তত্বাবধায়ক সরকারের আমলনামা:

আড্ডাবাজ এর ছবি
লিখেছেন আড্ডাবাজ (তারিখ: সোম, ০৭/০১/২০০৮ - ৯:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তত্বাবাধায়ক সরকারের বয়স এক বছর হবে আগামী সপ্তাহে। গত বছরের প্রেক্ষাপট নিয়ে চ্যানেল আইয়ের ভিডিওটা নীচে তুলে দেয়া হলো। প্রায় দু'সপ্তাহ আগে সরকার তাদের সাফল্যের হিসেব কষতে মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দেয়। একটি অরাজনৈতিক সামরিক সমর্থনপুস্ট তত্বাবধায়ক সরকার হঠাত করে তাদের সাফল্যের হিসেব মেলাতে দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা আঁতকে উঠেছেন। সরকার এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে যাচ্ছে এই কথা সত্য। কিন্তু তাই বলে তারা তাদের সাফল্য নিয়ে শঙ্কিত কেন? তারা নিজেরা তো আর নির্বাচনী প্রার্থী হতে যাচ্ছেন না।

একটি অরাজনৈতিক তত্বাবধায়ক সরকার যাদের মূল ম্যান্ডেট হচ্ছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর তাদের কাজে স্বচ্ছতা ও স্পস্টতা নিয়ে প্রশ্নের কোন অবকাশ থাকতে পারে না। বুলেট দিয়ে ব্যালট নিয়ন্ত্রণের উদাহরণ কখনও শুভ হয় না। সরকার জরুরী আইনের ক্ষমতার আওতায় সংস্কার ঘটাতে চাচ্ছে। সরকারের নেপথ্যে রয়েছে মহাক্ষমতাশালী চক্র যাদের উদ্ধত আচরণ গত একবছরে স্পস্ট হয়ে উঠেছে। বাজেটে আর্থিক সংস্থান ছাড়াই স্ব-প্রমোশনের নির্লজ্জ উদাহরণ সৃস্টি করেছে ক্ষমতাবান জেনারেলরা। জেনারেলের আত্মীয় বিধায় দূর্নীতিবাজ আপনজনরা বিনাবাধায় দেশত্যাগ করেছে।

মাইনাস থিওরীর প্রবর্তন করে বর্তমান সরকার নতুন ধারার গণতন্ত্রের প্রবর্তন করতে চাচ্ছে। অথচ এটি সরকারের ম্যান্ডেট নয়। সরকার সুশীল সমাজ ক্রয়ের চমকপ্রদ উদাহরণ সৃস্টি করেছে। সামরিক পেশী শক্তির মুখপাত্র হিসেবে সংবাদ পত্রিকা আর সাংবাদিক কেনাবেচা অব্যাহত রয়েছে। রাজনৈতিক নিয়োগ বাণিজ্য জমিয়ে মাথা কেনা চলছে। হায় হায় কোম্পানী, জাগো, নাশ, কল্যাণ পার্টি, নিরাপত্তা কাউন্সিল আর কনফারেন্স সর্বস্ব উদ্যোগ আয়োজন দিয়ে সরকার যথেস্ট হাস্যরসের জোগান দিয়ে জনগণকে বিনোদিত করার আপ্রাণ চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এগুলো না করেও তো সরকার নন্দিত হতে পারত।

একজন রাজনৈতিক নেত্রীকে বহনকারী বিমানকে দেশের সীমানায় প্রবেশে বাধা দানের মতো হাস্যকর নাটকীয় ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়ে সরকার দুনিয়াব্যাপী আলোড়ন সৃস্টি করেছে। জরুরী আইনের মধ্যেও সামরিক সরকার রাজনীতিতে কিংস পার্টির তরী ভাসানোর বিফল চেস্টা অব্যাহত রেখেছে। একজন প্রধান নেত্রী কিংস পার্টির চাইনীজের বিল প্রদানে সামরিক গোয়েন্দাদের হাত থাকার অপ্রিয় সত্য ফাঁস করে দেয়ার পর পরই যথেস্ট হেনস্থার শিকার হয়েই জেলে প্রবেশ করেছেন। তাকে আবার এখন বিদেশে পাঠাবার জন্য তোড়জোড়ও চলছে। অথচ এগুলোর কোন প্রয়োজনই ছিল না। জনগণ রাজনৈতিক স্বৈরাচার প্রত্যাখ্যান করেছে। মনে আছে, গত বছর পুলিশী ট্রাকের নীচে শহীদ হয়েছেন একজন গনতন্ত্রের সৈনিক। অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মী নির্যাতন ও প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। হয়নি কোন বিচার। গণতন্ত্রের জন্য আপোষহীন সংগ্রামের কারণেই বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকারের আগমন। তাই, আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়বার কোন অশুভ চেস্টা এখনও সফল হবে না।

দু:খজনক হলেও সত্য যে, মৌলবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা এখনও বন্ধ হয়নি। দু'জন স্বনামধন্য উপদেস্টা তাদের রাস্ট্রীয় শপথ ভঙ্গ করেই জামাতীদের উদ্ধারে সময়ে-অসময়ে এগিয়ে এসেছেন। মৌলবাদী জামাতী আর হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা জরুরী আইন ভেঙ্গে মিটিং মিছিল করলেও জেলে যায়নি। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সামরিক ছাউনি স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অপরাধে অধ্যাপকরা আর ছাত্ররা এখনও জেলের ভেতরে ধুঁকছেন। দূর্নীতির কালো হাত যে এখনকার অনেক ক্ষমতাবানদের গ্রাস করেছে তা একসময় দিনের আলোর মতো স্পস্ট হয়ে উঠবে। ট্রাস্ট ব্যাংক নিয়ে গুঞ্জরণ বন্ধে নতুন ইস্যু আমদানির চেস্টা অনেকের চোখ এড়িয়ে যায়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আন্দোলন ইঞ্জিনীয়ারিং করলেও এ ব্যাপারে রাস্ট্রীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সরকার রহস্যজনকভাবেই বেশ নির্বিকার রয়েছে। গত একবছরের ঘটনাগুলোর দিনপঞ্জী ছকে ফেলে দেখলে সহজেই বুঝা যাবে সরকার অনেক ক্ষেত্রেই তাদের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে দু:খজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

বর্তমান তত্বাবধায়ক তাদের ম্যান্ডেটের বাইরে অনেক কিছুই করতে চেয়েছে। তাদের সদিচ্ছার প্রকাশ ছিল অফুরন্ত। তাদের অনেক কাজের মধ্যেই স্বৈরাচারী ও স্বেচ্ছাচারী মনন কাজ করেছে। চমক দেবার চেস্টার কোন কমতি ছিল না। হঠাত করে বস্তি উচ্ছেদ করার মতো নাটকীয় ঘটনা দিয়ে নজর কাড়তে চেয়েছে। প্রত্নতত্ত সম্পর্কিত সাংবিধানিক ধারা অমান্য করেই ফ্রান্সে দেশের দুস্প্রাপ্য প্রত্নতত্ত পাঠাতে গিয়ে সরকার বিনস্ট করেছে দেশের দুর্লভ সম্পদ। এই ডামাডোলে মানসিক চাপে প্যারিসে নিযুক্ত ৪৮ বছর বয়সী বাংলাদেশী রাস্ট্রদূতও গত সপ্তাহে ইহধাম ত্যাগ করেছেন। এগুলো অত্যন্ত দু:খজনক ঘটনা। গত এক বছরের আমলনামা যে বর্তমান সরকারের জন্য খুব একটা মুখরোচক হবে না, তা কি সরকার জানে? এ নিয়ে সকলের কী-বোর্ড সচল হোক। সরকার জরুরী আইনে যা ইচ্ছে করে যেতে পারে, কিন্তু তিরিশ কোটি চোখকে ফাঁকি দেবে কি করে?

নীচে দেখুন ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপট নিয়ে চ্যানেল আইয়ের একটি প্রতিবেদন:


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।