চেতনায় সামরিকায়ন

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৩/০৪/২০০৮ - ১০:৩৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লেখার আগ্রহ নেই বেশ অনেক দিন ধরেই- ভাবনায় অশ্লীল সামরিকায়ন। কোনো কিছুই উদ্দীপ্ত করে না আমাকে। সুশাসনের নামে আইনী অপপহরণ দেখে বিস্মিত হই- প্রশাসনের রুঢ়তা, মুঢ়তা দেখে লজ্জিত হই।

বর্তমান বাংলাদেশের জন্য প্রতিনিয়ত আশংকায় কাঁপি আর ত্রাসে তৃষ্ণার্ত হই ইদানিং। প্রতিহিংসাপরায়ন সামরিক অসুয়া বশ্যতার মন্ত্র জপে- আইনের অশালীন জিহ্বা লেহন করে প্রতিনিয়ত।

বস্তুত রদ্দি বাংলা ছবিও শ্লীল মনে হয় ইদানিং। বাড়তি ২ পয়সা কামানোর ধান্দায় শঠতার সবক না শেখা সফল বাংলা ছবির দ্বিতীয় সারির নায়িকার বৃষ্টি ভেজা স্তন দেখেও বিমর্ষ হই না, লজ্জিতবোধ করি সামরিক পোশাকে ঢাকা ছায়া সরকার সামরিক বাহিনীর প্রধানকে মঞ্চে দেখলে।

চাহিদা স্পষ্ট থাকলে প্রকাশে নির্লজ্জতা দৃষ্টিকটু লাগে না তেমন তবে সামরিক এই হ্যাংলামি দেখে শংকিত হই প্রতিদিন। বিরোধিতা শব্দটাও তেমন প্রতিষ্ঠিত নয় আজকাল। বরং বিরোধিতা শব্দটা সামরিক শিশ্নে তীব্র সংবেদন আনে।
কোথাও সাক্ষী নেই- সকলের অগোচরে প্রশাস্ন ঘরে ঢুকে প্রমাণ সেধিয়ে দেয় গুহ্যদ্বারে- বড় আশ্চর্য জীবন যাপন ইদানিং- যেকোনো কৌশলে বিরোধিতা রুখবার কায়দা কানুনে জঘন্য সব আইনসম্মত সমকাম দেখি টেলিভিশনের পর্দায়।
আইনী পরিভাষায় এর নাম হলো প্লান্টেড এভিদেন্স। যেখানে আদালতে দোষী সব্যস্ত করবার তাবত প্রমাণ বপন করা হয়- আর জব্দ করে মানুষকে রিমান্ডে নেওয়ার ব্যবস্থা চুড়ান্ত হয়।
সরকার নামক হিজরাদের কোমর নাচানো আর হাততালি কতক্ষণ বিমোহিত করতে পারে। সেই একই ২ পয়সার ধাপ্পাবাজি।

বরং বিবেচনা করা যাক আমাদের কতটুকু সম্মান আছে- আমাদের তথাকথিত ভাবমুর্তি যা রক্ষণে প্রাণ ওষ্ঠাগত আমাদের তাবত জ্ঞানী-গুনিজনের- সেই ভাবমুর্তিতে কখন চির ধরে? আমাদের সামনে ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়ার ছাড়া অন্য কোন রাস্তা খোলা নেই। আমাদের নীতিসম্মত না হলেও তথাকথিত স্বপ্রণোদিত অপরাধ স্বীকারের পন্থা মেনে নিতে হবে। আমাদের বলতে হবে যদি মুচলেকা দিয়ে, যদি নিয়মমতো জরিমানা দিয়ে কেউ দুর্নীতি করে এবং যদি তার আগামি ৫ বছরের ভেতরে সংসদ নির্বাচন করবার কোনো বাসনা না থাকে তবে সে আসলে তেমন অপরাধ করে নি।

আমাদের দুদকের সাথে এটাই রফা করতে হবে, নইলে দেশের অর্থনীতির ১২টা বেজে যাবে। এই আশংকায় আমাদের সামরিক প্রধানের হাসিমুখে সামান্য বেদনার ছাপ পড়ে নি। এ ঘটনায় আমাদের বিজ্ঞ অর্থ উপদেষ্টার চেহারাও মলিন হয় নি। তিনি নীতিবাক্য এবং ব্যবসায়ীদের বিবেকের উপরে যাবতীয় দায় ছেড়ে দিয়ে বিবৃতি দিয়ে শান্তি পেয়েছেন।
আমাদের চিরশান্তি পাইবার পথটা উন্মুক্ত এখন।

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার লজ্জা নিয়ে প্রবাসজীবনে বসবাসরত যে কয়জন বাঙ্গালী এখন আছেন, তাদের জীবনের ব্যক্ত দুঃখ আমাদের আন্তর্জাতিক পরিচয়পত্র। সবুজ পাসপোর্টের লজ্জা নিয়ে পরিশ্রমী সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখা মানুষেরা যখন মাইগ্রেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে- যখন একটা দরিদ্র দেশের নাগরিক হওয়ার জন্য উদ্যত মেরুদন্ড নুইয়ে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অপরাধীর ভঙ্গিতে। যখন আমাদের মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার পন্থা বাতলে দিয়ে যায় এডিবি আর ডাবলিউবি, যখন আমাদের সাইক্লোনকবলিত জনপদের উন্নয়নের নীতিমালা এবং পন্থা নির্ধারণের জন্য আমাদের বেসরকারি পর্যায়ে প্রাপ্ত সকল নাগরিক সহায়তার তুলনায় বড় একটা অঙ্ক এডিবিকেই শুধতে হয়- কারন তারা কনসাল্ট্যান্ট নিয়োগ দিয়েছে ।

যখন সেইসব উন্নত বিশ্বের মানবিক পুলিশেরা ধরেই নেয় এই সবুজ পাসপোর্টধারিরা অবৈধ অভিবাস্ননিমিত্তেই যাবতীয় কুটকৌশল প্রয়োগ করতে চায়- যখন ধরেই নেওয়া হয় এদের অধিকাংশ কাগজই জাল- এবং এমন নীচু অভ্যর্থনায় যখন এই উজ্জ্বল মুখগুলো ম্লান হয়- যখন রাতের অন্ধকারে জাহাজের খোলে আনুধিক স্বেচ্ছা দাসেরা ত্রিপলী থেকে মরোক্কো হয়ে পাড়ি জমায় ভুমধ্য সাগরে- যখন এক বোতল পানি আর কয়েক প্যাকেট বিস্কুট হাতে নিয়ে সীমাহীন মরুভুমিতে পথ হারায় কেউ তখনই মনে হয় আমরা আসলে কি পেয়েছি? দরিদ্র দেশের নাগরিক হএও স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখবার পাপে লিপ্ত হতে কে শিখিয়েছে আমাদের?

অশ্লীল বাংলা ছবিতে এক্সট্রা হয়ে বেঁচে থকবার বাস্তবতা উপলব্ধি করছি বর্তমানে। অশোভনতা যা মাথায় গিয়ে সরাসরি আঘাত করে আর ৫৬০০০ বর্গমাইলের কারাগার ভেঙে পালানোর তাগাদা দেয় প্রতিদিনই। অসহায় এক্সট্রাকে মুখে আনন্দিত মেক আপ নিয়ে সং সেজে ক্যামেরার সামনেই বসবাস করতে হয় আর ইত্যকার ইতরামি দেখতে হয়। যদিও পেটের ভেতরটা গুলিয়ে উঠে- বমনের তীব্র বাসনা জাগে তবুও একের পর এক ঘৃন্যদৃশ্যের চিত্রায়ন দেখে যেতে হবে। এক্সট্রার মুক্তি নেই- তাকে গিলতেই হবে সব অশোভন দৃশ্য।

আমি এই তৃতীয় শ্রেণীর রদ্দি মার্কা সিনেম্যাটিক বাস্তবতা চাই না। যইতই চাপ থাকুক না কেনো, জলপাই বাগানের ভাবনার পাঁচড়া গায়ে লাগুক এমনটা চাই না আমি- আমার সহ্যসীমা অতিক্রম করে গেছে এই নোংরামি-
রদ্দি বাংলা ছবিতে একদল সংঘবদ্ধ দুস্কৃতিকারী থাকে- তাদের গ্যাং মুভমেন্টের সাথে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মকান্ডের কোনো তফাত দেখা যাচ্ছে না- ক্রস ফায়ারে মানুষ মেরে ফেলা- কাউকে ধরে নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে রেখে নির্যাতন করা- এসব দৃশ্যের বাইরে অন্যকোনো শোভনদৃশ্য চোখে পড়ছে না।

প্রতিহিংসাপরায়ন প্রতিশোধপরায়ন নোংরা মানুষের সহযোগি হিসেবে প্রশাসনে যারা থাকে তাদের সামনে সিনেমায় স্বল্প বসনা নারীদের ঝাঁক থাকে- তবে বাস্তবের সামরিক প্রশাসনের সামনে অসভ্যভাবে কোমর নাচাচ্ছে তথাকথিত সংস্কারবাদীরা- তাদের মদির আমন্ত্রনে প্রলুব্ধ হচ্ছে দুর্নীতিমির্মুলের শপথ নেওয়া বর্তমান শাসকগোষ্ঠি।

আমি ভীষণরকম বিব্রতবোধ করছি এমনটা বললে ভুল হবে- বিব্রত হওয়া শোভন একটা বোধ- আমার অনুভুতি আমাকে কেউ সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পানিতে ডুবিয়ে রেখেছে- চারপাশে বিভিন্ন মানুষ আর জন্তুর বর্জ্য পাঁক খাচ্ছে।

আমি সে পানিতে শ্বাস গ্রহন করছি, সে পানিতে ডুবে আছি আপাদমস্তক- আর যখন সবকিছুই অশ্লীল হয়ে যায় তখন আমার ঠোঁটে আর কোনো কথা আসে না- ভাবনাবিচ্যুত হয়ে আছি- রদ্দি ছবিতেও একটা পর্যায়ে গিয়ে সান্তনা হয়ে কোনো এক নায়ক ছুটে আসে- তবে আপাতত দৃশ্যপটে কোনো নায়ক নেই- কারো আবির্ভাবে স্বস্তিবোধের কোনো সুযোগ নেই- শুধু অশোভন মানুষের অপরাধ আর আত্মরতির অনন্ত যাত্রা- ক্যালিগুলা চিত্রায়িত হচ্ছে বাংলাদেশে-

আমার যাওয়ার পথে নেতিয়ে যাওয়া রয়েল বেঙ্গল টাইগারকেই ইদানিং বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি মনে হয়। নেতিয়ে ন্ব্যূজ হয়ে পড়ে আছে দেশের সর্ববৃহৎ শপিং মলের সামনে- বসুন্ধরার সামনে আগে পতপত উড়তো সেই রয়েল বেঙ্গল, মালিকের সাথে রয়েল বেঙ্গলের ভেতরের বাতাসও বোধ হয় নির্বাসনে গিয়েছে।
তার সামনেই ভোর থেকেই মুনিষের লাইন লেগে থাকে। টাঙ্গাইল, কামরাঙ্গির চর, গাজীপুর কালিয়াকৈর থেকে সকালের প্রথম বাসেই ঘাড়ে কোদাল ঝুলিয়ে কাজের খোঁজে শহরে আসে সবল মানুষেরা- তাদের কোদালের পেছনে ঝুলে একটা মাটির টুকরি- আর সেই সাথে একটা ব্যাগে থাকে কাপড় আর চিড়া-মুড়ি-
এরাই প্রতিদিন শহরের উঁচুউঁচু ভবনের ভিত খুঁড়ছে, এরাই হয়তো একটু পরেই ট্রাকের পেছনে বোঝাই হয়ে কোথাও চলে যাবে- হয়তো কোথাও পুরোন ভবন ভেঙে নতুন অট্টালিকা হবে- সেই ভবনের ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে এরাই শাবল চালিয়ে ভাঙবে সব দেয়াল।

তবে এসবের ভেতরে থেকেই আশা খুঁজে নিতে হয়- সামরিক হস্তক্ষেপ আর সামরিক তত্ত্বাবধানের প্রাথমিক পর্যায়ে সুশীল সমাজ আশ্বস্তবোধ করলেও এই সামরিক অধিগ্রহনে আমার অনুভুতি এখনকার মতোই ছিলো তখন।

পিয়াল ভাইয়ের সাথে ১৫ই জানুয়ারীর কথোপকথন বারবার মনে পড়ে- পিয়াল ভাইয়ের কবিতায় সে ভাবনাই ছিলো- আপাতত এ রকম ভাবি- আমি ভাবতে চাই নি- আমার কাছে এই সামরিক অধিগ্রহনের জায়গাটাতে সংশয় থেকেই যায়- এদের ইশ্বরের উপরে অবিচল ভক্তি- আমাদের বাংলাদেশের জনগণকে পরীক্ষা করছেন এইসব প্রাকৃতিক দুর্বিপাক দিয়ে- মানুষ খেতে পারছে না, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে এখানে ইশ্বরের বাম কিংবা ডান হাতের মধ্যমার কোন কারসাজি নেই- এটা আমাদের শাসকদের অকর্মন্যতার দলিল। তাদের সিদ্ধান্তহীনতা এবং অযোগ্যতার প্রামাণ্য দলিল এটা- এই সময়েও তাদের ভেতরের রসবোধ অক্ষুন্ন আছে- তাই তারা আশ্বাস দিতে পারছে- বর্তমানে একটু রয়ে সয়ে খান, পরবর্তীতে পুষিয়ে নিবেন বেশী খেয়ে।

আমাদের সামরিক বাহিনীর প্রধানদের আলুপ্রীতি প্রবল- জিয়াউর রহমানের প্রচারণার একটা অংশ ছিলো- বেশী করে আলু খান ভাতের উপরে চাপ কমান- এই মর্চে পড়া সাইনবোর্ডাটা অনেক দিন দেখেছি- জিয়াউর রহমানের সানগ্লাস পড়া ছবি আর হাতে কোদাল নিয়ে খাল কেটে কুমীর আনবার ইঙ্গিতপূর্ণ ছবিতে তাকে আন্তরিক মনে হয়।
খাল খুঁড়ে সবাইকে কবর দিতে পারলে হয়তো ভালো হতো-
আমাদের সামরিক প্রধানের সাম্প্রতিক আলুপ্রীতি দেখে ভালো লাগলো আবারও। মনে হলে একটা চিরচেনা ক্ল্যাইম্যাক্সের দিকেই
আগাচ্ছে এই ছবির পরিণতি-

নায়কের আগমন হয়তো সামনের দৃশ্যেই- আমাদের নেতিয়ে যাওয়া ক্ষুধাক্লিষ্ট মানুষ হয়তো ভাত না পেলে আঁকশি দিয়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কবর খুঁড়বে। এই অসম্ভব আশাবাদেই দিন গুনি।

সৃষ্টিশীল কিছুই উদ্দীপ্ত করে না। চেতনায় ভয়াবহ সামরিকায়ন ঘটে গেছে- এই অশ্লীল ধারাবাহিক ধর্ষণ শেষ না হওয়া পর্যনত আমার মুক্তি নেই- আমাকে এই বাস্তবতায় বেঁচে থাকতে হবে।


মন্তব্য

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

দাহ দাহ!!! তার মধ্যে এই দেশে আমরা থাকি।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সামরিক সরকারগুলোর আলুর দোষটা ব্যারাক থেকেই জন্মায় , বাইরে এসে নয় ।

-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

গরলের মতো লেখা, তাই বেশি লোকে খায় নাই বা খেয়ে মুখ পোড়ায় কিছু বলে নাই।
কথা হলো যে, চেতনার যদি সত্যিসত্যি সামরিকায়ন ঘটেও সেটাকে মন্দ বলব কেন? সব বিপ্লব তাই সামরিক সাজ নিয়েছে। কিন্তু তার প্রয়োজন সামরিক নয়: রাজনৈতিক। মিসরের ক্যাস্ত্রা, ইয়াসির আরাফাতের মতো রাজনৈতিক জায়গা থেকে সামরিকতা কিংবা গামাল আবদেল নাসেরের মতো সামরিকতা দিয়ে না হওয়ায় রাজনীতি তুলে নেয়া আছে। যে যেদিকে যায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত নিছক সামরিকতা কোথাও কিছু করে নাই। সেগুলোর ফল হয়েছে অতি মারাত্মক।
তবে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবা মার্কিন সেনাদের সাজে। তারা দুনিয়া জয় করে চলেছে। দেশে দেশে গণতন্ত্র আনছে। তাদের হয়ে বাংলাদেশে কেউ যদি গণতন্ত্র আনে তবে আর মন্দ কি? কিন্তু পাকিস্তানকে দেখে ভয়, সন্ত্রাসবিরোধী গণতন্ত্র সেখানে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় ও পরাশক্তি উভয়েরই সন্ত্রাস ডেকে এনেছে। দেখা যাক আমাদের দুর্নীতিবিরোধী গণতন্ত্র শেষতক কী ডেকে আনে এবং নিজেরা কোথায় যায়। এই অবস্থায় সবাই যে ডেডলক পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে তার থেকে রেহাই দেয়ার ক্ষমতা কেবল দেশবাসী জনসাধারণেরই আছে। জনশক্তির উত্থান ছাড়া তা সম্ভব নয়।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::.
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে, মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

জনশক্তির উত্থান ছাড়া তা সম্ভব নয়।

আগেও ছিল না।

কাহিনি হইলো এইবার ৬৯ বা ৯০ এর চেনা রাজনীতি মানে প্রতিষ্ঠাণের সাইনবোর্ডগুলি কোন রাস্তা দেখাইতেছে না। যেই দলগুলিরে সংস্কার কবুল করানোর ভাঙ্গারেকর্ড বাজানো হইছে ১/১১র পরের কয়েকমাস, তারা তখনই নিরাময়ের অযোগ্য কুষ্ঠ আক্রান্ত ছিল। বামপন্থী দলগুলির যেগুলির সাইজ অপেক্ষাকৃত বড় সেগুলি অনেক আগেই পইচা গ্যাস হইয়া উইড়া গেছে। বাকি থাকে শুধু সেই শ্রমজীবি মানুষ যাগো শ্রেণী সংগ্রাম জৈবিক নিয়মে চলতাছে। সংগঠিত অপশক্তিরে তো আর অসংগঠিতভাবে উৎখাত করা যায় না। তাতে যেই আদলেই হোক সংগঠণ লাগে। এইখানেই এইবারের সবচাইতে বড় জটিলতা। নতুন কোন সংগঠণ নতুনভাবে দাড়াইতে দাড়াইতে বহুৎ ধানচাইল পাতালে যাইবোগা, ততদিনে দেখা যাইবো আরেক কনভেনশন মুসলীম লীগ নাইলে বিএনপি জন্মাইছে। তারপর আর কি (অব:) দিয়া (অব:) প্রতিস্থাপন। যারা মাঠে ময়দানে জনশক্তির উত্থানে কাজ করতেছে, এই জটিলতা থিকা কিভাবে বাইর হওয়া যায় তার রাস্তা তাগোই বাইর করা লাগবো।
এই আর কি..............



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

রাসেল এর ছবি

উন্মুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখতে হবে, বাহ্য চেপে রাখা ভালো, তবে একেবারে বাহ্য বন্ধ হয়ে যাওয়াটা অসুখ।
এখানে সামরিকায়ন যা করছে তাতে বলছে বাহ্য প্রক্রিয়াটাই খারাপ চেপে রাখো।
যেহেতু মানুষের প্রবনতাই বাহ্য নির্গত করা তাই জোর করেই বাহ্যনিরোধক ছিপি লাগানো সবার পেছনে।
এই প্রক্রিয়ায় আসলে তেমন ভালো কিছুর আশা করা অর্থহীন।
বিপ্লবের সামরিকতার পরে সেখানে বাধাটা উন্মুক্ত হয়ে যায়- মানুষ চেপে রাখা রোখ- ক্ষোভ প্রকাশ করে- সময়ে সময়ে নিজের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির লেনাদেনা চুকায়-
রাশিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে এই প্রবনতাটা ছিলো না- সেখানে মানুষকে সাম্যবাদ গেলানো হয়েছে জোরপূর্বক- এই জোরপূর্বক গিলিয়ে কিন্তু হজম করানো যায় নি- মানুষের বধজম হয়েছে- মানুষের ভাববাদী হয়ে উঠবার অবকাশ না রেখে বস্তুবাদি করে তুলবার প্রয়াসে কোথাও গলদ ছিলো- তবে রাশিয়া যে টিকে ছিলো এত বছর সেটাও সীমিত পর্যায়ে হলেও কিছুটা মুখ খুলবার অবকাশ ছিলো বলেই- সার্বক্ষণিক কেজিবির তদারকি ছিলো হয়তো কিছুটা সময় তবে- এর পরেও সেখানে মানুষ পরিহাসে ঠাট্টায় ঝাল মিটাতে পেরেছিলো
আমাদের অবস্থা এমন না মোটেও- আমরা বাহ্য চেপে রেখেছি অনেক দিন- আমাদের ছিপি পড়িয়ে রাখার অনেকটা দিন গেলো- এখনও কি ছিপি খুলবার সময় হয় নি?
খবরদারি সৃষ্টিশীলতার সাথে পরিহাসের মতো। সার্বক্ষণিক খবরদারিত্ব কোনো অনন্য সৃষ্টি করতে পারে না।
-------------------------------------------------------
বাংলায় হাগি, মুতি, বাঁচি

------------------------------------

আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কৌশলটা বড় মারাত্নক হয়েছে । দখলের আগে নিশ্চিত করা হয়েছে যেনো প্রতিরোধের ন্যুনতম ইচ্ছেটুকু অবশিষ্ট না থাকে ।
স্বাধীন সার্বভৌম চৌর্যবৃত্তির অবাধ সুযোগ দেয়া হয়েছে । নিজে চোর হয়ে গেলে গেরস্তের কি আর ডাকাত প্রতিরোধের সাহস থাকে?
xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।