মিছির আলী, ৪০ বছর ধরে তোমায় আমরা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছি এ লজ্জ্বা আমাদের।

থার্ড আই এর ছবি
লিখেছেন থার্ড আই (তারিখ: শুক্র, ০১/০৪/২০১১ - ৮:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চল্লিশ বছর ধরে যে মানুষটা একটা ছবি লেমিনেটিং করে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে, কেউ তার কথা শুনেনি, স্বীকৃতি মিলেনি প্রবাসের প্রথম পতাক সৈনিক মিছির আলির। ১৪ ডিসেম্বর বার্মিংহাম শহরের মিষ্টি দেশ রেস্তোরায় মিছির আলীর সাথে প্রথম দেখা। চ্যানেল আই'র ইউকে ও ইউরোপের এমডি শোয়েব ভাই, আমি, আমার সহকর্মী শুভ ভাই আর জামান ভাই আমরা চারজন আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি সৈয়দ নাসিরের আমন্ত্রনে বামিংহাম প্রবাসী সুধিজন ও কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের নিয়ে একটা নেটওয়ার্কিং মিটিংএ সকলের কথা শুনছিলাম , কিভাবে বামিংহামের বাঙালিদের সমস্যগুলো গণমাধ্যমে তুলে আনা যায় , কিভাবে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের মতো করে অনুষ্ঠানমালা সাজানো যায় তাই নিয়ে সকলে নানান পরামর্শ দিচ্ছিল। মিছির আলীর পালা এলে, সেই পুরোনো সুরে মিছির আলী বলে উঠলো ২৮ মার্চ আমরা সবাই বার্মিংহাম প্রথম পতাকা তুলেছিলাম, সেই কথা কেউ স্বরণ করে না, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকেরা অবহেলিত থেকে গেছে। অথচ ২৫ মার্চ গনহত্যার খবর ‍বিশ্বব্যপী ছড়িয়ে পড়লে ২৮ মার্চ ১৯৭১ সনে, স্মলহিথ পার্কে প্রায় ১০ হাজার প্রবাসী বাঙালি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে বাংলাদেশ স্বাধীন করার শপথ নিয়েছিলো। সেই দিনগুলোতে ব্রিটেন প্রবাসীরা এভাবে সংগ্রাম না করলে বিশ্বজনমত গঠন করা সহজ হতো না। বিভিন্ন মন্ত্রী এমপিদের কাছে চিঠি লিখা, গনহত্যা বন্ধের দাবী নিয়ে হাইড পার্ক, ট্রাফালগার স্কয়ার ও স্পিকার্স কর্ণারে মিছিল করা, পাকিস্তানের পতাকা জ্বালিয়ে দেয়া, অস্ত্র কিনতে হাজার হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করে দেশে না পাঠালে হয়তো বিজয়ের স্বাদ পেতে আমাদের আরো দেরী হতো।
[url=]Channel i news[/url]
২৮ মার্চ তারিখেই মিছির আলী পাকিস্তানিদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে উড়িয়েছিলেন স্বাধীন বাংলার পতাকা। প্রায় দুই শত পাকিস্তানী সেই সমাবেশে হামলা করলে পরবর্তীতে দাঙ্গা বেঁধে যায়, আহত হয় ছয়জন বাঙালি গ্রেফতার হয় আট জন। মিছির আলীর কন্ঠে অবহেলার সুর শুনে প্রবাসের প্রথম পতাকা সৈনিককে আবিস্কারের নেশা পেয়ে বসলো আমাকে। ছুটে বেড়িয়েছি শত শত মাইল, লন্ডন থেকে বামিংহামে টানা ১০০ দিনের সফর শেষে ৪০ বছর পর আবারো সেই সব সূর্য সন্তানদের একত্রিত করার সৌভাগ্য হলো আমাদের। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিশ্বজনমত গঠনে সহায়তা আদায় ও অর্থ সংগ্রেহ অনন্য ভূমিকা পালনকারী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের নিয়ে নির্মান হলো ৩০ মিনিটের প্রামান্যচিত্র। সম্মান পেলো ৪০ জন বামিংহাম প্রবাসী মহান বাঙালি।
[url][/url]
মিছির আলী তোমায় লাল সালাম, ৪০ বছর ধরে তোমায় আমরা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছি এ লজ্জ্বা আমাদের।

ছবি: 
01/07/2007 - 5:56am

মন্তব্য

সাফি এর ছবি

পৃথিবীর আনাচে কানাচে এভাবে ছড়িয়ে আছে আরও কত মিছির আলীরা... তাঁদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা

ফাহিম হাসান এর ছবি

কত অজানা!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ধন্যবাদ এই পোস্টটির জন্য। আরও কত মিছির আলী আমাদের চোখের আড়ালো থেকে গেলেন কে জানে!

নীলকান্ত এর ছবি

বাংলার আকাশে পাকিস্তানের পতাকা উড়তে পারে, যাদের কারণে আজ আমরা স্বাধীন তারা রয়ে যায় অবহেলিত।


অলস সময়

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অসাধারণ একটা কাজ স্যার
সালাম মিসির আলীকে
স্যালুট আপনাকে

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

সালাম মিসির আলীকে..........

বইখাতা এর ছবি

এমন কতজনের খবর যে অজানা রয়ে গেছে...। ধন্যবাদ আপনাকে। মিছির আলীকে শ্রদ্ধা।

অতিথী  এর ছবি

দারুন একটা কাজ করেছেন। আস্তে আস্তে সবাইকে খুঁজে বার করতে হবে। তাদের কথা জানাতে হবে সবাইকে। এই সব মানুষেরা বড্ড অভিমানী হন, সংগত কারণেই অবশ্য।
আপনাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

-নিলম্বিত গণিতক

নিবিড় এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অসাধারণ কাজ, স্যালুট

মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসী বাঙালিদের অবদান নিয়ে একাধিক বই পড়েছি। আব্দুল মতিন, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, শেখ আব্দুল মান্নান, মজনু নুল হকদের বইতে কোথাও দশ হাজার বাঙালির অংশগ্রহণে পতাকা ওড়ানোর ঘটনাটা স্থান পায়নি কেন?
এমনকি প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যেও কোথাও মিছির আলীর নাম পাইনি। অন্য অনেক অনেক নাম আছে।

তাই প্রথমত জানা প্রয়োজন
১) এই ঘটনাটা আড়াল করা হলো কেন আর কিভাবে? কারা করলো?
২) সংগঠক হিসেবে অন্য যাদের নাম পড়ি... তারা কি এই দশ হাজার বাঙালির মধ্যে ছিলেন?
৩) ২৮ মার্চের পরে মিছির আলী কি হারিয়ে গিয়েছিলেন?
৪) ৪০ জন শ্রেষ্ঠ বাঙালির নাম তালিকাটা পোস্টে দিয়ে দিলে ভালো হতো।
৫) "চল্লিশ জন শ্রেষ্ঠ বাঙালি" কথাটা ঠিক পছন্দ হলো না। অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধে যারা প্রবাসে থেকে জনমত এবং অর্থ সংগঠন করেছে তাঁরা মহান, কিন্তু শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় শুধু তারাই থাকবেন না বোধকরি। এই সম্বোধনটা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করি।
৬) ৩০ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রটা দেখতে চাই

আর সবশেষে সম্বর্ধনা দেওয়ার জন্য আসম রবের আমদানী দেখে মজা পাইলাম। ইতিহাস বিচারে ঠিক আছে, কিন্তু ইতিহাসের এই ভাঁড়কে বইয়ের পাতায় তুলে রাখাই ভালো মনে করি। খালি দুর্গন্ধ ছড়ায়

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

মিছির আলীকে লাল সালাম

সালেক খোকন

থার্ড আই এর ছবি

প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আলাদা পোস্ট লাগবে। আশা করি সময় নিয়ে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
তবে অনুমান করি, যেহেতু ২৪ এপ্রিল ১৯৭১ সনে কভেন্ট্রি সম্মেলনের পর থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রবাসি বাঙালিরা এ্যকশন কমিটি গঠনের মাধ্যমে পুরো বৃটেনে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেন তাই ইতিহাস গ্রন্থ গুলোতে কভেন্ট্রি সম্মেলনের আগে ২৮ মার্চ তারিখে শুধু মাত্র বামিংহাম প্রবাসী বাঙালিদের এই শপথ সভা ও পতাকা উড়ানোর বিষয়টি স্থান পায়নি। মুজিব নগর সরকারের প্রতিনিধি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর উপস্থিতিতেই কভেন্ট্রি সম্মেলনে স্টিয়ারিং কমিটি গঠিত হয়। কভেন্ট্রি সম্মেলনে যে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট স্ট্রিয়ারিং কমিটি গঠিত হয় তারা ছিলেন :

১ আজিজুল হক ভূঞা ( বামিংহাম )
২. কবির চৌধূরী (ম্যানচেষ্টার)
৩ মনোয়ার হোসেন (ব্রাডফোর্ড)
৪. শেখ আবদুল মান্নান ( লন্ডন)
৫. শামসুর রহমান ( পূর্ব লন্ডন)

কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটি ছাড়াও বিভিন্ন শহরে আলাদা আলাদা ভাবে এ্যকশন কমিটি গঠিত হয়েছিলো এবং সেই সভা সমাবেশ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পেশাজীবী বাঙালিরাই করেছিলো। বিভিন্ন গনমাধ্যমে বাংলাদেশের খবর সংগ্রহ করে তারা হাতে লিখে প্রচার পত্র বিলি করে করে তারা সংগঠিত করেছিলেন বিভিন্ন শ্রেনী পেশা মানুষদের। বামিংহাম এ্যকশন কমিটির সভাপতি জগলুল পাশা ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক ভূঞা যিনি কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য তাদের উদ্যোগে ২৮ মার্চ বামিংহামের স্মলহিথ পার্কে শপথ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই মিছির আলী পতাকা তুলেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বামিংহাম প্রবাসী বাঙলি সংগঠকদের দাবী ইতিহাস গ্রন্থ লেখার সময় কোন লেখক বামিংহাম প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের সাথে কথা বলেনি অথবা যারা বই লিখেছেন তারা লন্ডন ভিত্তিক আন্দোলন সংগ্রাম গুলোকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। সেই সময়ের এই আন্দোলন সংগ্রামের কথা স্থানীয় পত্রিকাতে এই সংবাদ ছাপা হয়েছে। আমি সেই পেপার কাটিং নিয়ে বিস্তারিত লেখার অপেক্ষায় আছি।

মিছির আলি ৪০ বছর বার্মিংহামেই ছিলেন, শুধু মাত্র ইউসুফ চৌধুরী নামে একজন লেখক এই তথ্যটি স্বীকার করেছেন, যিনি ১৯৭১ সনে বাঙালির আন্দোলন সংগ্রামের আলোকচিত্র ধারণ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন ব্রিটেনের অনেক দূর্লভ ছবিও তিনি তুলেছেন। মিছির আলির ছবিটিও তিনিই তুলেছেন। আর কেন এই ঘটনাটি আড়াল হলো সেই গবেষনাই চলছে , বিস্তারিত জানাতে আর সময় চাই।

শ্রেষ্ঠ বাঙালির স্থানে মহান বাঙালি ব্যবহার করলাম। ৪০ জনের তালিকাটি শুধু মাত্র ঐদিন যারা শপথ সভায় ছিলেন এবং বার্মিংহাম শহর থেকে যারা মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে বিশ্বজনমত গঠনে সহায়তা করেছেন সেই আলোকে করা হয়েছে। আশা করছি সেটিও পরবর্তী পোস্টে দেবো।

ডুকুমেন্টারীটি প্রচার করতে আরো একটু সময় লাগবে, এখনও অন এয়ার হয় নাই। অন এয়ারের আগে পোস্ট দিতে পারছি না।

নজরুল ইসলাম, নিবিড়,বইখাতা,মাহবুব লীলেন,এস এম মাহবুব মুর্শেদ,পলাশ রঞ্জন সান্যাল,ফাহিম হাসান,সাফি মন্তব্যের জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

অতিথি লেখক এর ছবি

দুঃখ যে আমাদের সূর্যসন্তানদের সঠিক মর্যাদা আমরা দিতে পারিনি বরং দেশদ্রোহীদের ক্ষমতার আসনে বসিয়েছি সগর্বে ... মন খারাপ

নীড় সন্ধানী এর ছবি

মিছির আলীকে স্যালুট। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ পোষ্টের জন্য!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।