হাড়িচাঁছা শিয়াল

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল গাফফার রনি [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২৬/০৯/২০১২ - ১:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হাড়িচাঁছা শিয়াল ভারী বুদ্ধিমান। শিয়ালরা এমনিতেই বুদ্ধিমান হয়। কিন্তু হাড়িচাঁছার বুদ্ধি সবার চেয়ে বেশি। তবে তার দুঃখও কম নয়। কারণ তাঁর নাম হাড়িচাঁছা কিনা। এই নাম তো তার বাবা-মা দেয়নি। দিয়েছে মাঠের দুষ্টু পশুরা। তাঁর গলায় যতদিন রসের হাড়ির কান্দাটা

ঝুলছে ততোদিন তার হাড়িচাঁছা নামটা ঘুচবে না। একথা হাড়িচাঁছা ভালোই জানে। কিন্তু সে তো হাড়িচাঁছতে যায়নি। গিয়েছিল রস খেতে। নিন্দুকেরা বলে, না না খেতে নয় চুরি করতে। একেবারে হাড়িচেঁছে চুরি যাকে বলে! তা নিন্দুকের কথাও একেবারে ফেলনা নয়। সত্যি বলতে কি হাড়িচাঁছার নিজস্ব একটা ভাবনার জগত আছে। অন্যদের সাথে তার ভাবনা মিশ খায় না। এই যেমন গাছিদের খেজুর রসের কথাই ধরা যাক। হাঁড়িচাছা মনে করে খেজুর গাছ থেকে যে রস বের হয় তাতে শিয়াল বা অন্য পশুদেরও ন্যায্য অধিকার আছে। একথা শুনে হাড়গিলে বুড়ো শিয়ালটা বলেছিল, ‘খবরদার ওকথা মুখে আনিসনে! মানুষের সাথে আড়ি করবি কিরে, সে যে জলে বাস করে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করা হবে!’
হাড়িচাঁছা ভেবে পায় না বুনো পশুগুলো এতো ভিতু কেন। মানুষ যেমন প্রাণী, শিয়াল-শকুনরাও তেমন প্রাণী। না হয় বুদ্ধি একটু ওদের বেশিই আছে। তাই বলে গোটা দুনিয়াটা ওরা দখল করবে। আমারই বা কেন সেটা মুখ বুঁজে সহ্য করে যাব। মাথামোটা বুনোদের বোঝানো আসলেই কঠিন। ওরা সাথে থাকুক আর নাই থাকুক, রস সে খাবেই। কিন্তু রস খেতে চাইলেই তো খাওয়া যায় না। একেকটা খেজুরগাছ পাহাড় সমান উঁচু। রসের হাড়ি থাকে সেই গাছগুলোর একেবারে মাথায়।
কোনো উপায় না পেয়ে অবশেষে এরপর শিয়াল গেল কাঠঠোকরার কাছে। কাঠঠোকরা তখন ঠকঠক করে একটা কাঁঠাল গাছের গায়ে গর্ত করছে। শিয়াল সেই কাঁঠালগাছের তলায় দাঁড়িয়ে হাঁক পাড়ল, ‘ভাই কাঠ ঠোকরা, আমার একটু রাস খাওয়ার সাধ হয়েছে। তোমার শক্ত ঠোঁট দিয়ে রসের হাড়িটা ফুঁটো করে দাও না ভাই। রস নিচে পড়–ক আর আমি গাল পেতে খাই।’
কাঠঠোকরা বিরক্ত হলো। ঠোঁট ভেংচে বলল, ‘উঃ সখ দেখে আর বাঁচি না! বাদশাহ হুজুরের রস খাওয়ার সাধ হয়েছে। অতই যদি সখ তা যাও না বাপু নিজেই গিয়ে পেড়ে খাও। আমার কাছে ধর্না দেয়া কেন? যাও যাও, মেলা বকিয়ো না। আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।’
শিয়াল হাত জোড় করে মিনতি করল। কিন্তু কাঠঠোকরার মন গলল না। বরং রেগেমেগে ‘ব্যাটা পাজি, আমাকে দিয়ে চুরি করাতে চাস! দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।’ বলে ধারালো ঠোঁট বাগিয়ে তেড়ে এলো সে। শিয়ালও সর্তক ছিল। কাঠঠোকরার আক্রমণাত্মক ভাব বুঝে দিল ছুট। কাঠঠোকরাও উড়ে চলল পিছু পিছু। একসময় ঘন একটা বৈঁচি ঝোপের ভেতর সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়ল শিয়াল। তারপর উঁচু গলায় বলল, ‘তুমি বড্ড সাধু না? গাছের গায়ে ঠোকর মেরে মেরে ফুাঁটো করার সময় কোথায় যায় তোমার সততা? আমি চোর হলে তুমি ডাকাত!’
কাঠঠোকরার ইচ্ছে করে শিয়ালের চোখদুটো তুলে নিতে। কিন্তু শয়তানটা এমন একটা ঝোপের ভেতর গা ঢাকা দিয়েছে যে করার কিছুই নেই।
তবু শিয়ালের রস খাওয়ার সাধ মিটল না। ভাবতে লাগল কার কাছে গেলে সাহায্য পেতে পারে। হঠাৎ তার মনে পড়ল, আরে এই কাজের জন্য বানরই তো সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত! যেই ভাবা সেই কাজ। শিয়াল ছুটল বানরের কাছে। বিরাট এক অশত্থ গাছে মোটা এক ডালে আরাম করে বসে এক বানর তার বাচ্চার গা থেকে উকুন খুঁটে খুঁটে মুখে পুরছে। শিয়াল বানরকেও তার রস খাওয়ার সখের কথা জানাল। শুনে বানর বলল, ‘চলো তো সেখানে। তোমাকে রস খাওয়াতে পারি কিনা দেখি।’ কিন্তু বানর গিয়ে সব রস গাছে বসে একাই খেয়ে ফেলল। তাই দেখে শিয়াল বলল, ‘আরে করো কী, করো কী! সব রস দেখি খেয়ে ফেললে, আমার জন্য কিছু রাখো।’
বানর বলল, ‘রেখেছি তো। এই নাও।’ বলে রসের হাড়িটা শিয়ালের মাথা লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারল। শিয়াল সময় মতো সরে পড়েছিল বলে রক্ষা। নইলে মাথাটাই যেত। রসের হাড়িটা মাটিতে আছাড় খেয়ে চুরমার হয়ে গেল। একফোঁটা রস ছিল না তাতে। ধৈর্যের বাধ মানল না শিয়ালের। বিশ্রি ভাষায় গালিগালাজ করেত লাগল। বিটকেল মার্কা একাট হাসি দিয়ে এগাছ থেকে ওগাছে লাফিয়ে লাফিয়ে হারিয়ে কোথায় হারিয়ে গেল।
অন্যদের ভরসা বাদ দিয়ে নিজে নিজেই কীভাবে রস খাওয়া যায় সেই ফন্দি আঁটল শিয়াল। একটা দারুণ বুদ্ধি এলো তার মাথায়। রস যদি খেতেই হয় তাহলে আগে একটা ছোট্ট খেজুর গাছের সন্ধান পেতে হবে। খুব বেশি কষ্ট করতে হলো না তাকে। একরাতে মাইলখানেক দূরেই রাস্তার ধারে পেয়ে গেল ছোট্ট একটা গেজুর গাছ। ছোট্ট কিন্তু চারা নয়। রসের হাড়িটা দিব্যি মাটিতে ঠেকে আছে। শিয়াল হাড়ির ভেতর উঁকি মেরে দেখল খাওয়ার মতো বেশ খানিকটা রস জমেছে তাতে। হাড়িতে মাথাটা ঢোকানো চেষ্টা করল। কিন্তু রসের হাড়ি তো রান্নার হাড়ি নয় যে মুখটা পেঁচার মতো বড় হবে। এ হাড়ি কলসের মতো, গলাটা সরু। তাই হাড়ির ভেতরে মাথা ঢোকাতে শিয়ালকে রীতিমতো কসরৎ করতে হল। কিন্তু পেটপুরে মজার রস খেতে পেলে কি আর কষ্টের কথা মনে থাকে। রসের হাড়ি চেঁছেপুছে খেল শিয়াল।
সমস্যা হলো যখন মাথা বের করতে যাবে তখন। কিছুতেই মাথা বেরোয় না। পা দিয়ে ধরে অনেক টানাটানি, মোঁচড়ামুঁচড়ি করেও বেরোয় না। তখন কী করবে শিয়াল! বুদ্ধি সুদ্ধি একেবারে শিকেয় উঠে গেছে। ভয়ে-আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে সে ছুটতে লাগল। কোথায় ছুটছে, কোনদিকে ছুটছে জানে না। তারপর কিসে যেন তাল খেয়ে ‘ফটাশ’ করে শব্দ হলো।
তারপর রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকার যেন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে উঠল। তখন তার আনন্দ দেখে কে! কিন্তু তার গলায় কাঁটা হয়ে তখনও ঝুলছে রসের হাড়ির কান্দাটা। এখন মাঠের পশুদের কী বলবে? হাঁড়িচেঁছে রস খেতে গিয়ে অকাণ্ডটা ঘটিয়েছে শুনলে পশুকুলে তো আর মুখ দেখানোর জো থাকবে না।
শিয়ালটা ভেবেছিল যা-তা একটা বুঝিয়ে ব্যাপারটা ম্যানেজ করে নেবে। কিন্তু হোৎকা ছুঁচোটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে সব দেখেছে। শিয়াল তার নিজ গর্তে ফেরার আগেই বুঝল বাতাসেরও আগে ফুলে ফেঁপে হাড়িচাঁছার ঘটনা মাঠজুড়ে রাষ্ট্র হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, তার জন্য বিটকেল ধরনের একটা নাম তৈরি করে ফেলেছে তার দুচোখের শত্রু হাড়গিলে বুড়ো শিয়ালটা। হাড়িচাঁছা!
তারপর থেকে তাঁর সুখ উধাও। মাঠের সব পশুরা এমনকী সবচেয়ে নিরীহ প্রাণী বলে খ্যাত জলাশয়ের কচ্ছপরাও ফিচেলমার্কা হাসি দিয়ে বলে, ‘দ্যাখ দ্যাখ, হাড়িচাঁছা যায়?’
ব্যাটাদের ধরে চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করে হাড়িচাঁছার, কিন্তু ওদের খোসল যে শক্ত, শ্বদন্ত হারাতে হয় এই ভয়ে আপতাত অপমানগুলো হজম করা ছাড়া গত্যান্তর নেই। তারওপর জ্ঞাতিভাই খ্যাকশিয়ালদের গা জ্বলুনি ‘খ্যাক খ্যাক’ হাসি তো আছেই।

অবশেষে মনের দুঃখে ক্ষোভে অভিমানে এই মাঠ ছেড়ে বনে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় হাঁড়িচাঁছা। মাঠের পর গ্রামের পর মাঠ পাড়ি দিয়ে একদিন বনের দেখা পায় সে। কিন্তু বনে ঢোকার আগ মুহুর্তে একটা পাকা গমক্ষেতের ভেতর একদল বেজির শোরোগোল শুনতে পায় হাঁড়িচাঁছা। ব্যাপার কী জানতে গিয়ে দেখে, এক বেজি মানুষের বাচ্চার হাতে প্যাঁদানি খেয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। মানুষের চোদ্দগুষ্ঠির পিণ্ডি উদ্ধার করছে বেজিটার কুটুম্বরা। হাঁড়িচাছা তাদের কাছে গিয়ে বলল, ‘বলি আড়ালে মানুষের পিণ্ডি চটকালে চলবে? নিজেদের বোকামীর জন্যই তোমরা মরো?’
শিয়ালের বুদ্ধির খ্যাতি জগতজোড়া- সেকথা বেজিদের অজনা নয়। মাতবর গোছের একটা বেজি এগিয়ে এসে বলল, ‘তাহলে আমরা কী করতে পারি প-িতমশাই।’
‘একবার ভেবে দেখো তো,’ বলতে শুরু করল হাঁড়িচাঁছা। ‘তোমাদের সবচেয়ে বেশি ভয় পায় কারা? সাপেরা। আর মানুষ সবচেয়ে বেশি ভয় কাদের? সাপেদের। এমনকী বাঘের চেয়েও সাপকে বেশি ভয় পায় দোপেয়ের জাতেরা। তোমরা যদি সাপেদের সাথে ভাব থাকত মানুষের বাচ্চা সাধ্য কি তোমাদের সাথে লাগতে আসে! আর বোকা সাপগুলোও যেমন- তোমাদের দেখলেও ফোঁস করে ওঠে, আবার না বুঝেই দোপেয়ের পায়ে ছোবল দেয়। তার মাশুল গুনতে হয় কড়ায় গণ্ডায়। বিষ আর ফোঁসফোঁসানিই যা আছে। এতটুকু বুদ্ধি যদি ওদের ঘটে থাকত...’
মোড়লগোছের বেজিটা বলল, ‘পণ্ডিতমশাই আপনি যদি কিছু মনে না করেন, আমার একান্ত ইচ্ছা আমাদের দলটার নেতা হোন। না না খাদ্য-খাবার নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। সে দায়িত্ব আমাদের।’
শিয়াল ভাবল, প্রস্তাবটা মন্দ নয়- এরা যখন এতো খাতির করে নেতা মানছে, তখন এদের দলেই ভিড়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তো শিয়াল বেজির দলের নেতা হয়ে প্রথমেই ডাকল সাপের সর্দার রাজ খোগরাকে। বেজিদের সাথে তাদের চিরকালীন বিবাদটা মিটিয়ে একসাথে শত্রুর মোকবেলা করাই তার লক্ষ্য। নাগরাজ হাড়িচাঁছার কথাটা ভেবে দেখল। মন্দ নয়। অতএব সাপে আর নেউলে একদলে ভেড়ায় শত্রুরা এখন তাদের রীতিমতো সমঝে চলে। এমনকী মানুষও।
গলায় অদ্ভুত কলারওয়ালা শিয়াল এসে সাপে-নেউলেকে একসুত্রে গাঁথার মতো দুরূহ কাজে শুধু সফলই হয়নি, পরিণত করেছে তল্লাটের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনীতে- একথা ছড়িয়ে পড়ল দূর দূরান্তে। এমনি করে খবরটা পৌঁছে গেল বনেও। বনের পশুরা তখন ঘোর বিপদে। একদল দস্যু আস্তানা গড়েছে গহীন বনে। তাদের অত্যাচারে দিশেহারা বনের পশুরা। হরিণগুলো ধরে খেয়ে ফেলছে, মাংস বিক্রি করছে, বিদেশে পাচার করছে। বাঘেদের গুলি করে মেরে চামড়া ছাড়িয়ে বিক্রি করছে, বাচ্চাগুলো ধরে ধরে চিড়িয়খানায় পাঠাচ্ছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনের গাছগুলো, নির্বিচারে কেটে উজাড় করে দিচ্ছে। সেইসব গাছে যেসব পাখির বাসা ছিল, সেগুলো তছনছ হয়ে যাচ্ছে। ডিম, বাচ্চাগুলো সব নষ্ট হচ্ছে। মৌমাছির চাকগুলো গুড়িয়ে যাচ্ছে।
বনের পশুরা একে একে সব শরণাপন্ন হলো হাঁড়িচাছা শিয়ালের। দস্যুদের হাত থেকে তারা রেহায় পেতে চায়। প্রথমে এলো পাখি আর মৌমাছিরা। হাঁড়িচাঁছা তাদের কাছে ভাববার জন্য কিছুদিন সময় চেয়ে নেয়। তারপর আসে হরিণের দল। বাঘেরা প্রথমে আসতে চাইনি। তারা হলো বনের রাজা। শিয়ালের কাছে বুদ্ধি ধার করতে তাদের আঁতে ঘা লাগে কিনা। কিন্তু এক সময় তাদের আসতেই হলো।
শিয়াল বলল, ‘সিংহদের বলা হয় বনের রাজা। আমি সেই কথা বিশ্বাস করি।’
একথা শুনে চটে গেল একটা তাগড়া-জোয়ান বাঘ। তেড়েফুঁড়ে গিয়ে বলল, ‘তবে রে ব্যটা! মু-ু চিবিয়ে খাবো তোর। এর ঘটে দেখি গোবরও নেই। এ আমাদের বুদ্ধি দেবে কী?’
বাঘের তম্বিগম্বিতে ভড়কায় নি হাঁড়িচাছা শিয়াল। বরং মাথা উঁচু করে বলল, ‘তোমাদের বাপু বড্ড বেশি দেমাগ। কাউকে সহ্য করতে পারো না। এ সুবিধাটাই নিয়েছে দস্যুরা। সিংহদের রাজা বললাম এ কারণে, ওরা অনেক বেশি সামাজিক। সবাই একসাথে থাকে, একসাথে শিকার করে, একসাথে ভাগবাটোয়রা করে খায়। তোমরা বড্ড একাষেড়ে। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারো না। নিজেদের ছানাপোনাদের পর্যন্ত খেয়ে ফেলো। এমন বোকা জাতি দুনিয়ায় আর কোথায় আছে শুনি?’
বাঘেরা ভেবে দেখল কথা বড় মন্দ বলেনি হাড়িচাঁছা। তাদের ভেতর যদি একতা থাকত মানুষ তো কোন ছার, সিংহের দলও তাদের মুখোমুখি না হওয়ার জন্য প্রার্থনা করত। বাঘের সর্দার বলল, ‘বলো এখন আমাদের কী করতে হবে।’
হাড়িচাঁছা বলল, ‘বনের সব পশুদের একত্রিত করতে হবে।’ তারপর বাঘেদের বলল একদিন সবাই যেন একসাথে এসে দেখা করে।
রুপালি জোসনাঝরা এক পুর্ণিমা রাতে বনের পশুদের নিয়ে সভা করল হাড়িচাঁছা শিয়াল। বাঘেরা, মৌমাছিরা এলো, বনের আর সব পশুরা এলো। এলো না কেবল হরিণের পাল। বাঘের ভয়ে। তাদের বদলে এলো হরিণদের বন্ধু বানরের দল। হাড়িচাঁছা তাদের শিখিয়ে দিল কাকে কী করতে হবে।
একদিন দস্যুদের সর্দার চেলাদের নিয়ে বসে কুবুদ্ধি আঁটছিল। তার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। কোথা থেকে একটা বানর আচমকা লাফ দিয়ে এসে তার হাতের সিগারেটটা নিয়ে হাওয়া হয়ে গেল। প্রথমে হৈ হৈ করে চেঁচিয়ে উঠল দস্যুর দল। তারপর বেশ মজা পেয়ে হো হো করে ফেটে পড়ল অট্টহাসিতে। কিন্তু তাদের সেই হাসিখুশি মেজাজ মিইয়ে যেতে সময় লাগল স্রেফ দশ মিনিট। কারণ তাদের কুঁড়ে ঘরগুলো দাউ দাউ করে জ্বলছে তখন।
হয়েছে কী, হাড়িচাঁছার বুদ্ধিমতো বানরটা সিগারেটটা নিয়ে আড়মাচা বেয়ে চুপি চুপি ঢুকে পড়েছিল বনের ভেতর দস্যুদের অস্ত্রাগারে। সেখানে একটা বড় কাঠের বাক্স হাতবোমায় ভরা। আরো ভয়ংকরসব অস্ত্রে ভরা অস্ত্রাগারটা। বানরটা জ্বলন্ত বিড়িটা টুপ করে ফেলে দেয় বোমার বাক্সে। আগুনের স্পর্শ পেয়ে ফুঁসে ওঠে বোমার বারুদ ।
মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে সবগুলো কুঁড়ে ঘরে। দস্যুরা আগুনকে বাগ মানাতে না পেরে যে যেদিকে পারে পালাবার চেষ্টা করে। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারেনি। তৈরি হয়ে ছিল মৌমাছির দল। সময়মতো তারা জেঁকে ধরে দস্যুদের। বাঘের পালও ততক্ষণে এসে পড়েছে কাছে পিঠে। দু-চার জন দস্যু যদিও মৌমাছির দলকে ফাঁকি দিতে পেরেছিল তারা বাঘের চোখ এড়াতে পারল না। এরপরে যারা পালাতে পেরেছিল তাদের কিছু ধরা পড়ল সমুদ্রের কোস্টগার্ডদের হাতে, কিছু ধরা পড়ল বনরক্ষীদের হাতে।
সেদিনের পর থেকে হাড়িচাঁছার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল দূর থেকে আরো দূরান্তে। খবর পৌঁছে গেল হাড়িচাঁছার জন্মভূমির সেই মাঠেও। খবর শুনে সেই রগচটা কাঠঠোকরা বলল, ‘ওই শিয়ালটাই একদিন আমার তাড়া খেয়ে পলিয়েছিল।’ হাড়িচাঁছাকে ঠকিয়েছিল যে বানরটা সে তার ডানহাত ওপরে তুলে অনবরত মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, ‘আহা বেচারা! আমার কাছে রস খেতে চেয়েছিল, আমি দিইনি!’ হোৎকা ছুঁচোটা বেশ গর্বের সাথে বলল, ‘আমার জন্যই ওর নাম হাড়িচাঁছা হয়েছিল।’ আর হাড়গিলে বুড়ো শিয়াল গর্ব বলে বেড়ায়, ‘বনের-মাঠের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাণিটা আমার জাতভাই। আমরা বুহুদিন একসাথে থেকেছি।’


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আজকাল এরকম গল্প বিরল!!

দেবা ভাই
-----------------------------------------
'দেবা ভাই' এর ব্লগ

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
একেবারে বিরল নয় দাদা, পশ্চিম বঙ্গের লেখকরা হামেশাই লিখছেন। আমাদের ধ্রুব দা (ধ্রুব এষ) এবং পিনটু ভাইও লেখেন

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

কিছু বাঙালও ফাইক্কারা জিতলে গব্ব করিরা বলে, 'ওরা আমাদের ভাই, অনেকগুলো বছর এক সাথে ছিলাম!'

আমিও ফাইক্কাদের ভাই বলি, তবে *দির ভাই!!

দেবা ভাই
-----------------------------------------
'দেবা ভাই' এর ব্লগ

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

এই ধরনের মনোবৃত্তি যেদিন পুরোপুরি সাঙ্গ হবে সেদিনই আমরা সত্যিকারের স্বধীন হব। তার আগে নয়।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো গল্পটা। ভাবছি আমার ছেলেকে আজরাতে ঘুম পাড়ানোর সময়ে এই গল্পটা শোনাব।

লিখতে থাকুন।

-অয়ন

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
চেষ্টা থাকবে

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

পড়ে মজা পেলাম।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

কড়িকাঠুরে এর ছবি

চলুক

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

রংতুলি এর ছবি

আমিও ছেলেকে বলার মত একটা মজার গল্প পেলাম। অনেক ধন্যবাদ!

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
ছোটদের নিয়ে আমি অনেক অনেক স্বপ্ন দেখি

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

সত্যপীর এর ছবি

হাততালি

অসাধারণ। এইরকম আরো চাই!

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
এম্ব আরো লেখার ইচ্ছা আছে গো দাদা

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।