আমি বরং ব্লগ লিখি..

শ্যাজা এর ছবি
লিখেছেন শ্যাজা (তারিখ: মঙ্গল, ২০/১০/২০০৯ - ১:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একদিন একরাত টানা ঘুমিয়ে আর তারপর গত দিনটিও আধো ঘুম আর জাগরণের মধ্যে কাটিয়ে গতরাতটি কাটল প্রায় নির্ঘুম। বহু বহুদিন নাকি বহু বহু কাল, কতদিন, কতকাল পর এমন বেভুল ঘুম সে আমার মনেও নেই আর তারপর এই চেনা জেগে থাকা। এই জেগে থাকাটাই নিত্যকার রুটিন কাজেই এ নিয়ে চিন্তা নেই। আমি বরং ব্লগ লিখি..

দীপান্বিতার রাত, কালো রাত আলোয় আলোয় ঝকমক ঝকমক। নানারকমের বাজি ফাটছে মুহুর্মুহু, বাড়িগুলো সেজে আছে আলোর মালায়, জানালায় জানালায় টুনিবাল্বের ঝোলানো-প্যাচানো মালাগুলো জ্বলছে নিভছে, জ্বলছে নিভছে ঝিকমিক ঝিকমিক। ছাদভর্তি ফাটানো বাজির খোলা, আধফাটা না ফাটা ছোটোখাটো বাজিগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গোটা ছাদময়। নিচের খালি গ্যারাজঘর সদ্য আবারও খালি হয়েছে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর, সেখানেই লাল প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে ফ্ল্যাটবাড়ির লোকজন সব, মহিলামহল একজায়গায়, পুরুষেরা এদিক-ওদিক, কেউ সিগারেট, কেউ বা রাতের পানের ব্যবস্থায় ব্যস্ত, কেউ বা খুঁজছে আগের রাতে ছাদে ফেলে আসা আইসট্রেটি, সেটি আর খুঁজে পাওয়া যায় না যদিও। মাঝের একতলা লালবাড়িটির বারান্দা জুড়ে বালতি আর গামলায় রাখা খাবার সব, এখুনি খাওয়া শুরু হলো বলে, বাচ্চাগুলো এদিক ওদিক, মায়েরা ব্যস্ত পড়শি বউটির কেন লালরং অত পছন্দ তা আবিষ্কারে। এরই মধ্যে ইলেক্ট্রিশিয়ান হাজির বাড়ির সামনেটায় যা আলো লাগানো হয়েছে সেগুলো খুলে নিতে, তাকে অনেক বলেও বোঝানো যায় না, যে আরেকটু থাক, মা চলে গেছেন তো কী হয়েছে, ভক্তদের খাওয়া-দাওয়াটা অন্তত হোক!

ফ্ল্যাটবাড়ির বাসিন্দারা, এমনিতে যারা চুড়ান্ত ভদ্রলোক, বাড়ির পুজোর নামে চাঁদা তোলায় তারাই খড়গহস্ত। মোটা অংকের চাঁদা বাধ্যতামূলক দিতে কারই বা ভালো লাগবে, আমার অন্তত লাগেনি, কে কত দিয়েছেন সে সমস্ত শোনা হয়ে যায় আমার বেশ কয়েকবার করে। রাতের বিসর্জন পরবর্তী গেটটুগেদারে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রন বা নিমন্ত্রন কতটা আন্তরিক সে বিচারে আমি আর যাই না। ইতিমধ্যে বারকতক আমার শোনা হয়ে যায়, গতবার যেমন পালিয়ে গিয়েছিলাম, এবার যেন আর তেমনটি না হয়। আমি বুঝে যাই, পালাবার পথ নেই, ভাটন আর খ্যাটনে হাজির থাকতেই হবে, চাঁদার মতই এও বাধ্যতামূলক!

চ্যানেলে চ্যানেলে রিয়্যালিটি শো, কোথাও চান্স পে ডান্স তো কোথাও দাদাগিরি, একফাঁকে বালিকা বধু আর ফাঁকে ফাঁকেই ডান্স বাংলা ডান্সের প্রোমো। আজও দুমদাম ফাটছে শব্দবাজি, আকাশ চিরে দিয়ে উড়ে যায় রকেট আর আতস, খানিকটা আলোকিত থাকে বাজির আলোয় আবার সেই ল্যাম্পপোষ্টের মরা আলো। মশারা সব আজ বাড়ির ভেতরে, এমনিতেই জঙ্গল সাফাই আর বোজানো পুকুরের উপর দাঁড়িয়ে থাকা চারতলা সব বাড়ির উৎপাতে ওরা ঘর-বাড়িহীন তার উপর বাইরের অত আলো আর শব্দে ওরাও বেভুল, বাজির শব্দের সাথে সাথে শোনা যায় মশা তাড়ানোর শব্দও।

আজ ভাইফোঁটা ছিল। সকাল সকাল এক ভুলে যাওয়া নাকি হারিয়ে যাওয়া নম্বর থেকে ক্ষুদ্র বার্তা আসে, ফোঁটা নিয়ে নিলাম, আর আশীর্বাদও চেয়ে নিলাম, দিদি আমার শতায়ু হোক! নম্বর দেখে মনে করতে পারি না, কে হতে পারে? তবে ঠাউর হয়, কে হতে পারে, প্রতিবারেই আমি ভুলে যাই বলে ঠিক একইভাবে সে আমার কাছ থেকে ফোঁটা নিজে নিজেই নিয়ে নেয়.. মনে পড়ে গেল, একজনকে বলেছিলাম ফোঁটা দেব, মন থেকেই বলেছিলাম দেব কিন্তু গতবার কলকাতা থেকেই পালিয়ে গেছিলাম আর ফোঁটার কথা বেমালুম ভুলে গেছিলাম বলে আমাকে 'ব্লাডি ফাকিং মুসলিম' উপাধি পেতে হয়েছিল.. এখনও মাঝে মাঝেই প্রায় একই ভাষায় চিঠি-মন্তব্য চলে আসে আমার বিভিন্ন ঠিকানায়..যার মধ্যে যোগ হয়েছে আরো হাজার খানেক অভিযোগ, বিশেষণ!! আমার অবশ্য কোনো অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে..সত্যিই নেই..

মাঝরাতে চকোলেটের ক্ষিদে মেটাতে ফ্রীজের ভেতরটা আতিপাতি খুঁজেও পাওয়া যায় না চকোলেট, অগত্যা রমজানের লেফটওভার খেজুর। খুঁজে পাওয়া যায় না ফিলিপিন্সের ড্রাই ম্যাঙ্গোর প্যাকেটটিও। মেজাজ চরম খারাপ। আমার ভালুকজ্বর আবার বাড়ছে বেশ বুঝতে পারি..


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

পুজো দেখতে ভালোই লাগছিল।
কিন্তু শেষে এসে মনটা কেমন উদাস হয়ে গেলো।
/
ভণ্ড_মানব

শ্যাজা এর ছবি
পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

পরকীয়া প্রেমের মতো সেই জ্বর এখনো যায়নি। চিন্তিত
.......................................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

শ্যাজা এর ছবি
কারুবাসনা এর ছবি

ভালো।
ম্যাংগো কেসটায় আপসেট।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি এইরকম ব্লগ লিখতে থাকুন আর আমরা মুগ্ধ হইতে থাকি।

মহসীন রেজা

দময়ন্তী এর ছবি

আচ্ছা এই খিস্তিবাজ ভাইফোঁটালোভী লোকটিকে কি আমি চিনি?
চিনি আর নাই চিনি, এঁকে জিজ্ঞাসা কোরো তো উনি ওঁর কোনো বোনের আয়ুস্কামনায় কখনও কিছু অনুষ্ঠান পালন করেছেন কিনা?
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

শ্যাজা এর ছবি

বোধ হয় চেনো না..

আমি নিশ্চিত, এই প্রশ্ন সে নিজেই দেখে নেবে।

------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...

তুলিরেখা এর ছবি

মাঝরাতে কেউ চকোলেট খায়? মাঝরাতে খেতে হয় খোয়া ক্ষীর আর কাজুবরফি আর রাবড়ি আর পান্তুয়া আর নরম পাকের সন্দেশ! কাজুকিসমিস দেওয়া হিমশীতল পায়েস ও খাওয়া যায়। মোটা সরও খাওয়া যায়।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

শ্যাজা এর ছবি

রাবড়ি পান্তুয়া সন্দেশ? অথবা কাজু কিশকিশ দেওয়া শীতল পায়েস? চেহারাখানা দেখোনি তো!

তার থেকে এক কিউব চকোলেট অনেক ভালো হাসি

------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...

নৈষাদ এর ছবি

ফ্ল্যাটবাড়ির বাসিন্দারা, এমনিতে যারা চুড়ান্ত ভদ্রলোক, বাড়ির পুজোর নামে চাঁদা তোলায় তারাই খড়গহস্ত।….. তার মানে কি নিজের বাসায় পূজোর জন্য অন্যের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া? আদ্ভুত তো। আথবা বুঝাতে চেয়েছেন গ্রামের বাড়ীর পূজোর জন্য চাঁদা তোলা...।

আপাত উৎসবের আমেজের মাঝেও কী বিষণ্ন সুর...।

শ্যাজা এর ছবি

নৈষাদ,
তিনখানি বাড়ি নিয়ে ছোট্ট একটা কমপ্লেক্স, তারই পুজো, এই কমপ্লেক্সের পুজো। কমপ্লেক্সের সকল বাসিন্দাদের জন্যে চাঁদার একটা ন্যুনতম অংক নির্ধারণ করেন উদ্যোক্তারা, তবে তাঁরা যেটাকে ন্যুনতম বলেন, সেটা বেশ বড়সড় অংক মন খারাপ

আপনাকে ধন্যবাদ

------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...

অতিথি লেখক এর ছবি

চেহারা কিন্তু বলে শ্যাজা মাঝে মাঝে এক আধখান পান্তুয়া সন্দেশ খাওয়া যেতে পারে। নিদেনপক্ষে এক চামচ পায়েস!

ভাল লাগল শ্যাজার ব্লগ।

মধুবন্তী (মেঘ)
[অতিথি লেখক]

শ্যাজা এর ছবি

মধুবন্তী!!

এসে ঘুরে গেছ, অনেক ধন্যযোগ হাসি

------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...

অতিথি লেখক এর ছবি

তোমাকে তো কোথাও পেলাম না লেখায়। যেখানে পেলাম সেখানেও ভালুক জ্বরটা বাগড়া দিল।

ভালুক জ্বর নিয়ে কিছু কী করলে, নাকি ওটা বয়ে বেড়াবে।

- নীল মানব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।