উপন্যাসের প্রিয় চরিত্রগুলো (প্রথম পর্ব)

রংতুলি এর ছবি
লিখেছেন রংতুলি [অতিথি] (তারিখ: শনি, ০২/০৩/২০১৩ - ৮:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জীবনটা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়া উপন্যাসের কোনো চরিত্র না। যেখানে সুখ-দুঃখ, ভালোলাগা-মন্দলাগা, হাসি-কান্নার মত ছোটবড় প্রতিটি অনুভূতির গাঁট ধরা থাকবে অভিজ্ঞ কোন হাতের যাদুকরীতে। জীবনের প্রতিটা বাঁক বরং আরো অনেক বেশি বর্ণিল, আপেক্ষিক, অনিশ্চিত ও বৈচিত্র্যময়। কোথাও চরম আবার কোথাও নির্মল যা আগে থেকে অনুমান করা কঠিন। তারপরেও ভালো লাগা উপন্যাসের প্রিয় কোন চরিত্রের মাঝে প্রায়শই আমরা ফুটে উঠতে দেখি নিজের প্রতিচ্ছবি। অবাক হয়ে ভাবি এও কি সম্ভব! নিজের ভেতরের স্বপ্ন, ইচ্ছে, চেপে রাখা না বলা কথাগুলো নির্জীব কাগুজে ক'টা পাতায় কেমন করে এত সহজে প্রাণ পেয়ে গেল। আজ এরকমই কিছু উপন্যাস ও তার চরিত্র নিয়ে লিখতে বসলাম। যার ভেতরে অসংখ্যবার ভিন্ন সময়ে ভিন্ন আঙ্গিকে আমি আয়নার মত প্রতিবিম্বিত দেখেছি আমার চারপাশটা, প্রিয়-অপ্রিয়-চেনা-অচেনা মানুষ, কখনো নিজেকে...

পার্ল এস. বাকের মাঃ

মা হলো গ্রামের অতি সাধারণ পরিশ্রমী বর্গাচাষী নারীদের একজন। গ্রামীণ জীবনধারা, পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ, কঠোর পরিশ্রম এসবকিছুর সাথে একজন নারীর মনের কল্পনাবোধ, স্বপ্ন, মমতা, রাগ-ক্ষোভ-ঈর্ষা এরকম অনেক চেনা অনুভূতির অদ্ভুত সংমিশ্রণ ফুটে ওঠে এই এক চরিত্রের মধ্যে দিয়ে। পুরো উপন্যাস জুড়ে যে চরিত্রটিকে লেখিকা সম্বোধন করে যান কেবল 'মা' নামেই। মা ছাড়া আসলে অন্য কোনো নাম চরিত্রটির সাথে যায় না।

এই সাধারণ গ্রামীন কৃষক রমণীর ভেতরের স্বপ্ন, সাধ, আকাংখাগুলোও আর দশটা মেয়ের মতই অতি সাধারণ। বর্গা নেয়া জমিটুকুতে শ্রান্তির ঘাম ঝরিয়ে শস্য ফলানো, দিনমান বীজ বুনে সন্ধায় ঘরে ফেরার পথে কল্পনায় সে বীজ শীঘ্রই অঙ্কুর হয়ে চারা বের হবে এই ভাবনা তার মনকে অদ্ভুত সুখানুভূতিতে আচ্ছন্ন করে রাখে। ঘরে ফিরে সন্তানদের মুখে তৃপ্তির অন্ন তুলে দিয়ে তার সমস্ত ক্লান্তি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। মায়ের কোমলমতি মনের ভাগ থেকে বাদ যায় না বাড়ির কুকুর বা অন্য পোষা প্রাণীগুলোও, যাদের খাইয়েও সে সমান তৃপ্তি পায়। তারাও সন্তানের মতই দিনভর মায়ের ফেরার পথ চেয়ে থাকে। মায়ের অকৃত্রিম ভালবাসা ভরা মনটার প্রকাশ পায় এভাবেই নিজের সন্তান, শাশুড়ি ও বাড়ির প্রতিটি জীব যারা মাকে নির্ভর করেই বেঁচে থাকে তাদের প্রতি তার নিরলস দায়িত্ববোধ ও মমতা থেকে। সাথে নানা কাজের মাঝেও অন্ধ হয়ে আসা মেয়েটার ভাবনা মাকে অস্থির করে তুলে।

মা তার স্বামীকে ভালবাসতো। কারণ স্বামীর কারণে সে পেয়েছে সন্তানধারণের মত গর্ব। নিজের মাতৃত্বের ক্ষমতায় মা একজন গর্বিত নারী। স্বামীর আত্নকেন্দ্রিক সভাব, আড্ডা-জুয়া-বিলাসীতা, সংসার ও কাজের প্রতি অনীহা এসব কারণে কখনো ভেতরের ক্ষোভ চেপে রাখতে না পেরে মা ফেটে পড়তো, এরকম সামান্য এক ঘটনার পর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়, আর ফিরে না। দিনের পর দিন মা অপেক্ষা করে থাকে স্বামীর জন্যে, ভালো রেঁধে তুলে রাখে। সংসারের এতগুলো মানুষের দায়িত্ব এসে পড়ে মায়ের কাঁধে, যা সে একাই পরিশ্রম ও দক্ষতার সাথে পালন করতে থাকে। কিন্তু পৃথিবীর সবখানেই বুঝি কোন মেয়েকে তার স্বামী ছেড়ে যাওয়াটা সমাজের চোখে স্বামীর বা পুরুষের দ্বায়িত্বজ্ঞানহীনতার চেয়ে সেই মেয়েরই দোষ বুঝায়। আর অন্যেরাও তখন নিজের কাজ ফেলে সেই দোষ ঘাটতে অতিউৎসাহী হয়ে পড়ে। নিশ্চয়ই তার কোন দোষ আছে নাহলে স্বামী তাকে ছেড়ে যাবেই বা কেন? - এ প্রশ্নে মায়ের নারীসত্ত্বা, অহম ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে। মানুষের এমন নানা প্রশ্নের নানা কটূক্তির জবাবে সে মিথ্যে বলা শুরু করে। গ্রামের মানুষের মুখ বন্ধ করতে শহরে গিয়ে স্বামীর নাম করে নিজের ঠিকানায় চিঠি লিখিয়ে নেয়া শুরু করে যে, স্বামী তার শহরে ভালো চাকুরী করছে। সবার মুখ বন্ধ হয়, মায়ের ভেতরের হাহাকার রয়েই যায়।

দ্বিগুণ পরিশ্রমে মাঠের কাজ, সংসারের ভরণপোষণে লেগে যায় মা। শরীর ও মনের জোরে হয়তো সে একজন পুরুষের চেয়েও বেশি ফসল ফলায়, সন্তানের মুখে ভালো খাবার তুলে দেয়, কিন্তু তারপরেও অন্যের চোখে সে রয়ে যায় একজন নারী হয়েই। তাই খুব সহজে জমিদারের নায়েবের কুনজরে পড়ে এই স্বামী পরিত্যক্তা নারীটি। এখানে বলে রাখা ভালো যে, লেখক মা-কে ধরাছোঁয়ার বাইরে দোষগুণের উর্দ্ধে কোন দেবীর আসনে নেননি। মা-কে তিনি এঁকেছেন সাধারণ একজন নারী অথবা মানুষ হিসেবে। আর মানুষের আচরণে নিশ্চিত করে কিছু বলা মানে তার উপর জোড় করে কিছু চাপিয়ে দেয়া। যেখানে মানুষের আচরেন নিশ্চিত বলে কিছু নেই। ততদিনে স্বামী ফিরার আশাও মা বাদ দিয়েছে। উপরুন্ত স্বামীর ছেড়ে যাওয়ায় তার ভেতরে যে অপমানবোধ, যে ক্ষোভ জমেছিলো, তার শোধ নিতে চেয়েছে নায়েবের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে। কিন্তু এখানেও মা প্রতারিত, লোভী নায়েবের পুরুষ দৃষ্টি যে শুধু মায়ের নারী শরীরটাকে চেয়েছিলো, তা বুঝে প্রথমবারের মতো সন্তান ধারণ তার কাছে গর্বের চেয়ে পাপবোধ ও আত্নানুশোচনার জন্ম দেয়। এ পাপ থেকে সে মুক্তি পেতে চেয়েছে শরীরের উপর চিরস্থায়ী যন্ত্রনার ছাপ নিয়ে।

মা একসময় বুড়িয়ে যায়, তার ছেলে সমর্থ হয়। ঘড়ে বউ এসে মায়ের স্থান নিতে থাকে, সেখানে চলতে থাকে ছেলের বৌয়ের সাথে চলে মায়ের কর্তৃত্বের সংঘাত। সংসারে তার স্থান অন্য কেউ নিয়ে নিচ্ছে তা মেনে নেয়া মায়ের কাছে কষ্টকর হয়ে পড়ে। উপন্যাসের শেষে মায়ের সবচেয়ে ছোট ছেলের জমিদারের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার মধ্যে দিয়ে চীনের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটে। জনসম্মুখে মায়ের চোখের সামনে নিজের প্রিয় সন্তানের মৃত্যদন্ড, চরম মানসিক বিপযস্থ অবস্থায়ও এক নব জাতকের কান্নার আওয়াজ মায়ের ভেতরে সব হারানোর মাঝেও কিছু পাওয়ার অনুভূতি জাগায়।

'মা' চরিত্রটিকে লেখিকার নিজের মূল্যায়নঃ পার্ল এস. বাক তার বিশাল উপন্যাস 'দা গুড আর্থ' এর পরপরই 'দা মাদার' লিখেন, যা লিখে তিনি নিজে খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। বিষয়টা আমার কাছে 'চোখের বালি' উপন্যাসে বিনোদিনী চরিত্রটির সাথে ন্যায় করতে না পারায় রবীন্দ্রনাথের ভেতরে যে আত্ননুশোচনা রয়ে গিয়েছিলো খানিকটা সেরকম লেগেছে। রবীন্দ্রনাথ যেমন সেকালের সমাজের বেড়াজাল থেকে হিন্দু বিধবা স্ত্রী বিনোদিনী-কে বের করতে পারেন নি, বাকও তেমন চীনের সে সময়ের সমাজ ব্যবস্থায় একটি নারীর একা থাকার যে যন্ত্রণা, সমাজের নিয়মকানুন পারিপার্শ্বিকতায় সে যন্ত্রণা আরো আরো তীব্র হয়ে ওঠা থেকে এই চরিত্রটিকে বের করতে পারেননি।

পুরো চরিত্রটির ভেতর লেখিকা নিজে নারী হিসেবে তার অনেক অনুভূতি, উপলদ্ধি ও চিন্তাভাবনা অকপটে লিখে গিয়েছেন যা একটু খেয়াল করলেই আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়, যেমন - মাতৃত্ব নিয়ে বাকের নিজের যে ভাবনা ও অব্যক্ত হতাশা তাও এই 'মা' চরিত্রটির মধ্যে স্পষ্ট ফুটে ওঠে।

মায়ের প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যায়নঃ প্রকাশক Peter Conn যিনি পরবর্তীতে বাকের দ্বিতীয় স্বামী ছিলেন, তিনি এই উপন্যাসটিকে “Pearl S. Buck: A Cultural Biography” বলে উল্লেখ করেন। 'মা' সম্পর্কে Peter Conn লিখেন - “veered perilously close to a personal confession, an unguarded glimpse into the secrets of her sexual and maternal frustration”। পার্ল এস. বাকের 'দা মাদার' উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৩৪ সালে। বলা হয়ে থাকে এই উপন্যাসটির মাধ্যমে বিশ্ব-সাহিত্যের পটে চীনের গ্রামীণ সমাজে নারীর অবস্থানের যথাযথ নিখুঁত চিত্রায়ণই তাকে এনে দিয়েছিলো ১৯৩৮ সালে নোবেল অর্জনের মত দুর্লভ খ্যাতি।

'মা' চরিত্র ও উপন্যাসটি আমার মূল্যায়নের দুঃসাহসঃ যদিও মায়ের স্বামীর তুচ্ছ ঝগড়ার জের ধরে রাগের বশে চলে যাওয়াটা বুঝা গেলেও, একেবারে ফিরে না আসাটা আমার কাছে রহস্যই থেকে গেছে। তারপরেও এটা অস্বীকার করার উপায় নাই 'দা মাদার' উপন্যাসটি পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এর কেন্দ্রীয় চরিত্র মা আমার ভেতরে আসে ঘুরেফিরে, বার বার। একজন স্ত্রী বা জননী হিসেবে নয় বরং একজন নারী হিসেবে এ চরিত্রটি আমাকে ভাবিয়েছে অনেক বেশি। বলতে গেলে আমার আশেপাশের অনেক জটিলতা, সমাজে নানা অবস্থানের নারীদের সীমাবদ্ধতা, প্রাপ্তি ও হতাশাগুলো চিনতে শিখিয়েছে নতুন করে, সম্মান করতে শিখিয়েছে নিজ নিজ অবস্থানে নিত্য টিকে থাকার চেষ্টারত প্রতিটি নারীকে। সাথে অবাক হয়েছি লেখিকার চরিত্রটির ভেতরে ঢুকে তা বিশ্লেষণের ক্ষমতা দেখে, ভেবেছি হয়ত তিনি নিজেও একজন নারী ছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। চীনের সেকালীন গ্রাম্য সমাজের রীতিনীতি ও কাঠামো পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণও লেখিকার নিখুঁত দৃষ্টি ও একটি প্রান্তিক সমাজের সাথে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

স্বীকারোক্তি - জীবনে প্রথম কোনো ছুঁয়ে যাওয়া উপন্যাস চরিত্র নিয়ে লিখলাম, অল্প কথায় কাজ সারতে না পারার সমস্যা আছে বোঝা যায়! মন খারাপ


মন্তব্য

রাজীব মাহমুদ   এর ছবি

উপন্যাসটা পড়ে আমার মনে হয়েছে মায়ের নায়েবের সাথে সম্পর্কে জড়ানোটা স্বামীর উপর শোধ নেয়ার জন্য সন্দেহ নেই। তবে তার চাইতে বেশী হচ্ছে তার দীর্ঘ নিঃসঙ্গতার বোঝাটা আলগা করার জন্য। একটি স্বাভাবিক নারীর মত মায়েরও একটা শারীরিক চাহিদা ছিল, যেটা খুব স্বাভাবিক এবং এই সম্পর্কে জড়ানোটা মায়ের লৌকিক অস্তিত্ত্বের জায়গাটাকে তীব্র করেছে। যেটা আপনি বলে দিয়েছেন খুব প্রাসঙ্গিক ভাবে। উপন্যাসের শেষটা চমৎকারঃ মৃত্যুর অমোঘতার মধ্যেও একটি নব জাতকের কান্না জীবনকেই জড়িয়ে ধরে শেষমেষ।

সুন্দর রিভিউয়ের জন্য ধন্যবাদ।

রংতুলি এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকেও সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য। হাসি নায়েবের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একজন মানুষ হিসেবে মায়ের নিজের স্বাভাবিক শারীরিক চাহিদার বিষয়টা আমি আসলে এড়িয়ে যাইনি, একটু অন্যভাবে বলার চেষ্টা করেছি। আসলে মা চরিত্রটা এত প্রবল এত স্বচ্ছ যে এর কোনো দাবী অস্বীকার করার মত না।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লেখার শিরোনাম হচ্ছেঃ "উপন্যাসের প্রিয় চরিত্রগুলো (প্রথম পর্ব)"; শেষের অনুচ্ছেদের শিরোনাম হচ্ছেঃ "'মা' চরিত্র ও উপন্যাসটি আমার মূল্যায়নের দুঃসাহস"; এবং স্বীকারোক্তিতে বলছেনঃ "জীবনে প্রথম কোনো বুক রিভিউ লিখলাম"। আগে নিজে স্থির করুন কোনটা করতে চান - পুরো বইয়ের রিভিউ নাকি উপন্যাসের একটা চরিত্র বিশ্লেষণ। তাহলে পাঠকের পক্ষে লেখাটা সেভাবে বিচার করা সম্ভব হবে।

ধরে নেই আপনি চরিত্র বিশ্লেষণই করতে চেয়েছেন। সেক্ষেত্রে পুরো গল্পটি বিস্তারিত বলার দরকার নেই। মূল্যায়ণটি যেহেতু আপনার তাই এই ব্যাপারে আগে কে, কী বলেছেন সেটা উল্লেখ না করলেও চলবে। বিশ্লেষণটি যদি অবরোহী পদ্ধতিতে করতে চান তাহলে বইটা পড়ে এই চরিত্রটির ব্যাপারে আপনি যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন সেটা প্রথমেই বলে তা প্রমাণ করার চেষ্টা করুন। আর আরোহী পদ্ধতিতে করতে চাইলে গল্প অনুযায়ী চরিত্রটির সুতো ধরে আগাতে আগাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন। রিভিউ বা চরিত্র বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে রিভিউ লেখকের ব্যক্তিগত দর্শনটি গুরুত্বপূর্ণ। এটি ঠিক করে দেয় লেখক কোন কনটেক্সট থেকে বিশ্লেষণ করেন। এর মানে এই না যে রিভিউতে রিভিউ লেখকের নিজস্ব দর্শন ফুটে উঠতে হবে, তবে তার ছাপ থেকে যেতে পারে।

সিরিজটা ইন্টারেস্টিং হবে বলে আশা করছি।

অটঃ ইয়াও স্যুন চেনজিয়াঙ-এর স্থানীয় বাসিন্দা, চীনা সাহিত্যের প্রাক্তন ছাত্র, ইংরেজীও মন্দ জানে না। তার সাথে চেনজিয়াঙ ঘুরে দেখার সময় জিজ্ঞেস করি সাই ছ্যানঝু বা পার্ল এস বার্ক তার পড়া আছে কিনা। স্যুন এই ব্যাপারে তার অজ্ঞতা প্রকাশ করে। তাই শহরটার কোথায় এই মহান সাহিত্যিক তাঁর জীবনের প্রায় ১৫ বছর কাটিয়েছিলেন সেটা আর জানা গেলো না, দেখা হলো না। অবশ্য এই শতাব্দীর চেনজিয়াঙ থেকে তার ঠিক একশ' বছর আগের চেনজিয়াঙ - তার জীবনযাত্রা, পরিবেশ-পরিস্থিতি কিছুই বোঝা সম্ভব নয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রংতুলি এর ছবি

দাদা, আপনি কমেন্ট করেছেন দেখলেই ভয় লাগে, কমেন্ট দেখার আগেই কি ভুল করলাম তা মনে মনে ভাবতে শুরু করি... ইয়ে, মানে...

স্বীকারোক্তি তে 'বুক রিভিউ' মুছে 'চরিত্র বিশ্লেষণ' করে দিলাম, আসলে মা চরিত্রটি বিশ্লেষণ করতে যাওয়াই আমার এই লেখার উদ্দেশ্য। আমার প্রিয় মন ছুঁয়ে যাওয়া কিছু চরিত্র ধারাবাহিকভাবে লিখবো বলেই এটা সিরিজটা শুরু করলাম। আমিও আশা করছি পরের পর্বগুলোতেও আপনার মূল্যবান দিকনির্দেশনা পাবো।

অঃ টঃ পার্ল এস. বাক সম্পর্কে পড়ে যতটুকু জেনেছি, জীবনের অর্ধেককাল সে চীনের চেংজিয়ানে ছিলো। নানজিং ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশ লিটারেচারে শিক্ষকতা করতো। চীনের অধিকারবঞ্চিত নারীদের শিক্ষার আলো প্রসারের মাধ্যমে আত্নচেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে তার আমেরিকান দৃষ্টিভঙ্গি ও শিক্ষা কার্যকরি ভূমিকা রাখে। সে যেহেতু নিজে মধ্যবিত্ত শ্রেনীর একজন নারী ছিলো, তাই সেই শ্রেনীর মেয়েদের মধ্যে তার প্রভাব দ্রুত পড়তে থাকে, তাদের মধ্য নারীবাদী চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটাতে বাক সক্ষম হন। একজন আমেরিকান লেখক হয়ে চীনের গ্রামীণ সমাজ নিয়ে লিখার কারণে ষাটের দশকে চীনের কালচারাল রিভলুশনের সময় তাকে 'সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদী' আখ্যা দেয়া হয়। যেকারণে পরবর্তী সময়ে আমেরিকার সরকার বাকের উপর চীন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা শেষ সময়ে বাকের মনোকষ্টের কারণ ছিলো।

আশ্চর্য না! একশ বছরে একটি সমাজের কতখানি বদলায়, কিন্তু মানুষের ভেতরের অনুভূতির যে গতিপ্রকৃতি তার আসলে তেমন কিছুই বদলায় না।

রংতুলি এর ছবি

ধন্যবাদ মেঘা! সাহস করে লিখে ফেল, আমিও তো ভয়ে ভয়ে লিখা শুরু করলাম। হাসি

সৌরভ কবীর এর ছবি

চলুক

__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে

মেঘা এর ছবি

জীবনে কত বই পড়েছি তার কোন হিসেব নেই তুলিপু! তবে আমি বইয়ের রিভিউ লেখার মত সাহস করে উঠতে পারি না। মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে কত প্রিয় নাম আর চরিত্রগুলো একটু উল্টে পাল্টে দেখি!

লেখা ভাল লাগলো।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

রংতুলি এর ছবি

মেঘা সরি আপু, তোমাকে করা কমেন্টটা দেখি কেমনে কেমনে জানি উপরে চলে গেছে, আজ পর্যুন্ত ঠিকঠাক ব্লগিং করা শিখলাম না আমি! মন খারাপ

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক চলুক
ভাল হয়েছে আপু।
পাণ্ডবদার কথাগুলো মাথায় রেখ, তাহলেই হবে।
পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম , পরের পর্বের অপেক্ষায় !

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

রংতুলি এর ছবি

ধন্যবাদ! হাসি

লুব্ধক এর ছবি

আপনার উদ্যোগটি ভাল লাগল। ম্যাক্সিম গোর্কীর মত পার্ল এস. বাক ও যে "মা" নামে একটি উপন্যাস লিখেছেন তা জানা ছিল না। আপনার আয়নার প্রতিবিম্বতে আরও অনেক জানা ও অজানা উপন্যাসের চরিত্রের প্রতিফলন ঘটুক . . . .

দ্বিতীয় পর্বের প্রতীক্ষায় রইলাম। ভাল থাকুন।

রংতুলি এর ছবি

উৎসাহ দেয়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ লুব্ধক, আশা করছি আমার আয়নায় প্রতিবিম্বিত প্রতিটি চরিত্র আপনাকেও ছুঁয়ে যেতে পারবে! হাসি

ম্যাক্সিম গোর্কির 'মা' পড়েছিলাম অনেক আগে, চরিত্রটি ভুলেও গেছি অনেকটা তবে এই দুই চরিত্রের মাঝে তফাৎ হলো ম্যাক্সিম গোর্কির 'মা' সমাজের প্রোলেতারিয়েত শ্রেনীর একজন, বাকের 'মা' গ্রামের বর্গাচাষী। দু'টি চরিত্রের সাদৃশ্য হলো দুজনই সমাজের প্রান্তিক শ্রেনীর নারী, সংগ্রামের মাঝেই টিকে থাকে।

তূর্য রায় এর ছবি

বইটি আছে,তবে এখনো পড়া হয়নি! ম্যাঁও

রংতুলি এর ছবি

এরকম একটা বই ফেলে রাখা অন্যায়, পড়ে ফেলেন।

guest writer এর ছবি

এই বইটার কোন বাংলা অনুবাদ পাওয়া যায় কি ?

রংতুলি এর ছবি

বাংলা অনুবাদ পাওয়া যাবার কথা, আজিজ সুপার মার্কেট অথবা বেইলী রোডের বইয়ের দোকানগুলোতে খোঁজ করে দেখতে পারেন।

তারেক অণু এর ছবি

পার্ল বাকের মা স্কুলে থাকতে বাংলাতে পড়েছিলাম, কেমন আবেশ করা একটা অনুভূতি।

রংতুলি এর ছবি

দুই বছর আগে প্লেনে পড়েছিলাম। উপন্যাসটি পড়ার পর অনেকদিন অন্য কিছু ভাবতে পারি নাই, কেমন ঘোর লাগা একটা অনুভূতি কাজ করছিল মাথার ভেতরে!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।