আঙ্গুল

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: শনি, ০৩/০৫/২০০৮ - ২:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আরে রাখ ব্যাটা, বললেই হবে-
আমি বললামতো যদি প্রচন্দ নেপালের সরকার গঠন করতে পারে আমি হাতের কব্জি কাটে ফেলবো।
আমরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি সোহেল ভাইয়ের দিকে।
কুদ্দুসও অবাক হয়ে তাকায় সোহেল ভাইয়ের দিকে। আমরা অবশ্য জানি এই কথার পেছনেও একটা যুক্তি আছে। সোহেল ভাই যুক্তিবাদী মানুষ, তিনি অযৌক্তিক কিছুই বলেন না। আমরা যে যার চায়ের কাপে চুমুক দেই।

নেপালে যা হয়ে গেলো সেটা ইতিহাস, মাওবাদীরা রাজাকে প্রাসাদ ছেড়ে বের হয়ে যেতে বলেছে, রাজাও ভারতে আশ্রয় খুঁজছেন, প্রচন্দ নির্বাচনে সর্বাধিক আসন পেয়েছে, সরকার গঠনের জন্য অন্য জোট খুঁজছে, এমন কি হুমকি দিয়েছে যদি কেউ না আসে তবে একলা চলোরে নীতি মেনে তারা নিজেরাই সরকার গঠন করবে। এই সময়ে সোহেল ভাইয়ের এমন কথা। তার হারিয়ে যাওয়া কব্জির জন্য মায়া লাগে, ভাবি কব্জিবিহীন সোহেল ভাইয়ের নাম কি হবে? চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া হয় না, সোহেল ভাই সিগারেট জ্বালান চোখ কুঁচকে।
বুঝলি তোরা ভারতের চর সবখানে আছে। উপমহাদেশের যেখানেই যা সেখানেই র এর এজেন্ট আছে। নেপালের কম্যুনিস্ট পার্টি পেয়েছে মাওবাদীদের অর্ধেক আসন, যদি দুই কম্যুনিস্ট পার্টি এক হয়ে যায় তাহলে নেপালের ইতিহাস বদলে যাবে, কিন্তু ভারত ওটা হতে দিবে না। প্রচন্দ হুমকি দিয়ে বিশাল একটা ভুল করে ফেললোরে। বিশাল একটা ভুল করে ফেললো।
সোহেল ভাইয়ের হাহাকার শুনে আমাদেরও মন কেমন করতে থাকে। প্রচন্দের উপরে প্রচন্ড রাগতে পারলে ভালো হতো, ব্যাটা নির্বোধ, অন্তত একবার তো সোহেল ভাইয়ের সাথে কথা বলে নিবি, শালা উপমহাদেশের ভবিষ্যতটাই ধ্বংস করে দিলি। সোহেল ভাইয়ের সাথে একটু কনসাল্ট করে নিলে উপমহাদেশের ইতিহাসই বদলে যেতো। তা হতে দিলি না বেকুব প্রচন্দ।
বুঝলি নেপালে জোট সরকার হবে তবে সেটা হবে গিরিজাপ্রাসাদ কৈরালা আর কম্যুনিস্ট পার্টির সাথে, মাওবাদীরা বিরোধী আসনে থাকবে, ভারতের সাথে আপোষ না করে নেপালে কোনো সরকার গঠিত হবে না।

প্রচন্দ হুমকি দিয়েছে ভারতের সাথে সব চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করবে ওরা। নেপালের স্বার্থ বিরোধী কোনো চুক্তি রাখবে না।
তাহলে তো আমাদের ভালোই হইলো। কি বলেন সোহেল ভাই?
নিরুর দিকে কঠোর চোখে তাকান সোহেল ভাই। ঐ বেটা বুরবক তুই ইন্টারনয়াশনাল পলিটিযের কি বুঝস, একটু বুঝায়া ক বাপজান, বাংলাদেশের লাভটা কি এতে?

কথা সত্য, নীরুর গবেষণাক্ষেত্র মোবাইলের অফার। কোন মোবাইলে কোন সীম নিলে কত ফ্রীতে কথা বলা যাবে সেটার হিসাব ওর নখদর্পনে। এর বাইরে মোবাইলের সেটের দাম আর মোবাইল সেটের অপশন বিষয়েও তার বিশেষ বুৎপত্তি, কিন্তু ব্যাটা সোহেল ভাইয়ের সামনে ইন্টারন্যাশলাম পলিটিক্স নিয়ে কথা বলবার যোগ্যতা রাখে না কোনো ভাবেই।
নাহ মানে পানিবিদ্যুত চুক্তি।
ও ঐটা, সোহেল ভাই খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসেন কিছুক্ষণ। নাহ তোগোরে মানুষ করতে পারলাম না অহনতরি। তোরা বেবুঝই রইয়া গেলি।
বুঝলি বেটা বেকুব, আমরা হইলাম বাচাল জাতি, দিন নাই রাইত নাই কথাই কইতাছি, শুধু কথাই কইতাছি। তুই মোবাইলের ডিল খুইজ্যা পাগল হইয়া গেলি, তোর নেপালের খরব পড়নের টাইম আছে ব্যাটা? নেপালের পানিবিদ্যুতের একটা দানা যদি বাংলাদেশ পায় তাইলে এই হাতের কব্জি কাইট্যা ফেলবো আমি।

সোহেল ভাইয়ের আজকে হইলোটা কি, কবজি নিয়া সমস্যায় আছে কোনো? আমি মিনমিন করে বলবার চেষ্টা করলাম সোহেল ভাই বিদ্যুতের দানা হয় না। কিসের কি, হাতের ঝাপটায় আমাকে চুপ করিয়ে দিয়ে সোহেল ভাই বললেন
হুন বেটা, আমরা যে বাচাল জাতি এইটা তুই নিজেরে দেইখ্যা বুঝোস না। ক, ক বাপজান বুঝোস না তুই এইটা। সারাদিন এই ওর সাথে ২৫ পয়সায় তো তার সাথে ২৯ পয়সায় কথা কইতাছোস। আমাগো দেশে মোবাইলের গ্রাহক কত জানোস ব্যাটা?
নীরুর প্রিয় জায়গায় আঘাত এসেছে, জানবো না কেনো এই ধরেন ৩ কোটি সাড়ে ৩ কোটি ।
একটা কল যদি ১টাকাও হয় আর প্রতিটা মোবাইল থেকে যদি একটা করে কল হয় কত টাকা হয় সেই খেয়াল আছে?
আমরা পাটিগণিতের ধাঁধা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাই।
বাংলাদেশের যাদের মোবাইল আছে, তারা যদি দিনে ৫ মিনিট করে ১ বছর কথা বলে তাইলে যেই টাকাটা খরচ হ্য় ঐটা দিয়ে আরও একবার যমুনা সেতু বানানো যায় তুই জানোস এইটা।

আমরা চমকে তাকাই সোহেল ভাইয়ের দিকে, আমরা সবাই কথা বলে একটা যমুনা সেতুর পয়সা উড়িয়ে দিচ্ছি এটা কি রকম। দেশের দরকার সেতু, পদ্মা সেতু, মেঘনা সেতু, যমুনা সেতু সুরমা সেতু। নদীমাতৃক দেশ আমাদের, প্রতিটা নদীর উপরে সেতু দরকার।
তোরা ঐ মোনালিসা এর তিন্নিগো দেইখ্যা মোবাইলে টাকা ভরবি আর দিন রাইত পয়াঁছাল পারবি, তোগোরে দিয়া কোনো লাভ হইবো না দেশের। হতাশায় মাথা নাড়েন সোহেল ভাই।
যদি বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় তারা ১ বছর মোবাইলে কথা না বলে সেই টাকা জমিয়ে রাখবে তাহলে আমাদের কোনো দারিদ্র থাকবে না। আমাদের দেশে কোনো ফকির থাকবে না। গ্রামীন ব্যাংক ধরে ধরে ভিক্ষুকদের গ্রাহক বানানোর যে ফন্দি করেছে সেটাও কোনো দরকার লাগবে না। ডঃ ইউনুসের কোনো প্রয়োজন নাই, আমরা যদি এক বছর মোবাইলে কথা না বলে থাকি তাহলে দেশের দারিদ্র দুর হয়ে যাবে।
সোহেল ভাই একটু সময় নিয়ে চায়ে চুমুক দেন।
আমরা মুগ্ধ হয়ে হাত তালি দেই। নাহ এর পরের কোনো বছরে অর্থনীতিতে নোবেল পাবো আমারাই।

অর্থনীতিতে নোবেল পাবো আমারাই।

সোহেল ভাই সিগারেটে কষে টান দিয়ে আমাদের দিকে তাকান স্পষ্ট চোখে। তার পর আমাদের পেছনে কোথাও তাকিয়ে থাকেন। আমরাও তার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝবার চেষ্টা করি আসলে ঘটনা কি ঘটলো?

শরিফ বললো দেখলেন সোহেল ভাই?
সোহেল ভাই একটু লজ্জা পান বোধ হয়, এইভাবে ছোটো ভাইদের সামনে মেয়ে দেখায় অভ্যস্ত না তিনি।
কোনো ব্যাপারস না বস। অভিক বললো। দেখার মতো জিনিষই, বেগুন গাছে লাউ ধরছে।
সোহেল ভাই হুমম করে চুপ করে গেলেন। আমরা যে যার মতো চুপচাপ বসে থাকি।
ফাজিল ফারুক কিছুক্ষণ উঁশখুশ করে বললো দেখলি তো নার্গিস আইসা পড়লো।
আমরা সবাই ফারুকের পেছনে দেখি, ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে দেখি। তারপর ওর দিকে তাকাই।
আরে ব্যাটা ৩ বিএর নার্গিস না।
৩ বিএর নার্গিস পুরা একটা বোম। আমাদের আশার ফানুস নিভে যায়। আড্ডাটা আর জমে না। একটা মেয়ে আর একটা মেয়েলী সাইক্লোন আমাদের আড্ডার আমেজটাই নষ্ট করে দিলো আজকে। বিধ্বস্ত মন দিয়ে আমরা যে যার বাসায় চলে যাই। বন্ধের দিনটা এইভাবে মাটি হবে ভাবতে পারি নি।

সকালে ১০টা বাজবার আগেই হাজির হলাম কুদ্দুসের দোকানে, শুক্রবারের সকালে এইটাই আমাদের রুটিন বলা যায়, সকাল ১০টা থেকে এখানে বসি, ১২টার দিকে যে যার বাসায় চলে যাই, দুপুরে জুম্মা পড়ে আবার সন্ধ্যায় এখানে আসর বসাই।
আমার আগেই দেখি শরিফ এসে বসে আছে। ওর চোখ মুখ শুকনা, জিজ্ঞাসা করলাম কি রে তোর কি হইলো।
আর বলিস না বাল, আসবার সময় স্যান্ডেলের ফিতা ছিঁড়ে গেছে। হাদিসে আছে স্যান্ডেলের ফিতা ছিড়ে গেলে জোড়া না লাগিয়ে পড়া যাবে না, খালি পায়ে হাঁটতে হবে।
শরিফের সুন্নতী বাতিক আছে। এমনিতে জুম্মা ছাড়া মসজিদে যায় না কিন্তু ষোলো আনা সুন্নত মেনে চলে। ওর পক্ষে এইটা সম্ভব । ছেঁড়া স্যান্ডেল ঘষটে ঘষটে আসবে না ও, সুন্নতের জন্য প্রয়োজনে খালি পায়ে হাঁটবে ।
এমন দিন কোনো মুচিও পাইলাম না। কি আর করা আসতেছি খালি পায়ে এইসময় নার্গিসের সাথে দেখা। ফাজিল মাইয়া বলে কি শরিফ ভাই কি করেন?
মিজাজটা কিরকম হয় বল দেখি?
তো তুই কি বললি?
কইলাম বেশী লম্বা হইয়া গেছি তো তাই পা ঘইষা লম্বা কমাই।
এরপর এইখানে আইয়া ২টা সিগারেট খাইলাম আর কি করুম।

আসলেই করার কিছু নাই। মাঝে মাঝে এমন সব সময় আসে , বেকায়দা সময়, কিছুই করার থাকে না, দিব্যি ফিটফাট স্যান্ডেল মাঝরাস্তায় বিগড়াবে, এক হাতে ছেঁড়া স্যান্ডেল নিয়ে হাঁটতে হবে, সেই দিনই পাড়ার সব সুন্দরী ছোটোবোনেদের সাথে দেখা হবে রাস্তায়। তারা বিভিন্ন কথা বলবে। গা টিপে টিপে হাসবে।
এই প্রায় তরুনী মেয়েদের হাসির মতো সুঁচালো ব্যক্তিত্বঘাতি আর কিছু নাই । ব্যক্তিত্বের বেলুন ফুঁশ করে চুপসে যায়। তাদের মিটমিটে হাসির সামনে ব্যক্তিত্ব ধরে রাখে এমন পুরুষ কমই আছে পৃথিবীতে , অন্তত আমাদের সার্কেলে একটাও নেই এ কথা জোর দিয়েই বলতে পারি।
সবাই হাজির হয় আস্তে আস্তে। নীরু, ফারুক, সোহেল ভাই। সকালেই জানতে পেরেছি নার্গিস আসবে না বাংলাদেশে, হুট করে রাস্তা বদল করে বার্মিজ মুল্লুকে ছুটেছে নার্গিস। বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও এর ছোঁয়া লাগবে, নার্গিস চলে গেলেও ল্যাঞ্জার বাড়ি দিয়ে যাবে তাই ২ নম্বর দুরবর্তী মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে সমুদ্রবন্দরে।

নীরু আমার দিকে তাকায়, আইচ্ছা কাইলকা রাইতে কি তুই আমাকে মিসকল দিছিলি?
আমি? কখন?
যা ব্যাটা ন্যাকামি করবি না। আমি জানি তোদের ভিতরে কেউ দিছে।
খোদার কসম আমি না।
অযথা আল্লাখোদাকে টানবি না তুই। তুই করছোস এইটা, আমি শিউর।
ফারুক উৎসাহ নিয়ে তাকায়, কি হইছে রে নীরু, কে কি কইছেএকবার ক আমারে, ফাডায়া ফেলবো ওরে।
ঐ ব্যাটা আঙ্গুল সরা মুখের সামনে থেকে।
ফারুক থতমত খেয়ে আঙ্গুল সরায়।
ক্যান কি হইছে , আঙ্গুলে কি হইছে।
না ,গন্ধ বাইরায়।
গন্ধ বাইরাইবো ক্যান?
তোমরা শালা একে অন্যের পুটকিতে আঙ্গুল দিয়া বইয়া থাকো সারা দিন, তোমার আঙ্গুল দিয়া বোটকা গন্ধ আইবো না তো বোগদাদী আতরের গন্ধ আইবো?

ভাঙ্গা বাড়িতে কে গেছলি বল দেখি?
অভিকের কথা শুনে তাকালাম ওর দিকে,
সবাই এর ওর দিকে তাকায়। ভাঙ্গা বাড়ী মানে একটা নতুন বাড়ী উঠছেএখানে এসেস ডেভলপারের, কুদ্দুসের দোকানের আশেপাশে কোথাও মুতবার জায়গা নেই, সেই ভাঙ্গা বাড়ীই এইসব প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার নিরাপদ জায়গা।
আমরা চুপচাপ বসে আছি, সোহেল ভাই বললো ক্যানো কি হইছে?
নাহ মানে আপনি গেছিলেন নাকি
খুক খুক করে কাশেন সোহেল ভাই।
ভাই আপনে তো পুরা বস। এক্সপ্রসো মুত দিছেন ভাই। পুরা ফেনা তুইল্যা ফেলছেন।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কে বুঝে মওলার আঙ্গুলবাজি...............!

----x----
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
আরিফ জেবতিক এর ছবি

ব্যোম ভোলানাথ ।

-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।