আটপৌরে স্বপ্ন

শামীমা রিমা এর ছবি
লিখেছেন শামীমা রিমা (তারিখ: শনি, ১৮/০৮/২০১২ - ১:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গাছে যে অনায়াসে উঠতে পারে তার জন্য বাসের ছাদে উঠা একেবারে নস্যি । তাইতো ‌চ্যাংড়া ছেলেটাকে আছড়ে পাছড়ে উঠতে দেখে মজিদ মিয়া না হেসে আর পারল না । ছেলেটা অবশ্য তার হাসি দেখতে পায়নি । দেখতে পেলে মজিদ মিয়ার পাশে সে বসত না । খুব সহজ হিসেব এটা । মজিদ মিয়া ছেলেটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে । গায়ে লাল রংয়ের হাফ শার্ট আর চাপা প্যান্ট। চেহারাটা ..... এবার তার দেখার মাঝে ছন্দপতন হলো । হঠাৎ শুনতে পেল ....‌‌‍''আমি হলাম রোমিও,লেডি কিলার রোমিও....''। বুক পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করল ছেলেটা । তারপর গদগদ গলায় কথা বলতে শুরু করল । মজিদ মিয়ারও খুব শখ একটা মোবাইল ফোন কেনার । ছেলেমেয়ে আর বউটার সাথে মাঝেমধ্যে একটু আধটু কথা বলতে পারবে । মেয়ে দুটো অবশ্য খুব বকবক করতে পারে । কিন্তু তার বউ কথাবার্তা বলে একবারে কম । দোকান থেকে যখন সে ফোন করে ওপাশ থেকে বউ শুধু ‌'হ্যালু' বলে চুপ করে থাকে । তবুও ভালো লাগে মজিদ মিয়ার । পেশায় সে রিক্সাচালক । আয় একবারে খারাপ না । তবে মাঝেমাঝেই পেটের পীড়ায় ঘরে শুয়ে থাকতে হয় । তা না হলে সংসার তার খারাপ চলতো না ।

অনেকদিন পর বাড়ি যাচ্ছে সে ঈদ উপলক্ষে । প্রতিবারের মতো এবারও বাসের ছাদে । ছাদে করে যাতায়াত বেশ লাগে তার । ভাড়ার টাকাটাও কম । সাথে মুক্ত বাতাস । মজিদ মিয়া কিপটে না । বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে ছেলেমেয়েদের জন্য সে কিছু খাবার জিনিস কেনে । ছেলেমেয়েরা খুশি হয় । তিন ভাই বোন কাড়াকাড়ি করে খায় । দেখলেই কেমন শান্তি শান্তি লাগে । প্রতিবার সে যখন এই কথাটা ভাবে তখনই চোখের সামনে দৃশ্যটা ভেসে ওঠে । বাচ্চাগুলো তাদের মায়ের মতো হয়নি । এরা সারাক্ষণ হাউকাউ করে বাড়ি মাথায় তুলে রাখে । আর তাদের মা একবারে চুপচাপ । স্বামীর কাছেও তার কোনো চাহিদা নেই । বারো বছরের সংসার জীবনে কখনো কিছু চায়নি সে স্বামীর কাছে । তবে কাচেঁর চুড়ি তার খুব পছন্দের । এটা মজিদ মিয়া খুব ভালোকরেই জানে । তাইতো প্রতি ঈদে বউয়ের জন্য শাড়ি কিনতে না পারলেও এই জিনিসটা কেনে । আবার কানের কাছে ''আমি হলাম রোমিও,লেডি কিলার রোমিও''...রিংটোনের শব্দে চিন্তায় ছেদ পড়ে তার । তবে এবার আর সে রোমিওর দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে না । মনের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে গেল । এবারও সে বউটার জন্য শাড়ি কিনতে পারেনি ।পাওনাদার এসে বসে থাকে প্রায়ই...বউ বলে । তাইতো পাওনাদারকেই আগে শান্ত করতে হবে । কি আর করা ।

কাপড় চোপড়ের ব্যাগটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছে সে । এর মধ্যে রয়েছে মেয়ে দুটোর জন্য দুটো ফ্রক আর ছেলের জন্য একটা শার্ট । ফুটপাত থেকে কেনা । তাতে কিছু যায় আসে না । কারণ বড় বড় শপিং মলের শোরুমে ঢুকার জন্য ক্যাপসুল লিফট কিংবা এসকেলেটরে উঠার জায়গা কিংবা দুঃসাহস হয় না মজিদ মিয়াদের । বরং ফুটপাতে ধাক্কাধাক্কি আর দর কষাকষি করে কিছু কিনতে হয় তাদের । এটাই তাদের নিয়তি ।

কারো ঈদ হয় ফুটপাত থেকে কেনা একগোছা কাঁচের চুড়ি দিয়ে আবার কারোর হয় একটা ফ্রক কিংবা একটা শার্ট দিয়ে । আবার কারোর হয় দামি শাড়ি আর গয়না দিয়ে । অনেকে আবার নতুন কাপড় চোপড়ের সংখ্যাটার উপর প্রাধান্য দেয় বেশি । আবার ডায়মন্ড কিংবা প্লাটিনামের গয়না ছাড়া অনেকের কাছে ঈদের কেনাকাটা অসম্পূর্ণ । অনেকের কাছে আবার গাড়ির ব্র্যান্ডটা ঈদ উপলক্ষে বদলাতে না পারলে ঈদের আমেজটা বড় পানসে লাগে । এসব উচ্চমর্গীয় চিন্তা ভাবনা মজিদ মিয়া করতে চায় না । কী লাভ ? তবুও মাঝেমাঝে কেন জানি বড্ড হিংসে হয় ওদের ।

কিন্তু বিধাতা চাননি মজিদ মিয়া ওদের আর হিংসে করুক । তাইতো কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই চিৎকার চেঁচামেচিতে চারদিক ভরে ওঠল । একটু পরই সব নিরব নি:স্তব্ধ । অনেক গুলো লাশের সাথে পড়ে রইল মজিদ মিয়ার নিথর দেহ । পরদিন হয়তো পত্রিকার কোনো পৃষ্ঠায় তাদের এই ছবিগুলো ছাপা হবে । আবার নাও হতে পারে ।

মরার পর মানুষের হাত পা'গুলো কেমন শিথিল হয়ে য়ায় ।হয়তো পার্থিব জগৎ থেকে তার আর কিছু গ্রহণ করার নেই । তাই নেতিয়ে পড়ে কিংবা দেনা পাওনার আর হিসাব নিকাশের উর্ধ্বে চলে যায় । মজিদ মিয়ার বেলায় সে রকম কিছু ঘটল না । তার হাত দুটো খুব শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রেখেছে সেই ব্যাগটা । যার ভিতরে রয়েছে ছেলেমেয়েদের ফ্রক শার্ট আর বউয়ের জন্য কেনা একগোছা কাঁচের চুড়ি । কিছু চুড়ি ভেঙে গেছে । আর কিছু রয়েছে বাকি । সেই ভাঙা কাঁচের চুড়ি দেখে মজিদ মিয়ার বউ চিৎকার করে বলছে.....''এইগুলা দিয়া আমি কী করমু ? সব চুড়ি ভাইঙ্গা যাইতো ,তবুও মানুষটা ফেরত আসতো .........''


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

"আবার ডায়মন্ড কিংবা প্লাটিনামের গয়না ছাড়া অনেকের কাছে ঈদের কেনাকাটা অসম্পূর্ণ । অনেকের কাছে আবার গাড়ির ব্র্যান্ডটা ঈদ উপলক্ষে বদলাতে না পারলে ঈদের আমেজটা বড় পানসে লাগে । এসব উচ্চমর্গীয় চিন্তা ভাবনা মজিদ মিয়া করতে চায় না"--এই চিন্তাগুলো কি মজিদ মিয়ার? আপনি বলছেন সে চিন্তা করতে চায়না। তার মানে চিন্তা আসে, কিন্তু সে সেই চিন্তা করতে চায়না। যদি তাই হয়, তাহলে বলব একজন রিক্সাওয়ালা ডায়মন্ড বা প্লাটিনাম গোল্ড চেনেনা। আর যদি কথকের হয়, তাহলে গল্পটায় দুইটা পয়েন্ট অভ ভিউ মিশে গেছে। পাঠক হিসেবে আমি ধরতে পারিনি।

আপনি গল্পের কথক বা পয়েন্ট অভ ভিউ নিয়ে একটু পড়াশোনা করতে পারেন। আর সেই সাথে চর্চা। তাহলে আস্তে আস্তে ধরে ফেলবেন ব্যাপারটা। ধন্যবাদ

রাজীব মাহমুদ

শামীমা রিমা এর ছবি

‌‌ আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

"করতে পারে না" বললে কী সমাধা হয়?


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শামীমা রিমা এর ছবি

না সমাধা হয় না ।

তিথীডোর এর ছবি

অনেকদিন পর লিখলেন। হাসি

ক্লিশে প্লট। কিছু জায়গায় বেশ আড়ষ্ট লাগল। 'তবে মাঝেমাঝেই পেটের পীড়ায় ঘরে শুয়ে থাকতে হয়', না হয়ে পেটের গোলমাল, 'ছাদে করে যাতায়াত বেশ লাগে তার', না লিখে ছাদে আসা- যাওয়া করে-- এভাবে বললে বেশি মানানসই হতো বোধ হয়।
একান্তই ব্যক্তিগত মতামত।

লিখুন আরো। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

শামীমা রিমা এর ছবি

আসলে লেখালেখির আগÖহটা কেন জানি দিন দিন চলে যাচ্ছে ।

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
তিথীডোর ।

শামীমা রিমা এর ছবি

উপদেশ মেনে চলব । হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখার হাত ভালো আপনার। শুধু প্লটটা নিয়ে হয়ত একটু বেশী চিন্তা করতে হবে না। বারো বছরে স্বামীর থেকে কিছু চায়নি - এটা আমার পড়ে খুব হিংসে হয়েছে।
- ঈপ্সিত

শামীমা রিমা এর ছবি

হিংসে হয়েছে ‌‌কেন ?

অতিথি লেখক এর ছবি

হিংসে হবে না কেন ! মেয়েরা সব্সময় শুধু চাই চাই করে । ইয়ে, মানে...

অচল এর ছবি

"সব চুড়ি ভাইঙ্গা যাইত, তবু মানুষটা ফেরত আসত " লাইনটা ছুঁয়ে গেল। লেখা -গুড়- হয়েছে

শামীমা রিমা এর ছবি

হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।