পুরুষ নর্তক !!!!!!

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: রবি, ০২/০৩/২০০৮ - ৭:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশের নাচ নিয়ে সত্যি সত্যি আশাবাদী হওয়া উচিত আমাদের- বুলবুল, উদয়শঙ্কর যখন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব তখন আমাদের আরও বড় গলায় বড় উচিত বাংলাদেশের নাচ একটু আলাদা- তবে বাংলাদেশে যারা নাচে- বিশেষত পুরুষ নর্তকেরা- তাদের বিষয়ে একটা কথাই বলতে হয়- তাদের দেখলে আমার গা কিলবিল কিলবিল করে- কেনো এই বিতৃষ্ণা এটা বুঝি না- তবে একটা শব্দ বলতে পারি- মাইগ্যা পোলা মনে হয় ওদের দেখে- সোহেল কিংবা শিবলী কিংবা রানা- এর বাইরে দলগত নৃত্যে যাদের দেখেছি তাদের সবারই গঠন কিংবা আচরণ দেখে- তাদের পেলবতা এবং তাদের তাধিন তাধিন ভঙ্গি দেখে আসলে বিবেচনা বদলানোর কোনো সুযোগ হয় নি অদ্যাবধি।
অথচ অন্য যেকোনো নাচ দেখে( বাংলা ছবির নাচ বাদ- ওয়াসিমের কিংবা জাভেদের কিংবা জসিমের কিংবা সোহেল রানার কিংবা একটানে যতদুর যাওয়া যায়- সিরিয়াস কাঞ্চন আর চকলেট হিরো, মেগাস্টার আর মান্না- কোথাও একটা মানুষ পাওয়া যাবে না যার নাচের ভঙ্গি দেখে আনন্দ জাগে-) তবে ছবির জগতের মানুষদের দায়টা কম- সেখানে মুলত নৃত্য নির্দেশক বলে অথর্ব একজন আছে- যার কাজ হলো নাচের মুদ্র দেখিয়ে দেওয়া এবং অভিনেতার কাজ সেই মুদ্র অবিকল অনুকরণ- তবে অনুকরণের ব্যর্থতার জন্য এদের কিছু বলা যেতে পারে)

এখানে অন্য সব নাচ- সেটা কেরালার একশন ঢিসুম ঢিসুম নাচ- হাতে তলোয়ার নিয়ে ভীষণ লাফাকুদা থেকে শুরু করে যতটুকু দেখা হয়েছে এই সামান্য জীবনে ট্যাঙ্গো আর ট্যাপ আর ওয়ালটজ আর স্প্যানিশ নাচ তার ভিত্তিতেই বলি- কিংবা হিন্দি ছবির নাচ দেখেই বলি- কোথাও আসলে ছেলেদের মাইগ্যা মনে হয় না-

এই মাইগ্যা মনে হওয়ার কারণটা আমি বুঝি না ঠিক মতো- অতিরিক্ত চামড়াসচেতনতার কারণে ঘনঘন ফেসিয়াল করা- পুরু মেকাপ কিংবা পায়ের ঘুঙুর- অনেক কিছুই আসতে পারে তালিকায়- তবে সব বিবেচনা করে মনে হয় নাচের মুদ্রা একটা বিষয় হতে পারে- এই হারিণী মুদ্রা এই গজমুদ্রা এইসব ১৪ পদের মুদ্রার নানাবিধ কম্বিনেশন -পারমুটেশন- এবং সময়ের সাথে বেড়ে চলা নানাবিধ অব্যক্ত মুদ্রা সব মিলিয়ে আমাদের হাতে অনেক রকম রুপান্তর আছে- যা নির্দিষ্ট ভাবে এবং সম্মিলিত ভাবে বিশেষ কোনো অনুভবকে প্রকাশ করে- এই সব মুদ্রাগুলো অনেকগুলোই ধার করা- এবং এই সব মুদ্রাগুলো অন্য কোথাও দেখেও পুরুষের অনুকরণে তাদের মেয়েলী মনে হয় নি-

একটা গল্প শুনেছিলাম- আরসিন গেটে একবার সোহেল গিয়েছিলো তার এক আত্মীয়ের বাসায়- কয়েকজন যুবক তাকে ধরে উত্তম-মধ্যম দিয়ে বলেছে চুতমারানির পোলা আর এই রকম নাচবি- যদি আর একদিন দেখছি খানকির পোলা জিনিষ ফেলাইয়া দিবো-

সেই সময় অনুরোধ করে রেহাই পেলেও এখনও তার এই মেয়েলী ভঙ্গীতে হাঁটা কিংবা নাচা থামে নি- এই যে ভঙ্গিটা- ঐ যা দেখ না- কি করতেছে- এর সাথে সেই মুদ্রাগুলো সংযুক্ত সেটাই গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট-

আমাদের সময়ে ছিলো চন্দন- শহরের একমাত্র ছেলে যে তবলা বাজাতে পারে- সে নাচের সময় যোগালী দেয়- শহরের হার্ট থ্রব না হলেও সাংস্কৃতিক জগতে সবাই মোটামুটি চেনে তাকে- তার বিরুদ্ধে একটাই অভিযোগ মেয়েরা তাদের নিজেদের মতো ভাবে- তার সাথে ঠিক সেভাবে মিশে না যেভাবে অন্যসব ছেলেদের সাথে মিশে মেয়েরা- অনেক মেয়েই রাস্তায় তার পিঠে হাত দিয়ে দাঁড়ায়- হাত ধরে হাঁটে তবে শহরে কোনো গুজব রটে না- আর আমাদের সাথে একটু হাসি আর একটু চোখাচোখি হলেই গুজবের ঝড় বয়ে যায়- চন্দন- ও একটা পোলা হইলো ওর সাথে মেয়েরাই ঘুরবে- ছেলেরা ঘুরবে কেনো? ও কোনোদিন মাঠে নেমে ফুটবল খেললো না- ক্রিকেট খেললো না- সারাক্ষণ নাচ গান- তবলা- ও একটা পোলা না কি-

তবে আমার নিজের বিবেচনা হলো আসলে মাইগ্যা লাগবার পেছনের বড় একটা কারণ ওদের পোশাক নির্বাচন- ওদের পোশাকের এবং ভঙ্গিমার ভেতরে সেই পুরুষসুলভ বিষয়টা নেই- এই পুরুষসুলভ বিষয়টা আসলে ব্যখ্যাযোগ্য নয়- তবে এইটা দেখেই আসলে বলে দেওয়া যায় এই আচরণগুলো পুরুষ করে না- সেদিন বাসের লাইনে একজন লাইন ছেড়ে গন্ডগোল করে সবার শেষে এসে সবার প্রথমে চড়লো- তবে তাকে কেউ কিছুই বলে নি- ঐ যে মুখাবয়ব- ঐ হাঁটার ভঙ্গি- বড়জোড় তাকে পুরুষ প্যাসিভ সমকামী বলা যায়- এর বেশী সে পাবে না-

তবে পোশাকের ভঙ্গি এই ঝুল সালোয়ার কিংবা ঢিলাঢালা আঙরাখা ছেড়ে যদি আটোসাটো পোশাক পড়ে, শরিরে সামান্য কাঠিন্য এনে একটু গতি এনে নাচে তবে পুরুষ নর্তকদের পুরুষালী মনে হবে- শরীরে একটু দ্রুততা আর সাবলীলতা- মেয়েরা যেভাবে আঙ্গুলের ভঙ্গি করে নদীর ভঙ্গি করে ধীরে ধীরে সেই গতিতে নয় আরও একটু বেশী গতি চাই- পুরুষের সাথে সম্ভবত এই ধীরতা বিষয়টা যায় না- আর পায়ের ঘুঙুর ফেলে অন্য কিছু-

আমার মনে হয় যদি নিজেদের পোশাক আশাকের সংস্কৃতি বদলে ফেলতে পারে তারা তবে সেটা দর্শনীয় হয়ে উঠতে পারে- আর ইদানিং মিউজিক ভিডিওর সাথে যে ক্যারিকেচার চলে যার আদিপিতা বগুরা ইয়ুথ কয়ার আর হানিফ সংকেতের নর্তক দল সেই বাঁদর লাফানোটাও আসলে পুরুষালী নাচ হয়ে উঠতে পারে নি-

যারা ছোটো তারা মনে করতে পারবে না তবে বগুরা ইয়্যুথ কয়ারের ভুঁড়িওয়ালা গ্যাঞ্জি পড়া মানুষটাকে সালাম- তাকে অন্তত কখনই মেয়ে মনে হয় নি- তাই তার জন্যই মনে রাখা
জন্ম দিন ফিরে এলো এসো নাচনকুঁদন করি--


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

লালিমা পাল (পুং) আর পেলব রায়ের কথা মনে পড়ে গেলো।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এইটা দেখি ৬৫ বার পইড়াও হিমু বাদে কেউ মন্তব্য দেয় নাই।
আমারো মনে হয় আসলে নাচের মুদ্রা না নর্তকদের আচরণই দায়ী পাবলিকের এই রকম চিন্তার জন্য। বহুদিন আগে টিভিতে বাল্মিকী প্রতিভা দেখছিলাম। শান্তি নিকেতনের পৌষমেলা থিকা লাইভ দেখাইছিল। সেইখানে মনে হয় জীবনে প্রথমবারের মতো পুরুষালী নাচ বইলা কিছু দেখলাম। ডাকাইতের মেকাপ-মুদ্রা-অভিনয় সবই দারুণ। তাগো কাউরেই মাইগ্যা লাগে নাই। আমি এই গল্প পরে অনেকের কাছে করছি। তবে নাচের ছাত্রদের কাছে না। কোন কারণে একটা সামাজিক বিশ্বাস দাড়াইয়া গেছে বিশেষ কইরা মধ্যবিত্তের মধ্যে যে, ব্যাটাদের মধ্যে তারাই নাচবে যারা বেটিমুখি। ফলাফল তো লিখছোই....



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

তবে শিবলী মোহাম্মদের চাইতে কিন্তু সাদী মোহাম্মদের মেয়েলীপনা অনেক বেশি। ঘুঙুর না পইরাও... তার কথাবার্তা চালচলন সব...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

হিহি কথা সত্য

- খেকশিয়াল

অমিত আহমেদ এর ছবি

জটিলস্য।
রাসেল ভাই এর সাথে একশতভাগ সহমত পোষণ করলাম।
আমি কানাডাতে আসার পর পর ক'জন ল্যাটিন আমেরিকান বান্ধবীর পাল্লায় পড়ে কিছু দিন সালসা কোর্স করেছিলাম। ওরা প্রথমেই যেটা শেখায় সেটা হচ্ছে, তোমার কাজ হচ্ছে মেয়েকে নাচানো। তুমি তাকে সুযোগ করে দেবে। এই সুযোগ করে দেয়াটাই হচ্ছে তোমার নাচ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।