বনলতার দেশে

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল গাফফার রনি [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০৯/২০১৫ - ১২:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২০ আগস্ট, রাত সাড়ে ৯টা। কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছে শুনি ট্রেন সাড়ে পাঁচ ঘন্টা লেটে চলছে। আক্কেল গুড়ুম! এখন কী করি। মাঝে মাঝেই বৃষ্টির বাগড়া। বাসায় ফিরে আবার আসতে মন চাইল না। সাথে অক্ষয় কুমার মৈত্রয়ের রানী ভবানী বইটা নিয়েছিলাম। ভাবলাম স্টেশনে বসেই বইটা পড়া যাক। অনেক অজানা ইতিহাস সেখান থেকে বেরিয়ে এলো।
এমাসের শুরুতেই উত্তরবঙ্গ ভ্রমণের ভূত চাপে মাথায়। ইতিহাস তো আছেই। পাখি সংরক্ষণে ওদিকে অনেক কাজ হচ্ছে। ওগুলোর একটা আকর্ষণ ভেতরে ভেতরে অনুভব করছিলাম। ওখানে দুজন বন্ধু রয়েছে। নাটোরে রয়েছে পাখিপ্রেমী বন্ধু জুয়েল রানা। বগুড়ায় মিজানুর রহমান। তাদের সাথে যোগাযোগ করেই দিন তারিখ ঠিক হলো। প্রথমে যাবো বনলতার দেশে।

IMG_1870
রাত ১টা ৩০ মিনিটে কমলাপুর পৌঁছালো লালমনি এক্সপ্রেস। তখন ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। ট্রেনে উঠেই চোখে ঘুম লাগল। যতক্ষণে ফের চোখ মেললাম, ততক্ষণে সকাল হয়ে এসেছে। সূর্যের তখন গ্রহ-বৈগুন্য চলছে। শত চেষ্টা করেও মেঘের পরত ভেদ করে উঁকি দেবার সাধ্য তার নেই। ট্রেন তখন বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বদ্বারে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেন ছাড়ল। যমুনার বুকে তখন মেঘ আর জলীয় বাষ্পের খেলা। ঘোরলাগা একটা পরিবেশ। ট্রেনের জানালা দিয়ে যমুনার জলধোয়া শীতল বাতাস হু হু করে ঢুকছে। রাতে বৃষ্টির ভয়ে সবকটা জানালা বন্ধ ছিল, এখন শীতল বাতাসের লোভে সবগুলো খুলে দেওয়া হলো। যমুনার বুকে চর পড়ে একটা জংলা দ্বীপের মতো সৃষ্টি হয়েছে। জনহীন দ্বীপটা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
IMG_1858
কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেতু পার হয়ে ট্রেন ঢুকে পড়ল উত্তরবঙ্গে। চলন বিলের মাঝ দিয়ে চলেছে আঁকাবাঁকা ট্রেনলাইন। বর্ষায় দেশের বৃহত্তম বিল এখন টইটুম্বুর। যেন বঙ্গপোসাগরের একটা অংশ তুলে নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এখানে।
IMG_1931
IMG_1925

চারদিকে থৈ থৈ পানি। বিলের মাঝের গ্রামগুলো বর্ষাকালে পানিতে আটকা পড়ে। যেন ছেঁড়া ছেঁড়া দ্বীপ ভেসে রয়েছে অথৈই সাগরের বুকে। এ পথ আমার অচেনা নয়। আমাদের খুলনাগামী ট্রেনগুলোও এই পথে চলে। কিন্তু নতুন ভূমির দেখা পেলাম ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন থেকে।
IMG_1932

IMG_1895

IMG_1933

IMG_1941

IMG_1945
ডানে ঢুকে গেল একেবারে অচেনা এক দেশের উদ্দেশ্যে। মাঝপথে কত স্টেশন পড়ল। সবগুলোর নাম মনে রাখা সম্ভব হত না। তাই প্রায় প্রতিটা স্টেশনের নাম ফলকের ছবি তুলে রাখছি।

IMG_1948
সকাল আটটার দিকে ট্রেন পৌঁছল বনলতা সেনের দেশে। হাজার বছর ধরে পথ হাঁটা ক্লান্ত পথিকের মতো স্টেশন থেকে নেমে এলাম রাস্তায়, দুদণ্ড শান্তির জন্য। জুয়েল রানার গ্রামের বাড়ি যাব। নলডাঙ্গা উপজেলার শমসখোলসি গাঁয়ে। তার আগে মমিনপুর নামে ছোট্ট একটা বাজার আছে। সেখানেই জুয়েল রানার পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ইডা’র কার্য্যলয়। ওখানেই পেয়ে গেলাম জুয়েলকে। ছোটখাটো একটা মিটিং ছিল ওদের। এরপর সোজা জুয়েল রানার গ্রামে।
প্রথমেই একটা দোতলা কাঁচাবাড়িতে নিয়ে গেল জুয়েল। ওটা তাঁর শিক্ষক বিরল কুমারের বাড়ি। বিরল স্যারের বাড়িতেই আস্তানা গেঁড়েছে কয়েকশো শামুকখোল পাখি। পাখি দেখেটেখে সোজা জুয়েল রানার বাড়িতে। ততক্ষণে দুপুর দুটো। রাতে ট্রেনে ছিলাম, তাই গোসল হয়নি। বাড়ির পেছনেই টলটলে একটা পুকুর। সাঁতার দিয়ে গোসল করার লোভ সামলাতে পারলাম না। দুপুরের খাওয়ার পর বেরিয়ে পড়লাম আবার নাটোরের উদ্দেশ্যে। রানী ভবানীর রাজবাড়িতে।
এবার আর আগের পথে নয়। অন্যপথে নাকি হালতির বিল আছে। দর্শনীয় স্থান।

IMG_2216
অবশ্য পুরো এলাকটাকেই আমার বিলাঞ্চল বলে মনে হলো। আমাদের যশোর-কুষ্টিয়ার সমতটেও বিল-বাওড় আছে। বর্ষায় সেগুলো ছাপিয়ে যায়। ডুবিয়ে দেয় কৃষকের ফসলি জমি। কিন্তু এমন নিম্নভূমির পরিমাণ সমতটে নগন্য। ঘোর বর্ষাতেও উঁচু জমির সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। এদিকে তা নয়। উঁচু জমির দেখা সেই যমুনা ব্রিজ পার হবার পর আর পায়নি। সব জমি তলিয়ে গেছে বর্ষার পানিতে। ফসল বলতে শুধু ধান আর আখ। পানিতে অর্ধেক ডুবে শুধু মাথটাই উঁচু করে রেখেছে ধানেরা। আর আখের হাঁটুপর্যন্ত পানি।

IMG_2164

গাঁয়ের মেঠোপথ। তবে পাকা। এদিকে সমতটের মতো গ্রামগঞ্জে লোকাল বাসের আনাগোনা নেই। হয়তো জনসংখ্যার কম ঘনত্বের কারণে। তাই ব্যাটারি বা ইঞ্চিনচালিত ভ্যান, ভডভড ইঞ্জিনের নসিমন, করিমন আর ব্যাটারি চালিত অটোর সংখ্যা অনেক বেশি। গ্রামাঞ্চলে অবশ্য ভ্যানেরই আধিক্য। কিন্তু সেটাও মিলল না। তাই হাঁটতে হলো বেশ খানিকটা পথ।

IMG_2155

IMG_2150
সারদিন সূর্যের মুখ দেখিনি। সারাদিনই বা বলি কেন? কয়েক সপ্তাহই তো এমন চলছে। একটানা বৃষ্টি হচ্ছে না। কিন্তু সুর্য মুখ লুকিয়ে থাকছে সবসময়। রাস্তায় নামৈলাম। হঠাৎ করে সূর্য মেঘের পরত ছিন্নভিন্ন করে ফেটে পড়ল অট্টহাসিতে। সূর্য দেখা না দিলে উত্তর-পুবের হিসাবটা গড়মিলই থেকে যেত। নতুন জায়গায় গেলে আমি দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ি। এখানেও তাই হয়েছে। যেটাকে আমি পশ্চিম ভেবেছিলাম আদৌ সেটা পশ্চিম নয়। বিচ্যূতির পরিমাণ ১৮০ ডিগ্রি। অর্থাৎ পশ্চিমটা হয়ে গেল পূর্ব। বাকি দিক দুটোও বাধ্য হলো স্থান পরিবর্তন করতে।

IMG_2146

IMG_2159

ঝকঝকে রোদে হেসে উঠল নাটোরের জলজ মাঠ। সবুজের উজ্জ্বলতা বাড়ল। আকাশে নীল-সাদার এক অপুর্ব সম্মিলন। নাটোরের মেঠোপথে অন্য এক অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল তনুমনে। চারপাশে ইতিউতি করে পাখি খুঁজে চলেছি। কিন্তু আকাশে ঝাঁক ঝাঁক শামুকখোল ছাড়া অন্যপাখি তেমন চোখে পড়ল না। অবশ্য দোয়েল আর শালিকের অভাব নেই। আমাদের এলাকায় এই বর্ষাতেও হরেকরকম পাখির দেখা মেলে। এদিকে নেই, তার কারণ বোধহয় জলবদ্ধতা। ভূচর পাখিদের খাবারের অভাব।

IMG_2220

বলতে আপত্তি নেই আরও একটা জিনিস খুঁজে চলেছি-- পাখির নীড়ের মতো দুটি চোখ। পেলামও একজনকে। কিন্তু পাখি-প্রকৃতির দিকে যত সহজে ক্যামেরা তাক করা যায়, বনলতাদের দিকে ক্যামেরা তাক করা অত সহজ নয়। বনলতা বিরক্ত হলে খবর আছে। তাই সেই ঝুঁকিতে না গিয়ে প্রকজৃতিকন্যাদেরই ছবি তুলে গেলাম।

IMG_2177
এখানকার আরেকটা জিনিস ভালো লাগল। রাস্তার দুধারে খেজুর আর তালগাছের সারি। দেশের অন্য এলাকায় রাস্তার দুধার দখল করে স্থানীয় নেতারা দ্রুতবর্ধনশীল বিদেশি গাছ লাগায়। পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে ওসব বিদেশি গাছ। বিপরীতে নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়ায় তিনদিনে কতগ্রাম কত পথ পাড়ি দিলাম। রাস্তার দুধারে ছোট-বড়-চারা তালগাছের সারি মুগ্ধ করল। তালগাছ বাবুই ও বাতাসি পাখিদের অভয়ারণ্য।
IMG_2156

IMG_2202
ছোট্ট একটা বাজারে পেয়েছিলাম এক নৌকার কারিগরের দেখা। আপন মনে নৌকা তৈরি করছেন।

IMG_2199
তিন রাস্তার এক মোড়ে এসে একটা ব্যাটারিচালিত ভ্যান পেলাম। রাস্তা এদিকটায় খারাপ। ভাঙা ভাঙা। ঝাঁকি খেতে খেতে অনেকগুলো গ্রাম, হাট, মোড় পাড়ি দিলাম। সবগুলোর নাম মনে রাখা সম্ভব নয়। তাই যেখানে যে বাজার পেয়েছি চেষ্টা করেছি সেখানকার কোনও এক দোকানের সাইনবোর্ডের ছবি তুলে রাখতে।

IMG_2148

IMG_2139
একেবারে নতুন আসা এক জেলার গ্রাম। তবে ছবিগুলো চিরচেনা। রাস্তার দুপাশে মাঝে মাঝে বসতবাড়ি। ভেজা পাঠখড়ির ঝুঁটি শুকাতে দেওয়া হয়েছে বাড়ির পেছনে। কোথাও কোথাও আউস ধানের খড়ের গাদা। এ ছবি কি শুধু একংবিংশ শতাব্দির নাটোরের, নাকি গোটা বাংলার আবহমান কালের?
মাঝে মাঝে নদী, বিল, জলাশয়। নৌকা ছুটছে নানা কাজে। কবিগুরুর সোনার তরির সেই চরণ মনে পড়ে গেল--
চারি দকিে বাঁকা জল করছিে খলো।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়া মসীমাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবলো—

IMG_2230
অনেক আাঁকাবাাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে, অনেক গ্রাম-মাঠ পেরিয়ে অবশেষে পৌঁছুলাম পাটুল নামে এক বাজারে। এখানেই বিল হালতি অনন্য রূপ ধারণ করেছে। বর্ষায় এখানে একটা কৃত্রিম ঘাট তৈরি হয়। বড় বড় নৌকা, ট্রলার আর স্পিডবোট সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝি-মাল্লার দল হাঁকছে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে। সবার এক দাবি, তার নৌযানই সবার আগে ঘাট ছাড়বে।
চলনবিলের মতোই চারদিক থৈ থৈ করছে বিল হালতির পানিতে। দূরে একটা গ্রাম দেখলাম। তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে হালতির পানি। একটা বাড়ি চোখে পড়ল এতদূর থেকেও। চূড়া করে রাখা খড়ের গাদা, টিনের চাল, গাছপালার জটলা দেখা যাচ্ছে। বন্দে আলী মিয়ার সেই ছোট্ট স্বপ্নের এক গ্রাম যেন হাতছানী দিয়ে ডাকছে।

IMG_2233

বন্দে আলি মিয়ার সেই ছড়াটা মনে আছে? --
‘আমাদের ছোটগাঁয়ে ছোট ছোট ঘর
থাকি সবে মিলেমিশে নাহি কেহ পর....’

IMG_2238
ইচ্ছে ছিল নৌকায় বা ট্রলারে চড়ে দ্বীপের মতো গ্রামটা দেখে আসব। কিন্তু হাতে সময় একেবারেই নেই। ৫ টার পর রাজবাড়ী বন্ধ হয়ে যায়। অতএব স্পিডবোটেই উঠতে হলো। জনপ্রতি ৫০টাকা ভাড়া। আমরা চারজন। জুয়েল রানা, জুয়েল রানার ভাগ্নে জেম, জেমের বন্ধু সঞ্জয়। সঞ্জয় পাটুল গাঁয়েরই ছেলে।

IMG_2239

বোট ছাড়ল। আকাশে তখন মেঘের ঘনঘটা। যেকোনও সময় বৃষ্টি নামতে পারে। তবুও আমাদের উৎসাহে খামতি নেই। কিন্তু হারামিগিরি করল বোটওয়লা। বিলের মাঝখান থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে এলো ঘাটে। জুয়েলের সাথে তর্কাতর্কি লেগে গেল। কিন্তু আমি ওকে শান্ত করলাম। সময় চলে যাচ্ছে।
এবার ব্যাটারি চালিত অটোতে নাটোরে পৌঁছুলাম।

IMG_2238

নাটোরে যতটুকু ঘোরাফেরা করেছি, তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি বনলতাকে। সে কোনও মানুষ না হোক, কোনও প্রতিষ্ঠানের নাম অন্তত হবে। কিংবা কোনও রাস্তার নাম। অন্তত জীবননানন্দের নামে একটা রাস্তা হওয়া উচিৎ। হতাশ হতে হলো। কোথাও জীবনানন্দ কিংবা বনলতার চিহ্নমাত্র নেই।

IMG_2332
পরদিন মন খারাপ করে নাটোর ছাড়ছিলাম। রিকশায় চেপে চলেছি বাস স্ট্যান্ডের দিকে। হঠাৎ এক গলির ভেতর দেখি বনলতা দাঁড়িয়ে আছে স্বগর্বে। বনলতা উচ্চবালিকা বিদ্যালয়। ঠিক জায়গায় বসানো হয়েছে বনলাতার নাম। আর কোনও বনলতার দরকার নেই। যা পেয়েছি এটাই যথেষ্ট। আমার নাটোর ভ্রমণ সার্থক।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

জনহীন দ্বীপটা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

ছবি দেখেই যেতে ইচ্ছে করছে; এরকম একটা জনমানবহীন দ্বীপে রাত কাটাতে পারলে জীবনের অনেক স্বপ্নের একটি পুরো হত!

বনলতা বিরক্ত হলে খবর আছে।

প্রতিদিন যত ছবি তুলতে চাই, তার একটা বড় সংখ্যকই ছবি হয়ে উঠে না, শুধু এই ভয়ের জন্যই! একদিক থেকে ভালই, বনলতারা মনের ছবিতেই বাস করুক!
।।।।।।।।।
অনিত্র

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

সাবধান, ও চেষ্টাটিও করবেন না।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

মন মাঝি এর ছবি

নাটোরে যতটুকু ঘোরাফেরা করেছি, তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি বনলতাকে। সে কোনও মানুষ না হোক, কোনও প্রতিষ্ঠানের নাম অন্তত হবে।

এই কবিতার আকবর আলি খানের ইন্টারপ্রিটেশন ধরলে আপনি মনে হয় ভুল জায়গায় খোঁজাখুজি করেছেন! দেঁতো হাসি চোখ টিপি

****************************************

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

রাণী ভবানীর শ্বশুর মহাশয়েরা নাটোর শহরের গোড়াপত্তন করার পর থেকে বহুদিন পর্যন্ত এটা ছিল বাংলার অন্যতম প্রমোদ নগরী। অনেক আগে থেকেই সারা দেশের বিত্তশালী দুষ্ট লোকেরা বনলতা সেনদের খোঁজে চলে আসতো নাটোরের পানে। স্বাধীনতার পরও নাটোরে দেখা মিলত নৃত্যগীতে পারদর্শী পেশাদার ডানাকাটা পরীদের। আকবর আলি খানের ইন্টারপ্রিটেশন যথার্থ বলেই আমার বিশ্বাস।

মন মাঝি এর ছবি

হতে পারে। শুধু একটি বা দু'টি মাত্র শব্দের উপর ভিত্তি করে আমার পক্ষে নিশ্চিত মত দেয়া সম্ভব না বা কবির মনের কথাও বলা সম্ভব না। তবে সম্ভাবনা আছে এটুকু আমি মানি। এটা যদি সত্য হয়ই, তাহলে তাকে আমি শুধু দুঃখজনকই বলবো না, বলবো রীতিমত - ট্রাজিক! অসামান্য এক কবিতার, বাংলা কাব্যজগতের এক উজ্বলতম রত্ন বা মণির ট্রাজিক পরিণতি! মন খারাপ

****************************************

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

বনলতা কে? এই প্রশন্টাই কবিতার সৌন্দর্য। খামোখা সত্যে-মিথ্যা দিয়ে দিয়ে পাঠকের কিছু যায় আসে না। আকবর আলি খানের বইটা পড়িনি, পড়তেও চাই না। বনলতা সেন যে রহস্যটুকু বুকের ভেতর এঁকে দিয়েছ তা আজীবন পুষে রাখতে চাই। আব্দুল্লাহ এ.এম. ভাই, রাণী ভবানীর রাজবাড়ী নিয়েও একটা পোস্ট দেওয়ার ইচ্ছে আছে।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

এটা যদি সত্য হয়ই, তাহলে তাকে আমি শুধু দুঃখজনকই বলবো না, বলবো রীতিমত - ট্রাজিক!

কি সত্য হওয়ার কথা বলছেন? আকবর আলি খান "বনলতা সেন একজন রুপোপজীবীনি হতে পারেন", এমন যে সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেটা? সে প্রেক্ষিতের ক্ষেত্রে কবিতার নায়ক তো আর কবি স্বয়ং নন, বৌদ্ধ দর্শনের অনুসারী কোন এক অষ্টমার্গ সাধন প্রয়াসী পুরুষ। যদি সেটা হয়ও, তবু বনলতা সেনের মহাত্ম কি কিছুমাত্র ক্ষুণ্ণ হয়? জীবনের সকল হিসেব নিকেশ চুকে যাওয়ার পরেও "মুখোমুখি বসিবার" মত পরম নির্ভরতার আধার এক নারী, একজন পুরুষের কাছে তার চেয়ে আকাঙ্খিত আর কি হতে পারে?

'বনলতা সেন' কবিতাটির তিন ধরনের পাঠ প্রচলিত আছে-
একরকম পাঠে এ কবিতায় উচ্চারিত শব্দরাজি শুধুই অলঙ্কার মাত্র, এ সবের আলাদা কোন ভাব বা অর্থ খুঁজতে যাওয়া বৃথা। বিদিশা, শ্রাবস্তি, বিদর্ভ, মালয় সাগর, বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগত, এ সবের বিশেষ কোন অর্থ নেই, শব্দের চিত্রময় কারুকার্যই এ কবিতার বৈশিষ্ট। এ কবিতার গভীর কোন ভাবও নেই।

দ্বিতীয় অন্যরকম পাঠে অধিকাংশ পাঠক বনলতা সেন কে কবির প্রেয়সী হিসেবে ধরে নিয়েছেন, কবিতায় ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দ তাঁরা স্থান কাল পাত্রের প্রাসঙ্গিক বিশেষন হিসেবে ধরে নিয়েছেন, যদিও প্রাসঙ্গিক অনেক প্রশ্নের উত্তর তাঁরা এড়িয়ে যান।

তৃতীয় অন্যরকম পাঠে রুপকাশ্রয়ী এ কবিতাটি এক গভীরতর ভাবের উপলব্ধি। সামাজিক প্রতিকূল অবস্থান সত্ত্বেও বনলতা সেন সেখানে মহাকালের শাশ্বত এক নারী, যার স্নিগ্ধ মমতা পুরুষের জন্য চিরকালীন ভরসার মূর্ত প্রতীক।

মন মাঝি এর ছবি

তৃতীয় অন্যরকম পাঠে রুপকাশ্রয়ী এ কবিতাটি এক গভীরতর ভাবের উপলব্ধি। সামাজিক প্রতিকূল অবস্থান সত্ত্বেও বনলতা সেন সেখানে মহাকালের শাশ্বত এক নারী, যার স্নিগ্ধ মমতা পুরুষের জন্য চিরকালীন ভরসার মূর্ত প্রতীক।

আমার পাঠটাও খানিকটা এরকমই (তবে 'মহাকালের শাশ্বত এক নারী'-র বদলে এটা 'ব্যক্তিবিশেষ' হতেও অসুবিধা দেখি না)। তবে উপরে রনি ভাই আসলে আরও অনেক সুন্দরভাবে বলেছেন - বনলতা কে? এই রহস্যমেদুর নিরন্তর প্রশ্নটাই আসলে এই কবিতার আসল সৌন্দর্য। দিবালোকের মতো ফকফকা চূড়ান্ত উত্তরে হয়তো না। সেজন্যেই রনির পরের কথাটাও আমার মধ্যে অনুরণন তোলে - "বনলতা সেন যে রহস্যটুকু বুকের ভেতর এঁকে দিয়েছ তা আজীবন পুষে রাখতে চাই।"

তবু বনলতা সেনের মহাত্ম কি কিছুমাত্র ক্ষুণ্ণ হয়? জীবনের সকল হিসেব নিকেশ চুকে যাওয়ার পরেও "মুখোমুখি বসিবার" মত পরম নির্ভরতার আধার এক নারী, একজন পুরুষের কাছে তার চেয়ে আকাঙ্খিত আর কি হতে পারে?

মাহাত্ন্য ক্ষুন্ন হয় বৈকি! এই তথাকথিত "পরম নির্ভরতা"-টা যদি নগদানগদ পয়সা ফেলে তবেই কিনতে হয়, তাহলে আর সেটা রোমান্টিক "পরম নির্ভরতা" থাকে না - 'ফেল কড়ি মাখো তেল' টাইপের মাংসপিণ্ডের প্রতিভূ হয়ে যায়। এত ভাবোচ্ছাসপূর্ণ অপূর্ব সুন্দর নাটকীয় চিত্রকল্পধারার ক্লাইম্যাক্সে এসে কবি যদি বাজারে ঝুলিয়ে রাখা কড়ি ফেলে কেনা এক তাল কাঁচা মাংসপিণ্ড আমাদের হাতে ধরিয়ে দেন, তাহলে সেটা আমার কাছে চূড়ান্ত এন্টি-ক্লাইম্যাক্টিক প্রতারণা বলেই বোধ হয়! নির্ভরতা -টতা কিছুই অবশিষ্ট থাকে না, পুরো কবিতাটাই একেবারে চটে যায়। কথিত 'এক মন দুধে এক ফোঁটা চোনার' মতই, ঐ একটুখানিই সবটা নষ্ট করে দেয়ার মত।

আর শেষের সেই অপূর্ব ভাবগর্ভ আবহপূর্ণ লাইনদুটি?

সব পাখি ঘরে আসে—সব নদী—ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

- পয়সা দিয়ে যদি নগদে কিনতেই হয়, তাহলে আমি তো বলবো এর চেয়ে পাঁচশ পাওয়ারের লাইট জ্বেলে ফকফকা আলোয় ধুম-ধাড়াক্কা হিন্দি গান ছেড়ে দিয়ে, হাতে এক বোতল বাংলা আর কিছু মাংসের চাট নিয়ে বসে যাওয়াই ভালো, খামাখা ন্যাকামি না করে। তারপর আর কি, উরু চাপড়ে খ্যা খ্যা করে হাসতে হাসতে শুরু হবে মাস্তি, হেড়ে গলায় কবি বলে উঠবেন - 'নাচো মেরে ময়না....! ♪ ♫ ♪

"থাকে শুধু কোমর দুলাইয়া নাচিবার, বনলতা সেন!"

কি বলেন? এটাই কি বেশি মানানসই আর সৎ হবে না এক্ষেত্রে? চিন্তিত
এটাকেই আমি এযাবৎ একদম অন্যভাবে প্রতিভাত একটা কবিতার সম্ভাব্য ট্রাজিক পরিণতি বলছিলাম। নিতান্তই ব্যক্তিগত অনুভূতি, কাউকে একমত হতে হবে এমন কোনোই আবদার নেই!

****************************************

হিমু এর ছবি

ফ্রিকোনমিক্সে পড়েছিলাম, শিকাগোতে কৃষ্ণাঙ্গ বারবণিতাদের ওপর একটা জরিপ চালানো হয়েছিলো, সেখানে একটা বড় অংশ জানিয়েছিলো, খদ্দের তাদের পয়সা দিয়েছে শুধু কথা বলার জন্য। অন্ধকারে মুখোমুখি বসে থাকার জন্যও হাইপোথেটিক্যাল বারবণিতা বনলতা পয়সা পেতে পারে।

তবে কবিতার শেষ লাইনের আগের লাইনে দেখুন, ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন। বনলতা সেন যদি সব লেনদেনের পরও মুখোমুখি অন্ধকারে বসে থাকে, তাহলে সে কি যাজিকা না বারবণিতা, সে প্রশ্ন নিরর্থক।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

তবে 'মহাকালের শাশ্বত এক নারী'-র বদলে এটা 'ব্যক্তিবিশেষ' হতেও অসুবিধা দেখি না)। তবে উপরে রনি ভাই আসলে আরও অনেক সুন্দরভাবে বলেছেন - বনলতা কে? এই রহস্যমেদুর নিরন্তর প্রশ্নটাই আসলে এই কবিতার আসল সৌন্দর্য।

শুধু আপনি এবং রনি ভাইই নন, সিংহভাগ বাঙ্গালীই বিষয়টা এভাবেই দেখেন- বনলতা সেন হয় কবির গোপন কোন প্রেয়সী, নয়তো এটি একটি অনন্য সাধারন প্রেমের কবিতা, সে কবিতায় নায়িকার নাম বনলতা সেন। যদিও প্রাসঙ্গিক বেশ কিছু প্রশ্ন থেকে যায়, যেমন-
"- কবিতায় বিদিশা, শ্রাবস্তি, বিদর্ভ, নাটোর, সুনিদ্রিস্টভাবে এই ঐতিহাসিক স্থানগুলোর নাম ঠিক কি কারনে ব্যবহার করা হয়েছে?
-"সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি"- কে, আসলে কোথায় ঘুরেছেন, কেনই বা ঘুরেছেন?
-"বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে সেখানে ছিলাম আমি", এই ধুসর জগতটি আসলে কি? তিনি কেন, কিভাবে সেখানে ছিলেন?
-"চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন", ব্যাপারটি আসলে কি?
-'আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো" সনাতনী ধারায় প্রেমিকার সাপেক্ষে কি এমন মন্তব্য করা যায়?"

কিন্তু আলপটকা এ সব প্রশ্ন তুলে সব রস মাটি করার পাত্র তারা নন।

এই তথাকথিত "পরম নির্ভরতা"-টা যদি নগদানগদ পয়সা ফেলে তবেই কিনতে হয়, তাহলে আর সেটা রোমান্টিক "পরম নির্ভরতা" থাকে না

আপনি সেরকম ভাবতেই পারেন, তবে কবিতায় সে রকমটি ভাবা হয় নি। কোন রকম পাঠেই সে রকম ভাবা হয় নি। এমন কি যে রকম ভাবনায় তাঁকে বারবনিতা বলে মনে করা হয়েছে, সেখানেও নয়।
যে রকম পাঠে বনলতা সেন কে একজন বারবনিতা বলে মনে করা হয়েছে, সেখানে কবি নিজে কিংবা তাঁর সমসাময়িক অন্য কোন পুরুষ এ কবিতার নায়ক নন। কবিতার নায়ক অষ্টমার্গ সাধনার মাধ্যমে নির্বাণ প্রত্যাশি বৌদ্ধ দর্শনের অনুসারী একজন চিরকালীন পুরুষের প্রতীক। আর বনলতা সেনও সমসাময়িক কোন নারী নন, তিনিও চিরকালীন এক শাশ্বত নারীর প্রতিভূ(যদিও সামাজিক বিচারে বারবনিতা)। শব্দের অসাধারন এবং অভিনব প্রয়োগের কারনে অনেকের কাছে কবিতার স্থান কাল পাত্র সমসাময়িক বলে মনে হয়েছে মাত্র। আর বারবনিতা হয়েছেন বলেই তাঁর শাশ্বত নারীধর্মের বিলুপ্তি ঘটে নি। জন্ম জন্মান্তরের কঠোর সাধনার মাধ্যমে নির্বাণ লাভের যে অবিরাম প্রচেষ্টা, একদিকে বনলতা সে প্রচেষ্টায় বাধা স্বরূপ, আবার অন্যদিকে জীবনপথের ক্লান্ত পথিকের সে অন্তিম আশ্রয় স্বরূপ।

মন মাঝি এর ছবি

তবে কবিতায় সে রকমটি ভাবা হয় নি। কোন রকম পাঠেই সে রকম ভাবা হয় নি।

এই দু'টি বাক্য মোটেই সমার্থক না। হাসি

আর বারবনিতা হয়েছেন বলেই তাঁর শাশ্বত নারীধর্মের বিলুপ্তি ঘটে নি।

একথা আমি কোথাও অস্বীকার করিনি। আমার "মাংসপিণ্ড" শব্দটার ব্যবহার আপনাকে বিভ্রান্ত করেছে মনে হয়।

কবিতার নায়ক অষ্টমার্গ সাধনার মাধ্যমে নির্বাণ প্রত্যাশি বৌদ্ধ দর্শনের অনুসারী একজন চিরকালীন পুরুষের প্রতীক। আর বনলতা সেনও সমসাময়িক কোন নারী নন, তিনিও চিরকালীন এক শাশ্বত নারীর প্রতিভূ(যদিও সামাজিক বিচারে বারবনিতা)।

আপনি কি আকবর সাহেবের বইয়ের ভিত্তিতে এই ব্যাখ্যাটা দিচ্ছেন? আমি মূল বইটা পড়িনি। শুধু প্রঃ আলোর ঐ রিভিউটাই পড়েছি। ওখানে এত কথা নেই। তিনি কি তার এই পাঠের যাথার্থ্য বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন তার বইয়ে, উত্তর দিয়েছেন আপনার করা সব প্রশ্নগুলির? প্রমাণ করতে পেরেছেন জীবনানন্দের মনে আসলেই কি ছিল এবং কিভাবে সেটা বোঝা গেল? সেক্ষেত্রে বইটা পড়ার আগ্রহ থাকল।

****************************************

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। তিন ধরনের যে পাঠের কথা বলেছি, তার তিন নম্বরটির একজন প্রতিনিধি জনাব খান। প্রশ্নগুলি আমার নয়, তাঁরই। উত্তরও তিনি দিয়েছেন। আমার ধারনা, বনলতা সেন কবিতাটির যারা ভক্ত, আকবর আলির লেখা তাঁদের ভাল লাগবে।
প্রসঙ্গক্রমে নিচে সচলে সহ ব্লগার রোমেল ভাইয়ের অনেক আগে লেখা একটি প্রতিক্রিয়া এবং আরও আগে হিমু ভাইয়ের লেখা একটি অনবদ্য স্যাটায়ার এর লিঙ্ক প্রদান করছি, পড়ে দেখতে পারেন।

রোমেল ভাই

হিমু ভাই

তারেক অণু এর ছবি

আকবর আলি খানের ইন্টারপ্রিটেশন অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক মনে হয় নি, বিশেষ করে চিল আর ঈগল নিয়ে উনি জঘন্য প্যাচ লাগিয়েছেন। অন্য কয়েকটা নিয়েও সন্দেহ থাকছে বিশদ-

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আমার তাই মনে হচ্ছে

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

নাটোর চমৎকার জায়গা। আবারও যেতে ইচ্ছে করছে।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আসলেই চমৎকার জায়গা। আরও আবার যেতে ইচ্ছে করছে।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ কিছু দিন পর আজ সচলে সচল হলাম…আহ কি সুখ! নাটোর বেড়িয়ে এলাম।
এ্যানি মাসুদ

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আমিও অনেকদিন পর সচলে লিখলাম।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

তারেক অণু এর ছবি

বলেন কী ! নাটোর গেলেই তো শুধু বনলতা নামের সব কিছু দেখি- ফিলিং ষ্টেশন, গ্যারেজ, স্কুল, দোকান! মাঝে মাঝে মেজাজও খারাপ হয়।

ভ্রমণ চলুক, পাখিদের নিয়ে লেখা পড়ার অপেক্ষায় আছি-

নীড় সন্ধানী এর ছবি

নাটোরের বনলতা সেন কবিতায় আসলেও বাস্তবে তার অস্তিত্ব কখনো ছিল কিনা এই বিষয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। আকবর আলী খানের বইটা আমি পড়িনি, কিন্তু তিনি বনলতা নিয়ে যে ইঙ্গিত দিয়েছেন সেটি ঠিক হবার সম্ভাবনা দেখি না। কেননা প্রভাতকুমার দাশ, ভূমেন্দ্র গুহ, ক্লিনটন বি সিলি সহ যারা জীবনানন্দের জীবন ও সাহিত্যের উপর লেখালেখি করেছেন তাদের অন্তত অর্ধডজন জীবনীপুস্তক পড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার, যেখানে বনলতা সেনের অস্তিত্ব নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তাতে ওরকম কিছু পাইনি। শুধু একটা জায়গাতে জীবনানন্দের সাথে আলাপে অশোক মিত্রের একটা অভিজ্ঞতার বর্ননা পাই। সেই অভিজ্ঞতার বর্ননা কালের কন্ঠেও ছাপা আছে দেখে লিংকটা দিলাম।

অশোক মিত্র একবার জীবনানন্দকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বনলতা সেন নামটির উৎস কি। জীবনানন্দ জানিয়েছিলেন, সেই সময় আনন্দবাজার পত্রিকায় মাঝেমধ্যে নিবর্তক আইনে বন্দিরা কে কোন কারাগারে আছেন বা কোন জেল থেকে কোন জেলে স্থানান্তরিত হলেন, সেসব খবর বেরোত। হয়তো ১৯৩২ সাল হবে, নয়তো তার পরের বছর, বনলতা সেন নামে এক রাজবন্দি রাজশাহী জেলে আছেন, খবরটা তাঁর চোখে পড়ে। সেখান থেকে নামটি তিনি পছন্দ করে ফেলেন। সেই নারীকে তিনি কখনো দেখেননি, চেনার কোন প্রশ্নই আসে না।

এই সংক্রান্ত দ্বিতীয় একটি বয়ান পাওয়া যায়। সেটিও পড়ে দেখা যায়। এই গল্পটি অবশ্য আমি জীবনানন্দের কোন জীবনী গ্রন্থে পাইনি। তাই বলতে পারছি না কতটা সত্যি। তাছাড়া জীবনানন্দ কখনো নাটোর গেছেন সেরকম ঘটনাও পাইনি।

আসল ব্যাপার হলো বাস্তবে বনলতা সেন কবিতায় লেখা একটি নাম, যে নামের পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য এক নারী, যে নারীর খবর শুধু জীবনানন্দই জানতেন। জীবনানন্দের জীবনে একাধিক নারীর অস্তিত্ব বিদ্যমান। তাঁর ডায়েরিতেই নানানভাবে তাদের ইঙ্গিত আছে। একেক কবিতায় তাঁরা একেক ভাবে এসেছে। তবে বনলতা সেন নামটি কবিতা বাদেও এসেছে তাঁর লেখা উপন্যাস 'কারুবাসনা'তেও। কারুবাসনা জীবনানন্দের কিছুটা আত্মজৈবনিক উপন্যাস। সেখানেও তিনি খুঁজে ফিরেছেন 'বনলতা সেন' নামের নারীর পেছনের নারীটাকে। ওই নারীকে গবেষক বা আমরা কেউই চিনি না।

আকবর আলী খান সাহেব বনলতা সেনের চরিত্রকে নিয়ে যা ভেবেছেন তা তার অতিকল্পনা মাত্র।
এই কাল্পনিক চরিত্রটিকে নিয়ে খামাকা অসুন্দর বিতর্ক না করাই কবিতাটির প্রতি সুবিচার করা হবে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আপনি যদি "বনলতা সেন" কবিতাটির কিংবা কবি জীবনানন্দ দাসের ভক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আকবর আলি খানের চাবিকাঠির খোঁজে বইটি পড়ে দেখতে পারেন। তাঁর লেখা থেকে আমি যতদূর বুঝেছি, তাতে মনে হয়েছে আকবর আলি খান নিজেও "বনলতা সেন" কবিতাটির এবং কবি জীবনানন্দ দাসের একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত।

আকবর আলী খানের বইটা আমি পড়িনি, কিন্তু তিনি বনলতা নিয়ে যে ইঙ্গিত দিয়েছেন সেটি ঠিক হবার সম্ভাবনা দেখি না।

বইটি না পড়লে বনলতা সেনকে নিয়ে তিনি আসলে কি বলেছেন তা বোঝা সম্ভব নয়, আপনি বোধ হয় ভুল বুঝেছেন।

এই কাল্পনিক চরিত্রটিকে নিয়ে খামাকা অসুন্দর বিতর্ক না করাই কবিতাটির প্রতি সুবিচার করা হবে।

এই উক্তি যদি আকবর আলি খান সম্পর্কে করে থাকেন, তাহলে আবার বলবো বইটি না পড়ার কারনে আপনি ভুল বুঝেছেন। তিনি বনলতা সেন চরিত্রটির কোনরকম অসম্মান করেন নি।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

বাপ রে!! বিশাল আলোচনা।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

Barun Malakar এর ছবি

বনলতা হলো জীবনানন্দের মোনালিসা -- আমাদের কাছে ?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।