ঘটনাকে শিকার করতে গিয়ে ঘটনার শিকারে পরিণত হবার অভিজ্ঞতা আপনার আছে? ব্যাপারটা শুনতে হাস্যকর মনে হলেও আমার জন্য মর্মান্তিক ছিল। কারণ সেরকম একটা ঘটনার শিকার হয়ে আমি এখন ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলার অপেক্ষায় নির্জন কারাকক্ষে বসে আছি।
ঘটনাটি বলা যাক।
ধরা যাক আমার নাম মারফি। যে অস্বাভাবিক ঘটনাটি আমাকে এখানে এনে ফেলেছে সেটার সাথে আরো একজন জড়িত। তার নাম কেলি। আমরা দুজনই ছিলাম ট্যাক্সিডার্মিস্ট। ‘ট্যাক্সিডার্মিস্ট’ শব্দটা আপনার কাছে অচেনা হলে আমাকে একটু ব্যাখ্যা করতে হবে। তবে ট্যাক্সিডার্মি কী সেটা বোঝানোর জন্য আমি দীর্ঘ প্রবন্ধ ফাঁদবো না। শুধু বলি শব্দটা যেমন বিশ্রী, তেমনি অসম্পূর্ণ। সাধারণভাবে বলতে গেলে ট্যাক্সিডার্মিস্ট হলেন এমন একজন বিশেষজ্ঞ যিনি একাধারে প্রাণীবিদ, প্রকৃতিবিদ, রসায়নবিদ, ভাস্কর, চিত্রকর এবং কাঠমিস্ত্রী। যে লোক একসাথে এতগুলো কাজের সাথে জড়িয়ে থাকে তার মেজাজ একটু তিরিক্ষি হতেই পারে, তাই না?
মানুষ কেন বই পড়ে? জ্ঞানী হবার জন্য নাকি স্রেফ আনন্দের জন্য? অন্যদের কথা জানি না, আমি পড়ি আনন্দের জন্য। সেই ফাঁকে যদি দুয়েকটা জ্ঞানার্জনের পূণ্য অর্জিত হয় সেটা বাড়তি লাভ।
তো, এই পড়াশোনা ব্যাপারটা জ্ঞানার্জনের পাশপাশি মানুষের কল্পনাশক্তির প্রসারণ ঘটায় ব্যাপক ভাবে। আমি নিজে স্কুল বয়স থেকে আজ অবধি হাজার হাজার হাবিজাবি বই গিলে নিজের কল্পনাশক্তির বড়সড় এক পর্বত দাঁড় করিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম জীবনে আর নতুন কিছু পড়ার নাই। কিন্তু কয়েকদিন আগে শেষ করা একটি অভিনব পুস্তকের কাছে আমার সমস্ত কল্পনাশক্তির পর্বতের ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। আরেকটুর জন্য ধ্বসে পড়েনি।
মজার ব্যাপার হলো, আমি আগ থেকেই জানতাম আমি একটি কল্পকাহিনী পড়তে যাচ্ছি যার সাথে বাস্তবের কোন যোগসূত্র নেই। তবু এই হোঁচট খাবার কারণ কী?
জানতে হলে, পড়তে হবে।
[ভূমিকা: সব অনুবাদের ভূমিকা লাগে না। কিন্তু এই অনুবাদটির পেছনে একটি গল্প আছে। আমি কেন এই অনুবাদটি করতে গেলাম? বাংলাদেশে মার্কেজ খুব জনপ্রিয় একজন লেখক। সম্ভবত বাংলা ভাষায় সবচেয়ে বেশী অনুবাদ হয়েছে মার্কেজের গল্প উপন্যাস। বাংলা অনুবাদের অবস্থা তেমন সুবিধার না বলে আমি বহুকাল বাংলা অনুবাদ পড়ি না। সত্যি বলতে গেলে সেই কৈশোর থেকে সেবা প্রকাশনী ছাড়া অন্য কারো বাংলা অনুবাদে আমি স্বস্তি পাইনি। কিছুকাল আগে আমি মার্কেজের ছোটগল্প নিয়ে একটা কাজ করি। হাতের নাগালে থাকা বাংলা অনুবাদগুলো পড়ে ইংরেজি অনুবাদের সাথে মেলাতে বসি। যেহেতু স্পেনিশ ভাষা জানি না তাই ইংরেজিটাই আমার কাছে মূল গল্পের ভিত্তি। কাজ করতে গিয়ে 'গল্পপাঠ' ওয়েবজিনে বেশ কয়েক জনের অনুবাদ পড়ার পর আমি খুব হতাশ হয়ে পড়লাম। তারপর খোঁজ নিয়ে জানলাম বাংলা ভাষায় মার্কেজের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুবাদক অমিতাভ রায়। কলকাতার দে'জ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অনুদিত 'মার্কেজের গল্পসমগ্র'। বইটা সংগ্রহ করার পর ভাবলাম এবার হয়তো কিছুটা উন্নত অনুবাদের দেখা মেলবে।
চৌকির সাথে খাটের যে সম্পর্ক কিংবা কাঁথার সাথে লেপের যে সম্বন্ধ- আলামিনের সাথে ইদ্রিস মওলানার সম্পর্কটা ঠিক সেরকম না হলেও খাট চৌকির বিরোধের কারণে দুজনের সুসম্পর্কটা ভেস্তে গেল দুদিনের মাথাতেই। আলামিন যে মসজিদে আজান দেয়, ইদ্রিস মওলানা সেই মসজিদের ইমাম। ঘটনার সুত্রপাত গত বছরের প্রথম দিকে হলেও আমাদেরকে আরো ছমাস পেছনে যেতে হবে।
(সতর্কতা:এই গল্পে এমন কিছু রক্তাক্ত সত্য বিবরণ আছে যা দুর্বল হৃদয়ের জন্য সহনশীল নাও হতে পারে)
দেশকালসময় সবকিছুর উর্ধে চলে যাবার পরও ক্ষীরোদরঞ্জন নাথ কিছুতেই দৃশ্যটা ভুলতে পারছেন না। নিরবালা দেবী তাঁর স্ত্রী হলেও তার মাথার উপর নিজের কাটামুণ্ডুটি এভাবে হাজির হবে ব্যাপারটা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তখনো তার চক্ষু মুদে আসেনি। তিনি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছেন কয়েক সেকেণ্ডের সচেতন অচেতনের মাঝামাঝি ভাষাতীত এক মুহুর্ত ছিল সেটি। কাট্টলীর নাথ পাড়ার সবগুলো প্রাচীন বৃক্ষ, সমুদ্রের হাওয়া, চৈতালী ঝড় ক্ষীরোদরঞ্জনের সাথে একমত। তাঁর কোন অভিযোগ নেই কারো কাছে। তবে সেই ঘটনার পর থেকে তিনি শুধু ঘুরে ঘুরে সেই খুঁটিটার কাছে ফিরে আসেন। যে খুঁটির নীচে ঠেস দিয়ে বসে ছিল নিরবালা দেবী। আসলে ঠেস দেয়নি, একটা পাটের দড়িতে বাঁধা ছিল নিরবালা দেবীর শরীরটা।
কৈশোর থেকেই আমার মাথাধরার ব্যরাম আছে। ঠিক মাইগ্রেইন না, তবে ব্যথাটাকে মাইগ্রেইনের গ্রামে থাকা গরিব আত্মীয় বলা যেতে পারে। জানান দিয়ে কপালের একপাশ থেকে ভোঁতা ব্যথাটা শুরু হয়- আস্তে আস্তে সেইটা বাড়তে থাকে। আজকে সন্ধে থেকে ব্যথাটা আসি আসি করছে। এইরকম ছুটির শুরুর দিকেই মাথাব্যথায় দুটো দিন ডাউন হয়ে থাকা কোন কাজের কথা না।
১.
বৈশাখে জড়ো হওয়া বৃষ্টির মেঘগুলো এবার জ্যৈষ্ঠমাসে এসে উধাও। অথচ এই দিনে খুব বৃষ্টি ছিল সেদিন। ঝড়ো হাওয়ার সিগন্যাল ছিল। ভিজতে ভিজতে সেই রেস্তোঁরায় ঢুকে পড়েছিলাম জুবুথুবু হয়ে। জিইসির কাছাকাছি সেই রেস্তোঁরা ভেঙ্গে মার্কেট উঠে গেছে এখন। ওখানে আমরা গরমে আইস কফি খেয়েছি কতদিন! স্মৃতিগুলো গল্পের মধ্যেই বেঁচে থাকবে।
আজকে ৫ ফেব্রুয়ারি।
ছয় বছর আগে আজকের বিকেলে আমরা কয়েকজন হাটতে হাটতে শাহবাগের মোড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কোন মানুষের ডাকে না। কোন সাময়িক হুজুগের ঝোঁকে পড়ে না। নিজেদের রক্তের ডাক, সেই অমোঘ ডাক উপেক্ষা করা যায় না।
মণীন্দ্র গুপ্ত, 'অক্ষয় মালবেরি' নামে যে জীবনী গ্রন্থটি লিখেছিলেন তাকে সচরাচর লিখিত জীবনী গ্রন্থের নিয়মিত ছাঁচে ফেলার উপায় তিনি রাখেন নি। এই আকরগ্রন্থটি আক্ষরিকই আকর। ম্যাজিকের তুকতাকের মতো বিশেষ কিছু। এর গাম্ভীর্যে, এর অঙ্গসৌষ্ঠবে কোনো ভারিক্কি ভাব নেই রয়েছে পীতচন্দনের মতো শোভা, যেটি বড়োই মনোহর।
ঘ.
নিজের মধ্যে কাদায় আটকে পড়া ট্রায়াসিক যুগের স্টেগোসোরাসের মত একটা নির্লিপ্ততা এসে গেছে। প্রাগৈতিহাসিক আলকাতরায় খুব ধীরে ধীরে তলিয়ে যেতে যেতে চারপাশে শুধু নিজের বিলুপ্তি দেখে যাই।
গ.
...
Shadows are fallin' and I've been here all day
It's too hot to sleep and time is runnin' away
Feel like my soul has turned into steel
I've still got the scars that the sun didn't heal