আধঘন্টা সকাল থেকে কাটা

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: রবি, ২২/০৬/২০০৮ - ৪:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৬.
হু দ্য কেয়ার্স ?
একটা সাদা পাতা চোখের সামনে রেখে আমি ভাবি।
আমার বুক পকেটের একটায় একটা সিংহ আর অন্যটায় একটা বিড়াল মাথা দুলাচ্ছে।
একটা সাদা পাতার জীবনে কত কিছু হবার থাকে .. মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়।
কতবার রানু এসে চোখ জুড়ে বসেছে আর আমাকে সারারাত ঘুমুতে দেয় নি। এইজন্য তাকে একটু বকে দেবো ভাবছি কিন্তু বিড়ালটা গুটিশুটি মেরেই থাকে। বড়কর্তা ততক্ষনে গটগটিয়ে আসেন। তারজন্য সিংহটাকে রেডি করে রাখি। কিন্তু তার আগেই তিনি হাঙরের দাত দেখিয়ে চলে যান। আমি সাদা কাগজটায় তাকাতেই দেখি একটা ইদুর কেলিয়ে কেলিয়ে হাসছে।

৭.
উঠোনটা টলটল করছে আটটার রোদে। আকাশটা একদম আকাশী। বাবার হাতে পেপারটা একটু একটু দুলছে। কোত্থেকে যে হাওয়াগুলো আসে? বিনুফুপিটা বলছিল সাগরপারের ঐধারটায় মস্ত একটা হাওয়ার কল আছে। ওখান থেকে নাকি বাক্স বাক্স হাওয়া তৈরী হয়। সমুদ্র পেরিয়ে দেশ বিদেশ থেকে সব জাহাজ আসে সেই বাক্সভর্তি হাওয়া নিয়ে যেতে। বিনুফুপি কানে কানে বলে সেই হাওয়ার কল দেখতে যাওয়ার কথা। আর আমি ভাবি দৈত্যের মত চেহারার বিশাল বিশাল সব জাহাজের ছবি। কিন্তু তার আগেই দস্যূটা এসে বিনুফুপিকে নিয়ে কোথায় চলে গেল। বিনুফুপির দস্যূটা মাথায় তালগাছের সমান আর কি ফর্সা .. দুই হাতে হাড়ি ভর্তি রসের গোল্লা .. .. ইয়া গোফের মধ্যে দিয়ে এক চিলতে হাসি উকি দেয় কি দেয় না .. আর সবার কেবল হৈ হৈ। বিনুফুপি চলে গেলে বাড়িটা ভরদুপুরে গল্পের বই এর মতো ... করমচা গাছের মতো একা একা। আমি কাগজের ঠোঙায় ফু দিয়ে হাওয়া ভর্তি করি। হাওয়া ভর্তি ঠোঙাটা নিয়ে গিয়ে একটা জাহাজে গিয়ে দিয়ে আসবো। পাজড়ছেড়া বাতাসগুলো সন্ধ্যেবেলা কোন শহরে বয়ে যাবে- ভেনিস নাকি..? ক্লান্ত চোখে রোদের দুপুর গড়াতেই এইসব বৃষ্টির মতো ঝরতে থাকে। সারি সারি টেবিলে আরিফ, মুর্তজা, সোমনদা, রওনক, মোস্তফা অচেনা সব মূর্তির মত। সকাল থেকে সন্ধ্যা রাফ কাগজের পাকানো বলের মত সব টুকরো টুকরো কথা মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো। বিকেল পাচটার ঘন্টা বাজতেই রাস্তায় রাস্তায় ভিড়- এত লোক কি সত্যিই বাড়ি ফেরে?

৮.
বিষ্ণুপদ চ্যাটার্জী হিউম্যান ডাক্তার। উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে এল এম এফ করে বেশ পশার জমিয়েছিলেন। খুলনা জেলার দক্ষিনে সমুদ্র তারই কোল ঘেষে বাবুডুরা গ্রাম। গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষই জেলে। দু একঘর বাড়ির ছেলেরা কলকাতা গিয়ে চাকরী ধরেছে এই খবর নিয়ে বুড়োদের উৎসাহ আর থামে না। এই বাবডুরা গ্রামে এখনো একটাই দোতালা বাড়ি। এই দোতালা বাড়ির কোনার জানালা দিয়ে খুজে বেড়াতাম বিষ্ণুপদ দাদুর নাতনী রানুকে। একদিন বিনুফুপির সাথে রানুর ঘরে গিয়েছিলাম। রানুর পিসি বিমলাদি বিনুফুপির সই। কি ঠান্ডা লাল একটা মেঝে। এর মধ্যে রানু ভাসছে। হাতের হলুদ রঙের মলাটে লাল অক্ষরে মোটা মোটা অক্ষরে লেখা মার্চেন্ট অব ভেনিস। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। বিনুদির বকুনিতে কান ঝা ঝা করে। তুই এত বোকা কেন রে? আমি মাথা নিচু করে হাটতে গিয়ে দেখি শুয়োপোকা রোম ফুলিয়ে ফুলিয়ে কোথায় জানি যাচ্ছে। পিতেম দাদু একবার বলছিল শুয়োপোকা নাকি বুড়ো হলে প্রজাপতি হয়। কেমন কথা শোন। একটা বোয়্যেমে একটু শুয়োপোকা ভরে রাখতে হবে। বিনুফুপির কারনে কিছুই হয় না। ইচ্ছেগুলো সব ইচ্ছে হয়ে থাকে।


মন্তব্য

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

অন্যরকম।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সুমন চৌধুরী এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অসাধারণ লিখেন আপনি। বিণম্র শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।