নাটাঙ্গি

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: বুধ, ১০/১০/২০০৭ - ১:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(এটা আমার নিম নাখারা বইয়ের দ্বিতীয় গল্প। আধা গল্প আধা বাস্তব)

এই রাজধানীতে কলাবাগান আমাদের একটা গেটওয়ে। সারাদিন আচ্ছামতো ক্লান্ত হয়ে কিংবা ইচ্ছামতো ঘুমিয়ে সন্ধ্যায় সবাই হাজির হয় কলাবাগান। লোকজন বলে আড্ডা। কিন্তু আমাদের কাছে বিষয়টা দুরকম; প্রথমত পরের দিনের ঘানি টানার আগে চেঞ্জওভার। দ্বিতীয়ত উন্মুক্ত এক্সচেঞ্জ অফিস। সর্ব বিষয়ক সার্ভিস অ্যান্ড ইনফরমেশন অ্যান্ড সাপোর্ট অ্যান্ড প্লানিং অ্যান্ড কাউন্সিলিং সেন্টার। নিজেরাই নিজেদের জন্য এইসব করি আর নিজেরাই অন্যদের দিয়ে এইসব করাই। যে কয়েকজন এই কলাবাগান আড্ডা সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্থায়ী সদস্য। তার মধ্যে সুমন আর আমিও আছি। সুমন মানে সুমন আনোয়ার। মঞ্চে অভিনয় করে আর টিভির জন্য নাটক বানায়

দু হাজার পাঁচের অক্টোবরের শেষ দিকে একদিন কলাবাগান যেতেই সুমন দু-তিন পাতার একটা ফটোকপি বাড়িয়ে দিলো- হাসান আজিজুল হকের শত্রু গল্পটা পড়েছেন?
- না
- এইটা পড়ে দেখেন
পড়ে দেখার কথা বলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সে নিজেই গল্পটা বলা শুরু করে। এটা ওর একটা টেকনিক। কোনো কঠিন কাজে রাজি করানো কিংবা বেগার খাটানো অথবা কারো পকেট থেকে টাকা বের করার কিছু ইউনিক টেকনিক সে জানে। বুঝতে পারছিলাম শুধু শুধু সাহিত্য প্রেম থেকে সে আমার জন্য গল্পটা কপি করে আনেনি। অন্য কোনো ধান্দা আছে

ইমোশনে কাঁপতে কাঁপতে- চেহারা ত্যাড়াব্যাঁকা করে- হুদাকামে হাত পকেটে ঢুকিয়ে এবং বের করে- খামাখা একই জায়গায় দু-তিনটা চক্কর দিয়ে- পায়ের নিচের ঘাস-পাথর এইসব পড়ে থাকা নিরীহ জিনিসগুলোকে লাথি মেরে সুমন গল্প শেষ করে মূল বক্তব্যের ভূমিকা টানল- গল্পটা আমি বানাব

কলাবাগানের আড্ডায় আমিই একমাত্র মিডিয়ার বাইরের লোক। বাকি যারা আসে তারা হয় মিডিয়া করে না হয় করায় অথবা করবে। সুতরাং মিডিয়া ইনফরমেশনের দিক থেকে এখানে সর্বনিম্ন আনাড়ি আমি নিজে। তাছাড়া আমি টিভি দেখি না। টিভি নেই আমার। রাস্তাঘাটে- বাসস্ট্যান্ডে কিংবা কারো বাসায় এক চামচ দু চামচ করে সারা জীবনে যতটুকু টিভি দেখেছি তা এক জায়গায় জড়ো করলে দু ঘণ্টার প্রোগ্রাম হবে কি না সন্দেহ আছে। ফলে যখন আমার সামনে কেউ এই বিষয় নিয়ে আলাপ করে তখন আমি ওইসব ঘটনার কাউকেই চিনি না। কিন্তু ঘটনাচক্রে যখন কলাবাগানের বাইরে কোথাও মিডিয়া সম্পর্কে আলাপ করতে হয় তখন লোকজন এ বিষয়ে আমাকে একজন পাতি বিশেষজ্ঞ হিসেবেই বিবেচনা করে। এর প্রথম কারণ মিলন। আনিসুর রহমান মিলন। সে নাকি মাসে আটাশ দিন শুটিং করে আর প্রতিদিন তার আট-দশটা অভিনয় দেখা যায় সাত-আটটা চ্যানেলে। কিন্তু একবার একটা প্রিমিয়ার শো ছাড়া আমি জীবনেও তার কোনো অভিনয় দেখিনি। মিলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সারাদিনে সে যা যা করে কলাবাগানে এসে জনে জনে তা বর্ণনা করে। একই লোককে সে একই কাহিনী চার-পাঁচবারও শোনায়। মিলনের বর্ণনায় পঞ্চাশভাগ থাকে নিজের প্রশংসা। বাকি পঞ্চাশভাগ অন্যদের বদনাম। কোন আর্টিস্ট বেশি পাউলি দেখায়। কারা সারারাত মোবাইলসেক্স করে দিনে ক্যামেরার সামনে ঘুমায়। কোন ডিরেক্টর পয়সা কম দেবার সময় কী আচরণ করে। কোন ডিরেক্টরের নাটক ক্যামেরাম্যানরা বানিয়ে দেয়। কোন নাট্যকার অন্যকে দিয়ে লিখিয়ে নিজের নামে চালায়। কোন পারফরমার পয়সা পেলে থ্রিএক্স গ্রেডের নাটকেও অভিনয় করবে। কোন আর্টিস্ট দুপুরের খাবার খেয়েই বলে যাইগা। সব। শুধু ডিরেক্টর পারফরমারই নয়। তার বদনামপর্ব থেকে টিভি স্টেশনের লোক- মিডিয়া সাংবাদিক- প্রডিউসার এমনকি স্পটবয় পর্যন্ত কেউই রেহাই পায় না

আমি মিডিয়াতে কাজ না করেও মিলনের কল্যাণে মিডিয়ার কমপক্ষে এক হাজার লোকের আচার আচরণ- বৈশিষ্ট্য- পরকীয়া- কিপটামি- বাটপারি এমনকি কার বাড়িতে কে কে আছে। বিয়ে করেছে কি না। ছেলে মেয়ে কয়টাসহ বাড়ির ঠিকানাও বলে দিতে পারি। ব্যাপারটা নতুন নয়। মিলন একসময় একটা এনজিওতে কাজ করত। এখনও সেই এনজিওর ডিরেক্টর থেকে পিয়ন পর্যন্ত সবার কাহিনী আমার মুখস্থ। শুধু মাঝখানে সে কিছুদিন একটা ব্যাংকে জয়েন করেছিল। তখন আমি ঢাকার বাইরে থাকার কারণে সেই ব্যাংকের কারো সম্পর্কে আমার কিছু মুখস্থ হয়নি। কিন্তু কলাবাগানের অন্যরা নিঃসন্দেহে সেই ব্যাংকের লোকজনের বর্ণনাও দিতে পারবে। ...শুধু আমি কিংবা আমরা নই। আশেপাশের দুটো পানের দোকানদার এবং সেই পথে নিয়মিত যাতায়াত করা গার্মেন্টসের শ্রমিকরাও ইচ্ছে করলে মিলনের কাহিনীগুলো বলতে পারবে। কারণ মিলন বলার সময় গলা চড়িয়ে রাজনীতিবিদদের মতো জাতির উদ্দেশ্যেই কথাগুলো বলে

আমার দ্বিতীয় সোর্স একটা শিক্ষার দোকান; যেখানে টিচার থেকে এ্যাকাউন্টেন্টের সংখ্যা বেশি। সারা মাসে যতটা নোটিস তারা দেয় তার নিরানব্বই ভাগ থাকে টাকা আদায় নিয়ে আর একভাগ থাকে ক্লাস নিয়ে। তারা নিজেরা এটাকে বলে ইউনিভারসিটি। আমরা বলি এডুকেশন শপ। জাতে উঠার জন্য পাড়ার লন্ড্রি- সেলুন- কসাইখানা কিংবা মুদি দোকানের নামের সাথে যেমন কেউ কেউ লাস ভেগাস- ক্যালিফোর্নিয়া- লস এঞ্জেলস জাতীয় একটা বিদেশি নাম জোড়া দিয়ে দেয়। ঠিক তেমনি এই দোকানের সাথেও স্ট্যামফোর্ড নামে একটা বিদেশি জায়গার নাম জুড়ে দেয়া আছে। কে জানে ওই জায়গাটা কোন দেশের কোন টানবাজার না কান্দুপট্টি

দুই বছর ধরে আমি এই দোকানের নিয়মিত খদ্দের। লেখার সময় লিখি মাস্টার্স করছি ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়ায়। যদিও সেখানে আমরা ক্যামেরার প্রাকটিক্যাল ক্লাস করি হোয়াইট বোর্ডে ক্যামেরার ছবি এঁকে। ফিল্ম এডিট করি সাদা কাগজে আর ডিরেকশনের পরীক্ষা দেই মুখে বর্ণনা করে

এই দোকানের বান্ধা কাস্টমার হবার পর থেকে নিজের তাগিদে আমরা কিছু বইপত্র বা ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করি। কিছু খোঁজ খবর নেই বাংলাদেশের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া ফিল্ডের; বাংলাদেশের সেন্সর ল টা কেমন। অশ্লীলতা বিরোধী আইনটা কী? এইসব আরকি। ফলে বিশেষজ্ঞীয় পর্যায়ের আলাপে লবণ দেবার মতো আরো দুয়েকটা বিদ্যা আমার পেটে অটোমেটিক্যালি জমা হয়ে গেছে মিলনীয় জগতের বাইরেও

মিলন প্লাস শিক্ষার দোকান থেকে কেনা বিদ্যা ঘেঁটে আমি বললাম- এই নাটক কেউ চালাবে না সুমন
- না চালাক। সবকিছু চালানোর জন্য বানাতে হবে নাকি? এইটা আমি বানাব আমার জন্য
এটা সুমনের ঘাউড়া ড্রিমের আরেকটা অংশ। মাস্টার প্লান ছাড়া ওর কোনো প্লান নেই। এবং সব প্লানের সাথেই অনিবার্য ঘাউড়ামি। কারো কোনো কথাই সে কানে তোলে না এইসময়। এবং যথারীতি কিছুদিন পর এইসব প্লান প্লানের জায়গায়ই থাকে। সুমন বসে বসে ঝিমায় কলাবাগানে

দীর্ঘদিন থেকে সুমনের মাস্টার প্লানে আমি কোনো কথা বলি না। এবং আমাদের কোনো প্লানিংয়ে যখনই সুমন ঢুকে পড়ে তখন ধরে নেই আলাপটা আর এগোনোর কোনো মানে হয় না। কারণ সাধারণ প্লানকে মাস্টার প্লানে নিয়ে মেরে না ফেলা পর্যন্ত সুমন নিস্তার দেবে না। তবে মাঝেমাঝে তার মাস্টার প্লানকে সুপার প্লানে নিয়ে যাবার জন্য দুয়েক চামচ গুড় যে আমি দেই না তা অবশ্য নয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রটা ভিন্ন। আমি অনুমান করতে পারছিলাম সুমন এই মাস্টার প্লানে আমাকে প্যাঁচানোর একটা টেকনিক্যাল প্লান অলরেডি করে ফেলেছে। যদিও ধরতে পারছি না কিন্তু বুঝতে পারছি সামনে বেশ কয়েকটা দিন সে আমাকে ঘাঁটাবে। ...নতুন ডিরেক্টরদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ যে অস্ত্র সেটা আমি ছাড়লাম এবার- এ নাটকের প্রডিউসার পাবে কোথায়? কেউ রাজি হবে না
- প্রডিউসার রাজি
- ধ্যাৎ
- আল্লার কিরা
- কে?
- সাচ্চু ভাই
যুক্তির জায়গা শেষ। সাচ্চু ভাই মানে শহীদুল আলম সাচ্চু। অভিনেতা। মঞ্চে নির্দেশনা করতেন। বহুদিন মঞ্চের সাথে নেই। এই মানুষটার কিছু দুমুখো যোগ্যতা আছে। যা তাকে একবার উঠায় আবার নামায়। তার হাতের কুড়াল জঙ্গলের গাছ কেটে যেমন নতুন বাড়ি বানায় আবার সেই কুড়ালই তার বাড়ি কেটে আবর্জনা বানিয়ে দেয়। তার মূল ঝামেলা একরোখা ইমোশন। আগামাথা কোনোকিছু না ভাবা এবং আশপাশের কোনো কিছু না শোনা। ...অনেক কিছু করে এবং শেষ করে তিনি এখন একটা মিডিয়া প্রডাকশন হাউস করেছেন। তিনিই প্রডিউসার। সুতরাং সুমনকে কিছু বলার আর মানে নেই। আমার মা একটা প্রবাদ বলেন- উন্দা পুরুষ আর ঘোমটা নারী সব সময় ডেঞ্জারাস। যারা হাঁটার সময় ঘাড় নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটে তাদেরকে সিলেটি ভাষায় বলে উন্দা। সাচ্চু ভাই এবং সুমন দুজনই মূলত উন্দা পুরুষ
- উস্তাদ আপনি আমারে এইটার স্ক্রিপ্টটা কইরা দিবেন
সুমন তার ভূমিকাপর্বের শেষ বাক্যটা ছাড়ল
- দেখি। পড়ে দেখি। যদি হয় তাতেও সময় লাগবে
- লাগুক সময়। আপনে টাইম নেন
- আমি না হয় করলাম। কিন্তু গল্পটা দিয়ে নাটক বানাতে হলে হাসান আজিজের পারমিশন লাগবে। সেটা কে নেবে?
- ওইটা নিয়ে ভাইবেন না। সেইটা আমি ব্যবস্থা করব
- ঠিক আছে কিন্তু দেড়-দু মাসের আগে মনে হয় না কিছু হবে

বহু মানুষেরই বহু মাস্টার প্লানের সঙ্গী আমি। ওসব মাস্টার প্লানে আমারও কিছু কিছু তথাকথিত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথা থাকে। সময়ে আমিও সেগুলো করি না এবং যাদের মাস্টার প্লান তারাও ভুলে যায় যে আমার কিছু করার কথা ছিল। এসব ক্ষেত্রে গা বাঁচানোর সবচেয়ে বড়ো উপায় কিছু সময় নেয়া। সেই হিসাব থেকেই আমি দেড়-দু মাসের এই ফিরিস্তি দিলাম। আমি জানতাম দুয়েক সপ্তা পরেই এই কারেন্ট পানসে হয়ে যাবে

বাসায় এসে গল্পটা পড়লাম। সুমনকে বলা দু মাস সময়ের কথা মনে পড়ল। এখন মনে হলো এই গল্পটাকে নাট্যরূপ দিতে গেলে সত্যি সত্যি দু বছরও হয়ত কম সময়। কারণ গল্পটা থেকে দৃশ্য বের করা আর ভিজুয়াল ইনস্ট্রাকশন দেয়া সত্যিই কঠিন একটা কাজ হবে। আবার একটা লোভও তৈরি হলো নিজের ভেতর। সুমনের কাছে রাজি হয়নি। কিন্তু গল্পটা পড়ে নিজের কাছেই রাজি হয়ে গেলাম- করব। যতদিনই লাগুক গল্পটাকে নাট্যরূপ দেবো আমি। কারণ আমার জানামতে এই প্রথম হাসান আজিজ একটা গল্পে মুক্তিযোদ্ধাদের মানসিক ক্রাইসিস নিয়ে কথা বলেছেন। যুদ্ধের অনিবার্যতার পাশাপাশি মানুষের মানবিক উচ্চতা- ভেতরের ক্ষরণ আর মৃত্যুকে নিয়ে এসেছেন এক কাতারে। ...মাঝরাতেই সুমনকে ফোন করলাম- আমি গল্পটা নাট্যরূপ দেবো

কবে দেবো কীভাবে দেবো জানি না। ঘুমুতে গেলাম। ঘুম এল। কিন্তু আবার ফিরে এলাম আধা জাগরণে। আমি পুরো গল্পটার নাট্যরূপ দেখতে থাকলাম দৃশ্যের পর দৃশ্য ধরে। পুরো ঘটনা। হাসান আজিজের শত্র“ গল্পটা নাটক হলে যেমন হবে ঠিক সেরকম। সকাল পর্যন্ত। ঘুম ভেঙে এক বৈঠকে তৈরি করে ফেললাম ড্রাফট। শেষ করে গল্পের সাথে মিলালাম; ভুল বোঝার জায়গা আছে কি না কোথাও। কোথাও হাসান আজিজকে ছোট করছি কি না। কোথাও কি এমন কোনো গ্যাপ থেকে গেছে যা দেখে মানুষ গল্পকার হাসান আজিজকে ভুল বুঝতে পারে। মনে হলো কোথাও কোথাও কিছু ফাঁক রয়ে গেছে। ...দৃশ্য বদলালাম। সংলাপ বাড়ালাম। কমালাম

হাসান আজিজুল হকের শত্রু গল্পটা দু দিক থেকে বিপজ্জনক। গঠনের কারণে যেমন নাট্যরূপ দেয়া বিপজ্জনক। তেমনি বিষয়ের কারণে বিপজ্জনক রাজনীতি ব্যবসায়ী আর স্বঘোষিত রাজনীতি বোদ্ধাদের কথা বিবেচনা করে

বাংলাদেশের কোনো এক গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের সময় কোনো এক পাকিস্তানি সিপাহি কোনো এক কারণে অস্ত্রসহ একা ঢুকে পড়ে এক বিকেলে। গ্রামের লোকজন যখন তাকে ঘিরে ধরে তখন বিনা বাক্যে সে অস্ত্রটা তাদের হাতে তুলে দেয়। লোকজন যখন তার হাত বাঁধতে চায় তখন সে হাত দুটো বাড়িয়ে দেয় বাধ্য ছেলের মতো। গ্রামের লোকজন পড়ে ফাঁপড়ে। সিপাহিটা এমন কোনো আচরণ করছে না যাতে রেগে গিয়ে তাকে কুপিয়ে মেরে ফেলা যায়। কথাও বলছে না। লোকজন বহুভাবে তাকে রাগানোর চেষ্টা করে যখন ব্যর্থ হয় তখন তাকে একটা স্কুল ঘরে বেঁধে রাখে। সিদ্ধান্ত হয় নিজেরা খুনখারাবিতে না গিয়ে কাছাকাছি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে খবর দিয়ে তাকে ওদের হাতেই তুলে দেয়া ভালো। যা করার ওরাই করবে

পরের দিন মুক্তিযোদ্ধা খলিল তার জুনিয়র যোদ্ধা এবং শত্রু গল্পের কথককে নিয়ে এসে গ্রামবাসীর কাছ থেকে সিপাহিটাকে গ্রহণ করে। গেরিলা যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী দুজনের টিমে সিনিয়র খলিল পালন করে কমান্ডারের ভূমিকা আর গল্পের কথক তার ফলোয়ার। সিদ্ধান্ত হয় তাদের নৌকা যখন নদীর মাঝখানে যাবে তখন গল্পের কথক সিপাহিটিকে গলা টিপে মেরে ফেলবে। ...নৌকা মাঝনদীতে যায়। কিন্তু যোদ্ধাটি কোনোভাবেই আদেশ পালন করতে পারে না। সিপাহিটি এখনও একটি কথাও বলছে না। কোনো প্রতিবাদ করছে না। এমনকি যোদ্ধাটি যখন দড়ি দিয়ে তার পা বেঁধে ফেলে তখনও সে পা দুটো বাড়িয়ে দিয়ে সহযোগিতা করে। যোদ্ধাটি বারবার চেষ্টা করে। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় এরকম প্রতিক্রিয়াহীন একটা লোককে গলা টিপে মারা কী করে সম্ভব? খলিলের কাছে একটা গুলি করার পারমিশন চায়। খলিল পারমিশন দিতে নারাজ। কাছাকাছিই রয়েছে পাকিস্তানি ক্যাম্প। মাঝ-নদীর গুলির আওয়াজ সহজেই পৌঁছে যাবে তাদের কানে। গলা টিপেই তাকে মারতে হবে

শুরু হয় ওয়ার সাইকোলজির পরিচিত আর প্রাচীন মানবিক সংকট। যে যাকে হত্যা করে সে তাকে চেনে না। যার হাতে যে নিহত হয় সেও তাকে চেনে না। কারো সাথে কারো কোনো ব্যক্তিগত শত্র“তা নেই। যাদের সাথে শত্র“তা তারা বহু দূরে। যে মরবে অথবা যে মারবে দুজনই এসেছে হয় ভাতের টানে না হয় স্বপ্নের ডাকে। শত্রুপক্ষের লোক হওয়া ছাড়া দুজনের সাথে দুজনের কোনো শত্রুতা নেই

যোদ্ধা দুজন এই সংকটে পড়ে যায়। তারা রেগুলার মিলিটারি থেকে আসা মুক্তি ফৌজ নয়। তারা মুক্তিযোদ্ধা। আবেগ আর স্বপ্ন থেকে এসেছে যুদ্ধে। তারা যখন বন্দুক তাক করে তখন সমগ্র পাকিস্তানের দিকেই করে। তাতে পাকিস্তানি মরে হয়ত কম। কিন্তু তারা বিশ্বাস করে সবগুলো গুলিই গিয়ে পড়ে খোদ পাকিস্তানে স্বয়ং ইয়াহিয়ার বুকে। এরকম একজন বন্দীকে মারার জন্য তারা যুদ্ধে আসেনি। কিংবা মানুষকে বন্দী করে মারার কৌশলও জানে না তারা

হাসান আজিজের গল্পটা দুজন মুক্তিযোদ্ধার মানসিক এই সংকট নিয়ে নৌকায় করে ঘুরতে থাকে নদীর বুকে। সিপাহিটাকে অনেক গালাগালি করেও রাগিয়ে গলা টিপে ধরার মতো কোনো রাগ নিজের ভেতরে তৈরি করতে পারে না জুনিয়র যোদ্ধা। বারবার সে একটা গুলি করার পারমিশন চায়। পায় না। নৌকা ঘুরতে থাকে। এক সময় সিনিয়র খলিল তাড়া দেয়। যন্ত্রের মতো উঠে গিয়ে সে হাত-পা বাঁধা সিপাহির গলা টিপে ধরে। এইবার সিপাহিটি যোদ্ধার হাত কামড়ে দেয়। এতে রেগে যাবার একটা কারণ খুঁজে পায় যোদ্ধা। গলা টিপে মেরে ফেলে তাকে। সিপাহিটি যখন মরে গেছে তখন দেখা যায় যোদ্ধার চোখে জল। খলিলের দিকে তাকিয়ে সে শুধু বলে- কেন আমাকে একটা গুলির পারমিশন দিলে না? খলিল নৌকার বৈঠা ছেড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। তখন তারও চোখে জল

গল্পটার কাহিনী এইটুকু। ভেতরে সংলাপ যা আছে তা হাতে গোনা দশ থেকে বারোর বেশি নয়। তার উপরে গল্পটাকে নাট্যরূপ দেয়ার ক্ষেত্রে আছে বেশ কিছু মরণ ফাঁদ। প্রথমত এই সিপাহিটির গ্রামে ঢুকে পড়ার রেফারেন্স। বলতে গেলে নেই। একটা জায়গায় সামান্য একটা ইঙ্গিত আছে- উজানে গতরাতে বেশ গোলাগুলি হয়েছে। ...কিন্তু কাদের সাথে কাদের। কারা জিতেছে। কারা হেরেছে। কী ফলাফল। কোনোকিছুই নেই। এই ইঙ্গিতটাকে ভর করে একটা সূচনা কাহিনী দাঁড় করালাম; একদল মুক্তিযোদ্ধা আগের রাতে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে একটা ক্যাম্প ধ্বংস করে দিয়েছে। যাবার সময় পুড়িয়ে দিয়ে গেছে সবকিছু। শুধু জঙ্গলে লুকিয়ে বেঁচে গেছে একজন সিপাহি; যে সকালের আলো ফোটার পর ক্যাম্পের অবস্থা দেখে কাণ্ডজ্ঞানশূন্য হয়ে রাইফেল নিয়ে হাঁটতে থাকে উদ্দেশ্যবিহীন। হাঁটতে হাঁটতে এসে ঢুকে পড়ে জনবসতিতে। নিজেকে আবিষ্কার করে গ্রামের মানুষের মাঝে ঘেরাও অবস্থায়

এইবার দ্বিতীয় ঝামেলা। সে কেন হাতে একটা রাইফেল থাকতেও আত্মরক্ষার সুযোগ নিল না। কেন সে কথা বলল না। হাসান আজিজ এর কোনো ব্যাখ্যা দেননি। আবার আমাকে খুঁজতে হলো গেরিলা যুদ্ধের ইতিহাস। একটা চলনসই যুক্তি পেয়ে গেলাম। একজন রেগুলার মিলিটারি হিসেবে সে জানে গেরিলা যুদ্ধে শত্র“পক্ষের হাতে পড়া মানেই মৃত্যু। এসব ক্ষেত্রে প্রিজনার হওয়া কিংবা যুদ্ধবন্দির মর্যাদা পাবার উপায় নেই। দ্বিতীয়ত অত মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে কী লাভ? অথবা হয়ত দুটো রুটির জন্য সিপাহির চাকরি করতে আসা এই সৈনিকটির গ্রামবাসীদের দেখে কাউকেই শত্রু মনে হয়নি। হয়ত সে ভেবেছে এদের বিরুদ্ধে কেন অস্ত্র তুলতে হবে?

এই পর্যন্ত না হয় নাটকের শরীরের জন্য একটা কাহিনীসূত্র কিংবা যুক্তি দাঁড় করানো গেলো। কিন্তু সবচে বিপদের জায়গাটা হলো নৌকায়। যেখানে খলিল আর রাজু সিপাহিটিকে নিয়ে গেছে। হাসান আজিজ এই গল্পের কথক যোদ্ধার কোনো নাম দেননি। নাটকে তার নাম দেয়া হয়েছে রাজু। বিপদটা হলো কোনোভাবেই যেন মুক্তিযোদ্ধাদের মনে না হয় খুনি। কোনোভাবেই যেন মুক্তিযুদ্ধের সামান্যতম অংশও প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। আর হাসান আজিজ যেভাবে বিষয়টিকে সব প্রশ্নের বাইরে নিয়ে এসেছেন; নাটক দেখে যেন সেসবের কোথাও হাসান আজিজ আবার প্রশ্নবিদ্ধ না হন। আর মানুষ হিসেবে সিপাহিটি মানবিক সমর্থন পেলেও কোনোভাবেই যেন সেই সমর্থন পাকিস্তানের দিকে না যায়। আরেকটি কথা; মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায়ীরা যেন মাথা ঢোকানোর কোনো ফাঁক না পায়। কিন্তু কী করে...

বহুকাল আগে পড়া কোনো এক কিংবদন্তিতে কোনো এক সেনা নায়ক তার কোনো এক সৈনিককে বলেছিলেন- শত্রুপক্ষে ভালোমানুষ- নিরীহ মানুষ কিংবা নিরপরাধ মানুষ বলতে কিছু নেই। শত্রুপক্ষের সবাই সমান শত্রু। কে তোমাকে মারবে না তা ভাবলে যুদ্ধ হয় না। ভাবতে হবে সবাই তোমাকে মারবে। এবং সবাইকেই মারতে হবে তোমার। কিংবদন্তির এই থিওরিটি আধুনিক যুদ্ধবিদ্যায়ও অবিকলভাবে বহাল। কিন্তু কথাটা নাটকে আসবে কী করে? কে বলবে? ...পেয়ে গেলাম আরেকটা চরিত্র। মহাভারতে। কৃষ্ণ। যে অর্জুনকে দিয়ে নিজের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাতে গিয়ে ভগবৎ গীতার মতো সর্বকালের সর্ব আধুনিক একটা যুদ্ধ-মনস্তত্ত্বের বই তৈরি করে ফেলেছে। এই গল্পে খলিলের ভূমিকাও অনেকটা কৃষ্ণের মতো। একই সাথে কমান্ডার আর ড্রাইভার। খলিলের মুখে রাজুর জন্য একটা সংলাপ পেয়ে গেলাম- তুই যদি ওর হাতে ধরা পড়তি তাহলে সে অতকিছু ভাবতো না তোকে নিয়ে। এটা যুদ্ধ রাজু। শত্রুপক্ষের সবাই-ই আমাদের কাছে সমান শত্রু
সংলাপটা পেয়ে যাবার পর মনে হলো মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জায়গা বেশ বন্ধ করা গেলো। নাটকও মুক্ত হলো অনর্থক বক্তৃতা থেকে। যুদ্ধের কঠিন শৃঙ্খলা অনুযায়ী দাঁড়িয়ে গেলো খলিল আর রাজু দুটো চরিত্র। বন্ধুত্ব যতই থাক। কাজের সময় একজন কমান্ডার আরেকজন ফলোয়ার। পাশাপাশি গেরিলা যুদ্ধের অনিবার্য বৈশিষ্ট্য আর মুক্তিযোদ্ধাদের মানবিক গভীরতা

হাসান আজিজের গল্পে সিপাহিটি ধরা পড়ে সন্ধ্যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে যায় পরের দিন সকালে আর নৌকার ঘটনাটি দিনের বেলা। ...আমি তাকে ধরা পড়ালাম সকালে। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে দিলাম সন্ধ্যায় আর হত্যার জন্য নৌকায় নিয়ে এলাম রাতে। রাজুর দোটানা চলতে থাকল সারারাত ধরে। খলিল নিশ্চুপ। কিন্তু সেও সমানভাবে উপলব্ধি করছে বিষয়টা। সামান্য কয়েক মিনিটের একটা কাজের জন্য সে নদীর বুকে সারা রাত নৌকা চালিয়েছে। মাঝেমাঝে হালকাভাবে রাজুকে মনে করিয়ে দিয়েছে কাজটা সেরে ফেলতে হবে। কমান্ডার হয়েও বন্ধু। মানবিক মানুষ। ডিউটি করতে এসে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা রাজুর সংকট তারও সংকট। রাজুকে মানসিক প্রস্তুতির সময় দিয়ে বৈঠা ছেড়ে খলিল নিশ্চুপ বসে থেকেছে অনেকক্ষণ। স্রোতের টানে নৌকা একা একাই ভেসেছে মাঝ নদীতে। খলিল বলেনি কিছু। শুধু তীক্ষèভাবে নজর রেখেছে রাজু না হঠাৎ গুলি করে বসে। যখন ভোর হয়ে আসে তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজুকে মনে করিয়ে দিয়েছে- আমাদের ফিরতে হবে। আর সারা রাত পার করে ভোরের আলোয় কাজটা শেষ করে যখন প্রচণ্ড চিৎকার করে রাজু গালাগাল করছে খলিলকে; তখন খলিলের চোখে পানি। রাজুর জন্য নয়। যুদ্ধের অনিবার্য সত্যের জন্য

সন্ধ্যায় যখন সুমনের হাতে ড্রাফট স্ক্রিপ্টটা ধরিয়ে দিলাম দেখলাম সুমন বেশ অবাক। সেও আশা করেনি এটা। বললাম পড়ে দেখো। কোথাও কোনো অ্যাডজাস্টমেন্টের দরকার আছে কি না। কিন্তু সে আমাকে আরো বেশি অবাক করে দিলো একটা ইনফরমেশন দিয়ে। মনে হলো সে আগে থেকেই ধরে নিয়েছে স্ক্রিপ্টটা আমি করছি এবং খুব দ্রুতই করব। বলল শুটিংয়ের ডেট ঠিক হয়ে গেছে। ষোলো থেকে বিশ

মাঝরাতেই সুমন ফোন করল- আচ্ছা বানাচ্ছিতো। যদি এইটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন আসে?
- এলে আসবে। আমি যা লিখেছি তার প্রতিটা অক্ষরের জন্য যে কারো মুখোমুখি হতে আমি রেডি। এখানে যা লিখেছি তার প্রতিটি বিষয়ই আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি
- দেইখেন ওস্তাদ। পরে কোনো ঝামেলা হইলে সামলাইয়েন

সুমনের গলায় ভয়। যে ভয়টা আমি পেয়েছিলাম স্ক্রিপ্ট করার আগে। সুমন সেটা পাচ্ছে স্ক্রিপ্ট পাবার পরে। ...পরের দিন সুমন একটা দুর্দান্ত প্রশ্ন করল- আচ্ছা একটাও গুলির শব্দ না শুনিয়ে কি মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা যায় না?
- যায়। অবশ্যই যায়। হাসান আজিজুল হকও একটাও গুলির শব্দ শোনাননি পুরো গল্পে। আমি সেখানে গোলাগুলি ঢুকিয়েছি নাটকের গ্রাউন্ড তৈরির জন্য
- আমি আমার পুরো নাটকে একটাও গুলির শব্দ শোনাতে চাই না। এক ফোঁটাও রক্ত দেখাতে চাই না। ...সুমন তার কথাকে আরো টেনে নিয়ে গেলো- শুরুটা আরেকটু ভাবেন

বাদ। সমস্ত গুলির শব্দ বাদ। একটা ধ্বংস হয়ে যাওয়া ক্যাম্পের ভেতর থেকে ভোর রাতে উঠে আসছে এক বিহ্বল পাকিস্তানি সৈনিক। নাটকের শুরুতে তাই দেখবে মানুষ। ...হলো। তাই হলো। এবং শুটিংয়ের আগের দিন পর্যন্ত একটু একটু করে ঘষামাজা হতে থাকল পুরো নাটকটা। প্রতিদিন আরেকটু ভালো করার জন্য আরেকটু ঘষামাজা। ...নেশায় পড়ে গেছি। ঘষামাজা নিয়ে সুমন আর আমার মধ্যে তেমন একটা কথাবার্তা হয় না। একজন যা বলে প্রায় ক্ষেত্রেই তা অন্যজনের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। ...কিন্তু সুমন কেমন যেন ঝিমায়। কেমন করে যেন তাকায়- আমরা যা করছি তার ব্যাখ্যা কি সঠিকভাবে দিতে পারব?
- কেন নয়?
- পাবলিক যদি অন্য রকম কিছু ভাবে?
- আই ডোন্ট বদার। আমার কোনো কনফিউশন নেই

তারপরেও আরেকবার চেক করি। আরেকটু পরিষ্কার করা। ...নাটকটি যখন প্রথম লেখি তখন এই এক ঘণ্টার নাটকটিতে ছিল মাত্র আটটি সংলাপ। অনিবার্য জায়গা ছাড়া সংলাপ আমি চাইছিলাম না। এ নাটক শোনার নয়। উপলব্ধি করার। মানুষকে উপলব্ধি করাতে চাই আমি। ...কিন্তু মাথা মোটারা ভেতরের চেয়ে উপরে হাতড়ায় বেশি। তাই আরো পরিষ্কার। আরো একটু। শেষ পর্যন্ত সংলাপের সংখ্যা দাঁড়াল প্রায় বিশের কাছাকাছি
- কিন্তু হাসান আজিজের পারমিশন?
সুমনের নেবার কথা ছিল। মনে করিয়ে দিলাম। সে নির্বিকারভাবে বলল- জিনিসটা আপনিই নিয়া নেন না। আপনি ভালো কইরা বুঝাইয়া কইতে পারবেন

এটাও সুমনের আরেকটা টেকনিক। সে জানে স্ক্রিপ্ট তৈরি হয়ে গেলে হাসান আজিজের পারমিশনের অভাবে স্ক্রিপ্টটা আটকে যাক এটা আমি চাইব না
- আপনার কি মনে হয় উনি কোনো ঘাপলা করব?
- মনে হয় না। তবে স্ক্রিপ্ট দেখতে চাইতে পারেন
- তাহলে?
- দেখাব। আমি কোথাও তাকে ছোট করিনি। তার গল্পও মার খায়নি। দেখাব তাকে
- পারমিশন না নিলে কী হয়?
- বেয়াদবি হয়ে যাবে ব্যাপারটা
- যদি না দেন?
- আমার ধারণা দেবেন। আর না দিলে তাকে বলে আসব গল্পটা তার লেখা হলেও আমাদের কালচারাল হেরিটেজ। এর উপরে আমাদেরও রাইট আছে। ...তবে এক কাজ করা যেতে পারে। গল্পটা নাট্যরূপ দেয়া হয়ে গেছে কথাটা তাকে প্রথমেই না বলি। লেখক মানুষ ক্ষেপে যেতে পারেন। তাকে বরং বলি যে গল্পটা নাট্যরূপ দিতে চাই। তারপর দুয়েকদিন পরে বলব- একটা ড্রাফট দাঁড় করিয়েছি। ফাইনাল হলে পাঠাব
- পাঠাবেন?
- নাটক বানানোর পর সিডি দেবো তাকে

টেলিফোনে হাসান আজিজ সরাসরি অবাক হলেন- এখন পর্যন্ত এই গল্পটা নিয়ে কেউ কোনো আলোচনা করেনি। তুমিই প্রথম বললে। আচ্ছা তোমরা হঠাৎ করে এই গল্পটা নিয়ে কেন ইন্টারেস্টেড হলে বলোতো?
- স্যার পঁয়ত্রিশ বছর গুলি খাওয়া আর গুলি করা নিয়েইতো মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনলাম আর বললাম। ভেতরের কিছু নিয়ে কি বলা দরকার না?
- কিন্তু কীভাবে কী করবে বলোতো?
- দেখি স্যার। নাও যদি পারি তবে ধরে নেব আমাদের একটা এক্সারসাইজ
- খারাপ বলোনি। কিন্তু এটা কি কেউ করবে বলে তোমার মনে হয়?
- করবে স্যার
- বলো কী? বাংলাদেশের মানুষ অত এগিয়ে গেছে? জানি না তো?
- এগিয়ে না গেলেও দুয়েকজনতো এগোনোর চিন্তা করে
- তা ঠিক। কিন্তু কোনো চ্যানেল এটা চালাবে বলে কি তোমার মনে হয়?
- অতদূর পর্যন্ত এখনও ভাবছি না স্যার। আমাদের যতটুকু করার ততটুকু আগে করি
- তা করা যেতে পারে। ঠিক আছে করার পরে আমাকে পাঠিও; আমি দেখে দেবো

হাসান আজিজ নিজেও কি এই গল্পটা নিয়ে কোথাও আলাপ করেছেন? আমার মনে পড়ে না। কিন্তু গল্পটাকে আগাগোড়া ধারণ করে আছেন তিনি। বলার সাথে সাথে গল্পটির খুঁটিনাটি বলতে শুরু করলেন তিনি। নাট্যরূপ দিতে গেলে কোথায় কোথায় সমস্যা হতে পারে। কোথায় কোথায় ভুল ব্যাখ্যার জায়গা থেকে যেতে পারে। সব। আর এই ফাঁকে আমি গল্পটাকে যেভাবে রূপান্তর করেছি সেগুলোকে রূপান্তর করার চিন্তা বলে আস্তে আস্তে যাচাই করতে থাকলাম। কিছু কিছু চিন্তার ব্যাখ্যা চাইলেন। কিছু কিছু চিন্তা সমর্থন করলেন একবাক্যে। আর কিছু কিছু বিষয় সম্পর্কে বললেন- এটাকে তুমি নাটকে দেখাবে কী করে? আমিও যেভাবে দেখিয়েছি সেটাকে দেখানোর চিন্তা বলে তার কাছে ব্যাখ্যা করলাম

হাসান আজিজ বিস্মিত এবং বিস্মিত- আচ্ছা তুমি কি মনে করো এসব বিষয় বলার মতো সময় এসেছে?
প্রশ্নটা তিনি করলেন একটা শিশুর মতো
- আপনিতো স্যার অলরেডি বলে ফেলেছেন। আমরা সেই বলাটাকে এখন রিপিট করছি মাত্র

অনেক কথা। শত্রুর সূত্র ধরেই। কথার শেষ পর্যায়ে এসে আচমকা প্রশ্ন করে বসলেন- আচ্ছা দেশের অবস্থা সম্পর্কে তোমার কী মনে হয়?
প্রশ্নটা হাসান আজিজের। আমি চুপ করে গেলাম। আসোলেই আমার কী মনে হয়? আমার মুখ থেকে বের হয়ে এল- স্যার অনুমান করতে পারি না। ঝাপসা লাগে
এইবার তিনি চুপ করে থাকলেন বেশ অনেকক্ষণ। হয়ত টেলিফোনের ওপাশে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন- তোমরাতো সেদিনের ছেলেপেলে। আমরা এই দেশটাকে গোড়া থেকেই দেখছি। ...জানো আমার মনে হয় মাঝেমাঝে আমিও অনুমান করতে পারি না

লেখার অনুমতি নয়। মনে হলো হাসান আজিজুল হক আমার স্ক্রিপ্ট পড়ে অ্যাপ্র“ভাল দিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আরেকটা বিষয় বারবার মনে হতে লাগল; বাংলাদেশটা এমন কোন জায়গায় গেছে যে হাসান আজিও আর অনুমান করতে পারেন না?

সুমনকে বললাম- ডান। সুমন অ্যাকসাইটেড। কিন্তু আবার ঝিমিয়ে গেলো- আচ্ছা পারবতো? কী যে হবে বুঝতে পারতাছি না। বললাম- তাহলে বাদ দিতে হবে
- বাদতো দিবই না। কিন্তু...
- কিন্তুর কোনো জায়গা কি আর আছে?

শুটিংয়ের দিন যত কাছে আসতে থাকল সুমনের প্রিপারেশনের সাথে সাথে হাইটও কমে যেতে শুরু করল। সুমন ছ ফুটের বেশি কিংবা কাছাকাছি। সাধারণত হাঁটার সময় নিজেকে উন্দা করে সাড়ে পাঁচ ফুট বানিয়ে হাঁটে। কিন্তু যখন মাথার ভেতরে ঝামেলা থাকে তখন তার হাইট আরও কমতে থাকে। একদিন কলাবাগানে দেখলাম তার হাইট কমতে কমতে তিন ফুটের কাছাকাছি নেমে এসেছে। দেখলাম কিন্তু বললাম না কিছু। আমাদের এখানে যারা আসে তাদের মধ্যে একটা অলিখিত বোঝাপড়া আছে। কেউ যদি একা একা ঝিমাতে চায় তাহলে তাকে ঝিমানোর সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া। কেউ যদি তার ভেতরের ঝামেলাগুলোকে এনজয় করতে চায় তাহলে তাকে ডিস্টার্ব করে না কেউ

সুমন কথা বলছে না কারো সাথে। হাঁটছে। ঘুরছে। চা-বিড়ি ফুঁকছে। একটা ফোন আসল। সবার থেকে দূরে গিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলল নিচু স্বরে। ওরকম প্রায় সবারই প্রায়ই হয়। দূরে গিয়ে একা একা কথা বলার ফোন কলাবাগানে প্রত্যেকেরই আসে বেশ অনেকবার। কিন্তু সুমন দূরে বসে কথা বলতে বলতে এক সময় এগিয়ে এল আমাদের দিকে। আমার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল- নেন রাইটারের সঙ্গে কথা বলেন
- কে?
- ফজলুর রহমান বাবু
সুমনের শত্রু নাটকের খলিল চরিত্রটি তার করার কথা। শিডিউলও নেয়া হয়ে গেছে। ভদ্রলোকের সাথে আমার পরিচয় নেই। ফরমালিটি শেষ করে তিনি আমার বয়স জানতে চাইলেন। বললাম
- তখনতো আপনার জন্মই হয়নি
- আমার জন্ম কখন হয়নি আর কখন হতে পারত তা নিয়ে কথা বলার কী আছে? প্রব্লেমটা কী?
- যুদ্ধের কথা আমার বেশ স্পষ্ট মনে আছে
- হ্যাঁ। তারপর?
- আপনি কি মনে করেন যে এখন এই নাটক করার মতো সময় এসেছে?
- হোয়াই নট?
- এই নাটকের সিম্পেথি পাকিস্তানিদের দিকে চলে যাবে
- আমি যেভাবে স্ক্রিপ্ট করেছি তার ফিফটি পার্সেন্টও যদি ডিরেকশন আর পারফর্মেন্সে আসে তা হলে যাবে না। আমি কনফার্ম
- অত কনফার্ম আপনি হন কীভাবে?
- তার ব্যাখ্যাতো ফোনে দেয়া যাবে না। তবে একটা বিষয় বলতে পারি- সময় আসেনি। সময় হয়নি করেতো থারটি ফাইভ ইয়ার্স গন। আর কত? পঁয়ত্রিশশো বছর পরে বলবেন?
- কিন্তু এই মুহূর্তে এটা করলে এর বেনিফিট চলে যাবে ওদের হাতে
- ওদের হাতে বেনিফিট চলে যাবার ভয়ে আজীবন মুক্তিযোদ্ধাদের শুধু গুলি মারা আর গুলি খাওয়া লোকই দেখাবেন? ওরাও যে মানুষ ছিল তা বলা যাবে না?
- তা বলেন। কিন্তু এই নাটকে যেভাবে দেখিয়েছেন তাতে কি ব্যাখ্যা দেবার কোনো সুযোগ থাকবে?
- আমি আমার প্রতিটি অক্ষরের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। যেকোনো সময়। যেকোনো জায়গায়
- সাহসটা কি একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
- সাহসের অভাব ছিল বলেই পলিটিক্স ছেড়ে এসে এনজিও করি। বাট আর কত?
- আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এখন এই নাটকটা করা উচিত না
- আমি তা মনে করি না। মুক্তিযুদ্ধের সাইকোলজিক্যাল গ্রাউন্ড নিয়ে কাজ করার এখনই সময়। ফিজিক্যাল আর পলিটিক্যাল গ্রাউন্ড নিয়ে অসংখ্য কাজ হয়েছে
- আপনার সব কথার সাথে আমি একমত। শুধু সময়ের ব্যাপারটা ছাড়া
- সেই ফ্রিডম আপনার আছে
- ঠিক আছে ভাই আপনারা করেন। দেখেন কতটুকু করতে পারেন। আমরাও দেখি। তখন না হয় আমরাও একটু সাহস পাব... ভালো থাকবেন... সুমনকে দেন

সুমনের হাতে ফোন দেবার পর সুমন বেশি হলে দশ সেকেন্ড কানে লাগিয়ে শুনল। তারপর- ঠিক আছে বলে রেখে দিলো ফোন- ফজলুর রহমান বাবু করবে না

স্ক্রিপ্ট হাতে পাবার আগেই সুমন সবগুলো কাস্টিং ফাইনাল করেছে। যতটুকু জানি গল্প শুনে ফজলুর রহমান বাবুও অ্যাকসাইটিং ছিলেন। কিন্তু যখন স্ক্রিপ্টটা হাতে পেলেন... হাসান আজিজের শিশুর মতো করা প্রশ্নটি আমার মনে পড়ে গেলো। ভদ্রলোকের প্রশ্নটাও একই জায়গায়। ...তার সাথে কথা বলার সময় আমার মেজাজ বেশ বিগড়ে গিয়েছিল। টোনটা কোনোভাবেই কুল ছিল না। আমি বোধহয় আরণ্যকের এক সিরিয়াস নাট্যকর্মীর মুখে এরকম কনফিউশন এক্সপেক্ট করছিলাম না। তিনি গ্রুপ থিয়েটার কর্মী। ...অন্যকিছু... অন্যকিছু। বোধ হয় অনেক বেশি কিছু আশা করছিলাম। তার জায়গায় মিডিয়ার চামড়া ব্যবসায়ী লিকুইড কারেকটারের অন্য কেউ হলে এ প্রসঙ্গে কোনো কথাই বলতাম না। সোজা বলে দিতাম- পছন্দ না হলে ডিরেক্টরকে জানিয়ে দিন করবেন না। এ নিয়ে কথা বলার কী আছে? ...কিন্তু আমি বোধ হয় ফজলুর রহমান বাবুকে কনভিন্স করারও চেষ্টা করেছি। ...আসোলে আমাদের এক্সপেক্ট করার জায়গা খুব কম; আবারও রিয়েলাইজ করলাম। এজন্য যাদের কাছে এক্সপেক্ট করি মাঝেমাঝে তাদের উপর অবিচারও করে ফেলি। নো প্রব্লেম। ...সুমন যদি নাটকটা নাও করে আমি নিজেই করব কোনো একদিন

সুমন যখন প্রথম তার কাস্টিং প্লানিংয়ের কথা বলে তখন খলিল চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবুর ব্যাপারে আমার কিছু আপত্তি ছিল। কারণ তার বয়স। আমি দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে আরো তরুণ দেখেছি। বিশ-বাইশের কোঠায়। সুমনকে বলেছিও। শত্র“ নাটকে যে ধরনের ঘটনা তাতে পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ইমোশনাল ইনভলভমেন্ট ততটা লজিক্যাল নয় যতটা তরুণদের ব্যাপারে যুক্তিসংগত। কারণ মানুষের যত বয়স বাড়ে মানুষ তত লজিক্যাল হয়ে যায় আর ইমোশন কমতে থাকে। আর মানুষ যখনই একটু একটু করে লজিক্যাল হতে থাকে তখন অনেকেই হয়ে উঠে ক্রিমিনাল। যার প্রমাণ সারা পৃথিবীর কোনো ক্রিমিনালই তরুণ ছিল না। হয় ছিল মধ্যবয়স্ক না হয় বৃদ্ধ। একজন তরুণের পক্ষে খুনি হওয়া সম্ভব। কিন্তু কোনোভাবেই ক্রিমিনাল নয়। এই নাটকের দুই যোদ্ধা যদি তরুণ না হয়ে মধ্যবয়স্ক হতো তাহলে অত কিছু ভাবতও না। সময়ও নষ্ট করত না। চোখ বন্ধ করে কাজ শেষ করে বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে ফিরত নিজেদের ক্যাম্পে। কিন্তু যোদ্ধা দুজন তরুণ। এজন্যই এই ঘটনা। এজন্যই হাসান আজিজ গল্পটি লিখেছেন। এজন্যই আমি তার রূপান্তর করেছি নাটকে আর সুমন চেষ্টা করছে বানানোর

আমি সুমনকে বলছিলাম আরো ইয়াং কাউকে নিতে। কারণ রাজুর জন্য সে কাস্ট করেছে আরণ্যকেরই জয়রাজকে। জয়রাজের কাছাকাছি বয়সের ম্যাচিং কারো কথা বলছিলাম আমি। বাবুর সাথে জয়রাজের বয়সের যা ডিফরেন্স তাতে হয়ত একসাথে যুদ্ধ করা যায়। কিন্তু ইমোশন শেয়ার করা যায় না। কিন্তু নাটকটা শেষ পর্যন্ত ডিরেক্টর্স মিডিয়া। আর সুমন বেসিক্যালি ঘাউড়া। তার উপরে সুমনের ক্ষেত্রে প্রবাদের মতো একটা ব্যাপার দাঁড়িয়ে গেছে যে তার প্রতি নাটকেই কমপক্ষে একটা হলেও মেজর মিসকাস্ট থাকবে। প্রতি নাটকেই থাকে একটা দুইটা। আগে বললে সুমন শোনে না। পরে নাটক দেখে আর গালি দেয়- খানকির পোলা ডুবাইছে আমারে। ...আমি আর এ বিষয়ে কথা বলিনি। ও করুক তার মতো করে

তখনই বোধহয় সুমন ফোনে খলিলের জন্য কাস্টিং ঠিক করে ফেলে। আমার মুখ থেকে বের হয়ে আসে- পারফেক্ট। এইবার ঠিক আছে। পরের দিন হাসান আজিজুল হককে ফোন করে বলি- স্যার একটা ড্রাফট দাঁড় করিয়েছি। ফ্রেশ করিনি। কাস্টিংও হয়ে গেছে। মজার ব্যাপার হলো এই নাটকে খলিল চরিত্রটা করছে আপনার ‘মন তার শঙ্খিনী’ গল্পের নাট্যকার এবং ডিরেক্টর আমিনুর রহমান মুকুল। আমি আগে এবং আজকেও বলতে ভুলে যাই যে ‘মন তার শঙ্খিনী’ নাটকের মূল চরিত্র যে করেছিল সে হচ্ছে এই নাটকের ডিরেক্টর

হাসান আজিজুল হকের গল্প ‘মন তার শঙ্খিনী’ নাটকটি করেছিল থিয়েটার সেন্টার। নিরানব্বইর দিকে। আমিনুর রহমান মুকুল তখন চিটাগাং ভার্সিটির ড্রামাটিক্স থেকে পাশ করে ঢাকায় এসেছে। থিয়েটার সেন্টারে সে নাটকটি ডিরেকশন দিয়েছিল গেস্ট ডিরেক্টর হিসেবে। নাট্যরূপও তার। আর সে নাটকের মূল চরিত্র সাদু করেছিল সুমন

বাংলাদেশের তিনটি ইউনিভারসিটির ড্রামা ডিপার্টমেন্ট থেকে যারা পাশ করে বেরিয়েছে তাদের সবার থেকে মুকুল আলাদা। বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকে ড্রামা ডিপার্টমেন্টেগুলোর কনট্রিবিউশন এখনও প্রায় জিরো পর্যায়ে। এরা প্রায় কেউই সুবিধা করতে পারেনি পাশ করে বেরিয়ে। না পেরেছে প্রোফেশনাল থিয়েটার করতে। না পেরেছে অ্যাডজাস্ট করতে গ্র“প থিয়েটারের সাথে। মুকুল কমপারেটিভলি ব্যতিক্রম। এর কারণ হয়ত এটা যে বাকিদের বেশিরভাগই ভার্সিটির ড্রামাতে ভর্তি হয়েছে স্রেফ একটা ইউনিভারসিটি ডিসিপ্লিনে পড়ার জন্য। অন্য কোথাও সিট না পেয়ে। ভর্তির আগে বেশিরভাগেরই কোনো গ্র“পের সাথে যোগাযোগ ছিল না বললেই হয়। মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন আছে ব্যতিক্রম। আর যাদের গ্রুপের সাথে ইনভলভমেন্ট ছিল তারাও ভার্সিটিতে ভর্তির পর বেশিরভাগই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গ্রুপ একটিভিটি থেকে। কিন্তু মুকুল ছিল চিটাগাং সমীকরণ-এর নিয়মিত কর্মী। ড্রামাতে ভর্তির আগে- ড্রামাতে পড়ার সময় এবং ড্রামা থেকে পাশ করে বেরোনোর পরও। এই কারণেই বোধহয় একমাত্র সেই তার অ্যাকাডেমিক কোচিংকে পরবর্তীতে গ্রুপ থিয়েটারের সাথে অ্যাডজাস্ট করতে পেরেছে। এখন সে ঢাকায় নিজে পালাকার নামে একটা গ্রুপ থিয়েটার তৈরি চালায়। ...মুকুলের কথা শুনে তিনি বললেন- ছেলেটা সিরিয়াস

নাটকটা হয়ে গেলো। শুটিং শুরু এবং শেষ হয়ে গেলো। আমাকে টিমের মেম্বাররা গালাগালি করল কঠিন কিছু দৃশ্য লেখার জন্য। বিশেষত টিটু। ফারুক খান টিটু। প্রধান সহকারী পরিচালক এবং কলাবাগান আড্ডার আরেকজন ফাউন্ডার অ্যান্ড রেগুলার মেম্বার। কারণ দৃশ্যগুলো অ্যারেঞ্জ করতে গিয়ে লাল সুতা তারই বের হবে

আমার লেখা প্রথম নাটক শুটিং হলো। এটাই প্রথম হবার কথা ছিল না। অন্যগুলো নিয়ে প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম। কিন্তু ঝড়ের বেগে এই শত্র“ গল্পটি ঢুকে বাকি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। ...শুটিংয়ের সেটে আমার যাবার কথা ছিল। যাইনি। আমার নিজের জন্য নিজের কিছু সিদ্ধান্ত আছে। ...শুটিংয়ের সেটটা মূলত ডিরেক্টরের। সেটে লেখক গেলে শুরু হয় দোটানা। তাই একবার যদি কাউকে ট্রাস্ট করে স্ক্রিপ্ট দেয়া হয় তবে নাটক তৈরি হওয়া পর্যন্ত তার উপর ট্রাস্ট করা উচিত। সে তার মতো করে বানাবে। তারপর যদি কোথাও মনে হয় ডুবিয়ে দিয়েছে তাহলেতো বাংলা চ বর্গের গালিগুলো থাকলই তার জন্য। অথবা ভদ্রভাবে বললে বলতে হয়- গুডবাই। এই স্ক্রিপ্টটাই প্রথম এবং এটাই শেষ। যার কারণে আমি যাইনি। শুধু অন্যদের মুখে শুটিংয়ের ভয়াবহ বর্ণনা শুনেছি। যা আয়োজন তা বাংলাদেশের সিনেমায় করে। এক ঘণ্টার নাটকের জন্য করে না কেউ। আর খাটনির বিষয়টি বোঝানোর জন্য একটা ইনফরমেশনই যথেষ্ট; ছয়দিন শুটিংয়ে সুমন একবারও পায়খানা করেনি। একসাথে শুটিং শেষ করে বাড়িতে এসে ঢুকেছে টয়লেটে...

হয়ে গেলো। এবং হয়ে গেলো। সমালোচনা সুমন যা পেলো তার নিরানব্বই ভাগই আমার কাছ থেকে। আচাছা বাংলায়। সরাসরি। এটাও আমাদের কলাবাগান আড্ডাবাজদের আরেকটা প্র্যাকটিস। আমরা যখন নিজেদের কারো সমালোচনা কিংবা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করি তখন ভদ্রতা এবং সেন্সর না করেই করি। যদিও এজন্য একদিন মিলন আমাকে বটি দিয়ে কাটতে গিয়েছিল আমারই বাসায়। কলাবাগান আড্ডার কিছুদিনের এক মেম্বার দিলীপ চক্রবর্তী এই আসরে ক্ষেপে গিয়ে দেশ নাটকে আমার নামে এমন অভিযোগ করল যে দলের প্রধান শামসুল আলম বকুল ষোলো বছরের পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা ভুলে; একবারের জন্যও কিছু জিজ্ঞেস না করেই গ্র“পের সেক্রেটারিকে দিয়ে ফোন করিয়ে আচার আচরণ খারাপ অভিযোগ এনে আমাকে দেশ নাটক থেকে বহিষ্কার করে দিলেন। আবার এই কলাবাগান আড্ডারুদের কারণেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলেন কিছুদিন পর। কিন্তু তার পরেও আমার বাসার আড্ডা এবং ধোলাই সেশন এখনও চলে সমান তালে। সবাই সবাইকে বলে। যার যা ইচ্ছা

সুমনকে যা বলেছি তার দুটো কারণ। প্রথমত আরেকটু ভালোর লোভ। দ্বিতীয়ত সেই এক্সপেক্টেশন। কিন্তু তারপরেও যা হলো নিজেকে বললাম- ইউনিক

...এবং স্বপ্ন দৌড়াতে থাকল আরো। তখন ঢাকায় একটা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল হচ্ছে। সো...? ...ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভাল আমরা মিস করলাম। ফিল্ম জমা দেবার মেয়াদ পার হয়ে গেছে। সামনে লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভাল। ...ইংলিশ সাব-টাইটেল। করতে হবে। আবারো সেই স্ক্রিপ্ট পর্যায়ের কাজ। করলাম। সরকারি কলেজের ইংরেজি মাস্টার- দেশ নাটকের কর্মী- কলাবাগানের আড্ডারু আর গল্পকার অনন্ত মাহফুজ এসে কেটেছেঁটে ঠিক করে দিয়ে গেলো ইংলিশ সাব-টাইটেল। তখন নিজের মনে হচ্ছে- ইয়েস। ...আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত শত্রু উৎসবে যাচ্ছে। আর একটি চ্যানেলে যাচ্ছে ষোলো ডিসেম্বর। বিজয় দিবসে। সেই অনুযায়ীই পরিকল্পনা এবং আলাপ হয়েছে চ্যানেলের সাথে...

ঘষামাজা করতে করতে দেরি হয়ে গেলো। একটু একটু করে আরেকটু ভালোর চেষ্টা। ষোলোই ডিসেম্বরের জন্য জমা দেবার সময় পার হয়ে গেলো। সো হোয়াট? সামনে ছাব্বিশে মার্চ। ...আরেকটু সময় পাওয়া গেলো। ...সাব-টাইটেল লেখা হলেও করা হলো না। যখন সুমন ফ্রি তখন এডিটর ব্যস্ত...

একটা প্রিমিয়ার শো করার ব্যাপারে সুমনের আগ্রহই সবচেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু সুমন ঝিমুতে থাকল- যদি কেউ কিছু ঝামেলা পাকায়?
- মানে?
- যদি বিষয়টা নিয়ে প্যাঁচায়?
- প্যাঁচালে প্যাঁচাবে
- সামলাইয়েন আপনে
- আমি যা করেছি তার ব্যাপারে আমার কোনো দ্বিধা নেই

সুমন প্রিমিয়ার শো করল না। যে নাটক নিয়ে সে আশাবাদী ছিল একটা পুরস্কারের। সেটি ফেলে রাখল। ...নাটকটি কোথাও যাচ্ছে না। কোনো চ্যানেলই চালাবে না। যে চ্যানেল আগে বলেছিল চালাবে তারাও পিছিয়ে গেছে। সম্ভব নয়। এই রিস্ক নেয়া যাবে না। এই নাটক চালিয়ে কে নিজের বিপদ ডেকে আনবে? তার চেয়ে শর্ট ফিল্ম হিসেবে চালান...

শর্ট ফিল্ম চালাতে গেলে বাংলাদেশের ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের অনুমতিপত্র লাগে। সেন্সর আইন আর তার সাথে যারা যুক্ত থাকেন এবং তারা যেভাবে কাজ করেন সে ব্যাপারে কিছু বিদ্যা হয়েছে আমার। সেই বিদ্যা থেকে বিষয়টা নিয়ে আর একটাও শব্দ খরচ করার কোনো আগ্রহ হলো না। লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভাল আর মাথায় নেই...

আমার একটা দায় থেকে গেছে। হাসান আজিজুল হক। তাকে নাটকটি দেবার কথা আমার। যখন তাকে বললাম তৈরি হয়ে গেছে। তিনি বললেন- চলে আসো। একসাথে বসে দেখব। ...হচ্ছিল না। এমনকি একটা সিডিও জোগাড় করা হচ্ছিল না। ...আমরা বোধ হয় সবাই... হয়ত হতাশা। হয়তবা অন্য কিছু... মাঝেমাঝে মনে হয় বেয়াদবি হয়ে যাচ্ছে। হাসান আজিজকে একটা সিডি দেয়া দরকার। সুমনকে বলি একটা আপডেট সিডি আমাকে দিতে। সেও বলে দেবে... তারপর আমিও খোঁজ করি না। সেও ভুলে যায়

হাসান আজিজ একটা প্রোগ্রামে ঢাকায় এলেন। বেশ অনেকদিন থেকে জেনেও তার জন্য একটা সিডি করা হলো না আমার। তাকে বললাম- এ মাসের শেষের দিকে রাজশাহী যাব। আমি নিয়ে যাব হাতে করে। আর একসাথে বসে দেখব আপনার বাসায়

রাজশাহী যাবার প্লানটা সত্যি। শাহবাগের আড্ডায় বসে একদিন মনে হলো আমাদের যাওয়া হচ্ছে না কোথাও। ওখানের আড্ডারুরা সবাই লেখক। ...চা খেতে খেতে আকাশ বলল- কালকে। আকাশ মানে কবি ওবায়েদ আকাশ। অনেকেই ছিল। শেষ পর্যন্ত আমি ছাড়া যাবার ব্যাপারে যে আরেকজন রাজি হলো সে কবি খোকন মাহমুদ। কোথাও একটা জায়গায় যাওয়া দরকার। কোথায়? যেকোনো জায়গায়। এই উদ্বাস্তু নগরীর বাইরে যেকোনো জায়গা। ...ওকে কুমিল্লা। ...দুদিন। আমরা তিনজন। ...ওখানে ঘুরতে ঘুরতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম- প্রতি বিষুদবার রাতে অথবা শুক্রবার সকালে আমরা বেরিয়ে পড়ব। শুক্র শনি দুদিন থাকব একেকটা জায়গায়। যার যার সুবিধা সে যাবে। দুজন হলেই রওয়ানা। সেই হিসেবে এই মাসের শেষে আমাদের রাজশাহী যাবার কথা

হাসান আজিজের বাসায় যেদিন সিডি নিয়ে পৌঁছালাম সেদিন সারাদিন সেখানে কারেন্ট নেই। একসাথে বসে নাটকটা দেখা হলো না। কথা হলো অনেক। কিন্তু হঠাৎ তিনি জানতে চাইলেন- আচ্ছা ভুল বোঝার মতো কোনো জায়গা নেইতো? দেখো আবার

হাসান আজিজের ভেতরে কি কোনো ভয় কাজ করছে? জানি না। কিন্তু কেমন যেন। অন্যরকম। শত্রু গল্পটা লিখে যখন ছাপান তখন তার ভেতরে কোনো ভয় কাজ করেছিল কি না আমি জানি না। গল্পটা নাটক বানানোর ব্যাপারেও আপত্তি করেননি তিনি। কিন্তু...

শত্রুর দিকে আরেকবার তাকালাম আমি। ফজলুর রহমান বাবু স্ক্রিপ্ট ফিরিয়ে দিয়েছেন। চ্যানেল পিছিয়ে গেছে। সাচ্চু ভাই মেনে নিয়েছেন আর্থিক ক্ষতি। সুমন ভুলতে চাচ্ছে শত্রুর কথা। কিন্তু আমি? ...শত্র“ গল্পটা আমার লেখা নয়। পড়িওনি। নাটকের জন্য নির্বাচনও করিনি আমি। কিন্তু যখন নাটকে রূপান্তর করলাম তখন নিজেকে বললাম- গল্পটা হাসান আজিজ লিখেছেন। সুমন বানাবে কিন্তু এর একশোভাগ মালিকানা আমারও। সবার সব অধিকার স্বীকার করেও আমি এর একটা ফোঁটা মালিকানাও ছাড়তে নারাজ। ...আর আজ রাজশাহীতে বসে মনে হলো... যদি সবাই-ই ছেড়ে যায় যাক। এই দৃশ্যগুলো থেকে এক ইঞ্চিও সরবো না আমি। যা লিখেছি তা আমি সমর্থন করি। আমি বিশ্বাস করি আমার প্রতিটি অক্ষর...

রাজশাহী থেকে রাতে আমরা চলে এলাম নাটোর। সারাদিন সেখানে কাটিয়ে পরের রাতে ঢাকায়। হাসান আজিজকে কয়েকবার ফোন করতে যেয়েও করিনি। ...হয়ত রাস্তায় সর্বশেষ হতাশার কথাটি শুনতে চাই না সেজন্য। পরের দিন সকালে ফোন করলাম। তিনি ধরলেন- নাটকটা দেখলাম... অনেকক্ষণ চুপ আমি। কয়েক লক্ষ প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হলো। একটাও করলাম না। তিনিই বললেন- ভালো বানিয়েছে। আর ছেলেগুলো অভিনয়ও করেছে দারুণ। ...আমি নির্মাণ কিংবা অভিনয়ের মূল্যায়ন হাসান আজিজের মুখ থেকে শুনতে চাই না। ...প্রশ্নটি করেই ফেললাম- স্যার আপনার গল্প কি মার খেয়েছে কোথাও?
- নাহ। আমার যে সন্দেহগুলো ছিল তা হয়নি
- আর ভয়?
- কিসের ভয়?
- কোথাও কোনো ভুল ব্যাখ্যার?
- নাহ। আমি বেশ খেয়াল করে দেখলাম তুমি সেই জায়গাগুলো বন্ধ করে দিয়েছ

টেলিফোনটা করার সময় আমার হাত এবং শরীর দুটোই কাঁপছিল। ...আমি সোজা হয়ে বসলাম। তার কাছ থেকে আমার আর কিছু জানার নেই। শুধু তাকে একটা ইনফরমেশন দেবার আছে আমার। ...কিন্তু অনেক কথা হলো। কার কার অভিনয় দুর্দান্ত। কে ঠিকমতো টানতে পারেনি। এই বিশাল কাজ কীভাবে করল। ডিরেক্টরের বয়স কত হতে পারে। সে আর কী কী করে। ফিন্যান্স কে করল। অত টাকা উঠে আসবে কি না। ...বাংলাদেশের রাজনীতি। জঙ্গি হামলা। নেক্সট ইলেকশন। আমার পরবর্তী প্লান। ইয়াংদের লেখালেখি। তার আর কোন কোন গল্পকে আমি নাট্যরূপ দিতে পারি। মঞ্চ নাটকের বর্তমান অবস্থা। এবং শত্রু নাটকের সবাই যেন রাজশাহী এলে তার বাসায় এক কাপ চা খেয়ে যায়। তার আগে তার পক্ষ থেকে যেন সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই; বিশেষ করে দুর্দান্ত কাজের জন্য সুমন আর অসাধারণ অভিনয়ের জন্য মুকুলকে। ...কথা প্রায় শেষ। আমি ইনফরমেশনটা তাকে জানালাম- স্যার এই নাটক কোনো চ্যানেলে চলবে না
- কেন?
- ওরা সাহস করতে পারছে না বিতর্কের ভয়ে

হাসান আজিজ অনেকক্ষণ চুপ করে গেলেন। কিছু কি হতাশ হলেন? গল্পটি লেখার পর হয়ত ভুলেই গিয়েছিলেন এরকম একটা গল্প লিখেছেন তিনি। কেউই কোনো আলোচনা করেনি এই গল্পটি নিয়ে। হয়ত তিনি নিজেও করেননি। তার লেখা নিয়ে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও আলোচনা হয়। হোক তা মুখে অথবা লিখে। তার গল্প নাটকও হয়। অনেক বিখ্যাতরা করে। তিনিই বলেছেন এই গল্পটি নিয়ে কোনো আলোচনা কিংবা পরিকল্পনার কথা আমার মুখেই শুনেছেন প্রথম। তিনি কি তার অনুমান করতে না পারা বাংলাদেশে আবারও কিছুটা আশাবাদী হয়ে পড়েছিলেন? যার জন্য আমার মতো এক আনাড়িকেও গল্পটি নাট্যরূপ দেবার অনুমতি দিয়েছিলেন তিনি? ...আমি ফোন ধরে আছি। ওপাশ থেকে অন্তত একটা শব্দ না শুনলে ফোন রাখতে পারছি না। ...হালকা একটা দীর্ঘশ্বাস শুনলাম। হাসান আজিজ তার প্রমাণিত বিশালত্ব নিয়ে এক তুচ্ছ তরুণের সামনে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস আর বোল্ডনেস নিয়ে মুখ খুললেন- থাকুক লীলেন। আমাদের নাটক আমরাই দেখব
২০০৬.০৬.১১


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

উফ... এত্ত বড় লেখা!!
খালি চরিত্রগুলা সব আপনা বইলাই পড়লাম।
সুমন থিয়েটারে আমার প্রথম বন্ধু...
আপনে কি জানেন ঢাকা শহরে একটা মঞ্চ নাটকের ছোটকাগজ সম্পাদনা করছিলাম আমি আর সুমন যৌথভাবে? বোধহয় ৯৫/৯৬এ।
তখন আমাদের আড্ডা ছিলো ধানমণ্ডি ১৫, ১৯, আবাহনী মাঠ, ষ্টার কাবাব, তাজমহল রোড, নূরজাহান রোড।
থিয়েটারের সংগ্রামটা আমার আর সুমনের একসঙ্গে...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সবজান্তা এর ছবি

তারপর ! নাটকটা কি এখনো পড়ে আছে ? সমস্যা না থাকলে ইউটিউবে তুলে দেন। আমরাই দেখি।


অলমিতি বিস্তারেণ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

নাটকটা কেটে ছেঁটে চ্যানেল আইতে প্রচার করেছে

সবজান্তা এর ছবি

কেটে ছেঁটে কেন ? সময়ের অভাবে নাকি বিতর্ক এড়ানোর জন্য ?

যাই হোক, কাটাকুটি দেখতে চাই না। নাটকটা পারলে ইউটিউবে তুলে দিয়েন।


অলমিতি বিস্তারেণ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

নাটকটা কাটা হয়েছে জেনে আমি দেখিনি
কাউকে দেখতেও বলিনি

জানি না কোথায় কেটেছে

০২

ইউটিউবে আপলোড করার সহজ বিদ্যাটা এখন বোধহয় শিখে নিতেই হবে

দেখি কী করা যায়

সবজান্তা এর ছবি

আমার নেটের লাইনটা মন্দ না। আপনার কাছে ডিভিডি আছে ?

তাহলে সেটাকেই split করে, কেটে তুলে দেওয়া যেতে পারে।


অলমিতি বিস্তারেণ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ডিভডি আছে
ঢাকায় গিয়ে তোমার সাথে যোগাযোগ করব
আমি এখন সিলেটে

...অসমাপ্ত [অতিথি] এর ছবি

নাটকের ইতিহাস পরার পর দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। কাটছাট দেখত চাই না। নিজের গা বাচানোর যে চেষ্টা ...তা আর যাই হোক মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলে না (তবে এই বস্তু মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই বেশি হয়েছে)। আপলোড করা হলে দয়া করে জানাবেন। কোন সাহায্যে আসলে জানাতে পারেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।