স্বাধীন মানুষ

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: শনি, ০৯/১২/২০১৭ - ১২:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষ সবসময় অবাক করে। যদি মানুষের গল্প পড়া যায়, পৃথিবীটা হয়ে ওঠে শেক্সপিয়রের মঞ্চ। এই মঞ্চটা ছিল থানায়। বিকেলবেলায় সেখানে এক হাসিখুশি চেহারার লোক হাজির হলো।
বললো, সে একটা খুন করবে। এখনও না করা খুনটার জন্য অগ্রীম তাকে গ্রেফতার করা হোক। তাকে যদি গ্রেফতার না করা হয়, তাহলে খুনটা হয়ে যাবে।
এমন কথা কেউ কখনও শোনে নি।
থানার অফিসার বুঝতে পারলেন না তিনি কী করবেন।
লোকটার এক কথা। যদি খুনটা এড়াতে হয় তাহলে তাকে খুনের দায়ে জেলে পাঠাতে হবে।
নিরূপায় পুলিশ অফিসার অবশেষে তাকে গ্রেফতার করলেন।
গভীর রাতে তাকে ডেকে এনে সামনে বসালেন।
চা আর সিগারেট খেতে খেতে তার চোখের দিকে তাকালেন।
বললেন, ‘সত্যি করে বলুনতো জেলে যেতে চান কেন?’
লোকটা হাসলো।
স্বাধীনতা।
অফিসার অবাক হলেন। স্বাধীনতা!!!
লোকটা হাসে। সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে তার অফিসারের দিকে তাকায়।
‘আপনি কি স্বাধীন?’
না। অফিসার মাথা নাড়েন।
‘কী সে বন্দি আপনি?’ লোকটা শুধায়।
‘দায়িত্ব। সংসার, চাকরি, সম্পর্ক ... কল্পনার মধ্যেও হাজির হয়ে যায়।’ অফিসার নিজের ভেতরে তাকিয়ে বলে।
‘ওগুলো না থাকলে আপনি কি স্বাধীন হতে পারবেন?’ লোকটা গলা খুব শান্ত। শীতল পাটির মতো।
অফিসার এক ঝলক তাকে দেখেন।
লোকটা বলে যায়, আপনার যদি কারও দায়িত্ব নিতে না হয়। এমন কী নিজেরও- তাহলে কি আপনি স্বাধীন বলে ভাববেন?’
অফিসার লোকটার দিকে তাকান। হ্যা। তখন আমি স্বাধীন।
লোকটা হাসে। তাহলে আপনিও আমার সাথে চলুন।
কোথায়?
জেলে।
কেন?
জেলই পৃথিবীর একমাত্র জায়গা যেখানে আপনার কোন দায়িত্ব নেই। আপনার কাছে কোন প্রত্যাশার দাবি নেই। আপনি একা। যার দায়িত্বও আপনার না। পুরোটা সময় কল্পনার। স্বাধীনতার।
স্বাধীনতা একটা অলীক কল্পনা। যা শুধু জেলখানাতেই পাওয়া যায়। সেজন্যই ঠিক করেছি এই অলীক স্বাধীনতাটা একটু জেলে গিয়ে দেখবো।
অফিসার লোকটাকে আরেকবার তাকিয়ে দেখলেন।
লোকটা কি পাগল?
না কি, ...


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম স্বাধীনতা। জগত সংসারের দায়িত্ব না থাকলেও , এমনকি জেল খানাতেও কি স্বাধীনতা আছে?
এ্যানি মাসুদ

কর্ণজয় এর ছবি

দেহ আর মন
কারাগার আর স্বাধীনতার রসায়ন

মেঘলা মানুষ এর ছবি

চিন্তায় পড়ে গেলাম চিন্তিত

কর্ণজয় এর ছবি

মানুষ যখন চিন্তা করে
তখন তাকে সুন্দর দেখায়-

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পটা ভালো লাগে নি কর্ণজয়। তবে আপনি কিন্তু লেখেন ভালো।

---মোখলেস হোসেন

কর্ণজয় এর ছবি

হয়তো কোন একদিন
অন্য কোন ভাল লাগায় দেখা হবে
আপনার লেখা আমি পড়েছি
সুন্দর।
জানাতে জানাতে গিয়েও
শেষ পর্যন্ত আর জানানো হয় নি-

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দায়িত্ব আর প্রত্যাশার দাবির অনুপস্থিতি মানে স্বাধীনতা নয়। হাতেপায়ে শৃঙ্খলবাঁধা মানুষেরও কল্পনা আবদ্ধ নয়। তাই কল্পনার সাথে স্বাধীনতার সরাসরি সম্পর্ক নেই। দেখতে হবে ব্যক্তির কল্পনাকে ব্যক্ত করার বা মূর্ত করার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা। স্বাধীনতা অলীক কল্পনা নয়। তবে এর সীমা ব্যক্তি বিশেষে কিছু কমবেশি হতে পারে। কারাগার মোটামুটি নিষ্কর্ম জীবন দিতে পারে, স্বাধীনতা নয়।

গল্পটা হতে হতে গিয়েও শেষে আর হলো না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কর্ণজয় এর ছবি

এই বিষয়গুলো একেক মনোদৈহিক বাস্তবতায় একেক রূপ ধারণ করে।
জীবনের একেক কোণ থেকে একেক রকম বোধ হয়,
জেল, পুলিশ, স্বাধীনতা, কল্পনা, দায়িত্ব এগুলোরও নানা অস্তিত্বরূপ আছে
ব্যক্তি জীবনে, সমাজ জীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে, মানবিক জীবনে।
আপনার লেখার ভক্ত আমি। আপনার ভাষা, চিন্তা আর বলার ধরণের সাথে পরিচিত আমি। যা বলেছেন, তা পুরোপুরি না হলেও অনেকটাই বুঝতে পেরেছি। আর তা না মানবার কোন কারণ নেই। তবু আত্ম স্বীকারোক্তি জানালাম।
হ্যা, গল্পটা হয়ে উঠলো না-
ছেড়ে দিতে চেয়েছি লেখার সময়
মনে হলো, থাক না
যে পড়বে সেই বুঝে নিক-
এটা কোন জেলখানা
কোন কল্পনা
কোন পুলিশ
কোন স্বাধীনতা
আমি না হয় নাই বা বললাম-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।