বাংলাদেশে কয়টি টিভি চ্যানেল আছে আমি জানি না। আসিয়াছে-আসিতে পারে-আসার পথে এরকম হিসাব করলে সংখ্যাটা কমসে কম একডজন। একসময় আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল ছিল মাত্র একটা। বাংলাদেশ টেলিভিশন। সেই টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখার জন্য বাংলাদেশের মানুষ তো বটেই সীমান্তবর্তী ভারতীয় শহর-গ্রামের মানুষও ছাদে হাড়িপাতিল ঝুলাতো।
কিন্তু দিন বদল হয়েছে, আমরা একডজন টিভি চ্যানেলের মালিক হলেও আমাদের নিজেদের লোকজনই এসব টিভি দেখে না।
একসময় ধারাবাহিক নাটকের দিন কিংবা ইত্যাদির কোনো পর্ব দেখার জন্য ঢাকা শহর ফাঁকা হয়ে যেত, এখন এমন কোনো অনুষ্ঠান কিংবা নাটকের নাম কেউ চট করে বলতে পারবে না।
হিন্দি চ্যানেলগুলোর কথা বাদই দিলাম, পাশের দেশের বাংলা চ্যানেলগুলোর দর্শকই এখন আমাদের বেশি। আমরা ঠিকই মীরাক্কেল কবে দেখায়, দাদাগিরি-দিদিগিরি-জারিজুরি-রোজগেরে গিন্নী এগুলো কবে কখন দেখায় এ খবর জানি। শুধু জানি এমন নয়, আমরা এসব অনুষ্ঠান নিয়মিত দেখে এমন দর্শক ভুরি ভুরি।
আমি ইদানীং অভিযোগ শুনি যে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল কেন পশ্চিমবঙ্গে দেখায় না। যৌক্তিক প্রশ্ন বটে। পশ্চিমবঙ্গের লোক বাঙালি, তারা কেন আমাদের টিভি চ্যানেল দেখার সুযোগ পাবে না? আমরা কেন এক তরফা তাদেরটা দেখব। এসব দেখাদেখিতে আবার আমাদের কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রাও চলে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে দুঃখ করার ক্ষেত্রে আমাদের টেলিভিশন কর্তারা বড় সোচ্চার। সবচাইতে বেশি সোচ্চার হচ্ছেন ইভাস্বামী মাহফুজ সাহেব। বাকিরাও প্রায়শই এ নিয়ে দুঃখ করেন।
কিন্তু আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে কখনোই এ কথা বলতে শুনিনি, কেন আমাদের নিজেদের দর্শক আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল দেখে না? হিন্দি চ্যানেলগুলোর কথা এই আলোচনায় সরিয়ে রাখলাম, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর জন্ম এই সেদিন মাত্র, এখন জি-বাংলার দর্শকসংখ্যা এদেশে কেন আমাদের সবগুলো টিভি চ্যানেলের দর্শক সংখ্যা থেকে বেশি?
গলদটা এখানেই। আমাদের মধ্যে টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক হওয়ার যে আগ্রহ উদগ্র আগ্রহ এবং অশ্লীল প্রতিযোগিতা আছে, তার সঙ্গে টিভি চ্যানেলের বিপনন, ব্যবস্থাপনা এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। এদেশে গার্মেন্ট মালিকের টিভি চ্যানেল আছে, অষুধ কোম্পানির টিভি চ্যানেল আছে, লিল্লাহ সদকা খাওয়া হুজুরদের টিভি চ্যানেল আছে, রাজাকারদের টিভি চ্যানেল আছে, আলু-খালু-লালু-ভুলু, কার নেই? কিন্তু রাজনীতিকরণের মাধ্যমে এসব টিভি চ্যানেল বরাদ্দ করার কারণে এই সম্ভাবনাময় খাতটি শুধু যে উঠে দাড়াতে পারেনি এমন নয়, বরং নেতিয়ে পড়েছে।
অথচ এক বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে এদেশে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ইটিভির প্রতিষ্ঠাতা এ, এস মাহমুদ শুধু সায়মন ড্রিংকে এদেশে নিয়ে এসেছিলেন এমন নয়, বরং সব ক্ষেত্রেই পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। আমার মনে আছে, দিনের পর দিন ক্যাম্প করে সাংবাদিকরা সে সময় টিভি সাংবাদিকতার প্রশিক্ষন নিয়েছিলেন গাজীপুরে, সেই প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছিল বিবিসির প্রশিক্ষণ টিম। আদালতের দোহাই টোহাই যা-ই দেয়া হোক, আমার বিশ্বাস, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা নিরসনের জন্য খালেদা জিয়া এই টিভি চ্যানেলটি বন্ধ করে দেন।
এর পরেই টিভি চ্যানেলগুলোর দায়িত্ব গিয়ে পড়ে লালু-ভুলুদের হাতে। যেহেতু ইটিভিতে সংবাদ জনপ্রিয় হয়েছিল, তাই এসব মূর্খরা বুঝে না বুঝে সংবাদ দেখানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সবাই সংবাদ প্রচারে চলে আসায় এখানে লোকবল সংকট দেখা দিল। এর ফলে বাজারের সব অচল মাল-টাল বিভিন্ন চ্যানেলে খালু-মামুদের ধরে ঢুকে পড়ল। আমরা পেলাম একদল বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী রোবটকে, এরা হাতে বুম নিয়ে ছোট ছোট মাইক্রোবাস চেপে ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যাম বাড়ানো ছাড়া আর কী কাজে লাগছে, সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে। এদের একদলের কাজ হচ্ছে সকালে উঠে নির্বাচন কমিশনের সিড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকা, একদলের কাজ হচ্ছে মাঝরাতে খালেদা জিয়ার অফিসের সামনে দাড়িয়ে থাকা। কোনো ধরনের বুদ্ধিদীপ্ত খবর এরা কালেভদ্রে প্রচার করতে দেখি না। এর বাইরে টিভি খুললেই নির্বাচন কমিশনারের ভুরু কুচকে থাকা মুখ। একই খবর সব চ্যানেলে, একই ভাষায়, একই উপস্থাপনে। তাহলে আমাদের এত টিভি চ্যানেলের দরকারটা কী?
খবর প্রকাশের পরে যে সময়টুকু থাকে, সেটি বরাদ্দ হচ্ছে টক-শো এর জন্য। হার্ডবোর্ডের একটা টেবিল রঙ করে, নিউমার্কেট থেকে দেড়শ টাকায় দুইটা মগ কিনে সেটার মধ্যে লিকার চা ভরে দিলেই দুইজন লোক আধাঘন্টা একঘন্টার জন্য বকবক করতে থাকে।
সেই থোড় বড়ি খাড়া-মতিউর রহমান চৌধুরী-আসিফ নজরুল। এর চেয়ে ময়ূরী-মুনমুন দেখালেও না হয় পাবলিক কিছুক্ষণ এদের মেকাপ আর কাপড়চোপড় নিয়ে কিছু মন্তব্য করতে পারব। রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আসিফ নজরুলের চেহারা মুবারক দেখে ঘুমাতে যেতে কয়জন বাঙালি আগ্রহী?
সবচাইতে পুরোনো স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল বোধহয় এখন এটিএন বাংলা।
আমি গতকাল ২৫ জানুয়ারি বুধবারের এটিএন বাংলার প্রোগ্রাম শিডিউলটাতে চোখ বুলাই।
বুধবার ২৫ জানুয়ারী’ ২০১২০৭টা এটিএন বাংলা সংবাদ
০৭টা ৩০মিঃ প্রভাতী অনুষ্ঠান ‘পজিটিভ বাংলাদেশ’
০৮টা এটিএন বাংলার প্রতি ঘন্টার সংবাদ
০৮টা১৫মিঃ ইউএস পরিক্রমা
০৮টা ৩০মিঃ ধারাবাহিক নাটক ‘পৌষ ফাগুণের পালা’
০৯টা এটিএন বাংলা নিউজ
০৯টা ১৫মিঃ ধারাবাহিক নাটক ‘ছায়ানারী কায়ানারী’
১০টা এটিএন বাংলা সংবাদ
১০টা ৩০মিঃ সংবাদ পর্যালোচনামূলক অনুষ্ঠান ‘গ্রামীণফোন লিড নিউজ’
১১টা এটিএন বাংলার প্রতি ঘন্টার সংবাদ
১১টা ২৫মিঃ শেয়ার বাজার নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান। সরাসরি।
১২টা এটিএন বাংলার প্রতি ঘন্টার সংবাদ
১২টা ১০মিঃ কম্পিউটার বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘আইটি জোন’
১২টা ৪৫মিঃ খেলাধুলা নিয়ে অনুষ্ঠান ‘ভিশন ২০২০’
০১টা এটিএন বাংলার প্রতি ঘন্টার সংবাদ
০১টা ২৫মিঃ ব্যান্ড সঙ্গীতের অনুষ্ঠান ‘ব্যান্ড ভিউ’
০২টা এটিএন বাংলা সংবাদ
০২টা ২৫মিঃ বিটিভি’র সংবাদ
০২টা ৪৫মিঃ ধারাবাহিক নাটক ‘আলোক নগর’
০৩টা এটিএন বাংলার প্রতি ঘন্টার সংবাদ
০৩টা ১০মিঃ মেগা সিরিয়াল ‘ও আমার চক্ষু নাই’
০৩টা ৪৫মিঃ ছোটদের অনুষ্ঠান ‘শাপলা শালুক’
০৪টা এটিএন বাংলার প্রতি ঘন্টার সংবাদ
০৪টা ২৫মিঃ ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা নিয়ে সরাসরি অনুষ্ঠান ‘বাণিজ্যমেলা প্রতিদিন’
০৫টা গ্রাম-গঞ্জের খবর
০৫টা ২০মিঃ সরাসরি ইসলামী অনুষ্ঠান ‘ইসলামী সওয়াল ও জবাব’
০৬টা এটিএন বাংলা নিউজ
০৬টা ১৫মিঃ টকশো ‘কথামালা’
০৭টা এটিএন বাংলা সংবাদ
০৮টা ট্রাভেল শো ‘ডেসটিনেশন আনলিমিটেড’
০৮টা ৪০মিঃ ধারাবাহিক নাটক ‘চাঁদ ফুল...অমাবস্যা’
০৯টা ২০মিঃ ধারাবাহিক নাটক ‘পৌষ ফাগুণের পালা’
১০টা এটিএন বাংলা সংবাদ
১০টা ৫৫মিঃ মানবাধিকার বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘তালুকদার গ্র“প বিবেকের কাছে প্রশ্ন?’
১১টা ৩০মিঃ ধারাবাহিক নাটক ‘আশ্রয়’
১২টা এটিএন বাংলা সংবাদ
১২টা ৩০মিঃ সংবাদ পর্যালোচনামূলক অনুষ্ঠান ‘গ্রামীণফোন লিড নিউজ’
খেয়াল করে দেখেন, সকাল ৭টায় এরা শুরু করেছে খবর দিয়ে, রাত সাড়ে বারোটায় শেষও করছে 'লিড নিউজ' দিয়ে। খবরগুলোর মাঝে মাঝে পাঞ্চ করে একটা দুইটা প্রোগ্রাম ঢুকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এই প্রোগ্রামগুলোর নাম -নাটক। অধিকাংশ নাটক দেখলেই মনে হয় নাট্য নির্মাতার ফাঁসি চাই বলাও ঠিক হবে না, ফাঁসির দড়িটাও একটা অপচয়। চ্যানেলগুলো কম পয়সায় নাটক কেনার এক প্রতিযোগিতা শুরু করেছে, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নির্মাতা অনির্মাতারা সবাই যা ইচ্ছা উগলে দিচ্ছে। যে সব সস্তা ভাড়ামি আগে মেইলট্রেনের ফকিররা দেখাতো, এগুলো এখন হাসির নাটক নাম দিয়ে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এই স্থবির বুদ্ধি প্রতিবন্ধী টিভি চ্যানেলগুলোর কিছুটা দায় সরকারের। কোন ক্রাইটেরিয়ায় এসব টিভি চ্যানেল বরাদ্দ দেয়া হয়, সেটা আসলে কেউ জানে না। মোজাম্মেল বাবুর টিভি চ্যানেল পাওয়ার একমাত্র যোগ্যতা দলীয় চামচামি, কিন্তু এর সঙ্গে তার যে কিছু আর্থিক সামর্থ্যও থাকা দরকার, এ কথাটি সরকার ভুলে যায়। তবে সৃজনশীল বলে দাবিদার ব্যক্তিরাও যে একেবারে সুযোগ পাননি, এমন নয়। আলী যাকের-আসাদুজ্জামান নূর সাহেবের দেশ টিভির অনুষ্ঠান সূচি দেখা যাক। (এটি গত বছর ৩ এপ্রিলের অনুষ্ঠান সূচি, কারণ বিশ্ব এগিয়ে গেলেও দেশ টিভি গত ১০ মাসে তাদের ওয়েবসাইটে এই অনুষ্ঠান সূচিই পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় পাওয়া গেছে, আর আপগ্রেড করা হয়নি।)
৩ এপ্রিল, শনিবার
সকাল ৭:৩০ দেশ সংবাদ
সকাল ১০:০০ দেশ সংবাদ
সকাল ১০:৩০ খেলার সকাল (সরাররি)
দুপুর ২:০০ দেশ সংবাদ
দুপুর ৩:০০ বাংলা ছায়াছবি :
বিকাল ৪:০০ দেশ জনপদ
সন্ধ্যা ৭:০০ দেশ সংবাদ
সন্ধ্যা ৭:৪৫ দেশ টপচার্ট
রাত ৮:১৫ ধারাবাহিক নাটক : অনুভূমি
রাত ৯:০০ সংবাদ
রাত ৯:৪৫ ধারাবাহিক নাটক : যাও পাখি
রাত ১০:৩০ গাজী গ্র“প টোটাল স্পোর্টস (সরাসরি)
রাত ১১:০০ দেশ সংবাদ
রাত ১১:৪৫ টকশো : সোজা কথা (সরাসরি)
রাত ১:০০ দেশ সংবাদ
খবর ছাড়া আর কিছু দেখতে পেলে আপনি ভাগ্যবান বটে। আশাবাদী ছিলাম মাছরাঙা টিভি নিয়ে, কিন্তু তারাও গতানুগতিকতার বাইরে কিছু করতে পারেনি।
আমাদের দর্শকরা বিনোদন চায়। সংবাদ নির্ভর টিভি চ্যানেল করতে চাইলে ভালো কথা, কিন্তু বিনোদন নির্ভর টিভি চ্যানেল না থাকলে কীভাবে চলবে? একজন সাধারণ মানুষ বাংলাতেই টিভি দেখতে চায়। এই ভাষা, এই সমাজ তার পরিচিত। কিন্তু সে বিনোদন চায়। বিগত দিনে যে অল্ক কয়টি বিনোদনধর্মী অনুষ্ঠান হয়েছে, সেগুলো সফল হয়েছে। ক্লোজআপ তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ ব্যাপক হিট হয়েছিল। কিন্তু তারপর প্রত্যেক চ্যানেল আবার শুরু করল সেই একই মাল ফটোকপি করা। তারকাদের তারকা, নির্মান তারকা, টয়লেট তারকা, রুনা লায়লার তারকা, সাবিনা ইয়াসমিনের তারকা, মায় হুমায়ূন আহমেদর আর উনার নবপরীনীতা স্ত্রীর তারকা...একই ফরমেট, একই গান, একই বকর বকর। কাহাতক সহ্য করা যায়?
কিন্তু তবু মানুষ বিনোদনের অপেক্ষা করে। তাঁরা সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরে ঘরে ফিরে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভুরু কুঞ্চিত মুখ দেখতে চায় না প্রতিদিন প্রতি ঘন্টায়। রোজ মাঝরাতে আসিফ নজরুলের চেহারা দেখার জন্য কেউ কষ্টের দশহাজার টাকা খরচ করে টেলিভিশন কিনে না।
বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোকে বুঝতে হবে যে মিডিয়া একটি বানিজ্য, নিজের বউয়ের শাড়ি দেখানোর জায়গা না। সুতরাং বানিজ্যকে বানিজ্যের মতোই করতে হবে। সেক্ষেত্রে তোতাপাখির মতো অন্য চ্যানেলের সফল অনুষ্ঠান কপি করে কোনো লাভ নেই, নিজেদের সৃজনশীলতা দেখাতে হবে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে রোজগার করতে হলে আগে টিআরপি বাড়াতে হবে। আর সেই টিআরপি বাড়ানোর একমাত্র কৌশল হচ্ছে কিছু টাকা পয়সা খরচ করে ভালো মানের অনুষ্ঠান করা।
এর আগে মানুষ কেন বাংলাদেশের টিভি দেখে না, সেটা নিয়ে আমরা হয়তো আফসোস করতে পারি, কিন্তু তাদের কিছু বলা সাজে না। এই আফসোসের মুখে তাদের বরং উচিত হবে ঘোমটায় মুখ লুকিয়ে রাস্তার অন্যপাশ দিয়ে হেঁটে পালিয়ে যাওয়া।
মন্তব্য
****************************************
টিভি দেখাটাই ছেড়ে দিয়েছি। আগে সংবাদ দেখতাম। এখন ওটা দেখতে বসলেও মনে হয়, কোনো পাপের শাস্তি ভোগ করছি। মিডিয়ার এখন সৃজনশীলতা আর পেশাদারিত্ব ধারণ করতে এত অনীহা!
টিভি চ্যানেলগুলোর একে অপরকে কপি করার প্রবণতাটা যেমন খুবই বিরক্তিকর, তেমনই নূতনত্ব আনতে না পারাটাও তাদের বড় ব্যর্থতা। টাকা থাকলেই টিভি চ্যানেল খুলে বসা আর ক্রিয়েটিভিটি দেখানো এক জিনিস নয়। এটা আমাদের টিভির মালিকরা এখনও বুঝে উঠতে পারেন নি। অবস্থাদৃষ্টে এটাও মনে হচ্ছে না যে তাদের সে বোধ অচিরেই জাগবে।
তবে কলকাতার চ্যানেলগুলোও যে খুব ভালো করছে, তা আমার মনে হয় না। কিছু কিছু চ্যানেল দেখতে বসলে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোর থেকেও বেশি বিরক্ত লাগে। তবু্ও কেমন করে বাংলাদেশে তারা এতবড় মার্কেট পেলো, সে এক বিস্ময় বটে!
টুইটার
আমি যেটা দেখলাম, কলকাতায় ঠমক ঠামক ভালো করেছে। কালারফুল এবং ফাস্ট। মীরাক্কেল কিংবা ডান্স বাংলা ডান্সের সেট দেখুন, সেটা কালারফুল। আপনাকে এসব বেসিকে যেতে হবে, যেটি হয়তো সাধারণ দর্শকের চোখে পড়ে না।
ইত্যাদি সফল কেন? আপনি দেখবেন সেটা খুব ফাস্ট, এবং অনেক কালারফুল।
এখন ইত্যাদির জোকগুলো যদি আপনি টকশো আদলে করেন, তাহলে তো দর্শক দেখবে না। আফটার অল এটা শো-বিজ। শো করতে না পারলে খালি বিজের আশা করে লাভ কী?
হ্যা, কলকাতার চ্যানেলগুলো রিদমটা ধরে রাখতে জানে। ঝিমিয়ে যায় না। ঠিক একই বিষয়টা ইত্যাদি এবং পরে শুভেচ্ছায় ছিল। কিন্তু তেমন অনুষ্ঠান এখন আর নেই। তবে আমার অভিমত, মান উন্নয়নের জন্যে যদি ফলো করতেই হয়, তবে বিবিসি বা স্কাই-কে ফলো করা উচিত।
আরেকটা বিষয় চ্যানেলগুলোর মাথায় রাখা উচিত। সেটা হলো নাটকের মান। একটা ক্যামেরা এবং কিছু আর্টিস্ট হলেই এখন নাটক বানানো যায়। স্ক্রিপ্ট লাগে না, অভিনয় জানা লাগে না! এই কনসেপ্টটা আমাদের নাটকের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে। বৈচিত্রের জন্যে একটা দুটো এমন নাটক হতে পারে। কিন্তু সব নাটকই এমন হলে নাটক বলে আর কিছু থাকে না।
টুইটার
কোলকাতার সিরিয়ালগুলি যথেষ্ট বিরক্তিকর হলেও, একটা বড় ব্যাপার যে ওদের দুইটা নাটকের মধ্যে কোনো বিজ্ঞাপন নাই। আমি প্রথমে দেখে বুঝতে পারি নাই যে নতুন একটা নাটক শুরু হয়ে গেছে। যেখানে থাকে সেইটাও বাংলাদেশি চ্যানেল এর তুলনায় অনেক কম। দেশি চ্যানেল এর একটা নাটক দেখতে বসে বিজ্ঞাপন বিরতিতে সব চ্যানেল ২ বার ঘুরে এসেও বিজ্ঞাপনই দেখতে পাই। তখন টিভি দেখার ইচ্ছাটাই চলে যায়।
এটা একটা বড় সমস্যা তো বটেই।
একেবারে যথার্থ যুক্তি..................ভাল লেখা...।
বিবিসির প্রোগ্রামগুলো দেখলে টের পাওয়া যায়, টিভি প্রোগ্রামের উৎকর্ষ কতদূর যেতে পারে। এরাও প্রোপাগাণ্ডা ছড়ায়, কিন্তু তার উপস্থাপন এত আকর্ষণীয় যে দর্শক মুগ্ধ হতে বাধ্য। আমাদের দেশে বিবিসি ওয়ার্ল্ডের একঘেয়ে খবর দেখায় শুধু, বিবিসি ওয়ান টু থ্রি ফোর এইচডি এসব কিছুই আসে না।
খবর, নাটক, টক শো, তারকা শো আর বিজ্ঞাপন, এই পাঁচটা পদ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারছে না টিভিগুলো। তারা আদৌ দিতে চায়, সেটাও মনে হয় না। অথচ কমসে কম এক ডজন নতুন প্রোগ্রামের পদ বানিয়ে পরিবেশন করা কোনো ব্যাপার না। নমুনা আইডিয়া দিতে পারতাম, দিলাম না।
এদের নমুনা আইডিয়া দিয়ে আসলেই লাভ হবে কি না আমার সন্দেহ। ইউকে তে কোন একটা চ্যানেলে দেখলাম, নাথিং টু ডিক্লেয়ার। কাস্টমসের সামনে ক্যামেরা ধরা, যেসব লোক আসছে, তাদের কথাবার্তা, তাদের ব্যাগেজ চেকিং। আরেকটা বোধহয় বিবিসিতেই দেখলাম- এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন নিয়ে। যারা আসে তাদের নিয়ে অনুষ্ঠান, ভিসা দেয়া হবে কি হবে না, ঐ লোকের চিৎকার চেচামেচি, স্পনসরের টেলিফোন..সহজ বিষয়েও টান টান উত্তেজনা।
আমাদের এখানে যদি বলেন ফার্মগেটে ক্যামেরা নিয়ে একটা প্রোগ্রাম করেন, তো পরের দিন সবগুলো টিভি চ্যানেল ফার্মগেট টু গুলিস্তানে ক্যামেরা লাগিয়ে জ্যাম বাধাবে।
মানসম্পন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্ভব আমাদের দেশের মানুষদের ভারতীয় চ্যানেল বিমুখ করে নিজ দেশের চ্যানেলমুখী করে তোলা।
শুধু ফাঁকাবুলি আউড়িয়ে কোন লাভ হবে নাহ
ঠিকই তো, মানুষ বিনোদন চায়। আর বাংলাদেশীরা বাংলাদেশের বিনোদন মূলক অনুষ্ঠান দেখতে চায়।
জোর করে তো আর খবর আর বস্তা পঁচা নাটক দর্শকদের দেখানো যায় না ... দর্শক ধরে রাখতে হলে ভালো অনুষ্ঠান করতে হয়, নকল - বস্তা পঁচা অনুষ্ঠান নয়।
একমত। প্রচলিত ধারার বাইরে একদমই আসতে পারছে না কোনো বাংলাদেশী চ্যানেল। নাটকের কথাই ধরুন, দুএকটা ধারাবাহিক নাটক বাদে এখন বাকিগুলো অখাদ্য। নির্মাতারা এখন ধারাবাহিক নাটক তৈরী বাদ দিয়ে বিজ্ঞাপন, দুই ঈদের নাটক আর চলচ্চিত্র নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। ফারুকী, রেদওয়ান রনি, ফাহমিদের নাটকগুলো কিছুটা দর্শক টানতে পারলেও সেগুলোতে শুদ্ধভাষার মম্মি কি ড্যাডি হয়ে গিয়েছে। টকশো নামক ঘুম্পাড়ানি সবকটা চ্যানেলেই কমবেশি প্রচারিত হয়, তাও আবার একই দিনে তা পুনঃপ্রচারও করা হয়। বিটিভির একটা নির্দিষ্ট সময়ের খবর অন্য সব বেসরকারী চ্যানেলগুলোয় দেখানো বাধ্যতামূলক, কোনো দরকার আছে এর?
দেশী টিভি , ভারতীয় টিভি চ্যানেলের অত্যাচারে এখন তাই
মাঝে মধ্যে মন চাইলে জিওগ্রাফি নাইলে এনিমেল প্লানেট দেখি । কিন্তু যাদের জীবনে নাকি আর কোন আশা ভরষা নাই , তারাই ঐসব চ্যানেল দেখে বলে শুনেছি।
আমারো জীবনের মনে হয় আশা ভরষা সব শেষ ।
ভালো বলসেন।
একেবারেই যে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যাবে...তা কিন্তু নয়।
আমাদের দেশের টিভি মিডিয়ার বয়স কত? পেশাদারিত্ব সব জায়গায় আসছে না, কিন্তু কিছু কিছু পরিবর্তন হচ্ছে.....২৪ ঘন্টার সংবাদ চ্যানেল হচ্ছে.......বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় পড়ে ছেলে-মেয়েরা আসছে........জীবিকা হচ্ছে......আমাদের মার্কেটটাও দেখতে হবে...বাজেট কম..তার মধ্যেও অনেকে ভালো করার চেষ্টা করছে।
এতটা হতাশ হতে পারছি না.........তবে সময় লাগবে, এটা ঠিক।
আমাদের দেশের বেসরকারি টিভি মিডিয়ার বয়েস কমপক্ষে ১৩ বছর। আমরা এখানে নতুন করে চাকা আবিস্কার করতে যাচ্ছি না। অল্প বাজেটেও অনেক আকর্ষনীয় অনুষ্ঠান করা সম্ভব, কঠিন মনে হলে তারা টরেন্ট থেকে কিছু প্রোগ্রাম নামিয়ে দেখে ফেলতে পারে বিদেশে কী হচ্ছে।
তবে সবার আগে এই ঘন্টায় ঘন্টায় মির্জা ফখরুল আর হানিফের বদন দেখানো, তারপর সেই বদন নিয়ে মতি চৌধুরী-আসিফ নজরুলদের নিত্য ত্যানা পেচানো বন্ধ করতে হবে।
আইডিয়ার বাজারে আকাল। যারা যে লাইনে থাকার কথা, তারাতো নেই। ( এই যেমন, আরিফ জেবতিকদের বাসায় টিভিই নেই। ) সঠিক সমালোচনার জায়গাটা তাই তৈরী হচ্ছে না)
আমাদের দেশে টিভি মিডিয়ার বয়স আটচল্লিশ বছর হতে যাচ্ছে এই বছরে। কত বছর হলে টিভি মিডিয়া থেকে বালছাল সরে যাবে বলে আপনি মনে করেন?
বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রডিউসাররা এখনো দুদু খায় নাকি?? এতই যদি টাকার অভাব তাইলে বিটিভির পুরানো অনুষ্ঠানগুলা দেখলেও তো হয়। আমি ১৯৮৭-৮৮ থেকে বিটিভ দেখা শুরু করসি। ওইরকম মানের নাটক, বিচিত্রানুষ্ঠান এখনকার জী-বাংলাতেও হয়না।
ছোটবেলায় একটা ইংরেজী সিরিয়াল দেখতাম,home improvement। সিরিয়াল টা ১৯৯১ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত চলেছিল। পুরোটাই কিন্তু স্টেজে শুটিং করা। কোন আউটডোর নেই, এবং মোটামুটি একটা ঘরেই সব কাহিনি হত(ব্যতিক্রম খুব কম।)। সে বাজেট ও নেই বলতে চাচ্ছেন? আর বাজেট না থাকলে বলিউড এর নায়ক-নায়িকা নিয়ে অনুষ্ঠা্ন করার টাকা আসে কোথা থেকে? বিপিএল এর উদ্বোধন এ শান আর বাপ্পী লাহিড়ি কে দিয়ে বেসুরো গান গাওয়ানোর বাজেট থাকে,আর একটা ভালো গান এর অনুষ্ঠা্ন এর বাজেট থাকে না?
আমার কাছে ব্যতিক্রম মনে হয় - মাই টিভি।
বাংলা সিনেমার গান, বাংলা সিনেমা, ছোট্ট স্টেজের ওপর ক্লোজ শর্টে উঠতি তারুন্যের ঝাক্কানাক্কা নাচ; সব মিলিয়ে বিনোদন। খুল্লেই দেখি প্রায়ই প্রয়াত মান্না ভাই শাদা সার্ট, প্যান্ট, শাদা জুতা পরে চিৎকার - আমি তোকে খুন করবো বা আই লাভিয়ূ। একটা বিশেষ গ্রুপকে টার্গেট অডিয়েন্স ধরলে, মাই টিভির প্রোগ্রামগুলা যথার্থ; অনেকটা ইসলামিক টিভি'র মতো।
গ্রুপ ওয়াইজ এই মার্কেট সেগমেন্ট ঠিকই আছে। তবে তারা কতটুকু সচেতনভাবে করেছে, কে জানে।
আপনি কি জানেন,
মাই টিভির চেয়ারম্যানের একটা সেডান কার আছে। সেই কারের ডানপাশে উনি বসেন, বা পাশে উনার স্ত্রী বসেন। তারা গত কোরবানির ঈদে ০৪ নম্বর কেবিনে ( লঞ্চের নাম মনে নেই বলে সরি আছি) করে বরিশালে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গেছেন। এসময় মাইটিভির চেয়ারম্যানের দুই সন্তান তাদের সঙ্গী হয়েছে। এই শিশুদের একজন একটি টেডি বিয়ার হাতে নিয়ে জানায় যে ঈদে বাড়ি যেতে তার খুব ভালো লাগে। চেয়ারম্যানের স্ত্রী জানান যে এবার ঈদে তিনি নিজের জন্য কোনো কাপড় কিনেন নি,কিন্তু গ্রামের আত্মীয় স্বজনের জন্য কিনেছেন। চেয়ারম্যান সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন যে গ্রামের সাধারণ জনগনই তার আত্মীয়, তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি ঈদ করতে বাড়ি যাবেন। তিনি কয়টি গরু ও খাসি কিনবেন সেটা বলেছেন কি না স্মরণ করতে পারছি না।
এই পুরো কাহিনী প্রাইম টাইমে মাইটিভির নিউজে প্রকাশ করেছে বলে জাতি জানতে পেরেছে।
আমাদের দেশে এমন সব মূর্খের হাতে কিছু টিভি চ্যানেল, এরা কোনটা বাড়ির ভিসিআরে দেখানো যায় আর কোনটা চ্যানেলে দেখানো যায়, এটাই জানে না।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
খুবই যৌক্তিক লেখা। মানুষ টেলিভিশন থেকে সর্বপ্রথম বিনোদন চায়। ঘন্টায় ঘন্টায় খবর, আওয়ামী-বিএনপি প্যাচপ্যাচানি, আর হাতি-ঘোড়া মারা টক-শো'র ভিড়ে বিনোদনধর্মী অনুষ্ঠান না পেলে কাউকে জোর করে দেশীয় চ্যানেল দেখতে বসিয়ে রাখা যাবে না। সে বিনোদনের খোঁজে ভারতীয় চ্যানেলে মুভ করবে। দেশীয় চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান এবং অনুষ্ঠানসূচীর মানোন্নয়ন না হলে ভারতীয় চ্যানেল বর্জনের ডাক কেবল ফেসবুকের ইভেন্ট হয়ে থাকবে, বাস্তবিক ফলাফল পাওয়া যাবে খুবই কম।
হেহে খবরের মাঝে মাঝে পাঞ্চ করে নাটক?? আমার মনে হয় কথাটা ঠিক না। আসলে এ্যাডের মাঝে মাঝে সবকিছু পাঞ্চ করা। এ্যাড আর খবর এই দুইটা জিনিস সারাদিন ধইরা রিপিট করা যায়, এগো ঠেলায় নাটক খাডের তলে গিয়া লুকাইসে।
কে যে কার মাঝে পাঞ্চ করা সেটা নিয়ে তর্ক বৃথা। সবই মুরগি, সবই ডিম; দুটোই পরষ্পরের আগে এসেছে। সব মিলিয়ে এজন্যই জগাখিচুড়ি হচ্ছে।
দেশের চ্যানেল দেখবো বলে চ্যানেল আই এর কানেকশন নেয়া হয়েছিল আমাদের বাসায়, সারাক্ষনঈ খবর নইলে এড এর জ্বালায় ওই চ্যানেল আর দেখা হয়ে উঠতোনা। দেশে নিজেদের বাসায় ও দেখলাম আমার মায়ের রুচি পরিবর্তিত হয়ে জি-বাংলার দিকে চলে গেছে এড এর যন্ত্রনায়।তবে বাবাকে দেখতাম ঘন্টায় ঘন্টায় খবর না দেখলে উনার চলে না, আর পারলে সব চ্যানেলের খবর দেখবেন যদি কিছু বাদ পড়ে যায় এই জন্যে।
আপনার লিখাটা মারাত্তক হয়েছে ভাইয়া।পুরাই সহমত আপনার বিশ্লেষনধর্মী লেখার সাথে।
ভাল লিখছেন ভাই । আমি মাঝে মাঝে টিভিতে বাংলা চ্যানাল দেখতে বসি । কিন্তু বাধ্য হইয়া একটু পরে HBO, Star Movies ই দেখতে হয় ।
মোক্ষম! প্রভুখণ্ড!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
দারুণ বলেছেন।
পোস্টের সব পয়েন্টের সাথে সহমত।
যখন একুশে টিভি প্রথম সম্প্রচার শুরু করলো তখন আমি ওদের নিউজ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকতাম। কারণ, সংবাদ পাঠ, উপস্থাপনা সবই এতই আকর্ষনীয় ছিলো যে দেখে কখনোই বিরক্তি আসত না। বরং সংবাদটাকেই একটা বিনোদন মনে হত। আর এখন এত চ্যানেল, এত সংবাদ যে মনে হলে আতংকিত হই।
------ঠিকই বলেছেন। কিন্তু নাটক যদি মানসম্মত হতো তাও ভালো লাগতো। আজকাল অন্যান্য বিষয়ের মত বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে নাটক নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। কোন চ্যানেল কত বিখ্যাত লেখকের উপন্যাস নির্বাচন করতে পারছে তার অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
উপন্যাস থেকে নাটক নির্মাণে আমার আপত্তির কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মূল কাহিনীতে পরিবর্তন আনা হয় নাটকীয়তা তৈরির জন্য। এতে উপন্যাসের নিজ্বস্বতা নষ্ট হচ্ছে। তার পাশাপাশি রয়েছে পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে অসংগতি। যেমন, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস মানবজমিন অবলম্বনে ফালু সাহাবের টিভি চ্যানেল যে নাটকটি প্রচার করল সেখানে নাটকের নির্মাতা দ্বীপনাথের মত একটি ম্যাচিউরড চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নির্বাচন করলেন অপুর্বর মত রোমান্টিক হিরোকে, যাকে সুড়সুড়ি ধরনের প্রেমের নাটকেই বেশি দেখা যায়।
দীপাবলি।
কোয়ান্টিটি এখন কোয়ালিটিকে খেয়ে দিচ্ছে।
আপনার সাথে একমত পোষণ করেই বলছি, বাংলাদেশী টিভি চ্যানেলগুলির প্রতি বিমুখতার আরেকটি কারন সম্ভবত বিজ্ঞাপনের আধিক্য।
এ নিয়ে নিচে হিমুর মন্তব্যের সঙ্গে কিছু যোগ করব, দেখে নিয়েন।
সুপার্ব। অসাধারণ লাগলো।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আমি বিজ্ঞাপনের বিপক্ষে নই, বরং আগ্রহ করে দেখি, ২০/৩০ সেকেন্ডের একটা বিজ্ঞাপন মানুষকে পণ্য কিনতে বা কিছু নিয়ে ভাবতে বলে। ভালো বিজ্ঞাপন তৈরি করার জন্য অনেক মেধা, শ্রম এবং ব্যবস্থাপনা প্রোয়োজন। কিন্তু আমি মনে করি টিভি চ্যানেলগুলোও এখন সিনেমা ওয়ালাদের মত- বাস্তব বর্জিত। যে চ্যানেলেই যাই, প্রধান সমস্যা প্রেম। যেমন আমাদের প্রধান শত্রু গাড়ি, কিছু হলেই ভাঙ্গা শুরু করি। চ্যানেলগুলোর ও দেখি একই অবস্থা। প্রেম ছাড়া পৃথিবী, নুন্যতম বাংলাদেশে কিছু নাই। ইদানিং আবার যোগ হয়েছে, সম্পূর্ন বিদেশে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়া) শুটিং কৃত। সচলেই একজন লিখেছিলেন, "বাঙ্গালীর নোবেলের প্রতি হ্যাংলামি" তেমনি "বিদেশি লোকেশন" মানুশ তো আবার শুটিং এর কাহিনী বই আকারে লিখে বিক্রি করে।
লেখকের সাথে সহমত। চমৎকার লেখা। কিন্তু যাদের জন্য লেখা তাদের ঘুম যে কখন ভাঙ্গবে
তাদের ঘুম ভাঙ্গছে না বলেই তো লেখার অবতারণা। কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গতে একটু সময় লাগতেই পারে।
প্রভুখন্ডই বটে
..................................................................
#Banshibir.
দেশী রান্না-শোগুলোর মান দেখেছেন?...জবরজং শাড়ী, গয়না, খোঁপায় বিকট ফুলের মালা জড়িয়ে দুই তিনটা কুৎসিত মোটা মহিলা আসেন রান্না করতে। কি বলে, কি করে...আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনা। মুখে নাই তাদের কোনো হাসি। রোবটিক !
এসব কুকিং শোর হোস্টগুলোকে দুই একটা আমেরিকান রান্নার অনুষ্ঠান দেখানো উচিত। রান্না-বান্নার হাল্কা, চটুল অনুষ্ঠানও কি চমৎকার এ্যাপিলিং আর উত্তেজনাময় হতে পারে, এদের এ ব্যাপারে আইডিয়া হওয়াটা খুবই জরুরী।
আপনার লেখায় আর অব্জারভেশানে পাচঁতারা।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
'কুৎসিত মোটা মহিলা' দের কি ভাই রান্নার অনুষ্ঠানে ভাত নাই নাকি কোথাও ই ভাত নাই? আমেরিকান রান্নার অনুষ্ঠানেও তো মোটা মহিলাদের রান্না করতে দেখা যায়। দেখতে 'কুৎসিত' কিনা সেটা অবশ্য বিবেচনা করা হয় নাই। আসল ব্যাপার অনুষ্ঠানটাকে প্রাণবন্ত করা, সেটা নিজগুণে সুন্দর কুৎসিত মোটা চিকন যে কেউই করতে পারে
শারমিন লাকী ও একটা রান্নার অনুষ্ঠান করে/করতো। আশা করি উনাকেও মোটা কুৎসিত এর দলে ফেলে দেন নাই
চমৎকার উত্তর।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
চমৎকার
খবর দেখা একটা অত্যাচারের মতো। রীতিমতো আতঙ্কে থাকতে হয় কখন কি দেখিয়ে ফেলে। একজনকে কুপিয়ে মারা হয়েছে তার লাশ থেকে শুরু করে রোড এক্সিডেন্ট করে মরে পড়ে আছে এইসব পর্যন্ত ক্যামেরা জুমইন করে দেখিয়ে দেয়। এইটা কি অন্য চ্যানেলের সাথে অসুস্থ একটা প্রতিযোগিতা করার জন্য কিনা জানিনা।
অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং সংবাদ মান নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তা ভাবনা না থাকা, পড়াশোনার অভাব, প্রশিক্ষনহীনতা- সব মিলিয়েই।
দুর্দান্ত একটা লেখা!
হাসপাতালগুলোতেও তাঁদের এক দল থাকেন। কয়দিন আগে ঢাকা মেডিকেলে টিভি চ্যানেলের লোকজনের সাথে গন্ডগোল হয়েছিলো শুনেছেন, এক বাবা-ছেলেকে হাইজ্যাকার গুলি করার পরে? টিভির লোক ক্যামেরাট্যামেরাসহ অপারেশান থিয়েটারে ঢুকে পড়ে গুলিবিদ্ধ লোকের কাছে ঘটনার বর্ণণা জানতে চায়! আমি যেইখানে কাজ করি সেইখানেও প্রায়ই হয় এইরকম। মাসতিনেক আগেও আমার সাথে ঝামেলা হইলো এক চ্যানেলের লোকের সাথে! উ্নি অপারেশান থিয়েটারে তো ঢুকবেনই, ওনাকে পারলে মনে হয় অপারেশানটাও করতেও দেয়া হোক, সেইরকম ওনার দাবী, কারণ উনি সাংবাদিক!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
ওদের উপরে ওদের ওষুধ প্রয়োগ করবেন। একটা হ্যাণ্ডিক্যাম সাথে রাখতে হবে, সাংবাদিক পরিচয়ে ছাগলামি বলদামি করতে আসলেই খাড়ার উপর রেকর্ড করে ইউটিউবে তুলে দিবেন।
ভাইরে, এই প্ল্যান যে মাথায় আসে নাই তা না। কিন্তু সরকারী হাসপাতালের এমারজেন্সি ওটির অবস্থা তো বুঝেনই- রোগী-রোগীর আত্মীয়- কান্নাকাটি সবমিলিয়ে দক্ষযজ্ঞ হইতে থাকে চারপাশে। এরপরে ধরেন দালাল-সন্ত্রাসী-পুলিশ-ছাত্রলীগ এদের বহুমাত্রিক গিয়ানজাম ঠেকানো তো আছেই। এর সাথে সাংবাদিকরাও হুটোপাটি শুরু করলে ওদের পেছনেও সময় দেয়া মুশকিল।
তবে আমিও ওঁৎ পেতে থাকবো একদিন, অবশ্যই!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
এইরকম কেসে এদের ঠাডায়ে একটা চড় দিয়ে ক্যামেরা মুখের সামনে ধরে বলা দরকার, ভাই আপনার অনুভূতিটা একটু জানাবেন?
কিন্তু আমাদের এই জি-বাংলামুখিতার কারণ কি ? কেন কাহানি ঘর ঘর কি ? ওদের নাট্যনির্মাণের অভিনবত্ব? অত্যুচ্চমান? কখনোই নয়। থোর বড়ি খাড়ার বাইরে এদের অনুষ্ঠান কয়টি সেটা একটা সংগত প্রশ্ন।
তারপরেও এরা দর্শক টানছে কিভাবে?
এক মন্তব্যে আপনি 'ফাস্ট এন্ড কালারফুল' শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন। ঠিকাছে, অনেক বেশি জেনারালাইজেশন হয়ে যায় যদিও। কিন্তু একটা ব্যাপার কি প্রচ্ছন্নভাবে আমরা স্বীকার করে নিচ্ছিনা যে, আমাদের দর্শক ধরে রাখার জন্য নতুন ঘরানার, নতুন আইডিয়ার, নতুন আইটেমওলা অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই; আমাদের দরকার হয়ে পড়েছে আরও এক ডজন গুলশান এভিনিউ-এর?
না, গুলশান এভিনিউ এর প্রয়োজন নেই। সকাল সন্ধ্যা, এইসব দিনরাত্রি কিংবা কোথাও কেউ নেই, অয়োময়। এগুলো হুমায়ূন আহমেদের। মিলনের 'বারো রকম মানুষ' কিংবা আনিসুল হকের প্রথমদিকের কয়েকটি, সালাউদ্দিন লাভলুর একটি সিরিজ খুব সফল হলো-নানা রঙের মানুষ।
কালারফুল বলতে কড়া মেকাপ নিয়ে সকালের মুখ ধোয়ার দৃশ্য নয়, আর ফাস্ট মানে গুলশান এভিনিউ এর ইলাস্টিক টানা ঘটনা নয়। ফাস্ট মানে কাহিনীর গতিশীলতা, আর কালারফুল মানে জীবনপূর্ণ। এবং অবশ্যই বিপনন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সোপ অপেরা সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন চালানো উচিত, কিন্তু এখানে সপ্তাহে না পক্ষে যেন ১৮ মিনিট চালায়। মানুষ মনে রাখতে পারে না।
একমত
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
আমি দুপাশের কোনো চ্যানেলই প্রায় দেখিনা। আমার দেখার বিষয় দুটো - বিজ্ঞান - যেটা আসে বিবিসি/ডিসকভারি/পিবিএস থেকে, আরেকটা হল খেলা - যেটা আসে ই-এস-পি-এন বা অন্যান্য স্পোর্টস চ্যানেল থেকে।
আমার বৌ আগে বাংলাদেশের বাংলা সিরিয়াল দেখত, পরে ধীরে ধীরে জি বাংলা থেকে এখন হিন্দিতে চলে গেছে। সিরিয়াল-গুলোতে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে। বিভিন্ন চরিত্রের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে ফোরামে তুমুল আলোচনা হয়। তাদের ফ্যাশন নিয়ে দোকানে বললে সেইমত জামাকাপড় পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে একটা ইকোসিস্টেম। গতকাল এপেলের কোয়ার্টারলি রেজাল্ট দেখার পরে আমার বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়েছে যে ভোক্তা মনে হয় ইকোসিস্টেম বেশী পছন্দ করে।
লেখার মূল বক্তব্যের সাথে আমি সহমত। আমার পছন্দ যাই হোক না কেন, যদি আমি দর্শকদের জন্য কিছু বানাই - তাতে দ্দর্শকেরা দেখবে এমন কিছুই বানানোর চেষ্টা করব।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
খুব ভাল পর্যবেক্ষণ। আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোর বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিবেচনায় গড়ে তোলা। তাছাড়া আমাদের দেশে মিডিয়ার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে এখনও প্রাধান্য দিয়ে নিয়োগ দেয়া হয় না, বিশেষ করে উচ্চ পদে। তা না হলে মিডিয়ার কনটেন্ট নির্ধারণে এ ধরণের অনুকরণপ্রিয়তা দেখা যেত না।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
_____________________
Give Her Freedom!
নতুন জ্বালা শুরু হইছে সবকিছুতে আমেরিকান আইডল আমদানী করা। টিভি ক্যামেরার সামনে প্রতিযোগীদের ধমকাধমকি করা যে বিনোদন না এইটা এদের বুঝানো গেলে ভালো হইতো
ক্রিয়েটিভ, মেধাবী লোকদের এগিয়ে আসা উচিত এবং তাদের যথাযথ মূল্যয়ন করা দরকার!
বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী রোবটদের প্রশিক্ষন দিয়ে মানুষ বানানো দরকার
নতুন আইডিয়া দরকার
পরিবেশনায় নতুনত্ব আনা দরকার
বিজ্ঞাপনের পরিমান কমানো দরকার !
আর সাথে দরকার দর্শকদের সাপোর্ট
আমি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বলছি । আমাদের এখানে শিলিগুড়িতে আমরা কেবল অপারেটরদের বারবার বলে একটা বাংলাদেশের চ্যানেল দেখার ব্যবস্থা করতে পেরেছি । বৈশাখী টিভি । আশা ছিল ছোটবেলায় দেখা উৎকর্ষ মানের নাটকগুলোর মত উৎকর্ষ কিছু দেখতে পাব । কিন্তু সত্যি বলছি হতাশ হয়েছি । মাঝে মধ্যে হঠাৎ কিছু ভাল নাটক দেখতে পেয়েছি । কিন্তু একটা ভাল নাটকের আশায় যদি দশ বারোদিন বাজে নাটক গিলতে হয় তবে কি আর ধৈর্য থাকে ? আর তার ওপর আছে আরেক জ্বালা । টিভি খুললেই কখন কি অনুষ্ঠান হবে তার 'লম্বা ঝলক' ।
এখন টিভি তে অনেক অনেক চ্যানেল । মানে প্রতিটা চ্যানেলকে বাকিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে । তার জন্যে চাই পেশাদারিত্ব । আর সেখানে কোনরকম আপোশ চলতে পারেনা । আমাদের বাংলা চ্যানেলগুলোও যে খুব ভালো মানের তা নয়, তবে তাদের মধ্যে যাদের টি,আর,পি ভাল তাদের ঐ দেখন্দারিটা আছে । মানে ঝকঝকে-চকচকে আরকি । এখানে এখনও ভাল নাটক বা টেলিফিল্ম এর যথেষ্ট অভাব আছে । সেই জায়গাটা কিন্তু বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো নিতেই পারে। তবে হ্যাঁ দরকার সঠিক মান, বিপনন ।
আপনার লেখা ও এখানকার মন্তব্যগুলো পড়ে আপনাদের ওখানকার ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পারলাম । আপনারা সবাই যে চিন্তা-ভাবনাটা করছেন সেটা খুবই ভালো । এটাকে আরও ছড়িয়ে দিন । বাংলাদেশে ভারতের চ্যানেল চলবে কিনা সে ব্যাপারে বলার আমি কেউ নই । তবে সুস্থ প্রতিযোগিতা সকলেরই মানোয়ন্নন ঘটাতে পারে । যেমন আমাদের এখানেও কিন্তু হিন্দী চ্যানেলগুলোর দাপটে একসময় বাংলা চ্যানেল কেউ দেখতই না । কিন্তু পেশাদারিত্ব আর চেষ্টার জোড়ে এখন আবার তারা একটু একটু করে জায়গা করে নিচ্ছে । অন্তত পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের চ্যানেল চালানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের চাপ সৃষ্টি করা উচিৎ । ধরা যাক সেটা হয়েও গেল । এখানে মানুষের মনে বাংলাদেশের চ্যানেল দেখার ইচ্ছা আছে । তারা দেখতেও বসল । কিন্তু তারপর ?
যদি সঠিক মানোয়ন্ননের মাধ্যমে ও উদ্ভাবন শক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো এখানে এসে পৌঁছায় তবে আমাদের বাংলা চ্যানেলঅগুলোও নড়েচড়ে বস্তে বাধ্য হবে । তাদের মনোপলি আর থাকবে না । প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে দুদেশের চ্যানেলকেই আরো ভালো কিছু করার জন্যে লড়তে হবে । আর তাতে কার লাভ ? অবশ্যই দুদেশের সাধারণ মানুষের । হয়তো বাংলাতেও একদিন ডিসকভারির মতো চ্যানেলের জন্ম হবে । গোটা বিশ্বের না হলেও দুই বাংলার কোনে কোনে যেসকল 'ডিসকভার' করার মতো উপাদান আছে তার স্বাদ পাব আমরা । বাঙালী হিসেবে আমি তো চাইব হিন্দী-ইংরেজী চ্যানেলগুলোকে সরিয়ে দিয়ে বাংলা ভাষার উন্নত মানের চ্যানেল বাজার দখল করে নিক । সেটা যে দেশেরই হোক না কেন ।
আপনার প্রতি এবং এখানে যাঁরা মন্তব্য করেছেন সবার প্রতি আমার শুভকামনা থাকল ।
আপনারা ভালো থাকবেন ।
এত বিনোদনের আদৌ দরকার আছে কিনা সেটা ভেবে দেখা দরকার। অতি বিনোদন চিন্তাশীলতাকে পক্ষাঘাতগ্রস্থ করে। আর চিন্তাহীনতা পুঁজিবাদের অব্যর্থ মারণাস্ত্র। মানুষকে বিনোদনে মুড়ে চিন্তাহীণ সাবহিউম্যানে পরিণত করতে পারলে তারা নির্বিবাদে কনজিউমারিজমের চরকা ঘুরিয়ে চলবে নিরন্তর। আপনি সুপারফিশিয়াল দিকটা নিয়ে আলোকপাত করেছেন মাত্র। কিন্তু এর যে আরো গভীর ডাইনামিক্স আছে সেটা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন অনুভব করেননি। অধিকতর বিনোদনের বিষে বিষক্ষয় হবে কিনা ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো। আমার তো মনে হয় আপনার পরামর্শ মানলে বিষক্রিয়ার মাত্রাটাই কেবল বাড়বে। ইন্টারভেনশনের ক্ষেত্রটা মনে হয় আরো গভীরে। মানুষকে নীতিহীন ভোগবাদিতার গহ্বর থেকে টেনে তুলতে হবে।
আমাদের দেশে টিআরপি'র কোন সঠিক হিসাব কি আছে? আমার তো মনে টিআরপি'র সঠিক হিসাব দিতে পারলে মানসম্পন্ন অনুষ্ঠানেরই জয়জয়কার হবে।
সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে গেছে ..
খুব ভাল লাগল লেখাটা। নতুন করে বলার কিছু নেই। দুঃখে টিভি দেখা ছেড়ে দিয়েছি। দেখলেও ঐ HBO, star movies, AXN. বাচ্চাদের জন্য কোন ভাল অনুষ্ঠান আমরা বানাই না। সিসিমপুর অবশ্য বেশ ভাল একটা অনুষ্ঠান, বিটিভিতে দেখায়। অন্যান্য জনপ্রিয় কার্টুনগুলো বাংলায় ডাবিং করে দেখানো যেতে পারে।
শিক্ষামূলক ভাল কোন অনুষ্ঠান নেই। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিবিষয়ক, শিল্প সাহিত্য বিষয়ক তেমন ভাল অনুষ্ঠান কই। খালি ফ্যাশন নিয়ে প্রোগ্রাম! রান্না নিয়ে অনুষ্ঠান ভাল লাগে না তা নয়। তবে অতিরিক্ত কোন কিছু কি ভাল লাগে? সব চ্যানেলে একাধিক রান্নার অনুষ্ঠান! একই ঢং-এ।
ডাবিং এর আইডিয়াটা খুব একটা ভাল বলে মনে হয় না।
মাঠ পরিদর্শনের জন্যে নিয়ে যেতে চাইলে এরা পয়সা চায়। পয়সা ছাড়া এক পা'ও নড়ে না।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
উপস্থাপনা জেমনি হোক, বিষয়টি অতীব সত্য তাতে কোনো সংশয় নাই । তবে আমার একটা কথা মানে হয় যে, সচেতন দর্শক-জনতা কি কি ভাল অনুষ্ঠান দেখতে চায় তা নিয়ে এক্তা জরিপ চালাতে পারে, নতুন ধরনের অনুষ্ঠানের আইডিয়া নিয়ে পুরস্কার ঘোষণা ভিত্তিক চেষ্টা টিভি চ্যানেল গুলোকে সাহায্য করতে পারে এই রকম অবস্থা থেকে উত্তরনে । সর্বোপরি এক্তা টিভি চ্যানেলের চরিত্রায়ান (characterization) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । এটা লাইসেন্সিং অথরিটি শুধুমাত্র তাদের নীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এটাতে দর্শকদেরও একটা বড় ভূমিকা আছে। তবে প্রতিযোগিতার জন্য যতটা অংশগ্রহণকারীর প্রয়োজন ছিল তা মনে হয় পর্যাপ্ত হয়েছে। এখন প্রয়োজন সরকার ও জনগনের যৌথ প্রচেষ্টায় টিভি চ্যানেল্গুলোর প্রয়োজনীয় পরিবরতন আনতে বাধ্য করা আর যার যার অবস্থানে থেকে এই প্রক্রিয়াকে সহায়তা করা । এইসবের পাশাপাশি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সব অনুষ্ঠানে এই দেশ ও মাটির - ভাষা ও সংস্কৃতির স্পস্ট প্রতিফলন রাখা ।
আমাদের দেশে টিভি বিজ্ঞাপনের বাজার তো অনেক ছোটো। ডজন ডজন চ্যানেল হয়ে এই বিজ্ঞাপনের বাজারে ভাগ বসাতে গিয়ে বিজ্ঞাপনের দর কমিয়ে দিয়েছে। ফলে চ্যানেলগুলির বৈধ আয় ঠিক রাখার জন্য বেশি বিজ্ঞাপন দেখাতে হয়। একই সাথে তারা উৎকৃষ্ট প্রোগ্রাম কিনেও দেখাতে পারে না। ফলে হাগামুতামার্কা প্রেমের নাটক সস্তায় কিনে দেখায়। টক শো কেন এত বেশি চলে? কারণ টক শো দিয়ে কয়েক হাজার টাকার মধ্যে একটা এক ঘন্টার প্রোগ্রাম করে ফেলা যায়। টক শোতে স্বমুখপ্রদর্শনকাম চরিতার্থ করতে বেয়াকুল লোকজনকে পেলে সেই টাকাও খরচ হয় না।
টিভিগুলো যদি একত্র হয়ে নাটক সিন্ডিকেশন করতে পারতো, তাহলে নাটকের পেছনে তারা বাজেট বাড়াতে পারতো, এবং বেশি বাজেট পেলে ভালো নাটকও তৈরি করতে উৎসাহিত হতেন ভালো নির্মাতারা। এখন যে নাটক দুই লক্ষ টাকায় এক চ্যানেলের কাছে বিক্রি হচ্ছে, সেটা যদি দশ লক্ষ টাকায় কোনো সিন্ডিকেশন এজেন্সির কাছে বিক্রি হতো, তারপর দুই ডজন চ্যানেলে সারা বছর ঘুরে ফিরে প্রদর্শিত হতো, তাহলে কিন্তু মেধার পেছনে পয়সা খরচের একটা সুযোগ তৈরি হতো। বিটিভির মোনোপোলি আমলে যত ভালো নাটক তৈরি হয়েছে, এখনকার নাটক নির্মাতাদের পিষে তেল বার করলেও সেই মান আর পরিমাণের নাটক তৈরি হবে না।
মূল সমস্যা বিনিয়োগেই। যত গুড় তত মিঠা। মানসম্পন্ন চ্যানেলগুলো অন্তত নাটক সিন্ডিকেশনের সুযোগ করে দিলে প্রচুর ভালো নাটক আমরা আবার পাবো বলে আশা করি।
খুব সুন্দর লেখা, সব ব্যপারেই একমত। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমিও ভাবতাম কিন্তু আমার পক্ষে এত সুন্দর করে লেখা সম্ভব হত না। সীমাহীন বিজ্ঞাপন প্রচারের ব্যপারটি আলোচনা করলে আরও ভালো হত। আমার বাড়িতে স্টার জলসার জালায় আর কোন চ্যানেল দেখা সম্ভব হয় না। আমার মা'কে বলেছিলাম, এগুলোতে তুমি কি পেলে? আগেতো বাংলাদেশের নাটকই দেখতে। আম্মা দুটো কথা বলেছিলঃ ১. বাংলাদেশী চ্যানেলে খালি খবর হয়, ২. বিজ্ঞাপন খুব বেশি। এরপর খেয়াল করলাম স্টার জলসায় একটি সিরিয়াল শেষ করে কোন বিজ্ঞাপন প্রচার না করেই অন্য সিরিয়াল শুরু করছে। সিরিয়ালের মাঝে বিজ্ঞাপন বিরতি আছে কিন্তু তাও সীমিত। এ থেকে বোঝা যায় তারা সিরিয়াল শেষে কাউকে চ্যানেল বদলাবার সুযোগ দিতে চায় না, দর্শককে কাহিনীতে আটকে রেখে তবেই বিরতিতে যায়। আমাদের চ্যানেলগুলোর এই ব্যাপারে শিক্ষা নেওয়া উচিত। আর সম্ভব হলে আপনার লেখাটা সব চ্যানেল কতৃপক্ষকে ডাকযোগে পাঠিয়ে দিন।
আমাদের চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠানের প্রায় সবটুকুই একে অন্যের কপিপেষ্ট। বিজ্ঞাপনের অত্যাচার চরম। খবরের ফরমেট গত দশ বছরে একবিন্দুও পাল্টায়নি। খবরের মধ্যে সবচেয়ে কৌতুককর হলো বুম নিয়ে ক্যারিকেচার। অনেক কিছুই খারাপ।
সেজন্য আমাদের দর্শক ভারতের দিকে ঝুঁকেছে?
আমি জানি না। আমার টিভি দেখা হয় না খুব একটা। তবে ভারতীয় চ্যানেলগুলো (জিটিভি বা স্টার) চোখে পড়লে আমার একটাই প্রতিক্রিয়া হয়, আমাদের ফারুকীর চরম ফাউল নাটকও ভারতীয় জঞ্জালগুলোর চেয়ে স্বস্তিকর!
ভাইরে, বিদেশী চ্যানেল দেখার একটা বোনাস জিনিস হলো বিদেশের কিছু সীন সিনারি দেখবো। এই হালারা তো রান্নাঘর বেডরুম আর ড্রইংরুমের বাইরে গিয়ে নাটক করাই শেখেনি বোধহয়! কোন কোন দৃশ্যে দর্শকের টেনশান বাড়াতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের সাথে, ক্যামেরা একাত ওকাত করে জুম ইন আর জুম আউট করেই দশ মিনিট কাটিয়ে দিতে পারে। আমাদের ভোদাই দর্শক সেগুলো দেখে যে বুকের ভেতর শিউরে উঠে, তাতে আমি দারুণ লজ্জিত।
ভারতীয় টিভির নাটকগুলোর কোন জাতপাত নাই। এরা গুমুতকে সস দিয়ে গেলাচ্ছে আমাদের, আমরা তাই গিলছি। আমাদের মা বোনেরা বুঝতে পারছে না ওই সিরিজগুলো দিয়ে ওরা ইন্ডিয়ান শাড়ি থ্রিপিসের বিজ্ঞাপন করে যাচ্ছে বছর ব্যাপী, ঈদের সময় যা কিনতে দেশের মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে মার্কেটে মার্কেটে।
আমি ভারতীয়দের ধিক্কার দেবো না, ধিক্কার আমাদের দৈন্য মনোবৃত্তির।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সম্পূরন একমত। আমাদের টিভিতে এখন শুধুই খবর নয়ত বিজ্ঞাপন নয়ত ভাঁড়ামি আর তা নাহলে ভারতীয় নাটকের নকল। এর বাইরে অন্য কিছু পাওয়া মুশকিল। এখন আমাদের দেশের টিভিতে আমি দেখি শুধুই রান্নার শো। এছারা দেশ টিভির "দূরশিক্ষন" কিছুতা নতুন ধরনের এবং ইন্টারেস্টিং। নয়ত HBO,WB,National geography কিন্তু দুখের বিষয় এগুলোরও ভারতীয় ভারসন এ দেখা যায়। মান উন্নয়ন না করলে আসলেই ভারত আকর্ষণ কমান যাবেনা। প্রসঙ্গত সবাই খালি বলছেন 'মা-বোনেরা" ভারতীয় নাটক দেখে কিন্তু আমি আমার আত্মীয় আর পরিচিত অনেক পুরুষকেও এসব দেখতে দেখেছি। আর আমার বান্ধবীদের অনেকেই মেয়ে হয়েও দেখেনা তাই একেবারে generalized করা মনেহয় ঠিকনা
আরিফ ভাইয়ের লেখা বা বাকিদের মন্তব্য নিয়ে মন্তব্য করার কিছু নেই। যা কিছু লেখা হয়েছে, সবই বাস্তবতা। আসলে সবই হচ্ছে পুজির খেলা। মান নিয়ে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোর কোনো দায় নেই, এটা পরিস্কার। এদের মাথায় উদ্ভাবনী শক্তি বলেও কিছু নেই বলেই প্রতিয়মান হয়। আর যে বিষয়টা আরিফ ভাই গুরুত্ত দিয়ে উল্লেখ করেছেন, সেটা হচ্ছে খবর। খবর দেখাটা যে অপরাধের পর্যায়ে পরে, সেটা আমাদের চ্যানেল্গুল না দেখলে বোঝা যেত না। এই খবরের মধ্যে আবার মজার একটা বিষয় আছে। এখন সব চ্যানেলের খবর দেখতে বসলেই দেখা যায় নতুন ধারার বিজ্ঞাপন। অমুক কোম্পানি সংবাদ শিরোনাম, তমুক কোম্পানি বিস্তারিত খবর, ক বাণিজ্য সংবাদ, খ কৃষি সংবাদ, গ খেলার খবর, ঘ আবহাওয়ার খবর, ঙ আন্তর্জাতিক সংবাদ ইত্যাদি ইত্যাদি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একেকটা সেগমেন্টে একটা বা দুইটা খবরের বেশি থাকে না। খবর দেখলে তাই মনে হয়, সংবাদ পরিবেশনের জন্য নয়, চ্যানেলগুলো আসলে ওই স্পন্সরগুলোর নাম প্রচারের জন্যই খবর নামক একটা চাঙ্ক তৈরি করেছে।
নতুন মন্তব্য করুন