গ্রন্থসার ১(১)| একজন ভাড়াটে গুন্ডার স্বীকারোক্তি

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি
লিখেছেন রিয়াজ উদ্দীন (তারিখ: শুক্র, ১৫/০১/২০১০ - ৩:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[কোন ভাল বই পড়া হলে স্বাভাবিক ভাবেই অনুভুতি ভাগ করে নেবার ইচ্ছা হয়। অনুবাদ কাজটা বেশ দীর্ঘ আর কপিরাইটের হ্যাপাটাও কম না। তবু অতি পছন্দের কিছু বই অনুবাদের বাসনা মাঝে মাখে মাথাচারা দিয়ে ওঠে। হরেক কিছিমের বাঁধা কাটিয়ে সেগুলোকে সামনে নিয়ে আসতে আরো কিছু সময় আর মনোবলের দরকার হবে মনে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে একটা সহজ উপায় মনে হল সারাংশ লেখা। এতে সময় যেমন কম লাগবে তেমনি কপিরাইটের ঘাপলাও এড়ানো যায়। পাঠকের ওপর অত্যাচারও কমে। এই পর্যায়ে আমি জন পার্কিন্সের দ্যা কনফেশনস অফ এন ইকনমিক হিট ম্যানের সার সংক্ষেপ উপস্থাপন করছি।]

ইকনমিক হিটম্যান কি? খায়? না ...।?
'হিটম্যান' মানে ভাড়াটে খুনি বা গুন্ডা। আর কনফেশন হলো স্বীকারোক্তি। তার মানে বইটাতে একজন অনুতপ্ত খুনির স্বীকারোক্তি পাওয়া যাবে। এ আর এমন কি? এটা কেন পড়তে হবে? বইটা হাতে নিয়ে এই রকম প্রশ্নই মনে জেগেছিল। কিন্তু সমস্যা হল 'ইকনমিক' ব্যপারটা নিয়ে। পরে দেখলাম লেখক বইয়ের প্রথম পাতাতেই একটা সংগা দিয়ে রেখেছেন। আমাদের রাজনীতিকেরা যেমন কালা জাহাঙ্গীর, মুরগী মিলন বা সুব্রত বায়েনদের তৈরি করেছেন করছেন তেমনি সম্রাজ্যবাদের ক্ষমতা বিস্তারেও এই রকমের গুন্ডা পুষতে হয়। তবে তাদের মধ্যে রকমফের আছে। এই ইকনমিক গুন্ডারা তার মধ্যে একটা প্রকরন। তবে এই খানে এই সংজ্ঞাটার অনুবাদ পড়ার আগে আরেকটু আগড়ুম বাগড়ুম পড়তে হচ্ছে। কি আর করা? যদিও এই পোস্টের মূল উদ্দেশ্য বইয়ের চৌম্বক অংশ তুলে আনা মাঝে মাঝে এখানে আমার গাড়লসুলভ কিছু মন্তব্য চলে আসতে পারে। সেগুলো যদি কোন পাঠককে বিরক্ত করে তাহলে তার জন্য আগাম দুঃখ প্রকাশ করে রাখছি।

এই গল্পের হিটম্যানকে একটু চেনা যাক!
আমেরিকার অর্থনীতিবিদ জন পার্কিন্স আমেরিকার শান্তি মিশনে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্বব্যপি আমেরিকার সম্রাজ্য বিস্তারের কালা-কানুন ভেতর থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। বলা উচিত কেবল ভেতর থেকে দেখা নয় বরং এতে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহনও আছে। যদিও বলছি অর্থনীতিবিদ তার কাছ থেকে অর্থনীতিতে তাকে বড় পন্ডিত বলে মনে হয়নি লেখা পড়ে। তবে বিশ্ব ভূরাজনীতির পেছনের গলি ঘুপচি আর সম্রাজ্যবাদ বিস্তারের কুট কৌশলের ভেতরের কথা তাঁর এই স্বিকারোক্তিমূলক লেখায় পাওয়া যায়। তিনি গুন্ডা ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে উপলব্ধি করেন যে আসলে তিনি মুলত একজন উচ্চবেতনে পালিত ভাড়াটে গুন্ডা বা হিট ম্যান। হিট ম্যান হিসাবে তিনি আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এবং বহুজাতিক সংস্থাগুলোকে সাহায্য করতেন। বিভিন্ন দেশের নেতাদের কব্জিতে মোচড় দিয়ে আমেরিকার অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে বাধ্য করতেন আর বহুজাতিক সংস্থাগুলোকে লোভনীয় প্রকল্প বাগিয়ে দিতেন। তিনি ১০ বছর এই কাজে ছিলেন। পরে বিবেকের তাড়নায় চাকরি ছেড়ে দেন। চাকরি ছেড়ে তিনি একটা এনার্জি কম্পানি প্রতিষ্টা করেন এবং কিছুটা আশাতীত সাফল্য পান। বুঝতে পারেন চুপ থাকার পুরষ্কার হিসাবেই এই সাফল্য আসছে। তারপর তিনি আশির দশকের শেষদিকে এই তার প্রতিষ্ঠানটিও বিক্রি করে দেন। এরপর থেকে তিনি ইকুয়েডর এবং বিশ্বের নানা দেশে এনজিওর নানারকম উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হন। এখানেও তিনি পরোক্ষভাবে ঘুষ পেতেন এবং ঘুষের ব্যপারে তার বইতে তার স্পষ্ট স্বিকারোক্তি রয়েছে। কিন্তু ৯/১১ এর পর ঘুষ বা ধমকের দ্বারা তাকে আটকে রাখা সম্ভব হল না। পার্কিন্স সাহেব তার স্বীকারোক্তিকে একটা বইয়ের আকারে ছাড়লেন এবং ২০০৬ সালে তিনি শেষমেশ প্রকাশ করলেন তার বহুল আলোচিত বই "Confessions of an Economic Hit Man"। বইটি পড়ে এর স্বীকারোক্তির দিকটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। অর্থনীতির সাথে রাজনীতির মিশেলে সম্রাজ্যবাদি শক্তি কিভাবে তাদের কাজ হাসিল করে সে বিষয়ে যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন সেটা প্রচলিত ধারনাকেই জোরদার করে।

উন্নয়নশীল দেশের ভুক্তভোগী মানুষেরা অনেক কিছু অনুমান করতে করতে হয়ত দিনে দিনে নানা বিষয়ে সন্দিগ্ধ হয়ে পড়েছে। হয়ত এজন্যই ভাই ভাইকে বিশ্বাস করে না। সামান্য মতদ্বৈততা থেকে কাউকে প্রতিপক্ষে পরিনত করতে আমাদের সময় লাগে না। যা হোক তিনি নিজেও বলছেন যে তিনি যে গল্প বলছেন এরকম গল্পের ইতিহাস সম্রাজ্যবাদের ইতিহাসের মতই পুরানো। তবে এই স্বীকারোক্তি জাতীয় ব্যপারগুলো হয়ত সচরাচর দেখা যায় না। সম্প্রতি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউলিয়াম ইস্টারলি বিস্তর লেখা লেখি করেছেন পশ্চিমা বিশ্বের অর্থ সাহায্যের সমালোচনা করে। তিনি নিজেই বিশ্ব ব্যঙ্কে কাজ করেছেন প্রায় ১২ বছর। কিন্তু সেখানে আলোচনাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ধরে নেয়া হচ্ছে যে সেগুলোতে অনুন্নত বিশ্বের উন্নয়নে পশ্চিমা দুনিয়া আন্তরিক। কিন্তু পশ্চিমা সাহায্য অনেক ক্ষেত্রে উপকার না করে বরং ক্ষতিই করছে পদ্ধতিগত ভুলের কারনে এমনটা ইস্টারলি সাহেব দেখাতে চেয়েছেন। একজন একাডেমিক হবার দরুন ইস্টারলির লেখা হয়ত বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে অনেক আকর্ষনিয় এবং সুখপাঠ্য। যা হোক সে আলোচনা আরেকদিন হবে। আবার পরর্কিন্স সাহেবের আলোচনায় ফিরে আসি।

তার স্বিকারোক্তির একটা ভিডিও ভার্সনও আছে। সময় থাকলে তার নিজের মুখেই শুনতে পারেন তার গল্প।

কেন এই স্বিকারোক্তি? আরো আগে কেন আসল না? মাতৃভূমির সাথে নাফরমানি হল না?
আপাত দৃষ্টিতে তার স্বীকারোক্তিমূলক বইটিকে দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা মনে হলেও পার্কিন্স সাহেব কৈফিয়ত হচ্ছে দেশের প্রতি দায় থেকেই এই বইটি লিখেছেন তিনি। কারনটিকে তিনি ব্যখ্যা করছেন এই ভাবে

আমার একমাত্র মেয়ে জেসিকা কলেজের গন্ডি পেরিয়েছে। জগতকে নিজের মত করে বুঝতে শিখেছে। কিছুদিন আগে জেসিকার কাছে বইটি প্রকাশের ব্যপারে মত জানতে চাইলাম এবং আমার শঙ্কার বিষয়গুলো জানালাম। সে বলল "দুশ্চিন্তা করনা বাবা। তোমার যদি কিছু হয়ে যায় তোমার অসমাপ্ত কাজ আমি শেষ করব। ভবিষ্যতে তোমাদের কোলে আমি হয়ত নাতি-পুতিদের তুলে দেব; তাদের কথা মনে করেই এটা করা দরকার।"

এই হচ্ছে একজন হিট ম্যান বা ভাড়াটে খুনির মূখ খোলার পেছনের কথা। এখন কথা হচ্ছে অর্থনীতির ভাড়টে গুন্ডা (অভাগু) বা ইকনমিক হিট ম্যান আসলে কারা? পার্কিন্স সাহেবে সংগাটি এরকম,

অভাগুরা হচ্ছে উচ্চবেতন ভোগী পেশাজিবি যারা ট্রিলিয়ন ডলারের ফাঁদে ফেলে সারাবিশ্বের নানা দেশের সাথে প্রতারনা করার কাজে জড়িত। এই প্রতারনার জন্য তারা বিশ্বব্যঙ্ক, ইউএসএইড বা এরকম দাতা সংস্থাগুলোথেকে বিশাল অঙ্কের টাকা বড় বড় কর্পোরেশন বা পাকৃতিক সম্পদের দখলদাল মূষ্টিমেয় পরিবারের পকেটে পূরে দেয়। তাদের বহুল ব্যবহৃত অস্ত্রের ভেতরে ছিল ভাওতামার্কা আর্থিক প্রতিবেদন, ভোট কারচুপি, ঘুষ, যৌনতা এবং খুন। তাদের এই খেলার ইতিহাস আসলে সম্রাজ্যবাদিতার ইতিহাসের মতই পুরান। কিন্তু বিশ্বায়নের সুবাদে এই খেলা এখন এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে

১৯৮২ সালে পার্কিন্স সাহেব যখন বইটি লেখার কাজ করছিলেন তখন তিনি এই সংগাটিও লেখেন আর তখন তিনি ভাবছিলেন বইটিকে উৎসর্গ করবেন ইকুয়েডরের রাষ্ট্রপতি জেইম রল্ডো আর পানামার রাষ্ট্রপতি ওমার টরিযোর নামে। এরা দুজনই তার স্বীকারোক্তি মতে ভারাটে গুন্ডাদের শিকার। তবে এখানে ভারাটে গুন্ডাদের কাজের ক্ষেত্র ভাগ করা আছে। পার্কিন্স সাহেবের ভাষায়, এদের দু'জনের মৃত্য দুর্ঘটনা ছিলনা। তাদেরকে অভাগুরা তাদের সম্রাজ্যবাদি পরিকল্পনায় রাজি করাতে পারলনা তখন সিআইয়ের গুন্ডারা এগিয়ে আসল। এরা সাধারনত অভাগুদের পেছনেই থাকে। দরকার হলে কাজে নামে। অর্থাৎ তিনি অভিযোগ করছেন এই দুই প্রেসিডেন্টের মৃত্যু আসলে আমেরিকার চক্রান্ত! এরকম আরো উদাহরন আছে বইতে আর উপরের ভিডিও জবানিতে। বড় শক্ত স্বীকারোক্তি। পার্কিন্স সাহেবে দুঃসাহসের তারিফ করতেই হয়। এখন কথা হচ্ছে এই দুইধরনের কৌশলে কাজ না হলে আমেরিকা কি করে? পার্কিন্স সাহেবের মতে প্রথম দুই ধাপে কাজ না হলে অর্থাৎ অভাগুরা আর সিয়াইয়ের গুন্ডারা যদি ব্যর্থ হয় তখন সরাসরি যু্দ্ধে নামে আমেরিকা, যেমনটা ঘটেছে ইরাক বা আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে।

পার্কিন্স সাহেবের অভাগু ক্যরিয়ারের প্রথম বস, ক্লডিনের সাথে তার আলাপ চারিতার কিছু অংশ এখানে তুলে দিতে চাই। ক্লডিন বলছে, "আমার কাজ হল তোমাকে একজন দক্ষ অভাগু হিসাবে গড়ে তোলা। তোমার কাজ সম্পর্কে কেউ জানতে পারবে না, এমনকি তোমার স্ত্রীও না"। ক্লডিন তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে "একবার এই পেশার ঢুকলে তা সারা জীবনের জন্য"।

এখন দেখি তার বস ক্লডিন তার কাজ সম্পর্কে তাকে কিভাবে সবক দিচ্ছেন। ক্লডিন বলছে "তোমার কাজ হবে আমেরিকার বানিজ্য স্বার্থের সাথে যেই নেটওয়ার্ক জড়িত তাতে যুক্ত হতে বিশ্বের নেতাদেরকে রাজি করানো। একপর্যায়ে তারা ঋনের দায়ে এমনই ঋজু হয়ে যাবে যাতে তারা আমাদের অনুগত্য অস্বিকার করতে পারবে না। তারপর আমরা তাদেরকে আমাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বা সামরিক উদ্দ্যেশ্য পুরনের জন্য এদেরকে ব্যবহার করতে পারব। অন্য দিকে তারা তাদের দেশে আমাদের পয়সায় শিল্প নগরী, বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, বিমান বন্দর এসব তৈরি করে নিজ নিজ দেশের মানুষের মধ্যে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। আর অন্যদিকে আমাদের প্রকৌশলি বা কন্সট্রাকশন কম্পানিগুলো আরো সম্পদশালি হয়ে উঠবে"। ক্লডিন সম্পর্কে পরে আরো লেখার ইচ্ছা আছে।

এখানে সম্রাজ্যবাদি শক্তির কৌশলগত দিক গুলো লক্ষ্য করে অবাক হতে হয়। এই চক্র ভাঙ্গা সহজ নয়। দেখা যাচ্ছে এই প্রক্রিয়াতে বিশ্বব্যপি রাজনৈতিক নেতৃস্থানীয়রা একটা মেশিনের দ্বারা চালিত। পুজিবাদ আর সম্রাজ্যবাদের যুগল আবিষ্কার এই মেশিন। এখানে ব্যক্তিগত সততার তেমন কিছু করার থাকে না। আমেরিকার একজন প্রেসিডেন্ট সেও এই মেশিনের চক্রে বন্দি। কেননা বাইরে থেকে টাকা বা ব্যবসার রসদ এনে দিতে না পারলে তার পার্টিতো নির্বাচন প্রচারনার টাকাও পাবে না। অবশ্য বলা হয় ওবামার নির্বাচনি খরচ নির্বাহে কর্পোরেট চক্র থেকে আসা টাকার ভাগ অনেক কম। নির্বাচনে তার জয় হয়ত একটা মাইলফলক, কিন্তু পার্কিন্স সাহেবের বর্ণনায় আমরা যে মেকানিজম বা প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত হই সেটা থেকে বেরিয়ে আসা বড় কঠিন। পার্কিন্স সাহেব বিশ্বব্যপী সন্ত্রাসবাদের বিকাশে এই ব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন। তবে আমি তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলনগুলোকে, একাডেমিক চেচামেচিকে, পত্রিকা ব্লগে লেখালেখি এসব চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাতে চাই। কারন এই বাঁধাগুলো না থাকলে আসলে সম্রাজ্যবাদ আরো কঠিন আকার নিত। তারপরও একটা ভাবনা মনে উঁকি দিতেই থাকে আমরা কি আসলে উপনিবেশিক ইতিহাসকে ছাপিয়ে উঠতে পেরেছি? বৃটিশরা চলে গেছে, চলে গেছে হানাদার পাকিস্তানি সেনারা। কিন্তু বিশ্বব্যপি সম্রাজ্যবাদের এখনকার চরিত্র কিন্তু আরো ভয়াল। কারন এটাকে দেখা যায় না। শ্ত্রুকে শত্রু হিসাবে চেনা যায় না। বন্ধুকেও বিশ্বাস করা যায় না। তার চেয়ে বড় হচ্ছে নিজের ভেতরেই আমরা তৈরি করেছি আত্মবিধ্বংসী শক্তি। এগুলো নিয়ে পরে বিশদ আলচনার ইচ্ছা আছে।

যাহোক সম্রাজ্যবাদি মেশিনের কাজের ফল কি দাড়াচ্ছে তা পার্কিন্স সাহেবের মুখেই শুনি,

আমাদের (অর্থাৎ আমেরিকার) অনেক নামজাদা প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র বেতনে কর্মিদেরকে পাওয়া যাচ্ছে যারা ওই স্বল্পবেতনে মানবেতর পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হয়। তেল কম্পানিগুলো ইচ্ছা করেই রেইন ফরেস্টের নদীতে বিষাক্ত বর্জ্য ফেলে মানুষ, প্রানী, গাছপালা আর বন্য পরিবেষকে ধংস করছে, আদিবাসিরা শিকার হচ্ছে গনহত্যার। ওষুধ শিল্প আফ্রিকার লাখ লাখ এইডসে আক্রান্ত জনগোষ্ঠিকে জীবন রক্ষাকারি ওষুধ সরবরাহ আটকে দিয়েছে। এই আমেরিকার মাটিতেই এক কোটি বিশ লক্ষ্য পরিবার কপর্দকহীন। এনার্জি খাতে আমরা পাচ্ছি এনরন আর হিসাব খাতে এন্ডারসনের মত প্রতিষ্ঠান। ধনীদেশগুলোতে বাস করা বিশ্বের এক পঞ্চমাংশ ধনী লোকেদের আয় আর বিশ্বর এক পঞ্চমাংশ দরিদ্রতম লোকেদের আয়ের অনুপাত ৩০ থেকে ৭৪ এ উঠে এসেছে। আমেরিকা ইরাক যুদ্ধে ৮৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, কিন্তু ইউনাইটেড নেশন্সের হিসাব অনুযায়ী এর অর্ধেকেরো কম টাকায় এই পৃথবীর সব মানুষের জন্য নিরাপদ পানি, যথেষ্টা খাবার আর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা যায়।

এর পর এই ফলাফল গুলোর সাথে পার্কিন্স সাহেব সন্ত্রাসবাদের সম্পর্কে আলোচনা করছেন। তিনি মনে করেন সন্ত্রাসবাদকে একটা ষড়যন্ত্র মনে করাটা একটা ভুল। কারন সেক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রের হোতাদের আটকাতে পারলেই এর মূলোৎপাটন করা যেত। কাজেই সন্ত্রাসবাদের শিকড়টি আরো গভীর এবং ষড়যন্ত্রের চেয়েও মারাত্মক এবং ভয়াবহ। এর উৎপত্তি হচ্ছে একটা ধারনা বা বিশ্বাসের মধ্যে। এখন প্রতিটি বিশ্বাসেরই তো একটা কলেমা বা মূল বক্তব্য এবং কিছু অনুবক্তব্য থাকে। এই বিশ্বাসে ক্ষেত্রে সেই বক্তব্য কি?

পার্কিনসের বর্ণনামতে "অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সব সময়ে সব আকারেই মানব সভ্যতার জন্যে মংগলের। এই প্রবৃদ্ধি বা গ্রোথ যত বেশি বুঝতে হবে মানুষের উপকারও তত বেশি হচ্ছে।" এই বক্তব্য থেকে আবার একটা অনুবক্তব্যও আসে, যেমন "যারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির রসদ যোগার করতে পেড়েছে তারাই সম্মান আর পুরষ্কারের যোগ্য আর প্রান্তিকেরা হবে শোসিত"।

গল্প হলেও সত্যি? কে কি বলে?
এরকম বোমার মত স্বীকারোক্তি! বিশ্বাস করব? নাকি এই পার্কিন্স ভদ্রলোক নিজেকে মনযোগের কেন্দ্রে আনার জন্য এমনটা করছেন? বলা কঠিন। এনিয়ে কিছু মতামত হাজির করার চেষ্টা করছি। এই বইয়ের পরেও পার্কিন্স সাহেব বিস্তর লেখালেখি করেছেন যাতে তার স্বীকারোক্তি নানা মাত্রায় হাজির হয়েছে। এটা নিয়ে ডকুমেন্টারিও তৈরি হয়েছে। কিন্তু অনেকেই তার এই গল্পকে অস্বিকার করেছেন। প্রথমে আমেরিকান সরকারের স্টেট ডিপার্টমেন্টেরর বক্তব্য দেখি। তারা সরাসরি এই অভিযোগ অস্বিকার করেছে (লিঙ্ক) এবং পার্কিন্স সাহেবের লেখাকে কল্পকাহিনি হিসাবে উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে পার্কিন্স সাহেব বলছেন তিনি যখন প্রথম বইটি প্রকাশ করার জন্য একজন প্রকাশকের সাথে কথা বলেন তাকে পরামর্শ দেয়া হয় এটাকে কল্পকাহিনী হিসাবে লিখতে। কিন্তু তিনি মনে করেন এর প্রতিটি মুহূর্ত যেহেতু তার জীবনে সত্যি কাজেই এটাকে সত্যির আকারেই প্রকাশ করা উচিত গল্প আকারে নয়। তার এই গল্পটি সত্য কি মিথ্যা অথবা কতটুকু মিশেল সেটা বলা কঠিন। তবে সম্রাজ্যবাদিতার একটা দুষ্ট চক্র যে কোন না কোন ভাবে নিরবে কাজ করে যাচ্ছে সে এটা হয়ত অনেকেরই মনে হয়। বইটিকে আমরা আত্মজীবনিই বলতে পারি। গল্পের ভাষায় সত্যকে যত কাছ থেকে জীবন্ত রূপে দেখা যায় অনেক সময় পাঠ্য বই বা দারুন বিশ্লেষনি বই থেকেও সেই স্বাদ পাওয়া যায় না; বুদ্ধির দেয়ালে হয়ত একটা মৃদু টোকা দেয়া হয়, ধাক্কা দেয়া হয় না, গল্প সেটা পারে। তাই প্রায়ই নিজের গল্প লেখার অক্ষমতা নিয়ে আফসোস হয়। এখন পর্যন্ত যা লিখলাম তাকে বইটির একটি অতি ছোট-খাট সারাংশ-কাম রিভিউ ভাবতে পারেন।

এই গল্প শুনে আমাদের কি দরকার?
বাংলাদেশের ইতিহাসেও বিভিন্ন সময়ে যে আমাদের রাজনীতিকদের কবজি মুচরে আমজনতাকে ঘোল খাইয়ে যায় নি অভাগুরা তার কি গ্যারেন্টি আছে? অথবা তারা যে এখন তৎপর না তারই বা কি নিশ্চয়তা? তাছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাসে যেসব রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ঘটেছে সেগুলোর চরিত্রই বা আমরা কতটুকু জানি? এই এক যায়গায় এসে বাংলাদেশের বাম রাজনিতির চেচামেচিকে বা রাস্তায় পড়ে মার খাওয়াকে বিফল মনে হয়না। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মার্ক্সবাদের প্রভাব বাজার অর্থনীতির প্রভাবের চেয়ে শক্ত। আস্তে আস্তে হয়ত এমনটা কমে আসবে। কিন্তু রাস্তার উপর চেচামেচির দরকার আছে। অন্তত পার্কিন্স সাহেবের গল্প পড়ে তাই মনে হয়। এজন্য গনতন্ত্রকেও সাধুবাদ, রাস্তার পাশে চেচামেচি করে মার খাওয়া বাম ভাবধারার কর্মীদের সাধুবাদ। মনে পড়ছে এরশাদ সাহেবের আমলে প্রচুর রাস্তাঘাট তৈরির কথা। এরশাদের ব্যপারে যখন কথা ওঠে তখনই বলা হয় তার সময়ে যত রাস্তাঘাট তৈরি হয়েছে এমনটা আগে হয়নি। কথা হয়ত সত্যি কিন্তু এই গল্প পড়ে বোঝা যাচ্ছে এতে আহ্লাদিত হবার আসলে কিছু নেই।

মূল কথা বলা হয়ে গেছে উপরেই এবার, একটু বিস্তারিততে যাব। যাদের আগ্রহ আছে তাদের জন্য পরের পর্বে বইয়ের ভেতর থেকে আরেকটু বিবরন হাজির করব।

গল্পের শুরুতে পার্কিন্স সাহেব ইকুরেডরের রাজধানী কুইটোতে ২০০৩ সালে বসে অতীত কৃতিকর্মের স্মৃতিচারন করছেন। সেখানকার ভূপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক বৈচিত্র আর নিসর্গের সৌন্দর্যের বর্ণনা করছেন। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে উঠে এসেছে ইকুয়েডরের প্রতি তার অপরাধবোধ। তিনি এখন যে সব কার্যক্রমের সাথে জড়িত এটা এক ধরনের প্রায়শ্চিত্যের চেষ্টা। বিগত ৩৫ বছরে এখানে যা পরিবর্তন হয়েছে তার জন্য তার মত অভাগুদের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। ইকুয়েডরের পরিবেশ আর অর্থিনীতির বিপর্যয়ের স্বরূপ বর্ণনার করতে পার্কিন্স সাহেব এক যায়গায় বলছেন

আমার মত অভাগুদের কল্যানে আজকের (২০০৩ সালের) ইকুয়েডর আমরা অধুনিক অর্থনীতি, ব্যঙ্কিং আর প্রকৌশল নিয়ে আসার ইকুয়েডরের চেয়ে অনেক নিচে পড়ে গেছে। ১৯৭০ সালের পরের যে সময়টাকে অয়েল বুম বলা হত তখন রাষ্ট্রীয় হিসবেই দারিদ্রের হার ৫০% থেকে বেড়ে ৭০% হয়েছে, সরকারের দেনা ২৪০ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপর সরকারের বরাদ্দ ২০ ভাগ থেকে কমে ৬ ভাগে এসে ঠেকেছে।

ইকুয়েডরের লক্ষ লক্ষ লোক আর বাকি পৃথিবীর কোটি কোটি লোক এই সব অভাগুদের জন্যই সম্ভব্য সন্ত্রাসি। কমিউনিস্ট আদর্শ, আরজকতার প্রতি সহজাত আকর্ষন বা স্বভাব জাত মন্দ ধারা এর কোনটাই এর জন্য দায়ী নয়। এরা সন্ত্রাসী হবে কারন এদের আর কোন উপায় নেই। এমাজনের তলায় সঞ্চিত তেলের খনিই হয়ত ইকুয়েডরের দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী। অল্প কিছু ধনাঢ্য পরিবারকে টাকা দিয়ে অভাগুরা তেল কম্পানীর কাছে বেঁচে দেয় এমাজনের বনাঞ্চল। আর সেখানত থেকে দুষিত তেল নিঃসরনের মাত্রা বিশ্বের জানা অনেক বড় মাত্রার নিঃসরনকে ছাড়িয়ে গেছে। যেমন এক্সন ভেলদের ক্ষেত্রে যে মাত্রার স্পিলোভার ঘটেছে ইকুয়েডরের ক্ষেত্রে এই উপচে পড়া তেলের পরিমান তার দ্বিগুনেরো বেশি। তবে কেবল ইকুয়েডর নয় পৃথিবীর যে দেশই আমেরিকার সম্রাজ্যবাদের ছাতার নিচে এসেছে তাদের সবার পরিনতি কম বেশি একই রকম হয়েছে। বাংলাদেশের গ্যাস আর কয়লা নিয়েও নানা রকম ঢাক ঢাক গুর গুরু শোনা যায়। এর মধ্যে যে এরকম ব্যাপার নেই সেটা কি মনে হয়?
আজকের মত এইখানেই থামি। পরের কিস্তিতে আরো কিছু ডিটেইল দেবার চেষ্টা করব। তার সাথে যুক্ত হবে আরো কিছু গাড়লসুলভ মন্তব্য।


মন্তব্য

সিরাত এর ছবি

আমি ইংরেজিতে পড়ছি। একটু কেমন জানি লেগেছে, ফলে আদ্ধেক পড়ে ফেলে রেখেছি। শেষ করার ইচ্ছা আছে।

আমার মতে এভাবে অনুবাদ না দিয়ে সংক্ষেপণ অনেক বেশি কার্যকর। ব্লগ আসলে অধৈর্য্যদের মাধ্যম কিনা। যাহোক এটা কেবল আমার মত। হাসি

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

বইটা যে খুব ভাল লেখা হয়েছে এমনটা বলা যায় না। কারন তার লেখক ক্যারিয়ারের মূল পূঁজি এই স্বিকারোক্তি। কাজেই অর্ধেকের বেশি অনেকেই পরতে পারেনাই। আমিও আপাতত এই সংক্ষেপন কায়দাটাই পছন্দ করছি। তবে কিছু কিছু বই আসলে খুবই ইন্টেন্স। সেগুলাকে সংক্ষেপে লিখে কঠিন। বরং কোন ক্ষেত্রে মনে হয় মূল বইয়ের চেয়েই বড় না হয়ে যায়। অমর্ত্য সেনের ডেভেলপমেন্ট এস ফ্রিডম থেকে এমন মনে হয়েছিল।

সিরাত এর ছবি

আমার মন্তব্য পাত্তা দিয়েন না, ভুল বলছি, আপনি সংক্ষেপণ-ই করছেন। হাসি

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

তুমি ভুল বলনাই। প্রেফেইস আর প্রোলগটা অনেকটা এব্রিজড করে দিসি মনে হয়। এই জন্যেই বলতেসিলাম সারাংশ কাম অনুবাদ। কারন এই খানেই আসল কথা গুলো উঠে আসছিল। পুরা বইয়ের বিস্তারিত না দেখে কেবল এইটুকু দেখলেই কাহিনী মোটামুটি আচ করা যায়। কাজেই তোমার মন্তব্যের সাথে আমার দ্বিমত নাই তেমন।

নিবিড় এর ছবি

লেখাটা পড়ে বইটা পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। এটার কোন নেট ভার্সন কি পাওয়া যায়?

সিরিজের পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

নেটা ভার্সন হয়ত খুজলে পাওয়া যেতে পারে। কারন সাড়া জাগানো বই। আমি লাইব্রেরি থেকে ধার করে পড়ছি। আশা করছি বেশি পর্ব লাগবে না শেষ করতে। সংক্ষেপনের মজাই আলাদা। আপনার অনুপ্রেরনার জন্য ধন্যবাদ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

এখানে পাওয়া যাবে।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ধন্যবাদ বিডিয়ার ভাই। আপনার এই লিঙ্কটা আগে পাওয়া গেলে বইটার জন্য যা দৌড় ঝাপ করছি তা থেকে বেচে যেতাম।

নিবিড় এর ছবি

ধন্যবাদ অপ্র ভাই


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

অভাগু-কাহিনীর সারাংশ বেশ সরল-সাবলীল ভাষায় লিখেছেন। বইটা পড়তে আগ্রহ পেলাম। লিংকের জন্য অপ্রকে ধন্যবাদ।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

অনুপ্রানিত বোধ করছি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বিশ্ব ভূ-রাজনীতি এবং সম্রাজ্যবাদের এই সব হুমকি সম্পর্কে না জানা থাকলে গনতন্ত্রকে আমরা ফলপ্রসু ভাবে ব্যবহার করতে পারবনা। আন্তর্জাতিক অভাগুরা যখন কবজিতে মোচর দেবে তখন রাজপথে, খবরের কাগজে আর ব্লগে আপত্তি বিপত্তি আর প্রতিবাদ থেকে হয়ত কবজির মোচর কাটিয়ে উঠতে মনে বল পেতে পারে আমাদের নেতারা। ধরে নিচ্ছি সময়ে সময়ে দেশের স্বার্থ নিয়ে তাঁরা ভাবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

http://www.zeitgeistmovie.com/
http://www.thezeitgeistmovement.com/joomla/index.php?Itemid=517

জেইটগেইষ্টে আগেই ব্যাটার সাক্ষাৎকার দেখেছিলাম ।
কি ভয়ংকর!

--
ইমতিয়াজ মির্জা

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

আসলেই ভয়ংকর। কিন্তু এদের কলা কৌশল জানা বা বোঝা বা এধরনের হুমকি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে চলা খুব দরকারি মনে করেই এই বইয়ের সার সংক্ষেপ করার ব্যপারে আগ্রহী হয়েছি।

স্বাধীন এর ছবি

অনুবাদ/সার সংক্ষেপের ভাল হয়েছে। চিন্তা জাগানিয়া লেখা, কিন্তু আপাতত সময় নেই। দেখি সময় হলে ভিডিওটি দেখবো। আপাতত পড়েছি জানিয়ে গেলাম।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ধন্যবাদ স্বাধীন ভাই। আপাতত পড়েছেন এটা জেনেই খুশি। পরের কিস্তিগুলো শিগগির দেবার ইচ্ছা আছে। সময় পেলে একটু বিস্তারিত মন্তব্য দিয়েন।

অতিথি লেখক এর ছবি

কৌতূহল এখনো কাটেনি, পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। ভাল হয়েছে, চালিয়ে যান।
- বুদ্ধু

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

আশা করি চালাতে পারব। তবে কৌতুহল মিটাতে পারব কিনা জানি না। কৌতুহলযে তৈরি হয়েছে এইটাই বড়কথা।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

সবচেয়ে দুঃখের বিষয় যে এই হারামজাদারা ৩০ বছর ধরে 'ওয়াশিংটন কন্সেন্সাস' জোর করে দুনিয়ার মানুষরে গিলায় খাওয়াইসে। তারা চাক বা না চাক, সাধারণ মানুষ কষ্ট পাক বা না পাক। অথচ গত ১৮ মাসে পশ্চিমা বিশ্বে যেই লংকাকান্ড ঘটে গেল, সেইটা সামাল দিতে গিয়ে ওরা নিজেরাই ওদের ৩০ বছরের আদেশ-উপদেশ পুরাপুরি উপেক্ষা করসে। ডাবল ট্রিপল স্ট্যান্ডারড-এর চরম উদাহরণ এর থেকে আর কোথাও পাওয়া যাবে না। ১৯-২০ বছর আগে যেই জেফরি স্যাক্স 'শক থেরাপি' দিয়ে পোল্যান্ড-কে শোয়ায় দিসিলো, সেই ব্যাটাই আজকে বলে বেইল-আউট, বেইল-আউট। ন্যাক্কারজনক।

আসল কথা - জুলুম আর উপনিবেশবাদ যুগে যুগেই, খালি খোলস আর মনিবের নাম পালটায়।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

জুলুম আর উপনিবেশবাদ যুগে যুগেই, খালি খোলস আর মনিবের নাম পালটায়

খাটি কথা সুবিনয় দা। এক দিকে আছে শক্তি আর টাকা আরেকদিকে আছে চিন্তার প্রভাব। স্বাধীনতা যে এখনো আরো অনেক দূরের জিনিস এই কথাটা মনে থাকে না সব সময়। আমার মনে হয় চিন্তার উপনিবেশিকতার হাত থেকে নিজেদের বাচান হইল প্রথম ধাপ। এইটা করা গেলে বাকিটা সহজ হয়ে যায়। নিজেকে আবিষ্কার করার সেই আনন্দ কবে আসবে জানি না। কিন্তু আসতেই হবে। তাগো ধারনা আমরা গিলতাসি কেন? আমাগো মধ্যে তো বুদ্ধিমান লোকের অভাব নাই। বাম রাজনীতি অনেক সাহায্য করসে আমাগোরে। কিন্তু মনে হয় এইটা শেষ কথা না। যাই হোক আরো অনেক কিছু বুঝার বাকি আছে মনে হয়। চেষ্টাটা জারি থাকুক।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।