আধঘন্টা সকাল থেকে কাটা

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: সোম, ২৩/০৬/২০০৮ - ৮:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৯.
প্রতিদিন আয়নার সামনে একই ছবি কিন্তু মেজোকাকার চোখে সবই বদলানো মনে হয়। মাকে দেখে চিৎকার জুড়ে দেয় তোমার সাস্থ্যের একি হাল, বাবাকে দেখে কি হম্বিতম্বি এই বয়সে এই ভুড়ি গজিয়েছো কোলষ্টেরলে ধরলো বলে। মেজোকাকা এবার আমার দিকে নজর দেয়। এই বুঝি ও .. মার দিকে তাকায়- সারাদিন রোদে টো টো গায়ের রঙতো পুড়ে ঝামা .. আমি লজ্জা পাই। মেজোকাকা তখন পড়েছে ঘরবাড়ির দৈন্যদশা নিয়ে। চালের টিনে জং ধরেছে আর চৌকাঠটা ঘুণে কেমন জীর্ণদশা। বাবা মিটিমিটি হাসেন। শহরে গিয়ে তোর চোখ পাল্টেছে বলতে বলতে পুরোনো খবরের কাগজের আড়াল নামিয়ে মেজকাকাকে দেখেন বাবা। বাবার উঠোন মানেই খবরের কাগজ আর খবরের কাগজ। খবরের কাগজে কি সব ছাইপাশ চারধার গরম হয়ে ওঠে। মেজকাকার খবরে লোকজন আসতে শুরু করে। মার মুখ উনুনের আচে কেমন লালচে দেখায়। আমি মার পাশে ঘুরঘুর করি গরম রসের গন্ধে মুখ ভিজে আসে।
উঠোনে তখন কথার খই ফুটছে। সত্যিই ছাত্রদের উপর গুলি করেছে.. মেজোকাকার উত্তেজিত গলা শোনা যায় এবার ওরা পারবে না। কারা পারবে না .. কি পারবে না এসব কিছুই মাথায় ঢুকে না, হাতে একটা গরম ভাপা পিঠে নিয়ে আমি ঘুরঘুর করি। শূন্য কামরাঙা গাছটায় একটা অজানা পাখি এসে বসেছে। নীল রঙের একটা ঝুটি পাখিটার মাথার উপর। হুশ করে উঠতেই পাখিটা উড়ে গিয়ে হারিয়ে যায়। আমি খানিকন খুজে তাকে ভুলে যাই। ছাদ ঝুলতে থাকে চোখের উপর। আমিও আর মনে করতে পারি না ঠিক শূন্য সাদার দিকে আমি কিসের জন্য চেয়ে আছি।

১০.
যতদুর ততদুর সোনারঙ ঝলকাচ্ছে.. খোকাভাই তার ভেতর দিয়ে দৌড়–চ্ছে।
খোকাভাই ছিল ডাকাবুকো টাইপের। উজ্জ্বল চোখজোড়া দিয়ে অনেকদুরে তাকিয়ে থাকে। বিনুফুপি বলে দেখিস এই ছেলে ঠিক একদিন পালিয়ে যাবে। সেই থেকে খোকাভাইকে দেখে আমার কেমন জানি লাগে। আমি খোকাভাই এর পেছন পেছন ঘুর ঘুর করি। খোকাভাই আমাকে দেখেন না। সোনালী ধানের থৈ থৈ গন্ধের ভেতর আকুল লাল রঙা ঘুড়িতে সুতো বাধে। আমি চুপচাপ বসে দেখি খোকাভাইকে। খোকাভাই একদিন পালিয়ে যাবে। পাকা ধানের গন্ধ খোকাভাই এর গন্ধ মনে হয়। ততনে আকাশে ঘুড়িটা একটা লাল ফোটা পরিয়ে দিয়েছে। আমি হারিয়ে যাওয়া আমার লাল বেলুনটা দেখি।
বাবা একবার সূতোয় বাধা একজোড়া বেলুন কিনে এনেছিল - টুকটুকে লাল একটার রঙ , আর একটা সাদা। ওদের খালি ফন্দি কখন উড়ে যাবে। বিনুফুপি আর আমি লাল বেলুনটা হাতে নিয়ে দৌড়ে বেড়াই ঘরময় -ঘর পার হয়ে সামনের উঠোন ,দুজনে সেখানে দাড়িয়ে আকাশের নিচে বেলুন দুটোকে দেখি। আকাশী আকাশের নিচে দুটো বেলুন বাতাসে কেমন দোল খায় - খোকাভাইটা কোত্থেকে এসে বলে
- জানিস বেলুনটা ছেড়ে দিলে চাদের দেশে চলে যাবে।
- এহ বাজে কথা বিনুফুপি ভেঙচি মারে।
- সত্যি ..
বলেই কোথায় দৌড়ে চলে গেল ও । আমি লাল টুকটুকে বেলুনটার দিকে তাকাই- সত্যিই বেলুন টা চাদের দেশে যাবে- ভাবতে ভাবতেই বিনুফুপি সূতোটা ছেড়ে দেয়। বেলুনটা উড়তে নীল আকাশে উড়ে চলে যায়। বিনুফুপি টেলিফোন করতেই আমি বিনুফুপিকে জিজ্ঞেস করি-
- ঐ বেলুনটা কি সত্যি সত্যি চাদের দেশে চলে গেয়েছিল?
বিনুফুপি ভাবনার অতলে পড়ে যেন
- কি বলছিস এসব পাগলের মত - কিসের বেলুন ..?
আমি বোকামী ঝরাই। তাইতো কিসের বেলুন - কিসের চাদ। ঠনঠনে বাস্তবতা কুয়াশা মেলে। বিনুফুপি, সোনারঙ, লাল বেলুন,খোকাভাই, চাদ সব সেই কুয়াশায় ডুবে যায়। ক্র্যাাাাাাাাাাাাাাাা.. কলিংবেল এর আওয়াজটা এমন কর্কশ.. কানের পর্দাটা কেপে ওঠে।
মনে পড়ে ৯ দিন বাদে সোমা এলো ..


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভালো লাগলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

চলুক...জয়দা, চলুক।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি
রানা মেহের এর ছবি

সুন্দর
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।