বৃদ্ধাশ্রম ( একটি ফিউচার ফিকশন)

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: শনি, ৩০/০৬/২০০৭ - ১:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক.

"আমার একটা দরকার,৯৫ বছরের বেশি হতে হবে"অনিক তার চাহিদা জানায়।
কেয়ার টেকার ফিস ফিস করে বলে,"৯৫ বছরের বেশি মাল বেশি নাই,এগুলার জন্য ডিমান্ড বেশি।ধার হিসেবে দিতে পারি,১৫ দিন পরে ফেরত দেবেন।"

"ধার হিসেবে নিয়ে কী করব?" অনিক বিষ্ময়ের সাথে জানতে চায়।
"অনেকেই ছবি আকাঁর জন্য নিয়া যায়।তাছাড়া হিউম্যন স্কাল্পচার না কি যেন একটা হইছে,সেইখানে জিন্দা মানুষ খাড়া করাইয়া রাইখা এক্সিবিশন করে।এই সব কারনেও আটিসরা নিয়া যায়।আপনে কি কামে নিবেন?

অনিক বুঝতে পারে।তার চাহিদা অন্য।সে এসেছে ডি.এন.এ গবেষনার কাজে।বিদেশী ফান্ড,টাকা পয়সার সমস্যা নেই।সুতরাং তার দরকার একজন ৯০ বছরের বৃদ্ধ মানুষ যার পুরো ডি.এন.এ প্রোফাইল বের করার পর,তাকে কেটে কুটে কিছু নতুন জিনিষ দেখতে হবে।মৃত মানুষ দিয়ে কাজ হবে না,কারন নতুন কিছু হরমোন টেস্ট করতে হবে ।যুগান্তকারী ফলাফলের আশা করছে ইউনিভার্সিটি,সুতরাং তাদের তাড়া আছে।বিদেশীদের ফান্ড ব্যবহারের্ও তাড়া আছে।জুন মাসের মাঝে একটা রেজাল্ট না দিলে ফান্ড ফেরত যাবে।

সুতরাং তাকে একটা ৯০ প্লাস মানুষ কিনে নিতে হবে।দ্রুত কেয়ারটেকারের সাথে দরদস্তুর শেষ হয়।এই টাকাগুলো কেয়ারটেকার নিজে মেরে দেয়,যারা কিনে কিংবা ভাড়া নেয়,তাদের সবাই বিষয়টি জানে।এভাবে বৃদ্ধাশ্রম থেকে লোক বের করে নেয়া বেআইনি,কিন্তু সরকার দেখেও না দেখার ভান করে সবসময়।
সময় পরিবর্তিত হয়েছে,একসময় এইসব বুড়োবুড়ির দায়িত্ব নিত পরিবার,এখন পরিবার সিস্টেমটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।প্রচুর মালিকানাবিহীন শিশুতে ভরে উঠছে শিশু সদন গুলো,আর দলে দলে মানুষ বুড়ো হয়ে আশ্রয় নিচ্ছে সরকারী বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে।এই জনবল সরকারের কোন কাজে আসছে না,অথচ গুচ্ছের টাকা খরচ হচ্ছে।তাই যেন তেন উপায়ে এদের কাছ থেকে মুক্তি পেলেই চলে।কেয়ারটেকার যখন বিক্রী করে দিয়ে "মৃত"লেখে ফাইল বন্ধ করে দেয়,তখন সরকার তাই খুশিই হয়।

দুই.
মহিলাকে দেখে অনিকের পছন্দ হয়।বয়েস ৯২ হলেও বেশ শক্ত সমর্থ মহিলা।গুটুর গুটর করে এসে অনিকের গাড়িতে উঠে বসেন।সারা মুখে তার হাসি।কেয়ারটেকার বলে দিয়েছে,আপনাকে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছে,এজন্য তার সুন্দর সাদা শাড়িটা পরে এসেছেন।সারা মুখ জুড়ে কেমন নিষ্পাপ হাসি।অনিক একটু বিষন্ন হয়।

তিন
ভুরু কুচকে অনিক তাকিয়ে আছে মনিটরের দিকে।মহিলার সবগুলো অর্গান আলাদা আলাদা জারে ভরে লেবেল লাগিয়ে রাখা হয়েছে,সেগুলো নিয়ে তার আপাতত:কোন কৌতুহল নেই।সে অবাক হয়ে দেখছে মহিলার ডি.এন.এ প্রোফাইল।অনিকের ডি.এন.এ প্রোফাইলের সাথে অদ্ভুত মিল। সে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো চেক করলো।এই মহিলা নিশ্চিত ভাবে অনিকের পূর্বপুরুষদের একজন।দাদী অথবা নানী।অনিকের কপাল বেয়ে সুক্ষ ঘামের ধারা বইতে থাকে।

চার
পরদিন অনিক আবার যায় সেই বৃদ্ধাশ্রমে।কেয়ারটেকারে সাথে কথা বলা দরকার।মহিলার ঠিকানা ঠিকুজি কিছু বের করতে পারলে অনিক সেখানে খোজঁ নেবে।কে জানে হয়তো,অনিক তার মা কিংবা বাবার দেখা পেয়ে যেতে পারে।

কেয়ারটেকার অফিসে নেই।ফিরতে ঘন্টাখানেক দেরী হবে।গেস্টরুমে বসেই এ সময়টা কাটিয়ে দেবে ভাবে।
গেস্টরুমে আরেকজন মানুষ অপেক্ষা করছে কেয়ারটেকারের।হয়তো, সে ও একজন মানুষ কিনবে।

অনিক তার সাথে গল্পের চেষ্টা করে।সময় কাটানোর চেষ্টা।সেই লোকটি গল্পে আগ্রহী নয়।তার কাছে কেয়ারটেকারের অপেক্ষাটাই মূখ্য।

পরিচালক সেট সাজিয়ে বসে আছে সকাল থেকে।জরুরী ভাবে একজন ষাটোর্ধ মহিলা দরকার,আগের জন একটা কাজ করার পরই কাল রাতে গলায় দড়ি দিয়ে মরে গেছে।প্রায় পুরো টাকাটাই জলে গেছে।
তাই আজ একজন নতুন মহিলা দরকার।আবার টাকা ইনভেস্ট।অবশ্য এই ইনভেস্টে প্রডিউসারের আপত্তি নেই।
আজকাল মানুষের রুচি বদলে গেছে।
এডাল্ট সেক্স মুভিতে বিনিয়োগ করতে তাই প্রডিউসাররা পিছপা হন না।
টাকা যাই লাগুক,দুই মাসের মাঝেই হাজারগুন হয়ে ফেরত আসবে।
লাভ,সবই লাভ।


মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি

হাসান বিপুলের একটি লেখা থেকে উপজাত অনুভুতির তাৎক্ষনিক গল্পরূপ।
হাসান বিপুলের লেখাটি পাবেনএখানে।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আরেকটু বড় কইরেন। প্লট হিসেবে ভালই।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

আরিফ জেবতিক এর ছবি

দ্রুত লিখে না রাখলে ভুলে যাই যে!

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

অমিত আহমেদ এর ছবি

বাড়ান বাড়ান... এত ছোটতে আমার মন ভরবে না!

************************
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

কনফুসিয়াস এর ছবি

হু, আমারো পড়ে তাই মনে হইলো, আরো বড় ক্যানভাসে লিখলে ভাল হবে।
তাড়াহুড়া কইরেন না বস।
-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ধন্যবাদ কনফু।খেয়াল রাখব বিষয়টা।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

অমিত,তোমারে একটা আইডিয়া দেই,লিইখা ফালাও।(আমি গল্প টল্প আসলে জমাইতে পারি না।)

একজন মানুষ সারা জীবন ধরে ব্যর্থ।তার পড়াশোনার খুব শখ ছিল,কিন্তু দারিদ্রের কারনে সেটা হয়নি।এখন তার খুব শখ যে তার ছেলে এস.এস.সি তে ভালো রেজাল্ট করবে,বাবা মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে প্রথম পাতায় ছেলেটির ছবি ছাপা হবে।

এই শখ থেকে লোকটি বহু পরিশ্রম করে ছেলেকে পড়ায়।
কিন্তু ছেলে বড়ো হতে হতে,সিস্টেম পরিবর্তিত হয়ে যায়,এসএসসি তে জিপিএ চালু হয়।

লোকটির ছেলেটি এবছর গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে,কিন্তু লোকটি খুশি না।সে খুব খুব হতাশ।কারন তার ছেলের ছবি পত্রিকায় আসবে না,জিপিএ পাওয়া হাজার হাজার ছাত্রের ভিড়ে সে হারিয়ে যাবে।

লোকটির এই আলাদা ধরনের কষ্ট নিয়ে একটা সুন্দর গল্প দাড়াতে পারে।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

অমিত আহমেদ এর ছবি

আইডিয়াটা কিন্তু চমৎকার লাগলো! লিখবো? তা নাহয় লিখলাম, কিন্তু আপনি ফাঁকি দিতে চাচ্ছেন কেন শুনি?

--

আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। সুমন ভাই অলরেডি দশটা গল্পের ই-বই বের করার কাজে হাত দিয়েছেন।
এখন ধরেন ব্লগে যারা গল্প লিখেন তাঁদের সবাইকে যদি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে, সীমিত শব্দে গল্প পোস্ট দিতে বলা হয়?

************************
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ফাকি দিচ্ছি না।আমি আসলে ফিকশন লেখক না,গল্প লিখতে গেলে ক্লান্তি আসে,অথচ মাথায় প্লট ঘুরে অনেকগুলো। তোমার গল্পগুলো খুব সহজপাঠ্য হয়,ভালো লাগে,তাই তোমাকে লিখতে বললাম এইটা।

একই বিষয়ে লেখা গল্পগুলোতে মজা পাওয়ার কথা।
কিন্তু বিষয় বৈচিত্র না থাকায় একঘেয়েমি আসবে কি না সেটা একটা প্রশ্ন।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

অমিত আহমেদ এর ছবি

লেখকের কল্পনার জোরে একঘেয়েমি আসার কথা না। যেমন ধরেন বিষয় ঠিক হলো "ভীনগ্রহের প্রানী" তাহলে সেটা আমার সায়েন্স ফিকশনও হতে পারে, হিমু ভাইয়ের সদ্যপড়া রম্যটাও হতে পারে।

আপনার প্লটটা আমার আসলেই ভাল্লাগছে, মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কেবল।

************************
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

আরিফ জেবতিক এর ছবি

নামিয়ে ফেলো তোমার মতো করে।
আমার ফোকাসটা হলো একটা লোক তার সন্তানের এই রেজাল্টের পরেও খুশি না,কারন সেখান থেকে তার সন্তান লাভবান হলেও তার নিজের স্বপ্ন পূরন হলো না।সে এই রেজাল্টকে তাই আরেকটি স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা হিসেবেই দেখছে।
দেখি তোমার বিশ্লেষনে কি দাড়ায়।

কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'বৃদ্ধাশ্রম' এর প্লট টা বড় বেশী মারাত্নক ।
এটা কি শেষ এখানে? আরো চালানো যায়না?

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দ্রোহী এর ছবি

বৃদ্ধাশ্রম এর প্লটটা শকিং টাইপের!! এভাবে চিন্তা করা যায় তা ভাবিনি।

গল্পটা অসাধারণ ভাবে শুরু হয়ে হঠাৎ করে শেষ করে দিলেন? মোটেও খুশি হতে পারলাম না। গল্পের জন্য সম্পুর্ন রেটিং প্রাপ্য কিন্ত এভাবে শেষ করে দেবার জন্য "পোষ্টটাকে ফালতু পোষ্ট হিসাবে রেট করতে ইচ্ছা করছে।"

গররররর....।
__________
কি মাঝি? ডরাইলা?

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আমি দেখেছি যেকোন গল্পই আমি গুছিয়ে লিখতে গেলে যে সময়ের দরকার তা আর হয়ে উঠে না।ফিকশন আর কবিতা আমার বিষয় নয়,এ জন্য হবে হয়তো।

কেউ যদি বৃদ্ধাশ্রমকে নিজের মতো করে লিখতে চান,তাহলে নি:শর্ত প্লট দান করলাম।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

দ্রোহী এর ছবি

বস, বৃদ্ধাশ্রম প্লটটাকে কিছুদিন সময় নিয়ে আরেকটু বড় আকারে ছাড়ুন।

গল্পের প্লট হচ্ছে সন্তানের মত। নিঃশর্তে সন্তান দান করার মত মহত্ত্ব সবাই দেখাতে পারে না। অবশ্য সন্তানের ভবিষ্যত মঙ্গলের জন্য পিতামাতার এধরনের আচরন একেবারের দুস্প্রাপ্য, তা বলাটা বোধহয় ঠিক হবে না।

যাইহোক, আমি আপনার লেখাটাই পড়তে বেশী আগ্রহী।
একই প্লট নিয়ে হিমু যা লিখবে, আপনি তা লিখবেন না। দুটো লেখাই হয়তো খুব ভালো হবে কিন্তু আপনার স্বাদ যেমন হিমুর লেখায় পাবো না, তেমনি হিমুর লেখার স্বাদ আপনার লেখায় পাবো না।
__________
কি মাঝি? ডরাইলা?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সেটাই । আমি তোর লেখা পড়তে চাচ্ছি ।
বেশী বেশী লিখতে হবে এমন কোনো দিব্যি তো নেই । দু সপ্তাহ তিন সপ্তাহ ধরে এই একটা নিয়ে লেগে থাক । মৌলিক লেখার বেদনা তো আছেই । কিন্তু লিখে ফেলতে পারলে কিন্তু অন্য রকম আনন্দ ।
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অমিত আহমেদ এর ছবি

সঠিক...
ফাঁকিবাজি ছাড়েন আরিফ ভাই!


আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

টুল্লুক দিলাম ।
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

টেস্ট
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।