মাক্তুব, ভাবল ও।
“আরে কী হলোটা কী, জিজ্ঞেস করো!” ইংরেজের কথায় সম্বিত ফিরে পেল সান্টিয়াগো।
মেয়েটির কাছাকাছি গেল ও। ইতস্তত করে একটু হাসল।
“আপনার নামটা জানতে পারি কি?”
“ফাতিমা,” চোখের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে নিতে বলল মেয়েটি।
“ও আচ্ছা... আমাদের দেশের মেয়েদেরও এই নাম হয়।”
সেবা প্রকাশনীর সাথে পরিচয় তিন গোয়েন্দা’র ‘সবুজ ভূত’ বইখানা দিয়ে। তখনও বুঝতে পারিনি ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে একদিনে পড়ে শেষ করা এই বইটি টেনে নিয়ে যাবে কতদূর। তখনও বুঝতে পারিনি বিদেশি সাহিত্যের অচেনা ভাষার জগতে ঢুকে যাবো মায়ের ভাষায়।
আর তখনও জানতাম না, জীবনে আসতে চলেছে ‘মাসুদ রানা’।
মানুষ কেন বই পড়ে? জ্ঞানী হবার জন্য নাকি স্রেফ আনন্দের জন্য? অন্যদের কথা জানি না, আমি পড়ি আনন্দের জন্য। সেই ফাঁকে যদি দুয়েকটা জ্ঞানার্জনের পূণ্য অর্জিত হয় সেটা বাড়তি লাভ।
তো, এই পড়াশোনা ব্যাপারটা জ্ঞানার্জনের পাশপাশি মানুষের কল্পনাশক্তির প্রসারণ ঘটায় ব্যাপক ভাবে। আমি নিজে স্কুল বয়স থেকে আজ অবধি হাজার হাজার হাবিজাবি বই গিলে নিজের কল্পনাশক্তির বড়সড় এক পর্বত দাঁড় করিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম জীবনে আর নতুন কিছু পড়ার নাই। কিন্তু কয়েকদিন আগে শেষ করা একটি অভিনব পুস্তকের কাছে আমার সমস্ত কল্পনাশক্তির পর্বতের ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। আরেকটুর জন্য ধ্বসে পড়েনি।
মজার ব্যাপার হলো, আমি আগ থেকেই জানতাম আমি একটি কল্পকাহিনী পড়তে যাচ্ছি যার সাথে বাস্তবের কোন যোগসূত্র নেই। তবু এই হোঁচট খাবার কারণ কী?
জানতে হলে, পড়তে হবে।
সে এক বিশাল ইতিহাস, বিশ্ব জুড়ে প্রবল জনপ্রিয় লেখক আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে তখন ফ্লোরিডার ‘কী ওয়েস্টে’ তাঁর ২য় স্ত্রী Pauline Pfeiffer এর সাথে ছিলেন। এবং যে চমৎকার বাড়িতে প্রায় ১০ বছর তারা ছিলেন, যা এখন হেমিওংয়ে জাদুঘর হিসেবে বিখ্যাত, তা মূলত ছিল পাওলিনের ধনবান চাচার বাড়ি। সেই আংকেল গাস আবার ভাতিজির জামাই বিদ্যান হেমিংওয়েকে খুব পছন্দ করতেন, এমনকি তাদের নিয়ে আফ্রিকা ভ্রমণে সমস্ত ব্যয়ভার বহন করেছিলেন, যা
আশ্চর্য নয় কিছু,
নিতান্ত প্রাকৃতিক।
[ভূমিকা: সব অনুবাদের ভূমিকা লাগে না। কিন্তু এই অনুবাদটির পেছনে একটি গল্প আছে। আমি কেন এই অনুবাদটি করতে গেলাম? বাংলাদেশে মার্কেজ খুব জনপ্রিয় একজন লেখক। সম্ভবত বাংলা ভাষায় সবচেয়ে বেশী অনুবাদ হয়েছে মার্কেজের গল্প উপন্যাস। বাংলা অনুবাদের অবস্থা তেমন সুবিধার না বলে আমি বহুকাল বাংলা অনুবাদ পড়ি না। সত্যি বলতে গেলে সেই কৈশোর থেকে সেবা প্রকাশনী ছাড়া অন্য কারো বাংলা অনুবাদে আমি স্বস্তি পাইনি। কিছুকাল আগে আমি মার্কেজের ছোটগল্প নিয়ে একটা কাজ করি। হাতের নাগালে থাকা বাংলা অনুবাদগুলো পড়ে ইংরেজি অনুবাদের সাথে মেলাতে বসি। যেহেতু স্পেনিশ ভাষা জানি না তাই ইংরেজিটাই আমার কাছে মূল গল্পের ভিত্তি। কাজ করতে গিয়ে 'গল্পপাঠ' ওয়েবজিনে বেশ কয়েক জনের অনুবাদ পড়ার পর আমি খুব হতাশ হয়ে পড়লাম। তারপর খোঁজ নিয়ে জানলাম বাংলা ভাষায় মার্কেজের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুবাদক অমিতাভ রায়। কলকাতার দে'জ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অনুদিত 'মার্কেজের গল্পসমগ্র'। বইটা সংগ্রহ করার পর ভাবলাম এবার হয়তো কিছুটা উন্নত অনুবাদের দেখা মেলবে।
পরদিন, দুপুরে বুড়ো মেলখিযেডেকের সাথে দেখা করতে গেলো সান্টিয়াগো। ছ’টা ভেড়া এনেছে সাথে।
“খুবই অবাক হয়েছি, জানেন! আমার এক বন্ধু আমার ভেড়াগুলো মুহূর্তের মধ্যেই কিনে নিলো। বলল, ওর নাকি সারা জীবনের স্বপ্ন ও রাখাল হবে। আর আমার এই ভেড়া বেচার ব্যাপারটা, এটা নাকি তারই একটা নিশানা।”
মানুষের কাজই উদ্ভট সব কথা বলা, ভাবে সান্টিয়াগো। মাঝে মাঝে মনে হয়, ভেড়ারাই ভালো, কোনো কথাবার্তা বলেনা, চুপচাপ থাকে। আর না হলে বইতো আছেই। যখন যেমন ইচ্ছা, বই থেকে কত অবিশ্বাস্য সব কাহিনী জেনে নেওয়া যায়! অথচ মানুষের সাথে কথা বলতে গেলেই যত সমস্যা, কেউ কেউ এমন কথা বলে, এমন আজব সব কথা যে আর আলাপ চালিয়ে যাওয়ার উপায় থাকেনা।
“আমার নাম মেলখিযেডেক,” বলল বুড়ো। “কতগুলো ভেড়া আছে তোমার?”