:: বুকের উপর সাপের রাস্তা... ::

নজমুল আলবাব এর ছবি
লিখেছেন নজমুল আলবাব (তারিখ: বুধ, ০৪/০৭/২০০৭ - ৩:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ক.

ইশপের গল্প টাইপের একটা গল্প বারবার আমার মনে পড়ে। একবার এক লোকের বুকের উপর দিয়ে সাপ চলে গেল। লোকটার সেকি কান্না। কেউ একজন বলে, আরে ভাই কাদেন কেন? সাপটাতো কামড়ায়নি। সেই লোক বিষন্ন হয়ে বলে, আরে ভাই কামড়ানোটাইতো ভালো ছিল, এতো এখন রাস্তা বানিয়ে ফেল্লরে ভাই! মানুষের বুকের উপর দিয়ে সাপের রাস্তা... লোকটা আবার বিলাপ শুরু করে।


মঙ্গলবার রাতের ঘটনা। রাত দেড়টা পৌনে দুইটা হবে। বাড়ির সামনে যেতেই বুঝে গেছে তুলি। বাড়িটা ছোট একটা টিলার উপর। সেটা উঠতে উঠতে ও বেরিয়ে এল। আমার বেগে চাবি থাকে। সেটা দিয়েই গেট খুলি।

বাবাই ঘুমে। ওর ফিডার রেডি করতে করতে ভাত খাবো কিনা জিজ্ঞেস করে তুলি। বলি, খাবনা। কয়েকটা কাজ জমে গেছে। দ্রুত কম্পিউটার খুলে বসি। লো-ভলিউমে গান ছেড়ে ঠুকে ঠুকে ইলাসট্রেটর সামলাই। টুকটাক কথা হয় দু'জনে। গরম পড়েছে প্রচন্ড। জানালা খুলা। ফিডারটা পাশে রেখে মা ছেলে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। মিনিট পনের হবে। চিৎকার। চোখ মুখ কি রকম যন্ত্রনামাখা, কোলে বাবাইকে নিয়ে কাপতে থাকে। কি হয়েছে, কি করব কিছুই বুঝিনা... কিংকর্তব্য শব্দটা খুব কাছে এসে টোকা দেয় আমায়। ততক্ষনে বাবাই ফর্মে চলে এসেছে। সে ভেবেছে আমি তার মাকে গভির কোন যন্ত্রনা দিয়েছি, সে এর প্রতিবাদে আমাকে যাহ্ যাহ্ বলে বিদায় করার চেস্টা শুরু করল। তিন মিনিট পেরিয়ে গেছে প্রায়। তুলি কোনমতে বলে কার গলা থেকে চেনটা নিয়ে গেছে! কি বলে এইসব!? বিস্ময় চেপে ধরে। আব্বা আম্মা চলে এসেছেন। চোরের পিছে দৌড়ানোর সময় আর নেই। প্রায় পাচ মিনিট সময় তাকে দেয়া হয়ে গেছে।
রাতের বাকিটা সময় আমরা আর ঘুমাতে পারিনা। বাড়ির সবাই সজাগ।


ইশপের গল্প টাইপের একটা গল্প বারবার আমার মনে পড়ে। একবার এক লোকের বুকের উপর দিয়ে সাপ চলে গেল। লোকটার সেকি কান্না। কেউ একজন বলে, আরে ভাই কাদেন কেন? সাপটাতো কামড়ায়নি। সেই লোক বিষন্ন হয়ে বলে, আরে ভাই কামড়ানোটাইতো ভালো ছিল, এতো এখন রাস্তা বানিয়ে ফেল্লরে ভাই! মানুষের বুকের উপর দিয়ে সাপের রাস্তা... লোকটা আবার বিলাপ শুরু করে।

--------------------------------------------------------------------
আমাদের কিশোর বেলায় ৯০-এ কারা কারা যেন মরে গিয়েছিল গনতন্ত্রের জন্য! কেমন আছে তারা এখন?


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

"আকাশে বসত মরা ঈশ্বর
নালিশ জানাবে
ওরা কাকে বলো?"

??? এর ছবি

ক এর পরে খ, তারপরে আবার ক কেন?

নজমুল আলবাব এর ছবি

সুমন ভাই, ঘুরে ফিরে সেই পুরনো গল্পতো তাই।

ঠিক তাই শিমুল।

দৃশা এর ছবি

ভাল আছে...যারা এখানে আছে তারাই জানি কেমন কেমন আছে...মাঝে মাঝে ঠাওর করতে পারি না।

দৃশা

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

খ-কে মাঝে রেখে ক-এর গল্পটা দুইবার আসে।
লেখক এখানে পাঠকদের নিয়ে হালকা খেলা করেন। তিনি দেখতে চান খ গল্পটা পড়ার পর পাঠক প্রথমপাঠে ক গল্পের যে অর্থ মনে তৈরি করেছিল তা শেষ পাঠেও অবিকৃত থাকে কিনা। নাকি নতুন অর্থ তৈরি হয় পাঠকের মনে।

সত্যি সত্যি হার চুরি হয়ে যাওয়ার চেয়ে হার চুরি হবে এই আশংকাই মানুষকে পীড়া দেয় বেশি। এর চেয়ে সাপে কামড়ানো ভালো ছিল। আপাত: সহজ এই গল্পের মেদ-মাংসহীন শরীরে লেখক অনেক শূন্যস্থান রেখে দিয়েছেন, পাঠকের জন্য। গল্প পড়ার পর পাঠক সেই শূন্যস্থানগুলো নিজের মত করে ভর্তি করে। লেখক এখানে পাঠককে তার নিজের কল্পনাশক্তি ব্যবহারের বিরাট সুযোগ করে দিয়েছেন। অথবা লেখক চেয়েছেন পাঠক নিজেই গল্পে অস্থি-মজ্জা সরবরাহ করুক, নিজ দায়িত্বে।

গল্পে আমার প্রিয় অংশ হচ্ছে যেখানে গল্পকথক ইলাস্ট্রেটর নিয়ে বসেন, জোড়া-তালি কাটা-মোছা আঁকা-আঁকির সফটওয়্যার। আর ঘুম ভাঙা শিশুটি প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত পীর-আউলিয়ার মত তাকেই বলে “যাহ, যাহ"। এর অনেক অর্থ বা ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়। গল্পে সচেতনভাবে লেখক যে কারণে অংশটি রেখেছেন তার চেয়ে অনেক ভিন্ন ভিন্ন অর্থ তৈরি করে এই অধি-বাস্তব গল্পাংশটি। তবে সব ব্যাখ্যাতেই লেখকের সৃষ্টিশীলতাই বড় হয়ে ধরা পড়ে।

লেখকের কাছ থেকে এরকম বা অন্যরকম আরো লেখা পাবো বলে আশা করি।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নজমুল আলবাব এর ছবি

শোহেইল ভাই, এমন হৃদয়ছোয়া কাটাছেড়া!

??? এর ছবি

ঠিকাছে নজমুল আলবাব। আমি ভাবতেছিলাম আবার ভুলভাল কিছু ঘটল কিনা...

শোমচৌর মন্তব্য পাঠ করলাম। শায়লা কিন্তু আপনেরে মিস করল শোমচৌ!!

অমিত আহমেদ এর ছবি

শোহেইল মতাহির চৌধুরী, আপনি সব বলে দিলে আমরা বলবো কি শুনি? হাসি

মোক্ষম হয়েছে নজমুল ভাই!


আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

তারেক এর ছবি

গল্পটা দারুন লেগেছে। ক।খ,ক এর বৃত্তান্ত প্রথমে বুঝি নাই পরে শোমচৌদার মন্তব্য পড়ে আবার পড়লাম। আবারো দারুন লাগল তবে একটু অন্যরকম।

নজমুল ভাই, এ গল্পটা দেয়ার জন্যই কি হুমকি খাইছিলেন সকালে?

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যাক হুমকি ধামকিতে ভালোই কাজ হয় হাসি

শোমচৌর কাহিনী কি? এর ঘরে ওর ঘরে খালি টুল্লুক মারামারি । নিজের লেখা কই? স্খলিত আপেল যে শুরু হয়েছিল সেটা কি নির্বাসনে গেলো?
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৌরভ এর ছবি

হুমম।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আরিফ জেবতিক এর ছবি

শোমচৌর কাহিনী কি? এর ঘরে ওর ঘরে খালি টুল্লুক মারামারি । নিজের লেখা কই? স্খলিত আপেল যে শুরু হয়েছিল সেটা কি নির্বাসনে গেলো?

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

পোস্টটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পড়েছিলাম। তখন মনে হয় ক.খ.ক. ভাগাভাগিটা ছিলো না। কেমন একটু জট-পাকানো লাগছিলো। এখন আবার পড়ে ভালো লাগলো।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আরশাদ রহমান এর ছবি

আমি কম বুঝলেও ভালো লাগছে। [৯০-এ কারা কারা যেন মরে গিয়েছিল গনতন্ত্রের জন্য! কেমন আছে তারা এখন?] ৭১ এ যারা প্রাণ দিছিলো তাদের কথাও জানতে ইচ্ছা করে কেমন আছে তারা।

ঝরাপাতা এর ছবি

হায় ইশপ। নজমুল আলবাবের উপর প্রতিনিয়ত ভর করুন।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

ইরতেজা এর ছবি

দারুন লিখেছেন নজমুল দাদা।
______________________________________

ত্রসরেণু অরণ্যে

_____________________________
টুইটার

কেমিকেল আলী এর ছবি

হু, ভাল লাগল।

আরও বেশি ভাল লাগল শোহেইল মতাহির চৌধুরীর বিশ্লেষনের কারনে।

নজমুল আলবাব এর ছবি

এইসব মন্তব্য! মাঝে মাঝে মন্তব্য মূল লেখাকে ছাড়িয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে শুধু ছাড়িয়েই যায়নি, আরও যেন কি ঘটে গেছে।

কৃতজ্ঞতা সবাইকে।

মাশীদ এর ছবি

ঘটনাটা আপনার থেকে শুনেই ভয় পেয়েছিলাম। এখানে গল্পাকারে পড়ে কেমন অন্যরকম একটা অনুভূতি হল। ক, খ, ক এর ব্যাপারটা ভাল লাগল খুব। কিছু সিনেমার কথা মনে পড়ে গেল যেখানে শুরুতেই শেষটার হিন্ট দেয়া থাকে, পুরো সিনেমা শেষ হবার পরে চলে যায় আবার প্রথম দৃশ্যে। শোমচৌ'দার বিশ্লেষণেও আবার সেটাই মনে পড়ল। আমারো প্রিয় জায়গা বাবাইয়ের যাহ্ যাহ্ বলে তাড়ানোর চেষ্টা। শোমচৌ'দার বলা 'লেখক অনেক শূন্যস্থান রেখে দিয়েছেন, পাঠকের জন্য' কথাটা এসময় অনুভব করেছি। পাঠক হিসেবে আমার মনে হল শিশুবেলার বাবাই-ই যেন অনেক বেশি শক্তিশালী তার সাধ্যমত, আমাদের মত পূর্ণবয়স্করা যেখানে কিংকর্তব্যবিমূঢ়তায় ভুগে যাই, কোন দুর্ঘটনার আকস্মিকতায়।

ভাল লাগল, অ্যাজ অলওয়েজ।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

নজমুল আলবাব এর ছবি

হু মাশীদ, আমারো তাই মনে হয়। শিশুরা অনেক বেশি স্পস্ট তাদের মত প্রকাশে। আর আমরা...

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমি এইটারে কবিতার কাতারেই ফেলবো।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।