বইঃ কনফেশনস অফ অ্যান ইকোনমিক হিটম্যান

অরূপ এর ছবি
লিখেছেন অরূপ (তারিখ: রবি, ১৭/০২/২০০৮ - ১:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গেলবার ভাইয়া বোসের হেডফোনটার সাথে একটা বই-ও উপহার পাঠিয়েছিল, বাবার জন্য। কিন্তু দু'পাতা পরে সেটা মেরে দিতে বাধ্য হই। নামটা দেখেই যে কারো কৌতুহল হবে: Confessions of an Economic Hit Man (২০০৪), লেখক জনৈক জন পার্কিন্স

তিনশ বছর আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এই উপমহাদেশে শোষনের বিষদাঁত ফুটিয়েছিল। আর নতুন শতাব্দীতে মার্কিনিরা ওয়ার্ল্ডব্যাংক, আইএমএফ আর বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেই শোষনের ধারা বিশ্বব্যাপী অব্যাহত রেখেছে, যে ষড়যন্ত্রের সৈনিক হলেন যতো সুশীল "ইকোনোমিক হিটম্যান"-এর দল।

পার্কিন্স এর ভাষায়,
"Economic Hit Men (EHM) হল সেই সব মোটাবেতনের পেশাজীবি যারা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের সাথে প্রতারনা করে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়। টাকা পাচার করতে এরা ব্যবহার করে বিশ্বব্যাংক, USAID ও অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থাকে। এদের প্রধান অস্ত্রগুলো হলঃ জাল অর্থনৈতিক প্রতিবেদন, নির্বাচন কারচুপি, ঘুষ, চাঁদাবাজি, নারী ও হত্যাকান্ড । তাদের এই ষড়যন্ত্র বহু পুরোনো, বিশ্বায়ন সাথে সাথে যাতে যোগ হয়েছে নতুন নতুন মাত্রা"

বইটিতে পার্কিন্স বলেছেন তার নিজের গল্প। পেশাগত কারনে যোগ দেন Chas. T. Main নামের এক কনসাংটিং প্রতিষ্ঠানে, সেখানে আবিষ্কার করলেন, তার ইন্টারভিউ নিতে উপস্থিত হয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা NSA এর লোকজন। পার্কিন্সের কাজ নির্ধারিত হয় অনুন্নত বা সল্পোন্নত দেশের রাজনেতিক ও অর্থনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিশ্বব্যাংক ও এর মতো অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থার প্রস্তাবিত বিশাল বিশাল উন্নয়ন ঋণের ফাঁদে পা দিতে বাধ্য করা, যে ফাঁদ ছিড়ে মুক্ত হওয়া কোনদিনই হয়তো সম্ভব হবে না। এভাবে ঋণ-দাসত্বের শেকল পড়িয়ে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওইসব দরিদ্র দেশ থেকে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করে নিতে শুরু করে। পার্কিন্সের মতে এসব দাস রাষ্ট্রের কোন রাজনৈতিক স্বাধীনতা থাকে না, আর এদের দুর্বল করতে প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে দেওয়া হতে থাকে বৈষম্য।

ছোটবেলায় এসব গল্প শুনতাম, কিন্তু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে কখনও গা করিনি। পার্কিন্সের গল্প পড়ে মজাই লাগলো। জানিনা কতোটা সত্যি, কিন্তু অবিশ্বাস করাটা শক্ত। বেস্টসেলার এই বইটা তাই সময় পেলেই পড়ে ফেলুন।

বইটির PDF সংস্করন পাবেন এখানে


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

নামাইলাম।
মাইকেল হার্ডট আর আন্তোনিও নেগরী'র "এম্পায়ার" (২০০১) ও বহুল আলোচিত। আরো আগের মাইকেল প্যারেন্টি'র "এগেইনস্ট দ্য এম্পায়ার(১৯৯৫)", "ব্ল্যাক শার্টস অ্যান্ড রেডস(১৯৯৯)".....এই বইগুলির বিশেষত্ব হইলো তত্ত্বীয় কচকচির বদলে সরলভাবে জনগণের ভাষায় বিষয়গুলি উপস্থাপন। এইটা একই সাথে ভালো আবার খারাপও। ভালোটাই বেশী। খারাপ হইলো সরল উপস্থাপনারে সিরিয়াসলী না নেওয়ার অ্যাকাডেমিক খাইসলতদ্দারদের কাছে এগুলি প্রায়ই রেফারেন্সের গুরুত্ব পায় না।
আমার কাছে পায়।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অতিথি লেখক এর ছবি

বইটা ডাউনলোড করলাম। ভূমিকাটা পড়ে ভাল লাগল। তৃতীয় বিশ্বের সাধারণ মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে স্বচ্ছ জ্ঞান ও দায়িত্বানুভূতি না আসলে ধনী--গরিবের এ পার্থক্য বাড়তেই থাকবে। ইএইচএম বা এ ধরণের গোপন ষড়যন্ত্রের বিষয়গুলো লাইম লাইটে নিয়ে আসতে পারলেই বিশ্বায়নের কু প্রভাব এড়ানো সম্ভব।

--------------------
মুহাম্মদ

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

পিডিএফ-এর জন্যে ধন্যবাদ। এই বইটা পড়ার আগ্রহ অনেকদিনের।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

দিগন্ত এর ছবি

তৃতীয় বিশ্বের সাধারণ মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে স্বচ্ছ জ্ঞান ও দায়িত্বানুভূতি না আসলে ধনী--গরিবের এ পার্থক্য বাড়তেই থাকবে।

- একেবারে সঠিক কথা। আসলে কি জানেন তো - অর্থনীতি একমুখী ভাবে তাদেরই সুবিধা দেয় যারা জানে বেশী। এটা সর্বজনীন সত্য - কোনো ব্যতিক্রম হয় না এর।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পিডিএফ এর জন্য জাঝা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।