বাংলার তরু লতা গুল্ম ৪৩ : গোবুরা

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল গাফফার রনি [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১৫/০৬/২০১৫ - ৪:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

DSC00233
বর্ষায় বান ডাকে প্রকৃতিতে। ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে অঝরে ঝরে বৃষ্টি। সবুজে সবুজে ছেয়ে যায় প্রকৃতি। ভাঁট-আশশ্যাওড়ার দাপট পথের দুধারে। আকন্দ তো সারা বছরই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে বেগুনি সাদা ফুলের গয়নায় সেজে। বনওকড়ার চারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে সবুজের মিছিলে। কিন্তু কিছু উদ্ভিদ একেবারে নীরবে-নিভৃতে চুপটি করে মাথা তুলে দাঁড়ায় সবুজের কোন্ গহীন কোণে। অনাদর অবহেলায় কখন বেড়ে ওঠে তার হদিস রাখে না কেউ। কিন্তু প্রয়োজন হলেই খোঁজ পড়ে। ওষুধ বানাতে হবে না! এখন তো ওদের বড্ড কদর।

DSC00689
মানুষ বড় স্বার্থপর। খুব কম মানুষই নিঃস্বার্থভাবে বুনোগাছপালাকে ভালোবাসে। কেউ কেউ দরদ দেখায় ঔষুধি গুণের কারণে। ও দরদের কোনও মানে হয় না। গাছের অঙ্গহানী করে নিজের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার ভেতরে কি একবারও অপরাধবোধ কাজ করে না?
গোবুরা বড্ড অবহেলিত উদ্ভিদ। যেখানে সেখানে এর বাড়-বাড়ন্ত চোখে পড়ে। বর্ষায় মখমলের মতো নরম পাতাগুলোর বৃষ্টি ধোয়া সৌন্দর্য কারও চোখে পড়ে না। চোখে পড়ে গরু-বাছুরের অসুখ হলে। ছোটবেলায় দেখেছি গরুর বদ হজম হলে কিংবা তড়কা হলেও গণহারে গোবুরার গাছ নিধন করে গরুর চিকিৎসা করতে। মাঝে মাঝে ওতেই কাজ হতে দেখেছি। তবে বেশিরভাগই ব্যর্থ। দোষ গোবুরার নয়, দোষ ভুল চিকিৎসার। গোবুরা আর গরু সেই ভুল চিকিৎসার নির্মম বলি।

DSC00931
শরৎ-হেমন্তে গোবুরা যখন ফুলে ফুলে শোভিত হয়ে প্রকৃতিকে বেগুনি-নীল দ্যুতিতে ভরে তোলে। তার দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। অথচ একটু ভালো করে খেয়াল করলেই নজরে পড়ে গোবুরার অসাধারণ রূপ। প্রতিটা ডালের মাথায় একগুচ্ছ পাতা আর কুড়ি ভরা একগুচ্ছ মঞ্জরি। কুড়ি ভেদ করে বেগুনি সাদা ফুলের ঝিলিক মন জুড়িয়ে দেয়। শুধু দরকার ওই দেখার চোখটা।

DSC01219
গোবুরা বর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। বারোমাসি। তবে বর্ষাকালেই বেশিরভাগ চারা জন্মায়। সাধারণ পরিত্যাক্ত জমিতে, বাছড়া, আম-কাঁঠালের বাগানে, পথের দুপাশে-- যেখানেই একটু জায়গা পায় সেখানেই জন্মায় গোবুরা । গোবুরা গাছ তিন-চার ফুট লম্বা হয়। তবে উর্বর মাটিতে জন্মালে ছয়-সাত ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কা- নরম, তবে সোজা। হেলেপড়া ভাব নেই। কাণ্ডের গোড়া থেকেই ডালপালা বের হয়। পাশাপাশি অনেকগুলো গোবুরা এক সাথে বেড়ে ওঠে। তাই সেখানে গোবুরার ঝোপ দেখা যায়।

DSC00753
গোবরার কাণ্ড সবুজ রঙের। তবে গোলাকার নয়। চৌকোণো আকৃতির। কাণ্ড খুব নরম তাই সহজেই ভেঙে বা মচকে ফেলা যায়।

DSC00693
গোবুরার পাতা সবুজ রঙের। পান আকৃতির। পাতার কিনারগুলো খাঁজকাটা। পানের মতো এর পাতারও শীর্ষফলক থাকে। পানের পাতার মতো গোবুরার পাতা মসৃণ নয়। পাতলাও নয়। পাতা বেশ পুরু। নরম। মখমলের মতো। পাতার দৈর্ঘ্য বোঁটার গোড়া থেকে শীর্ষফলক পর্যন্ত ৫-৬ ইঞ্চি। প্রস্থ সাড়ে তিন থেকে চার ইঞ্চি। পাতায় কুট গন্ধ আছে। তাই গরু-ছাগলের দ্বারা সাবাড় হবার ভয় থাকে না। ভয় হাতুড়ে কবিরাজদের নিয়ে। এরা সুযোগ পেলেই গোবুরার পাতা ও শিকড় তুলে বৈদ্যগিরি ফলায়।

DSC01210
গোবুরার ডাল ও কাণ্ডের আগার দিকে মঞ্জুরি বের হয়। মঞ্জুরি বহুপুষ্কপ ও গুচ্ছাকৃতির। প্রতিটা পাতায় গোড়ায় একগুচ্ছ মঞ্জুরি ঘিরে থাকে। ডাল বা কা-কেই মনে হয় আস্ত একগুচ্ছ মঞ্জুরি। তার ভেতর থেকে চারদিকে পাতা বেরিয়ে থাকে। মঞ্জুরিগুলো ত্রিকোনাকার প্যাকেট আকৃতির। প্রতিটা প্যাকেট থেকে একটা করে ক্ষুদ্র বেগুনী ফুল বের হয়।

DSC00089
ফুল লম্বাটে। এক পাপড়ি বিশিষ্ট। ৭-৮ মিলিমিটার লম্বা। ফুল পতঙ্গ পরাগায়ী। তাই মধু থাকে ফুলে। ছোট মাছি, মৌমাছি ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গের মাধ্যমে এদের পরাগায়ন ঘটে।

DSC00091
পরাগায়নের পর ফুল শুকিয়ে ঝরে যায়। তখন মঞ্জুরির ওই প্যাকেটগুলো ফলে পরিণত হয়। খুব ছোট ফল। ২ মিলিমিটার আকার হবে ওইসব ফলের। ফলের রং সবুজ। শুকিয়ে গেলে প্যাকেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে কাল রংয়ের বীজ। বীজ সরিষাদানার সাইজের। দ্বীবীজপত্রি।

DSC00691
গোবুরার স্থানীয় নাম : গোবরে ফেলা, গোবুরা।
ইংরেজি নাম : Malabar catmint.
বৈজ্ঞানিক নাম : Anisomeles indica.

বাংলার তরু লতা গুল্ম-৪২


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

[ প্রথম প্যারা দু'বার এসে গেছে ]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

চলুক
ভাই এর ঔষধি গুণটা কি?

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আমি কোনও উদ্ভিদের ঔষধি গুণ নিয়ে লিখতে চাই না, সাদিয়া।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

লেখার প্রথমদিকে মানুষের চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার কথা জেনে প্রশ্নটা করেছিলাম। ভেবেছি, তাহলে কি খারাপ আছে বা অন্ধবিশ্বাস কি আছে বা ভাল কি আছে? যাই হোক আপনি যেভাবে যা নিয়ে লেখেন, লিখুন।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

খুব চেনা, নামটা জানা ছিলো না। ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

সবাই মনে হয় চেনে। নাম জানে খুব কম লোকেই।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

Jamil  এর ছবি

এটার আরেকটা আঞ্চলিক নাম হচ্ছে তোকমা। কোষ্ঠ কাঠিন্য রোগে এর পরিপক্ক বীজ পানিতে ভিজিয়ে পান করলে উপকার পাওয়া যায়।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

তোকমা আর গোবরা এক নয় জামিল ভাই-- এখানে দেখুন তোকমা

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

শাহীন হাসান এর ছবি

খুব ভাল লেখা, ভাল লাগলো অনেক ।। এটাই তো প্রকৃত সবুজসূত্র ।।।
শুভেচ্ছা নিন ।।

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকুন।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার "বাংলার তরু লতা গুল্ম " সিরিজের রেগুলার পাঠক আমি। এই সিরিজ না পড়লে "মাকাল ফল" জীবনেও দেখা হত না। অনেক পাখিও আপনার লেখায় প্রথম দেখেছি। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
তবে ফেসবুকে আপনার থিওরি অফ রিলেটিভিটি পড়তে গিয়ে বেশ হোচট খেলাম। যেমন ১৪ তম পর্বে দৈর্ঘ্য সংকোচনের অতি সরলীকরণ করে এর ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। স্পেশ্যাল রিলেটিভিটিতেই যদি ভুল থাকে, জেনারেলে গিয়ে তো তাহলে বিপদে পড়বেন।
পর্বগুলো এখানে দিলে আলোচনার মাধ্যমে ভুলগুলো ঠিক করার ভালো সুযোগ আছে। বেসিক লেভেলে (স্পেশ্যাল) রিলেটিভিটি কিন্তু খুব কঠিন কিছু না।

-সো।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

দয়া করে ভুলটা ওখানেই একটু ব্যাখ্যা করে আসুনা প্লিজ। এখানে দেওয়ার আর কোনওভাবেই সুযোগ নেই।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

এখানে দেয়া যাবেনা কেনো ? ১৫ নম্বর থেকে এখানে দেন।
ফেসবুক পোস্টে কমেন্টতো করা যায়না। কমেন্ট অপশনটা অন করলে চেষ্টা করতে পারি।

- সো।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

একটা সিরিজের ১৫ নম্বর থেকে পোস্ট দিলে মডারেটর সেটা গ্রহণ করবেন না। েকেন দেওয় যাবে না এই প্রশ্নে আর যাব না। যাইহোক, কমেন্ট অপশন চালু আছে। অন্যরা কিন্তু কমেন্ট করছে।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।