দেশের প্রধান অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বিডিনিউজ২৪.কম এতদিন শুধু সংবাদ পরিবেশন করত। সংবাদের গ্রহনযোগ্যতা তাদের অন্য নবিশ প্রতিদ্বন্ধীদের চেয়ে তুলনামূলক ভালো হওয়ায় বিডিনিউজ দীর্ঘদিন ধরেই তাদের সেক্টরে জনপ্রিয়। কিন্তু খবর প্রকাশের বাইরে ইদানীং কিছুদিন থেকে তাদের মাঝে ইন্টারনেট নিয়ে সরকারকে উপদেশ দেওয়া টেওয়াটা একটু চোখেই লাগছে আমার। অবশ্য এই প্রবণতা নতুন নয়, এদেশে কেউ একটু সাফল্য পাওয়া মাত্রই নিজেকে সর্বেসর্বা ভেবে বসার এবং নিজস্ব ধ্যান ধারণার স্কুল খুলে বসার প্রবণতা পুরোনো। তবে হালের প্রথম আলোর 'বদলে যাও, বদলে দাও' এবং বিডিনিউজের 'নীতি চাই-নৈতিকতা চাই, ফাইন ফাইন আইন চাই' জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় নবিশ সাংবাদিক হিসেবে আমার আগ্রহ তুলনামুলক বেশিই।
কিছুদিন আগে বিডিনিউজের সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বিডিনিউজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন, 'দায়িত্বহীন মুক্তমত নয়'। এই শিরোনামের মাঝেই সব কথা বলা হয়ে গেছে, এবং এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করাটাও আমাদের দায়িত্ব হিসেবেই মনে হয়েছে। আজকের বিডিনিউজ মতামত কলামে মাননীয় সম্পাদক মহোদয়ের লেখা পড়ে আমি নিজে একটু দ্বিধায় পড়েছি যে আসলেই খালিদী সাহেব কী বলতে চান। এই লেখাটির অবতারণা সেখানেই।
লেখা পড়ে জানলাম, বিডিনিউজ গতানুগতিক ব্লগ চালু না করে নাগরিক সাংবাদিকতা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে। এর কারণ হিসেবে খালিদী জানিয়েছেন-
এক বছর আগে আমরা যখন আমাদের বাংলা ব্লগ নতুন করে শুরু করেছিলাম তখন ঠিক করে নিয়েছিলাম, এই ব্লগ অন্য আর পাঁচটি ব্লগের মত হবেনা। এখানে ব্লগাররা শুধুই তাদের মতামত দেবেন না, শুধুই অন্য কোন ঘটনা, কোন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবেন না; তারা তথ্যও দেবেন। তারাও একধরণের সাংবাদিকতা করবেন।সাংবাদিকতা নিয়ে কথা বলতে গেলে, একটা কথা প্রায়ই বলা হয়, কমেন্ট ইজ চিপ, ইনফরমেশন ইজ এক্সপেনসিভ । অর্থাৎ, মন্তব্য করাটা সহজ, কিন্তু তথ্য যোগাড় করা কিংবা তথ্য দেয়াটা কঠিন কাজ।
নিঃসন্দেহে একটি শুভ উদ্যোগ এবং প্রচলিত ধারার বাইরে বের হয়ে আসার একটি চেষ্টা হিসেবে একে সাধুবাদ জানাতে হয়। তিনি 'এক্সপেনসিভ' কাজ করার জন্য চেষ্টা করছেন।
তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন,
কিন্তু তথ্য যোগাড়ের যে কাজটি, তথ্য যাচাই বাছাই করার যে কাজটি, সেটি আমার ধারণা একটু কঠিন কাজ। কেননা, সেখানে দায়িত্বশীলতার প্রশ্ন এসে যায়, সেখানে সতর্ক হবার প্রয়োজন আছে।
এখানে দায়িত্বশীল হতে হবে দু’পক্ষকেই — যারা নাগরিক সাংবাদিক হিসেবে তথ্য দেবেন এবং সেইসাথে যারা (moderators) এ প্রান্ত থেকে আরেক জোড়া চোখ দিয়ে তা যাচাই করে দেখবেন। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, দায়িত্বশীল আচরণ করতে ব্যর্থ হলে মাশুল গুনতে হবে সবাইকে। আইন বা বিধিবিধানের বিষয়টি তখনই সামনে আসে যখন স্বাধীনতার অপব্যবহার হয়। স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা হয়। আমাদের সতর্ক থাকবার প্রয়োজন আছে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, তারপর তিনি পলিটিশিয়ানদেরকে আবারও গাগা ভুতুর ভয় দেখাতে লাগলেন। যথারীতি তাদের অযোগ্যতা-অদক্ষতা নিয়ে সুশীলীয় ফ্যাশন গালাগালি চলল। আজকালকারা চালাক নেট পাঠক এগুলো না পড়েই লাফ দিয়ে পার হয়ে যায়, জাতীয় নির্বাচনের বছর দুই আগ থেকে পলিটিশিয়ানদেরকে গালাগালি শুরু করা আমাদের বুদ্ধিজীবিদের পুরোনো রীতি, সুতরাং আলাদা করে মনোযোগ দেয়ার কিছু নেই।
তবে তিনি কেষ্টা বেটাদের বিরুদ্ধে যে চুরির অভিযোগ আনলেন, মিডিয়ার মনোযোগী ছাত্র হিসেবে এটি আমার কাছে বড়ই আনকোরা। তিনি বললেন,
অব্যবস্থাপনার কারণে, কিংবা সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের অযোগ্যতা-অদূরদর্শিতার কারণে গণমাধ্যমে একটা অরাজক পরিস্থিতি বিরাজমান। এর দায় পুরোটাই রাজনীতিকদের।
বাহ্ রে বাহ। গণমাধ্যমের 'অব্যবস্থাপনা-অযোগ্যতা-অদূরদর্শিতা'র দায় পত্রিকার প্রকাশকের নয়, সম্পাদকের নয়- সরাসরি রাজনীতিবিদদের। তাহলে সম্পাদক হিসেবে যারা দায়িত্ব নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাদের আসলে দায় দায়িত্ব কী? গণমাধ্যমের অব্যবস্থাপনা-অযোগ্যতা-অদূরদর্শিতার দায় তারা কেন নেবেন না?
তবে সাধারণ সাদা চোখে এই প্রশ্নের উত্তর বুঝতে কঠিন হলেও আমি খালিদীর সেই আলোচিত ‘দায়িত্বহীন মুক্তমত নয়’ লেখাটির সঙ্গে মিলিয়ে পড়লে কেন যেন মনে হয় ডালের মাঝে কুছ কালোজিরা হ্যয়। খালিদী কি তাহলে ইঙিত করছেন, আজকের নতুন প্রজন্মের যোগাযোগ মাধ্যম-ব্লগ-ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোকে হিসেবে ধরেই? যদিও বক্তব্য স্পষ্ট নয়, তবু এই আশংকাটা ফেলে দেয়া যায় না।
কারণ, তিনি কথার মারপ্যাচে আবারও বলছেন,
এটা স্পষ্ট, ইতোমধ্যে অরাজক পরিস্থিতির সুবিধাভোগীরা সংখ্যায় অন্তত মূলধারার সংবাদকর্মীদের ছাড়িয়ে গেছেন। সততা এবং অঙ্গীকার নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে একটা হতাশা আছে বলে মনে হয়।
এই 'অরাজক পরিস্থিতির সুবিধাভোগী' বলতে তিনি কাদেরকে বুঝাচ্ছেন? সংবাদ মাধ্যমের অরাজক পরিস্থিতির সুবিধাভোগী হলে খালিদী সাহেব কিংবা আমার মতো পেশাদার সাংবাদিকদরাই হবেন, আম-কাঠাল-লিচু পাবলিকরা নয়। আমরা মূলধারার সংবাদকর্মী। এই কাজটি পুরোটাই পেশাদার এবং দায়িত্বশীলতার জায়গা। মূলধারার সংবাদকর্মীর বাইরে অমূলধারার সংবাদকর্মী বলে কোনো ধারার অস্তিত্ব আমার জানা নেই। এই ফলটা 'কাঠাল' অথবা 'কাঠাল নয়'। মূলধারার কাঠাল আর অমূলধারার কাঠাল বলে তো কিছু হতে পারে না। তবে এখানে 'সংবাদ মাধ্যম' এর জায়গায় 'গণমাধ্যম' বললে একটি এস্কেপ রুট তৈরি থাকে। তখন ফেসবুকের দেয়াল লিখন থেকে শুরু করে গুলিস্তানে 'হাজী সেলিমের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র' এর দেয়াল লিখন-সবগুলোই এই আওতায় পড়ে। আমি মানলাম যে গুলিস্তানের দেয়াল লিখনের গণমাধ্যম থেকে হাজী সেলিম উপকৃত হন, সংবাদকর্মীরা নয়। তো, সমস্যা কী? সেই দেয়াল লিখন অরাজকতার সুবিধা লাভে কি দেশের কোনো সংবাদকর্মী লালায়িত হবেন? আমার তো মনে হয় না।
তার মূল উদ্বেগ যদি ব্লগ ও ফেসবুক-টুইটার কেন্দ্রিক হয়, তাহলে এখানে একটা কথা বলতে চাই। একমাত্র খালিদী সাহেবের ব্লগ ছাড়া বাকি সবগুলো ব্লগেই মূলত কমেন্টারিই লেখা হয় বেশি।
"কমেন্ট ইজ চিপ" খালিদী সাহেবের এ কথা যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই, তাহলে এই কমেন্টগুলোই হচ্ছে ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের মূল চর্চার জায়গা। এখানে ব্যক্তি হিসেবে আমি যখন কমেন্ট লিখি, তখন পাঠকমাত্রই বুঝেন যে এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত। এই মতামত গ্রহন-বর্জন-প্রত্যাখ্যান-প্রতিরোধের দায়িত্ব পাঠকের ইচ্ছাধীন। তারা জানেন যে আমি এখানে তথ্য দেই না বরং তথ্য বিশ্লেষণ করি আমার নিজস্ব চিন্তার নিক্তিতে। সুতরাং এর মাধ্যমে আসলে খুব বড় মাত্রায় ক্ষতি সাধিত হয় না। ব্যক্তি চরিত্র হননের বেশুমার চেষ্টা অবশ্য এখানে চলে, কিন্তু সেটিও পাঠকের গ্রহন বর্জনেই চূড়ান্ত রূপ পায়।
তাহলে গণমাধ্যমে অরাজকতা কীভাবে তৈরি হচ্ছে, কারা করছে? আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, এই অরাজকতাটা আসলে খালিদী সাহেবরাই তৈরি করছেন।
তারা এই চিপ কমেন্টারিকে ঠেলে তাদের সো-কল্ড 'এক্সপেনসিভ' সাংবাদিকতার অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন নেট ব্যবহারকারীদের হাতে। তিনি তাদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন, বাংলাদেশকে বলা হয়, সাংবাদিকতার স্বর্গরাজ্য। বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার। দুর্নীতিবাজ আর বিভিন্ন রকম দুর্বৃত্তায়নের এ দেশে চারিদিকেই শুধু খবরযোগ্য ঘটনা। নাগরিক সাংবাদিকরা এ সুযোগটা নেবে না কেনো?
আমি ব্যাপারটা আমার ক্ষুদ্র সংবাদকর্মীর অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে চাই। এবার আমাদের নেট ব্যবহারকারী সাধারণ জনগন সাংবাদিক হয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা শুরু করবেন। সেটা ছাপা হবে কোথায়? আর কোথায়-বিডিনিউজের সিটিজেন সাংবাদিকতার ব্লগে।
ব্লগে কীভাবে লেখা ছাপা হয়? লিখলাম-ছাড়লাম। এখন সারা দেশের অসংখ্য অনলাইন ব্যবহারকারী 'অনুসন্ধানী সাংবাদিক' হবেন। ভালো খবর আসবে ৩টা, সঙ্গে ধান্দাবাজি খবর আসবে ৩ ডজন। পোস্টাপিসে গিয়ে লাইনে দাড়াতে বলেছে-রেগে এসে দুম করে লিখব-ব্যাটা পোস্ট মাস্টার ৩ কেজির বাক্সকে দিব্যি ১ কেজির স্ট্যাম্প মেরে ২ কেজির টাকা মেরে দিল। কে বলেছে, কে বলেছে-দাদা বলেছে। দেশের সবচাইতে বড় অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত। খালিদী সাহেবের যেরকম আমাদের দেশের পলিটিশিয়ানদের সততায় ঈমান দুর্বল, আমারও তেমনি দুর্বল এদের বোধবুদ্ধিতে। এরা বিডিনিউজ আর বিডিনিউজ ব্লগের তফাৎ সহজে করতে পারবে না বা করতে চাইবেও না।
ব্লগের এক প্রকার বিশ্বাসযোগ্যতা, কিন্তু সংবাদপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ভিন্ন। সুতরাং বেচারা পোস্টমাস্টারের চাকুরি নিয়ে যদি টানাটানি পড়ে, আমি অবাক হব না। এভাবেই খালিদী সাহেবরা এক ধরনের সাংবাদিক তৈরির ফ্যাক্টরি খুলেছেন যার পরিণাম সুখকর হবে না। হাজার হাজার 'সিটিজেন জার্নালিস্ট'দের না আছে প্রশিক্ষণ, না আছে কোনো জবাবদিহিতা। এরা কারো চাকুরি করে না, কারো কাছে রিপোর্ট করার ধার ধারে না। এদের কীবোর্ড আর খালিদী সাহেবের উৎসাহ। চলুক তবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নহর।
এই অরাজকতার উদ্যোক্তা খালিদী সাহেব, যিনি বর্তমানে গণমাধ্যমের অরাজকতা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
তর্ক আসতে পারে যে এই খবরগুলো তো মডারেটরের মাধ্যমে ছাড়া হবে। একজন মডারেটরের পক্ষে ঢাকায় বসে কি চুয়াডাঙার অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার রিপোর্ট পরীক্ষা করার কোনো সুযোগ আছে? হয়তো আছে। কিন্তু কারা এই মডারেটর, তারা কি যোগ্য? তারা কি সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, অভিজ্ঞ, যোগ্য, দক্ষ? তারা কি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মৌল ভিত্তি সম্পর্কে জানেন?
খালিদী সাহেবের এই মডারেটররা যদি পেশাদার সংবাদকর্মী হিসেবে অভিজ্ঞ না হন সেক্ষেত্রে এই লেজে গোবরে অবস্থা আরো বাড়বে।
কিন্তু খালিদী সাহেব এসব শুনবেন না, তিনি 'সুবিধাভোগী' হিসেবে অসাংবাদিকদের বাড় বাড়ন্তে উদ্বিগ্ন, সুতরাং এই সুবিধার ভাগ নিতে এবার তিনি এগিয়ে আসবেনই। এবং একই সঙ্গে তিনি ফাইন ফাইন আইন করে গোটা অনলাইন মিডিয়াকেই নিয়ন্ত্রনের আহ্বান জানিয়ে যাবেন। বিষয়টাকে তুলনা করা যেতে পারে অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইন চেয়ে অবৈধ অস্ত্র বিক্রেতাদের সেমিনারের সঙ্গে।
তবে জনাব তৌফিক ইমরোজ খালিদীর গোটা লেখায় একটা অংশ আমার খুব ভালো লেগেছে। তিনি বলেছেন,
সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনায়, সর্বোপরি গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনায়, দায়িত্বশীল আচরণ যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন বোধহয় এখন।
একদম সঠিক কথা। একথা আমাদের সবাইকে অবশ্যই মনে রেখে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে খালিদী সাহেবের জন্য এটা প্রতি মুহুর্তে স্মরণ রাখা এখন প্রায় ফরজ হয়ে গেছে।
মন্তব্য
হা হা... এ যে দেখছি জব্বার কাগুর নতুন সংস্করণ!
****************************************
"মেশিনে থাপ্পড়"খ্যাত সালুয়াড় চৌধুরী খালুব্লগে এক্সপেনসিভ ইনফরমেশন যোগায় মনে হয়।
কমেন্ট প্রতি কত পেলে সেইটা চিপ হবেনা?
আলবত! রাগীমনসিন্ড্রোমে প্রবলভাবে আক্রান্ত কাউকে সিটিজেন জার্নালিজমের মডারেটর হিসেবে আপনার অভিজ্ঞ মনে না হওয়ার কারণে যারপরনাই দুঃখিত হৈলাম জনাব। যোগ্য বা দক্ষ তারা না হৈতেই পারে, তাইলে বলে...
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
গোলাম আজমকে গ্রেফতারের পর বিডিনিউজ ব্লগের বেশির ভাগ পাঠকদের মন্তব্যের যে নমুনা দেখেছিলাম, তাদের থেকে খালিদী সাহেব কী তথ্য আশা করেন!
নমুনার জন্য
এই বক্তব্যটা অযৌক্তিক মনে হল না।
অলস সময়
"কাগজের প্রচারসংখ্যা" কীভাবে "ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা"র সাথে তুলনীয় হয়? একটা কাগজ ৫ লক্ষ লোক কেনে, ১৫ লক্ষ লোকে পড়ে। একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস বা ব্লগ পোস্টে কি ৫ লক্ষ লোক পড়ে নাকি?
তাছাড়া ফেইসবুকে অ্যকাউন্ট খুলতে তো আর পয়সা দিতে হয় না।
আমি যদি এরকম বলি তাহলে কি এ্ই কথাটা গ্রহণযোগ্য হবে?
দারুন বলেছেন।
এত থিওরী না কপচিয়ে কেস স্টাডি দেয়া না কেন খালিদী সাহেব? বাংলাদেশে মডারেশন বিষয়ক আইন না থাকায় এখন পর্যন্ত কতগুলো মূল্যবান কান কতজন দস্যু চিল নিয়ে গেল সেটা বলছেনা কেন? এই লোকের বক্তব্যের যাচাইযোগ্যতা খুবই নিচু মানের।
ফিদেল ক্যাস্ট্রো মহাজন করে দেখাতে পাল্লে আমাদের সৎ, যোগ্য, খাঁটি সাংবাদিক নেতা খালিদী ভাইয়া পারবেন্না কেনো? আগামিতে ব্লগ লিখতে হলে সবাইকে ইন্টার্নেটসর্দার, নেটিজেনশিক্ষাগুরু খালিদী ভাইয়ার ব্লগে শিক্ষানবিশী করে আসতে হবে আশা রাখি। ওনাকে ইন্টার্নেটপবিত্রতারক্ষা কমিটির প্রধান করার সুপারিশ সমেত একটা হাইকোর্ট রুলিং আসার প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে। আরো দেখতে থাকেন। ~সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচ টন।
এইটাই হইলো আসল কথা।
খালিদী সাহেব মূলত বলতে চান যে বাংলা ব্লগ চালানোর যোগ্যতা একমাত্র বিডিনিউজের আছে।
বাংলাদেশের সকল গণ্যমান্যরা তো এখন ওখানেই লেখেন। সেখান থেকে উনি যদি ভেবেই বসেন যে সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচ টন, পুরোটা ওনার বিডিনিউজে ভরে ফেলা যায়, উনার দোষ্কী? বাংলদেশে ইন্টার্নেটের বিস্তৃত কাঁচামাটি দেখে ওনার চোখ সামন্তপ্রভুর মতো চিকচিক করছে। ইন্টার্নেটের জবরদখল নেবার জন্যে জুজু তৈরি করে ওনার এসব উল্লম্ফন, সরকার-রাজনীতিবিদদের আস্তিন ধরে টানাটানি রীতিমতো কমেডি।
সে যেইভাবে রাজনীতিকদের কাছে গিয়ে "আব্বু, কুলে! কুলে আব্বু কুলে!" বলে দুইদিন পর পর কান্তেছে। এইভাবে কি হয় রে আঙ্কেল?
ভবিষ্যতে বিভিন্ন ব্লগের মডারেটরদের খালিদী সাহেবের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র যোগাড় করতে হবে ! অন্যথায় তাঁরা যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না !
আর আমরা, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্লগাররা তো কোন ছার !
চারিদিক নবী-রসুলে ভরে উঠছে।
ওনার এইবারের প্রতিটা লাইন কোট করার মতো।
এই ভালো ভালো কথাগুলো কিন্তু মহা উদ্বেগজনক। কথাগুলোতে রাজনীতি শব্দের ভয়ঙ্কর অপব্যবহার আছে। রাজনীতির বাইরে নিশ্চয়ই কিছু নাই। আমরা এটাই আশা করি যে রাজনীতির সুযোগ নাই এমন ক্ষেত্র না থাকুক। রাজনীতি জিরাফেও আছে, রাজনীতি কুমিরেও আছে। আমার পেটে সমস্যা দেখা দিলে সেখানেও রাজনীতি করার সুযোগ আছে। কিন্তু রাজনীতি বলতে বিভিন্ন মত তার প্রচার প্রসারের সুযোগ পাবে সেটাকে বোঝাচ্ছেন না তিনি। ওনার রাজনীতির ধারণা হলো সামন্ততান্ত্রিক, রাষ্ট্রবাদী, স্বৈরাচারী। চরদখল নিয়ে সেটার একা ভোগদখল হলো ওনার রাজনীতির সংজ্ঞা। উনি বুঝাচ্ছেন একটা রাজনৈতিক দল ভোট পেয়ে সরকারে আসলে গণমাধ্যমসহ দেশে সকল ক্ষেত্রে কেবল নিজেদের মতটা আইন করে চাপিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। একটা রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অন্যান্য রাজনৈতিক মত ও ধ্যান ধারণার সহাবস্থান হলো "গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চরম দায়িত্বহীনতা এবং অযোগ্যতার পরিচয়", আর সাধারণ মানুষের মতামতের কথা না হয় বাদই দিলাম।
একটা মাত্র রাজনৈতিক মতের চর্চার সুযোগ কখনোই "গণতান্ত্রিক পরিবেশ কিংবা আইনের শাসন"পূর্ণ পরিবেশ নয়। ফলে কোনো সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশও নয়। সরকারি কঠোর নিয়ন্ত্রণ কোনো সুষ্ঠু রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ দিতে পারে না। সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের নিয়তি হলো সাহেব-বিবি-গোলামের বাক্স। কিন্তু "গণমাধ্যমের ব্যবস্থাপনা"র জন্য "রাজনীতির পাটাতনটা আরো শক্ত হবার প্রয়োজনে"র কথা বলার ছলে তিনি এই সরকারি নিয়ন্ত্রণের লোভটাই প্রচার করছেন। "যখনই অন্য কোন শক্তি এই রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করেছে কিংবা করবার চেষ্টা করেছে তখনই সসস্যা হয়েছে" - নিশ্চয়ই, এবং সেই সুযোগটা তখনই আসে যখন সরকার প্রায় সবার কাছ থেকে গণমাধ্যমকে আলাদা করে রাখে। তখন স্বৈরাচারী গণমাধ্যমকে অপব্যবহারের সুযোগ পায়। এরশাদ গণমাধ্যমকে কঠোর নিয়ন্ত্রণ করলে সেটা অরাজনৈতিক, অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী হয় কিন্তু নির্বাচিত সরকার গণমাধ্যমকে কঠোর নিয়ন্ত্রণ করলে সেটা রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু? না। নির্বাচিত বা অনির্বাচিত, সেটা দিয়ে একটা সরকার স্বৈরাচার হতে পারে কি পারে না সেই বিচার করা যায় না। সরকার স্বৈরাচারী কিনা সেটা প্রকাশিত হয় তার আচরণে। নির্বাচিত সরকারের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার উদাহরণ জগতে আছে ভুরি ভুরি। ফলে "রাজনীতির পাটাতনটা আরো শক্ত" করার মানে যদি হয় গণমাধ্যমকে আবার সাহেব বিবি গোলামের বাক্স করা, তবে সেটাই হবে চরম অগণতান্ত্রিক, অরাজনৈতিক ও স্বৈরাচারী।
খালিদী সাহেব একজন মিডিয়াব্যবসায়ী। একজন মিডিয়াব্যবসায়ী যখন মিডিয়ায় খবরদারির জন্যে রাষ্ট্রকে হাতছানি দেয় বারেবারে, তখন বুঝতে হবে, তিনি নিজের লাভকে বিপন্ন না করেই এ কাজ করছেন। রাজনীতিবিদরা গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ নিলে এই খবরমুদি খালিদীর লাভটা কোথায়, সেটা আমাদের বুঝতে হবে। হয় তিনি কোনো নিশমার্কেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়ে ক্ষেপে আছেন, অথবা তিনি অন্য কোনো বাজারে সুঁই হয়ে ঢুকতে চান বেড়ে ফাল হওয়ার আশায়, কিংবা আনকোরা নতুন কোনো মার্কেট তিনি আয়ত্বে আনতে চান। এখানে কথা বলছে পয়সা। খালিদী গণমাধ্যমের এমন কোনো নবী বা শুভানুধ্যায়ী না যে ক্ষয়িষ্ণু গণমাধ্যম মেরামতের জন্য তিনি টুলকিট নিয়ে ছুটে এসেছেন বলে লোকে আশ্বস্ত হবে। রাজনীতিবিদরা গণমাধ্যমকে কাপাই পরানোর এই হাতছানি পেয়ে খবরমুদি খালিদীকে কীভাবে লাভ যোগাতে পারে?
আমাদের গণমাধ্যমের কিছু জিনিস ধোঁয়াটে এবং সেই ধোঁয়ার সুযোগটা রাজনীতিবিদরা নেন। যেমন, টিভির লাইসেন্স। এটা কাকে দেয়া হবে, কী যোগ্যতার ভিত্তিতে, তার কোনো দিকনির্দেশনা বা পাথরে খোদাই আইন নেই। খালিদী কি এ ধরনের কোনো লাইসেন্স হস্তগত করার জন্যেই রাজনীতিবিদদে গণমাধ্যমের রাখাল বানানোর জন্যে ক্ষেপে উঠেছেন?
উনি নিয়মের পরাকাষ্ঠার জন্যে এতই যখন ক্ষেপেছেন, টিভি লাইসেন্স ইস্যুর নীতিমালা করা নিয়ে বিডিনিউজে রাজনীতিবিদদের কোমল স্থানে সজোর চিবি দিয়ে একটা লেখা লিখে দেখান, আমরা পড়ি। বুঝে দেখি তিনি কত্তবড় ব্যাটম্যান বের হয়েছেন গুহা থেকে।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
আমি ভাবছি যে আরেকটা ডাইমেনশান হলো রাজনীতিবিদরা যদি গণমাধ্যমকে কাপাই পরায়, একটা সাংবাদিক গোষ্ঠি বা নেতাকে তো সেটার লাগামটা দিতে হবে। নজরদারি খবরদারির ঠিকাদারি দিতে হবে। রাজনীতিবিদেরা নিজেরা তো এই বিষয়ে সরাসরি যুক্ত হতে যাবে না। যেমন আদালত ভাষার অপবিত্রতা পছন্দ না করলেও সেটা রক্ষার ঠিকাদারি দিয়েছে একটা প্রথমালো সুশীল গোষ্ঠিকে কমিটি বানিয়ে। ওনাদের টিভি রেডিওতে থাকবে এখন একচেটিয়া "উচ্চভাষাশ্রেণী"র দাপট। সেরকমই, ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে সরকারি যোগাযোগের কারণে উনি আশা করতে পারেন উনি সেটার ঠিকাদারির দায়িত্ব পেলেও পেতে পারেন। অথবা সিগন্যালটা বা সরকারের মনস্তত্ত্বটা আগেই তিনি জেনে গেছেন। নিজেরটা করে খাওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি করার দায়িত্বটাও হয়তো পড়েছে ওনার ঘাড়ে।
আরে ভাই, সেইদিন কি আর আছে।। অহন রাজনীতিতে পলিটিক্স ঢুকছে না?
আচ্ছা, বিভিন্ন দেশে আমরা কি বিনোদনের জন্য কিছু আদম সাপ্লাই দিতে পারিনা? আমারতো মনে হয় এই খাতে বস্ত্রশিল্পের চেয়ে বিদেশী মূদ্রার আগমন বেশী হবে।
খালিদি সাবরে সাংবাদিকতার নতুন ধারা আবিস্কার করার জন্য একটা ম্যাগস্যাসে পুরস্কার দিয়া দেন। আর ফাল পারব না।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
খালিদী সাহেব যেদিন ওই বক্তব্য দেন, সেদিনই বিডিনিউজে খবরটা পড়ে আমার মনে হয়েছিল, ব্যাটার বদ মতলব আছে নিশ্চই। তা না হলে নিজের নাক কেটে কর্তার হাতে দেওয়ার উদ্যোগ কেন? কপি করে নিউজটা রেখেও ছিলাম, পরে এ বিষয়ে কিছু লিখবো বলে। কিন্তু পরীক্ষা সামনে চলে আসায় সেটা আর হলো না। এর মধ্যে ব্যাপারটা বাসি হয়ে গেল আমার কাছে। আজ এই লেখাটি পড়ে মনে হচ্ছে, আরিফ জেবতিক আমার না বলা কথাগুলোই যেন বলে দিলেন। যে কথাগুলো আমিও বলতে চেয়েছিলাম।
নতুন মন্তব্য করুন