স্লীভলেস লোকাট

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: রবি, ০৯/০৩/২০০৮ - ১১:৫৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিশ্বকর্মা হয়ে বসে আছি- সামনে মেনেকা কিংবা রম্ভা নেই তবে এরপরেও রীতিমতো তপস্যা করতে হচ্ছে মনোসংযোগের জন্য- নাইট ওয়াচম্যানের মতো তীব্র মনোসংযোগ প্রয়োজন এখন- তবে সমস্যা একটাই- সামনে যিনি বসে আছেন তার কণ্ঠনিসৃত বানীগুলো তেমন আকর্ষনীয় না বরং তেমন কোনো অর্থবোধকতা তৈরি করতে পারছে না ভেতরে-তার স্লীভলেস লোকাট বরং আরও বেশী আকর্ষণীয় এ মুহূর্তে- তবে সেখানে তাকাতেও দ্বিধা- তাই এ তপস্যা-
সেই তীব্র তপস্যার সময়ে ভাবছি - কিংবা ভাবছি না বরং অভব্য একটা ভাবনাকে পাহারা দিচ্ছি- লোকাট স্লীভলেস থেকে ভাবনার খাত অন্য দিকে বইয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চলছে-

মাথার ভেতরে ঘুরছে অপর্নার পরে ববিতা এর পরে আর কাকে দেখেছি স্লীভলেসে? উদাহরণ একের পর এক সামনে আসছে তবে এই পোশাকের সাথে ক্ষমতার সংযুক্তি এড়াতে পারছি না- কতিপয় নারী উদ্যোক্তার পরনে দেখেছি, দেখেছি সামাজিক মাণদন্ডে সফল নারীদের পরনে। তবে কি এই পোশাকের ক্ষমতার চিহ্ন? পুরোনো দিনের ছত্রীধারী যেমন সামন্ত ক্ষমতা নিদর্শন তেমন ভাবেই এই স্লীভলেস নারীর ক্ষমতায়নের কিংবা ক্ষমতাবতী নারীর পরিচায়ক?

শিক্ষা এখনও তেমন ভাবেই মহার্ঘ বিলাসদ্রব্য হয়ে আছে- ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয় আর বৈশ্যের প্রয়োজন ছিলো তাই তাদের কাছে শিক্ষা প্রয়োজনীয় শোষণের হাতিয়ার আর এর পরের রাজা-রাজন্যদের পথ ধরে শিক্ষার সামগ্রীকিকরণ হলো না এখনও-তাদের পোশাক কেমন ছিলো এ সম্পর্কিত কোনো ধারণা আপাতত নেই- তবে তাদের উত্তরীয়তেই আভিজাত্য প্রকাশিত হতো- মেয়েদের পোশাকের ছাঁট আর কাট নিয়ে তেমন সমীক্ষা হয় নি বাংলাদেশে- আমাদের ধরেই নিতে হবে ১৮৭০ এর আগে তিন প্যাঁচে শাড়ী পড়বার সেই চিরন্তন রীতিটাই আমাদের সংস্কৃতি ছিলো আর সেটাই আমাদের পোশাক ছিলো-

ধন্য ঠাকুরবাড়ীর মেয়েরা যাদের কল্যানে সেমিজ- ব্লাউজ আর পেটিকোট আসলো বঙ্গে- আর তাদের কল্যানেই ব্লাউজের ছাঁট আর লেস আর গাঁথুনিতে আসলো বিপ্লব- আর আমাদের মতো কামুক অভাগাদের জন্য একটু উঁকিঝুকি মারবার সুবর্ণ সুযোগ- লো কাটের সুচনা কোথায়- বলা যাচ্ছে না- তবে সেই কলেজ বেলায় আমাদের শহরের প্রধান সড়কে প্রথম দেখলাম বানানো ব্লাউজ আর অন্তর্বাসের দোকান- উঠতি তরুনদের চোখের সুখ ছিলো কলেজ যাওয়ার পথে বিভিন্ন মাপের আর ছাঁটের অন্তর্বাস দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলানো- আহা এই জামাটাতেই মৌসুমিকে কেমন লাগবে আর রীতাকে পড়ালে তো মারমার কাটকাট- আগুন লেগে যাবে বাজারে-
সে সময়ে লোকাট থাকলেও সেটা রীতিমতো অভব্যতা- আমাদের মফস্বলী সংস্কৃতিতে রীতিমতো অশালীন পোশাক- সেই মফস্বলী ধারণা থেকে বের হতে পারলাম না- তাই রুবাবা উদ দৌলার লো কাটে বর্ষবরণের রাতের সাজ দেখে তার ভাঁজ আর ভাবের সাথে আশ্চর্য কারিশমা নিয়েও চিন্তিত থাকি- ঠিক কিভাবে ও এটা আটকে রেখেছে শরীরে- খুলে পড়ে যাবে পড়ে যাবে করেও ঠিকই আটকে আছে- বড়ই আশ্চর্য পোশাক-

লোকাটের সাথে যেতে পারে এমন রাতে সাজ- চোখের নীচে মাশকারা আর আইশ্যাডো নিয়ে পেরেশানীর কিছু নেই- এখন রীতিমতো রুপচর্চা বিপ্লবে কাঁপছে দেশ- তাই সাওনা নিতে যখন দিনে কেউ ১৩ হাজার ফুঁকে দেয় অবাক হই না- ৬০ হাজারের ত্বক পচে গেলো কারাগারে- এই নিয়ে বিশাল দীর্ঘশ্বাস ফেলতে শুনেছি-

বরং ভাবনা কে পাহাড়া দিয়ে ভালোই হলো অনেক কিছুই মাথায় ঘুরলো- এবং ৮ই মার্চ নারী দিবনে নারীর দিকে কামনার চোখে দেখলাম না সাবিনা ইয়াসমিন বোধ হয় খুশী হতে পারে- আমাদের আলাপচারিতার ফাঁকে কোনো পরিবর্তন নেই- রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে নিজের সাথে- বারংবার অলিগলি পোড়োবাড়ী ঘুপচি দিয়ে ফুচকি মারার স্বভাব নিয়ে গলদঘর্ম-

বরং ভালো কিছু ভাবি- আনন্দের কিংবা কৌতুককর কিছু- বাসের পেছনের সীটে বসে আছি- আমার পাশের মহিলা রীতিমতো কাঠ হয়ে বসে আছে- ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়ার সুত্র মেনে আমিও কাঠ- নড়তে ভয় পাচ্ছি- গায়ে গা না লাগানোর জন্য মহিলা প্রায় আধা সীট পরে গিইয়ে বসেছে- শরীরে আর কিছু না থাকলেও দায়িত্ববান পুরুষের কাঁধ আছে- তাই নিজের সীতের পরিধি ছেড়ে সেটা পাশের সীটে হামলা করে- মহিলা দুই সীটের ফাঁকে বসে আছে- ইচ্ছা করলেই পাশের সীটটা ফাঁকা রেখেই বসা যেতো- তবে পেছনের ৬ সীটে ৫ জন বসলে তার পাশের সীটের অর্ধেক ফাঁকা থাকে- আবার আমার পাশের অর্ধেকও ফাঁকা থাকে- ফলে তার শরীরের সাথে শরীর লেগে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই তৈরি হয় না- মহিলার বুদ্ধিতে রীতিমতো চমতকৃত হয়ে যাই- ঢাকা শহরের বিপদজনক ভাঙাচুড়া রাস্তায় বাস ছুটছে- আমি ঘামছি- ঘর্ষণ দিয়ে পতন ঠেকানো যায় হয়তো তবে হঠাত করেই এই ভরবেগের পরিবর্তনে বেসামাল হয়ে এদিক ওদিকে চলে যাছে শরীর- শরীরের নীচের অংশ গতিজড়তার সুত্র মেনেই স্থির-
মহিলা নেমে গেলে বিশাল স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি- যাক আর কাঠ হয়ে বসে থাকতে হবে না-

ফিরতি বাসে আবারও একই ঘটনার পূনারাবৃতি ঘটে- একটা পরীক্ষা আছে- আপনি বিপরীত লিঙ্গের সহচার্যে কতটা সহজ- সেখানে একটা প্রশ্ন ছিলো- কতটুকু দুরত্ব রেখে বিপরীত লিঙ্গের কারো পাশে বসতে পারবেন- আমার বিষয়ে দুরত্বটা ৩ ইঞচি হবে না= তাই ব্যাগ ঝুলিয়ে বসে পড়লাম ললনার পাশে- ললনার দিকে তাকারে পারছি না - এবং এমন ভীড় ভীর পরিস্থিতিতে যা করা ভালো আপন মনে গুণগুণ তাও করার সাহস পাচ্ছি না
আমি না হয় অনেক সহজ- যদি আমার এই গান কোনো ভাবে ইভ টিজিং্যের পর্যায়ে পড়ে তাহলে বিপদ- অন্তত এই অপবাদ মাথায় নিতে পারবো না- বাসের অবস্থা ভালো না- ঈঞ্জিন গরম হয় নি ঠিক মতো- নিয়মিত বিরতিতে একটা করে স্ট্রক মিস হচ্ছে- ফলে এটা বেবি ট্যাক্সি আর মিনিবাসের মাঝামাঝি ত্রি স্ট্রোক ইঞ্জিন হয়ে গেছে- সমস্যার মহা সমস্যা হলো একবার ব্রেক করলে স্টার্ট হচ্ছে না- সবার নানা রকম তাড়া থাকে- তবে নষ্ট বাসে তাড়ার তাগাদা বেশী- সবাই উশখুশ করছে- সবারই রাজকার্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে- সময়ানুবর্তী বলে বাঙ্গালীর কোনো দুর্নাম নেই- তবে ভেতরে বসা বাঙ্গালীরা সবাই বোধ হয় বাঙ্গালীত্ব বিসর্জন দিয়ে দিবে আজ-
এর ভেতরেই একজন হুংকার দিল- ঐ মিয়া কি গাড়ী রাস্তায় নামাইছো- গাড়ী বন্ধ হয়ে যায়- এইটা কি মগের মুল্লুক পাইছো- তোমার গাড়ীতে উঠছি কইয়া কি পাপ কইরা ফেলাইছি-

আবার কথা বলে- থাপরা দিয়ে দাঁত ফেলাইয়া দিবো- ঐ তোগো মালিককে কবি এইরম নষ্ট গাড়ী য্যান রাস্তায় না নামায়-

ফাজলামি পাইছো না কি মিয়ারা- ফাজলামীর একটা সীমাবদ্ধতা আছে-

আমি দাঁত কামড়ে বসে থাকি- হায়রে ২১শে ফেব্রুয়ারী- হায়রে বাংলা ভাষা-
পাশের মহিলা নামছে- বাসের ভীড় একটু পাতলা হয়েছে- তবে তেমন পাতলা না- আমি পাশ ফিরে মহিলাকে নামার জায়গা করে দিলাম- মহিলা নামছে- আমি কাপড়ের টেক্সচার বুঝতে পারি- বুঝত পারি তার খাঁজ আর অন্তর্বাসের ভাঁজ- অনেক সময় নিয়ে রগড়ে রগড়ে নামছে ললনা- আমিও ঝুঁকে আছি- নড়ার সাহস পাচ্ছি না- বাসের ভীড়ে একটা মাত্র চিতকার- আমাদের বীর বাঙ্গালীরা খালি হাতেই আমাকে ছিড়ে ফেলবে- এমন সহিংস মানুষের যুথবদ্ধতার জায়গাগুলোর একটা চলতি বাস- সব ঢাকাবাসীই কোনো না কোনো ভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে আর এ কারণের তারা অত্যাধিক সন্ত্রস্ত- আর সন্ত্রস্ত মানুষের নিরাপত্তাহীনতা বোধের প্রকাশ সচারাচর হত্যার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়- তাই আমাদের রাস্তায় ছিনতাইকারী মানুষের গণপিটুনিতে মারা যায়- পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়- আর আমার এতটা সইবে না-

আমি পৌরুষ খাঁচায় পুড়ে মাথা নীচু করে বসে থাকি-
নাহ সেই ঘুরে ফিরে শরীরেই ফিরে আসছি- আর ফিরবো না ভাবনাকে অন্যখাতে ফেরাতে হবে-

মধ্যবিত্ত পরিবারে এই স্লীভলেস ফ্যাশন কিংবা এই লো কাট ফ্যাশন কেনো আসলে বাসা বাধতে পারলো না? আমাদের অক্ষমতা কোথায়- আমাদের শৈশব্রে তোলা শাড়ীর ন্যাপথলিনের গন্ধের সাথে আমাদের বিলাসিতা বাঁধা পড়ে আছে- অনেক কাপড়ের বাহুল্য নেই- বরং ৩ জোড়া বাসায় পড়বার শাড়ী আর ৩টা তোলা শাড়ী- এই দিয়েই সব অনুষ্ঠান পার হয়ে যেতো- আর সেই তোলা শাড়ীর একটা আবার বিয়ের শাড়ী- তার আবার কদর আলাদা- প্রতি বছর শীতের শুরুতে রোদ মাখিয়ে আবার তুলে রাখা- ন্যাপথলিন আর নিম পাতা= আর সেই সাথে বিয়ের সাদাকালো ছবি দেখা- এই পরিবেশে ঠিক স্লীভ লেস আসে না-
আসে না লো কাট- যাদের অন্তত বেশ কয়েক জোড়া বাড়তি আছে কিংবা থাকবার সম্ভবনা আছে- তারাই এই পরীক্ষায় যেতে পারে- যাদের ইভিনিং গাউন আর নাইট পার্টির আলাদা সাজ তাদের হয়তো এটা মানিয়ে যাবে- তবে যার রাতের আর বিকালের আর সন্ধ্যার আর দুপুরের সাজের পার্থক্য কেবল কাজলের উপস্থিতি অনুপস্থিতি- স্নো পাউডার আর চুলে হাল্কা ফুলের সুবাস মাখিয়ে চলে যাওয়া- তাদের কাছে এটার কোনো মাহত্ব্য নেই- তাই বোধ হয় সেভাবে স্লীভ লেস দেখে অভ্যস্ত হতে পারি নি- আর ক্ষমতাবান নারীর চিহ্ন হয়েই আমার কাছে আকর্ষক উদ্দীপক হয়ে থাকবে স্লীভ লেস-


মন্তব্য

দুর্দান্ত এর ছবি

জটিল বিষয়, তবে সুপাঠ্য।

লক্ষ্য করুনঃ
- "মহিলা নামছে" - হয়তো বলতে চাচ্ছিলেন "মহিলা নামছেন"।
- "ক্ষমতাবান নারীর" চাইতে বোধহয় ক্ষমতাবতী নারীরা বেশী মেয়েলী, নয়কি?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- পোস্টের বক্তব্য যাই হোক, এই পোস্টে আমার মতো কোমলমতি শিশুদের(!) খাইষ্টা ব্যাপারে চোখ বড়বড় করার ট্রেইনিং দেওয়ার একটা খালপ্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে।

পরের কথা বাকীরা বলবে!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

জ্বি
বুড়োকে (কোমলমতি শিশুকে) মেরে খুনের দায় আর কি!

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

পরিবর্তনশীল এর ছবি

গোধু গুরুর সাথে হাত মিলাইলাম।
একমত...
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অপরিচিতা এর ছবি

দুর্দান্তকে বলছি,

বাংলা ব্যকরণ অনুসারে, ক্ষমতাবতী নারী হয় না্‌ । একসাথে দুইবার লিঙাত্বক শব্দ ব্যবহার করা যায় না।

অপরিচিতা

দুর্দান্ত এর ছবি

উদ্দ্যেশ্য তো ব্যাকরনসিদ্ধতা নয়, রমনীয়াতা...সেই হিসাবে দুইবার আর তিনবারে কি আসে যায়?

অতিথি লেখক এর ছবি

ফাইনাল পরীক্ষার ২ সপ্তাহ আগে সচলায়তন নামক পোকা মাথায় ঢুকেছে। নতুন এসছি। কার লেখা কেমন আগে থেকে ধারণা নেই। অধম অনভিজ্ঞের সাধারণ প্রশংসার উর্ধ্বে যদি আপনি না হোন, তবে বলতে চাই - লেখাটা অসাধারণ লেগেছে আমার কাছে। বহুমাত্রিকতা ছিল। সুখপাঠ্য তো বটেই!

ফেরারী ফেরদৌস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।