আমি কৃতজ্ঞ হে সচলায়তন ; ইলিশ দাদা ইলিশ দিয়ে!! উসৎর্গ সচলবন্ধু মৃদুল আহমেদকে

শ্যাজা এর ছবি
লিখেছেন শ্যাজা (তারিখ: সোম, ১১/০৮/২০০৮ - ১:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সর্ষে ইলিশ নিয়ে মৃদুল'দার ছড়া পড়ে মনে হল, সচলায়তনের কাছে, মৃদুল'দার কাছে, সকল সচল বন্ধুদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানানোর এর চাইতে ভাল উপায় আমার হাতের কাছে আর নেই। কে না জানে বাঙালী ভোজনরসিক। বাঙালীর প্রতিটি আড্ডায়, কথোপকথনে ভোজনের কথা উঠবেই আর ভোজনের কথা এলে ইলিশ আসবে সবার আগে। আমার কৃতজ্ঞতা তাই ইলিশ দিয়ে! আমার ফ্রীজে একখানা গোটা নধরকান্তি ইলিশ শুয়ে আছে সর্ষেতে মাখো মাখো হয়ে রসনাতৃপ্ত করবার আকাঙ্খায়। সেটি আমি রেঁধে খাওয়ার আগে সকল বন্ধুদের জন্যে দু'টি পদ ইলিশের।

ভাপা ইলিশ
---------

মাথা আর লেজ বাদ দিয়ে চাকা চাকা ইলিশের টুকরোগুলো নিয়ে নিন। খুব বেশি ধুতে নেই ইলিশকে, স্বাদ চলে যায়। মুঠোখানেক সর্ষে (ছ-সাত টুকরো ইলিশের জন্যে)আর গোটাকয়েক কাঁচা লংকা একসাথে বেটে নিন, মিক্সিতে বা শিল নোড়ায়। হাতের কাছে নিশ্চয়ই সর্ষের তেল আছে।ঘানির তেল হলেই ভাল হয়। না পাওয়া গেলে অগত্যা বাজারের বোতলজাত তেল। একটা ষ্টিল বা আ্যালুমিনিয়ামের ঢাকনা দেওয়া বাটি নিন, টিফিন কৌটো হলেও চলবে। বাটিটা ভাল করে ধুয়ে মুছে তাতে মাছগুলো সাজিয়ে দিন। বাটা সর্ষে-কাঁচা লাংকা আর ইচ্ছেমত কাঁচা সর্ষের তেল দিয়ে মাছগুলোকে মাখুন। নুন দিন আন্দাজমত। সবক'টা মাছে ভাল করে মাখিয়ে দিন সর্ষেবাটা। যেটুকু ঝোল চাই সেটুকু পানিই দিন, তার বেশি একদম দেবেন না। কাপখানেক হলেই ভাল হয়। মনে রাখবেন, ঝোল যেন পাতলা না হয়। কোন কাঠি বা চামচ দিয়ে মাছ এমনকি নাড়ার চেষ্টাও করবেন না যেন! আপনার সুনিপূণ হাতে করে বাটিটা ধরে আলতো করে নেড়েচেড়ে পানি আর সর্ষেবাটা মিশিয়ে দিন। সবুজ কাঁচা লংকা চিরে দিয়ে দিন কয়েকটা। ঝাল বেশি চাইলে বেশি করে। বাটিতে ঢাকনা চেপে বন্ধ করুন।

একটা হাঁড়ি বা কড়াইয়ে পানি গরম বসান। ফুটতে শুরু করলে বাটিটা বসিয়ে দিন গরম পানিতে। খেয়াল রাখবেন, পানি যেন বন্ধ বাটির উপর দিয়ে না যায়, নইলে ভেতরে ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কড়াই বা হাড়িতে এবার ঢাকনা দিয়ে দিন, গ্যাসের আঁচ বাড়িয়ে রাখুন। মিনিট পনের বাদে গ্যাস বন্ধ করে দিন আর বাটিটা তুলে ফেলুন পানি থেকে। একটু ঠান্ডা হয়ে এলে ঢাকনা খুলে কাঁচের বাটিতে আলতো করে ঢেলে দিন। দেখুন কেমন ঝাঁঝ বেরুচ্ছে কাঁচা সর্ষের তেল আর বাটা সর্ষের! স্বর্গীয় ইলিশগন্ধের কথা আমি আর কী বলব, সে তো আপনারা সকলেই জানেন হাসি

গরমাগরম ভাতের সাথে কচি সবুজ কাঁচা লংকা দিয়ে খান ভাপা ইলিশ আর শ্যাজাকে স্মরণ করুন হাসি

সর্ষে ইলিশ
------------

যদিও দু'টি পদই সর্ষে দিয়ে কিন্তু এবারে মাছটাকে একটু ভেজে নেব। মশলা একই রকম। কাঁচা লংকা সহ সর্ষে বাটা। রান্ণার জন্যেও সর্ষেরই তেল। এখানে আমার কয়েকদানা গোটা সর্ষে লাগবে, ফোঁড়নের জন্যে। আর এবারে আমি লেজের টুকরোটাও নেব যদিও মাথা নেব না। মাথাটা তোলা থাকল কচু শাকের জন্যে। আগেই বলেছি, মাছ আলতো হাতে ধুতে হবে, মাছের স্বাদ যেন কিছুতেই না যায়। কড়াইয়ে সর্ষের তেল ভাল করে গরম করে নিন। নুন আর হলুদ মাখানো মাছের টুকরোগুলোকে আলতো করে কড়াইয়ে দিয়ে হালকা ভাজুন, মাছ যেন একদম কড়া বা ডিপ ফ্রাই না হয়। ভাজা মাছ একটা প্লেটে তুলে রাখুন। কড়াইয়ে কয়েকদানা সর্ষের ফোঁড়ন দিন সাথে দিন চেরা কাঁচা লংকা। সর্ষেটা ফুটে ছিটতে শুরু করলে সর্ষে আড় কাঁচা লংকা বাটা দিয়ে দিন তেলে। নুন দিন আন্দাজমত আর দিন এক চিমটে হলুদ পাউডার। খানিক নেড়েচেড়ে ওতে পানি দিন। এবারেও পানি ততটুকুই দিন, যতটুকু ঝোল চাই। ঢাকনা দিন করাইয়ে। ঝোল টগবগিয়ে ফুটতে শুরু করলে ঢকনা খুলে ভেজে রাখা মাছগুলো ছেড়ে দিন করাইয়ে। আবার ঢাকনা দিন। মিনিট দশ ফুটতে দিন ওকে। আবারও দু-চার পিস কাঁচা লংকা ছেড়ে দিন ঝোলে, এগুলো দরকার রঙের জন্যে। ঝাল বেশি চাইলে এই লংকাগুলোও চিরে দেওয়া যেতে পারে, নইলে গোটা গোটা লংকা, সবুজ রং নিয়ে মাছের ফাঁকে ফাঁকে ঝোলে সাঁতার কাটার জন্যে। খানিকটা কাঁচা সর্ষের তেল (এই দুই টেবিল চামচ মত) ছড়িয়ে দিন মাছের উপরে, ঝোলে। কাঁচা সর্ষের তেলের ঝাঁঝটা পাওয়ার জন্যে। মিনিট চার-পাঁচ আবারও ঢাকা দিয়ে ফুটিয়ে নিন ধীমে আঁচে। ঝোল পছন্দমত ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন ( মনে রাখবেন , নামানোর পরে কিন্তু নিজে থেকেই এই ঝোলটা একটু ঘন হয়ে যায়, কাজেই ঝোল একটু পাতলা থাকা অবস্থাতেই নামানো ভাল) আর সদৃশ্য কাঁচের ডিশে আলতো করে ঢেলে দিন সবটুকু সর্ষে ইলিশ। গরম ভাতে কচি সবুজ কাঁচা লংকা দিয়ে খান সর্ষে ইলিশ আর শ্যাজাকে স্মরণ করুন হাসি


মন্তব্য

শ্যাজা এর ছবি

গুগলকাকুর থেকে ছবি ধার নিয়ে দিতে চাইলাম কিন্তু নিল না। কি সব এরর আসে মন খারাপ


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আমিও কৃতজ্ঞ আপনার কাছে। বাড়ির প্ল্যান করে ইঞ্জিনিয়ার, বাড়ি বানায় কন্ট্রাকটর। আমি রেসিপি নিয়ে গিয়ে বউয়ের কাছে বলব, সারাজীবন তো খোঁটা দিলে কোনোদিন তোমাকে রান্না করে খাওয়ালাম না বলে, এই দ্যাখো, কেমন রেসিপি নিয়ে এসেছি। আমি এখন পুরা ইঞ্জিনিয়ার, প্ল্যান দিয়ে দিলাম, বাকি কাজ সামান্যই...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমিও একই পথ ধরবো চোখ টিপি

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

শ্যাজা এর ছবি

কি হচ্ছে কে জানে! একটা মন্তব্যের জবাব লিখতে গেলে সেটা যায় অন্য মন্তব্যে মন খারাপ


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ইশ, আমারও যদি কোন কন্ট্র্যাক্টর থাকত! মন খারাপ

কীর্তিনাশা এর ছবি

ধন্যবাদ শ্যাজা দি। প্রিন্ট নিয়ে পস্তুত আমি। দেখা যাক আপনার রেসিপি ফলো করে। মনে তো হয় দারুন টেস্টি কিছু হবে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

শ্যাজা এর ছবি

মনে তো হয় দারুন টেস্টি কিছু হবে।

নিশ্চিতরূপেই হবে কির্তীনাশা ভাই। ট্রাই করে জানিও, কেমন হল।


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

জব্বর হইছে। আমিও দেখি কিছু করা যায় কিনা। দেখি আমার কন্ট্রাক্টর কী বলে!

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

আমি এক ম্যাগাজিনে কিছু লেখা দিয়ে কামাই করি। ওর প্রথম সংখ্যা বের হবার সময় সম্পাদকের গলদঘর্ম। কারণ যার যার লেখা দেবার কথা ছিল কেউই দেয়নি। আমি ছাড়া। ওর বাসায় গেলাম _ উদ্দেশ্য আড্ডা দেয়া আর লেখার লাস্ট কিছু কারেকশন। ও ধরে বসল খাবারের রেসিপি করে দিতে হবে। ইন্টারনেট থেকে দু'টো রসালো খাবার ডাউনলোড করলাম আমি আর সম্পাদক। দু'জনে মিলে বানালাম রেসিপি। দেখা গেল----আমি যা উপকরণ দেই সাথে কেজির হিসাব ধরে লিখে ফেলি আর ও এডিট করার সময় আতকে উঠে। শেষ নাগাদ যা দাঁড়াল দু'জন চোখ বন্ধ করে দিয়ে দিলাম। ছাপা হল। আইটেমগুলো বানাবার সত্যিকার জানা লোকদের পরের ফোনের বক্তব্য শুনে কান প্রায় পনেরো বিশদিন বধির হয়ে গেল।
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

নিরিবিলি এর ছবি

ভালই হলো আমিও ট্রাই করে দেখতে পারি।:)

কারুবাসনা এর ছবি

যদিও ওটা ছিল জন্মদিনের উপহার, তবু ওভাবে খাওয়ার কথা ভাবতেই পারিনা। ওমাছ তো বিরিয়ানির জন্যই। কে জানে।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

উইকিপিডিয়ার এই ছবিটা দেখে জীবে পানি এসে গেল।

মুজিব মেহদী এর ছবি

চলতি সপ্তাহে ঢাকায় ইলিশের দাম কমেছে। ১৫ দিন আগে যেটার দাম ৫৫০ ছিল, সেটা এ সপ্তাহে ২৫০। অভাবনীয়। আজও খেলাম ইলিশ। তবে আপনার রেসিপিতে নয়, ভেজে।

বউকে অনুরোধ করে দেখব, আপনার নকশা অনুযায়ী একবার চেষ্টা করে দেখতে। অবশ্যই সেবার আপনার কথা মনে রেখে খাব।
................................................................
আমরা তা-ই করি, বন্দিরা যা করে
আমরা তা-ই করি, বেকারেরা যা করে :
আমরা ফলিয়ে যাই আশার আবাদ।
(মাহমুদ দারবীশ)

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

শ্যাজা এর ছবি

অতি আশ্চর্যজনক খবর হইল, দাম এখানেও কমেছে। কেজি ওজনের ইলিশের দাম ৫০০রুপি থেকে নেমে আড়াইশ-তে পৌঁছেছে। কি করে কে জানে!


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

সুমন চৌধুরী এর ছবি

প্রবাসে যা পাই সবই অনুত্তেজক ফ্রোজেন ইলিশ



অজ্ঞাতবাস

শ্যাজা এর ছবি

তবু তো পাওয়া যায়!


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

ইলিশ! ইলিশ! ইলিশ!
‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍আপনারা সব শুরু করলেন কী!
আপনাদের মনে কি দয়া-মায়া বলে কিচ্ছুই নেই!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

আহ শ্যাজামণি, তুমি বরং আমাদের নেমন্ত্ন্ন করো। আমরা ইলিশ আর সর্ষে নিয়ে বেড়াতে আসি। ইলিশের পদদুটো তুমিই মনেহয় ভাল পার।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

শ্যাজা এর ছবি

নেমন্তন্ন রইল। যে কোন দিন যে কোন সময় এসে নেমন খেয়ে যেও। কিছুই আনতে হবে না। বাজারে ইলিশ পাওয়া গেলে আমিই নিয়ে আসব।


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।