জ্বলন

ইয়ামেন এর ছবি
লিখেছেন ইয়ামেন [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১৩/০৫/২০১৮ - ১২:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সকাল আটটা হবে। ফার্মেসির শাটার তুলে দোকানে সবে বসেছে মুনির। গামছাটা দিয়ে স্বযত্নে কাউন্টারের ধুলো মুছছে, এমন সময় রহমান সাহেব এসে হাজির। কাছে থাকেন, রিটায়ার্ড মানুষ। হাতে কাজটাজ তাই নেই তেমন। প্রতিদিন সকালে মর্নিং ওয়াক করে ফিরার পথে এসে মুনিরের সাথে একটু গল্পগুজব করেন। আজও ব্যাতিক্রম হলো না।

"কি মুনির, কেমন আছিস রে?"

"স্যার এই যে আছি আর কি। কি খবর কন।"

"আর খবর, দেশটা এমনিতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, এখন আরেক নতুন আপদ।"

"ক্যান স্যার, কি হইছে?"

"খবরটবর রাখিস না কোন? দেখিস নাই এই সরকার মুজিবের নামে স্যাটেলাইট আকাশে উৎক্ষেপণ করেছে?"

"ওওওও বঙ্গবন্ধু-১ এর কথা কন? আমার কাছে তো ভালোই লাগতাছে স্যার, আমগো দেশের নামে সেটেলাইট আকাশে ঘুরবো, এইটা তো গর্বের বিষয়।"

"আরে রাখ তোর গর্ব। কিছু বুঝিস না এই জন্যই তো কোনমতে সিক্স পাশ করে দোকানদারি করিস। এতে দেশের কত ক্ষতি করলো সরকার তুই যদি বুঝতি তাহলে তো হতই।"

"কি রকম স্যার? বুঝায়া কন তো একটূ।"

"আরে এইটার মালিকানা কি সরকার নিজের হাতে রাখছে? সব বেঁচে দিছে বেক্সিমকোর কাছে। তারাই মালিক। এখন তারা ইচ্ছামত ক্যাবল টিভির জন্য দাম রাখবে আমাদের কাছ থেকে, দেখিস সামনের মাস থেকেই ভাড়া হুহু করে বাড়ছে।"

"তাই নাকি স্যার? কিন্তু আমি যে পড়লাম সরকার নাকি শুধু বেক্সিমকো না আরো কোম্পানির কাছেও বেচছে, ওই যে কি জানি কয়, বেন্ডউইথ না কি, আর হেরা তো টেকা দিয়া নিছে, স্যাটেলাইটের মালিকও আমগো সরকার, মেনেজও তারাই করবো। আমরা নাকি অন্য দ্যাশের সেটেলাইট থিকা যে বেন্ডউইথ ভাড়া করতাম, সেই খরচ এখন থেইকা বাইচা যাইবো, আর আমরাও অন্য দ্যাশের কাছে বেন্ডউইথ বেইচা টেকা কামামু।"

"এইসব মিথ্যা কথা তোদেরকে খাওয়াতে পারে বলেই তো সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে রে। কিন্তু আমার মত মানুষকে বোকা বানানো সহজ না।"

"আইচ্ছা তাও ঠিক। আপনি জ্ঞানীগুণী মানুষ স্যার, না জাইনা তো কইতেছেন না। কিন্তু এই যে আমগো দ্যাশের পতাকা লাগানো সেটেলাইট আমগো নিজেরই জিনিস, এইটা চিন্তা কইরা একটু ভাল্লাগে স্যার।"

"হেহে যদি বুঝতিই রে...এসব হলো শুভঙ্করের ফাঁকি। শুধু বাংলাদেশ আর মুজিবের নামের সিল লাগায় দিলেই আমাদের হয়ে গেলো? বানিয়েছে ফ্রান্সের এক কোম্পানি। উৎক্ষেপ করেছে আমেরিকা থেকে আমেরিকানদের রকেট দিয়ে। বলি আমাদের কোন রকেট সায়েন্টিস্ট কাজ করেছে এটাতে? শুধু টাকা দিয়েছি আমরা, বুঝেছিস। তাও শেখ হাসিনা নিজের টাকা দিয়েছে? দিয়েছে আমাদের রক্ত শুষে খাওয়া ট্যাক্সের টাকা দিয়ে। তোর আমার মত জনগণের টাকা দিয়ে বিদেশের কোম্পানি দিয়ে বানিয়ে বিদেশ থেকেই আকাশে ছুড়েছে। এইটা শুধু তার ভ্যানিটি প্রজেক্ট-"

"কি কন? ভেনিটি পুজেক্ট?"

"উফফ কথার মাঝে থামাবি না তো। ভ্যানিটি প্রজেক্ট, মানে নিজের ঢাকঢোল পিটানো। আমাদের টাকা দিয়ে নিজের আর তার বাপের নাম বাড়ালো আর কি। বাংলাদেশের সাথে এই স্যাটেলাইটের কোন সম্পর্কই নাই। টাকা দিয়ে অন্য দেশের জিনিসের উপর শুধু নিজেদের নামটা বসিয়ে দিয়েছে। বলি, এইটা নিয়ে গর্ব করবো কেন রে? স্বাধীন হলাম ৪৭ বছর এখনও নিজেরা বানিয়ে নিজেরা আকাশে উৎক্ষেপ করতে পারলাম না, উল্টো লজ্জা করা উচিৎ। জানিস ঘানার নিগ্রোরাও নিজেরাই বানিয়ে-"

"স্যার নিগ্রো বইলেন না, কালকে কুন এক আম্রিকান সিরিজে দেখছিলাম এইডা নাকি বহুত বাজে শব্দ, হিন্দুদের যেমন মালাউন ডাকলে কষ্ট পায়-"

"বেশী জ্ঞান দিবি না তো! আজীবন নিগ্রো ডেকে আসলাম, এখন খুব আসছিস আমেরিকান শো দেখে আমাকে শিখাতে। আর হিন্দুদের মালাউন ডাকলেও এমন খারাপ কিছু না। মালাউন মানে অভিশপ্ত, আর বিধর্মী হিসেবে তারা তো একপ্রকার অভিশপ্তই, এখানে মাইন্ড করার কি আছে? এখন কি বলছিলাম? ও হ্যা, ঘানার নিগ্রোরাও নিজেরা বানিয়ে স্যাটেলাইট আকাশে পাঠায়, আর আমরা পারি না। ছিঃ ছিঃ। স্বদেশী পণ্য কিনে হও ধন্য এই কথাটা আজকাল মানুষ ভুলেই গেছে।"

"মাগার সেইদিন যে কইলেন ম্যাডাম শান ছাড়া অন্য কুনো মশল্লা দিয়া রান্না করলে আপনার নাকি ভালোই লাগে না, রাঁধুনি খাইলে নাকি বমি আসে।"

"আ মোর জ্বালা, কিসের সাথে কি মিশাচ্ছিস তুই? কোথায় মশল্লা আর কোথায় স্যাটেলাইট বানানো-"

"স্যার..."

"কি? বল।"

"ছুডো মুখে আরেকখান বড় কথা কই, কিছু মনে নিয়েন না। ঘানার সেটেলাইট নিয়াও কই জানি পড়লাম। হেইডা তো নাকি নেনো সেটেলাইট না কি জানি ছিল, অনেক ছুডো জিনিস। এমন তো আমগো ব্র্যাক ভার্সিটির পুলাপাইনও একটা বানাইছিল গত বছর, অন্বেষা। দুইডাই খুব ভালো কাজ করছে সন্দেহ নাই, মাগার আমগো বঙ্গবন্ধু-১ তো আরো বড় জিনিস, হেইডা দিয়া কাজও আরো অনেক বেশী। একডার লগে আরেকডার তুলনা কি যায়?"

"...তুই বড্ড বেশী কথা শিখেছিস আজকাল। অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী সেটা বুঝিস? থাক, আমারই ভুল হয়েছে, এসব জটিল বিষয় নিয়ে তোর সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করছি। যাক, জিনিস দে।"

"আহহা, এখনও জ্বর সারে নাই স্যার?"

"সারছে, কিন্তু এই বাজে আবহাওয়াতে কখন আবার বেঁধে যায় বলা যায় না। তাই কিছু এক্সট্রা নিয়ে রাখি।"

"দেশী দিমু স্যার? নাকি এইবারও বিদেশী?"

"বিদেশীটাই দে। আরাম বেশী, ব্যাথা লাগে কম।"

"আইচ্ছা, খাড়ান স্যার দেই।"

কাউন্টার থেকে বিদেশী সাপোসিটার এক বাক্স বের করে রহমান সাহেবের হাতে দিলো মুনির।

উৎসর্গঃ দেশ এবং প্রবাসের সব রহমান সাহেবদেরকে


মন্তব্য

সাইদ  এর ছবি

গুল্লি

সোহেল ইমাম এর ছবি

দেঁতো হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
সিল্ককটন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।