একতরফা যুদ্ধবিরতি: ইসরাইলের মূল পরিকল্পনার পরাজয়

সিরাজ এর ছবি
লিখেছেন সিরাজ [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১৮/০১/২০০৯ - ১২:৫৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই একতরফা যুদ্ধবিরতি ইসরাইলের পূর্বপরিকল্পিত, প্লান বি। ইসরাইলি সৈন্য এই মূহুর্তেই গাজা ছাড়ছেনা তার মানে কি? এখন হামাস ইসরাইলি সৈন্যদের আক্রমন করলে এবং রকেট পাঠালে ইসরাইল কি করবে? হামাস কালও ২০ টি রকেট পাঠিয়েছে।

আমার মনে হয় হামাসই প্যলেস্টাইনের মুক্তি আনতে পারে। গত নির্বাচনে বিজয, তাদের জনপ্রিয়তা, যুদ্ধবিরতি পালন এবং দুর্নীতিবিহীন প্রশাশন এ যাবত তাদের কর্মকান্ড একটি সফল মুক্তিবাহীনিরই নিদর্শন। এটি ইসরাইল এবং ফাতাহ্ উভয়কেই ভীত করে তুলেছে।

ইরাক আক্রমনের কয়েক দিন পরই বুশ ঘোষনা করেছিল "মিশন একমপ্লিশড", ছয় বছর পর এখনও লেজ গুটাতে লজ্জা। এই একতরফা যুদ্ধবিরতি ইসরাইলের মূল পরিকল্পনার পরাজয়, যেটি ছিল ব্যাপক ধ্বংশযজ্ঞের মাধ্যমে হামাসের কাঠামো ধ্বংশ করা, প্যলেস্টাইনিদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া ও বিপুল পরিমান প্যলেস্টাইনিদের দেশত্যাগে বাধ্য করা। হামাসের দৃঢ়তা ও মিশরের শক্ত অবস্থান ইসরাইলের মূল পরিকল্পনা ব্যার্থ করে দেয়। এর সাথে বুশের বিদায় এবং আসন্ন নির্বাচন ইসরাইলকে সময়ের চাপেও ফেলে দেয়।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

তাদের জনপ্রিয়তা, যুদ্ধবিরতি পালন এবং দুর্নীতিবিহীন প্রশাশন এ যাবত তাদের কর্মকান্ড একটি সফল মুক্তিবাহিনীরই নিদর্শন। এটি ইসরাইল এবং ফাতাহ্ উভয়কেই ভীত করে তুলেছে।

ঘটনা সত্যি। একারণে ইসরাইলের পক্ষ থেকে ফাতাহ-প্রধান ঘুষ পাচ্ছেন তৃতীয় হাত থেকে যাতে তিনি হামাসকে ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-দুর্দশার কারণ বলে প্রমাণিত করতে চেষ্টা করেন। তবে ইসরাইলের চাইতে ফাতাহ বেশি ভীত। তাদের অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখে যে।

আরেকটি কারণ মার্কিনে ক্ষমতার হাতবদল। বুশ থাকতে থাকতে একটা কামড় দিলে মন্দ হয় না, আর ওবামার হাবভাবও বোঝা গেল।

হামাস সত্যিই কাণ্ডারি হয়ে উঠছে।

প্রফাইল

....................................................................................................................
এভাবেই স্থবির ঘর একদিন উড়ে যাবে
উড়ে উড়ে যাবে

কীর্তিনাশা এর ছবি

আমি এত কিছু বুঝি না।

আমার একটাই চাওয়া - ফিলিস্তিনিরা দ্রুত একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ পাক।
আর বন্ধ হোক সব বর্বর হত্যাযজ্ঞ। আর বিচার হোক ঐসব ঘৃন্য হন্তারকদের, যুদ্ধাপরাধীদের।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

রায়হান আবীর এর ছবি

আমার মনে হয় হামাসই প্যলেস্টাইনের মুক্তি আনতে পারে। গত নির্বাচনে বিজয, তাদের জনপ্রিয়তা, যুদ্ধবিরতি পালন এবং দুর্নীতিবিহীন প্রশাশন এ যাবত তাদের কর্মকান্ড একটি সফল মুক্তিবাহীনিরই নিদর্শন

কয়েকমাস আগে আমার এক প্যালেস্টাইনি বন্ধুর সাথে তাদের দেশ নিয়ে কথা হচ্ছিল। কথায় কথায় ও জানালো- হামাসের চেয়ে ইসরাইলী সেনারা ভালো (তখন এমন নির্বিচারে গনহত্যা শুরু হয়নি)। হামাস তখন নির্বিচারে নিজের দেশের মানুষ হত্যা করতো।

সুতরাং হামাসকে এভাবে বিশেষায়িত করার আগে আরেকটু ভাবুন।

=============================

সিরাজ এর ছবি

কয়েকমাস আগে আমার এক প্যালেস্টাইনি বন্ধুর সাথে তাদের দেশ নিয়ে কথা হচ্ছিল। কথায় কথায় ও জানালো- হামাসের চেয়ে ইসরাইলী সেনারা ভালো (তখন এমন নির্বিচারে গনহত্যা শুরু হয়নি)। হামাস তখন নির্বিচারে নিজের দেশের মানুষ হত্যা করতো।

আপনার ঐ বন্ধু হয়তো ফাতাহর কট্টর সমর্থক। হামাসের দুর্ষ্কর্ম দুনিয়াব্যাপি রটানোর জন্য পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর উত্সাহের কোন শেষ নেই। নির্বিচারে নিজের দেশের মানুষ হত্যা করলে তারা কি নির্বাচিত হতো? এই সময়ে ওয়েষ্ট ব্যাংকেও হামাসের সমর্থনে মিছিল দেখা গেছে যা সেখানে নিষিদ্ধ। আমার এক ফরাসী ডাক্তার বন্ধু ডিসেম্বর '০৮ পর্যন্ত গাজায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কর্মরত ছিল। তার মতে হামাসের সময় গাজা ছিল বেষ্ট রুলড্ এভার। দুর্নীতি ছিল না, সন্ত্রাস ছিল না (তার ভাষায় রাত দুটোয় একাকী পথিকও ছিল নিরাপদ)। সবচেয়ে আশ্চর্য্য তাদের আচরণ মোটেও মৌলবাদিদের মত ছিল না। তিনি গাজা-বাসীর অনেক পার্টিতে গেছেন যেখানে বুজ এবং পশ্চিমা সঙ্গীত উভয়ই চলত। আমার ঐ বন্ধুর ভাষায় হামাসের মুল ক্রেডিট হলো গাজা-বাসীর হারানো আত্মসন্মানবোধ জাগ্রত করা। তারা আজ বুঝছে পশ্চিমা বিশ্ব এবং আরবদের "সহানুভূতি" এবং "সাহায্য" যত লোভনীয়ই হোক তা তাদের স্বাধীনতা এনে দেবে না।

:.:::....:..::..:.::...:.:.:...:.:..:..:::....::..:...:..:.:.:....:..:.:.:.:.
To see Photos Visit: www.sirajul.com

:.:::....:..::..:.::...:.:.:...:.:..:..:::....::..:...:..:.:.:....:..:.:.:.:.
To see Photos Visit: www.sirajul.com

রায়হান আবীর এর ছবি

আজকে প্যালেস্টাইনী আরও অনেকের সাথে কথা বললাম। তারা সবাই "হামাস" এর সম্পর্কে ভালো কিছু বলতে পারলো না। কারও বন্ধু মৃত্যু বরণ করেছ হামাসের হাতে, কারও কাজিন। আইইউটিতে সব ফাতাহর কট্টর সমর্থকরা কিভাবে এক হলো বুঝলাম না। প্যালেস্টাইনে আরও ফরাসী ডাক্তারের মতো মানুষ জন্ম নিক এই কামনা। অবশ্য তেমন না হলেও, প্যালেস্টাইনে ফাতাহ সমর্থক কাউকে কয়েক বছর পর আর পাওয়া যাবে না, হামাস তাদের বেস্ট রুল এভার দ্বারা সবাইকে সাইজ করে দিবে।

=============================

সিরাজ এর ছবি

এখানে অর্থনৈতিক বৈষ্যম্যের ব্যাপারটাও হিসাবে ধরতে হবে। প্যালেস্টাইনী এলিট যারা (শুনেছি অনেকেই প্রচুর টাকার মালিক সেখানে, তারাই ফাতাহর বেশীরভাগ সমর্থক) তারা হামাস বিরোধী। পৃথীবির সব দেশেই এলিটরা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী। অসম্ভব নয় যে আপনার আইইউটির বন্ধুরা ঐসব এলিট সন্তান। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আগেও অনেক বাঙালী এলিট এবং এলিট সন্তানরা "মুক্তিযুদ্ধকে" "গন্ডগোল" বলতো এবং এর নির্লিপ্ত বিরোধী ছিল, কারন এর ফলে তাদের অনেক প্রাত্যাহীক অসুবিধা এবং আর্থিক ক্ষতি হচ্ছিল। একটা জিনিষ মনে রাখতে হবে, ইসরাইলের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সব প্যালেস্টাইনিদের সেখান থেকে বিতাড়ন করা এবং পুরো মানচিত্র তাদের একছত্র করে নেওয়া, এতে যদি প্যালেস্টাইনিদের (এবং আপনার বন্ধুদের) আপত্তি না থাকে তবে আমরা কোথাকার কে? আজ এই ডাইলেমা তাদের সামনে, একদিকে অগাধ আরব ও পশ্চিমা অর্থ সাহায্য আর অপরদিকে স্বাধীনতা।

:.:::....:..::..:.::...:.:.:...:.:..:..:::....::..:...:..:.:.:....:..:.:.:.:.
To see Photos Visit: www.sirajul.com

:.:::....:..::..:.::...:.:.:...:.:..:..:::....::..:...:..:.:.:....:..:.:.:.:.
To see Photos Visit: www.sirajul.com

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

International student বেশীরভাগই "সান অফ এ রিচ" (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে)। ওদের দিয়ে দেশের জনমত বিচারে বিপদ আছে। অন্ততঃ আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে।

রায়হান আবীর এর ছবি

"সান অফ রিচ" সংক্রান্ত আপনার ধারণা সত্যি হবে- যদি একজন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে আম্রিকা, কানাডা এইসব জায়গায় যায়। আমাদের এইখানে প্যালেস্টাইনী ছেলেদের টিউশন ফি লাগে না, মাস শেষে তাদের পয়সা দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে "সান অফ রিচ" ধারণা ঠিক নয়।

=============================

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

দুঃখিত আবেগের বশে আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহারের জন্য।
তবে, পয়সা না লাগলেও অনেকক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক সুযোগ লাগে ভিনদেশে বৃত্তি নিয়ে পড়তে গেলে। সেটা প্রভাবশালী না হলে অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না।
যাহোক, অবশ্যই আপনার ফার্স্ট হ্যান্ড জানা আমাদের বই পড়ে জানার চাইতে মূল্যবান।

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

হামাসের চেয়ে ইসরাইলী সেনারা ভালো (তখন এমন নির্বিচারে গনহত্যা শুরু হয়নি)। হামাস তখন নির্বিচারে নিজের দেশের মানুষ হত্যা করতো।

এ ব্যাপারে একটু তথ্য প্রমাণ সহ বলুন। আমি হামাসের ইতিহাস খুব বেশি ঘাটিনি। তবে, যতদিন ধরে বর্তমান হামাস সম্পর্কে জানি, তাতে আপনার বন্ধুটির বক্তব্য আমার ধারণার বিপরীত। তাই জানা প্রয়োজন।

তবে অতীত যাই হোক, বর্তমানে ফিলিস্তিন মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র কাণ্ডারী হামাস ই।

দিগন্ত এর ছবি

হামাস দেশে যাদের মারত তারা ফাতার কর্মী। হামাসের চার্টার খুব একটা ভাল কিছু নয়, যেটা পড়েছিলাম এখানে

পোস্টের মূল বক্তব্যের সাথে আমি একমত নই। ইজরায়েলের যুদ্ধবিরতি পরাজয়ের লক্ষণ নয়, আর পরাজয়ের লক্ষণ মনে হলে এই পরাজয় তো তাদের গত ৬০ বছরে অসংখ্যবার হয়েছে, কিন্তু ব্যালান্স অব পাওয়ার তো ক্রমাগত তাদের দিকেই সরে যাচ্ছে।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সিরাজ এর ছবি

আমাদের বুঝতে হবে গত ৬০ বছরের ব্যার্থতাই হামাসের জন্ম দিয়েছে। বুঝতে হবে আরাফাতের উত্তরসূরী ফাতাহ্ আজ ইসরাইলি-মার্কিনীদের কাছে পরিহাসের বস্তু। আর হামাসের মুল নীতিতেও অনেক পরীবর্তন এসেছে বিশেষ করে নির্বানে জয়ের পর।

আমি বলেছি ২২ দিন পরের এই যুদ্ধবিরতি "ইসরাইলের মূল পরিকল্পনার পরাজয়" য ছিল গাজাবাসীদের নিজ ভূমি থেকে ক্রমান্বয়ে বিতাড়িত করা। যা আগে অনেকবার সফল হলেও এবার হয় নি।

এখানে দেখুন:

The Invasion of Gaza: "Operation Cast Lead", Part of a Broader Israeli Military-Intelligence Agenda

:.:::....:..::..:.::...:.:.:...:.:..:..:::....::..:...:..:.:.:....:..:.:.:.:.
To see Photos Visit: www.sirajul.com

:.:::....:..::..:.::...:.:.:...:.:..:..:::....::..:...:..:.:.:....:..:.:.:.:.
To see Photos Visit: www.sirajul.com

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

হামাসের চার্টার পড়লাম। আরো জানার জন্য কিছু গুগলাইলাম।

এটা সত্য যে, হামাসের জন্ম একটি মার্কিন মদদপুষ্ট ইসলামী মৌলবাদী সংগঠন "মুসলিম ব্রাদারহুড" এর অঙ্গ সংগঠন হিসাবে।

তবে ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে হামাসের আদর্শিক বিবর্তন টাও বিবেচনায় আনতে হবে।

আমার ধারণা, ইতিহাসের স্বাভাবিক নিয়মেই হামাসের নেতৃত্ব কালক্রমে ধর্মীয় গোড়ামীর জায়গায় ভূ-রাজনৈতিক প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়েছে। তাই হামাসকে তার কর্মকাণ্ডের নিরিখেই বিচার করতে হবে।

এটাও মনে রাখা দরকার, আমাদের দৃষ্টিশক্তি অনেকটাই কর্পোরেট এবং জায়নিস্ট প্রচার মাধ্যমের কল্যানে শৃঙ্খলিত।

হামাস নিয়ে একটা বই

Hamas - a beginner's guide

এবং তার একটি সমালোচনা -

বইটা পড়া হয়নি, সুজোগ পেলে পড়ব।

এ প্রসংগে জাতিসংঘের প্রাক্তন দূত জেরেমি গ্রীনস্টক এর স্বীকারোক্তি ও বিবেচ্য।

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

হামাসের আদর্শিক বিবর্তনের সপক্ষে কিছু তথ্য- খালেদ রুব এর একটি লেখা (২০০৬ সালের)।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।