অযথাই

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: বুধ, ২৩/০৪/২০০৮ - ১০:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সামনের সীটে বসা মহিলার জন্য খারাপ লাগছে। মহিলা একেবারেই ঝগড়া করতে পারে না। কিছু কিছু মানুষের ঝগড়া করবার ক্ষমতা নেই, তারা কোনোভাবেই ঝগড়ার প্রতিপক্ষ হয়ে গেলে বিষয়টা ভীষণ রকম বাজে অভিজ্ঞতা হওয়ার কথা। এরা যা পারে সেটা অনুযোগ, অনুযোগ করে অভিমান করে দাবি-দাওয়া আদায়ে সিদ্ধহস্ত এসব মহিলা কোনোভাবেই ঝগড়া করতে শিখে না। তাই মহিলার ঝগড়া শুনে কিছুটা বিরক্ত হচ্ছিলাম। আপনি করছেন,
আপ্ন কথা বলবেন না।
আপনি কথা বলবেন না।
আপনি বেশী কথা বলেন।
আপনি বেশী কথা বলেন।
আদৌ ঝগড়ার পর্যায়ে পড়ে না এসব আলোচনা। তবে কণ্ঠস্বর শুনে ঠাওড় করতে হয় আদতে দুজনেই চরম বিরক্ত পরস্পরের উপরে, এবং এটা একটা ঝগড়া। আমি বয়স্কোজনোচিত নিরবতা পালনের চেষ্টা করছি। আমার পাশে দুই স্কুলের ছাত্র, বয়েস খুব বেশী হলে ১০ থেকে ১২, স্কুল ব্যাগ কাঁধে বসে আছে, তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু আলাদা। কোন মোবাইলে কি ফিচার। তাদের ভেতরে বড়জন বলছে, আমার মা আমাকে একটা মোবাইল কিনে দিবে, ২৬০০ টাকা দাম।
ভালোই তো।
দূর ভালো কই, কিছুই নাই, ২৬০০ টাকার মোবাইলে কিছু থাকে?
না থাকার ফিরিস্তি বিশাল বড়, এফ এম রেডিও নাই, ছবি তুলার ব্যবস্থা নাই, মেমোরি কার্ডের জায়গা নাই।
মোবাইল খুব দ্রত বিলাস পন্য থেকে বিনোদন পন্যে রুপান্তরিত হয়েছে, এখন মোবাইল শুধু যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যম না, এটা মাল্টি পারপাস সার্ভ করে, এটা একই সাথে ডে প্ল্যানার একই সাথে নোটবুক, একই সাথে গান শোনার যন্ত্র, আমাদের প্রযুক্তি আমাদের ভাবনার বাড়তি বোঝার সাথে সামান্য সাচ্ছন্দ্য জুড়ে দিয়েছে। তাই আমাদের স্কুলগামী ছেলেদের কাঁধের ব্যাগের ভার বাড়লেও আমাদের ছেলেদের পকেটে একটা মাত্র যন্ত্র সেটা একই অঙ্গে অনেককিছুই ধারণ করে।
অনুযোগী মহিলার অনুযোগ থেকে মন অন্যদিকে ফেরানো যাচ্ছে না।
এই মহিলারা আপনারা চুপ করেন। অনেকক্ষন হইলো তো। এইটা কি বাসাবাড়ী পাইছেন?
মহিলারা আপাতত শ্রবণপ্রতিবন্ধী- তারা কিছুই শুনছে না।
তার ঠিক পেছনে বসা ছেলেটা বলে উঠলো, ঠিক আছে, আপনার যদি পচ্ছন্দ না হয় আমি আমার সীট ছেড়ে দেই, এখানে এসে বসেন, তবু আল্লাহর ওয়াস্তে চুপ করেন।
মাঝে মাঝে ইশ্বরকে কত তুচ্ছ কারণেও মানুষ স্মরণ করে, বেচারা আল্লাহ যদি পথচলতি ঝগড়ার বিচারক হয়ে ,শরণদাতা হয়ে বারংবার ধরায় নেমে আসেন তবে তার আরশে বসবার সময় থাকবে না, এইসব তুচ্ছ কাজিয়া নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকতে হবে তাকে।
পেছনে যাওয়ার কথা দুজনের পছন্দ হয়েছে, তবে এবার শুরু হলো ঠেলাঠেলি।
আপনি যান, আমার তো সমস্যা নাই। আপনার সমস্যা।আপনার সমস্যা হলে আপনি যান, আমার তো বসে থাকতে সমস্যা নাই।
আপনি তো শুরু করলেন,
বিষয়টা চরম বিরক্তিকর, ঠিক কেনো কোন কারণে এই ঝগড়ার সুত্রপাত বুঝা যাচ্ছে না কোনো ভাবেই। তবে আপাত দৃষ্টিতে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে এই অনুযোগী মহিলা তার পাশে মহিলার কোনো একটা খুত ধরেছেন। কি খুত ধরেছেন সেটা বলা কঠিন। পথচলতি মহিলার অদ্ভুত অদ্ভুত সব বিষয়ে ভীষণ বিরক্ত থাকেন, সহযাত্রীর গা থেকে মশ্লার গন্ধ বের হলেও তারা বিরক্ত, সিগারেটের গন্ধ পেলেও তারা নাক কুঁচকে বসে থাকবেন যেনো তাকে বাধ্য করা হচ্ছে প্যাসিভ স্মোকিং্যে।
যদিও বাংলাদেশের কোনো বাসেই এখন আর সিগারেট ধরানোর প্রক্রিয়া চালু নেই।
যাই হোক দুই মহিলার ঝগড়ায় পুরো বাসই স্রব হয়ে উঠলো।
আপনি একটা ছোট লোক,
নাহ আপনি ছোটো লোক।
বেয়াদ্দপ মহিলা,
আপনি বেয়াদ্দপ
অই তোকে কি ভয় পাই?
ইসসসশরে আমি কি তোরে ভয় পাই।
ঝগড়া ক্ল্যাইমেক্সে পৌঁছে যাচ্ছে মনে হয়।

তুই কি মালিবাগের রংবাজ?
এইযে ভাইয়েরা দেখেন দেখেন- কি রকম হুমকি দেয়, তোকে তো পুলিশে ধরায়া দেওয়া উচিত।
তুই আমাকে চিনিস
তুই আমাকে চিনিস।
পাশের মহিলা তেমন কিছুই করছে না, অনুযোগী মহিলার কথার প্রতিধ্বন্নি দিয়েই তাকে কাইত করে ফেলছে প্রায়।
অনুযোগী মহিলা বাসের সবাইকে সাক্ষী মেনে এখন শুরু করেছেন- এই মহিলা একটা আস্ত রংবাজ, হুমকি দিচ্ছে। ওকে আমি ভয় পাই?
এই তোকে আমি ভয় পাই?
কথাটায় প্রশ্নটা আমার কারসাজি, কারণ মহিলার বলবার ধাঁচে এটা আসবার কথা না। মহিলার সগর্ব ঘোষণার পরে তো আরও না, তার পুলিশের উঁচু মহলে পরিচিতি, তার বাবা স্বামী ভাই, সবাই উঁচু শ্রেণীর প্রতিনিধি, এই মহিলা মালিবাগের মোড়ে থাকে তাই রংবাজি করছে এই অনুযোগ শুনে আমি মুখ পাশে ফিরিয়ে হাসি। হাসিটাও উচিত হয় নি, আমার পাশের দুই স্কুল ছাত্র মোবাইলের গল্প ফেলে আমাকে দেখছে।
জ্যামটাও বিশাল। বাসের মহিলার কণ্ঠ জোরদার বটে, পাশের মাইক্র আর বাস থেকে উতসাহী জনতা এই বাসের ভেতরে উঁকি মারছে, পুরান ঢাকার যাবতীয় গালি পেটের ভেতরে পাঁক খাচ্ছে , উগলে দিতে পারছি না, নিশ্চিত ভাবেই আজ বদহজম হবে আমার।
জ্যাম কাটছে না, আমার অবস্থা সেই মানুষটার মতো যে স্ত্রী বাসায় গানের রেওয়াজ শুরু করলে সাধু মুখে বারান্দায় বসে চা খায় আর পেপার পড়ে যেনো অন্য কেউ অনুমাণ করতে না পারে যে এই ব্যাটা ছেলে বৌ পেটায়।
বিব্রত একটা চেহারা নিয়ে আমি বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই।
সকাল বাজে কয়টা? খুব বেশী হলে ৭টা ৩০। এখনই সুজ্জি মামা যে তেজ দেখাচ্ছে তাতে দিনটা টিকে থাকা যাবে তো?
মনে হচ্ছে মামীর সাথে ঝগড়া আজকে মামার। তাই আগুনের হলকা ছুটছে পৃথিবীতে। উনুনে সিদ্ধ হচ্ছে ঢাকার জনতা।
জ্যাম কাটবার মরিয়া প্রতীক্ষা চলছে, সামনের মহিলার অনুযোগের তেজ কমেছে, ভাই, বাবা স্বামীরা যেমনটা পাত্তা দেয় এখানে তেমন পাত্তা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। অন্তত এই বাসের ভেতরে নিকাহ করে তাকে সহায়তা দেওয়ার মানুষ কমই আছে,

কখন থামবে বাস কখন এই জলন্ত চুলা থেকে লাফিয়ে মাটিতে পড়বো এই ভাবনায় দিশেহারা হয়ে থাকি। জ্যামের গায়ে গা লাগিয়ে বাস আগায়, সুন্দরীদের দিকে খেয়াল করবার অবসর থাকে না,
আরে শালার এইটা কি? নাহ পুরা সৌরজগত নামাইয়া ফেলাইছে কানে, আমি মেয়েটাকে দেখি, ভালোমত দেখি, সৌরজগতের গ্রহগুলোকে চিহ্নিত করবার চেষ্টা করি, বুধ, শুক্র, পৃথিবী আছে, মঙ্গল দেখা যাচ্ছে, বৃহস্পতিও আছে, শনি,সাতটা রিং, মাঝে বিশাল একটা গোলক,
উপলক্ষ খুঁজতে থাকি কখন কিভাবে তাকে জানানো যায়, সৌরজগতের কথাটা।
মেয়েটার বয়েশ অনুমানের খেলাও খেলি, প্রথমে মনে হয়েছিলো হয়তো ২১, বাস যত সামনে যেতে থাকে ততই বয়সের অঙ্ক বাড়াতে থাকি, আপাতত এই মুহূর্তে তার বয়েস ২৫। নাহ এখনও নির্দ্বিধায় তুমি বলা যায়, তুই বলাটা মোটেও শোভন হবে না। তুই নাকি অপমানবাচক সম্বোধন।
মেয়েটা নেমে যাওয়ার সময় থ্রি কোয়ার্টারের হাতের পাশ দিয়ে কানুই দেখলাম। বলা হলো না, তবে মনে হলো আমার অনুমান ভুল হতে পারে, মেয়েটা সম্ভবত মহিলা, বয়েসের দাগে আমার চেয়ে দুই এক কাঠি এগিয়ে থাকলেও অবাক হবো না।
মনটাই ভালো হয়ে যায়, দিনটা ফুরফুরে লাগে, যদিও আমার গায়ের ফতুয়া ঘামে ভিজে বুকের সাথে লেপ্টে আছে, যদিও আমার প্যান্টের ভেতরে ভেজাভেজা বোধটাকে পাত্তা দিচ্ছি না, যদিও আমার বগলের তল পিচ্ছিল হয়ে আছে ঘামে। মনে পড়োছে রেক্সোনার বিজ্ঞাপণ তবু সব ভুলে মুগ্ধ তাকিয়ে থাকি।
সে মেয়েটাও নেমে যাচ্ছে যার পিছু নেওয়ার কথা ভাবছি গত কয়েকটা দিন।
তার পরিচয় কিছুটা জেনেছি। তবে সে নাকি খুব ম্রিয়মান, ভাবছি এর পরে তাকেই বলবো, অন্তত তার বয়েসের কাঠি আমার চেয়ে কয়েক দাগ নীচেই হবে , প্রথম চাকুরি যোগ দিয়েছে সদ্য- প্রায় প্রতিদিন তাকে দেখি কারণ এ সময়ে সেও কাজে যায়।

তার নিজেকে নিয়ে বিব্রতো থাকবার বিষয়টা পীড়াদায়ক, এত সঙ্কুচিত থাকবার কিছু নেই, জীবনটা দাঁতে দাঁত পিষে লড়াইয়ের জায়গা, এখানে পুতুপুতু মানুষরা শুধু ব্যবহৃত হয়, তাদের কোমল অনুভব নিয়মিত আহত হয়, তাদের আশাবাদ যে মানুষ শোভন ভাবে তাদের কথা বিবেচনা করবে, এটা কখনই বাস্তবে দেখা যায় না। অশোভন অসভ্য মানুষেরাই তাদের অনুভুতিকে ব্যবহার করে উন্নতির সোপানে চড়ে অন্য কোথাও চলে যাবে।
তাকে থামিয়ে বলতে হবে একদিন, এ রকম কাঁচুমাচু মুখে থাকলে কিছু হবে না, তোমার নিজের যোগ্যতা আছে, যদি নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করে যাও কোনো খানকির পোলা তোমার একটা বালও ছিড়তে পারবে না। তবে এটা ঠিক এ ভাবে বলা যাবে না। হিতে বিপরীত হতে পারে। মাথা উচা কইরা বাঁচো , কাজ পাইছো নিজের যোগ্যতায় পাইছো, কেউ অনুদান দেয় নাই তোমারে।


মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি

হ , সবই হাচা কইছেন ।

-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ঠিকঅই
xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আপনের কি আর কোনো কাম নাই? বাসে বইয়া রসাইয়া রসাইয়া মহিলা মানুষের কাইজ্যা রেকর্ড করেন।
সেই বালিকা ওরফে মেয়ে ওরফে মহিলা ওরফে নতুন কাজে যোগ দেনঅলা ওরফে... তার হদিস পাইলে জানাইয়েন। পারলে নাম্বারটাও ব্যক্তিগত বার্তায় পাঠায়া দিয়েন। বাদবাকী কাজ, আলহামদুলিল্লাহ্ দেঁতো হাসি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।