পাপখাতা ও হাওয়ার বিশ্রাম

সৈয়দ আফসার এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ আফসার (তারিখ: শুক্র, ২৯/০৭/২০১১ - ৭:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাহস হয় না তবুও বলি— তোকে বন্ধু ভাবলেই
ভোগদৃশ্যের ভেতর জেগে ওঠে এক চোখের জরা
গোপনে অন্য চোখের সমর্পণ, আহা টাঙানো নিয়ম
শূন্যদিনে খুব কাছে জেগে ওঠা সর্বপরিচিত ঋণসহ
বিবশ-করা দেহের পুরনো বিশ্বাস
চোখের স্বভাবে চারপাশ ঘুমিয়ে পড়ে মধ্যরাতের আগে
অনিচ্ছাগুলো অন্ধঘরে ক্রমশ ধ্বস্ত করে শিয়রে দাঁড়ায়
আমি কেবল লুকিয়ে রাখছি ভাবঘুম, মাদুলীশব্দ আর
কাঁটা আঁচে না-মিশা জলফল, খুঁজি না ফল ও বাকল
করাঘাত শুনেও দু’পা ফেলি না ছায়া পালাবার ভয়ে
তবুও তুই হারিয়ে যাস্! আমাকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে
নিজেও দাঁড়াস্ ক্ষতবুকে, দেখছি অন্যপাশে একরত্তি স্মৃতি
চোখাচোখি খেলে—
এমন বিশ্বাসে পার হতে যাচ্ছে তোদের আধুনিক সমাজ!

০২.
প্রাত্যহিক কথা জেনে নিতে নিতে কিছুই মনে পড়ে না
অথচ মায়ামমতা টেনে রাখছ যে চোখে, আজ তারই—
ছুটি আয়োজনে বাজছে স্মৃতিগান, অর্হনিশ পোড়াক্ষতে…
ভবিষ্যত জানি না বলে যত অপেক্ষা কাঁধে তুলে রাখি
শরীর থেকে তুলে রাখি রাত্রিভ্রম, গোপনমন্ত্র, রহস্যকাহিনি
জানি গ্রহণের আগে এইখানে খুব জরুরি ছিল কথোপকথন
দেখা ও নির্দেশনা-
সে কেবল ধরে রাখার এমনই এক তাড়না খুঁজে গেল!
তখনই জানি, তোকে জাগানোর আগে মনের পাঠ হতে
লাগল সকল প্রস্তুতিসহ পাপখাতা ও হাওয়ার বিশ্রাম

০৩.
আমি কোন কবি নই যে আমার শুরুটা হবে নিজস্ব নিয়মে
আমার কাহিনিরা আমাকেই জ্বালিয়ে রাখে দীর্ঘরাত্রি আলোয়
অবোধ বালকের মতো আয়নার দিকে ফ্যালফ্যালে তাকাই
কিছু বুঝি না! ভেসে যেতে যেতে পুরাণের জলে পিছলে পড়ি
বুঝি না কোথায় হারালো পায়ের দখল, দোলা, অবুঝপনা…
পথপ্রবাহ কোন দিকে ঝুঁকে পড়ল! নিস্তব্ধতা আমার দু’চোখ
বেয়ে ওঠা অশ্রু, অর্ধেক দ্বিধা…
শূন্যে জমুক না-বলা কথা, ভুলের শহরে আরো, আরো জমুক
সন্দেহবোধ; শেষাংশটুকু জানি না বলেই তো দেখা ও নেশা
প্রতিক্ষণে ব্রত অপেক্ষা, হাওয়াঘরে পাবো কী? আপনজিজ্ঞাসা…

০৪.
জিজ্ঞাসা সমীপের আগমুহূর্ত নিশ্চুপ, নেই কোন তাড়াহুড়া!
অপেক্ষার শেষ মুহূর্ত কেমন সকলেই জানে, শুধু জানে না
বাঁধা পেরিয়ে কীভাবে ফিরে আসে দাহজ্বালা… আমার ফেরা
হবে না তাই ছাইপত্রে সাজানো আত্মপরিচয়, আব্রুহীন বিশ্বাস
যেমন কিছু 'কথা ও ঘটনা' গিলে খাচ্ছে প্রতিদিনের বিবরণ
নাতিদীর্ঘ সমর্পণ, নীরব অপেক্ষায় আসা স্বপ্নাবহ অসীম আশা
দূর থেকে নাকে আসে রন্ধনের ঘ্রাণ, যেখান থেকে পান করি
আহার, চিবিয়ে জল খাই, তাও অনিশ্চিত ভবঘুরে জীবন
বেঁচে আছি কোলাহল তন্ত্রি ছিঁড়ে তবু স্বপ্ন দেখাস্ সমধিকারে
হাঁটতে হাঁটতে প্রবেশাধিকারে পৌঁছানোর অপেক্ষায় ঘাম ঝরে
আলোড়নহীন রোদচশমার ফাঁকে!

০৫.
মৃদু বাতাসে ধুলোবনের উঠতি ঘ্রাণ ওঠে আসছে পায়ে-পায়ে
আজও স্পর্শ করিনি কামফল, বুঝতে পারিনি রজস্বলা অনুভূতি
যদিও অনিচ্ছায় তোর দেহ ছুঁই তার আগেই লীলাতলে ডরাই
ডরালোক চোখ এগোতে থাকে ভগ্নাংশের শেষ ইচ্ছে খুলে, আত্মার
স্বভাবে আমি কি আজও অতিক্রম করিনি শহর চোখে গাঁথা
দু'হাতের স্বভাব
ফলে ভয় আর যতটুকু প্রকাশ করা যায়, অপ্রকাশের আগে
সদ্য ফোটা স্তনফুলে লাগেনি যে হাত!জাগে কি বুকঝরা আবেগ?
এই অহংকার কী, স্তনফুলের পূর্ব প্রস্তুতি পুষে রাখে অজস্রলোভে...
কোন আশাঘাত টেনে ধরি না মনে, সময় দোলে ঘড়ির পিঠে
দৃষ্টিরেখা ছলকে কতদূর যাব? গুপ্ত আশায় মনপাখি উড়ে, তাই—
যেখানে দাঁড়াই ভারসাইম্মো হারাই
সেখানেই দেখি জলকণ্টক ফুটছে ভুলের নগর থেকে আরো; আরো
একশো হাত দূরে হাড়গলা কথা জমছে পাপঘূর্ণি হাওয়ার পাঁজরে

০৬.
রাতকাহন শেষে সময়ের দাবীটুকু কেবল শব্দে লিখি
বাক্য প্রকাশের আগে আরো লিখি আমার সহস্রমূর্খতা
শুধু লিখা হয় না কোন পথে তোর আসা-যাওয়ায় পুড়ে
ধ্বংসাবশেষ
বরফ ভ্রমণের শেষভাগে খুলে রাখছি উষ্ণতা, এখানে-ওখানে
মায়া বাড়ে, সহজেই বুঝা যায় তোর অনুভূতি ও নিঃসঙ্গতা...
সব কিছু লিখে রাখা পাপ। ইচ্ছের চুমু খেয়ে আসক্তি মনে মাখি
প্রত্যক্ষ করি, তাকিয়ে থাকি, দেখি সর্বনাশী তটক্লান্তি আগুনভরে
কোন দিকে দাঁড়ালো— কোন দিকে দাঁড়ালো মায়াগ্রাহী স্বপ্নস্মৃতি...
প্রতিমুহূর্তের অপেক্ষা, তোর ফেরার আবেগে দরকারি কোন কথা
ছিল না; ফেরারী মোহদর্পণ জ্বলছে গ্রহণ, আহা! সাধের বিন্দাবন
সহস্র বছরের ইতিহাস ভেঙ্গে শীতসখি কাঁপিয়ে তুলছে শব্দব্যঞ্জন
কাঁথা বালিশের নিচে ডাকামুখ, কথাহীন আলাপ, টেলিফোনকল...

০৭.
ভরা মৌসুমে ফলবানও হল না সন্ধিকাল, শাদা পাথরবাগান!
এইখানে দাঁড়ালে দৃষ্টির সবটুকু ইচ্ছা কাঁপে অন্য ইশারায়
এই প্রস্তুতি, এই হেলানো রোদে তুই নীলবাড়ির পূর্ণদূপুর...
তোর মর্মগ্রহণের শক্তি জেনে সন্তুষ্ট হয়নি বয়ঃসন্ধি আক্ষেপ
এ-স্পর্শমুগ্ধক্ষণ পুষিয়া রাখিসনি বুকের ভেতর; আমি নির্মাতা
হলে তোর থাকে না সমর্থন! এমনই দেখছি ঘামজল প্রতিদিন
কেবল হাতছানি দেয় তোর চোখসহ নিরাপদ করতল রেখায়
তুই কিছু অনুভব ঠোঁটে পরে রাখ, দেখবে ইচ্ছেরা ধারে-ভারে
দু-দিকে কাটে, আস্তে-আস্তে ভেঙে যায় ঘোলা চোখের লিপ্সারস
ধৈর্য্যের বাঁধ...
ধৈর্য্যের বাঁধও বলবে ও-বিনিময়লীলা, দৃষ্টি সন্তরণে আমাদের
অবশিষ্ট কথা হউক, আর বন্ধ করা চোখে এবার বলুক, এসো—
সব ভুলে আজ না হয় একবার হয়ে যাই বর্ণহীন, লজ্জা পোষাক

০৮.
নিজের ভেতর বদলাচ্ছি আমি— লক্ষ্য করছি মুখরোচক কথা
মোসাহেবি শিখিনি বলে দিনদিন সব সুসম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে
আত্মবিচ্ছিন্নতা দিনদিন রাত্রি মেখে প্রিয় হচ্ছে স্মৃতিগ্রহণ কালে
সেও বুঝি নিঃসঙ্গতা, নিঃসঙ্গ সে-যে আদুরের জমজ ভাই
তোদের মোসাহেবি দেখলে কেন যে মুখে জমছে না থুথু!...
আমার ভেজা দুটি পা এমনিতেই জ্বলে, আশায় চোখ পাল্টাতে
দেখি স্পর্শের দোষে বারুদহীন দেশলাই জ্বলে; খোলাচোখে
সব দেখিয়াছি আজ তবে যাই— বেলা গড়িয়ে মিশে যাচ্ছে ঐ
গ্রামের শেষ উঁচু গাছের নীচে
যদি স্মৃতি খুলে দেখার আরেকটু প্রবেশাধিকার দিতে খারাপ
লাগত না, সব বৈষম্যেপ্রথা ভেঙে রোদফুল ছিঁড়ে যখনতখন
ফিরে আসতাম একা তোর কাছে
হয়ত তুই, বনের অতিনিকটে ছায়াখানিও ফুটতে দিতে না
নিজস্ব অনুভব-ত্রাসে জমিয়ে রাখতে একা আলোবনে

০৯.
গভীররাতে জানালার পাশে অপলক দৃষ্টিভরে যখন চাঁদটাকে দেখি
মৃদুহাওয়ায় শরীরটা জুড়িয়া যায়। নিজের ছায়াও বাড়ায় হাত
স্নেহভরে জ্যোৎস্না শিস দেয়, যার আকাঙ্ক্ষায় আমিও হারিয়ে যাই
খ্যাতি চড়কায় উড়ে
আকাশের কালোমেঘ চিরায়ত আঁচলে চাঁদটাকে ঢেকে রাখছে
ঘোর অন্ধকার তারও একটি রঙ আছে, সে রঙ মেখে রাত্রির
শেষভাগ খুলে দেখার আগে আন্তরিকতাও প্রসারিত করে তফাৎ
ব্যবহৃত দু’হাত
আরেকটু এগুলেই মনে হয় এই বুঝি অজস্র আশায় ফিরলে একা
আর আমি— গোপন ইচ্ছেগুলো জানার লোভ তোর কপালে রাখছি
হাত, হৃদয়যাপন আমার খুব ভালো লাগে... মনে হয় তুই-আমি—
বেঁচে আছি জীবন-নির্মাণ-কালে

১০.
রাত্রি ফুরাবার আগে ছন্নছাড়া কিছু কথা বেশি মনে পড়ে
যদিও জানি একাকী কিছু শূন্যতা সময়ের শবদাহ শেষে
ঘুমিয়ে পড়ে নতুন একটি ভোরের আকাঙ্ক্ষায়। ভাবি—
আজকের সকাল হবে সহস্র সকালের চেয়ে সুন্দর; তুই বলিস্—
‘যায় দিন অনেক ভালো’... যেটুকু মনে আছে সেটুকুই ভালো
রাতের চাঁদটাকে খোলা চোখে দেখি আর পরস্পর মিশে থাকি
নিজস্ব দৃষ্টি আকরে
কিন্তু আশ্চর্য লাগে যখন খোলা চোখে সূর্য্যের দিকে তাকাতে পারি না
রাতের পর আসে দিন এ-ও তো সহজ বলা প্রকৃতির নিয়ম... আমিও
প্রকৃতির রূপে ডুবে ঘুমিয়ে পড়ি, ঘুমের ভেতর স্বপ্ন-ডুবুরিরা
চিকণ স্বপ্ন বাঁচাবার আশায় একাকী জেগেছে ভোরে

১১.
স্পর্শের কোন অভিজ্ঞতা নেই, তোর কি মনে পড়ে? সেই পূর্ণিমা
রাতের কথা, সে রাতে একফালি আশায় জ্যোৎস্না টুপ করে গিলে
ফেললো ঘোর অন্ধকার! অন্ধকারে তোকে সুন্দর দেখায়, কারণ—
তোকে ছুঁয়ে দেখার আগে চাঁদের পাশে আমার ছায়াও কখন যে
মিলিয়ে গেল! অপেক্ষা কোথা থেকে যেন শরীরে দুলছে লঘুহাওয়া…
সে হাওয়ায় আমি এঁকে রাখি কোলাহল; যেভাবে জলে আঁকি
তোর ছায়া… তবে ব্যর্থ ঐখানে আমি চোখ ভরে দেখিনি অস্তসূর্য
তোর কোন পাশে লেগে ছিল জল, কোন পাশে ঝুলে ছিল ছায়া

১২.
কখন যে ফিরবো আমি— প্রিয় জন্মভূমিতে, কখন হাঁটবো গ্রামের
অলিগলি পথে, কতদিন শরীরে লাগেনি বাঁশবাগানের শীতল হাওয়া
লাউ-কুমড়ার মাচাঙ্গে মাথা নুয়ে হাঁটার কথা বেশি মনে পড়ে...
মনে পড়ে বরই গাছের কাঁটা আর রাতে চুরি করে নারকেল গাছে
উঠার কথা... জানি অতীত আমাকে ক্ষমা দেবে না, নিঃসংকোচে
একদিন সে-ও হবে ইতিহাসের পাতা
কাল পাহাড়ে চড়ে আমি যে হারিয়েছি ভরাযৌবণসহ উড়ন্ত সময়
সকল স্বপ্ন ও আশা, মধ্য বয়সে হাঁটবো আর ক’দিন পর
সে দেখায় তাকালে সকল স্মৃতি ফিকে হয়ে আসে ঘড়ির প্যাঁচে...

১৩.
একদিন শেষ বিকেলের রোদে আমিও হারিয়ে গিয়েছিলাম
আর তুই এই হারানো শব্দটি জপে-জপে আমার পাশে চলে
এলে বিস্ময় চোখে! আলো খুলে ভেসে গেল বিশ্বস্তপাড়ায়
দরকারী-অদরকারী যত প্রসঙ্গ সবই ঠিক ছিল, কিন্তু একটু
বিপাকে পড়েছি, শেষটানের তৃপ্তি নিচ্ছে না সিগ্রেটের ধোঁয়া
সারাদিন হেঁটে আনমনে আমরা কতকিছু খুঁজেছি, খুঁজিনি শুধু
ঠিক সময়ের সংক্রমণ, মৌনব্যাকরণ
ভাবছি ‘স্বপ্ন’ শব্দটা মনে না-রাখাই মঙ্গল… আরো মঙ্গল মন্ত্রখানা
ওভারকোটের পশমে এলিয়ে পড়া তোর আচমকা আকাঙ্ক্ষাগুলো
জেগে উঠছে, শীতফুল, বরফফুল ঝরছে দেখে নীলমোহ ভাবছে
এখন পালাবে…

১৪.
আমি বেমালুম ভুলে গেছি আমারি অর্ধেক স্বপ্ন লেখা আছে জলে
বাকিটুকু লিখা আছে স্মৃতিময় দিনে; অধীনে এরকম আরো যত
স্মৃতিকথা পূর্ণ হয়ে ওঠে অনাশ্রয়ে, যা মনে আসে তাই লিখি
প্রাকমুহূর্ত বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। নিঃসংশয় অন্তরে গাঁথা
র’বে চিরদিন অগুণতি চিহ্নের দাগে
যান্ত্রিক জীবনের আহ্বানে বাঁধা পড়ে আছি। আমার ছায়া
আমার সঠিক উচ্চতা জানে বলেই পায়ের নিচে দাঁড়ানো
নিয়মের ক্রীতদাস
পায়ের নিচে দাঁড়িয়ে হাবুডুবু খায় বস্তুতঃ আমাদের আশা
সকল আশা, সহজ পিপাসা এখনও ভাললাগে, ভাললাগে
রোদের পাশে পিঠ ঠেসে বসা

১৫.
আমি আমার ভেতর অন্য আমিটাকেই খুঁজি, আর বলি ওঠো
খুলে দেখো চোখ, কতটুকু উচ্চতা উঠলে আমাকে তাড়ায়
পরিচিত ভয়
কতটুকু পাতালে নেমে গেলে উচ্চতা তোকে জড়িয়ে রাখে, একা
উঠে দাঁড়া, আজ না-হয় একটু আগে ওঠা দরকার। ফ্রেশ হয়ে
এলে একসাথে চা-নাস্তা করব... আশার আমিটা অসংহতি টেনে
নিরেট শব্দ বুনে চুপচাপ। বাঁচার তাগিদে খুঁটে খাই সকল নিয়তি
দিনের শ্বাস
এবয়সে খাবারদাবারে এত নিয়মনীতি-নিষেধাজ্ঞা ভাল্লাগে না
বেঁচে থাকার চোখ কাঁদবেন, বেশিবেশি কাঁদুন!
তৈল,লবণ,চিনি পুরোটাই নিষেধ, খেতে পারবো না অনেকদিন
চিংড়িসহ মাংসভুনা… অতীতকথা আর নিয়মচাকা নানা বাহানায়
বলছে : কত সহজেই না পাল্টে যাচ্ছে ভবিষ্যত

১৬.
পথে কিছু অচেনাগাছ, অদেখা পাখি হাওয়া ভরে জেগেছে ডালে
তাই কি-না তুই আমাদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বসতে বলিস
একেলা হাওয়ায়
জানবার প্রাপ্য সময়ের কয় ভাগ? এই মুভমেন্ট, এই ধাক্কাকে
হাওয়া বলব না, হাওয়া বলতে ভয় যদি গতিবিস্তারে হয়ে যাস্
একা...
ওই যে উড়ে আসছে মেঘদল মায়াবৃষ্টিজল
শোনা যাচ্ছে জলপরী আর শব্দধ্বনি কানে তুলছে গোপন আলোড়ন
মন হা-ডু-ডু খেলে ছড়াচ্ছো স্তব্ধবিবরণ ছোট্ট-ছোট্ট আখ্যান
ঘুমপুঞ্জ উদ্বেগ রেখে তৈরি হচ্ছে কান্নাপথ সকাল-সন্ধ্যের মৃদু আলো
পূর্ণগতিচক্র মেখে কতদূর যাবে তুই মন পরাজিত, স্বপ্নকন্ট্রোল?
কতদূরে জমা রাখবি নিদ্রাগুচ্ছ, না-হলে পাঠ নেবে নিদ্রাহীন আরো—
আরো যত অন্ধঋণপত্র...
১৭.
সঙঘবদ্ধ ছায়ার হাড়ে দাঁড়িয়েছে গাছ, গাছের হাড়গুলো
পাতা ও কাঁটাগুলো ঝুলে আছে রোদ খুলে উঁচাদেয়ালে
জানালায় দাঁড়িয়ে জানলাম বহুজিজ্ঞাসা, দেখলাম পরিকল্পনা
হাওয়াগাছের শেকড় ধরে বসে আছে জল, জল বেঁচে আছে
শিকড়ে, মাটি আঁকড়ে
দৃষ্টির অগোচরে নিকটশয্যা। তারচে’ বেশিদিন ধরে ফরিয়াদি
চোখ জেনেছে জীবনজিজ্ঞাসা.... জানার চোখে জীবন অতিসহজ
স্বার্থফল বড় মিষ্টি জানি এ পৃথিবীর আলো-বাতাস মিশে আছে
মানুষগাছে
কাছের মানুষ পাশে না-থাকলে মনটাও সচরাচর থাকে না পাশে!
এভাবে বলা কি ঠিক? যতদূরে থাকি ইচ্ছের ভেতর খেয়ে ফেলি
এক গোছা ভয়
তৃপ্তি ফুরাবে না জেনে সম্পর্কের গাঢ়ত্ব আরো বেশি ছুঁই…

১৮.
হাওয়ায় পাতা উড়ে, চাওয়ার সীমানায় উড়ে যত পরচর্চা
শুধু আমাদের ইচ্ছেগুলো আটকা পড়ে গেল অনিচ্ছা জালে
সন্দেহ-হাওয়ায়; তুই উড়তে জানিস্ না বলে জানালা ঘেঁসে একা
নিষ্পলক চোখে দাঁড়িয়ে থাকিস্! জানালার শোকে চোখ কি কাঁদে?
চোখের নিচে যে কালোদাগ সে কি রোজ অলীক বিশ্বাসে ঘুরে?
নাকি বন্ধ রাখছে চোখ; দেহের অন্য ইশারা দৃষ্টি সংকোচ ছাড়াই
মর্ম ধরে রাখে, আমিও মুখোমুখি দাঁড়াই
হাওয়াবিন্দু ধরে নিয়মচক্র, মোহ-বিস্তারসহ যতই অপেক্ষা, কে জানে
ততই চেঁচিয়ে ওঠা অভিযোগ, মনের বেদনা। যতটা সংশয়, অনুপ্রেরণা
সে-তো আলগা বাঁধনে আঁকা আমারই পাশের চোখ। আমি তারে
দু’চোখে মাখাই পাশেই রাখি— রাগ চেঁচিয়ে কিছুই বলতে পারি না
মমতা, নিকটে এসো পুনর্বার; বলো— তার সঙ্গ পেয়েছ কী? তন্দ্রায়

১৯.
দূরে দাঁড়ানো নিষেধ! তারপরও শব্দের গতিবেগ, উম্মাদনা গ্রহণ
যত হুতাশন, ততই অপেক্ষা... সে বুঝতে পারেনি কেন বাড়ছে
এত হৃদকম্পন, রূপকথার গল্পগুলো আরো মনোরম হলে বিভেদ
দেখতে পাবে, ভেতরে ভেতরে পুলকিত ভাবটি ধরে রাখছে বর্ষার
অবোধ মন
তোর উদাসীনতা দেখে স্থিরচোখে প্রকাশ পাচ্ছে বৃক্ষপত্রের নীরবতা
রূপকথার পরের গল্পটা দীদার কাছ থেকে আমাদের শোনা হয়নি
বলেই কি মাপা বাতাসে বাসাবাসি ফিরবে? নাকি নীরবে ফিরবে
কথা ও আঘাত
ইচ্ছে ফুরোবার আগে অনেক সাধ জাগে, নিয়ম চাকায় ঘুরছে দুঃখ
উল্টো-পথের জীবন— জীবন ডিঙিয়ে যাওয়াই কী? মুহূর্ত-চৌকাঠ
মনে ধরে প্রিয় চিরকুটখানি, তোর জোড়াচোখ আর ‘জলের করাত’
তারপর, আর যা, বিশ্বাস খুলে দেখা মর্মভেদসহ সাজানো মুহূর্তকাল
কিসের নেশায়, কেন যে আমি ভুলে যেতে পারি না পুরাতন সময়
আমার অতীত!

২০.
তর্কটি যত ভুলে যাই, গোপনে বিতর্ক রূপ ছড়িয়ে থাকে
কথা ও বিবিধ আলোচনা যারা করবেন, যার-যার ঘরে
বসেই করেন, আর জানবেন : আমরা যারা ঋণের দায়ে
দাঁড়িয়েছি... একই অভিযোগে হারাচ্ছি পোড়াকথা ও আখ্যান
বেদনার বয়স বহুদিন ধরে জমিয়ে রাখছে মন খারাপের
কথোপকথন...
গল্পে মতো বলে যাও, নাড়িয়ে তোলো বুকের গভীরতা
উৎকণ্ঠা, তুমি কি ডুব দেবে অপ্রস্তুত সন্ধানের আশায়?
নাকি ভাবছো, ডুবা ধাপগুলো ধরে রাখবে পরিচিত বর্ষায়
বর্ষার জলে ডুবে যায় পা, জল ধরে নামছে আরো অস্থিরতা
হাঁটার ফাঁকে কত কিছু দেখি, শুধু দেখি না আনন্দরা কীভাবে
ধরে রাখছে শব্দমুহূর্তসহ স্পর্শসংকেত, সে গল্পটি কি দেহ-উচ্চতা?

২১.
স্পর্শসংকেত ফুরাবে না জেনে বোকা চোখ অপরূপ জপে
মন গ্রহণের ডানা কতই জানাশোনা? কিংবা চেনামুখগুলো
কতটুকু দূরে নিয়ে যাবে? সবই বোঝাপড়া বন্দিজীবনে...
এই শুধু মুহূর্তের আকাঙ্ক্ষাগুলো কতদূর যাবে দেখার চেষ্টায়
আমি কেবল জানি আসন্ন শীতে আমাকে পালাতে হবে
আমি কেবল জানি আসন্ন শীতে আমাকে বহন করে নেবে
গরমের দেশে! প্রশ্ন শুধু, কার জন্য অইখানে ফিরব আমি...
কার জন্য না-বলা স্পর্শফুলগুলো ধীরে ধীরে মাটিতে বসে
গল্প জুড়ে দিবে হালকা রোদে, শুধু নাজুক গাছের ছায়া
জানে আমিও ছায়ার উপরে দাঁড়িয়ে ভাবছি— মানুষ মাটির
তৈরি বলে মানুষের মন নরম, আরো জানি মানুষ মরে গেলে
চরিত্রবান হয়, ভাল লোকের খেতাব পায়! অথচ মরার আগে...
একদিন মাটিতেই মিশে যাব তাই, আমিসহ সব মানুষ মাটি
ভরে হাঁটে, মাটির গন্ধ সারাক্ষণ শরীরে মাখে, অই মাটিতেও
আবার শস্যপোড়ায়, শস্য ফলায়

২২.
দীর্ঘ প্রেরণায় বারবার চেষ্টা করি, ছুঁতে পারি কি-না আমার
স্বচক্ষের ধূম্রজাল... ফেরারি আশায় আমিও এসে গেছি নিকট
সংগ্রহে, অথচ ‘কথা-দিয়ে-বোনা’ সময়ের টানে-টানে নিদ্রা
মায়া-ভরা-হাড়ে
হাড়ের ভাষায় অনড় থেকে অবিরল ছুঁয়েছো কি ঋণসহ
দেয়ালভ্রম? নাকি আয়নায় বিপরীতে খুঁজো ফের-পালক
ঝরে পড়া রোমাঞ্চদৃষ্টি, দ্বিধাফল
আমার ভেতর ক্রমশ বাড়ছে ক্লান্তি, দেহছল, মর্মকোলাহল
নাকি বলবে : ভেবে দেখো আজ কে ছোঁবে প্রিয়পাখির গাল
কার নিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে ঘুমঘ্রাণ, যে ঘ্রাণে লুকোচুরি খেলা
করে রূপঘরের আবেগ, অঙ্কিতচোখ, তোর তুলতুলে শরীর
পাশে দাঁড়ালে আমার উচ্চতা জানে ছায়া— 'উড়াল হাওয়া'
আরও জানে বন্ধচোখ, দেয়াল ও জানালার গান; বলো—
ও-দেওয়াল, ও-জানালা, কভু কি ছুঁয়েছো অশ্রুডানা?
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম, দেখেছি খোলা চোখের বিশ্রাম
ওইক্ষণে মনে হতে থাকে মূর্ত রাত্রিবিবরণ, ধ্বংসস্তুপ, ভোর
বহন করছে আগামীর রাতঘুম... বিশ্রামে তোমরা কি হতে
পারে না মনের মিউজিকরুম?

২৩.
চোখের পৃষ্টা ভারী হবার আগে স্বপ্ন খুঁজে না গভীর আবেগ
মনে হচ্ছিল কেউ এসে দাঁড়াবে এখানে-ওখানে, অভিমান ধরে
বলবে চোখের স্বপ্নবিক্রেতা কিছুই জিজ্ঞেস করছে না! শুধু
তাকিয়ে দেখছে ইজিচেয়ারের হাতল থেকে কীভাবে নেতিয়ে
উঠছে সমসুখ, মরে যাচ্ছে কামরূপী শরীরের নীরব আওয়াজ...
মনে হচ্ছিল বেড়িয়ে আসি ওই স্বপ্নখাতা খুলে দেখার আগে
অথচ একটি কথা বিগত পাঁচটি বছর ইচ্ছা সাথে অপেক্ষা...
সেই কৌশলে তুলে রাখছ সবই... দ্বিধাগাছ খেয়ে ফলাচ্ছো
আপন মায়াবাদ
চেপে রাখছ হাসিপাহাড়। সঙ্গীপথ থেকে বেড়ে ওঠা হারানো
স্বপ্নগুলো হাঁটু গেঁড়ে বসছে না বলেই কী? বে-খেয়ালগুলো
অধিক লোভে লুবাচ্ছে একেলা হাওয়ায়

২৪.
কে গো তুমি; কী-বা পরিচয় তোমার? অ-গ্রহণে কেন
অজুহাত দেখাও, বৈকালে কাঙ্ক্ষা বাড়াও, অয়েল চুলে
গাঁথছ ঝুঁটিফুল, লাজের আড়ালে লুকানো খাড়া দুটি স্তন!
নিভাষায় এত নিঃসঙ্গতা পুষে নাও হালকা মেকআপে!...
শূন্যে পালাবার আগে থুতনি-শাখায় বাজছে বিস্ফোরণ
ইচ্ছে মিনার ছুঁয়ে ভাবছি রাস্তার দূরত্ব কত হবে?
লম্বা লাইনে দাঁড়াবে কি ঋণদূরত্ব, জ্বালামুখ—
রহস্যগল্প সকল বিন্দুতে দৌড়াতে দৌড়াতে অবশেষে
সিন্ধুতে মিলাবে দেখেই তোমার ছায়াত্বক প্রীতি খেলে
নিয়ন-আলোয়
এইভাবে আমার সাথে বাঁচে মাত্র সাড়ে দেড়হাত চেনাগন্ধ
পাঁচফুট অপ্রস্তুত টান, কারণ চেনাঅনুভব খাড়া হতে হতে
আমাকে টানছে গুপ্তনজর, গুণাগুণ, তাদের নগ্নবাগান

২৫.
রোদের লম্বা লাইনে শুকাতে দিয়েছ জামা ও জল
রোদে জ্বলছে হাতের ঘাম, কালো চশমা, ভরদুপুর
নুড়িপাথর ধরে রাখছে নিরাই হাওয়াসহ মাটির বাকল!
সম্পর্ক, আজ রেখে দিতে পারি চিরচেনা সেই পিপাসাস্নান
আজ ভুলে যেতে পারি ব্যক্তিগত থামার সহ-ব্যবধান
রোদে ছায়া দাঁড়িয়ে থাকে। আর তুমি ছায়ায় দাঁড়িয়ে
রোদের তারিফ করো! এই তো একখণ্ড মগ্নবাগান...
আমরা রোদে পুড়ে কাজ করি। তোমাদের পায়ের তলায় রোদ
লুটিয়ে পড়ে; রোদ যে আমাদের চেয়ে হাজার কোটি বছর আগে
জন্মেছে; তারও আগে জন্মেছে নীলাকাশ, আমাদের আত্মা আর
একগ্লাস বেদনার রঙ, স্বপ্ন চুরমার

২৬.
ধ্বংস হবার পূর্বে আমাদের অপেক্ষাগুলো লক্ষ রাখছে
প্রাত্যহিক সর্তকতা, এ-রকম পথের নির্মাণ... জন্মসূত্রে
খুলছে দূর্বল শবযাত্রা, নির্দ্বিধায় আমি বলে দিতে পারি
একটি চুম্বনের কাছে সত্যিই অসহায় পিপাসাবাগান
পিপাসা একদিন ধ্বংস হবে হাড়ে, কলকব্জাহীন রক্তমাংসে
এ আত্মচিন্তায় হাড়ের ক্লান্তি আজও পোড়াচ্ছে, ডুবাচ্ছে!
ঘনিষ্টতা একাকী বেয়ে উঠছে ত্রিধাফলসহ জলের আঙুলে
জল মেলে তোর আনন্দ আয়াসে বলবে চিয়ার্স চিয়ার্স...

২৭.
রোজ ক্লান্তির ভেতর চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া সময়কে
বদলানো গেল না! আসন্ন শীতে তোর তাড়া আছে জানি-
তাড়া, পালাইনি— ঘাসে বিছিয়েছি পা, অইখানে আমি
একা দাঁড়াতে-দাঁড়াতে দূরপ্রান্তেও থামাচ্ছি ঘোরমৌনতা
ক্লান্তির ভেতর তোর সাথে কথা বলি না ফলে আরো—
আরো কি কি যেন ভাবি; এখন কিছুই মনে পড়ে না
অথচ তোকে ছুঁলেই অতিসহজেই পেয়ে যাব সফলতা
তুই কি পুরনোচিহ্ন খুঁজে এখনও অস্বস্তিতে কাঁদিস্?
না-কি সজাগ অনুপ্রেরণায় আমাকে দোষারোপ করিস্—
আঙুলফলসহ গ্রীষ্মে ও শীতে


মন্তব্য

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি
আশরাফ মাহমুদ এর ছবি
shahnaj sultana এর ছবি

Darun kobita.
Valo laglo Afsar
Valo theko.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।