ওম্যান সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট বা তাহারুশ

শামীম রুনা এর ছবি
লিখেছেন শামীম রুনা [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১১/০৩/২০১৬ - ১০:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার ইনবক্সে একজন একটি লিংক পাঠিয়েছে।“ভয়ংকর ধর্ষণ খেলায় মেতেছে আরব থেকে ইউরোপ”। যে পাঠিয়েছে যে, সে খুবই ভীত, সন্ত্রস্ত, এখন কী হবে ভাবনায়। পুরনো বাসী খবর। এই খেলার জের চলছে এখন জার্মানিতে। থার্টি ফার্স্ট নাইটে হাজার খানেক(সম্ভবত)আরব যে তাহারুশ খেলেছে তার দাম দিতে হচ্ছে হাজার হাজার আরব রিফ্যুজিকে দেশে ফেরত গিয়ে। আমি তাকে বলি, এই খেলা কি আমার দেশের কাছে নতুন? আমরা বাংলাদেশের মেয়েরা কি গাউছিয়া,চাঁদনীচক,ভিড়ের বাস বা ট্রেনের এমন কি খোলা রাস্তাও এমন হ্যারাসমেন্টের শিকার হই নাই? এবারের পহেলা বৈশাখে রাজু ভাষ্কার্য থেকে সোহরাওয়ার্দি পর্যন্ত যে ঘটনা ঘটেছে সে প্রসঙ্গে কথা বলি, সেটাও তো তাহারুশ ছিল। তাহারুশ ইউরোপ যাবার অনেক আগে আমাদের দেশে এসেছে। এর সফল প্রয়োগ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। আগে মেয়েরা হ্যারাস হয়েও খুব জনসম্মুখে খুব একটা প্রতিবাদ করতো না, গা ঘিন ঘিন ভাব নিয়ে নিজ অপমান মুখ বুঁজে সহ্য করতো আর মেয়ে হয়ে জন্মানোটাকে প্রচণ্ড এক অপরাধ হিসাবে দেখত। কখনও কখনও দুই একজন সাহসী মেয়ে প্রতিবাদ করেছে, প্রতিবাদ করে আশে-পাশের আরও তাহারুশ শিকারীদের রোষানলে পড়েছে এবং ব্যঙ্গ বিদ্রুপের শিকার হয়েছে। যেন দোষ মেয়েটির, কেনো সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো? এই তাহারুশ গেম থেকে নিজেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায়র হাতে ছিল তার, নিজেকে ক্রমশ গৃহবন্দী করে নেওয়া। এই যে মেয়েদের, ধীরে ধীরে বলয় ছোট করে আনা, এটাও তাহারুশে গেমের একটা লক্ষ্য কিনা কে জানে! কেননা, পহেলা বৈশাখে যে মেয়েগুলো এবার তাহারুশের শিকার হয়েছিল তাদের মধ্যে কয়জন মেয়েকে আমরা পাব যারা সাহস করে আবার আসছে পহেলা বৈশাখে র্যা লী’তে অংশ নিয়ে হাঁটবে, গলা খুলে গাইবে? ক’টি পরিবার তাদের মেয়েটিকে পহেলা বৈশাখে যাবার অনুমতি দেবে? অনেকে হয়ত বলতে পারেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ হিসাবে এবার আগের চেয়ে বেশি বেশি মেয়ের পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া উচিত। অবশ্যই মেয়েরা, বিভিন্ন সংগঠন মেয়েদের নিয়ে মেলায় অংশ নিত, যদি গতবারের অন্যায়ের সুষ্ঠ বিচার হতো। জার্মানি তার দেশের নারীদের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে তার বিচার করছে,যে রিফ্যুজিদের সাদরে বরণ করেছিল,কয়েক জনের অপরাধের শাস্তি পেতে হয়েছে হাজার হাজার রিফ্যুজিকে দেশে ফিরে গিয়ে।পদত্যাগ করতে হয়েছে কোলন শহরের মেয়রকে। আর সেখানে আমারদের আইজি’র চোখে তাহারুশ হচ্ছে দুষ্ট বালকের পোংটামী। বিচার দূরে থাকুক, আমাদের উপরের চেয়ারে বসে থাকা মুরব্বীরা এক একবার যেসব বাণী বয়ান করছেন তাতে করে তো সন্দেহ হয় উনারাই তাহারুশ গেমকে আমাদের দেশে আমদানী করেছেন কিনা।

এক সময় ধারণা করা হতো, মেয়েদেরকে এরকম যারা হ্যারাস করে তারা অশিক্ষিত। তারা নারী পুরুষের বন্ধুত্ব বা নারীকে সম্মান করতে জানে না। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘটা পহেলা বৈশাখের ঘটনা, দুই হাজারের থার্টি ফার্স্ট নাইটসহ আরও এমন কিছু নারী অপমানের ঘটনা রয়েছে, যেসব ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই দায়ী। সেখানে শিক্ষিত বা নারীর সাথে বন্ধুত্বের অভাব থাকার মতো কোনো কারণ নাই। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল শিক্ষিত ছাত্র কীভাবে এমন একটি কুরুচিপূর্ণ গেমের জন্য একত্রিত হতে পারে? যেখানে এইসব ছাত্রদের উদার মন-মানসিকতা সমাজ আশা করে সেখানে ছাত্ররা তাহারুশের মতো জঘন্য গেমে মেতে উঠছে? এটা কি শুধুই শিক্ষার অভাব? নাকি মগজের কোষে কোষে এখনও মানুষের আদিম অন্ধকার লুকিয়ে আছে-সেখানে নারী শুধুই ভোগ্যপন্য।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

মানুষকে সম্মান দেয়াটা শিখতে হয় পরিবারে। শিক্ষা বোর্র্ডের সনদ তা দিতে পারে না।যারা রাস্তায় এমন চ্যাচরামি করে তারা ঘরে তাদের মায়ের সাথেও সম্মান জনক ব্যাবহার করে বলে মনে হয় না।
এ্যানি মাসুদ

শামীম রুনা এর ছবি

ঠিক বলেছেন। তবে যারা দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে আসে আমরা ধরে নিতেই পারি তাদের একটা পারিবারিক মূল্যবোধ আছে।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

মন মাঝি এর ছবি

এর চেয়ে বেশি আর কী আশা করেন একটা Kleptocracy + Kakistocracy-র (, ) দেশে?!! ধন্য আশা কুহকিণী!

****************************************

শামীম রুনা এর ছবি

আশা তো আমরা করে থাকি। তবে বার বার আমাদের আশায় জল ঢালা হচ্ছে।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

অতিথি লেখক এর ছবি

"বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছণার ঘটনা তেমন কোন বিষয়ই না" -- মন্ত্রী শাহজাহান খান।

একবার চিন্তা করে দেখুন উনি একজন প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রী, আর এটা ১৭১৬ না, ২০১৬।

শামীম রুনা এর ছবি

উনি তো একজন মন্ত্রী। মন্ত্রীরা অনেক কিছুই বলতে পারেন।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

শামীম রুনা এর ছবি

মন্ত্রী হলে হয়ত এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন কথা বলতে হয়। প্রায়ই তো দেখি মন্ত্রীরা এই একটি মাত্র কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করে যাচ্ছেন।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

এক লহমা এর ছবি

"মগজের কোষে কোষে এখনও মানুষের আদিম অন্ধকার লুকিয়ে আছে-সেখানে নারী শুধুই ভোগ্যপন্য।"

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

শামীম রুনা এর ছবি

আমরা আর অন্ধকার নয় এবার আলোর বিচ্ছুরণ চাই।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

দেবদ্যুতি এর ছবি

জার্মানির ঘটনার পর তাহারুশ নিয়ে কিছু লেখা পড়েছিলাম, রীতিমতো শিউরে উঠতে হয়েছিল। তবে হ্যাঁ, তাহারুশ নামে না থাকলেও চর্চায় বহু আগে থেকে আছে আমাদের দেশে, আমাদের চারপাশে মন খারাপ

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

শামীম রুনা এর ছবি

হুম, হয়ত আমাদেরই অবহেলায় ছোট ফোঁড়া আজ বিষফোঁড়া হয়ে সমাজের মরণ ব্যাধি হয়ে উঠেছে।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

দুনিয়া  এর ছবি

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে , তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে ! এই হচছে মূলকথা । এই যে পহেলা বৈশাখে এত বড় নোংরামী হল তারপরও মানুষ উতসবে যাবে না বা জানোয়ারগুলি কি তাহাররুশ বনধ করে দেবে ?
এই তো সেদিন সনধ্যায় নজরুলের সমাধির সামনের ফুটপাথে এক জানোয়ার আবছা অনধকারে এক মেয়ের গায়ে হাত চলে যাচছিলো - কিন্তু মেয়েটা চিতকার করায় আমরা দৌড়ে ব্যাটাকে ধরে ফেলি । খারাপ লেগেছে যে সেটা হল মেয়েটার স্বামী চুপ মেরে যেতে চাচছিলো যেন আরও বড় ঝামেলা না হয় । আর আমরা যারা ইতরটাকে ধরে ফেললাম তারা খেয়াল করে দেখলাম মেয়েটা আমাদেরও ঐ ইতরটার মত একই জিনিস ভাবছে !
যাক সে কথা । যখন যেখানেই ইতরামী করবে - চিতকার করুন ! এখনও মানুষ মানুষই আছে ।

পরিবেশবাদী ঈগল এর ছবি

কোন এক বিচিত্র কারনে আলু পেপার গং থেকে শুরু করে ফেসবুকীয় সুশীল সাবেরা জার্মানির বর্ষবরন নিয়া একেবারে মুখে তালা ! কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতেও ডর লাগে এখন !
অবশ্য রেগুলার "শেভ-গাঞ্জা শেভ-গাঞ্জা" পার্টির কাছে বেশি কিছু আশা করি না

অ্যাটম অ্যানট  এর ছবি

মনে হয় না আদিম বর্বর মানুষ গুলো এতটা বর্বর ছিল নারীদের প্রতি , যতটা আজকের সমাজে দেখা যাচ্ছে !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।