হে মহামহিম আগা খান

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: সোম, ১৯/০৫/২০০৮ - ৯:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


--------------------------------------------------
দুপুরবেলা পেট পুরে খেয়ে একটা ফাশটো কেলাশ ভাতঘুম দেওয়ার মতলব আটছি, এমন সময় ছাত্রের জরুরী ফোন, "ভাইয়া আপনি এক্ষুনি পড়াতে আসেন"।

সবুজবাঘের ভাষা ধার করে, ঘুমের মাকে উলটে পালটে ভালোবেসে, ঠা ঠা পড়া দুপুরের রোঁদে পা চালিয়ে, কাওরানবাজার সার্ক ফোয়ারার সামনে দাঁড়লাম - উদ্দেশ্য বারো নম্বর বাস ধরে বাদুরঝোলা হয়ে মোহাম্মদপুর যাওয়া। এমনিতে এই দুপুর বিকালের সন্ধিক্ষণে বাসগুলিতে ভীড় একটু কম হয় - নিশ্চিন্ত মনে তাই দাঁড়িয়ে আছি বাসের জন্য। হঠাৎ খেয়াল করলাম বাংলামোটর থেকে এদিকে কোন গাড়ি আসছে না। আরো দেখলাম রাস্তায় পুলিশ থই থই, কাউকে ফুটপাত ছেড়ে নিচে দাঁড়াতে দিচ্ছে না, মানুষ যদি ভুলেও একটু নিচে নেমে দাঁড়ায়, তাহলে কোথার থেকে একদল পুলিশ এসে একদম শাপ শাপান্ত করে দিছে। সবই তো বুঝলাম, কিন্তু ঘটনা টা কি ?


-----------------------------------------------------
হঠাৎ পুলিশের মধ্যে একটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি হল, ওই আসছে, ওই আসছে । কিন্তু কে ? সারি সারি গাড়ি গেল আগে পিছে হুইসেল বাঁজাতে বাঁজাতে। জনশ্রুতি শোনা গেল, উনিই প্রিন্স আগা খান।

এর মধ্যে চলে গিয়েছে ১৫ মিনিটেরও বেশি সময়, কুকুরকে ভালোবাসার উপযুক্ত এই রোঁদে দাঁড়িয়ে থেকে এরই মধ্যে মাথা টনটন করছে। তার সাথে যোগ হয়েছে নন ম্যাট্রিক অশিক্ষিত কনস্টেবল এবং ম্যাট্রিক পাস অশিক্ষিত পুলিশ অফিসারের অকারণ হম্বিতম্বিতে সৃষ্টি হওয়া বিরক্তি। গাড়ি চলাচল আবার স্বাভাবিক করে দেওয়া হল। এর মধ্যে সে জায়গা রীতিমত জনসমুদ্র - বাসে উঠতে হল তিন চারটা জোয়ান মর্দ মানুষের শু এবং স্যান্ডেলের পাড়া খেয়ে, এবং সারা রাস্তা গেল কোন সিট না পেয়ে, অন্যান্য ঘর্মাক্ত মানুষের সাথে গা ঠেকিয়ে বাদুড় ঝোলা হয়ে। এর মধ্যে ফার্মগেটের কাছে ওভারব্রীজে টকটকে লাল ব্যানার ঝোলানো দেখলাম, " মহা মহিম আগাখানের আগমনে শুভেচ্ছা "। এত দুঃখের মধ্যেও হাসি চাপতে পারলাম না।

-----------------------------------------------------
হে মহামহিম আগা খান, আপনি তো বটেই, সেই সাথে আপনাকে যারা আমন্ত্রন জানিয়ে নিয়ে এসেছেন, সবাই অত্যন্ত গন্যমান্য ব্যক্তি। আপনারাই আমাদের বাপ-মা। আপনাদের চলাচলের জন্য সার্ফ এক্সেলে ধোয়া শার্টের মত পরিষ্কার রাস্তা রাখা আমাদের কর্তব্য। দেরীতে হলেও তাই আমরা সার কথাটা বুঝে গিয়েছি,

রাস্তা দিয়ে মহামহিম অতিথি আগা খান কিংবা তাদের মেজবান গোড়া খান যারাই যান না কেন, আমরা নমঃশূদ্ররা কেবল গুয়ামারাই খাবো।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা 'গুয়ামারা খান' মন খারাপ

- এনকিদু

সবজান্তা এর ছবি

একথাটাই তো বলতে চেয়েছি। আমাদের কপালে আগা কিংবা গোড়া কিছুই নেই, আছে শুধু ... ...


অলমিতি বিস্তারেণ

খেকশিয়াল এর ছবি

রাস্তা দিয়ে মহামহিম অতিথি আগা খান কিংবা তাদের মেজবান গোড়া খান যারাই জান না কেন, আমরা নমঃশূদ্ররা কেবল গুয়ামারাই খাবো

হা হা হা হা হা হা হা গড়াগড়ি দিয়া হাসি

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

সবজান্তা এর ছবি

হাসেন ?

আমিও হাসছি, তয় দুঃখের। কেউ বুঝবে না কি রকম যন্ত্রনা লাগে যখন স্বদেশী কিংবা বিদেশী "খান"দের জন্য আমরা ভোদাই সাইজা রাস্তায় খাড়ায়া থাকি।


অলমিতি বিস্তারেণ

খেকশিয়াল এর ছবি

দুঃখ যন্ত্রনার পরেও হাসিবার পারি দেইখাই তো আমরা বাঙ্গালীরে, বুঝস না কেন দেঁতো হাসি

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍সবই তো বুঝলাম, কিন্তু ঘটনা টা কি ?

আপনি, সবজান্তা, এমন প্রশ্ন করলে ক্যাম্নেকী? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি তুষ্ট আত্মপ্রেমেই। এর সুবিধে হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই চোখ টিপি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সবজান্তা এর ছবি

নাহরে ভাই, যত বড় তাফালিং -ই হই না কেন, এইসব আগাখান কিংবা গোড়াখানের কাছে আমি হরিদাস পাল মন খারাপ


অলমিতি বিস্তারেণ

সবজান্তা এর ছবি

এই যে


অলমিতি বিস্তারেণ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।