"পরাণো কান্দে তোরো লাগিয়া"

সৌরভ এর ছবি
লিখেছেন সৌরভ (তারিখ: রবি, ০৫/০৮/২০০৭ - ১১:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বুড়ো হয়ে যাচ্ছি দিনকে দিন।
একেকটা মুখ এসে স্মৃতির দরজায় টোকা মারে।

উপমা নামের মেয়েটা আমার সাথে পড়তো, সেই ছোটবেলায়, ক্লাস ওয়ান-টু, নামটা মাথায় ঢুকে পড়ে আছে। আমি ফার্স্ট হবো, না সে - এরকম একটা প্রতিযোগিতা ছিলো বোধহয়।
কিংবা জিমি, যার সাথে একবার চিনিকলের গাড়ির পেছনে ঝুলে পড়ে আখ চুরি করে খেয়েছিলাম। হাফপ্যান্ট বয়েসের কথা, অজ-মফস্বল শহর পট হয়ে আছে যে ছবিতে। করতোয়া নদী চিরে গেছে যার বুক।
আমার জনকের ছিলো ব্যাংকের চাকুরি, ঘুরপাক খেতাম উত্তরের মফস্বলে।

উপমার বাবার প্রশাসনে বদলির চাকুরি ছিলো, তারপর উপমাকে খুঁজেছিলাম বড় হয়েও, যদি কোথাও দেখা হয়ে যায়, আরে! তুই সেই পিচ্চিটা নাহ? টাইপের আবিষ্কারের আশায়।

যেমনটা দেখা হয়ে গিয়েছিলো ফয়সলের সাথে, ক্লাস থ্রিতে ছেড়ে আসা কিন্ডারগার্টেনের ফয়সল - দেখা হলো আহসানউল্লাহর সামনে হঠাৎ একদিন, যন্ত্রপাতির ভার্সিটিটায় ভর্তি হতে এসে। মাঝে অবশ্য ১০-১১ বছর। আরে, তুই তো সাইজে বাড়িসনি - চিৎকার্ করে ওঠা, নতুন ধরনের দেখা হয়ে যাওয়া।
কিংবা অনির্বাণ, সেই বিশালদেহী বন্ধুটা, যার নিষিদ্ধ জ্ঞানভাণ্ডার ছিলো আমাদের কিশোর বয়সের বিস্ময়, ক্লাস সিক্সে চলে গেলো ইন্ডিয়ায় - ইঁচড়েপাকা, আমাদের সাথে পড়ার জন্যে একটু বেশি বয়েস ছিলোই বোধহয়। অনির্বাণ, আবার যদি দেখা হতো তোর সাথে রে!
অথবা ইমন, কতোদিন পরে তোকে খুঁজে পেলাম, চলে গেছিস সুইডেনে, পৃথিবীর অন্ধকার অংশে থাকিস - ২ ঘন্টা সূর্যের আলোর দিনও পার করিস নাকি- একদিন বলেছিলি। গুগল টকে তোকে দেখি মাঝেমধ্যে - নক করার সাহস হয় না কেন যেনো!

স্বপনটার সাথে তো আর দেখাই হলো না। ওর সাইকেলের ক্যারিয়ারটা বরাদ্দ ছিলো আমার জন্যে। দূরত্ব বাড়ার শুরু কলেজ থেকেই - তারপর ছিটকে পড়া।

সব মুখ একসাথে ঘুরপাক খায় এই রজত জয়ন্তী পার করে আসা জীবনটায়। সব প্রতারক আর ভন্ড।
এই লগ্নে হারানো সূচি, যে ছেড়ে যায় এই কাটখোট্টা জীবনের দুঃস্বপ্নদের মাঝে আমাকে একা ফেলে রেখে, সবকিছু পায়ের নিচে ফেলে। স্বার্থপর!

কেউ কথা দিয়ে কথা রাখেনা।
কেউ নাহ। আমার অভিমানের আকাশটা বড় হতেই থাকে। আবার দেখা হবে - কথাটাও মিথ্যে। দেখা হয় না কারো সাথে।
আমি অপার হয়ে বসে থাকি তোদের জন্যে। ইচ্ছে হয়, চিৎকার করে বলি - তোরা কেউ কথা রাখিস নি।

রিনরিন বেজে যায় কান্না আমার ছিঁচকাঁদুনে হৃদয়ের কোণে।
"বন্ধুয়ারে, পরাণ যে কান্দে তোরো লাগিয়া!"
আবার যদি দেখা হতো তোদের সাথে রে।

-----
রোববার, আগস্ট ৫, ২০০৭
ছবি , ক্রিয়েটিভ কমন্স এর অধীনে
ফ্লিকার থেকে, কৃতজ্ঞতা


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বন্ধু কি খবর বল?
বন্ধু হারালে বোঝি ফুরিয়ে যাবার সময় এসে গেছে ।

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৌরভ এর ছবি

কৃতজ্ঞতা একমাত্র মন্তব্যটির জন্যে।

------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

ঝরাপাতা এর ছবি

এই মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে,
অজানা হাজার কতো কাজের ভীড়ে
ছোট্ট বেলার শত রং করা মুখ
সুর তোলে আজো এই মনকে ঘিরে।

ঝিনুক শামুকে ভরা বালুর চরে ঢেউয়ের সাথে নেচেছি,
রঙিন স্বপ্নে গাঁথা স্মৃতির মালা সৈকতে ফেলে এসেছি।
ওরে ছুটে যাই চলো সেই সাগর তীরে,
ওরে খুঁজে নেয় চলো ফেলে আসা মুক্ত হীরে।

রাত্রিতে জোছনায় দাওয়ায় বসে মজার গল্প কতো শুনেছি
ঢুলুঢুলু আঁখিতে আবীর মেখে স্বপ্নের জাল বুনেছি
ওরে সেইতো ভালো চোখ দুটি বুজেছিলে
ওরে সেইতো ভালো সব কিছু ভুলেছিলে।

গানটা উপহার দিলাম মনটা আরো একটু খারাপ করে দেয়ার জন্য।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

দেখা হবে বন্ধু, কারণে আর অকারণে
দেখা হবে বন্ধু, চাপা কোনো অভিমানে।
_________________________
'আজকে না হয় ভালোবাসো, আর কোন দিন নয়'

সৌরভ এর ছবি

ধন্যবাদ, শিমুল ও ঝরা।

------ooo0------
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।