আটপৌরে জীবনের চিরন্তন একাগল্প

সৌরভ এর ছবি
লিখেছেন সৌরভ (তারিখ: সোম, ২৪/১২/২০০৭ - ১:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.

::ডিসেম্বর ২১, ০৩:৩০ ::
ঘড়ির কাটা ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে রাত দুটোর ঘর, স্কুলের বড় গেটটা ছাড়া সব বন্ধ হয়ে গেছে, তাই বিরক্তির সাথে এই প্রায় শূন্য ডিগ্রি ঠাণ্ডার মাঝে, জোরে সাইকেলে প্যাডেল ঘুরিয়ে ঘুরপথে ছোট ঠিকানায় ফিরি। বাসায় ফিরে ল্যাপটপের সিডি ড্রাইভে বুট সিডি ঢুকিয়ে দিয়ে, পাওয়ার অন করে, শাওয়ার নিতে ঢুকি।
ল্যাপি বাবাজির কি যেন হয়েছে, ডিস্কের পাওয়ার খুঁজে পায়না, সিডি থেকে ডিভাইস ড্রাইভার লোড করে, অনেকক্ষণ পর রিস্টার্ট দিলে কাজ হয়, তাই শাওয়ারে ঢোকার আগে অনেকটা কাজ সেরে রাখি।

এই সিমেস্টারে যে তিনটা ক্লাস করতাম, তার একটার মিডটার্ম অ্যাসাইনমেন্ট এর ডেডলাইন কাল।

নতুন তারবিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এর জন্যে জাপানে ২.৫ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি বন্টনের কাজ মোটামুটি শেষ। ওয়াইম্যাক্স নামের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারবিহীন ব্রডব্যান্ড এর কাজের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে কেডিডিআই আর উইলকম। কেডিডিআই র সাথে চিপদৈত্য ইন্টেল আছে, তাই বলাই বাহুল্য, তারা ওয়াইম্যাক্স ব্যবহারে এক পা এগিয়ে।

এই প্রেক্ষাপটে পরবর্তী তারবিহীন ব্রডব্যান্ডে আইএসপি, সেল ক্যারিয়ার আর ডিভাইস মেকার - কার অবস্থান কীরকম হবে, সেই নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট।

একটা দিন গেলো এই নিয়ে। তবে সামনে আসছে শুভদিন ....
তার ছাড়াই ব্রডব্যান্ড স্পিড পাওয়া যাবে - ভাবতেই ভালো লাগছে।

চাকুরি শিকারে আপাতত একটা "কমা" দিসি।
ফুলস্টপ দেই নাই অবশ্য, শীগগিরই ভালোমতোন কিছু শুরু না করলে না খেয়ে মরতে হবে এক বছর পর থেকে, সেইটা মাথায় আছে। সামার ইন্টার্ন করছিলাম যেইখানে, সেই গোল্ডম্যান স্যাক্স ছ্যাঁক দিছে, তবে সামান্যতম দুঃখ পাই নাই, কারণ ছ্যাঁকের তো কেবল শুরু। চলছে চলবে এইসব। তবে ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম গুলানের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, পৃথিবী এখন চীনা বা এশিয়ান রঙে রঞ্জিত হওয়ার জন্যে প্রস্তুতসাবপ্রাইম মর্টগেজ সংকটে মোটামুটি ক্ষতবিক্ষত মেরিল লিঞ্চ , মরগ্যান স্ট্যানলে, অন্যেরাও। ফার্মগুলানে ক্যাশ ইনজেকশন হইতেসে চীন বা সিঙ্গাপোর থেকে।

আমি আংভাঙ কম্প্যু সায়েন্সই ঠিকমতো বুঝি না আর এতো আমার পড়াশুনারও বাইরে, তাই এতোকিছু বুঝি না, তবে এই দুনিয়ায় নতুন দিনের শুরু মনে হয়।

কী ধরনের চাকুরির জন্যে ধান্দা মারা যায়, সেইটা নিয়েও একটা লাট্টুর উপরে আছি। সময় নাই, সিদ্ধান্ত একটা মনে হয় নিতেই হয় এবার। শেষ পর্যন্ত কোনখানে যে যাইতে পারি! পেটের ভাত জুটবে তো? লাট্টু ...র উপরে সারাজীবন কাটলে তো সমস্যা।

২.
:: ডিসেম্বর ২১, ২৩:৩০ ::
সারাটা দিন খুব একটা কোন কাজ করিনাই। আউটপুট ছাড়া দিন বড়ই বিরক্তিকর।
এতোক্ষণ ল্যাবের খুব কাছাকাছি সিনিয়র-জুনিয়রদের সাথে ওকোনোমিইয়াকি ভক্ষণ আর আনুসঙ্গিক পানাহারে ব্যস্ত ছিলাম। সবাই নানান ব্যাপারে ইদানিং বেশ অস্বস্তি বোধ করে, তাই পানি পেটে পড়লেই বিষ বের হয়ে আসে সবার মুখ থেকে, আমিই একা পানিবিহীন গ্লাস নিয়ে শুনে যাই এবং তাল দেই। স্ট্রেস ঢালার জায়গার বড় অভাব বেচারিদের, তাই অপ্রিয় সবকথন চলে মদ্যসহযোগে।
এখন বাসায় ফিরবো। মাথা ব্যথা করছে ভীষণ। মাথায় যে কী হইসে?...

৩.
:: ডিসেম্বর ২৩, ০৩:৪০ ::
এতো রাতে জেগে থাকি কেনো? কে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলো গুগল টকে অনলাইন দেখে। উত্তর জানিনা। ইনসোমনিয়া? হ্যাঁ বা না কোনটাই বলবো না।

বাইরে বৃষ্টি সন্ধ্যা থেকে, একটা অলস দিন শেষে শুয়ে আছি। ঘুম থেকে উঠেছিলাম দুপুরের দিকে, অবশ্য ঘুমিয়েছিও ভোরের শেষে। সন্ধ্যা পর্যন্ত হাবিজাবি ব্রাউজিং - অনেকদিন পরে একটা P2P ফাইল শেয়ারিং টুল ইনস্টল করলাম। আই এম লিজেন্ড নামালাম, এখনো দেখা হয়নি যদিও। তারপর চাকুরির এন্ট্রিশীট জাতীয় কিছু প্রস্তুতিকাজ করার জন্যে ল্যাবে গিয়ে বসি নিজের কাস্টমাইজড ডেস্কে।

সন্ধ্যায় মটরের ডালের কারি আর নান - বাংলাদেশি দোকান থেকে প্যাকেট।
অনেকদিন রান্না করা হয় না - হিমু ভাইর রেসিপি দেখলে রান্না করতে ইচ্ছা করে, ট্যুনার কাবাব, ডিমের কারি এইসব গরিবী রান্না যদিও বড়ই অপছন্দ, অনেকদিন তো হলো এইসব রান্না।
প্রায় আধযুগ? জীবনের চারভাগের একভাগ! হুহ..
মস্তিষ্কে এইসব খাবারের উপর একটা বিতৃষ্ণার অনুভূতি স্থায়ী হয়ে গেছে।

৪.
::ডিসেম্বর ২৪, ০৩:৩০::
ডিসেম্বর ২৩ আরেকটা নিস্ফলা দিন। রোববার, ঘুম থেকে ওঠা স্বভাবতই দেরিতে, অনেক দেরি।
১২ টা পার করে। ঘরকন্নার কাজ, মেশিন থেকে কাপড় বের করে দেখি, রোদ পড়ে গেছে। কী আর করা, বস্তা বেঁধে বাসা থেকে কয়েকশ মিটার দূরে, কয়েন ড্রায়ারে দিয়ে আসি। আমার বাসায় ড্রায়ার নাই।
সন্ধ্যায় পার্থ আর রনি ভাইর সাথে ডিনার, অন্য সময়ের মতোই ঈশ্বরদর্শন বিষয়ক তর্ক দুইজনের, আমি অকাটমূর্খ শ্রোতা। চলুক, চলুক....তবে বেশি খাওয়া হয়ে গেছে ইন্ডিয়ান রেস্ট্যুরেন্টে। আর বিল খুব বেশি ছিলো।

শরীরটা ভালো নয়। আজ ঘুমাই। ওহহো.,. ডিসেম্বর ২৩ সম্রাটের জন্মদিন। সম্রাট আকিহিতোর জন্মদিন, তবে রোববার বলে পাওনা সরকারি ছুটিটা কাল।

ফুরিয়ে যায় ২০০৭, পৃথিবীতে অচল মানুষ আমি আরো অচল হতে থাকি।
এইভাবে চলে আমার সবদিন। আটপৌরে জীবনের একাগল্পে এইসব দিন শেষে ভাবি, কালকে পৃথিবীতে আমাকে কী প্রয়োজন? আর প্রয়োজন যদি নাই থাকে, তবে এটাই কেনো শেষ দিন নয়?

-
ছবি কৃতজ্ঞতা


মন্তব্য

সৌরভ এর ছবি

সে আর বলতে হয়, গুরু!
বিদ্যেটাই তো শিখতে পারলুম না।

তাই বলে তিনকোণা?
ইয়া খোদা, তুমি আমাকে এইজন্যে বাঁচিয়ে রেখেছিলে?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

চমৎকার। কিন্তু পুরো লেখাটা এতো বিষণ্ণতা-মোড়ানো কেন রে ভাই? আমার মনটাও খারাপ হয়ে গেল।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

আরণ্যক সৌরভ এর ছবি

হায়, আমি যদি সন্ন্যাসী হতে পারতুম!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এই ব্যাটা হৈলো বৈষণ্ণিক লেখক, এইটা তার কপিরাইট।
তয় আমার লগে বড়ই ইজ্জতের সম্পর্ক বইলা কিছু কইনা। চক্ষুকর্ণের যথেষ্ট ব্যপ্তিহীন পুতলা মার্কা কাউরে সালাম দিয়া কথা কওনের কষ্টও ধামাচাপা দেওন যায় হালার লেখা পড়লে।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ধুসর :
যাইবেন নাকি সৌরভের মফস্বলে? চলেন - আপনার কণ্যারেও দেখে আসি হাসি

সৌরভ এর ছবি

শিমুল, রিনি ভালো আছে? হাসি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ঋণী'রা ভালো থাকে না।

সৌরভ এর ছবি

কথা সত্য, ওইটা আমার ট্রেডমার্ক।
কাজেই আমি ছাড়া সবাই হাসিখুশি মার্কা লেখা দেবে, এইটা হইলো এক কথা!


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নজমুল আলবাব এর ছবি

আমারে মাঝে মাঝে কেউ কেউ বলে, লিখিনা কেন? উত্তর না দিয়ে তাদেরকে প্রায়শ সৌরভকে দেখিয়ে দিই। বলি, এই ছেলেটা আমার কথাগুলো ওর ভাষায় বলে দেয়...

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সৌরভ এর ছবি

আমি যদি জিজ্ঞেস করতে চাই, আলবাব ভাই লেখে না কেনো?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।