ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: বুধ, ২২/০৮/২০০৭ - ১২:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছড়াকার আবু সালেহ-র কথা হয়তো সিনিয়র কারো কারো মনে থাকবে। এখন কই আছেন তিনি তা জানিনা, কিন্তু তার সময়ের নামকরা ছড়াকার ছিলেন। 'পল্টনের ছড়া' বলে একটা বই ছাপিয়েছিলেন, তাতে রাজপথের ছড়া, বিক্ষোভের ছড়া। আজকের দিনে তার সেই লেখাগুলার কথা মনে পড়লো, যদিও ছড়াগুলা তিনি লিখে গেছেন অন্য এক সময়ে - ৬৯-এর গণআন্দোলনে আর ৭২-৭৪ সালের মধ্যে। ছোট বেলায় পড়েছিলাম, আজকে আবার খুলে দেখলাম। সেইখান থেকে দুইটা ছড়া।

১)

ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা!
যার পিছনে জানটা দিলাম যার পিছনে রক্ত
সেই রক্তের বদল দেখো বাঁচাই কেমন শক্ত,
ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার মরার স্বাধীনতা!
বাঁচতে চেয়ে খুন হয়েছি বুলেট শুধু খেলাম
উঠতে এবং বসতে ঠুঁকি দাদার পায়ে সেলাম,
ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা!

২)

বাগিয়ে নিয়ে চেয়ারখানা
জাত শুয়োরের ছা
বলছে আবার তাতেও নাকি
প্রাণটা ভরে না,
রক্ত খেলো মুন্ডু খেলো
গিললো সবই পেটে
তাতেও নাকি পেট ভরেনা
যাচ্ছে জিভে চেটে,
এমন ধরন রাক্ষুসীদের
দেশটা দেখে ভাই
হাতুড় শাবল তাক করেছি
মারবো জোরে ঘাই!

কোন ছড়াটা যে কার জন্যে প্রযোজ্য সেটাই চিন্তা করি!


মন্তব্য

সুজন চৌধুরী এর ছবি

অসাধারন । ধন্যবাদ
আরো থাকলে আরো ছাড়েন।

৯০-এর আন্দোলনে রিটন ভাইয়ের দারুণ কিছু ছড়া ছিল, সেগুলো যদি কোনভাবে পাওয়া যেত খুব ভালো হতো--- ঐ ছড়াগুলোর সাথে ছিল শিশির ভট্টাচার্যের অসাধারন সব কার্টুন।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

দ্বিতীয় ছড়াটি পড়ে অবশ্য আমার দেশের তাবত রাজনীতিবিদদের কথাই মনে পড়ে।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

চেয়ার বাগিয়ে ধরে জাত শুয়োরের ছা...
কি আর রাজনীতিকরা হতে পারে।
এরা হচ্ছে উর্দিওয়ালা বন্দুকধারী।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

বলছে আবার তাতেও নাকি
প্রাণটা ভরে না,
রক্ত খেলো মুন্ডু খেলো
গিললো সবই পেটে
তাতেও নাকি পেট ভরেনা
যাচ্ছে জিভে চেটে,
এমন ধরন রাক্ষুসী

এটা যে আমাদের দেশের রাজনীতিক শ্রেণীর বিবরণ, সন্দেহ আছে?

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

হু সন্দেহ তো হয়ই।
মিলে না যে।
ছড়াকার আবু সালেহ কিছুটা হলেও বাস্তবতা বুঝতেন এমন মনে করি। সুতরাং রাজনীতি বা রাজনীতিকদের রাক্ষুসী বলবেন এমন আশা করি না।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

কেমিকেল আলী এর ছবি

ভাল জিনিষ দিছেন

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

রাজনীতি নিজে রাক্ষুসী না। এবং বোধ করি যে সময় আবু সালেহ এই কবিতাগুলি লিখেছিলেন - ৩০ বছর আগে - তখন রাজনীতিকরাও অত বড় রাক্ষস ছিলেন না। কিন্তু গত এক যুগ ধরে যে রকম হিংস্র ও লোভী রাজনৈতিক শ্রেণী আমাদের কপালে জুটেছে, তাদের জন্যে উপরোক্ত লাইনগুলোর থেকে উপযুক্ত আর কোন ডেফিনিশান খুঁজে পাওয়া যাবে না। চোখের সামনে হৃষ্ট-পুষ্ট রাক্ষস পেলে সেই রাক্ষসকেও ভক্ষন করে ফেলার ক্ষমতা রাখেন তারা।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কবি কি ভেবে লিখেছিলেন তা নাহয় থাক। আজ আমরা কে কি নিয়ে ভাবছি তাই আসল। যে যেভাবে ব্যাপারটা দেখে...সে সেভাবেই ব্যাখ্যা করে।

কিন্তু হাতুরি শাবল নিয়ে তো মানুষ রাজনীতিবিদদের খেদায়নি। রাজনীতিবিদরা তাদের নিজের কৃতকর্মের ফল ভোগ করছে। তবে সেনাবাহিনী "নিজের দেশকে দখল করবে" এটাও মেনে নেয়া যায় না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।