে আসিবে? বারান্দায় রেলিংএ মাথা ঠুকে বললাম—কী হল?
--গুড মর্নিং। শুনছ তো? না শুনতে পেলে এদিকে আসো।

বেলুর মুখটা ভয়ানক শুকনো। বেলুর অর্জিনাল নাম বিলকিস বানু। প্রথম প্রথম ডাকতাম বিলি। মাঝে মাঝে বিল্লি আমার টুকটুকে বিল্লি। আহা সে যে কী সোনা দিনগুলোই না ছিল! দিন চলমান। চলে যায়। দাঁড়িয়ে থাকে না। এখন শুধুমাত্র বেলু বলারই পারমিশন আছে। নো বিল্লি। বেলু বুকে জড়িয়ে রেখেছে বিড়ালটিকে। মুখটি ওর গালে ঠেকিয়ে আতু পাতু করছে। বলল, শোনো, ইমডিয়েটলি ড্রেস করো। কিটিকে ইমার্জেন্সী ক্লিনিকে নিয়ে যাও।
--কিন্তু আমার তো আজ মেডিকেল চেক আপ আছে। কার্ডিওলজিস্ট কী সব এনজিওগ্রাম করানোর ধান্ধা করছেন। হৃদযন্ত্রে ব্লগ ট্লগ থাকতে পারে।
--রাখো তোমার ব্যক্তিগত হৃদযন্ত্র। আমার কিটি সীক। আগে ওর ট্রিটমেন্ট। তারপর অন্য কাজ।

হোম মিনিস্ট্রি রেগে গেলে খবর আছে। সুতারং ডাক্তার বাদ। ব্যাংক বাদ। পোস্টাফিস বাদ। বাজার সদাই বাদ। এমন কী ঈশ্বরের দরবারে নালিশ জানানোর আশাও বরবাদ। সোজা পশু হাসপাতালে যেতে হল।

পশু বিশেষজ্ঞ নানাকায়দায় বিবিধ রতন টেস্টমেস্ট করলেন। সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল। বিকেলও এক সময় সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল। রাত্রি থরথর। তারপর পশু চিকিৎসক মহোদয় একগাল হেসে বললেন, না। কোনো সমস্যা নাই ফিজিক্যালি। তবে…
--তবে সমস্যা একটি আছে। তেমন সমস্যা নয়। বলতে পারেন গভীরতর সমস্যা। ড্রিপ্রেশন।
-- কি প্রেশন?
--ডিপ্রেশন। তোমাগো ভাষায় বিষণ্নতা। অহো—কী মধুর তোমাগো ভাষা। মধুর তোমার শেষ নাহি যে। ইহা একটি অসুখ। অতীব কঠিন।
--কী উপায়?
--থ্রি ওয়ে ট্রিটমেন্ট। ফার্স্ট. সাইকোলজিস্ট। সিকেন্ড. সাইক্রিয়াট্রিস্ট। থার্ড. সাইকো থেরাপিস্ট।
--হুউম।
--নো চিন্তা। একটু দীর্ঘমেয়াদী ট্রিটমেন্ট। চালিয়ে যেতে হবে।
--কাজ হবে তো?
--হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। গড নোজ। তবে আমরা আছি। এই কইরা বাঁচি।

মধ্যরাত অবধি বিড়ালটিকে নিয়ে বসে আছি। বেলুর ফিরতে দেরী হচ্ছে। আজ ওর ব্যস্ত স্কেডিওল। দুটো সেমিনার। একটি কনসার্ট ওপনিং। ক্লাসিক্যাল ড্যান্স ওপেনিং। বিশ্ব পরিবেশ নিয়ে ধারবাহিক টক শো। মহা বিজি। ফোন করে এক ফাঁকে বলল, আজ তুমি কিটির সঙ্গে শোবে। তুমি জেগে থাকবে। ও ঘুমোবে। ডোন্ট বদার হার।
--কী বলছ তুমি?
--রা করবা না। পুরুষ মানুষদের আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। যা কইছি তাই সই। লেট হার স্লিপ। বাই।

কিটি থেকে থেকে ম্যাও ম্যাও করছে। বললাম, বেলু, ফোন রাইখো না। জরুরী কথা শোনো। মনে হৈতাছে ওর গোন আইছে। পাল খাওয়াতে হইবে। ছাইড়া দেই। অইটা পাইলেই ঠিক হইয়া যাইবে।
বেলু খুব রেগে গেল। চেঁচিয়ে বলল, ইউ ফাকিং গাই। ইহা ছাড়া তোমার কাম নাই। আবার তাগদও নাই।
--বেলু?
--নো। দ্যাটস রাইট। হাচা কথা। আমার চেয়ে এই কথাটা আর কে ভাল করে জানে।
তারপর তারপর ঝানু ডিপ্লোম্যাটিকের মত গলা সরু করে বলল, তুমি কি মনে কর অই রস থেকে মিস কিটি বঞ্চিত? ঠিক নয় বেবী। অই রস ও রেগুলার পায়।
--কিন্তু সিম্পটম টিম্পটম তো দেখি না।
--দ্যাখবা কী কইরা। ওরে তো আমি রেগুলার পিল খাওয়াই। দামী কন্ট্রাস্পেটিভ। পেট বাঁধাইয়া কি ফিগার নষ্ট করাতে চাও?

এরপর কথা নাই। বাবা ফিগার তুমি বেঁচে থাকো। আমি যাই। জেগে থাকি। সারা রাত বিড়ালটি ম্যাও ম্যাও করে চেঁচাল। পাড়া মাথায় করল। আর আমি মা মা করি। বিড়ালটিকে সারা রাত আকড়ে থাকড়ে ধরে থাকতে হল। বলতে হল, কষ্ট হৈতাছে কিটি? তুমার কষ্ট হৈতাছে?
কিটি চোখ বুজে বলে, মিয়াও। মিয়াও।
এই মিয়াওয়ের অর্থ কী? জানা গেল ভাল হত।

জানার সুযোগ নাই। কত সুযোগ মরুতে শুকায়। কে তার খবর রাখে? রাত্রি পোয়ানোর আগে হোম মিনিস্ট্রি বাসায় এসেছে। বেডে যেতে যেতে বলে দিয়েছে—নো লেট। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিটিকে আবার ক্লিনিকে নিয়ে যাও।
--কিন্তু আমার যে হেলথ ইনস্যুরেন্স রিনিউ এপয়েন্টমেন্ট আজ।
--রাখো তোমার হেলথ ইনস্যুরেন্স। তুমি গেলে আরেকজন তোমাকে পাওয়া যাবে। কিটির কিছু হলে—কিটি পাব কোথায়। হার্টলেস সিলি গাই। আগে কিটি। তারপর অন্য কিছু।

তাই সই। থেকে থেকে ঘুম পাচ্ছিল। সাইকোথেরাপিস্ট একজন মহিলা বেশ কিউট। ঠোঁট জুড়ে হাসি রাশি রাশি। বলল, ওকে ডার্লিং। ডিজিজ হিস্ট্রি বল।
--গ্যাস্ট্রিক। হাই ব্লাড প্রেসার। ডায়াবেটিস। আর্থরাইটিস। ইরেগুলার হার্ট বিট।
--গুড গুড।
ঘুম নেই। খাওয়া নেই। কাজে অনীহা। জীবনে হতাশা।
মহিলার নাম মিস টিনি। বেশ টিনটিনে গলায় বলল, ভেরি গুড। একদম ক্লাসিক্যাল ড্রিপ্রেশন।
--নিদান কি?
--রেগুলার আমার কাছে শুধু আসা আর যাওয়া।
--কী করে আসুম। এই বিড়ালটার পিছনে ছুটতে ছুটতেই তো দিন পার। আসুম ক্যামনে?
--ওহ গড। তোমাকে নিয়ে তো আমার কাজ না মাই সিনিয়র ফ্রেন্ড। কিটি সুন্দরীর জন্যই এই নিদান। তোমার জন্য তো কই নাই। বাই বাই। ঠিক মতো এপয়েন্টমেন্টে আইসও। টেক কেয়ার।

কিটির জন্য রেগুলার ডাক্তারের কাছে যাই। কোনো উন্নতি নাই। সাইক্রয়াট্রিস্ট ওষুধ দিয়েছে। নাথিং ডেপলপমেন্ট। সারা রাত সেই মিয়াও মিয়াও। সাইকোথেরাপিস্ট গুন গুন কৈরা গান শোনায়। আর কি সব ফুসফাস করে। নো চেঞ্জ। সাইকোলজিস্ট একদিন খুব গম্ভীর হয়ে বরল, ফ্রেনস। কিটির সমস্যা অতিশয় জটিল।
--কি টিল?
--জটিল। তোমরা তো ওকে সব দিচ্ছ। হোম, ফুড, ক্লথস, মেডিকেশন, সেক্স, এন্টারটেইনমেন্ট, পাওয়ার এন্ড পলিটিক্স এভরিথিং। কিছু না পাওয়া নেই। তবু ওর মনে কী একটা নেই।
--কী নেই?
--সেটা তো বলতে পারলে কম্ম ফতে হত জানেমন। সেটা আবিষ্কার করতে হবে। অর্থ নয়, কীর্তি নয় আরও এক বিপন্ন বিস্ময় আমাদের অন্তর্গত রক্তের মধ্যে খেলা করে। আমাদেরকে ক্লান্ত করে।
মাথা আউলা হয়ে গেল। বেলু ভয়ানক বিজি। বিভিন্ন সোস্যাল, কালচারাল, এনভারোনমেন্টাল, পলিটিক্যাল, গভর্নমেন্টাল, ইন্টারন্যাশনাল ইস্যুজ নিয়ে ছুটোছুটি করছে। মাঝে মাঝে ফোন করে বলে—শোনো ঘট, কিটির কিছু হলে—জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে। বুঝেছ?
--বুঝিনি।
--বোঝনের আগে মিস কিটিকে সুস্থ করে ফেলো। নো ফাকিঁবাজি। গো এভেড। বাই।

আমাদের শহরের সবচে ত্রিকালজ্ঞ জ্ঞানী লোক রমজান আলী মুন্সীর কাছে গেলাম। তিনি গভীর সহানুভুতির সঙ্গে সব শুনে বললেবন, স্বখাত সলিলে ডুবেছ হে।বাসররাতে বিল্লী মারছিলা? মনে পড়ে?
--মারি কি করে? বিবির কোলে বিল্লী ঘুমায়। সেটা মারা যায়?
--তাইলে বোঝো-- দুই বিল্লি তোমায় কয়লা করে ফেলছে হে।
--উপায়?
--উপায় আছে। ডিম হুজুরের কাছে যাও। তিনিই তোমার আখেরী ভরসা। বদর বদর। আল্লা ভরসা।

ডিম হুজুর থাকেন সাঈদাবাদে। ডিম দিয়ে ভিম কাজ তার। প্যামপ্লেটে লেখা আছে—কেউ ফেরে না খালি হাতে—খাজা বাবার দরবার হতে। অলৌকিক শক্তির অধিকারী বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টেকারী মহামানবের জালালী ও রূহানী শক্তির পরশে বিভিন্ন সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করুন। পারিবারিক অশান্তি, অবাধ্যকে বাধ্য করা, স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ মেটানো, শত্রুকে পরাস্ত করা. শনি ও রাহুর দশা কাটানো, বান মারা, প্রেমে ব্যর্থ হওয়া, মনের মানুষকে কাছে পাওয়া, ১২ ঘণ্টায় যে কোনো গুপ্ত রোগের মুশকিল আসান ইত্যাদি করতে ১১০ % গ্যারন্টি। ব্যর্থতা নয়, সফলতা। ইসমে আজমের মাধ্যমে সমাধান। যারা বিদেশে আছেন তারা ফোনে যোগাযোগ করুন। বিফলে মূল্য ফেরত।

নীচে দুটি সচিত্র সাফল্য কাহিনী। আমার স্বামী নানা কারণে উর্বরতা সমস্যায় আছেন। অনেক ডাক্তার বদ্যি করিয়াছি। শেষে ডিম হুজুরের তদ্বিরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমি গর্ভবতী হইয়াছি এবং সহিসালামতে ঐদিনই একটি প্রকাণ্ড শিশু প্রসব করিয়াছি। সংবাদটি সরকারী টেলিভিশনে প্রকাশিত হয়েছিল। আমার পুত্র এখন লায়েক হইয়াছে বাপের মত। অচিরে বাপকে টপকাইয়া ঝাতির মুখ উজ্জ্বল করিতেছে এবং আমার স্বামীটি আশি বছর বয়সেও মাঝে মাঝে বিবাহ করিতে বাধ্য হইতেছে। হুজুরের দোআয় আমার কোটি কোটি কোটি ট্যাকা জমিয়া বরফ হইয়াছে। এক্স ফার্স্ট লেডি রওশন এরশাদ।

আরেকজন লিখেছেন—আমার সমস্যা ছিল আমার খুবই খাই খাই রোগ। খাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো কাম নাই। পোলাও খাই। চিকেন খাই। মদ খাই। পিজা খাই। নেতা খাই। রাজনীতি খাই। পাওয়ার খাই। দ্যাশ খাই। বিদেশ খাই। মাথা খাই। আগা খাই। গোড়া খাই।লোকে বলে মিঃ খাই খাই নোয়াখালি। কিন্তু সমস্যা হইল আমি আদর্শ খাদ্য দুধ খাইতে পারি না। আমার শ্বশুর সব দুধ আসমানীগো লাগিয়া বরাদ্দ করিয়াছেন। আমি দুধ খাইলেই বদ হজম হয়। বুক জ্বালা করে। প্রাসাদে বসিয়া ষড়যন্ত্রের বদলে সপ্তম যন্ত্র বিষয়ে সেমিনারের মাঝেও আমাকে বদনা হস্তে ছুটিতে হয়--ইহা আমার মনে বড় শরম। আমার স্ত্রীও ক্ষিপ্ত হয়। মহাকেলেঙ্কারী ব্যাপার। ডিম হুজুরের তদ্বিরে মাশা আল্লাহ আমি এখন ঠিক। আমার অবস্থার উন্নতি হইয়াছে। বিশেষ ধরনের মৌয়ের কথা বলিয়াছেন হুজুর। এখন আমি রেগুলার মৌ সহযোগে দুধ খাইতে পারি। এইসব কারণে এরশাদও যেমন আমারে এ বিষয়ে বুক পকেটে রাখিতেন। ম্যাডামও নিরাশ করেন নাই। তাহার আঁচলে বসিয়া মৌদুধু খাই। ফাঁক বুইঝা উর্ধপানে ধাই। আমি ডিম হুজুরের নিকট মহাকৃতজ্ঞ। ইতি মিঃ ব্যারিস্টার মৌদুদু।

হুজুরের সেক্রেটারি ফোন ধরলেন। বললেন, আগে ক্রেডিট কার্ডের নম্বর দ্যান। তারপর তদ্বির।
হুজুর খুবই এলেমদার আদমী। অতিশয় পেয়ারা গলায় বললেন, বেটা কোই মুশকিল নেহি। তুই আমার শাকরেদ মিজানুর রহমান মিজানের তসরিশ লে। মখা আলুমগীর হইলে আরও জোরদার হইত। মাগার মখা খুবই বিজি। মিজানকে আমি তোর জন্য ইশারা দিয়াছি। সেই তোর সাফি।

মিজানুর রহমান মিজান শান্তি নগরে বসেন। বেশ আলীশান অফিস। মাথার উপরে বড় করে স্বর্ণাক্ষরে লেখা ডঃ মিজানুর রহমান মিজান। প্রতিষ্ঠাতা মালিক খবর গ্রুপ অব বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড। তার দৈনিক, সাপ্তাহিক নানাধরনের পত্রিকার বিজনেস আছে। আছে নানা জায়গায় হাই ভোল্টেজ যোগাযোগ। এবং জ্ঞানী ও ধার্মিক।
হুজুরের কথা শুনে মিজান সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে দোআ করলেন খাস দিলে হুজুরের জন্য। বললেন, ডিম হুজুর মানুষ না—তিনিই আসল হুজুর। আপনের মুশকিল অলরেডি হাসান হইয়া গেছে।
--কী রকম?
--কুনো রহম টহম নাই। ছিলাম থার্ড ডিভিশনের বিএ পাশ। রাস্তায় ফ্যা ফ্যা কইরা ঘুইরা বেড়াইতাম। নানা কায়দায় ল্যাবরেটরি স্কুলে ড্রিল মাস্টরের চাকরী জুটাইছিলাম। কপাল এমুন শ্যাখ মুজিব ঐ্যার মইধ্যে ফউত। এ্যাকদিন খোয়াবে এক হুজুর কৈলেন ওরে ব্যাটা, পত্রিকা কর। শ্যাখরে লৈয়া খবরা বানা। পাবলিকে খুব খাইবে।
--আপনি কে হুজুর?
--আমি তোগো ডিম হুজুর। সাইদাবাদে পয়দা হইততিছি খুবই শিগগীরী।
কথা সত্যি। সাপ্তাহিক খবর পত্রিকা বের করার আগেই পাবলিকে সব কিন্যা ফালাইল। তহনতো দিন খারাপ। শ্যাখের কথা কওনই যায় না। এইয়ার মইদ্যে আমি তারে লৈয়া ইস্টোরি দিতে দিতে ফুলতেছি। হুজুর কৈলেন, ওরে বাপ, খালি রাজনীতি করিলেই কী হৈবে—পুলাপানগো দিকেই ইকটু তাকা। মাশাল্লাহ কইয়া চিত্রবাংলা নামে একখান ম্যাগাজিন করলাম। লোকে হুমড়ি খাইয়া পড়ল। চিত্রবাংলায় মাইয়া লোকের অংগে কাপুড় নাই। তারা অঙ্গে কাপড় না রাখলে আমার কী দোষ! আমি হাচা কথাই লেখছি। ডিম হুজুর খুব খুশি। কৈলেন তোর হইবে।

টাকা হৈল। ছাকা হৈল। কিন্তু সব হৈলেই কী যেন হয় নাই।কিছু খালি খালি লাগে। ডিম হুজুর দাঁতে খিলান দিয়া কৈলেন, রে গাদা—তোর জেল্লাদার কাম দরকার।
--কী দার?
--জেল্লাদার।জেল্লাদার টুপি দরকার।
--টুপি দিয়া কী করুম? আমারে কী শ্যাষে হুজুর হৈতে কন? খোল্লাম খোলা ব্যবসাপাতি বন্ধ করতে কন?
--নারে বাচ্চা, তুই টুপি লাগাবি তোর মাথায় না—নামের মাথায়।
আক্কিলমন্দ কি ইশারায় কাফি। কিন্তু মন খচকচ করছে। বললাম, হুজুর—এডা কী করে হয়। আমি তো কোনো টাইনাটুইনা বিএ পাশ।
ডিম হুজুর হাসলেন। ফুঁ দিয়ে কৈলেন, অবিশ্বাসী হইও না। বিশ্বাসে মিলায় ডিগ্রী তর্কে বহুদূর। হক মাওলা।

মিজান সাবে সেই হক নিয়ে বাজার থেকে একহালি ডিগ্রী সওদা করলেন। একটা বিবি রওশন এরশাদের লাইগা, একখান নায়িকা ববিতার জইন্য, একখান ডিম হুজুরের লাইগা আর একখান নিজের লাইগা। পাকাপাকি ব্যবস্থা। নামের মাথায় বসে গেল ডঃ। বউ জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি সুতিকা রোগের চিকিৎসা জানো?

ডঃ মিজান তার দিকে কটমট করে তাকালেন একবার। বললেন, মশকরা কৈরো না। আমি সত্যি সত্যি ডঃ হইছি। ডঃ অব পিডি। মানে পিএইচডি ইন পচা ডিম। তিনি সর্বদাই ডিম সিক্ত। লোকে জানে। লোকে মানে। হালে মুস্তাফিজুর রহমান নামে তার এক জড়ুয়া ভাই আইসা পড়ছেন। তারও নামের আগে ডঃ। মালিক এটিএন বাংলা। স্ত্রী খুব রূপসী। তার জন্যও একটা ডঃ কেনা হইছে। তবে বাজারে ছাড়া হয় নাই। অপেক্ষমান। হাতে এগিয়ে দিলেন তার কার্ড। লেখা সোনালী অক্ষরে—ডঃ মিজানুর রহমান মিজান।
ঘটনা পরিস্কার। কিন্তু গরীব মানুষের যা হয়। সব কিছুতে সংশয়। বলে ফেললাম—ভাইজান, সেটা না হয় বুঝলাম—মানুষজনের লাইগা ডঃ ডিগ্রী কেনা যাইতে পারে। কিন্তু বিল্লির জন্য ডঃ ডিগ্রী কেনাটা একটু বেশী হইয়া যাইবে না?
হাসলেন মিজান সাব। মারেফতি হাসি। কান পর্যন্ত ছড়ানো। বললেন, নো চিন্তা। যেই দ্যাশে বিনা ডিগ্রীতে তিনবার পরধান মন্ত্রী হওন যায়—যেই দ্যাশে সামান্য ডিগ্রী পাশ কৈরা আরেক লেডি পরধান মন্ত্রী একটা নয় দুইটা নয় তের চৌদ্দটা ডঃ ডিগ্রী আকাশ বাতাস থন যোগাড় কইরা জাতিরে গর্ববতী বানাইতেআছেন রেগুলার,সেই দ্যাশে আপনের বিড়ালের জন্য একখান মাত্র ডঃ ডিগ্রী যোগাড় করতে পারবেন না—হেইয়ার পরে কি আর কোনো কামের কথা থাকে? বিড়াল কেন—লাগলে আপনের সরাইলডার লাইগাও লন, ঘরের লিংটি ইন্দুরটারে লিস্টিতে রাখেন। টিয়া পক্ষীর লাইগাও লন। কুন হালায় ঠেকায়? ডঃ টিয়া—তুমি কর বিয়া। ভরসা রাখেন। ডিম হুজুর জিন্দাবাদ। আমেন। বাই।

বেলু সেদিন দাঁড়িয়ে থেকে বসার ঘরে একটা বিশেষ নেমপ্লেট ঝোলাল। সোনার অক্ষরে লেখা—ডঃ কিটি মার্জার।
কিটি এখন রেগুলার রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমায়। স্বপ্পন দেখে। পোলাও মাংস খায়। দায়। দরকারে সেক্স করে। গান করে। মুভি করে। টক শো করে। নো ডিপ্রেশন।

বেলু মাঝরাত্রিরে ফেরে কখনো কখনো। তখনই বিড়ালটি ফাল পেড়ে বেলুর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বুলু বলে হোয়াটস আপ ডঃ কিটি মার্জার?

কিটি বলে, ওলে ওলে। ওলে ওলে।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

চচো আগা মাথা কিচুই বুঝলাম না, মাফ করবেন।

মাহিন

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আবার পড়েন, ধীরে ধীরে, রস চুইয়া চুইয়া পড়তাছে, চোখ কান বন্ধ রাখলে জিহ্বা বাইর কইরা রাইখেন চোখ টিপি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

সবজান্তা এর ছবি

শেষদিকটা একটু ঝুইলা গেলেও সেইরকম মজা পাইলাম। আপনার লেখার হাত ঈর্ষণীয়।


অলমিতি বিস্তারেণ

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

কি প্রেশন?

ছবি না দিয়া ভাষার মধ্যে ইঙ্গিত দিলে স্যাটায়ারটা পোক্ত হইত। আর প্রসঙ্গ তো পুরান।

যেই দ্যাশে বিনা ডিগ্রীতে তিনবার পরধান মন্ত্রী হওন যায়—যেই দ্যাশে সামান্য ডিগ্রী পাশ কৈরা আরেক লেডি পরধান মন্ত্রী একটা নয় দুইটা নয় তের চৌদ্দটা ডঃ ডিগ্রী আকাশ বাতাস থন যোগাড় কইরা জাতিরে গর্ববতী বানাইতেআছেন রেগুলার,সেই দ্যাশে আপনের বিড়ালের জন্য একখান মাত্র ডঃ ডিগ্রী যোগাড় করতে পারবেন না—হেইডা কি কুনো কামের কথা হৈল?

এর পরে কি আর কোনো কামের কথা থাকে?


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

কুলদা রায় এর ছবি

সহি বাত। গুমাইতে ঘুমাইতে লেখসি। সুতরাং লেখার মইদ্যে ঘুমের তাড়া। কোথায় বাক্য, কোথায় শব্দ, কোথায় ছবি, কোথায় ভাব, কোথায় অভাব সব ছুইট্টা যায়।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

সাইফ তাহসিন এর ছবি

এত বড় লেখা, হারায় গেছিলাম আরেকটু হইলে, তয় মজা হইছে, ৫তারা। বেলুর ভক্তরা আপনারে দৌড়ানি না দেয় চোখ টিপি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

দিগন্ত বাহার [অতিথি] এর ছবি

সাবাশ...দৌড়ানি নিজে খান এবং অপরকেও খাওয়ান!
হে হে...মস্করা করলাম...
রস বাইয়া পরতাছে, তয় অনিন্দদা হাসা কইছেন, 'ছবি না দিয়া ভাষার মধ্যে ইঙ্গিত দিলে স্যাটায়ারটা পোক্ত হইত'
সাইজে ছোট হইলেও মন্দ হইত না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।