ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ওডিন এর ছবি
লিখেছেন ওডিন (তারিখ: মঙ্গল, ০৫/০২/২০১৯ - ১২:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকে ৫ ফেব্রুয়ারি।

ছয় বছর আগে আজকের বিকেলে আমরা কয়েকজন হাটতে হাটতে শাহবাগের মোড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কোন মানুষের ডাকে না। কোন সাময়িক হুজুগের ঝোঁকে পড়ে না। নিজেদের রক্তের ডাক, সেই অমোঘ ডাক উপেক্ষা করা যায় না।

এরপরের সময়গুলোতে আমাদের সেই কয়জনের জীবনই কমবেশি বদলে গেছে। তবুও এত বছর পরে শাহবাগ আন্দোলনের সাফল্য ব্যর্থতা প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির ভয়ঙ্কর হিসেব মেলানোর কোন প্রয়োজন দেখি না। এই দেশে একটা সময় মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান দেয়া ট্যাবু ছিলো। শত্রুকে শত্রু বলা মানা ছিলো। বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করে লাভ-ক্ষতি বিচার করতে চার দশকেরও বেশি পরে রাজাকারদের ফাঁসি চাওয়াটাইতো বোকামি। তারপরও জনা কুড়ি থেকে শুরু হয়ে তিন লাখ লোক তিন হপ্তা ধরে একটা রাস্তার মোড়ে দিনরাত বসে ছিলো রাজাকারদের ফাঁসির দাবি নিয়ে। মানুষ জেগে উঠেছিলো, মানুষ জেগে থেকেছে, মানুষ জেগে থাকবে। স্বাধীনতাবিরোধিদের কাছে ঠিক এই বার্তাটা পৌছে দেয়ার দরকার ছিলো।

পরের দিনগুলোর অনেক অপ্রাপ্তি, হারানো আর স্বপ্নভঙের মাঝেও এইটাই ওদের চোখ তুলে তাকানোর আর গলা উচু করে কথা বলার সাহসটা কেড়ে নিয়েছে। এই একটা কারণেই শাহবাগ আন্দোলনকে মনে রাখতে হবে।

দেশের মানুষ হয়তো আস্তে আস্তে ভুলে যাবে। History becomes legend. Legend becomes myth. And myth will pass into oblivion.

কিন্ত মনে করিয়ে দেয়ার জন্য কিছু বোকা মানুষ সবসময়ই জেগে থাকবে।

জয় বাংলা।


মন্তব্য

কনফুসিয়াস এর ছবি

ঠিক কথা। অনেক রকম বিতর্ক আর অপ্রাপ্তি, তবু শুরুর মুহুর্তটাকে আমাদের মনে রাখতে হবে। ওই সময়ের অনুভূতিটাকে রিনিউ করে নিতে হবে নিজের তাগিদেই।

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। শাহ্‌বাগে বেশিরভাগ মানুষ গেছে নিজের তাগিদে, নিজের উদ্যোগে, নিজের খরচে। বাকিদের কেউ গেছে এখান থেকে নানা সুবিধা তোলার মতলবে, আর কেউ গেছে সমাবেশটাকে ভণ্ডুল করার জন্য। যারা নিজ উদ্যোগে গেছে তাদের লাভ হচ্ছে সরকার কর্তৃক আইনের ত্রুটি সংশোধন, কতিপয় যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন ও রায় কার্যকর। যারা নানা মতলবে গেছে তারা কী পেয়েছে তার কিছু কিছু ঐ আমলে মিডিয়াতে এসেছে। আর যারা ভণ্ডুল করতে চেয়েছিল তারা সাফল্যের সাথে 'শাহবাগ আন্দোলন বা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন = নাস্তিকতা + চাঁদাবাজি + ড্রাগস + অবাধ যৌনতা' ট্যাগিংটা করতে পেরেছে।

২। শাহবাগ আন্দোলনের আগের বাংলাদেশ আর পরের বাংলাদেশ এক নয়। ভিক্ষা পাই বা না পাই, কুত্তা চিনেছি।

৩। শাহবাগ আন্দোলনের ফলে স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষ কৌশলগত পশ্চাদপসারণ করেছে মাত্র। এখানে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কিছু নেই।

৪। সব আমলে কিছু না কিছু বোকা মানুষ থাকে। তারা বার বার জন্মায়। তারা ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৯০ ও ২০১৩-তে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রয়োজনে তারা আবারও জন্মাবে, আবারও সোজা হয়ে দাঁড়াবে।

জয়, বাংলার জয়!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

সব আমলে কিছু না কিছু বোকা মানুষ থাকে। তারা বার বার জন্মায়। তারা ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৯০ ও ২০১৩-তে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রয়োজনে তারা আবারও জন্মাবে, আবারও সোজা হয়ে দাঁড়াবে।

একদম! অনেক অপ্রাপ্তির মধ্যে জীবনে অন্তত দুবার বোকা মানুষদের সারিতে থাকতে পেরেছি বলে তৃপ্তবোধ করতে পারি।

শাহবাগের প্রথম দুই সপ্তাহ বাংলাদেশের ইতিহাসে অমোচনীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে। এই সময়টা আমাদের ছিল। কাউকে ডাকতে হয়নি। পয়সা দিতে হয়নি। উত্থানের ওই সময়রেখাগুলোকে জাতি বুকে ধারণ করে রাখবে চিরকাল।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

৪। সব আমলে কিছু না কিছু বোকা মানুষ থাকে। তারা বার বার জন্মায়। তারা ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৯০ ও ২০১৩-তে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রয়োজনে তারা আবারও জন্মাবে, আবারও সোজা হয়ে দাঁড়াবে।

আমার মাঝে মাঝে মনেহয়, শাহবাগ দিয়ে আমরা আমাদের সময়ের দায় সেরে ফেললাম। কখনো এই ভাবনা অপরাধবোধ কমিয়ে দেয়, কখনো বাড়িয়ে দেয়!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটু খেয়াল করলে বোঝা যাবে যে, ঐ কয়েক সপ্তাহের আন্দোলনে সময়ের দায় বিন্দুমাত্র পরিশোধিত হয়নি। আগে থেকে শুরু হলেও ২০১৩ থেকে বাংলাদেশবিরোধী, সাম্প্রদায়িক, উগ্রবাদী শক্তিরা আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে; একের পর এক মরণ ছোবল হেনেছে; বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে তাদের অবস্থান একপ্রকার গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে। হালুয়া-রুটিখোররা শাহ্‌বাগের গণজাগরণকে ছিনতাই করে নিজেদের আখের গুছিয়েছে; ফলে প্রতিপক্ষ হালুয়া-রুটিখোরদের রেফারেন্স টেনে পুরো গণজাগরণটাকে নাকচ করে দেবার অবস্থায় নিয়ে গেছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অবনীল এর ছবি

দেশের মানুষ হয়তো আস্তে আস্তে ভুলে যাবে। History becomes legend. Legend becomes myth. And myth will pass into oblivion.

কিন্ত মনে করিয়ে দেয়ার জন্য কিছু বোকা মানুষ সবসময়ই জেগে থাকবে।

উত্তম জাঝা!

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

আয়নামতি এর ছবি

শাহবাগ আন্দোলনকে মনে রাখতে হবে।

সেটা

মনে করিয়ে দেয়ার জন্য কিছু বোকা মানুষ সবসময়ই জেগে থাকবে।

চলুক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

কিন্ত মনে করিয়ে দেয়ার জন্য কিছু বোকা মানুষ সবসময়ই জেগে থাকবে।

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মন মাঝি এর ছবি

এর মধ্যেই যুগ অনেকখানি বদলে গেছে। কিছু বোকা মানুষ এখন আর কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। আমার ব্যক্তিগত ধারণা আমরা এখন ব্যক্তিবিশেষের ব্যক্তিগত কারিশমার উপর নির্ভর করে চলছি। কিন্তু ব্যক্তি তো আর চিরন্তণ কিছু নয়! আমার মনে হয় আমরা ভবিষ্যতে ইরানের শাহ বা মিশরের মোবারকের পতন পরবর্তী অবস্থার মতো কোনো একটা অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ছোট্ট ও চরম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বলে অবস্থাটা হবে ভয়াবহ!

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার পর্যবেক্ষণ বলে পরিবর্তনের কায়দা, সময়কাল, ফলাফল (ক) লাতিন আমেরিকা (খ) পশ্চিম আফ্রিকা (গ) পূর্ব আফ্রিকা (ঘ) আরব দুনিয়া (ঙ) মধ্য এশিয়া (চ) ভারতবর্ষ (ছ) আসিয়ান - প্রত্যেকটিতে ভিন্ন ভিন্ন প্রকার। এক অঞ্চলের পদ্ধতি অন্য অঞ্চলে চর্চ্চা করতে দেয়া হয় না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

আমি আক্ষরিক অর্থে বুঝাইনি এবং হুবহু তুলনাও করিনি, কিন্তু তুলনা দিয়ে বুঝাতে গিয়ে এর চেয়ে ভাল উদাহরণও পাইনি। ভেবেছিলাম পার্থক্যের খোসা বাদ দিয়ে আমি সাদৃশ্যের শাঁসটা কোথায় দেখছি বা বলা ভাল ঠিক কি বুঝাতে চাইছি সেটা অন্যরা বুঝতে পারবে। মোদ্দা কথায় সব খুল্লাম-খুল্লা না বলে ইঙ্গিতে কাজ সারতে চেয়েছিলাম। আনফর্চুনেটলি আমার সে আশা পূরণ হবার নয় মনে হচ্ছে। যাজ্ঞে! হো হো হো

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পার্থক্যের খোসা বাদ দিয়ে সাদৃশ্যের শাঁসটি তো অস্পষ্ট নয় - সেটা সবাই বুঝবেন। আমার দ্বিমতটা apocalypse-এর পদ্ধতি নিয়ে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

আমার কাছে আপাতত পদ্ধতি গুরুত্বহীণ, কারন পদ্ধতির উপর আমার বা আমার চেনাজানা কারও হাত নেই। তো, এই পদ্ধতিতে পার্থক্য থাকতে পারে বৈকি : কিন্তু ফলাফলটা এক জায়গায় এসে একই থাকে শেষ পর্যন্ত। apocalypse apocalypse-ই থাকে! রাজায়-রাজায় অসুর-দেবতার দ্বন্দ্বে মর্ত্যলোকে apocalypse নেমে আসে আর উলুখাগড়া আর বোকা জীবানুরা সুমারে-বেসুমারে ভস্ম হয়ে যায়। তছনছ হয়ে যায় তাদের জীবন। চারিদিকে তাই তো দেখছি - বিভিন্ন ধরণের মহাশক্তিগুলি অন্ধ নিয়তির মতো লড়ছে নিজেদের মধ্যে আর চিপায় পড়ে মানুষ মরছে সম্পূর্ণ নিরুপায়ভাবে লাখে-কোটিতে -- ফিউমিগেট করা জীবানুর মতই!!! এটাই তাদের নিয়তি!

****************************************

তিথীডোর এর ছবি

জনা কুড়ি থেকে শুরু হয়ে তিন লাখ লোক তিন হপ্তা ধরে একটা রাস্তার মোড়ে দিনরাত বসে ছিলো রাজাকারদের ফাঁসির দাবি নিয়ে। মানুষ জেগে উঠেছিলো, মানুষ জেগে থেকেছে, মানুষ জেগে থাকবে। স্বাধীনতাবিরোধিদের কাছে ঠিক এই বার্তাটা পৌছে দেয়ার দরকার ছিলো।

হ।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।