আমরা বেঁচে আছি অন্যদের সময়ে

ঈয়াসীন এর ছবি
লিখেছেন ঈয়াসীন [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২৭/০৩/২০১৩ - ৯:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যুক্তরাজ্যে জামাত এবং তার ছাত্র সংগঠন শিবির কতটা সংগঠিত তা ব্লগ পাঠক মাত্রেই অবগত। ইস্ট লন্ডন মস্ক-এর নাম পত্রিকায় লিখবার সময় নামের পূর্বে ‘বিতর্কিত’ শব্দটি জুড়ে দিতে ভুল করে না সেখানকার সাংবাদিকেরা; আর আইএফই বা ইসলামিক ফোরাম অব ইয়োরোপ –কে তারা অনেকেই সরাসরি সন্ত্রাসী দল বলেই বিবেচিত করে। এমন কি আইএফই-র সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকবার কারণে লেবার পার্টির একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মেয়র-কে দলচ্যুত করা হয়েছে। সে এক বিশাল কেলেঙ্কারির কাহিনী। রচনা দীর্ঘ না করে উৎসুক পাঠকের জন্যে উৎস জুড়ে দিলাম।

http://kafircrusaders.wordpress.com/2013/01/29/islamofascist-lutfur-rahman-the-extremist-linked-mayor-of-tower-hamlets/comment-page-1/

http://blogs.telegraph.co.uk/news/andrewgilligan/100112318/lutfur-rahman-all-his-controversies-in-one-place/

অধুনা যুক্তরাজ্যে আরেকটি দলের আবির্ভাব হয়েছে যার নাম ‘সেভ বাংলাদেশ’; নাম শুনে ভুলেও ভেবে বসবেন না যে বাংলাদেশ কে ‘সেভ’ করাই তাদের মুখ্য কিংবা গৌণ উদ্দেশ্য। মূলত সাম্প্রতিক বপিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধচারন এবং জামাত ইসলামের বন্দী নেতা কর্মীদের মুক্ত করতে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইয়োরোপে বসবাসরত মুসলিম সমাজকে সংঘবদ্ধকরণই তাদের পরম উদ্দেশ্য; আর সেই ভ্রান্ত ভিত্তির উপর দণ্ডায়িত ঐক্যবদ্ধ শক্তি দ্বারা ৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর ন্যাক্কারজনক আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
ইয়োরোপের বাইরের পাঠকদের অবগতির জন্যে জানাচ্ছি উল্লেখিত ইস্ট লন্ডন মস্ক, আইএফই এবং সেভ বাংলাদেশ- এই সংগঠনগুলোর সবকটিই জামায়াত ইসলাম-এর ইয়োরোপীয় শাখা, তবে এ কথা স্বীকার করতে তারা রাজী নয়; নিজ দল ‘জামাত’-এর পরিচয় প্রকাশে তাদের বুঝি লজ্জা হয়, বুঝুন ঠ্যালা। আর এই সংগঠন তিনটির বিস্তার সমগ্র ইয়োরোপ জুড়ে এবং তাদের লোকবল ও প্রচার ব্যাপক।
যুক্তরাজ্যের সীমানা পেরিয়ে আরেকটু উত্তরমুখী হয়ে এবার ফিনল্যান্ডের গল্প বলি। কথিত আছে যে যুক্তরাজ্যের পরে আইএফই-এর জাল ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনে সর্বাধিক বিস্তৃত। শুধু কথিত নয়, ফিনল্যান্ডে বসবাস করি বিধায় এ বিষয়টিতে আমরা চাক্ষুস সাক্ষী। এখানকার রাজধানী হেলসিঙ্কিতে অবস্থিত একমাত্র বাঙ্গালী মসজিদটি সরাসরি উল্লেখিত সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত। এই মসজিদে খোলাখুলি ভাবেই এইএফই-র তহবিলের জন্যে চাঁদা তোলা হয়।

বর্তমানে তারা বিভিন্ন পন্থায় স্থানীয় মুসলিম সমাজকে একত্রিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তাদের সঙ্গে ভিড়েছে বেশ কিছু সোমালীয়ান। তারা একত্রিত হয়ে প্রচার করছে যে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এবং তরুণ প্রজন্ম (শাহবাগ চেতনায় বিশ্বাসী) কঠিন নাস্তিক; আর সেই কারনেই ইসলামের সেবাকারী প্রতিষ্ঠান ‘জামাত ইসলাম’ কে নিশ্চিনহ করতে সরকার উদ্ধত। তাদের প্রচারের কোথাও এই সব জামাতি নেতাদের যে যুদ্ধাপরাধের কারণে বিচার করা হচ্ছে তার উল্লেখ নেই। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ইসলাম ও কোরআনের সেবা করবার অপরাধেই তাদের নেতারা অপরাধী।

এই প্রসঙ্গ গুলো আমার আগের একটি লেখায় উল্লেখ করেছিলাম, তাই আর পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। শুধুমাত্র পাঠককুলকে জানাতে চাই, এই অপপ্রচারকারীদের বিপক্ষে যে ক’জন সরাসরি অবস্থান নিয়েছে তারা সংখ্যায় অতি নগন্য। অনেকেই মনে মনে বাঘ মারে কিন্তু বনে যায় না, উপরন্তু বিভিন্ন ভাবে চাঁদা দিয়ে কিংবা নৈতিক-মানসিক-মৌখিক-শারীরিক সমর্থন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষ এই শক্তিটিকে আরও শক্তিশালী করছে। আহ, এই কষ্ট যে কোন গর্তে লুকাই।

আমার জন্ম যুদ্ধের তিন বছর পরে। আমার সমবয়েসী যারা আছে তাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের বুদ্ধি হবার পর থেকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংসকারী একটি দলের শাসনে বেড়ে উঠেছি। ৭৫ থেকে শুরু হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধটিকে নিছক একটি গল্প বানানোর অপচেষ্টা। এর পরের কথা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। মিথ্যা ও ভুল ইতিহাসে গড়া পাঠ্যপুস্তক পড়তে পড়তে আর নোংরা রাজনীতি অবলোকন করতে করতে আমরা বড় হয়েছি। তবু পারিপার্শ্বিকতা বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কেউ কেউ নিজেকে শুদ্ধ করে গড়ে তুলেছে। এখানে আমার অনেক পরিচিতজন দাবী করে যে ৭১-এ কোনো গেরিলা যুদ্ধ সংগঠিত হয়নি; তা ছিল আওয়ামী-ভারত এবং অন্যপক্ষে পাকিস্তানের একটি রাজনৈতিক লড়াই। খুবই আক্ষেপের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, ফিনল্যান্ডে এই মন মানসিকতার বাঙ্গালীরাই সংখ্যায় অধিক। শাহবাগের চেতনা তাদের কাছে বিরানী আর গঞ্জিকার মচ্ছব, অথচ হরতালে ভাংচুরে-অগ্নিসংযোগে তারা যুক্তি খুঁজে ফেরে। এখানে জামাত সমর্থিত মসজিদ কর্তৃপক্ষ রাজাকার মুক্তির দাবীতে আন্দোলন করলে তারা চুপ থাকে, অথচ ৭১ এর চেতনায় উদ্ভাসিত কোনো ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখলে কিংবা নোট-ব্লগ পড়লে তারা গেল গেল বলে রব তোলে। সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে তারা জামাত সমর্থিত মসজিদে যায়, বিএনপি-আওয়ামীলীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থাকে, অথচ রাজাকার বিরোধী কোন আন্দোলনে তাদের টিকির দেখা পাওয়া যায় না।
এদের নিয়ে শঙ্কা করে বা হতাশ হয়ে আর লাভ নেই। শঙ্কার ক্ষেত্রটা অন্যদিকে; এই এদের ছেলেমেয়েরা যারা দেশ থেকে দূরে থাকে অথচ দেশকে জানতে চায়, তারা কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে? মা-বাবার বৈশিষ্ট্যইতো তাদের মাঝে প্রতিফলিত হবে। মুক্তিযুদ্ধ কি তবে তাদের কাছে একটি গল্পই থেকে যাবে? আমি সত্যিই দারুণ শঙ্কিত। আমরা কি বেঁচে আছি অন্যদের সময়ে?
ঈয়াসীন

পূর্বের লেখা-
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/44448
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46667
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46986
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47945
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47976
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/48541


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

খানে জামাত সমর্থিত মসজিদ কর্তৃপক্ষ রাজাকার মুক্তির দাবীতে আন্দোলন করলে তারা চুপ থাকে, অথচ ৭১ এর চেতনায় উদ্ভাসিত কোনো ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখলে কিংবা নোট-ব্লগ পড়লে তারা গেল গেল বলে রব তোলে। সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে তারা জামাত সমর্থিত মসজিদে যায়, বিএনপি-আওয়ামীলীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থাকে, অথচ রাজাকার বিরোধী কোন আন্দোলনে তাদের টিকির দেখা পাওয়া যায় না। গুল্লি

ঈয়াসীন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।