ঐরাবত বিষয়ক মানবিক জটিলতা

শামীম রুনা এর ছবি
লিখেছেন শামীম রুনা [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২১/০৩/২০০৯ - ৩:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মোংথোয়াই নিজেকে আটকাতে পারে না আর। যেন সে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে, মাটির সাথে মিশে যাবার অনুভূতিতে কেমন যেন সে মহুয়া মাতাল সন্ধ্যায় পথ হারিয়ে ফেলেছে। এতণ ধরে চোখের ভেতর জ্জ কাপ্তাই বাঁধের মধ্যে আটকে থাকা পানির মতোই জ্জ জমে থাকা কষ্ট যখন ভরা বর্ষার শৈলপ্রপাতের ঢলের মতো ধেই ধেই করে নেমে আসলো, তখনই সম্বিত ফিরে পেলো সে। মগজের ভেতর এখনো ওগলাচ্ছে দ্রুম-দ্রুম-দ্রুম। ওইতো ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে জল-কাদার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে মতি। হুংকার- অবিশ্বাস এর করুণ চোখে তাকিয়ে থাকা আর আর্তনাদ এর আকুলতার পর শুঁড় দিয়ে কপালের রক্তের স্রোত বন্ধ করার কি ব্যাকুল চেষ্টা। আহা! কপালের ঠিক যে জায়গাটাতে মোংথোয়াই নিজ হাতে টিপ পরিয়ে সাজাত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ঠিক সেখানেই টিপের মতো-একেবারে টকটকে লাল টিপের মতো একঝলক রক্ত ছলকে উঠেছে। মতির ভোঁতা অস্পষ্ট গোঙানোর শব্দে সব কিছু কেমন ভারী ভারী মনে হয় মোংথোয়াইর কাছে। মোংথোয়াই অনুভব করে ওর দুই কান দিয়ে প্রচণ্ড গরম কিছু যেন বের হতে চাইছে। চোখ ঝাঁপসা হয়ে আসে তার। মোংথোয়াই নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে মাটিতে। অদূরে পুকুরের মধ্যে মতি। দল বেঁধে মানুষ ছুটে আসছে পুকুরের আরো কাছে। যেন আরো গভীরভাবে মতির মৃত্যু প্রত্য করতে পারে তারা। সবাই ছুটছে একজন আরেকজনকে ধাক্কা দিয়ে, উল্লাসের সিটি বাজিয়ে। মোংথোয়াই শুধু অবসন্নভাবে মাটিতে মুখ লুকিয়ে পড়ে থাকে। ওর অশ্র“, কান্নাজনিত সর্দি আর মুখের লালায় ধুলা মাটি দলা পাকিয়ে যায়। মোংথোয়াই মাটির বুকে কি যে খোঁজে, আশ্রয় না শান্তি সে নিজেও জানে না। কেবলই মুখ গুঁজে মিশে যেতে চায় মাটির সাথে।

এক সময় মোংথোয়াইর কানে আসে-মরেছে মরেছে। অবর্ণনীয় এক কষ্ট আর আক্রোশে আন্দোলিত হয়ে সে মাটিকে প্রবলভাবে খামছে ধরে এবং আস্তে আস্তে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসে। কেমন এক অদ্ভুত শূন্যতা বোধ করে মোংথোয়াই। এমনটি এর আগে কখনো হয়নি। পাহাড়ের মানুষ সে, শিকার করা তার কাছে নৈমিত্তিক ব্যাপার। দা’ এর এক কোপে হরিণ বনমোরগ কিংবা পাহাড়ী সাপের মাথা গর্দান থেকে আলাদা করা তার কাছে কোনো ব্যাপার নয়। আর ওর সাহসিকতার জন্যই সে পেয়েছিল ডিসি অফিসের হাতির মাহুতের চাকরি। সরকারি চাকরি হলেও মোংথোয়াই বেশির ভাগ সময়ই মতিকে নিয়ে থাকত পাহাড়ে। মোংথোয়াই আর মতি কিংবা মতি আর মোংথোয়াই এই পার্বত্য শহরে কিংবা আশে পাশের দুর্গম জনপদগুলোতে হয়ে গিয়েছিল এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গাছের গুড়ি টানা, দুর্গম পথে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যাওয়া আর কর্মকর্তাদের বয়ে নিয়ে যাওয়া, এসব কাজেই মতি আর মোংথোয়াই ছিল মানিক জোড়।

বিজয় দিবস আর স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশ নেয়ার জন্য মোংথায়াই মতিকে সাজাতো বিশেষভাবে। মতি যখন সমতলে আসতো তখন ওর পায়ে পরিয়ে দেওয়া হতো শিকল। সেই শিকল বাজিয়ে মতি হাঁটতো গম্ভীর আর রাজকীয় ভঙ্গিতে। লোকজন আঙুল উঁচিয়ে বলতো ঐ দেখো মোংথোয়াই আর মতি যায়। এই সব এবং আরো কত কত স্মৃতি মোংথোয়াইর মগজের এ প্রান্তে ও প্রান্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। সব ছাপিয়ে তবুও সে শুনতে পাচ্ছে মানুষের উল্লাস সিটি আর চিৎকার। যার অর্থ উ™£ান্ত শোকাহত মোংথোয়াইর কাছে পরিস্কার, মতি আর কোনো দিন ফিরে আসবে না।

মোংথোয়াই এক সময় যন্ত্রের মতো উঠে দাঁড়ায়। তার টান টান পেশীতে শূন্যতা ও শোকের যৌথ ঝংকার উঠে। মাটিতে পড়ে যেতে যেতে আবারো উঠে দাঁড়ায়। ততণে শেষ বিকেলের আলো মিইয়ে গিয়ে আঁধার ছায়া ফেলেছে সর্বত্র। ডিসি বাংলোর বিশাল পুকুর ঘিরে তখনো অনেক মানুষ, সমতলের অভিবাসী আর পাহাড়ের আদিবাসী সবাইকে একত্রিত করেছে মতি। সবার মধ্যে উৎসবের আনন্দ, বিজয়ের গর্ব। এক পাগলা হাতির তাণ্ডব থেকে পরিত্রাণের স্বস্তি। মোংথোয়াই দূর থেকে পুকুরের দিকে তাকায়। মানুষের জটলার কারণে মতিকে দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য নির্বাক প্রাণহীন মতিকে দেখবার কোনো ইচ্ছাও জাগে না মোংথোয়াইর। তার মনে হয় এই মুহূর্তে অরণ্য তাকে ডাকছে। যেন অরণ্য তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে, সান্ত্বনা দেবে আর দেবে মাথায় ও শিরায় শিরায় প্রবাহিত চাপ থেকে মুক্তি।

মতি ডিসি অফিসের বিশাল হাতির নাম। এই পাহাড়ী এলাকায় যে সব অঞ্চলে গাড়ি যেতে পারে না, সে সব স্থানে অবলীলায় চলে যায় হাতি। হাতির আদর- যতœ, ট্রেনিং, পরিচালনা এসবের দায়িত্ব হলো মাহুতের অর্থাৎ মোংথোয়াইর। পাহাড়ের বুক চিরে ছুটে চলা নদীতে বাঁধ দেয়ায় যে সব পাহাড়ী আদিবাসী তাদের চাষের জমি হারিয়েছে তাদের মধ্যে মোংথোয়াইর পরিবার একটি। ওর গোত্রের অনেকে পার্শ্ববর্তী দেশ দুটিতে চলে গেলেও মোংথোয়াই যায়নি। ও এই পাহাড়, এই অরণ্যের সাথেই নাড়ির টান অনুভব করে। তাই সে এই পার্বত্য উপত্যকাতেই কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পরে। এভাবেই একজন শিতি আদিবাসী যুবকের সহায়তায় ডিসি অফিসে মাহুতের কাজটি সে পায়। সরকারি চাকরি নিয়ে প্রথমে দ্বিধান্বিত থাকলেও মাহুতের কাজটি তার পছন্দ হয়ে যায় খু-উ-ব। তারপর তো সব ঘটনা সব স্মৃতি মতিকে নিয়েই। শুঁড় দিয়ে স্যালুট দেয়া, নাচা, আরো কত কী মোংথোয়াই মতিকে শিখিয়েছিল।

মোংথোয়াই ধীরে এলোমেলো উদভ্রান্তের মতো শহরের পাথর পথ ছেড়ে উঁচু নিচু রু পাহাড়ী পথ ধরে হাঁটে। শহরকে আজ তার কাছে খুব পরের মনে হয়। মতিকে কি অবলীলায় শব্দ উঠা বন্দুকের গুলিতে মেরে ফেলা হলো। অথচ মতি কত দুর্গম এলাকায় মানুষের জন্য ওষুধ পথ্য বয়ে নিয়ে যেত।

মতি ছিল বনের পশু। হলে কি হবে তারও ছিল সুখের সংসার। কিন্তু যখন তার একমাত্র সন্তান মালাকে রাজধানীর চিড়িয়াখানার শোভাবর্ধনের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হলো, তখন থেকেই ছন্দ পতন শুরু হলো মতির স্বাভাবিক জীবনের। এরপর প্রবল উন্মত্ততা গ্রাস করে মতিকে যখন তার সঙ্গিনী পান্নাকে সরিয়ে দেয়া হয় অন্য আরেক জেলা শহরে। তখন থেকেই রাত্রে মতিকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হতো। মতি মোংথোয়াই ছাড়া অন্য মানুষকে সহ্য করতে পারতো না। মোংথোয়াই মতির কষ্টের সাথে যেন মিশে যেত। যে কারণে মোংথোয়াইয়ের হাতের পরশে মতি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে শান্ত— হয়ে উঠতো। মোংথোয়াই খুব আশা করে ছিল যে, মতি একদিন পুরোপুরি ভালো হয়ে উঠবে।

কিন্তু মোংথোয়াইর এই প্রত্যাশাকে মিথ্যে করে দেয় মতি, একদিন রাতে শিকল ছিঁড়ে মালিপাড়ার ঘরবাড়ি আর ঘুমন্ত মানুষদেরকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে। এরপর মতি আর ফিরে আসে না নিজস্ব ডেরাায়। মোংথোয়াই জঙ্গলে জঙ্গলে মতিকে খোঁজে আর মতি পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। মাঝে মধ্যে ধ্বংস করে দিয়ে যায় মানুষের ঘর-বাড়ি, তে-খামার, দোকান পাট। মতি আতঙ্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই পার্বত্য জেলার জনপদগুলোতে। এরই মধ্যে একদিন স্বয়ং জেলা-কর্তা মুখোমুখি হয়ে পড়েন মতির। ডিসি সাহেব সেদিন জেলা শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকা রুটিন সফর শেষে ফিরছিলেন। সন্ধ্যা ততণে হয়ে গিয়েছে। হঠ্যাৎ ড্রাইভার খেয়াল করলো রাস্তায় একটা গাছ পড়ে আছে। কাছাকাছি হয়ে হেড লাইটের বীম হাই করতেই সামনের সিটে বসা ডিসি সাহেব শিরদাঁড়া খাড়া করে সটান হয়ে বসলেন। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে গাছটির ওই পাশে স্থির দাঁড়িয়ে আছে মতি। মতির দাঁড়িয়ে থাকা আর তার আকুল ক্রোধমত্ত চাহনি দেখে ডিসি সাহেব মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন, এই যাত্রা বেঁচে যেতে পারলে মতিকে পান্না আর মালার সাথে একত্রিত করে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। ডিসি সাহেব যত দ্রুত মতিকে পাঠ করতে পারলেন, মতি কিন্তু ডিসি সাহেবের মনোভাব পাঠ করতে পারলো না। মতি এগিয়ে আসতে লাগলো শুঁড় উঁচিয়ে। মুহূর্তের মধ্যে ডিসি সাহেবের নিরাপত্তা রীরা গাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে ফাঁকাগুলি করলো তিনবার। গুলির শব্দে ভীত হয়ে মতি দ্রুত পালিয়ে গেলো। ডিসি সাহেব ও তার সঙ্গীরা হাফ ছেড়ে ফিরলেন শহরে।

এই ঘটনার পরের দিন অফিসে হাজিরা দিয়ে বারান্দায় বসে ছিল মোংথোয়াই। মতিকে না পাওয়ায় মোংথোয়াইর এখন অবসর আর অবসর। এত ছুটি, এত অবসর মোংথোয়াইর বিস্বাদ লাগে। ডিসি সাহেবের রুমে আজ কেমন যেন, অন্য রকম ব্যস্ততা। আইন-শৃঙ্খলা রাকারী কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, সামরিক বাহিনীর দুইজন কর্মকর্তা এবং আরো বেশ কয়েকজন একসাথে ডিসি সাহেবের রুমে প্রায় ১ ঘণ্টা বৈঠক করেন। তখনই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়। বৈঠকের খুব কাছে থেকেও মোংথোয়াই আঁচ করতে পারে না কিছুই।

মোংথোয়াই বসে বসে আনমনে ভাবছিল জীবনের নানা সুখ দুঃখের কথা। কাপ্তাই বাঁধের পানিতে তলিয়ে যাওয়া ভিটে-মাটি আর জুমিয়া দুপুরের কথা। এমন সময় দুইজন লোক মতি আসছে মতি আসছে চিৎকার করতে করতে ডিসি অফিসের দিকে এগিয়ে এলো। মোংথোয়াই দেখলো উদভ্রান্তের মতো পায়ের ছেঁড়া শেকলের ঝংকার বাজিয়ে মতি ডিসি অফিস সংলগ্ন শালবনের ভেতরে সংরতি পুকুরটিতে নামল। পুকুরে পানি নেই বললেই চলে। মাঝখানে একহাঁটু বা তার চেয়ে কিছু বেশি পানি আছে। মতি সেই পানিতে নিজেকে শীতল করতে চেষ্টা করল কিছুণ এবং এভাবে একসময় আপনমনে জলক্রীড়ায় নিমগ্ন হয়ে পড়ল। মোংথোয়াই পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল এসব আর ভাবছিল নিজের কর্তব্য সম্পর্কে। এমন সময় টের পেল একটা শক্ত হাত তার কাঁধ ধরে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে, তাকিয়ে দেখল জংলীছাপ পোশাকের একজন। পুকুরের চারদিকে এই জংলীছাপ পোশাক আর শক্ত বুট পরা লোকজন মতির দিকে অস্ত্র তাক করে অবস্থান নিয়েছে। মোংথোয়াই সেই শক্ত হাতের ধাক্কায় ছিটকে এসে পড়েছিল উৎসুক জনতার ভীড়ে। দ্রুম-দ্রুম-দ্রুম-থেমে থেমে তিনবার, রক্তহীম করা শব্দে কেঁপে ওঠাটুকুই মনে আছে তার।

মোংথোয়াই কোনো মতে ফিরে আসে পাহাড়-অরণ্যের গভীরেজ্জস্ত্রী, পুত্রের সংসারে। ঘরে এসে নয়-দশ বছরের ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে অনেকণ। কিন্তু কিছুই খেতে পারে না সে। মুখে খাবার তুললেই বমি আসে।

এদিকে বিশাল হাতির চাক চাক মাংস কর্তৃপরে উদ্যোগে বিলি করা হয় পাহাড়ী পরিবারগুলোতে। মোংথোয়াইর বাড়িতেও আসে মাংসের ভাগ। কিন্তু মোংথোয়াই তা না রেখে ফেরত দিয়ে দেয়। তার মনে হয় এ মাংস যেন তার ছেলেরই মাংস। মোংথোয়াইর রক্ত-মাংস পাঁক খেয়ে উঠে, মাথা কেমন যেন দুলতে থাকে। তার চোখের সামনে শুধু ভাসে মতি শুঁড় উচিয়ে তাকে স্যালুট দিচ্ছে।


মন্তব্য

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

পড়ে ভাল লাগলো।

নীড় সন্ধানী [অতিথি] এর ছবি

চমৎকার লেগেছে, সত্যি ঘটনার মতোই!

নীচের লাইনটাতে বানান বিভ্রাট ঘটেছে বোধহয়,

এতণ ধরে চোখের ভেতর জ্জ কাপ্তাই

রানা মেহের এর ছবি

গল্পের বিষয় চমতকার।

তবে লেখায় লেখক আরেকটু যত্ন নিতে পারতেন
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

পুতুল এর ছবি

খুব ব্যতিক্রমি লেখা। পড়ে মোহিত হলাম।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।